#৩.২০ মিনিট
#রাবেয়া_সুলতানা
#৩
___জেবা “এই জেবা”মেয়েটা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।জিসান চলে যাওয়ার পর থেকেই মেয়েটা চুপচাপ হয়ে থাকে।সময়মতো খাওয়া দাওয়া খায় না।ঠিক মতো ঘুমায় না।চেহারাটার কিযে অবস্থা বানিয়েছে। মেয়েটার বাবার কাছ থেকে কতো বিনয়ী করে মেয়েটাকে রেখেছি এই বাড়িতে।কথা গুলো বলতে বলতে চায়ের পাতিলটা চুলা থেকে নামিয়ে,মারিয়া দেখতো জেবা উঠেছে কিনা?আমি জোভানের রুমে গিয়ে দেখি ছেলেটা ফ্রেশ হলো কিনা।
-বড় মা ” জোভান ভাইয়া তো রুমে নেই।
মারিয়ার কথা শুনে জিসানের মা রান্না ঘর থেকে এসে ছেলেটা আসতে না আসতে কই গেলো? ছোটো থেকেই দেশের বাহিরে ছিলো দেশের তেমন কিছু চিনেও না।বাহিরে গিয়ে কোন বিপদ ঘটায় আবার?
,,,,,,,,,,,,,,
বললেন না তো আপনি কে? আর এই কথা আপনি জানলেন কি করে? জিসানের সাথে আমার কি কথা হয়েছিলো?
জোভান মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে, ভালোবাসি ভালোবাসি, ভালোবাসি, কথা দিয়েছিলো তোমায় শুধু একজনি।তাই না জেবা?
কথাটা শুনে জেবা খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে, কে আপনি? আপনি কি করে জানলেন জিসান আমায় কি কথা দিয়েছিলো?
আর আপনি আমার রুমে আসলেন কেনো?
জোভান কিছু বলতে যাবে এমন সময় জিসানের মা এসে,জোভান তুই এইখানে? আর আমি তোকে খুঁজে বাড়াচ্ছি।
জেবা জিসানের মায়ের দিকে তাকিয়ে, মা ইনি কে?
জিসানের ভাই জোভান।ছোটো বেলা থেকেই দেশের বাহিরে ছিলো আজ ভোর রাতে এসেছে।তুই ঘুমে ছিলি বলে আমি ডাকিনি।
জোভান এই হচ্ছে জেবা।
-আমি আগে থেকেই চিনি মা।যার জন্য আমার ভাইটা এতো পাগল ছিলো তাকে চিনবো না?
-এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে বাবা।জেবা তুমিও যাও।আমি নাশতা দিচ্ছি তোরা আয়।
জোভান চলে যাওয়ার পর জেবার মাথায় একটায় চিন্তা, জোভান সাহেব আমার রুমে এসে আমার খাটেই বসলেন।যখন আমি উনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম তখন তো উনি কিছু বলেন নি।কিন্তু কেন?
জোভান এসেছে দুইদিন পেরিয়ে গেলো।সেইদিনের পর থেকে জোভান জেবার সাথে তেমন কথা বলেনা।তবে লুকিয়ে লুকিয়ে যে জেবাকে দেখে সেটা জেবার চোখ থেকে আড়াল হয়নি।জোভান কে নিয়ে জেবার মনে অনেকটাই প্রশ্ন জেগেছে।কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।জোভান বেশির ভাগ বাহিরেই থাকে। যখনি বাড়ি এসে নিজের রুমেই কাটায়।
জেবা ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে জোভান তার রুমে কিছু খুঁজছে।জেবাকে দেখেই জোভান মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
এই লোকটা কেমন অদ্ভুত। কিছু লাগলে আমাকে তো বলতে পারতো কিন্তু নিজে নিজে কি খুঁজতে চাইছে?
হাতের তোয়ালেটা খাটের উপর রেখে,জোভান আধ খোলা ড্রয়ারটা রেখে যাওয়া দেখে জেবা এগিয়ে গিয়ে আটকাতে গিয়ে দেখে জিসানে ডাইরিটা নেই।
তার মানে জোভান ডাইরিটা নিতেই আসছে।
নাহ্ আমাকে জানতেই হবে এই জোভান চাইছে টা কি?
বিকেলে জেবার বাবা এসেছে, ড্রইংরুমে বসে জিসানের কাকা আর বাবার সাথে কথা বলছে।তারা চাইলে মেয়েকে তিনি নিয়ে যাবেন।জিসান চলে গেছে কিন্তু মেয়েকে তো এই ভাবে রাখা যায়না।জেবার জন্য নতুন সমন্ধ দেখছেন তিনি। তাই জেবাকে আজ নিয়ে যাবেন।জিসানের মা যেনো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।বুজিয়ে শুনিয়ে তো কয়েকটা মাস রাখলাম।কিন্তু কোন অধিকারে আমি উনার মেয়েকে রাখবো?
যার অধিকারে রাখবো সে তো নিজেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
জেবা তার বাবার সামনে আসতেই, মা তুমি এখনো রেডি হও নাই? যাও রেডি হয়ে নাও।তোমার মা বসে আছে তুমি যাবে সেই অপেক্ষায়।
জেবা তার বাবাকে কথাটা কি ভাবে বলবে বুজতে পারছেনা।কিছুক্ষণ কাছুমাছু করে তার পর বললো,বাবা আমি এখন যাবো না।কিছুদিন পর তুমি আসতে হবে না আমি নিজেই চলে যাবো।
কথাটা শুনেই জিসানের মায়ের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
কিন্তু মা,আমি যে তোমাকে নিতে এসেছি।
-বাবা এইবাড়ি ছেড়ে তো আমি চলেই যাবো।জিসানের স্মৃতি গুলো সব এই বাড়িতেই পড়ে আছে।বাবা আমাকে আর কিছুটা দিন থাকতে দাওনা ওর স্মৃতির সাথে। কথা গুলো বলতেই জেবার চোখে পানি এসে গেলো।
জেবার বাবা মেয়েকে আর জোর করলেন না।চুপ হয়ে মাথা নিচু করে নিজের চোখ দুটো মুছে নিলেন।
জোভান বাহিরে থেকে এসে জেবার বাবাকে দেখে সালাম করে জেবার দিকে তাকিয়ে উনি আপনার বাবা তাইনা?জেবা কিছু বলছেনা।জিসানের কাকা বললো, হ্যাঁ “কিন্তু তুই চিনলি কি করে?
জোভান মুচকি হেসে , অবাক হওয়ার কি আছে কাকা।আমি আরও এমন কিছু জানি যা শুনলে তুমি আরও অবাক হয়ে যাবে।
-মানে?
-মানে খুবি সোজা।সময় আসুক সব বুজতে পারবে।
জেবার বাবা মায়েকে না নিয়েই চলে গেলেন।আজ জেবা নিজে নিজেই ছাদে গেলেন।চারদিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকারে আছন্ন। মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকোচুরি খেলছে, সাথে তারাও বিলিন হয়ে আছে।কারন আকাশে একটা তারাও নেই।শনশন করে বাতাস বইছে।আর সেই বাতাসে জেবার চুল গুলো যেনো কোনো বাঁধা মানতে চাইছেনা।জেবা কানের কাছে বার বার গুজে দিচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।চুল গুলো জেবার মনের বিপরীতেই কাজ করছে।
চুল গুলো যদি নিজের ইচ্ছেতেই ছুটতে চায়,
তাহলে বাঁধা না দিয়ে উড়তে দেওয়াটাই শ্রেয়।
যদি ওই আকাশে না দেখো তারা মেলা তাহলে উপভোগ করো মেঘের আড়ালে চাঁদ কিভাবে লুকোচুরি খেলে।
যদি শাড়ির আঁচল উড়তে চায় নিজের মতন করে,
তাহলে উড়তে দাও, ক্ষতি কি তাতে?
জেবা পিছনে ফিরে জোভান কে দেখে,আপনি?
জোভান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, হুম আমি।কবিতাটা কেমন হলো মেম?
-খুব ভালো।আপনি কবিতা লিখেন?
-না, কেনো এই কথা গুলো আপনি আগে শুনেন নি?
তখন জেবা আচমকাই বলে উঠলো, আমি শুনেছি, হ্যাঁ আমি শুনেছি।এইটা জিসান বলতো। যখনি আমার বাতাসে চুল গুলো উড়তো তখন আমি যদি বাঁধা দিতাম তখনি সেই আমার হাতটাকে নিজের বুকের সাথে আটকিয়ে এই কথা গুলো বলতো।
কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?
-সেটা বাদ দিন।পরে জানলেও চলবে।আগে আমাকে এইটা বলুন তো কে বা কারা জিসান কে খুন করলো আপনার কাউকে একটুও সন্দেহ হয়না?
জেবা আবার স্তব্ধ, কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বললো,দেখুন মিস্টার জোভান,আমি ভালোবাসি তাকে।আমি হতে ছেয়েছি তার অর্ধাঙ্গিনী, হতে ছেয়েছি তার সুখেদুঃখের ভাগীদার, কিন্তু আমি কখনো জানতেই চাইনি আমার স্বামীর কোনো শত্রু আছে কিনা।কারন আমি আমার থেকেও অগাধ বিশ্বাস ছিলো তার উপর। মিস্টার জোভান “আমার মনে হয় আমিই প্রথম স্ত্রী, যার স্বামী বিয়ের দিনই খুন হয়।
আচ্ছা জোভান আপনি এতো কিছু জানেন আমার ব্যাপারে তাহলে এইটা কেনো জানেন না, তাকে কে খুন করেছে?
জোভান জেবার কথা ঘুরিয়ে বললো, আপনি আপনার বাবার সাথে কেনো যান নি আমি জানি।
জেবা কথাটা শুনে অবাক হয়ে পাশে ফিরে জোভানের দিকে তাকালো।
মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের আবছায়া আলোতে জোভানকে দেখা যাচ্ছে বুকে হাত বেঁধে সামনে তাকিয়ে আছে।কালো মোটা প্রেমের চশমার ভিতর চোখ দুটো যেনো বিস্ময় ভরা।
জেবা শান্ত গলায় বললো, কেনো?
-আমার জন্য!আমার ব্যাপারে আপনার অনেক কৌতুহল। আমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে চান আপনি।যেমন আমি কে? কি চাই? জিসানের ভাই ঠিক আছি, কিন্তু আপনার আর জিসানের ব্যাপারে এতো কিছু জানলাম কি করে?ব্লা ব্লা ব্লা,,,,,
-ঠিক বলেছেন।আপনাকে নিয়ে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে।কিন্তু,,,
-আপনাদের মেয়েদের বুদ্ধি হাটুর নিচে থাকে জানেন?
জেবা অবাক হয়ে, মানে?
-আপনার স্বামীর খুনি কে আপনি নিজেই বাহির করতে পারতেন যদি ওই ডাইরিটা একবার খুলে পড়তেন?
আমি নিশ্চিত আপনি জিসান মারা যাওয়ার পর ডাইরিটা দেখেন নি।যদি দেখতেন তাহলে আপনি ঠিক হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারতেন।
-ডাইরি? কিন্তু আপনি কি করে জানলেন? ওই ডাইরিটাতে কোনো ক্লু আছে? হুম আছে।তবে হ্যাঁ এইটা কাউকে বলার দরকার নেই।
একটা কথা বলবো?
-জ্বি বলুন
-আজ তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে মেঘপরী।কথাটা বলেই জোভান নিচে আসার জন্য পা বাড়ালো।
কথাটা শুনেই জেবার মনে আবার একটা ধাক্কা খেলো। জিসান “না এই আমার জিসান কি করে হবে? উনি হয়তো জিসানের ব্যাপারে সব জানেন।
এই যে শুনছেন? মিস্টার জোভান শুনুন?
জোভান কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে আসলো।
জেবা সেইখানে দাঁড়িয়ে আছে।আর কাঁদছে।কেনো চলে গেলে তুমি? জিসান তুমি কি উনাকে সব কথায় বলেছো আমাদের? বৃষ্টির ফোটা গুলো যেনো আস্তে আস্তেই পড়তে লাগলো।কিন্তু জেবা সেইখানে দাঁড়িয়ে আছে,
ছুঁয়ে দিলে আমার এই বিষন্নতাকে,
রেখেছি যতন করে তোমার স্পর্শ ছোয়া গুলোকে।
অনুভব করি আমি তোমার শেষ স্পর্শকে।
জিসান আমি সারাটি জীবন থাকবো তোমার হয়ে।
জিসান আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমার মুখ থেকে শুনতে, জেবা ভালোবাসি তোমায়।
বৃষ্টি জড়োসড়ো হয়ে আসতে শুরু করলো।জেবা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
হঠাৎ অনুভব করলো বৃষ্টি যেনো গায়ে পড়ছেনা।চোখ খুলে দেখে কেউ একজন ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।পাশে ফিরে তাকিয়ে, ভিজতে দেন আমায়।আপনি শুধু দেখছেন আমি বৃষ্টিতে ভিজছি তাই আপনি ছাতা ধরেছেন।
কিন্তু মিস্টার জোভান, এই মনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা কি দিয়ে থামাবেন?
তাই বলছি আপনি চলে যান।ভিজতে দিন আমায়।জিসান আমায় বলেছিলো প্রতিটি বৃষ্টির ফোটা নাকি আমার প্রতি তার ভালোবাসা। তাই আমি তার ভালোবাসা গুলোকে জড়িয়ে ধরে আজ সারাটা রাত কাটাতে চাই।
জোভান একদম জেবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, মুখে হাত দিয়ে, হিসসসস,,,,,কোনো কথা নয়।তোমার জিসান তোমায় ঠিক বলেছে। এখন চলো।
জেবা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।জোভান ছাতাটা ছেড়ে দিয়ে জেবাকে কোলে তুলে হাঁটা শুরু করলো।
জেবা কি বলবে বুজতে পারছেনা।সব ভাষা যেনো মুখ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জোভান যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছে তখন লাইটের আলোতে জেবা খেয়াল করলো সামনের চুল গুলো বেয়ে বেয়ে চশমার ফাকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
জেবাকে রুমে এনে নামিয়ে,ওহ্ মানুষ এতো ভারী হয়? দেখতে তো চামচিকের মতো, কিন্তু ওজন হাতীর মতো।
জেবার যেনো এখনো হুস ফিরেনি।এখনো জোভানের দিকে তাকিয়ে আছে।
জোভান চুল গুলো ঝেড়ে পানি ফেলতে ফেলতে হঠাৎ জেবার দিকে নজর পড়তেই,এই,,, তুমি এই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি কিন্তু সম্পর্কে তোমার ভাসুর হই। এক ঘন্টা ছাব্বিশ মিনিটের বড় আমি তোমার বরের থেকে।মাথায় রেখো।
আর হ্যাঁ রাত বিরাত এইভাবে আর ছাদে যাবে না।বলে দিলাম।
কথাটা বলে জোভান নিজের রুমে চলে গেলো।
জেবা যেনো এতোক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো।জোভান চলে যেতেই আলমারি থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
শাড়িটা তো বেশ মানিয়েছে।কথাটা শুনে পিছনে ফিরে দেখে মারিয়া।জেবা কিছু না বলে বালিশ ঠিক করছে শোবার জন্য।
কিছু মনে করো না ভাবী,এইবার কি জোভান ভাইয়ার উপর চোখ পড়লো নাকি তোমার?
মারিয়ার কথা শুনে জেবা একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।
না দেখলাম দুজন বৃষ্টিতে ভিজছো, আবার কোলে করে এনে রুমেও দিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাই বললাম আরকি। তবে বড় মা জানে এই কথাটা?
-মারিয়া “তুমি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেনো?
-ভাবী আমি কিন্তু খারাপ কিছু মিন করে কথাটা বলিনি।ভালোই তো হয় যদি তুমি সব ভুলে জোভান ভাইয়াকে মেনে নাও।
-জিসান ছাড়া এই জীবনে আমি কিছুই চিন্তা করিনা।আমি শুধু জিসানকেই ভালোবাসি।এইছাড়া চাইনা আমি কাউকে।
চলবে,,,,,