#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে — [১০]
#নিহা (মুনিয়া)
____________________
-‘ আপনি আমার জন্য এসব শাড়ি এনেছেন! থ্রি পিস আনলেন না কেনো?’
-‘ বিয়ে হবার পর এই বাড়িতে এসেছিস শাড়ি না পড়লে কেমন দেখায়? আপাততো ক’দিন শাড়ি পড়।’
উনার সঙ্গে কথা না বাড়িয়ে চটজলদি শাড়ি পড়তে চলে গলাম। শাড়ি পড়া শেষ করে রুমে আসলাম। শাড়িটা টাটকা লাল রঙের! শাড়ি পড়েই রুমে আসতেই দেখি আহানও রেডি হয়ে গেছেন! আমি গিয়ে শুধু শাড়িটা উপরে ওঠিয়ে কুচি দিয়ে পড়ে এক্কিবারে রেডি হয়ে নিলাম। আচমকাই আহান আমার সামনে এসে শরীর থেকে শাড়ির আঁচল টি টান মে’রে খুলে দিলো এক নিমিষেই!
-‘ এটা কি ধরনের কাজ?’
-‘ এটা কি ধরনের শাড়ি পড়া? তোর পে’ট তো সাইড দিয়ে দেখা যাচ্ছে! ‘
-‘ গরম লাগছিলো তাই উঠিয়ে পড়েছি।’
-‘ আমি যেরকম নামিয়ে দিয়েছি ওরকমই থাকবে! এবার চল।’
উনার সঙ্গে কথায় না পেরে চলে গেলাম হাসপাতালে! চাচ্চু আর দাদিকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। আমি গেলাম চাচির কাছে। আমার উপস্থিত টের পেয়ে চাচি চোখ খুলে ওঠে বসলেন। আমি খাবার বের করে উনার দিকে ধরলাম আগের ন্যায়। উনি এবার চুপটি করে খেয়ে নিলেন। খাওয়া শেষ করে একটু আধটু কথাও বললেন। এক পর্যায় ওষুধ খাইয়ে দিতে চাচি ঘুমের দেশে পাড়ি জমালেন। আহান আর আমি বেরিয়ে আসলাম হাসপাতাল থেকে। গাড়িতে ওঠবেো তার আগেই চোখ যায় রাস্তায় থাকা ফুচকাওয়ালার দিকে! মেয়ে হয়েছি অথচ ফুচকাকে ইগনোর করে চলে যাবো? উঁহু! এটা তো এক্কিবারে হতে দেওয়া যাবে না!
বায়না জুড়লাম আহানের কাছে। উনার চোখে মুখে বিরক্তিকর ছাপ! আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে ফুচকাওয়ালার কাছে চলে গেলাম!
-‘ মামা ঝাল দিয়ে ফুচক দিন তো!’
-‘ ঝাল তো খেতে পারিস না তাহলে ঝাল ফুচকা খাচ্ছিস?’
-‘ ফুচকা ত ঝাল ছাড়া ভালো লাগে না!’
বলতেই ফুচকা মামা দু প্লেট ঝাল দেওয়া ফুচকা দিয়ে দিলেন আমার হাতে। আহানের প্লেট হাতে দিতেই উনি মুখে পুড়ে নিলেন। আমি একটা খাই তো উনি দু’টো খান! বুঝলাম উনি প্রচুর ঝাল খেতে পারে যা আমি পারি না! তবুও জেদ করে ফুচকা গুলো খেলাম। ইতিমধ্যে উনি নিজের খাওয়া শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এদিকে ঝালের চোটে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে! উনি সযত্নে আমার হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিলেন!
-‘ পাকামো করলে এমনিই হয়। এবার এটা খেয়ে উদ্ধার করুন আমায়!’
আমি খেয়ে নিলাম। রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছি আহানের পাশে। হঠাৎই উনি কোথায় যেনো চলে গেলেন। ভড়কে ওঠলাম উনাকে ছাড়া! ফোন করবো যে ফোনও আনিনি। ইতিমধ্যে কান্না চলে আসছে আমার। তারপরই পাশে অনুভব করলাম কেউ আমার হাত টেনে ধরেছে। তাকাতেই আহানকে দেখতে পেলাম। কান্না সামলাতে পারলাম না আর।
(আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা টাইমলাইনে পোস্ট করা নিষিদ্ধ! কার্টেসি সহও পোস্ট করা নিষিদ্ধ!
-‘ কোথায় গেছিলেন হ্যাঁ? জানেন আমি কতো ভ’য় পেয়ে গেছিলাম?’
-‘ ভ’য় পেতে হবে না আমি তো তোর পাশেই আছি!’
আমি আর কিচ্ছু না বলে উনার হাত দু’টো আমার মুঠোয় পুড়ে নিলাম শক্ত করে। যেনো হাতগুলো ছাড়লেই উনি পালিয়ে যাবেন আমাকে ছেড়ে। ফুটপাতে দাঁড়ালেন। এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও এখন দেখলাম উনার হাত একটা প্যাকেট রয়েছে! উনি আমার মা’থায় খোপায় হাত দিলেন। উনার বাম হাতে থাকা সেই প্যাকেট থেকে বেলী ফুলের মালাখানি আমার খোঁপায় গুঁজে দিলেন!
ফুলগুলো সতেজ, টাটকা। আমার গা থেকে টাটকা বেলীফুলের সুঘ্রান ভেসে আসছে।
-‘ উমমম খারাপ না সুন্দরই লাগছে তোকে!’
-‘ তো এবার কয়েকটা ছবি তুলে দিন আমাকে?’
-‘ আবার ছবি?’
-‘ হ্যাঁ আমাদের দু’জনেরই। এই প্রথম আপনি আমাকে কিছু কিনে পড়িয়ে দিলেন ভাবা যায়? সেটা স্মৃতিবন্ধি করতে হবে না?’
-‘ শাড়িটাও কিন্তু আমারই!’
-‘ হ্যাঁ এবার দু’টো ছবি তুলুন না এরকম করছেন কেনো?’
-‘ তুলছি তো!’
ছবি তোলা শেষ করে গাড়িতে ওঠলাম। গাড়ির জানলা দিয়ে মা’থা বের করে সন্তপর্নে তাকিয়ে আছি বাহিরের খোলা প্রকৃতির দিকে! রাত্রের আবছা আলোয় শহরটা কেমন রঙিন লাগছে। মাথার উপর বিশাল চাঁদ তার রশ্নি ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বোত্র! আকাশ জুড়ে ঝিকিমিকি তারা জ্বলছে। বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না আমার সেই দৃশ্য দেখার শখ! ধ’মক দিয়ে ওঠলেন আহান! নির্দেশ দিলেন মা’থা ভেতরে আনার। আমি তার কথা শুনে চুপটি করে গাড়িতে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিতো হবার পর বাড়িতে এসে পৌঁছালাম। বাবা মা চলে গিয়েছেন আমাদের বাড়িতে। এখন আহানদের বাড়িতে আমি লতা, আহান, দাদি, চাচ্চু, আর একজন কাজের বুয়া আছেন। আমি রান্না করে গিয়েছি এখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় দশটা বেজে গেছে। ইতিমধ্যে সবাই নাকি খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেছে। আমিও দু’টো খেয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্য রুমে গেলাম। কিন্তু শাড়ি পড়ে তো ঘুমানো যায় না। তাই গায়ের সেই থ্রি পিস যেটা এখন শুকিয়ে গেছে ওটা পড়েই শুয়ে পড়লাম। বিছনার মধ্যিভাগে কোলবালিশ দিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে। একটু পর অনুভব করলাম আহান আমার পাশে শুয়ে আছে। তিনি কোলবালিশ টা সড়িয়ে দিয়ে আমার মধ্যে থাকা দুরত্ব ঘুচিয়ে আমার কাছে আসলেন।
-‘ এই কোলবালিশ দিয়ে দুরত্ব বাড়াস কেনো প্রতিদিন?’
-‘ সে দুরত্ব আগে থেকেই বিদ্যমান!’
-‘ তুই যতো দুরত্ব বাড়াবি আমি ততোই দুরত্ব ঘুচিয়ে দিবো!’
উনার কথা শুনে ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাস বেড়িয়ে আসলো! উনি কতোটুকু দুরত্ব ঘুচাবেন আর? যেখানে ভালোবাসাই নেই…!
-‘ এই দুরত্ব ঘুচাবার নয়!’
-‘ মানে?’
-‘ মানে আপনি তো মিলাকে ভালোবাসেন তাহলে এসব বলছেন কেনো?’
-‘ মিলাকে শুধু আজকে নয় সেই পাঁচ বছর ধরেই মনের কোনে লুকিয়ে রেখেছি!’
উনার কথা শুনে কান্নারা ভর করলো! বুঝতে দিলাস না। অতি সন্তপর্নে চোখ থেকে অশ্রু মুছে নিলাম। মানে সেই পাঁচ বছর আগে যে ফোনকল শুনেছিলাম সেটাই সত্যি! উনার এইসব ব্যাবহারে মনে হয় উনি হয়তো আমার প্রতি দুর্বল! কিন্তু আজ তো ভে’ঙেই বলে দিলেন তিনি পাঁচ বছর ধরে মিলাকে ভালো বেসে আসছেন! কষ্টের পাশাপাশি অভিমান এসে জড়ো হলো! কোলবালিশ টা আবারো মাঝখানে রাখলাম। উনার উল্টোদিক ফিরে শুয়ে পড়লাম..!
-‘ কিরে আবারো কোলবালিশ দিলি?’
-‘ বললাম না দুরত্বই বজায় থাকবে!’
-‘ যেটা তোর মর্জি!’
-‘ তো খ’বর’দা’র! আর ভুলেও কোলবালিশ সরাবেন না! মিলাকেই জড়িয়ে ধরে ঘুমান আপনি!’
-‘ তাই তো করতে যাচ্ছি! ‘
-‘ মানে?’
-‘ তোর মো’টা মা’থায় ঢুকবে না! চুপ করে থাক!’
মা’থা মো’টা বলায় রা’গ এবার আরো বেড়ে গেলো! উনার হাত সড়িয়ে বারান্দায় চলে গেলাম! দাঁড়িয়ে থাকলাম নিরবে কিছুক্ষণ! কিয়ৎক্ষন পূর্বের কথা মনে পড়তেই আবারো কান্না রা এসে ভড় করলো! উনি নিজের মুখে স্বীকার করলেন তবুও আমার কাছে আসার বাহানা! উনি যখন এতোই মিলাকে ভালোবাসে তাহলে সেদিন প্রপোজ কেনো করেছিলো আমাকে? আমার পুতুল পেয়েছেন নাকি?
-‘ সে তুমি যতোই মা’থা মো’টা হও না কেনো! তুমি আমাতেই সীমাবদ্ধ! হয়তো এবার উপলব্ধি করতে পারবে ঠিক কতোটা ভালোবাসো আমাকে। তোমার চোখে দেখেছি আমার জন্য ভালোবাসা! সেটা কেবল প্রকাশ করার পালা। দীর্ঘ অপেক্ষা করেছি এবার একটু অপেক্ষা তুমিও না হয় করো মৃদুলা!’
আহানের ঠোটে বিজয়ীর হাসি! সে বুঝতে পেরেছে মৃদুলা কষ্ট পাচ্ছে! এটাই দরকার এখন তাদের সম্পর্কের উন্নতির জন্য! মৃদুলা যতো কষ্ট পাবে রা’গ হবে ততো বুঝতে পারবে সে আহানকে কতোটা ভালোবাসে!..
-‘ ভেতরে চল!’
-‘ আমি যাবো না তো আপনার কি?’
-‘ সোজা আঙুলে ঘি না ওঠলে বাঁকাতে হয় সেটা তো জানিসই…?’
-‘ এখান থেকে চলে যান!’
-‘ তোকে নিয়েই তবে যাবো।’
আহান মৃদুলাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মৃদুলা জোরাজুরি করছিলো কিন্তু একজন পুরুষের কাছে একজন নারীর শক্তি নিতান্তই তুচ্ছ!! মৃদুলা ব্যার্থ হলো! চুপটি করে শুয়ে রইলো আহানের পাশে.. ভাবতে লাগলো যদি আহানের মনে সে থাকতো? তাহলে হয়তো আজকে মনের না বলা কথা বলে দিতে পারতো…!
#চলবে
#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে –[১১]
#নিহা (মুনিয়া)
____________________
আজানের শব্দ ধ্বনি কানে প্রবেশ করতেই তড়িঘড়ি করে ওঠে নামাজ টুকু পড়ে নিলাম। নামাজ পড়া শেষ হতেই রান্নাঘরে চলে গেলাম খাবার বানাতে। খাবার বানানো শেষ করে সকলকে খাইয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে রুমে গেলাম আহানকে ডাকার জন্য। রুমে গিয়েই দেখতে পেলাম আহান মন দিয়ে কিছু একটা লিখছে। আমাকে দেখতেই হরবর করে ডায়েরি টা বন্ধ করে দিলো..!
-‘ কি লিখছিলেন এতো? ‘
-‘ অন্যের পার্সনাল জিনিসে এতো দেখতে হয় না।’
উনি ধরাম করে ডায়েরি টা বন্ধ করে দিলেন। আমি রুম থেকে চলে গেলাম। কিন্তু উঁকি মেরে দেখলাম উনি আসলে কি করতে চাইছেন। তারপর যা দেখলাম উনি ডায়েরিটা বন্ধ করে উনার আলমারিতে একটা জামার ভেতর লুকিয়ে রাখলেন! বুঝলাম না একটা ডায়রীর জন্য এতোকিছু কেনো? কি এমন লেখা আছে ওতে? কিসের জন্য উনি এতো লুকোচুরি করছেন ওটা নিয়ে?? এই এতো প্রশ্ন নিয়ে থাকতে পারবো না! সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হউক উনার সেই ডায়েরি আমাকে একবার হলেও পড়তে হবে। জানতে হবে কি এমন আছে। তবে আপাততো হাসপাতালে যাওয়া দরকার। চাচিকে ছেড়ে দিবে আজকে। আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমার সঙ্গে চাচা, আহানও গেছে। হাসপাতাল থেকে ভালোয় ভালোয় চাচিকে বাসায় আনলাম।
-‘ মৃদুলা এই ক’দিনে তুই যা সেবা করলি আমার! আমি কৃতজ্ঞ! ‘
-‘ চাচি এসব বলো না তো। ‘
-‘ তোর থেকে দূরে থাকতে আর ইচ্ছে করছে না এবার বল দেখি তোর পরিক্ষার আর কতোদিন বাকি আছে?’
-‘ উমম দেড় মাস তো কেটেই গেলো আর বাকি আছে দেড় মাস।’
-‘ উফ এই দেড় মাস এবার তাড়াতাড়ি চলে গেলে বাঁচি। তারপর তোকে একেবারের জন্য নিয়ে আসবো আমার কাছে। ধুমধাম করে তোদের বিয়ে দিবো। ‘
আমি প্রতুত্তর করলাম না। চলে আসলাম রুম থেকে। কেনো জানি ভালো লাগছে না এসব কিছু। আহান তো আমাকে ভালোইবাসে না এসব বিয়ে না হলেই কি? এই দেড় মাসে আমার আর উনার বিয়ের তিন মাস পূর্ন হবে। তিন মাসের আগে যেহেতু ডির্ভোস হয় না তাই এই দেড় মাস আমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। তারপর আহানকে স্বাধীন করে দিবো তার নিলার কাছে..!
______________
দেখতে দেখতে সময় অতিবাহি হয়েছে সাত দিন! এখন আহানের মা পুরোপুরি সুস্থ। এই ক’দিনেও আহান আর মৃদুলার সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি বললেই চলে। আহান বেশিরভাগ সময়ই বাহিরে থাকতো। মৃদুলা ঘরের কাজ করতো বা কখনো লতার সাথে গল্প করতো। দিনশেশে আহান এসে মৃদুলার পাশে চুপটি করে শুয়ে থেকে গোটা দিন পার করে দিয়েছে! এভাবেই কেটেছে সময়.. এখ মৃদুলারও যাবার সময় এসেছে। আহান রেডি হয়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে ফিরে যাবার অপেক্ষায়। ওদিকে মৃদুলা বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে আসলো। হঠাৎই মৃদুলার মনে হলো সেই ডায়েরির কথা! যেটা সে এখনো নিজের কাছে আয়ত্ত করে ওঠতে পারেনি! আহান সবসময়ই আলমারির চাবি নিজের কাছে রাখতো। কখনো কিছু দরকার পড়লে নিজে বের করে দিতো কিন্তু কখনো মৃদুলাকে আলমারির চাবি ধরতে দেয়নি।
-‘ একটু আপনার আলমারির চাবিটা দিবেন? আপনার আলমারিতে আমার একটা জামা আছে। ওটা আনবো। ‘
-‘ না আনলে হয় না?’
-‘ ওটা আমার প্রিয় জামা। প্লিজ না করবেন না। আপনি চাবিটা দিন আমি যাবো আর আসবো। ‘
-‘ আচ্ছা চল তোর সঙ্গে আমিও যাচ্ছি! ‘
উফ এই লোকটা কি এমন লুকিয়ে রেখেছে আলমারিতে? আমাকে চাবিটুকুও দিচ্ছে না! এখন যে ডায়েরির জন্য এতকিছু বললাম ওটা আহানের সামনে থেকে আনবো কি করে?
-‘ কিরে চল? ‘
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন। ‘
রুমে গিয়ে আহান আলমারিতে আমার জামাটা খুঁজতে লাগলো। ততক্ষণে মা’থায় একটা বুদ্ধি আসলো। উনাকে যে করেই হউক আলমারি থেকে একটু সরাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ উনাকে সরানোর জন্য কার্য সিদ্ধি করতে লাগলাম। উনি জামাটা আমার কাছে দিলেন যেউ না আলমারি তালা দিবেন ঠিক তখুনি ফুলদানিটা মাটিতে ফেলে দিলাম ঠিক নিজের পায়ের কাছে! পায়ের কাছে পড়ার জন্য পায়ের একটু জায়গা কে’টেও গেছে! আমার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি ব্যাথায় আ’র্ত’না’দ করতেই আহান আমার কাছে আসলো হন্তদন্ত হয়ে..!
-‘ কি হয়েছে! একটা কাজও ঠিকমতন করতে পারিস না? পা টা কতোটুকু কেটে গেলো দেখলি?’
-‘ আমাকে না বকে একটু ফাস্ট এইড বক্সটা আনলেও তো পারেন! ‘
-‘ হ্যাঁ যাচ্ছি! ‘
এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলাম আমি। উনি চলে গেলেন ফাস্ট এইড বক্স আনতে! তাড়াহুড়োয় আলমারি বন্ধ করতে ভুলে গেছেন। আমি চট করে আলমারি থেকে উনার সেই ডায়েরি টা বের করে চটজলদি নিজের সাইড ভ্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আবারো সেই আগের জায়গায় বসে রইলাম চুপটি করে।কিছুক্ষণ পর উনি আসলেন আমার পায় ব্যান্ডেজ করে দিলেন সযত্নে!
-‘ জামাটা নিয়েছিস তো? ‘
-‘ হ্যাঁ নিয়েছি এবার চলুন। ‘
– ‘ এভাবে যাবি কি করে? পায়ে সদ্য আ’ঘাত পেয়েছিস এখন এই সিঁড়ি বেয়ে নেমে হেঁটে গেলে তো আরো ব্যাথা পাবি! তার চেয়ে বরং আমিই একটা ব্যবস্থা করছি! ‘
আহান আমাকে কোলে তুলে নিলো! আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে। এই প্রথম উনি আমাকে কোলে নিলেন। উনার অনেকটা কাছে আমি। কেমন জানি অনুভূতি হচ্ছে উনাকে এতোটা কাছ থেকে দেখতে পেয়ে.. উনিও আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। দু’জনের দৃষ্টি আবদ্ধ একে অপরের দিকে। উনার ওই ঘোর লাগা দৃষ্টি উপেক্ষা করবার সাহস আমার মধ্যে নেই। আমি তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে! কেউ বলবে না উনার মায়া ভরে চোখটায় আমার জন্য কোনো ভালোবাসা নেই! এতোটাই মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে আছেন উনি। গাড়িন সামনে নামিয়ে দিলেন আমাকে। গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন! গাড়ি ছুটে চলেছে আমাদের গন্তব্য স্থলে। আমিও চুপটি করে বসে রয়েছি।
___________________
বাসায় পৌঁছালাম। ডায়েরিটা যে খুলে দেখবো তারও উপায় নেই! আহান আঠার মতন সঙ্গে চিপকে রয়েছে আমার। বাজার করতে পাঠাবে যে আজকে রান্না করতে হবে না আর চাচি খাবার দিয়ে দিয়েছে। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সারাদিন জার্নি করে এসে বিছানায় শুতেই ঘুমের রাজ্য এসে ভর করলো চোখে। ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম। সেই ঘুম থেকে ওঠলাম একেবারে আহানের ডাকে! ঘুম থেকে ওঠে দেখি সকাল আটটা বেজে গেছে। আমি সন্ধ্যা সাতটায় ঘুমালাম আর ওঠলাম সকাল আটটা বাজে! এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি?’
-‘ হ্যাঁ তুই এতোক্ষণই ঘুমিয়েছিস। এবার ফ্রেশ হয়ে ওঠে ব্রেকফাস্ট করে আমাকে উদ্ধার কর দেখি!’
-‘ কি বানিয়েছেন আপনি?’
-‘ আমি বানাতে পারলে তো বানাবো নাকি বেকুব! বাজার করে এনেছি রান্নার জন্য। আর নাস্তার জন্য বাহির থেকে ব্রেড আর বাটার কিনে এনেছি। ব্রেডে বাটার দিয়ে খেয়ে রেডি হয়ে নে ভার্সিটি যেতে হবে তো।’
এতো ঘুম ঘুমিয়ে ঘুমের রেশ কাটেনি এরূপ অবস্থা আমার! চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রয়াস চালাতেও ব্যার্থ হলাম আহান নামক মানুষটির জন্য! রেডি হয়ে উনার ব্রেড বাটার খেয়ে কোনোমতে উনার সঙ্গে গেলাম। সেই আগের নিয়মেই উনি আমাকে ভার্সিটি থেকে কিছু দূরে নামিয়ে দিলেন আমি রিক্সা নিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলাম। ভার্সিিট শেষে করে রুমে আসতেই আমি ডায়েরি খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু একি!! আমি ডায়েরি তো দূরের থাক আমার সাইড ব্যাগই তো খুঁজে পাচ্ছি না এখন কি হবে? ঘরের সবটুকু জায়গা এলোমেলো করে খুঁজেও ব্যার্থ হলাম! ইশশ এতো কষ্ট করেও যদি ডায়েরি টা না পড়তে পারলাম কেমন হলো! আমার সব কষ্ট বৃথাই গেলো!
-‘ কিছু খুঁজছিস নুড়ি?’
উনাকে হ্যাঁ বললেও বি’প’দ আবার না বললেও বি’প’দ! উপায়ন্তর না পেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিলাম।
#চলবে?