অচেনা শহর পর্ব-১৩

0
396

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ১৩

পরদিন থেকেই হেমন্তি নিজ সংসার গুছাতে শুরু করলো ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।নাস্তা তৈরি করে ইলহামের জন্য লাঞ্চ তৈরি করে ফেললো পাশাপাশি বাজারের একটা লিস্টও করে ফেললো আজ বাজার করাতে হবে। তাই সে চিন্তা করলো আজ আর ভার্সিটি যাবে না এভাবেও আজ কোনো জরুরি ক্লাস নেই।হেমন্তি সব কিছু রেডি করে প্রথমে চলে গেলো আজাদ সাহেবের ঘরের সামনে দরজায় নক করতে আজাদ সাহেব বলে উঠলেন,
~ভিতরে আসো।
হেমন্তি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো আজাদ সাহেব হেমন্তিকে দেখে বললেন,
~আরে হেমন্তি মা যে কিছু বলবে মা?
হেমন্তি হাতে থাকা চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো,
~বাবা,আপনার জন্য চা এনেছি।
আজাদ সাহেব আলতো হেসে বললেন,
~তুমি তো ভালোই সব গুছিয়ে নিয়েছো দেখে খুশী লাগলো।
হেমন্তি বললো,
~বাবা দোয়া করবেন আমার জন্য।
আজাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
~তোমার শাশুড়ী মা খুব যত্ন নিয়ে এ বাসার প্রতিটি কোণা সাজিয়েছে জানো আমরা যখন ঢাকায় আসি তখন একটা ছোট ঘরে ভাড়া নিয়ে ছোট একটা সংসার শুরু করি ধীরে ধীরে সেই ছোট ঘর ছেড়ে এই বাসাটা তৈরি করি।হিয়ার মা কিন্তু সব নিজ হাতে করেছে তার যে কতোটা প্রিয় ছিল এ বাসাটা।ইলহাম আর হিয়ার তো অনেক স্মৃতি আছে এ বাসায়।
বলেই চোখ মুছলো আজাদ সাহেব হেমন্তির চোখেও পানি সেও আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললো,
~বাবা,আজ আপনি আর আমি মিলে বাজারটা সেরে ফেলি তারপর দুপুরে হবে জম্পেস খাবার আজ রাতে তো মেহমানও আসবে ওনার কলিগ।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আরাফাত আসবে আমাকে ইলহাম বলেছে।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে নাস্তাটা করে ওনাকে বিদায় জানিয়ে বাজারে যাওয়া যাক।
আজাদ সাহেব বললেন,
~আপনি সংসারের রাণী যা চাইবেন তাই হবে।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো হেমন্তি।তাদের কথোপকথন এতোক্ষণ ধরে শুনে যাচ্ছে ইলহাম ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে হেমন্তির দেখা না পেয়ে এই রুমে চলে আসলো।আর এতো সুন্দর একটা দৃশ্য দেখবে তা সে জানতোনা হিয়া ঠিকই বলেছিল হেমন্তিকে নিয়ে তার সংসার সুখের হবে।
ইলহাম দরজায় নক করে বললো,
~বাবা,নাস্তা করবে না।
আজাদ সাহেব বললেন,
~এই তো আসছি আমরা তুই বস।
অতঃপর তিনজন একসাথে নাস্তা করে নিলো ইলহামের হাতে লাঞ্চ বক্সটা দিয়ে দিলো হেমন্তি।ইলহাম তা নিয়ে মুচকি হেসে হেমন্তির কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে চলে গেলো।হেমন্তি একবার কপালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো এরপর দরজা বন্ধ করে দিলো রুমে গিয়ে বোরখা পরে নিলো এরপর আজাদ সাহেবের রওনা হলো বাজারের উদ্দেশ্যে।

______________________♥______________________

কেয়া কলেজ শেষ করে বাসায় পৌছে দেখতে পেলো তানভীর সোফায় আয়েশ করে বসে শরবত গিলছে।কেয়ার এতে পিত্তি জ্বলে উঠলো সে পারভীন বেগমের পাশে গিয়ে দাড়াতেই সে বললো,
~কেয়া,ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বস তানভীরের কিন্তু কাজ আছে তাই দ্রুত কর।
কেয়া বললো,
~মাত্র কলেজ থেকে আসলাম মা এখনই পড়তে বসবো।
পারভীন বেগম বললেন,
~তুই কয়টা ক্লাস করেছিস তা আমি ভালো মতো জানি যাহ ফ্রেশ হয়ে পড়তে বস।
কেয়া মুখ ফুলিয়ে নিজ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসে পরলো তানভীর চশমা ঠিক করে বললো,
~বই বের করেন আর এ কয়েকদিন ক্লাসে কী পড়ানো হয়েছে তা বলুন।
কেয়া দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটলো আর মনে মনে বললো,
~কলেজে ভর্তি হয়েছি ২মাস এখন পর্যন্ত মাত্র ৫বার ক্লাসে গিয়ে বসেছি এখন কীভাবে বলবো কী পড়ানো হয়েছে।
তানভীর কলম দিয়ে টেবিলে টোকা দিয়ে বললো,
~আমি কিছু বলেছি আপনাকে শুনতে পাননি।
কেয়া বললো,
~আমি বয়রা না শুনতে পেয়েছি আর কলেজের পড়া দিয়ে কী করবেন সিলেবাস অনুযায়ী পড়াবেন।
তানভীর বললো,
~আপনি কয়টা ক্লাস করেছেন এখন পর্যন্ত?
কেয়া শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বললো,
~ভালো মতো একটাও না।
তানভীর বললো,
~আজ থেকে একটা ক্লাসও বাদ দিবেন না যদি ঠিকঠাক কলেজের পড়া না লিখে নিয়ে আসেন তাহলে আন্টিকে বলতে দ্বিধা বোধ করবোনা।আরেকটা কথা বাকি ২ টিচারকে যেভাবে ভাগিয়েছেন আমাকে ভাগাতে পারবেন না বুঝতে পেরেছেন?
কেয়া মাথা দুলালো তানভীর আইসিটি বউ বের করে তাকে ম্যাথ বুঝাতে লাগলো।
অনু আজ ভার্সিটি যাইনি চুপচাপ রুমে বসে আছে কারণ তাকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। অনু অনেকবার তার মাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো কিছুই হয়নি বরং তার মা রেগে গিয়ে তাকে অনেক বকলেন।অনুর মা ছেলের ছবিও সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন দেখাবে বলে কিন্তু অনু তা দেখেনি টেবিলের ওপর সেভাবেই পরে আছে।অনুর কান্না পাচ্ছে তার ইমজাদকে দেখতে মন চাইছে কিন্তু সে আজ অসহায় অনু মনে মনে বললো,
~আমি ভাগ্য কে মেনে নিয়েছি আপনি আর আমি কোনোদিন এক হাতে পারবো না।
বলেই অনু কাঁদতে লাগলো তার কান্নার আওয়াজ যাতে বাহিরে না যায় তার জন্য মুখে হাত দিয়ে রাখলো।

______________________♥_______________________

হেমন্তি আর আজাদ সাহেব বাজার করে ফিরেছেন আজাদ সাহেব বাজার গুছাতে হেমন্তির সাহায্য করলেন।এরপর দুইজন মিলে রান্নাটাও করলেন দুপুরের হেমন্তি জানতেনা আজাদ সাহেব রান্নাও করতে পারেন তাই হেমন্তি বললো,
~বাবা,আপনি রান্না করতেও পারেন।
আজাদ সাহেব বললেন,
~তোমার শাশুড়ীকে কিন্তু আমি অনেক সাহায্য করতাম কিন্তু হিয়া আমাকে কোনো কাজ করতে দেয় না।তুমি অনেক ভালো আমাকে সাথে নিয়ে কাজ করছো সারাদিন বসে থাকতে ভালো লাগেনা।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে আজ থেকে আমি আর আপনি মিলে রান্নার কাজটা করে নিবো কী বলেন?
আজাদ সাহেব বললেন,
~Of course your highness.
হেমন্তি আর আজাদ সাহেব দুপুরের রান্না শেষ করে রাতের জন্যও টুকটাক করে নিলেন এরপর খাবার খেয়ে আজাদ সাহেব রুমে গিয়েই শুয়ে পরলেন। অনেকদিন পর তার ঘুম পাচ্ছে হয়তো কাজ করার ফলে সে ক্লান্ত হেমন্তি আজাদ সাহেবের রুমে এসে দেখলেন সে ঘুম হেমন্তি মুচকি হেসে রান্নঘরে গিয়ে রাতের খাবারের সব আয়োজন করে নিলো।
ইলহাম ৬টায় বাসায় পৌছে গেলো অনেক চিপস,জুস,চকলেট নিয়ে হেমন্তির হাতে সব দিয়ে বললো,
~শপিং ব্যাগে বেবির জন্য এক সেট জামা আছে দেখো তো পছন্দ হয় নাকি?
হেমন্তি সব রেখে শপিং ব্যাগ থেকে তা বের করে দেখে বললো,
~অনেক সুন্দর কিন্তু বেবির এটা হবে তো?
ইলহাম মাথা চুলকে বললো,
~হবে মনে হচ্ছে।
হেমন্তি আলতো হেসে বললো,
~সব খাবার রেডি করে রেখেছি তারা কখন আসবে?
ইলহাম টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
~আরাফাত বললো ৮টায় চলে আসবে।
অনু বসে আছে রুমে পাত্রপক্ষ চলে এসেছে এই সন্ধ্যা বেলায় কে মেয়ে দেখতে আসে?অনু অনেক বিরক্ত হচ্ছে তার মাথা ধরে গেছে কান্নার কারণেই এমন হয়েছে।অনু শাড়িটা ঠিক করে আঁচলটা মাথায় দিতেই তার মা রুমে ডুকে বললো,
~চল অনু।
অনু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার মায়ের সাথে রুমের বাহিরে চলে আসলো। হলরুমের সোফায় অনুকে বসিয়ে দেওয়া হলো অনু সামনের দিকে তাকাতেই যাকে দেখতে পেলো তার জন্য সে কখনোই তৈরি ছিলো না।তার সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটিও তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কারণ সেই ব্যক্তিটি হচ্ছে

চলবে