অজানা অনুভূতি পর্ব-৮+৯+১০

0
225

#অজানা_অনুভূতি
#পর্ব- ০৮
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি

মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে।

অন্যদিকে ~

S.R কোনোভাবে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। কারন তার লোকেরা আদ্রিতাকে তুলে আনতে পারে নি। S.R বাংলাদেশে থাকা লোকটিকে বললো, যেহেতু সাজ্জাদ একবার আদ্রিতাকে রক্ষা করেছে আর বুঝতে পেরেছে তারা আমার লোক তাহলে এখন থেকে সাজ্জাদ সব সময় আদ্রিতাকে নজরে রাখবে। এখন আর আদ্রিতার কাছে যাওয়ায় দরকার নাই। তুই শুধু খবর রাখ ও কোথায় যাচ্ছে কখন কি করছে সব কিছুর ইনফরমেশন আমাকে দে।

ওকে বস। কথাটি বলে লোকটি ফোন কেটে দিলো।

অপরদিকে ~

অফিসে যাওয়ার আগে সাজ্জাদ আর স্বাধীন বের হয়েছে। স্বাধীন বললো কালকে রাতের লোকগুলো S.R এর লোক ছিলো। সাজ্জাদ বলৰো, হ্যাঁ ওরা আবার আদ্রিতার পিছু নিয়েছে। স্বাধীন জিজ্ঞেস করলো, আদ্রিতাকে সতর্ক কিভাবে করবি? ওকে কি সব বলবি নাকি আমরা আড়ালে থেকে আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো?

সাজ্জাদ বললো, না আদ্রিতার মধ্যে এখনো যথেষ্ট ম্যাচুরিটি নেই। ও আবার S.R এর কথা শুনলে ভয় পেয়ে যাবে। যা করতে হবে আমাদের আড়ালে থেকেই করতে হবে।

স্বাধীন বললো, আদ্রিতা এখন বাসায় ও নিরাপদ না।

সাজ্জাদ বললো, আমি ওদের বাসায় আশে পাশে পুলিশদের ইনফরমেশন দিয়ে রেখেছি। বাসায় কোনো রকম সমস্যার মধ্যে পড়বে না। আর বাইরে আমি আছি আদ্রিতার সাথে সব সময়। একবার S.R কে ধরতে পারলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

স্বাধীন বললো, আচ্ছা অফিসে যাবি এখন? চল

সাজ্জাদ বললো, না আর একটু পর আমি একটু আদ্রিতাদের বাসায় ওইখানে যাবো, তুই অফিসে চলে যা।

স্বাধীন বললো, কি ব্যাপার দোস্ত ভাবির সাথে দেখা করতে যাবি নাকি?

সাজ্জাদ বললো, ওদের বাসায় সব ঠিক আছে নাকি দেখতে যাবো।

স্বাধীন বললো, ও আচ্ছা একথা বলে স্বাধীন চলে গেলো।

অন্যদিকে ~

আমার বাসায় অনেক আয়োজনের ব্যবস্থা করছে মা। আমাদের কিছু আত্নীয় স্বজনদের ও আজকে আসতে বলেছে। বাড়িতে যেনো একটা বিয়ে বাড়ির ভাব এসেছে

অপরদিকে ~

সাজ্জাদের মা ও অনেক খুশি, ছেলের বিয়ে তারিখ ঠিক হবে দেখে। কিন্তু একটি ব্যাপারে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কারন সাজ্জাদের মা চেয়েছিলো আদ্রিতার সাথে সাজ্জাদের বিয়ে দিতে। কারন সামিরা অনেক শান্ত অনেক চুপচাপ থাকে। সাজ্জাদের মার কোনো মেয়ে নেই দেখে। সাজ্জাদের মা চেয়েছিলো এমন মেয়েকে তার ছেলের বউ বানিয়ে আনবে যে কিনা সব সময় বাসা মাতিয়ে রাখবে। সাজ্জাদের মা চেয়েছিলো বউ না একটি মেয়ে নিয়ে আসবে। কিন্তু যায় হোক সাজ্জাদের ভাগ্য সামিরা লেখা আছে তাই হয়তো সামিরার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। সাজ্জাদের মা ও প্রস্তুতি শুরু করলো সামিরার বাসায় যাওয়ার জন্য।

এদিকে ~

রাস্তায় আলোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় দেখলাম আরিয়ান স্যার আসছে আমি সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললো,

কি ব্যাপার আদ্রিতা এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে ১ সপ্তাহ কলেজে আসো নি আজকে ও কি আসবে না?

জ্বি, স্যার আসবো আলোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।

তার একটু দূরেই গাড়িতে সাজ্জাদ বসে আছে। আদ্রিতা আর আরিয়ানকে কথা বলতে দেখে অনেক রাগ হচ্ছে সাজ্জাদের।

আমার ফোন কেটে দিয়ে এখন রাস্তায় আরিয়ানের সাথে কথা বলা এতো সাহস ওর কিভাবে হয় (সাজ্জাদ)

এদিকে আলো এসেছে আলো ও স্যারকে সালাম দিলো।

আরিয়ান বললো কলেজেই ত যাবো চলো একসাথেই যায়।

আলো কিছু বলার আগে, আমি বললাম না স্যার আমরা ২ জন বাসে করে যাবো।

আরিয়ান স্যার বললো, আমি ও বাসে করেই যাবো। চলো একসাথেই উঠি।

সাজ্জাদ কথা শুনতে না পারলে বুঝতে পারছিলো আরিয়ান হয়তো ওদের সাথে যাওয়ার কথা বলছে।

স্যারকে কিছু বলার আগেই হঠাৎ সাজ্জাদ আসলো, এসে বললো আদ্রিতা, আলো গাড়িতে উঠো। আমি স্যারকে বললাম, স্যার আমরা সাজ্জাদ ভাইয়ার সাথে যাবো। কথাটি বলে, আলোকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম।

এদিকে আরিয়ান সাজ্জাদের উপর রেগে গেলো। মনে মনে ভাবতে থাকলো আমি যখনই ওর একটু কাছে থাকতে চাই। সাজ্জাদ চলে আসে। আচ্ছা এমন নয় ত যে সাজ্জাদ ও ওকে পছন্দ করে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আরিয়ান কলেজের উদ্দেশ্য চলে গেলো।

এদিকে গাড়িতে আমরা চুপচাপ রইলাম কলেজের সামনে এসে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে যেতে নিলাম তখন সাজ্জাদ বললো আদ্রিতা তোমার সাথে একটু কথা আছে। আমি আলোকে বললাম তুই রুমে যা আমি আসছি।

জ্বি, কি বলবেন? আর আপনি তখন গাড়ি নিয়ে হঠাৎ কোথা থেকে আসলেন?

এসব কথা আপাতত বাদ দেও। তুমি নিশ্চয়ই জানো সামিরার সাথে আজকে আমার বিয়ের দিন ঠিক করা হবে?

জ্বি, জানি এখন আমি কি করবো?

তোমার এ বিয়েতে কোনো আপওি নেই? (সাজ্জাদ)

যেইখানে আমার কোনো অধিকার নেই সেইখানে আপওি কেনো থাকবে?

তুমি ত আমাকে ভালোবাসো….. তোমার বোনের সাথে আমার বিয়ে মেনে নিবে কি? ( সাজ্জাদ)

ভালোবাসি না, ভালোবাসতাম, আপনি নিজেকে কি মনে করেন? আপনার কি মনে হয় সে দিনের অপমান আমি ভুলে গেছি? আপনার মতো মানুষের সাথে বাবা আগে থেকেই দির বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো শুধু মাএ এই জন্য দির সাথে আপনাকে মেনে নিচ্ছি না হলে কখনো দির সাথে আপনার বিয়ে দিতাম না।

কথা গুলো শুনে সাজ্জাদের খারাপ লাগলে ও কিছু বললো না। শুধু জিজ্ঞেস করলো, তাহলে এ বিয়েটা হচ্ছে?

হ্যাঁ, অবশ্যই হবে। আত্মীয় স্বজনরা সবাই জানে আপনার সাথে দির বিয়ে এখন এ বিয়ে হতেই হবে।

তুমি মেনে নিতে পারলেই হবে, দেখো আমার জন্য যেন তোমার বোনের সাথে তোমার সম্পর্ক খারাপ না হয়। কথাটি বলে সাজ্জাদ গাড়িতে উঠে পড়লো।

অন্যদিকে ~

সাজ্জাদের গাড়ি থেকে আদ্রিতা নামার সময় নওশিনরা দেখে ফেলে। নওশিন রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে। যেই যায়গায় নওশিন সাজ্জাদের নাম্বার পাচ্ছে না আর সেখানে আদ্রিতা সাজ্জাদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আমি রুমে যেতে নিলে, নওশিনরা সামনে আসলো এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেয়। তার উপর আবার ওরা, কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলাম তখন নওশিন বলে উঠলো, ভালোই ত বড়লোকের ছেলে দেখে ফাসিয়ে দিয়েছিছ। তুই সাজ্জাদের গাড়ি দিয়ে আসলি কোন হিসেবে? কি দিয়ে বশ করেছিছ?

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। মাঠে শুধু আমি আর নওশিনরা।
নওশিনকে বললাম নিজের লিমিট এর মধ্যে থেকো।

এদিকে ~

আদ্রিতা ভুলে তার ফোনটি সাজ্জাদের গাড়িতে ফেলে এসেছিলো। সাজ্জাদ ফোনটি দিতে এসে নওশিন এর কথা শুনে রাগের চরম পর্যায়ে চলে যায়। আর বুঝতে পারে হয়তো নওশিন তাকে পছন্দ করে এইজন্য আদ্রিতা আমার গাড়ি দিয়ে এসেছে দেখে নওশিন এমন করছে।

আমি আর কিছু নওশিন কে বলার আগেই, পেছন থেকে সাজ্জাদ বললো, এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আদ্রিতার সাথে এইভাবে কথা বলার?

কথাটি বলে সাজ্জাদ যা করলো তার জন্য আমি মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম না কারন সাজ্জাদ এগিয়ে এসে এক হাত দিয়ে আমাকে টান দিয়ে সাজ্জাদের সাথে জড়িয়ে ধরে ওদের উদ্দেশ্য বললো……

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ০৯
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সাজ্জাদ এগিয়ে এসে এক হাত দিয়ে আমাকে টান দিয়ে সাজ্জাদের সাথে জড়িয়ে ধরে নওশিনের উদ্দেশ্য বলে আদ্রিতার সাথে নেক্সট টাইম থেকে যেন এইভাবে কথা বলতে না দেখি। যদি কখনো আদ্রিতার থেকে জানতে পারি যে তোমরা ওর সাথে এইরকম আচরণ করেছো তাহলে আমি তোমাদের নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিবো। আর কি যেনো বললে ওকে আমার সাথে কেনো গাড়ি দিয়ে এসেছে? ওর ইচ্ছে হলে প্রতিদিন আমার সাথে আসবে তোমাদের সমস্যা কি?

রাইসা বুঝতে পারছে কথা বাড়ালে অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হবে। তাই সাজ্জাদকে বললো, ভাইয়া সরি আমরা বুঝতে পারি নি। কথাটা বলে রাইসা বাকিদের নিয়ে চলে গেলো।

আমি বললাম ছাড়ুন আমাকে, সাজ্জাদ আমাকে ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ালো।

সাজ্জাদ আদ্রিতাকে বললো, এমনি ত কম বক বক করো না তাহলে কেউ তোমাকে খারাপ কথা বললে তখন জবাব দিতে পারো না কেনো?

আরে আজব ত আমি কিছু বলার আগেই ত আপনি চলে আসলেন আর আপনি আমাকে….

কি হলো বলো কি বলবে? জড়িয়ে ধরেছি কেনো এইটা জিজ্ঞেস করবে? (সাজ্জাদ)

হ্যাঁ, এইটাই জিজ্ঞেস করবো। কেনো জড়িয়ে ধরেছেন?

আমার ইচ্ছা কথাটি বলে সাজ্জাদ চলে গেলো।

আমি একা একা কি করবো রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি আবির, তানহা,আলো সবাই একসাথে বসে আছে। আমাকে দেখে আলো বলে উঠলো,

কিরে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?

এতোক্ষণ যা হলো সব খুলে বললাম।

এই সাজ্জাদ কি সেই মানুষটা যে আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি? ( আবির)

হুম, উনার গাড়িতেই আমরা এসেছি। (আদ্রিতা)

কিন্তু তুই উনাকে কিভাবে চিনিছ? (তানহা)

বাবার বন্ধুর ছেলে।(আদ্রিতা)

ও আচ্ছা। (তানহা)

এমন সময় ক্লাসে স্যার চলে আসলো আমরা সবাই জায়গা মতো বসে পড়লাম। ক্লাস শুরু হলো।

অন্যদিকে ~

সামিরা রুমে বসে বসে চোখের জল ফেলছে। তার পক্ষে সম্ভব না তার আধুরির সব থেকে কাছের জিনিস কেড়ে নেওয়া। আর সেদিনের রাতে ওদের উপর হামলা হওয়ার পর সাজ্জাদ আদ্রিতার জন্য যেইভাবে বিচলিত হয়ে গিয়েছিল তাতে বোঝা যায় সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি কি করবো এখন পরিবারের সম্মানের ব্যাপার। বাসায় অলরেডি সামিরার ফুফি, চাচা আর খালামনি এসেছে। আজকে শুধু বড়রা আছে। অনুষ্ঠানের সময় সবাই আসবে। বাসায় সবাই মিলে অনেক ধরনের খাবার ব্যবস্থা করছে আর এদিকে সামিরা রুমে বসে বসে চোখের জল ফেলছে। আচ্ছা সাজ্জাদের সাথে যদি আমার বিয়ে হয়ে ও যায় তাহলে আধুরি কি আমাকে ঘৃণা করবে? এটা কিভাবে সহ্য করবো আমি?

কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার পর।

মনে মনে আজকে খুশি লাগছে কারন সাজ্জাদ আমার জন্য তাদের বকেছে। আচ্ছা মানুষটাকি আমাকে ভালোবাসে নাকি? দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। তখন আবির বললো আমি আর তানহা বাসায় গেলাম বলে ওরা চলে গেলো। আমি আলোকে বললাম আচ্ছা সাজ্জাদ কি আমাকে ভালোবাসে? না হলে আজকে সবার সামনে এরকম আচরন করলো কেনো?

দোস্ত তোর কথা শুনে ত মনে হচ্ছে সাজ্জাদ তোকে ভালোবাসে। ( আলো)

মুচকি হাসলাম, আলোকে এখনো বলি নি যে সাজ্জাদের সাথে দির বিয়ে ঠিক করা আছে। যাই হোক এখন শুধু একটি মুহূর্ত মনে পড়ছে তা হচ্ছে সাজ্জাদ আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।

হয়েছে মেডাম আপনার হিরোর কথা ভেবে আর লজ্জা পেতে হবে না ( আলো)

কথাটি শুনে আমি আর আলো ২ জনেই হেসে উঠলাম।

এদিকে ~

সাজ্জাদ কলেজ থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে আদ্রিতাকে দেখে চলছে। সাজ্জাদ নিজে ও যানে না তখন কেনো আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরলো। কথাটা ভেবে সাজ্জাদ ও আনমনে হেসে উঠলো। সাজ্জাদ যে দাঁড়িয়ে আছে তা আদ্রিতা খেয়াল করে নি। এমন অবস্থায় সাজ্জাদের মনে একটি গানই ভেজে উঠে তা হলো….

হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো হুড তোলা এক রিক্সায়,
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে,তুমি দেখলে না!!🖤

আমি আর আলো কতক্ষণ গল্প করে বাসায় চলে আসলাম। আদ্রিতা চলে গেছে দেখে সাজ্জাদ ও চলে আসলো।

বাসায় আসার পর ~

তোকে না বলেছি আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে আজকে সাজ্জাদের বাসার সবাই আসবে। ( মা)

মুহূর্তেই মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। কতক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম মানুষটার সাথে দির বিয়ে ঠিক করা।

হ্যাঁ মা একটু দেরি হয়ে গিয়েছে এখনি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি কথাটি বলে সবার সাথে একবার দেখা করে দির রুমে গেলাম।

একি দি তোর চোখে জল কেনো?

কিছু না, তুই কখন আসলি? ( সামিরা)

কি হয়েছে আমাকে বলবি না? ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদের সাথে আমি কিভাবে বিয়ে করবো, মানুষটা যে তোকে ভালোবাসে। আমার পক্ষে সম্ভব না এ বিয়ে করা আধুরি তুই এ বিয়ে ভেঙে দে। ( সামিরা)

দি, তুই কি পাগল হয়ে গেছিছ। হ্যাঁ, আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না। আর তুই বুঝিছ বিয়ের আগে যদি হঠাৎ তোর বিয়ে ভেঙে যায় তাহলে তোর অবস্থা কি হবে? এ সমাজ তোকে শান্তিতে ঠিকতে দিবে না। সারাক্ষণ মনে করিয়ে দিবে বিয়ের আগে তোর বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। আর আমাদের পরিবারের সম্মান ও নষ্ট হবে। এ বিয়ে করে নে তুই দরকার হলে তোর বিয়ের পর আমি কখনো তোদের সামনে আসবো না। কথাগুলো বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।

বিয়ের পর কখনো তোদের সামনে আসবো না কথাটি বার বার সামিরার কানে ভেসে চলেছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যেভাবেই হোক না কেনো এ বিয়ে ভেঙে দিতে হবে।

দির রুম থেকে চলে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এদিকে ওরা আসার সময় ও হয়ে আসছে।

অন্যদিকে ~

সাজ্জাদের বাসায় স্বাধীন তারা একসাথেই আসবে। সাজ্জাদ আর স্বাধীন ২ জনই কালো ড্রেস পড়েছে। যেকোনো মেয়ে দেখলে যেনো আজকে তারা তাদের প্রেমে পড়ে যাবে।

সাজ্জাদ ভাবছে কোনোভাবে সামিরাকে বিয়ে করা যাবে না। এতে আদ্রিতার সাথে ও সামিরার সম্পর্ক নষ্ট হবে। কিন্তু এখন যদি হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে দেয় তাহলে সামিরার পক্ষে তা সহ্য করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সাজ্জাদ এসব চিন্তায় মগ্ন তখন স্বাধীন বলে উঠলো কি ব্যাপার ভাবির চিন্তায় মগ্ন নাকি? একটু পরই ত দেখতে পারবি তাহলে এতো চিন্তা কিসের? কথা গুলো বলে স্বাধীন হেসে উঠলো।

এমন সময় সাজ্জাদের মা এসে বললো, আর কতো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। চল তাড়াতাড়ি। তারপর তারা সবাই বেরিয়ে পড়লো সামিরাদের বাসায় আসার জন্য।

****আদ্রিতাদের বাসায় *****

আমি গোসল করে একটি কালো থ্রি – পিস পড়ে নিলাম। হালকা মেকআপ করে নিলাম, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর সাথে একটি হিজাব পড়ে নিলাম।

সামিরা গোসল সেড়ে বেগুনি কালারের একটি শাড়ি পড়ে নিলো। সামিরা ও হালকা মেকআপ করেছে আর সাথে একটি হিজাব।

বাসার বেল বাজলে আদ্রিতার মা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দিলো। জিজ্ঞেস করলো আপনাদের আসতে কোনো সমস্যা হয় নি ত?

তারা বললো কোনো সমস্যা হয় নি। তারা এসে সোফায় বসলো। সোফায় সাজ্জাদের পরিবার বসে আছে। বাবা, চাচা কথা বলছে তাদের সাথে আর বাকিরা তাদের আপ্যায়নের জন্য ব্যস্ত। আমি দির সাথে আছি। এমন সময় মা ডাকতেই আমি নিচে যেতে নিলাম

হঠাৎ সাজ্জাদের চোখ গেলো সিড়ির দিকে সাজ্জাদের যেন মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়েটি যেনো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে…….

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ১০
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সাজ্জাদের যেন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়েটি যেনো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কারন আদ্রিতা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। হালকা সাজ, ফর্সা গায়ে কালো ড্রেস। এক কথায় অসাধারণ লাগছে তার কাছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিপ। সব কিছু যেনো সাজ্জাদকে আদ্রিতার দিকে টানছে খুব।

সাজ্জাদ বসে বসে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। যা করলে সবাই সুখী হতে পারবে।

আদ্রিতা খেয়াল করে নি সাজ্জাদকে। আদ্রিতা রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।

মা ডেকেছিলে? (আদ্রিতা)

হ্যাঁ, ওরা সবাই চলে এসেছে নাস্তার ব্যবস্থা করেছি দিয়ে আয় ওদের।

ঠিক আছে বলে আমি আর ফুফু মিলে খাবার গুলো নিয়ে সোফার রুমে আসতে লাগলাম। সাজ্জাদকে দেখে চোখ আটকে গেলো। কালো পাঞ্জাবিতে যে ছেলেদের এতো সুন্দর লাগতে পারে আগে জানা ছিলো না।

আন্টি কেমন আছেন? সাজ্জাদের মা কে জিজ্ঞেস করলাম।

হ্যাঁ, মা ভালো আছি তুমি কেমন আছো। (সাজ্জাদের মা)

জ্বি, আন্টি ভালো আছি। তারপর তাদের সাথে কিছুক্ষণ বসে গল্প করলাম। তখন পরিবারের বাকি সদস্যরা চলে আসলো রুমে। আমাকে বললো আমি যেনো সামিরাকে নিয়ে আসি। ঠিক আছে বলে দির রুমে চলে আসলাম।

দি, চল নিচে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। (আদ্রিতা)

হ্যাঁ, চল।

সামিরাকে নিয়ে আদ্রিতা নিচে নামছে। শাড়ীতে অসাধারণ লাগছে সামিরাকে। সামিরাকে বসানো হলে সবার মধ্যে। আমি মার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

সাজ্জাদের বাবা বললো সব যেহেতু ঠিক ঠাক বাসার বউকে খুব তাড়াতাড়ি আমার বাসায় নিয়ে যেতে চাই।

সাজ্জাদের মা বললো, বাসার বউ না বাসার মেয়ে করে রাখবো।

আদ্রিতার মা বাবা ও সম্মতি প্রকাশ করলো। ডিসেম্বর এর ৭ তারিখ সামিরা আর সাজ্জাদের বিয়ে ঠিক করা হলো। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। আদ্রিতার মনে এখন কি চলছে তা আদ্রিতা নিজেই জানে। সামিরা কিভাবে সাজ্জাদের সাথে বিয়ে করবে এইটা সামিরা জানে না। সাজ্জাদ মনে মনে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি সাজ্জাদই ভালো জানে। আর স্বাধীন সে ত বসে বসে সবার সাথে কথা বলছে। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে কি করবে না করবে সব ঠিক ঠাক করছে। ৪ টি জীবন যেন এখন একে অন্যের সাথে জড়িয়ে আছে।

আদ্রিতার মা বলে উঠলো, আসুন সবাই দেড়ি হয়ে যাচ্ছে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন।

আগে ছেলেরা খাবার খেয়ে নিলো। তারপর সব মেয়েরা। খাবার খাওয়া শেষে সবাই আবার বসে গল্প করছে। তখন সাজ্জাদের মা বলে উঠলো, সাজ্জাদ আর সামিরার ত সেইভাবে আলাদা কথা হয় নি। ওরা না হয় একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসুক নিজেদের পছন্দ, অপছন্দ, স্বপ্ন, ইচ্ছা সব কিছু জেনে নিক।

আদ্রিতার বাবা বললো, জ্বি ভালোই হয়। কিন্তু শুধু ওরা দু’জন বিয়ের আগে যাবে জিনিসটা খারাপ দেখায়।

সাজ্জাদের মা বললো, শুধু ওরা দু’জন যাবে কেনো? ওদের সাথে আদ্রিতা আর স্বাধীন ও যাবে।

সবাই সম্মতি প্রকাশ করলো। আমরা ৪ জন বেরিয়ে পড়লাম। গাড়ির প্রথমে সাজ্জাদ আর স্বাধীন আর পিছনে আমি আর দি বসলাম। বাসার সামনেই গাড়ি রাখা ছিলো সাজ্জাদ গাড়ি চালানো শুরু করলো।

এদিকে ~

গাড়িতে উঠার সময় S.R এর একজন লোক তাদের ছবি তুলে নিলো। ছবিটি S.R এর কাছে পাঠিয়ে দিলো।

S.R ছবিটি দেখে রাগে জ্বলে পুড়ছে। বলতে লাগলো সাজ্জাদ সব সময় আমার থেকে জিতে যায়। আদ্রিতাকে আমি নিজের করে নিবো তাহলে আমি জিতে যাবো সাজ্জাদের থেকে। কথা গুলো বলে একা একা হাসা শুরু করলো।

অন্যদিকে ~

কতক্ষণ পরে সাজ্জাদের মা বাবা চলে গেলো। আমাদের বাড়ির আত্মীয় স্বজনরাও চলে গেলো। আদ্রিতার মা আদ্রিতার বাবাকে বললো। স্বাধীন ছেলেটাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আদ্রিতার সাথে স্বাধীনকে কেমন মানাবে? আদ্রিতার বাবা বললো, হ্যাঁ স্বাধীনকে আমার ও ভালো লেগেছে আদ্রিতার সাথে ভালোই মানাবে। আদ্রিতার মা বললো আগে সামিরা আর সাজ্জাদের বিয়ে হয়ে নিক। পরে না হয় স্বাধীনের বিষয় নিয়ে ভাববো। আদ্রিতার বাবা সম্মতি প্রকাশ করলো।

এদিকে ~

আমরা ৪ জন একটি পার্কে ঘুরতে আসলাম। দি আর সাজ্জাদ ত এমনি কোনো কথা বলে না। আমি আর স্বাধীন ভাইয়া গল্প করে চলেছি। দি বললো ওর পানির পিপাসা পেয়েছে। পানি কিনবে। সাজ্জাদ স্বাধীনকে বললো, স্বাধীন তুই সামিরাকে নিয়ে যা। আমি এখানে আছি। স্বাধীন ও আর কথা না বাড়িয়ে সামিরাকে নিয়ে গেলো। এখন এখানে আমি আর সাজ্জাদ দাঁড়িয়ে আছে। সাজ্জাদকে ইগনোর করতে আমি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম ফুসকা বিক্রি করছে। ইশ আলো থাকলে ভালো হতো ওর ও ফুসকা অনেক পছন্দ।

সামিরা পানির বোতল কিনেছে। আর স্বাধীন বক বক করেই চলেছে। আজ কেনো জানি সামিরার খারাপ লাগছে না স্বাধীনের কথা। আর সামিরা চাচ্ছে সাজ্জাদ আর আদ্রিতা যেনো একটু আলাদা সময় কাটাতে পারে তাই স্বাধীনকে বললো সাজ্জাদ আর আদ্রিতা ও ওই জায়গাটা ঘুরে ডেকছে চলুন আমরা একটু এই জায়গা থেকে হেঁটে আসি। স্বাধীন কিছু বলবে এর আগে স্বাধীনের ফোনে একটি মেসেজ আসলো। মেসেজটি পরে স্বাধীন বললো ঠিক আছে চলুন আমরা ঘুরে আছি। একথা বলে স্বাধীন আর সামিরা হাটা শুরু করলো।

সাজ্জাদ দেখলো আদ্রিতা অন্যদিকে হাঁটছে। সাজ্জাদ আদ্রিতার সাথে যাওয়া শুরু করলো। আমি ফুচকাওয়ালা মামাকে বললাম, মামা ঝাল করে এক প্লেট ফুসকা দিয়েন ত বেশি করে ঝাল দিয়েন। সাজ্জাদ এগিয়ে এসে বললো, না মামা হালকা ঝাল দিয়েন বেশি ঝাল খেতে পারে না শুধু শুধু বেশি ঝাল নেই। আমি আর সাজ্জাদের কথা শুনে কিছু বললাম না।

অন্যদিকে ~

নওশিনরা আজ পার্কে ঘুরতে এসেছিলো। আদ্রিতা আর সাজ্জাদকে এক সাথে দেখে। রেগে উঠলো আবার দু’জনই কালো ড্রেস পড়া। নওশিন যেনো রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে। নওশিন রাইসাকে বললো চল আমি ও ফুসকা খাবো তাহলে একটু হলে ও সাজ্জাদের কাছাকাছি যেতে পারবো। নওশিনরা সবাই ফুসকার দোকানের সামনে আসলো।

এদিকে ~

মামা সাজ্জাদের কথা শুনে হেসে বলে উঠলো, নতুন নতুন বিয়ে করেছেন নাকি। কথাটি নওশিন ও শুনেছে। নওশিনের রাগ যেনো আর বেড়ে গেলো। আমি ফুসকাওয়ালা মামাকে কিছু বলবো কিন্তু নওশিনদের দেখে আর কিছু বললাম না চুপ থাকলাম। আমি দেখতে চাই সাজ্জাদ কি বলে। সাজ্জাদ ও নওশিনকে দেখেছে। সাজ্জাদের মনে পরে এই মেয়েটি ত আদ্রিতাকে অপমান করেছিলো।

সাজ্জাদ মামার উদ্দেশ্য বলে, না মামা এখনো বিয়ে করে নি, ও ছোট এখনো তাই।কথাটি বলে আমাকে ওদের সামনে জড়িয়ে ধরে নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো। নওশিন সামনে আছে দেখে আমি ও খুব বেশি একটা আপওি করলাম না। সাজ্জাদ তখনো ও সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। দূরে সরতে চাইলে আর ও শক্ত করে ধরছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়। সাজ্জাদের এরকমন আচরনে নওশিনের গ্রুপ আরো রেগে সেখান থেকে চলে যায়।

দূর থেকে একজন সাজ্জাদের দিকে বন্দুক দিয়ে স্যুট করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বন্দুকের গুলি চালাবে ঠিক এমন সময়…………

#চলবে