অচিত্তাকর্ষক পর্ব-১৫+১৬

0
181

#অচিত্তাকর্ষক
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৫|

জুভানের ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে লাগাতার কিছু কল আসে। জুভান ব্যস্ত ছিল বিধেয় কলটা রিসিভ করতে পারে না। পরে সে সেই নাম্বারটা দেখে আবার কল ব্যাক করে। কলটা রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে একটা অপরিচিত কন্ঠ শোনা যায়। জুভান তাকে চিনতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,

‘কে বলছেন?’

ওপাশের লোকটি জবাবে বলল,

‘আমি হসপিটাল থেকে বলছি, এখানে একজন মেয়েকে আমি কিছুক্ষণ আগে এডমিট করেছি। আর আমি উনার ফোন থেকেই আপনার নাম্বারটা পেয়েছি। আপনি একটু দয়া করে হসপিটালে চলে আসুন।’

জুভান বুঝল না লোকটা কোন মেয়ের কথা বলছে। সে লোকটাকে জিজ্ঞেস করল,

‘কোন হসপিটাল?’

লোকটা তাকে হসপিটালের ঠিকানা দিল। জুভানও তখন সেই হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। পথিমধ্যে সে কী ভেবে স্মৃতির নাম্বারে কল করল। সেই কলটা রিসিভ করল অন্য কেউ। জুভান তার সাথে কথা বলে জানতে পারল সেই মেয়েটা আর কেউ না স্মৃতি’ই। কথাটা শোনা মাত্রই সে যেন প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠল। স্মৃতির এক্সিডেন্ট কথাটা সে সহ্য করতে পারছে না। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে সে হসপিটালে যায়।

রিসিপশনে কথা বলে সে দুতালায় যায়, স্মৃতির কেবিনে। গিয়ে দেখে বেডে চোখ বুজে স্মৃতি শুয়ে আছে। তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। জ্ঞান আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। জুভান তার কাছে ছুটে গেল। স্মৃতি স্মৃতি বলে ডাকল তাকে। সেখানের নার্স বলল,

‘এখনও উনার জ্ঞান ফেরেনি। কিছুটা সময় লাগবে।’

জুভান উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

‘ওর এই অবস্থা কী করে হলো?’

নার্স জবাব দিল,

‘আমরা ঠিক বলতে পারবো না। একজন লোক উনাকে নিয়ে এসেছেন। উনার মাথা থেকে তখন রক্ত পড়ছিল। আমরা সেটা ড্রেসিং করে দেই। ঐ লোকটা বলেছিলেন, তিনি নাকি উনাকে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছেন, পরে হসপিটালে নিয়ে আসেন।’

‘আচ্ছা, সেই লোকটা এখন কোথায়?’

‘উনি তো চলে গিয়েছেন। আপনাকেও কলটা উনিই করেছিলেন।’

জুভান বুঝতে পারছে না এতকিছু কীভাবে হলো। সবকিছু বুঝতে গেলে আগে স্মৃতির জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে হবে। তাই সে স্মৃতির পাশে ঠাঁই বসে রইল। প্রায় ত্রিশ মিনিট বাদে স্মৃতির জ্ঞান ফিরে। প্রথমে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। হতভম্ব হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। হঠাৎ জুভানের মুখটা দেখে সে কেঁদে উঠে। খুব শব্দ করে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। স্মৃতির এমন কান্না দেখে জুভান বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। স্মৃতির গালে হাত রেখে বলে,

‘কোথায় কষ্ট হচ্ছে স্মৃতি? বলো আমাকে। ডাক্তার ডাকবো? বলো, কী সমস্যা হচ্ছে?’

স্মৃতি তার কান্না জারি রেখে ফোঁপাতে ফোঁপাতেই বলল,

‘ওরা জারা কে নিয়ে গিয়েছে, জুভান।’

জুভানের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘কারা জারা কে নিয়ে গিয়েছে? কী বলছো এসব?’

স্মৃতি এবার কান্না থামাল। নাক টেনে বলল,

‘আমি আর জারা একটু আগে শপিং এ বেরিয়েছিলাম। আমরা নিউ মার্কেটের পেছনের দিকটাই ছিলাম। তবে জারা আমার থেকে একটু দূরে একটা দোকানে চুরি দেখছিল, তখনই একটা বড়ো গাড়ি আসে। কয়েকজন ছেলে সেখান থেকে বের হয়ে এসেই জারা কে ধরে গাড়িতে উঠাতে লাগে। আমি সেটা দেখে দৌড়ে তাদের কাছে যাই। অনেক ভাবে তাদের আটকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু অতগুলো ছেলের সাথে পারছিলাম না বলে অনেক চিৎকার চেঁচামেচিও করি। কিন্তু দুপুর হওয়াতে ঐদিকে খুব একটা মানুষ ছিল না। যে কয়জন ছিল তারাও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল কেবল কেউ এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে আমাকে থামাতে না পেরে একজন আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। আমি মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাই তখন। পরে আর উঠার শক্তি পাইনি। ঝাপসা চোখে তখন কেবল গাড়িটা কে সেখান থেকে সাঁ সাঁ করে ছুটে যেতে দেখি। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।’

কথা শেষ করে স্মৃতি আবারও কাঁদতে আরম্ভ করে। জুভান কী করবে বুঝতে পারছে না। তার বোনকে কেউ বা কারা তুলে নিয়ে গিয়েছে, সে এই কথাটা মানতে পারছে না। পাগল পাগল লাগছে তার। মাথা ফাঁকা লাগছে। কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না। সে কম্পিত কন্ঠে স্মৃতি কে জিজ্ঞেস করল,

‘গাড়ির নাম্বার দেখেছিলে?’

স্মৃতি কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,

‘না, দেখতে পারিনি।’

জুভান অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় হাঁসফাঁস করতে থাকে। সে কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে কাউকে একটা কল দেয়। তাকে বলে,

‘জারা কে কেউ বা কারা তুলে নিয়ে গিয়েছে। ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তুই ওর ফোনের বর্তমান লোকেশন টা ট্রেক করতে পারিস কিনা দেখ। আর আমি এখন নিউ মার্কেট যাবো, সেখান থেকেই নাকি ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। তুই লোকেশনটা বের করতে পারলে আমাকে জানাবি, ঠিক আছে?’

ওপাশের লোকটি বোধ হয় সম্মতি জানাল। জুভান কল কেটে দিয়ে আবার কেবিনে গেল। সে তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে স্মৃতিকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়ল। হসপিটাল থেকে জুভান সোজা গেল সেই মার্কেটের কাছে। সেখানে গিয়ে স্মৃতিকে জিজ্ঞেস করল, ঠিক কোন জায়গা থেকে জারাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। স্মৃতির আঙ্গুল দিয়ে রাস্তার একপাশ দেখাল। স্মৃতিকে গাড়িতে বসিয়ে রেখেই জুভান সেই জায়গাটাই গিয়ে আশেপাশের লোকদের জিজ্ঞেস করতে লাগল, একটু আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটতে তারা দেখেছে কিনা। দোকানদার সহ আশেপাশের সবার জবাবই “না” ছিল। কেউই কিছু দেখেনি। জুভান আবার গাড়িতে ফিরে এল। স্মৃতিকে নিয়ে এবার সে বাড়িতে গেল। গিয়েই দেখল তার মা, আহাজারি করে কেঁদে যাচ্ছে। এতক্ষণে এই খবর ছড়িয়ে গিয়েছে। স্মৃতিকে দেখা মাত্রই মারিয়াম আহমেদ প্রচন্ড ক্ষেপে গেলেন। তিনি কান্না ফেলে তেড়ে এলেন তার দিকে। চেঁচিয়ে উঠে বললেন,

‘তুই নিশ্চয়ই আমার মেয়ের সাথে কিছু করেছিস। সব তোর দোষ। তোর জন্য আমার মেয়েকে ওরা নিয়ে গিয়েছে। খুঁজে এনে দে, আমার মেয়েকে খুঁজে এনে দে।’

এই বলে তিনি বিলাপ ছাড়তে লাগলেন। স্মৃতিও তখন কেঁদে উঠে। শাশুড়ি মা’কে অনেক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে যে সে কিছু করেনি। কিন্তু তার শাশুড়ি মা আর বোঝে না। তিনি তার মতোই চেঁচিয়ে যান। জুভান স্মৃতিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। স্মৃতিকে রেস্ট করতে বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার এতটা স্বাভাবিক আচরণ মোটেও মানাচ্ছে না। বোন কে হারিয়ে কোথায় তার পাগল পাগল অবস্থা থাকবে তা না সে এখনও এতটা স্বাভাবিক কী করে সেটাই স্মৃতি বুঝতে পারছে না।

জুভান চলে যাওয়ার পর স্মৃতি তার ভাইকে কল লাগায়।

‘ঐদিকে সব ঠিকঠাক তো?’

‘হ্যাঁ আপু, সব একদম ঠিকঠাক। তুমি কোনো চিন্তা করো না। তুমি এখন শুধু তোমার অভিনয়টা ঠিকঠাক মতো চালিয়ে যাও তাহলেই হবে।’

‘আচ্ছা, এইদিক আমি সামলে নিব। তুই কিন্তু বেশিক্ষণ ঐখানে থাকিস না, সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়িস। আর শোন, ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয়, বুঝেছিস?’

‘আচ্ছা আপু। তুমি যা বলবে তাই হবে।’

কল কেটে দিয়ে স্মৃতি এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়। আর মনে মনে ভাবে, এইতো সবে শুরু। তার সাথে হওয়া প্রতিটা অন্যায়ের সে একে একে প্রতিশোধ নিবে।

চলবে…

#অচিত্তাকর্ষক
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৬|

জুভান সেদিন রাতে আর বাসায় ফিরল না। স্মৃতি তাকে কয়েকবার কল দিয়েছিল তবে জুভান তার কলও রিসিভ করেনি। বাড়ির পরিবেশ ও খুব একটা ভালো নেই। মারিয়াম আহমেদ খুব কান্নাকাটি করেছেন। রাতে খাননি তিনি। মজুমদার সাহেবেরও মন মেজাজ ভালো নেই। মেয়েকে নিয়ে তিনিও খুব চিন্তিত। স্মৃতি সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। খারাপ লাগলেও এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তার কাছে। এইটুকু কঠোর তাকে হতেই হতো।

এখন গভীর রাত। চারদিকের নিস্তব্ধতা যেন তাই বলছে। বাইরে সোঁ সোঁ বাতাস বইছে। দূরে শোনা যাচ্ছে কুকুরের আর্তনাদ। স্মৃতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ আগেই জুভান বেরিয়েছে। এত রাতে সে কোথায় গিয়েছে সেটা স্মৃতির অজানা। আজকাল জুভান প্রয়োজন ব্যতিত তার সাথে খুব একটা কথা বলছে না। স্মৃতির মন বলছে একটা সূক্ষ্ম সন্দেহের তীর তার উপরও আছে। তবে সে যতটা পারছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখছে। আর সময়ে সময়ে নিজের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে আসল সত্যটা জানার।

ফোনের সিমটা চেঞ্জ করে সে আবার ঐ নাম্বারে কল করল। দুবারের মাথায় সেটা রিসিভও হলো। স্মৃতি তার স্বর খানিকটা বদলে খুব শীতল গলায় বলল,

‘হ্যালো! জিহাদ বলছেন?’

ওপাশের লোকটি বলল,

‘জ্বি। তবে আপনাকে তো চিনলাম না।’

স্মৃতি আহ্লাদিত কন্ঠে বলল,

‘কী করে চিনবে? আমি তো এখন পর হয়ে গেছি, তাই না? বউ বাচ্চা নিয়ে তুমি নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো?’

জিহাদ এবার বিরক্ত হয়ে বলল,

‘কে আপনি? আপনাকে তো আমি চিনতে পারছি না।’

স্মৃতি একটা নাম শুনেছিল। নামটার সাথে জিহাদ হয়তো কোনোভাবে জড়িত। তাই সে আন্দাজেই সেই নামে ঢিল ছুঁড়ে বলল,

‘আমি ইতি।’

“ইতি” নামটা শুনেই জিহাদ চমকাল। ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় সে একটা মেয়েকে পছন্দ করতো, তার নামও ইতি ছিল। তবে কি এই সেই ইতি? জিহাদ প্রশ্ন করল,

‘তুমি কি সেই ই..’

‘যাক, চিনতে পেরেছ তবে।’

এত বড়ো বাটপাড়ি স্মৃতি কখনো করেনি। তবে পরিস্থিতি মানুষকে দিয়ে অনেক কিছুই করায়। আর এখানে সবথেকে বড়ো কথা হলো, তার হুট করেই বলে দেওয়া “ইতি” নামটি তাকে বড্ড সাহায্য করেছে। এবার ধরা না পড়লেই হলো।

জিহাদ উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘আমার নাম্বার কী করে পেলে?’

‘পেয়েছি, অনেক খুঁজে। তা তোমার কী খবর? এখনও দেখছি আমাকে ভুলোনি।’

‘তোমাকে ভুলা কি চারটে খানি কথা। আমার প্রথম পছন্দ তুমি, এরপর থেকে তো আর কাউকে চোখেই পড়ল না। সেই মনের কোণে তুমিই পড়ে রইলে। এখন কোথায় আছো তুমি? বিয়ে করে নিয়েছ, নিশ্চয়ই?’

‘না, বিয়ে করিনি।’

‘কেন?’

‘এমনি। তুমি এখন কোথায় আছো?’

‘আমি ঢাকায় আছি। এখানের একটা কম্পানিতে কাজ করছি।’

‘আচ্ছা, তাহলে তো ভালোই আছো। তবে আমি খুব সমস্যাই আছি জানোতো?’

‘কী সমস্যা?’

‘আসলে, আমি একটা চাকরি খুঁজছিলাম। অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছি, তবে কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। তেমন টাকাও নেই আমার কাছে যে অন্য কোনো ব্যবস্থা করব। আর চাকরি ছাড়া চলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি আমায় একটু সাহায্য করবে, প্লিজ? তোমার কম্পানিতে আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে?’

‘আচ্ছা এই ব্যাপার? তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। ভেবে নাও তোমার চাকরি হয়ে গিয়েছে। আমি কালই আমার বসের সাথে কথা বলব, তুমি এই নিয়ে কোনো চিন্তা করো না।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি জানো না তুমি আমার কত বড়ো উপকার করেছ। আমি তোমার কাছে আজীবন ঋণী থাকব।’

‘আরে ধুর, এটা তো কিছুই না। তোমার সাহায্যের জন্য আমি সবকিছুই করতে পারব। আচ্ছা শোনো না, কাল ফ্রি আছো? দেখা করতে পারবে?’

স্মৃতি অনেক ভেবে চিন্তে বলল,

‘আচ্ছা, আমি কাল জানাব তোমায়। এখন রাখি। অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ো। শুভ রাত্রি।’

‘ঠিক আছে, শুভ রাত্রি।’

নিঃস্ব মানুষগুলোর নতুন করে আর কিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। আর যাদের হারানোর ভয় নেই তারা প্রচন্ড সাহসী। এই মুহূর্তে স্মৃতির মনেও প্রচন্ড সাহস জন্মেছে। তার নেওয়া পদক্ষেপগুলো হয়তো তাকে নিঃশেষও করে দিতে পারে তবে সে এখন আর পিছপা হবে না। একবার যখন এই গোলকধাঁধায় নেমেছে তবে এর শেষ দেখে তবেই ক্ষান্ত হবে সে।
.
.
ভোরের আলোয় মিটমিট করে স্মৃতি চেয়ে দেখল তার পাশে জুভান। গায়ে জড়ানো তার শার্ট আর পেন্ট। বাইরে থেকে এসে কাপড় না ছেড়েই সে ঘুমিয়ে পড়েছে। সচরাচর সে এমনটা করেন না। তবে আজ কেন? স্মৃতি তার ঘুমঘুম চোখগুলো ভালোভাবে মেলে ধরল। জুভানের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তার গায়ে হাত দিতেই দেখল, শরীর তার খুব গরম। কপালে আর গলায় হাত ছুঁইয়ে বুঝতে পারল তার জ্বর হয়েছে। এই অসময়ে জ্বর? স্মৃতি চিন্তিত হয়ে উঠে বসল। দু একবার আস্তে আস্তে ডাকল তাকে। তবে তার কোনো সাড়া পেল না। জুভানের বিষন্ন জ্বর আক্রান্ত মুখশ্রী দেখে ভীষণ মায়া হলো তার। উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে পানি আর একটা ছোট তোয়ালে নিয়ে এল। তার পাশে বসে তার কপালে জলপট্টি দিতে লাগল। গায়ের উষ্ণতা এখন অনেক বেশি। বাইরে সবেই সূর্য উঠেছে। হালকা ধোঁয়াটে চারদিক। জুভানের জ্বর তখনও কমার নাম নিচ্ছে না। স্মৃতি কী করবে বুঝতে পারছে না। জ্বরের ঘোরে সে যেন কিছু বলছে। ঠোঁট নড়লেও কথা বোঝা যাচ্ছে না। স্মৃতি তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল। কানের কাছে মুখ নিয়ে শোনার চেষ্টা করতে লাগল যে সে কী বলছে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে তার মুখ থেকে অস্পষ্ট স্বরে সে কেবল তার নামটাই শুনতে পেল। নিজের নাম শুনে আরো কৌতুহল জাগল তার। জুভান কিছু একটা বলছে, আর সেটা এখন তাকে অবশ্যই শুনতে হবে। স্মৃতি আরো সতর্ক হয়ে কান পাতে। এবার সে কিছুটা শুনে। জুভান বলছে,

“স্মৃতি, এমন করো না। আমি ভালোবাসি তোমায়।”

স্মৃতি জোরে নিশ্বাস নেয়। এই কথাটা শুনে কষ্ট হয় তার। যদি এই লোকটাই তার বাবার হত্যকারী হয়, তবে সে কী করে এই লোকটাকে শাস্তি দিবে? কীভাবে অগ্রাহ্য করবে এই ভালোবাসা? এত কঠিন কাজ কী করে করবে সে?

সকালের দিকে জুভানের জ্বর অনেকটাই ছেড়ে দেয়। স্মৃতি তখন নাস্তা বানিয়ে এসে দেখে জুভান তৈরি হচ্ছে। স্মৃতি তা দেখে তাকে জিজ্ঞেস করে,

‘আপনার জ্বর কমেছে?’

জুভান জবাবে বলে,

‘হ্যাঁ।’

স্মৃতি তখন পুনারায় প্রশ্ন করে,

‘জারার কোনো খোঁজ পেয়েছেন?’

জুভান কঠিন গলায় এবার জবাব দেয়। বলে যে,

‘পাইনি। তবে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাব। আর যে মানুষটা এসবের পেছনে দায়ী তাকে আমি নিজ হাতে টুকরো টুকরো করব।’

জুভানের চোখ মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। স্মৃতি আর কিছু বলে না। মৃদু সুরে জুভানকে নিচে আসতে বলে সেও নিচে নেমে যায়।

চলবে…