হারিয়ে চাইছি তোমাকে পর্ব-০৯

0
298

#হারিয়ে_চাইছি_তোমাকে — [৯]
#নিহা (মুনিয়া)
_____________________

সবাই এখন একটু বিশ্রাম নিচ্ছে দিনশেষে। আহানের খাওয়া দাওয়া হবার পর বাসায় গেলাম রাত্রের রান্না করতে। আহানও বাসায় এসেছে হাসপাতালে চাচ্চু আর দাদি আছে। চাচ্চুদের বাসাটা দোতালা ভবন বিশিষ্ট। সবগুলো রুমের সামনে বারান্দা রয়েছে আর প্রত্যেকটা ঘরও খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো। ছাদের কথা তো বলাই বাহুল্য! এত্তো সুন্দর গাছ গাছালি দিয়ে ছাদটা পরিপূর্ণ রয়েছে। ছাঁদে ওঠলেই মন ভালো হয় যায় আমার। আজকেও ছাঁদে ওঠে এক পাশে একটু বসলাম একটা গোলাপ ফুলের কাছে! গোলাপটা লাল গোলাপ নয় গোলাপ ফুল টা ছিলো সাদা রঙের! বহুদিন পর সাদা গোলাপ দেখতে পেতেই বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠলো! মনে পড়ে গেলো সেই পাঁচ বছর আগের কথা এই সাদা গোলাপ দিয়েই তো আহান আমার কাছে এসেছিলো…
আমি বেশ ছোটোবেলা থেকেই আহানকে ভ’য় পাই উনার রা’গী স্বভাবের কারনে! তখন আমি সদ্য ক্লাস নাইনের গন্ডিতে পা রেখেছিলাম। আমার দাদার মৃতু্যবার্ষিকি পালন করতে গ্রামে যাই। সেরকম-ই এক রাত্রেবেলা আমি রাত্রের আবছা আলোয় দেখতে পাই আহান কোনো এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে! যদিও বা কিছু কথাগুলো অস্পষ্ট ছিলো তবুও আমি শুনতে পাই…

-‘ ভালোবাসি, ভালোবাসি ব্যস শুধু তোকেই ভালোবাসি। আমার জীবন তোর সঙ্গে বাঁধতে চাই। সারাজীবন থাকতে চাই তোর সঙ্গে। এবার শুধু তোর অনুমতির অপেক্ষা! এবার হয়েছে তো?’

সেদিন এই কথাগুলো শুনে স্পষ্ট বুঝে গেছিলাম উনি কাউকে ভালোবাসেন। কিন্তু তখনও কোনো মা’থা ব্যাথা ছিলো না আমার উনাকে নিয়ে। উনি যাকে খুশি ভাভালোবাসতেই পারেন। তাতে কোনো অসুবিধে নেই। পরিস্থিতি খা’রা’প তখন হয় যখন উনি সেইদিন রাত্রেবেলা আমার রুমে আসলেন। উনার হাতে ছিলো সদ্য তুলে আনা এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ! উনি চোখ দু’টো বন্ধ করে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো….

-‘ ভালোবাসি! শুধু তোকেই ভালোবাসি। তোর সঙ্গে থাকতে চাই সারাজীবন! এবার তুই বল থাকবি তো? দিবি তো আমায় অনুমতি তোর সঙ্গে থাকার? আমি তোকে ভালোবাসি মৃদুলা!’

মৃদুলা আহানের প্রতিত্তোরে আহানকে ঠা’স করে সেদিন থা’প্প’ড় দেয়! আহান অশ্রু টলমল চোখে তাকিয়ে ছিলো মৃদুলার দিকে হয়তো এটা কাম্য করেনি সে!

-‘ কি ভেবেছেন কি? আপনি বলবেন ভালোবাসি, ভালোবাসি আর আমি সবটা মেনে নিবো! উঁহু কখনোই না! আর যাই হোক আপনার মতন লোককে ভালোবাসা তো দূর ভালো করে কথাও বলা যাবে না। শুনুন ভালোবাসলে একজনকেই আপনার ভালোবাসার ভেতর সীমাবদ্ধ রাখুন সেটাই হবে ভালোবাসা! এরকম ভালো বাসবেন না যে জনে জনে ভালোবাসা বিলাতে হবে। যদি সত্যিকারের ভালোবাসেন তো সেই ভালোবাসা একজনের ভেতরই সীমাবদ্ধ রাখুন।’

-‘ এতো কথা আমি তো শুধু তোকে ভালোবাসি বলছি মৃদুলা! তুই কি বলছিস এসব?’

-‘ সেটাই তো ভালোবাসা শুধু ভালোবাসার মানুষের অব্দিই সীমাবদ্ধ রাখুন অন্য কারো প্রতি আসক্ত না হয়ে।’

সেদিন আহানের সেই সাদা গোলাপ গুলো মৃদুলা ফেলে দিয়ে চলে যায়! রাত্রেবেলা আহানের ফোনকলে মৃদুলা বুঝে ছিলো সে কাউকে ভালোবাসে। আর সেই রাত্রে বেলাই আহান মৃদুলাকে ভালোবাসি বলছে! ব্যাপারটা বুঝতে পারর মৃদুলা সে ধরে নেয় আহান তার সঙ্গে মজা করছে কিংবা টাইমপাস করতে এসেছে। কারন মৃদুলা ফোনকল শুনে অলরেডি বুঝে গেছিলো আহানের মনের মানুষ আছে নয়তো ভালোবাসি বলছিলো কেন ফোনে? তাই আহানের ভালোবাসি বলাটা মেনে নিতে পারেনি মৃদুলা। পরিশেষে সে জানে আহানের রা’গের সম্পর্কে তাই বেশি কথাও বলতে পারেনি….

শর্টকাটে যতোটুকু পেরেছিলো আহানকে বলে দিয়েছিলো। সেদিনের পর থেকে আহানকে আর চোখের সামনে দেখতে পায়নি মৃদুলা আহান চলে যায় বিদেশে! আর ফিরে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর! আহান যেরকম বিদেশের শক্ত মাটিতে নিজেকে তৈরী করছিলো তেমনি মৃদুলাও তার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো! সময় অতিবাহিতো হতো নিজের মতন করে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু পাচ বছর পর আহান দেশে ফিরার পর মৃদুলার মনে সুপ্ত জায়গা নেই আহান নামক মানুষটি! সে ভুলেই গেছিলো পাঁচ বছর আগে ঠিক কোন কারনে আহানকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। সেই কথা মা’থায় না রেখে মনে ঠাই দিতে শুরু করে আহানকে!
আহানের মন সেই পাঁচ বছর ধর মৃদুলাই ছিলো। সেদিন রাত্রেবেলা আহান তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলো কিভাবে মৃদুলাকে প্রপোজ করবে।
মৃদুলাকে যেভাবে বলবে সেই বন্ধুটাকেও সেইরকম ভাবে বলেই প্রস্তুতি নেয় আহান সেইজন্য তো

বলেছিলো ” ভালোবাসি, ভালোবাসি শুধুই তোকে, এবার হয়েছে তো?”

মৃদুলা বুঝতে পারেনি। সে ভেবেছে আহান কাউকে ভালোবাসি বলছে আর ওদিকে আহান তার বন্ধুর সঙ্গে আগ থেকে বলে রাখছিলো কিভাবে মৃদুলাকে প্রপোজ করবে।
মৃদুলা বোঝেনি, আর না সুযোগ দিয়েছিলো আহানকে বোঝানোর….
(আমি ব্যাতীত আমার গল্প অন্য কোনো গ্রুপ বা নিজের আইডিতে পোস্ট করা নিষিদ্ধ! কার্টেসি সহও।)
______________

ঠিক এই সাদা গোলাপ দিয়েই এসেছিলেন আপনি আহান! কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছিলো তখন আমি বুঝে গেছিলাম আপনার মে অন্য কেউ আছে আর সেই ধারনাটাই সঠিক আপনি এখনো নিলাকে ভালোবাসেন যেটা নিজের মুখে স্বীকার করেছেন! তবুও এই মন আপনার কাছে ছুটে যেতে চায় খালি।

-‘ আমার সাধের গোলাপ গুলো নিয়ে কি করছিস তুই!’

মৃদুলা গোলাপফুল গুলো নিয়ে ভাবছিলো আর তখুনি আহানের গরার আওয়াজ শুনে ঘাবড়ে যায়!

-‘ এমনি দেখছিলাম। সাদা গোলাপ আপনার খুব পছন্দের তাই না?’

-‘ হুম খুব পছন্দের!’

-‘ তাহলে নিন! এই গোলাপের গুচ্ছ গুলো আপনিই রাখুন!’

মৃদুলা চলে যায় ছাঁদ থেকে। আহান ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে হাসছে!

-‘ যেই সাদা গোলাপ নিয়ে তোর কাছে গেছিলাম তুই ফিরিয়ে দিয়েছিলি। আর আজকে সেই সাদা গোলাপই আমাকে দিচ্ছিস তুই! পাঁচ বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে তবে এবার সেটা ঘটাবি তুই!’

মৃদুলা রান্নার কাজে মনোযোগী হয়। এখন রান্না শেষ করে একেবারে হাসপাতালে গিয়ে চাচিকে খাইয়ে দিয়ে তারপর রাত্রে বাসায় ফিরবে এই মনোভাব নিয়ে রান্না করতে লাগলো।
ঘন্টা তিনেকের মধ্যে মৃদুলার চাচির জন্য রান্না সহ বাড়ির সবার জন্য রান্না করা শেষ হয়ে গেলে আহানের রুমে যায় ফ্রেশ হতে। একে তো গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড গরম তার উপর এতোটা সময় আ’গুনে’র পাশে ছিলো ওয়াশরুমে ঢুকেই শাওয়ার নিতে লাগলো রুম থেকে বেরোবে তখন-ই মনে হলো এই বাড়িতে তো তার কোনো জামা কাপড়ই নেই এখন কি করবে মৃদুলা! ভেজা জামাকাপড় নিয়ে রুমে এসে দাঁড়ায়। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বেশিক্ষণ ভেজা জামাকাপড় পড়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তাই লতাকে ডাকছে। লতার রুমটা নিচ তলায় তাই হয়তো লতা মৃদুলার ডাক ভালো করে শুনতে পাচ্ছে না!
খাটের উপর আহানের একটা টি শার্ট আর প্যান্ট দেখতে পায় মৃদুলা! বাধ্য হয়ে ওটাই গায়ে পড়ে নেয়।
ড্রেসিং টেবিলে চুল আঁচড়ে বেডে পিছন দিক ফিরে বসে ফোনে কিছু একটা দেখছিলো মৃদুলা! হটাৎই দরজা বন্ধের শব্দ শুনে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখতে পায় আহানকে!

-‘ কাছে আসার জন্য এভাবে আকৃষ্ট করছিস!’

-‘ একদমই না!জামাকাপড় আনিনি তাই আপনারটা পড়েছি।’

-‘ পড়েছিস যখন আমি তো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না আর!’

-‘ দূরে যান! ‘

-‘ দূরে কেনো নুড়ি পাথর এখন তো কাছে আসবো শুধু।’

আহান শার্টের বোতাম খুলে একটু একটু করে মৃদুলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি রেখে। মৃদুলা ভ’য় পাচ্ছে সেটা মৃদুলার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে!

-‘ শার্ট কেনো খুলছেন?’

-‘ না খুললে তো হবে না!’

আহান মৃদুলার কাছে যেতে যেতে মৃদুলাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দেয় মৃদুলা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেল…

-‘ লজ্জাবতী লতা হতে হবে না তোকে! যার মনে আমি নেই তার শরীরে নিজের বিচরন করে কি করবো? এই নে এতে জামাকাপড় আছে তোর পড়ে রেডি হয়ে নে। আর আমিও শাওয়ার নিবো তাই শার্ট খুলেছি!’

মনটা যেমন একদিক দিয়ে ভালো হয়ে গেছিলো উনি আমার জন্য কাপড় এনেছিলেন এটা ভেবে তেমনি খারাপ লাগায়ও ভড়ে গেলো উনার কথা শুনে! উনি কি বুঝতে পারেননা আমার মনে উনিই আছেন! ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো তাচ্ছিল্যের হাসি! যার মনে অন্য কেউ সে কি বুঝবে আমার মনে তার বিচরন?

#চলবে?