অজানা অনুভূতি পর্ব-২৮+২৯+৩০+৩১

0
174

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ২৮
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সাজ্জাদ চোখ বন্ধ করে গাড়িতে বসে রইলো। এক হাত দিয়ে আদ্রিতাকে জড়িয়ে রেখেছে। আদ্রিতার চেহেরাটা দেখে সাজ্জাদের রাগ দিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। যাদের জন্য আদ্রতার এই অবস্থা সাজ্জাদ পারলে তাদের খু*ন করে ফেলতে ও দ্বিধা বোধ করবে না। স্বাধীন গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়িতে সম্পূর্ণ নিরবতা চলছে।

****কিছুক্ষণ পর****

বাসায় এসে পড়েছি। ( স্বাধীন)

সাজ্জাদ গাড়ি থেকে নেমে আদ্রিতাকে তুলে নিলো। স্বাধীন কলিং বেলে চাপ দিলো।

******

কলিংবেলের শব্দ শুনে আদ্রিতার মা যেয়ে দরজা খুলে দিলো। তারপর যা দেখলো মোটে ও প্রস্তুত ছিলো না। আদ্রিতার মা চিল্লিয়ে উঠলো। আদ্রিতার মার হঠাৎ আওয়াজ শুনে সামিরা আর আদ্রিতার বাবা দ্রুত দরজার সামনে এসে দেখলো,

সাজ্জাদ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সাজ্জাদের কোলে আদ্রিতা দেখেই বোঝা যাচ্ছে খারাপ কিছু হয়েছে। স্বাধীন ও দাঁড়ানো আছে। আদ্রিতার এই অবস্থা দেখে সামিরার বুক ও মোচড় দিয়ে উঠলো। কেউ কিছু বলার আগে স্বাধীন বলে উঠলো,

আপনাদের সব খুলে বলছি আগে আমাদের ভেতরে আসতে দিন। ( স্বাধীন)

বাকিরা ওদের ভেতরে আসার সুযোগ করে দিলো।

আন্টি আদ্রিতার রুম কোনটি?(সাজ্জাদ)

দুতালায় ডান পাশের রুমটি। (আদ্রিতার মা)

ওকে কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতাকে নিয়ে আদ্রিতার রুমের দিকে চলে গেলো। বাকিরাও সাজ্জাদের পিছু এলো।

সাজ্জাদ আদ্রিতাকে খাটে শুইয়ে দিলো। সামিরার উদ্দেশ্য বললো,

ওর ড্রেস চেঞ্জ করে দিও। (সাজ্জাদ)

আন্টি আংকেল আপনারা নিচে আসুন সব বলছি। (স্বাধীন)

আদ্রিতার কাচে সামিরাকে রেখে বাকিরা নিচে নেমে আসলো। সাজ্জাদ এর মধ্যে ডক্টরকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বললো।

এখন বলো কি হয়েছে আমার মেয়ের এই অবস্থা কি করে হলো? ( আদ্রিতার বাবা)

আদ্রিতার মার কানতে কানতে অবস্থা খারাপ। সাজ্জাদ আদ্রিতার মা বাবাকে সব খুলে বললো।

আমার মেয়ের সাথে কার এমন শএুতা থাকতে পারে?(আদ্রিতার মা)

আদ্রিতার জ্ঞান ফিরলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে কি হয়েছিলো। ( সাজ্জাদ)

হ্যাঁ আগে আদ্রিতার জ্ঞান ফিরে আসাটা জুরুরি। (স্বাধীন)

*******

কলেজে পুলিশ এসে তাদের লাশ নিয়ে গেছে। আলোর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু এমন ঘটনায় অনেক ভয় পেয়ে গেছে। পুলিশরা সাজ্জাদের সাথে ফোনে কথা বলেছে। আদ্রিতার জ্ঞান ফিরলে ওযেনো কেউ আদ্রিতাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে সেই ব্যবস্থা সাজ্জাদ করেছে। এই বিষয়টি নিয়ে শুধু সাজ্জাদ কথা বলতে চাচ্ছে আদ্রিতার সাথে। অন্যদিকে পুলিশ দেখে নওশিনদের ভয়ে অবস্থা খারাপ। কিন্তু নিজেদের যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে যেনো কেউ সন্দেহ না করে।

*******

যারা আদ্রিতার সাথে এই কাজ করেছে তাদের শাস্তি চাই। (আদ্রিতার বাবা)

আমি নিজ হাতে তাদের শাস্তি দিবো। (সাজ্জাদ)

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো, ডক্টর এসেছে।

আদ্রিতার মা ডক্টরকে আদ্রিতার রুমে নিয়ে গেলো। বাকিরা ও গেলো।

হাতে মনে হয় কেউ অনেক জোরে চাপ দিয়েছে। কাঁচের চুড়ি গুলো ভেঙে হাতে বিঁধে গেছে। আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি। আর অতিরিক্ত ভয়ে ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আমি একটি ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। (ডক্টর)

সাজ্জাদ ডক্টরকে সব ঘটনা বললো। সব কথা শুনে ডক্টর বললো,

জ্ঞান ফিরার সাথে সাথে সেই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন না। একটু সময় নিন দেখুন ও নিজে থেকে কিছু বলে নাকি। ( ডক্টর)

আচ্ছা ঠিক আছে। (সাজ্জাদ)

আসুম আমি এগিয়ে দিচ্ছি। ( স্বাধীন)

ডক্টর চলে যাবে তাই স্বাধীন বাইরে এগিয়ে দিতে চলে গেলো। সামিরা আদ্রিতার পাশে বসে আছে। কানতে কানতে চোখ মুখ ফুলে উঠেছে।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। তোমরা না হয় রাতের খাবার খেয়ে তারপর যাও। ( আদ্রিতার মা)

জ্বি আন্টি আমরা আছি। আদ্রিতার জ্ঞান ফেরা না পর্যন্ত এ বাসায় আছি। জ্ঞান ফিরলে ওর সাথে কথা বলা জুরুরি। ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ঠিক আছে। ( আদ্রিতার মা)

মা – বাবা তোমরা এখন যাও আদুরি ঘুমাক আমি ওর সাথে আছি। ( সামিরা)

আদ্রিতার মা বাবা রুম থেকে চলে গেলো। স্বাধীন রুমে এসেছে।

সামিরা ( সাজ্জাদ)

জ্বি ( সামিরা)

তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো। (সাজ্জাদ)

জ্বি বলুন। ( সামিরা)

তোমার সাথে কিছুদিন পর আমার বিয়ে ঠিক করা আর এখন আমি তোমার বোনকে সবার সামনে দিয়ে কোলে করে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম। তোমার খারাপ লাগে নি?(সাজ্জাদ)

বিয়ের কথা শুনে সামিরার বুক ধক করে উঠলো। আবার সাজ্জাদের সাথে বিয়ের কথা। সামিরার পছন্দ না এ বিষয়ে কোনো কথা।

না আমার খারাপ লাগে নি। বরং আমার মনে হয় আপনি আমার জন্য না আদুরির জন্য উপযুক্ত একটি মানুষ। ( সামিরা)

সামিরা নির্ভয়ে কথাটি বলে ফললো। সাজ্জাদ ও যেনো এই কথাটি শুনতে চাচ্ছিলো।

তার মানে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না? (সাজ্জাদ)

সামিরা নিশ্চুপ।

যেভাবে আমাদের বিয়েে কথা এগোচ্ছে এগিয়ে যেতে দেও কোনোরকম বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করো না। তাহলে নিজেদের বিপদ বাড়বে। ( সাজ্জাদ)

সামিরা এবার ও কিছু বললো না। সাজ্জাদ আবার বলে উঠলো,

দিনশেষে সবাই সবার ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে। (সাজ্জাদ)

একথার পর সবাই নিশ্চুপ।

তোদের আসলে বিয়ে হওয়া উচিতই না। তোদের মতো এতো গম্ভীর মানুষ আমি আগে দেখিনি (স্বাধীন)

আমার বোনের এই অবস্থা আর আপনার কি এখন মজা করতে ইচ্ছে হচ্ছে? (সামিরা)

আরে মিস সামিরা রেগে যাচ্ছেন কেনো? আচ্ছা আমি আর কিছু বলবো না। ( স্বাধীন)

সাজ্জাদ আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিতার চেহেরাটা দেখে সাজ্জাদ ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।

আপনারা ও রেস্ট নিন আমি রুম দেখিয়ে দিচ্ছি আসুন আমার সাথে। ( সামিরা)

সাজ্জাদ স্বাধীনকে ইশারায় কিছু একটি বললো। স্বাধীন তা বুঝতে পেরে সামিরার সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এখন রুমে শুধু সাজ্জাদ আর আদ্রিতা আছে। সাজ্জাদ আদ্রিতার কাছে গেলো। হাত গিয়ে আদ্রিতার গাল স্পর্শ করলো। সাজ্জাদের ঠোঁট আদ্রিতার কপালে ছুঁয়ে দিলো। পরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

******

সামিরার দেখিয়ে দেওয়া রুমে সাজ্জাদ আর স্বাধীন ফ্রেশ হয়ে বসলো।

তোর কি মনে হয় খু*ন কে করেছে? ( স্বাধীন)

এখানে নিশ্চয়ই দুটি পক্ষ রয়েছে। একদল আদ্রিতার ক্ষতি করতে চেয়েছে। অন্যদল সাহায্য। (সাজ্জাদ)

কলেজে আদ্রিতার এমন শএু কে রয়েছে। ( স্বাধীন)

আছে ত কেউ। না হলে কারোর সাহস কিভাবে হয় আদ্রিতার দিকে হাত বাড়ানোর। ( সাজ্জাদ)

****কিছুক্ষণ পর*****

সামিরা দৌঁড়ে সাজ্জাদের রুমে গেলো। সাজ্জাদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

আদ্রিতার জ্ঞান ফিরেছে।

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ২৯
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতার জ্ঞান ফিরেছে।

কথাটি শুনে সাজ্জাদ আর বাকিরা দ্রুত আদ্রিতার রুমে গেলো। গিয়ে দেখতে পারলো,

আদ্রিতা বসে আছে মুখটা মলিন৷ দেখে বোঝা যাচ্ছে এখন ও সেই বিষয়ের জন্য ভয় পাচ্ছে।

স্বাধীন আদ্রিতার বাবার কাছে এসে বললো,

আংকেল আর আন্টি আপনারা বাইরে যান। আমরা কথা বলে দেখি। ( স্বাধীন)

আদ্রিতার বাবা ও আদ্রিতার মা রুম থেকে চলে গেলো। এখন রুমে সামিরা স্বাধীন আর সাজ্জাদ রয়েছে।

সাজ্জাদ এসে আদ্রিতার পাশে বসলো। আদ্রিতার কোনো হেলদোল নেই। নিষ্প্রাণের মতো সামনে তাকিয়ে আছে।

আদ্রিতা (সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের ডাক শুনে ও আদ্রিতা কিছু বললো না। সাজ্জাদ একবার আদ্রিতার হাত ধরতেই। আদ্রিতা চমকে উঠলো আর দ্রুত দুরে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। আদ্রিতার ছটফটানি দেখে সাজ্জাদ আদ্রিতার হাত ছেড়ে দিলো। সাজ্জাদ বুঝতে পারছে ওই ছেলেগুলো বাজে ভাবে ধরেছে। সাজ্জাদ কোনোমতে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো।

আদ্রিতা, তখন কি হয়েছিলো বলো। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা তাও কিছু বলছে না। সামিরার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।

স্বাধীন আর সামিরা তোমরা একটু বাইরে যাও। আমাকে কথা বলতে দেও (সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথা শুনে সামিরা আর স্বাধীন বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো।

মিস সামিরা আপনি চিন্তা করবেন না। আদ্রিতার তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। ( স্বাধীন)

আমার বোনের কে এমন ক্ষতি করতে চাই? (সামিরা)

চিন্তা করবেন না পুলিশ বিষয়টি দেখছে। ( স্বাধীন)

******

আদ্রিতা এইভাবে চুপ করে থেকো না বলো কি হয়েছে। (সাজ্জাদ)

আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে চোখ তুলে তাকালো।

আআমি কিছু করি নি ওরা আআমার সাথে আদ্রিতা কোনোমতে এই কথাটি বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

সাজ্জাদের হৃদয় যেনো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওই লাশগুলোকে তুলে এনে আবার খু*ন করতে।

তুমি ত আলো ওদের সাথে ছিলে। ওই রুমে গেলে কিভাবে? ( সাজ্জাদ)

আমি বসে ছিলাম চেয়ার। গিফট আনার জন্য ওই রুমে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কেউ দরজা বন্ধ করে দিলো আর একটি গ্যাসের মতো কিছু একটা ছেড়ে দিলো। আমার দমবন্ধ লাগা শুরু করেছিলো। অনেক দরজা খোলার চেষ্টা করেছি কাজ হয় নি। ( আদ্রিতা)

তারপর? ( সাজ্জাদ)

হঠাৎ দরজা খুলে ৩ জন ছেলে ভিতরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে একটি ছেলে বাইরে দিয়ে দরজা আটকে দেই। আর বাকি দু’জন আআমমারর সাসাথে আদ্রিতা আর কিছু বলতে পারলো না শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে যায়।

সাজ্জাদ আদ্রিতার কাছে গিয়ে ইনহেলার আদ্রিতার মুখে ধরে আদ্রিতার মাথা সাজ্জাদের বুকে চেপে ধরে। ইনহেলারের ফলে আদ্রিতা এখন কিছুটা সুস্থ অনুভব করছে। সাজ্জাদ বুঝতেই পারছে পরবর্তীতে কি ঘটেছে। আদ্রিতাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আদ্রিতা নিজেই আবার বলা শুরু করলো,

তারা আমার সাথে অনেক খারাপ কিছু করতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ কেউ দরজা খুলে প্রবেশ করৰো আর তাদের উপর গুলি চালিয়ে দিলো। আমি মনে করেছিলাম আমাকে ও মে*রে ফেলবে। কিন্তু তারা আমাকে কিছু করলো না। ( আদ্রিতা)

হুম বুঝলাম। ওদের খু*ন করতে দেখে তুমি ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো তাই ত? (সাজ্জাদ)

হুম। (আদ্রিতা)

আচ্ছা ওইরুমে গিফট আছে। সেটা তোমাকে কে বলেছে? ( সাজ্জাদ)

রিজভী বলেছিলো। আরিয়ান স্যার নাকি গিফটটি রিজভীকে আনতে বলেছিলো। কিন্তু রিজভী ব্যস্ত ছিলো তাই আমাকে বললো যেনো নিয়ে আসি। তাই গিফটটা আনতে ওইরুমে গিয়েছিলাম। (আদ্রিতা)

তোমার বন্ধুর নাম না আবির? ( সাজ্জাদ)

রিজভী নওশিন ওদের ফ্রেন্ড। ( আদ্রিতা)

নওশিন ওই মেয়েটি না একদিন আমার সাথে তোমাকে গাড়িতে দেখেছিলো পরে তোমাকে আমার সাথে দেখে দেখে অপমান করেছিলো? ( সাজ্জাদ)

হুম সেই মেয়েটি। ( আদ্রিতা)

তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে নওশিনই তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। ( সাজ্জাদ)

কি বলছেন? একটি মেয়ে হয়ে অন্য একটি মেয়ের ক্ষতি কিভাবে করতে পারে? ( আদ্রিতা)

এইটা কালকে কলেজে গেলেই বোঝা যাবে। ( সাজ্জাদ)

আর খু*ন করেছে কে? ( আদ্রিতা)

সেটা বুঝতে পারছি না। আচ্ছা মনে করার চেষ্টা করো ওই লোকটির মধ্যে এমন কিছু দেখেছিলে কি যা দেখে চিনার উপায় আছে? ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, কালো ড্রেস পড়া ছিলো। মুখ ও ঢাকা ছিলো কিন্তু হাতে ট্যাটু ছিলো একটা সেখানে মনে হয় লেখা ছিলো Dark ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার কথা শুনে সাজ্জাদ চমকে উঠলো।

আচ্ছা তুমি এখন রেস্ট নেও। আমি যাচ্ছি। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ যেতে নিলেই আদ্রিতা সাজ্জাদের হাত ধরে ফেললো,,

কিছু বলবে? (সাজ্জাদ)

ওই লোকটি না থাকলে এখন আমার কারোর সামনে মুখ দেখানোর উপায় থাকতো না। ( আদ্রিতার)

সাজ্জাদ আদ্রিতার কথাই কি বলবে জানা নেই। আদ্রিতার কাছে এসে একবার ওকে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিতা ও কোনো বাঁধা দিলো না। আদ্রিতার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান যেনো এইটি।

আচ্ছা যাচ্ছি আমি কালকে তোমাকে নিয়ে কলেজে যাবো। রেডি থেকো। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। আদ্রিতা ফোনটা হাতে নিলো। নিউজফিড শুধু আদ্রিতার কলেজের খবর। আদ্রিতা ফোনটা রেখে দিলো। চোখ বন্ধ করে শুইয়ে পড়লো।

সাজ্জাদ নিচে নেমে সামিরা আর স্বাধীনকে সব বললো।

খারাপ কিছু হওয়া থেকে বেচে গেছে। ( স্বাধীন)

হুম। আল্লাহ রক্ষা করেছে। ( সামিরা)

আমার ও মনে হচ্ছে ওই রিজভী এই কাজ করেছে। নওশিনের কথায় করেছে ( স্বাধীন)

হুম আমার ও মনে হচ্ছে। ( সামিরা)

আচ্ছা আমরা যাচ্ছি এখন এমনি অসেক রাত হয়ে গেছে। ( সাজ্জাদ)

রাতের খাবার খেয়ে তারপর যান। ( সামিরা)

সামিরা কথাটি বলে মা – বাবাকে ও ডাক দিলো। আদ্রতার মা ওদের না খাইয়ে যেতে দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা রাতের খাবার থেতে বসলো। খাবার খাওয়া শেষে সাজ্জাদ ও স্বাধীন বেরিয়ে পড়লো।

গাড়িতে ~

স্বাধীন গাড়ি চালাচ্ছে পাশে সাজ্জাদ বসে আছে। হঠাৎ সাজ্জাদ বলে উঠলো,

S.R আদ্রিতাকে সত্যিই ভালোবাসে। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদের কথা শুনে স্বাধীন অবাকের চরম পর্যায় চলে গেলো।

কি বলছিছ তুই? ( স্বাধীন)

ওই লোকদের S.R এর লোক মেরেছে। ( সাজ্জাদ)

কিভাবে বুঝলি? ( স্বাধীন)

আদ্রিতা বলেছে ওই লোকটির হাতে Dark লেখা ছিলো। ( সাজ্জাদ)

তার মানে S.R এর লোক আদ্রিতার উপর নজর রেখেছে। ( স্বাধীন)

হুম। ( সাজ্জাদ)

স্বাধীন আর কিছু বললো না।

********

বস ওই লোকদের মে*রে ফেলেছি। ( S.R এর লোক)

ঠিক করেছিছ। সাহস কি করে হয় আমার আদ্রিতার উপর হাত তুলার। ( S.R)

বস সেখানে সাজ্জাদ ও ছিলো। কিন্তু সাজ্জাদ আদ্রিতাকে সাহায্য করতে আসলো না মনে হয় সাজ্জাদ আদ্রিতার বড় বোনকে ভালোবাসে আদ্রিতাকে না। (S.R এর লোক)

আমার ও এইটাই মনে হচ্ছে। (S.R)

বস আমি চেয়েছিলাম আদ্রিতা মেডামকে রুম৷ থেকে বের করে আনতে। কিন্তু গুলির শব্দে অনেক মানুষ এসে ভিড় জমাতো তাই এসে পড়েছি। পড়ে শুনেছি পুলিশ ও এসেছিলো। (S.R এর লোক)

হ্যাঁ ঠিক করেছিছ। কে আদ্রিতার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো তাদের খুঁজে বের কর (S.R)

ওকে বস ( S.R এর লোক)

S.R ফোনটি কেটে দিলো।

****** সাজ্জাদের বাসায় *****

সাজ্জাদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সাজ্জাদ সামিরাকে ফোন দিলো।

আসসালামু আলাইকুম ( সামিরা)

সাজ্জাদ সালামের জবাব দিলো। আদ্রিতা কেমন আছে? ( সাজ্জাদ)

ঘুমাচ্ছে। কিন্তু অনেক জ্বর।(সামিরা)

আচ্ছা। কথাটি বলে সাজ্জাদ ফোন কেটে দিলো। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সাজ্জাদ। অজানা একটি ভয় কাজ করছে। S.R সাজ্জাদের থেকে আদ্রিতাকে ছিনিয়ে নিবে না ত?

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩০
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সকাল সকাল সাজ্জাদ আদ্রিতার বাসায় এসেছে। উদ্দেশ্য কলেজে যাওয়া৷ সাজ্জাদ শতভাগ নিশ্চিত এই কাজটি নওশিন করেছে। প্রিন্সিপাল স্যারকে ফোন করে বলে দিয়েছে আজকে সবাই যেনো কলেজে থাকে। স্বাধীন আসতে চেয়েছিলো কিন্তু সাজ্জাদ না করে দিয়েছে। খু*নের ব্যাপারটা স্বাধীন দেখছে।

সামিরা আদ্রিতা কোথায় আর কতক্ষণ লাগবে ওর আসতে? ( সাজ্জাদ)

ওকে সেই সকাল থেকে ডাকছি উঠার কোনো নাম নেই। ( সামিরা)

কালকে যেই একটা ধকল গেলো না উঠারই কথা। (সাজ্জাদ)

না আদুরি সব সময় একটু বেশি ঘুমাই। ( সামিরা)

ওহ। ( সাজ্জাদ)

আপনি বসেন আমি নাস্তা তৈরি করছি। ( সামিরা)

কেনো আন্টি কোথায়? ( সাজ্জাদ)

বাবা অফিসে আর আম্মু একটু কাজ ছিলো দাদুর বাসায় গিয়েছে আসতে আসতে দুপুর হয়ে যাবে। ( সামিরা)

ও আচ্ছা। তুমি একটা কাজ করো আগে আদ্রিতাকে উঠাও ঘুম থেকে। ( সাজ্জাদ)

আমার ডাকে ত উঠছে না। আপনি একটু যেয়ে উঠান আমি কাজ গুলো সেরে নেই। ( আদ্রিতা)

ওকে। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো একটি বালিশ নিচে পড়ে আছে। আদ্রিতা ও খাটের একদম কিনারে আর একটু হলেই পড়বে।

মেয়েটা আর বড় হলো না। ( সাজ্জাদ মনে মনে কথাটি বললো)

আদ্রিতার বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

এই আদ্রিতা উঠো। ( সাজ্জাদ)

না দি আর একটু পর ( আদ্রিতা)

আমি কি তোমার দি নাকি? ( সাজ্জাদ)

হুম দি ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ হাত দিয়ে আদ্রিতার মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে দিলো। হাতের আঙুল ঠোঁটে স্পর্শ করলো। হঠাৎ আদ্রিতা ঘুমের মধ্যেই সাজ্জাদের হাত ধরে। আদ্রিতার এমন কাজে সাজ্জাদ কিছুটা চমকে যায়। পরে বুঝতে পারে ঘুমের মধ্যেই হাত ধরেছে।

দি Love you আদ্রিতার এমন কথা শুনে সাজ্জাদ বিষম খেলো। দ্রুত আদ্রিতার থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আদ্রিতা ঘুম ঘুম চোখে দেখলো এটি সামিরা না সাজ্জাদ। সাজ্জাদকে দেখা মাএ সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়লো। তাড়াতাড়ি দাঁড়াতে গিয়ে খেয়াল করে নি যে আদ্রিতার কাছে এখন ওরনা নেই।

এই আপনি এতো সকালে আমার রুমে কি করেন? ( আদ্রিতা)

মাএ ঘুম থেকে উঠা চুলগুলো এলোমেলো। ওরনা নেই। সব কিছু মিলিয়ে সাজ্জাদকে খুব টানছে আদ্রিতার দিকে।

কি হলো কথা বলছেন না কেনো? ( আদ্রিতা)

আগে নিজেকে ঠিক করো। কথাটি বলে সাজ্জাদ অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। আদ্রিতা কথাটি বুঝতে পেরে খেয়াল করে দেখলো ওর গায়ে ওরনা নেই। দ্রুত ওরনা পড়ে নিলো। তারপর সাজ্জাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

আপনার সাহস ত কম নয় কেনো আমার রুসে এসেছেন? ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার কথা শুনে সাজ্জাদ দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,

কেনো আবার তোমার সাথে রোমান্স করতে। কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার কোমর জড়িয়ে বিছানায় নিজে পড়ে গেলো। সাজ্জাদের উ*পর আদ্রিতা। আদ্রিতা নামার জন্য ছটফট করতে থাকলে সাজ্জাদ আদ্রিতার ঠোঁট স্পর্শ করে দিলো। আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিতা ও যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো। শান্ত হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ছেড়ে দিলো।

আরো বলবো নাকি কেনো এসেছি? ( সাজ্জাদ)

বের হোন রুম থেকে ( আদ্রিতা)

যদি বের না হয়? কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার দিকে এগোতে লাগলো।

আআপনি কি করবেন? ( আদ্রিতা)

হঠাৎ সাজ্জাদ আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো। আর বললো চলো তোমাকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে আসি। আচমকা এমন কথায় আদ্রিতা বিষম খেলো।

কথা শুনেই বিষম খেলে তাহলে ফ্রেশ করিয়ে আনলে কি অবস্থা হবে তোমার? ( সাজ্জাদ)

ছাছাড়ুড়ুননন আমাকে। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার ছটফটানি দেখে সাজ্জাদ আদ্রিতাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। আদ্রিতা দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সাজ্জাদ হেসে উঠলো।

সাজ্জাদ নিচে নেমে আসলো।

ভাইয়া আদুরি উঠেছে? ( সামিরা)

হ্যাঁ, আসছে ( সাজ্জাদ)

ওকে ( সামিরা)

কিছুক্ষণ পর আদ্রতা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো।

দি আমি গেলাম। ( আদ্রিতা)

খেয়ে যা , সাজ্জাদ আপনি ও খেয়ে নিন। ( সামিরা)

সাজ্জাদ আদ্রিতা সামিরা ৩জনই নাস্তা করে নিলো। পরে আদ্রিতা আর সাজ্জাদ বেরিয়ে পড়লো কলেজের উদ্দেশ্য।

ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। সাজ্জাদ আর আদ্রিতা পিছনে বসা। আদ্রিতা বাইরে তাকিয়ে আছে।

আদ্রিতা ( সাজ্জাদ)

হুম বলেন। ( আদ্রিতা)

নার্ভাস ফিল করছো? ( সাজ্জাদ)

ওরা যদি আবার আমার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করে? ( আদ্রিতা)

তুমি মনে হয় ভুলে গেছো ওদের খু*ন করা হয়েছে। ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ওদের কে খু*ন করেছে? ( আদ্রিতা)

এখনো ও জানা যায় নি। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা আর কিছু বললো না। সাজ্জাদ জানে কে খু*ন করেছে কিন্তু আদ্রিতাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি।

সাজ্জাদ আদ্রিতার কানের সামনে এসে বললো কোনো ছটফট করবে না। যা করবো চুপচাপ সহ্য করো। কথাটি বলে আদ্রিতাকে আরো কাছে টেনে নিলো এবং জড়িয়ে ধরে বসলো। আদ্রিতা ও বাঁধা দিলো না। চোখ বন্ধ করে সাজ্জাদের গায়ে হেলান দিয়ে শান্তিতে বসলো।

****** কলেজে ******

সাজ্জাদ আর আদ্রিতা কলেজে প্রবেশ করলো। আদ্রিতার চোখ ছলছল করছে কালকে একটুর জন্য হলে ওর সব মান সম্মান নষ্ট হয়ে যেতে। হঠাৎ কেউ দৌড়ে এসে আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরলো।

ঠিকাছিছ তুই জানিস কালকে কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম? ( আলো)

হুম ঠিক আছি। ( আদ্রিতা)

আবির আর তানহা ও আসলো।

জানিস কালকে কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ( তানহা)

হ্যাঁ কালকে কি হয়েছিলো আর তুই চেয়ারে বসে ছিলি ওই রুমে কিভাবে গেলি? ( আবির)

দাঁড়া দাঁড়া সব বলছি তোদের। আদ্রিতা সব খুলে বললো ওদের।

এটা নিশ্চয়ই ওই নওশিনের কাজ। ( আলো)

হ্যাঁ ঠিক বলেছিছ নওশিনই এমন কাজ করতে পারে। (তানহা)

কিন্তু প্রমাণ কি? ( আবির)

সিসিটিভি ফুটেজ ( সাজ্জাদ)

এতোক্ষণ তারা যেন ভুলেই গিয়েছিল সাজ্জাদ ও তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।

জ্বি ভাইয়া ঠিক বলেছেন। এখনি যেয়ে চেক করতে হবে। ( আবির)

হুম। (সাজ্জাদ)

এমন সময় আরিয়ান স্যার আসলো।

আদ্রিতা কেমন আছো? ( আরিয়ান)

জ্বি স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। (আদ্রিতা)

জানিস আদ্রিতা কালকে ত ভয়ে আলো ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। ( তানহা)

কি তারপর? ( আদ্রিতা)

তুই যেই রুমে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলি সেই রুমেই আলো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো আমরা কিভাবে অন্য রুমে নিয়ে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু আরিয়ান স্যার পরে আলোকে কোলে করে অন্য রুমে নিয়ে গেলো। ( তানহা)

কথাটি শুনে আলো আর আরিয়ান দু’জনই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।

কালকের কথা বাদ দেও সবাই কম্পিউটার রুমে চলো ফুটেজ দেখতে হবে। ( আরিয়ান)

আরিয়ানের কথায় সবাই সহমত প্রকাশ করলো। আদ্রিতা, সাজ্জাদ, তানহা,আবির সবাই কম্পিউটার রুমের দিকে এগোলো। আলো দাঁড়িয়ে আছে।

কি হলো তুমি যাবে না? ( আরিয়ান আলোা উদ্দেশ্য কথাটি বললো)

ধন্যবাদ স্যার কালকে সাহায্য করার জন্য। (আলো)

একজন মানুষ হিসেবে অন্য একজনের সাহায্য করেছি শুধু। ( আরিয়ান)

হুম। ( আলো)

যদি রাগ না করো একটা কথা বলবো? ( আরিয়ান)

জ্বি স্যার বলুন। ( আলো)

একটু বেশি চিকন তুমি। বিয়ের পর তোমার বর চাইলে সারাক্ষণ তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে পারবে।( আরিয়ান)

আরিয়ান কথাটি বলে চলে গেলো। আলো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ কি কথা বলে গেলো আরিয়ান স্যার?

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৩১
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সাজ্জাদ কম্পিউটার রুমে বসে আছে বাকিরা ও আছে। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রিজভী ওই রুমে সেই গ্যাস টাইপ জিনিসটা ফেলেছিলো। এখন সবাই সিউর কাজটা যে ওরা করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই সাজ্জাদের চোয়াল শুক্ত হয়ে আসলো।

আমার আগে থেকেই মনে হয়েছিলো নওশিন যুক্ত আছে। (আলো)

একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে একটা মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করতে পারে? ছিহহ ( তানহা)

নওশিন কাজটা ঠিক করে নি খুব খারাপ করেছে শাস্তি পেতেই হবে। ( আবির)

অবশ্যই শাস্তি পাবে। যা করেছে ক্ষমার অযোগ্য। ( আরিয়ান)

আদ্রিতা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এই আদ্রিতা কিছু বল। (আলো)

আদ্রিতা কিছু বলছে না দেখে সাজ্জাদ আলোকে ইশারায় বললো আদ্রিতাকে এখন যেনো কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করে।

সবাই প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে চলো নওশিনের আজকেই শাস্তি দেওয়া হবে। ( আরিয়ান)

আরিয়ানের কথায় সবাই সহমত প্রকাশ করলো। সবাই প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেলো।

নওশিন যেই কাজটি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। ওকে ও এখনি আমার রুমে আসতে বলো। ( প্রিন্সিপাল স্যার)

তানহা যেয়ে নওশিন রাইসা আর রিজভী ওদের উদ্দেশ্য বললো প্রিন্সিপাল স্যার তোমাদের অফিস রুমে যেতে বলেছে কথাটি বলে তানহা আবার অফিস রুমে চলে গেলো।

এদিকে ~

ফেঁসে গেছি মনে হয়।( রাইসা)

যেভাবেই হোক তাদের বুঝতে দেওয়া যাবে না। ( নওশিন)

আমার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ( রিজভী)

একদম নরমাল ভাবে থাকতে হবে। যেনো আমরা এই সম্পর্কে কিছুই জানি না। ( নওশিন)

তারপর নওশিনরা অফিস রুমে গেলো। সাজ্জাদের পাশে আদ্রিতাকে দাঁড়াতে নওশিন রাগ বেড়ে যাচ্ছে।

রিজভী আমি কি তোমার কাছে গিফটের প্যাকেটটি চেয়েছিলাম? ( আরিয়ান)

না স্যার মানে আর কি….. ( রিজভী)

একদম চুপ সত্যি করে বলো আদ্রিতাকে কেনো ওই রুমে পাঠিয়েছো? ( আরিয়ান)

স্যার গিফট এর জন্য… ( রিজভী)

একদম মিথ্যে বলবে না। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তুমি ওই রুমে গ্যাসের মতো কিছু একটা ফেলেছো। আর একটা মিথ্যে কথা বললে গায়ে হাত পড়বে। বলো কেনো করেছো? ( আরিয়ান)

সিসিটিভির কথা৷ নওশিন রাইসা ভুলেই গিয়েছিলো।

স্যাস্যার নওশিনের কথায় করেছি। ( রিজভী)

না স্যার আমি বলি নি। আমি কিছু জানি না। ( নওশিন)

আর একটা ও কথা না দোষ শিকার করবে নাকি তোমার বাবাকে ডাকবো? ( আরিয়ান)

বাবাকে বড্ড ভয় পায় নওশিন তাই নিজের দোষ শিকার করে নিলো।

আমার ভাবতে ও খারাপ লাগছে এতো জগণ্য একটি কাজ তুমি করতে পারো। ( প্রিন্সিপাল স্যার)

আদ্রিতা তুমি এখন যা বলবে সেই শাস্তি দেওয়া হবে। (আরিয়ান)

আলো নওশিনের উদ্দেশ্য বললো তুই নিজে একটি মেয়ে হয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে এরকম করিছ কি করে?

উপযুক্ত শাস্তি তুমি পাবে। ( প্রিন্সপাল স্যার)

আর রিজভী আর রাইসা ও যেহেতু সাথে ছিলো তারা ও শাস্তি পাবে। ( আরিয়ান)

প্রিন্সিপাল স্যার আরিয়ানের উদ্দেশ্য বললো ওদের বাবাকে এখনি খবর দেও আর আসতে বলো।

আদ্রিতা এতোক্ষণ নিরব দর্শকের৷ মতো সব শনে যাচ্ছিল। আদ্রিতার পাশেই সাজ্জাদ দাঁড়ানো ছিলো। আদ্রিতা নওশিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।

ঠাঁ*স করে নওশিনকে একটি চড় মারলো। সাজ্জাদ আদ্রিতার এমন কাজে অবাক হওয়ার পাশাপাশি অনেক খুশি হলো। আলো, তানহা, আবির ওরা ও খুশি হলো। নওশিন যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তাই আদ্রিতার কাজে প্রিন্সিপাল স্যার কিংবা আরিয়ান কেউ কিছু বললো না।

একটি মেয়ের কাছে সব থেকে সব সম্পদ হচ্ছে তার সম্মান। একটি ছেলে একটি মেয়ের সম্মান নষ্ট করতে পারে। কিন্তু তুমি একটি মেয়ে হয়ে কিভাবে পারলে আমার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করতে? কিসের এতো রাগ ছিলো আমার উপর যে তুমি এমন করলে? কেনো করলে? আর রাইসা তোমার বান্ধবীর সাহায্য করতে যেয়ে তুমি যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তোমরা নিজেরা ও মেয়ে একটা মেয়ে আরেকটি মেয়ে সর্বনাশ করতে চেয়েছিলে। মেয়ে হওয়ার যোগ্যতা কি তোমাদের আছে? আর রিজভী শুনেছি তোমার নাকি একটি ছোট বোন আছে। আজ তোমার বোনের সাথে কেউ এইকাজ করতে আসলে কেমন লাগতো তোমার? ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা কথাগুলো বলে থামলো গলা ধরে আসছে।

বাদ দে অমানুষদের এইসব কথা বলে লাভ নেই। ( আলো)

উপযুক্ত শাস্তি তোমরা পাবে। ( তানহা)

****** বেশ কিছুক্ষণ পর *******

নওশিনের বাবা এসেছে সব কথা শুনে নওশিনেকে সবার সামনেই চড় মারে। অনেক বকা দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে দেয় যেই শাস্তি ওদের দেওয়া হবে তা মেনে নিবে। ওদের যেনো উপযুক্ত শাস্তি যেওয়া হয়। রাইসা আর রিজভীর বাবা ও একই কথা বলেছে। প্রিন্সিপাল স্যার বলেছে কালকে ওদের শাস্তি দেওয়া হবে। আরিয়ান,আবির,সাজ্জাদ আলো, তানহা,আদ্রিতা সবাই অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসে।

তোমরা এখন ক্লাসে যাও সবাই। ( আরিয়ান)

আদ্রিতা আজকে ক্লাস করবে না। ১,২ দিন পর থেকে ক্লাসে আসবে। ( সাজ্জাদ)

ওকে ( আরিয়ান)

বাকিরা ক্লাসে চলে যায়। আর সাজ্জাদ আদ্রিতাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

আসি ক্লাস করবো না এইটা কেনো বললেন? ওদের সাথে কিছু সময় কাটিয়ে আসতাম। ( আদ্রিতা)

আমার সাথে সময় কাটাও। ( সাজ্জাদ)

আপনার সাথে আমি কি করবো। আপনি থাকুন আমি কলেজে গেলাম। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা যেতে নিলে সাজ্জাদ আদ্রতার হাত ধরে ফেলে হাত ধরে চমকে উঠে, তোমার ত জ্বর অনেক বেড়ে গেছে। বাসায় চলো। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা ও আর কথা বাড়ালো না। কারন শরীর খারাপ লাগছে। সাজ্জাদ আর আদ্রিতা গাড়িতে উঠতে নিবে এমন সময় নওশিন ওরা বের হয়ে আসলো।

সাজ্জাদ যেয়ে নওশিনের সামনে দাঁড়ালো আদ্রিতা ও সাথে আছে।

সাজ্জাদ নওশিনের উদ্দেশ্য বললো, নেক্সট কথনো যদি আমার আদ্রতার আশে পাশে দেখেছি ছেড়ে কথা বলবো না। কথাটি মনে থাকবে?

হুম মনে থাকবে। ( নওশিন)

কথাটি বলে নওশিন ওরা চলে গেলো।

চলুন বাসায় যায়।( আদ্রিতা)

চলো গাড়িতে উঠো। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ আর আদ্রিতা গাড়িতে বসে পড়লো। সাজ্জাদ কতক্ষণ পর খেয়াল করলো। আদ্রিতা জ্বরের ঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাজ্জাদ এক হাত দিয়ে আদ্রিতাকে আঁকড়ে ধরলো।

*****

আদ্রিতার বাসার সামনে এসে গাড়িটি থামলো। সাজ্জাদ নেমে আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো। আদ্রিতার ঘরের ভিতরে ঢুকলো। সামিরা দেখে বললো ভাইয়া আবার কি হয়েছে?

জ্বর বেড়ে গেছে। আমি ওকে ওর রুমে শুয়ে দিয়ে আছছি। কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতাকে নিয়ে উপরে উঠে গেলো।

সাজ্জাদ আদ্রিতাকে খাটে শুইয়ে দিলো। কম্বল টেনে আদ্রিতার উপর দিয়ে দিলো। আদ্রিতার কপালে ভালোবাসার পরশঁ একে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সামিরার সাথে কিছু কথা বলে চলে গেলো সাজ্জাদ।

********** ১০ দিন পর *********

সময় প্রবাহমান। সেদিনের পর কেটে গেছে ১০ দিন। নওশিন ওদের কলেজ থেকে টি.সি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আদ্রিতা সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু এই কয়েকদিনে সাজ্জাদের সাথে খুব কম দেখা বা কথা হয়েছে। আদ্রিতা মাএ কলেজ থেকে এসেছে।

সামিরার বিয়ের মাএ ৭দিন বাকি। এখন থেকেই সব প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। ( আদ্রিতার মা)

কথাটি শুনে আদ্রিতা থমকে গেলো। তাহলে কি ১ সপ্তাহ পর সামিরার সাথে সাজ্জাদের বিয়ে হয়ে যাবে?

#চলবে