অতঃপরমিঠিকথা পর্ব-০৯+১০+১১+১২+১৩

0
328

অতঃপরমিঠিকথা-৯-১৩
(কপি করা নিষেধ)

মিঠি দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ, রেজার দেখা নেই। সাতাশ নাম্বারে ঢুকেই ভুতের বাড়ি যেটা ওর সামনেই একটা কাঠগোলাপ গাছ, মিঠি ওখানেই দাঁড়িয়েছে।
আশপাশে তেমন লোকজন নেই, কেউ ওকে খেয়াল করছে না।
ভর দুপুর একদম, এসময়ে কেউ কারো সাথে দেখা করতে আসে নাকি!
মিঠি অফিসের কাজ বলে বেড়িয়েছে।
ফেরার তাড়া নেই কিন্তু বিরক্ত লাগছে একটু!
কার জন্য অপেক্ষা করছে সেটা ভাবতেও অস্বস্তি লাগছে।
ফোন ভাইব্রেট করছে, রাস্তার ওপারে কি রেজা, হালকা পিংক শার্ট পড়ে আছে?
নাহ, ফোন পিক করতেই রেজা বললো, একটু দাঁড়াও আমি আসছি!

রেজা এসে পড়লো আরো কিছুক্ষণ পরে। একটা চেক শার্ট পড়েছে। ভালো লাগছে দেখতে।
মিঠিকে সবসময়ই সুন্দর লাগে। অন্যরকম সুন্দর।

সরি মিঠি, অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হলো তোমাকে।

রেজার ইচ্ছে করছে মিঠির হাত ধরে হাঁটতে কিন্তু সব ইচ্ছে তো পূরণ করা যায় না।
একটা রেস্টুরেন্টে বসলো মিঠি আর রেজা।

-মিঠি দুপুরে খেয়ে এসেছো?

-হু, বাসায় গেস্ট আছে, খেয়ে, খাইয়ে বের হতে হলো।

-আমি খাইনি এখনো!

-প্রায় তিনটা বাজে, আপনি লাঞ্চ করে নিন তাহলে!

-তুমি কি খাবে বলো?

-চা খাই?

-এসময়ে চা খাবে? আরেকবার লাঞ্চ করে ফেলো আমার সাথে?

-নাহ, লাঞ্চ করতে পারবো না, হালকা কিছু খাই!

মিঠি অর্ডার করে দিলো। তারপর বললো, আপনার কোন কাজ নেই এখন?

না, একটু কাজ ছিল বিকেলে, ওটা শেষ করে বের হতে দেরী হলো।
একটু থেমে রেজা জিজ্ঞেস করলো, বিয়ের কথা কি ভাবছো বললে না তো?

মিঠি বললো, আমার ফুপুর ভাসুরের ছেলে আছে, আকাশ ভাই, পুরান ঢাকার। ফুপু যেভাবে লেগে আছে, মনে হয় এখানে বিয়ে না দিয়ে ছাড়বে না।
আরা বাবা মা এতদিন ফুপুকে কোন সম্পত্তির ভাগ দেয়নি, তারাও দুর্বল একটু, এসব নিয়েই একটু প্যাচালো অবস্থায় আছি আর কি?

আকাশ সাহেব কি করেন?

ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্ট আছে চারটা।

ওহ, ওরা তো পড়াশোনা…..

ঠিক ই ধরেছেন, আইএ পাশ করেছে, টেনেটুনে।
বলে মিঠি হাসলো!
সোনার চেইন কানের দুল পরে ঘুরে বেড়ায়, আজও আমাদের বাড়িতে আসবে।
আমি এজন্যই পালিয়েছি!

মিঠি দুষ্টুমি করো না, সমস্যারা হালকা নয়৷ তুমি এডজাস্ট করবে কিভাবে? এ বিয়েটা হয় যদি?

জানিনা, মিঠি একটু উদাসী হয়ে গেলো।

আচ্ছা বাদ দাও, ওটা পরে দেখা যাবে।
মিঠির জন্য পরোটা চলে এসেছে।
রেজা ভাত খাবে!

আচ্ছা আপনি বললেন, একটু অসুস্থ হয়েছিলেন?
কি হয়েছে?

তেমন কিছু না, হৃদয় কিঞ্চিত দুর্বল!

ওহ আচ্ছা, তাহলে তো একটু রুটিন মেনে চলতে হয় মনে হয়!

তেমন কিছু না, তাও সাবধানে থাকা আর কি! তেল মসলা কম খাই, সময় মতো ঘুমাই এটুকুই।

আর আপনার হবু স্ত্রী? তার কথা তো কিছু বললেন না?

মৌরিন, ভালো মেয়ে, স্মার্ট, এনজিওতে চাকরি করে, সময় খুব কম পায়।

বিয়ে কবে করছেন?

রেজা একটু অস্বস্তি বোধ করলেও বুঝতে দিলো না।
বললো, মৌরিনের ভাইয়ের পরীক্ষা সামনে।
তারপরেই। একমাত্র বোন, আবার প্রোগ্রামও একটা করতে চাচ্ছে। তাই দেরী হচ্ছে।

রেজার কথা গুলো কানে লাগছিলো মিঠির। কিন্তু একটা বিষয় ভালো লাগলো, অন্তত কোন লুকোছাপা নেই।
সবটাই স্পষ্ট। এখন কেউ প্রেমে পড়বে না জেনেশুনে।

রেজা খাওয়া শেষ করলো। মিঠিরও শেষ প্রায়।
রেস্টুরেন্টটা আধুনিক ধরনের।
বাইরে উঠানে বসা যায়, ভেতরেও জায়গা আছে আবার ছাদটা খোলা।

বিল পে করে রেজা বললো, চলো ছাঁদে গিয়ে দাঁড়াই।

বিকেল হয়ে আসছে।শীত আসবে সামনে, দ্রুত রোদের তেজ কমে যায়। একটা সোনালী আলো কোথাও থেকে লম্বালম্বি ভাবে ছাদে পড়ছে। বাই, কি অদ্ভুত সুন্দর। মিঠি রোদটা হাতে ধরতে গেলো, ওর হাতও চকচক করে উঠলো।
রেজা শুধু অবাক হয়ে দেখে। মিঠিকে খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

মিঠি এখানে বাবল ওড়ালো গেলে খারাপ হয়না বলো!

মিঠি বললো, ওড়াতে চান?
ব্যাগ থেকে বাবলের বোতল বের করে দিলো!
একটু পরে পুরো জায়গাটা বলে বলে ছেঁয়ে গেল!

রেজা কতদিন ভেবেছে, মিঠির সাথে বসে হাওয়ায় বল ভাসাবে, এটা এতদিনে সত্যি হলো, তবুও মন ভরে না। বুকের ভেতর বড্ড ফাঁকা লাগে।
মিঠি তার কেউ না।মৌরিনও কেউ না।
কেউ হতে পারবে না। ভালোবাসাহীন একজীবন কাটিয়ে দিতে হবে।

রোদের মেশালে অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছে।
রেস্টুরেন্ট থেকে একজন এসে বললো, রেজা আর মিঠিকে তারা স্পেশাল অনার করতে চাচ্ছে, এত সুন্দর কিছু মুহুর্ত তৈরি করার জন্য!

রেজা হাসতে লাগলো, বললো, আপনারা ভুল বুঝেছেন, আমরা শুধুই বন্ধু, আপনারা তো কাপল ভেবেছেন, তাই না!

মিঠি এই সামান্য কথায়ই খুব লজ্জা পেয়ে গেল!

যাই হোক রেজাকে মৌরিন ফোন করছে।
সন্ধ্যায় দেখা করতে চায়।
মিঠি বুঝতে পারলো পাশ থেকে, কথা শুনে।রেজার অস্বস্তিটাও টের পেলো খুব ভালো করে।
মিঠি তাই বললো, আজ আমি চলে যাই, অফ ডে তো! বাসায় সবাই অনেক প্রশ্ন করবে।

রেজা বললো, আমি পৌছে দিবো তোমাকে?

না থাক, আমি চলে যেতে পারবো! মিঠি চলে গেল।

রেজার খুব খারাপ লাগতে লাগলো।
মৌরিনের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে না একদম।তবুও যেতে হবে।
রেজা উঠে রওনা হলো মৌরিনের অফিসের দিকে।

অতঃপর_মিঠিকথা-১০

একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়ে গেল।
মিঠি রিক্সা থেকে নামতে গিয়ে গেটের সামনে পড়ে গেল।
পা একটু মচকে গেলো যে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল।
তাই মাকে ফোন করে একটু নিচে নামতে বললো মিঠি।

মা একা এলেন না, আকাশ, ফুপু সবাই এলো।
আকাশকে দেখে মিঠির একটু অস্বস্তি লাগতে লাগলো, কিন্তু ভর দিয়ে উঠতে গেলে আকাশকে ধরতেই হবে।
মিঠির মা নিজেই দাঁড়াতে পারেন না, হাঁটুতে ব্যাথার জন্য।

মিট্টি পইড়া গেলা ক্যামনে? আকাশ জিজ্ঞেস করলো।

কি অদ্ভুত প্রশ্ন, এক্সিডেন্ট হতে পারে না নাকি!
আর মিঠি কই আর মিট্টি কই, উচ্চারণও করতে পারছে না।

পায়ে শাড়ি বেজে পড়ে গেছি!

দেখি হাতটা ধরো, এইসব শাড়ি ফাড়ি পরার কি দরকার!

শাড়ি-ফাড়ি!

মিঠি বললো, আপনি তো চেইন দুল আংটি পড়েছেন, এগুলি পড়ার কি দরকার।

আকাশ হো হো করে হেসে ফেললো।
বললো, তুমার এগুলা পছন্দ লাগে না?

আকাশের ভাষাটা পুরোপুরি ঢাকাইয়া হয় না, মানে মিঠির সাথে কথা বলতে চলিত আর ঢাকাইয়া এক করে ফেলে।

দেখি হাত ধরো!

আকাশ মিঠির হাত ধরে তুললো উপরে, পায়ে ভালোই চোট লেগেছে, কয়দিন অফিস যাওয়া বন্ধ থাকবে কে জানে।

মিঠির বাবা বললেন, একটা এক্সরে করা দরকার ছিল! হাড় ভাঙলো কিনা!

মিঠি বললো, হাড়ে কিছু হয়নি বাবা, তাহলে দাঁড়াতে পারতাম না। গরম পানির সেক দিই, ঠিক হয়ে যাবে।

আকাশ ডাক্তার নিয়ে এলো রাস্তার ওপাশ থেকে, যদিও দরকার ছিল না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মেডিসিন বাবু গিয়ে নিয়ে এলো।

আকাশ যাওয়ার সময় বলে গেল, আগামীকাল থেকে মিঠির বাসার সামনে একটা সিএনজি থাকবে।
আকাশের চারটা সিএনজি আছে, পুরান ঢাকার গলিতে গাড়ি ঢোকানো সমস্যা হয়ে যায়, তাই সে সিএনজির কিনে নিয়েছে।

মিঠির মনটা খারাপ লাগছে।আজ যাওয়ার কোন দরকার ছিল না। রেজা কে, রেজার অধ্যায় অনেক আগেই শেষ।
সে রাজি ছিল না, বিয়েতে না করে দিয়েছিল রেজা।

আকাশের একটাই সমস্যা, শিক্ষা, কালচার টাও আলাদা।
তবে আজকে সব মিলিয়ে মিঠির খারাপ লাগছে না।
রেজারও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, খুব তাড়াতাড়ি সে প্রোগ্রাম করে বিয়ে করবে। মাঝখান থেকে মিঠির সাথে আলাপ করার কি দরকার ছিল, মিঠির নিজেরও সমস্যা আছে, কি প্রয়োজন ছিল যাওয়ার।

মিঠি ভাবলো, আকাশের শিক্ষা কালচার হয়ত ম্যাচ হয় না কিন্তু ছেলেটা খারাপ না। মিঠিকে পছন্দ করে।
মিঠি হয়ত সুন্দরী বলেই তাকে সবাই সহজে পছন্দ করে।
আর মিঠির এই বাড়ির দায়িত্ব, বাবা মা, বাবু সব মিলিয়ে সব জেনে আকাশ এগিয়েছে।
হয়ত সব ঝামেলার কথা জেনে কম ছেলেই আগ্রহী হবে অথবা শুধু মিঠিকে নিয়ে যাবে, বাবা মা বাবু বাড়ি ডেভলপার কে দিলে কোথায় না কোথায় উঠবে, অনেক চিন্তা। আপুরা এসব চিন্তার বাইরে।

আচ্ছা মিঠি কি কখনো ভেবেছে ঠিক কেমন সঙ্গী পাশে চায় সে? না, এটা নিয়ে মিঠি সেভাবে ভাবেনি।
রেজাকে খুব ভালো লেগেছিল সেদিন যখন বুঝতে পেয়েছিলো রেজার মিঠির ছেলেমানুষিগুলো ভালো লাগে।
এভাবে হয়ত আর কেউ ভাবেনি।

ভালোবাসা জিনিসটা আসলে কি? পাশে সেম কালচারের একজন থাকলেই কি ভালোবাসা হয়?
কিছুদিন পরে কি একঘেয়েমি এসে যায় না! মিঠির আকাশ দেখতে ভালো লাগে, বাস্তবের ব্যবসায়ী আকাশ হয়ত এর মর্মই বুঝবে না।
মিঠির ইচ্ছে করে নৌকার গলুইয়ে দুজন দুদিকে বসে পা ভেজাবে, আকাশ এগুলোও বুঝবে না। ঝুম বৃষ্টিতে হুডফেলে ভিজতেও আকাশের ভালো লাগবে না।

আচ্ছা আকাশের ভালো লাগবে না, রেজার কি ভালো লাগবে?

রেজার কথা কেন আসছে, কতবার ভাবার চেষ্টা করছে রেজা চ্যাপ্টার ক্লোজড, কিন্তু অবচেতন মনে সেটা বুঝতে চাইছে না। বারবার রেজা সামনে চলে আসছে।
রেজা কি ভাবছে?
রেজা প্রথম থেকেই মিঠিকে বিয়ে করতে চেয়েছে, এতদিন পর দেখা হওয়ায়ও সে বলতে দ্বিধা করেনি, সে সব মেয়ের মধ্যে মিঠিকে খোঁজে।

কেমন দ্বিধা এটা!

মিঠি চোখ বন্ধ করলো।
কোন দ্বিধা নেই, রেজা তার কেউ না।
হুট করে দেখা হয়েছে, একটা একটা তুচ্ছ ঘটনা মাত্র।

আকাশের সাথে বিয়ের কথা আগালে মিঠি আকাশকে বিয়ে করতে রাজি হবে।

একটাই তো জীবন, এত জটিল চিন্তা করে কি লাভ!

অতঃপর_মিঠিকথা-১১

(কপি করা নিষেধ)

পেইনকিলার খাওয়ার পরে হাত পা কেমন ছেড়ে দেয়, একটু ঘুম ঘুম আসে।
মিঠি ক্লান্ত ছিল, গভীর ভাবে ঘুমিয়ে গেলো অল্প সময়েই।

রেজা মৌরিনের সাথে দেখা করতে গেলো ধানমন্ডি থেকে, দুঘন্টা জ্যাম ঠেলে বনানী পৌছে দেখে রেস্টুরেন্টে মৌরিন অনেক বন্ধুদের নিয়ে গল্প করছে।
খুবই স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু রেজার বিরক্ত লাগলো, এত মানুষ আছেই, আবার রেজাকে ডাকার কি দরকার ছিলো।

রেজাকে দেখে মৌরিন এগিয়ে এলো।

-তোমার বন্ধুরা তো আছে, আবার আমাকে ডাকলে কেন মৌরিন?

-তাতে কি হয়েছে, তুমি আমাদের সাথে আড্ডা দেবে!

– আমার এত গ্যাদারিং ভালো লাগে না!

-রেজা তোমার যে কি ভালো লাগে আর কি ভালো লাগে না আমি বুঝতে পারি না!

– চেষ্টাও করো না,
সারাক্ষণ নিজের কথার গুরুত্ব দিয়ে বসে থাকো!

– ওয়েট, কি গুরুত্ব দিলাম আমি!
তুমি আমার সাথে ভালো করে কথাও বলো না, বুঝলাম আমরা একে অপরকে ভাল চিনি না! কিন্তু তুমি তো সুযোগও
দিচ্ছ না!

– মৌরিন, আমি চলে যাই, তুমি গল্প করো!

– না, এসেছো যখন আসো, একটু বসে যাও, আমার একটা ভাবমূর্তি আছে, ওদের সামনে আমি ফেসলস করতে চাই না।

মৌরিনের কথার তীক্ষ্ণতায় রেজা গিয়ে বসলো।
কিছুতেই মিলবে না ওর সাথে, নিজেকে বেশি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে!

মৌরিনের বন্ধুরা হাই হ্যালো করে নিজেরাই ব্যস্ত হয়ে গেলো কথা বলতে, রেজা হাই তুললো কয়েকবার।

আধঘন্টা পরে উঠলো ওখান থেকে।
রেজার বাসায় যেতেও সময় লাগবে।

বাসে বসে কয়েকবার ফোন করলো মিঠিকে, মিঠি ঘুম ছিল, ফোন ধরতে পারলো না।

মিঠি কি রাগ করলো, ফোন তুললো না যে, নাহ রাগ করার মতো কিছু তো হয়নি রেজার সাথে ওর!

পরদিন সকালেও মিঠি ফোন করেনি, রেজা অফিসে ঢুকে ফোন করলো আবার।

মিঠি ফোন তুললো৷ তখনো ঘুম থেকে ওঠেনি।

মিঠি ফোন ধরোনি যে?

আর বইলেন না, কালকে বাসার সামনে রিক্সা থেকে পড়ে গেলাম, পায়ে চোট লাগছে, পেইনকিলার খেয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম।

সে কী, বেশি লেগেছে নাকি?

না, তেমন কিছু না, আজকে রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি!

হেলাফেলা করো না প্লিজ।

আপনি ফোন করেছিলেন কেন?

এমনিতেই, তখন চলে গেলে, আর কথা হলো না তাই!

ওহ আচ্ছা!

আজ অফিসে আসোনি তাহলে?

না, আমি এখনো উঠিনি!

ঠিক আছে, রেস্ট নাও তাহলে!

ফোন রেখে রেজার মনে হলো কোন ভাবে মিঠির সাথে দেখা করা যেতো যদি!
তবে কাজের প্রেশারে বিষয়টা চাপা পড়ে গেল।

সন্ধ্যার পরে রেজা শায়লা আন্টির বাসায় চলে গেল।
খুবই অদ্ভুত অজুহাত, সেদিন প্রোগ্রামের পর ওয়ালেট থেকে একটা জরুরি কাগজ হারিয়ে গেছে!
আন্টি পেয়েছেন কিনা!

শায়লা আন্টি বললেন, বাবা আমি তো বুঝবো না তোমার জরুরি কাগজ কোনটা!
ময়লার ঝুড়িতে গেলে তো গেছে, আর পাওয়া যাবে না।

রেজা খুব উদ্বেগ দেখালো, ভীষণ জরুরি কাগজ!
অন্য কেউ পেয়েছে কিনা, অথবা পেলেও হয়ত কোথাও রেখেছে!

-তুমি বসো, আমি একটু খুঁজে দেখি!

-আন্টি ওইদিন মিঠিকে দেখলাম বেশ কাজ টাজ করছিলো, ওর কাছে একটু জিজ্ঞেস করা যায় না?
মানে ও যদি পায় তাহলে…

– আচ্ছা, ঠিক বলেছো। তুমি বসো, আমি জিজ্ঞেস করে আসি, ও আবার পায়ে চোট পেয়ে শুঁয়ে আছে!

-মানে আন্টি, আপনি তো বলতে পারবেন না কি কাগজ, কেমন ছিল! আমি একটু কথা বলতে পারলে বোঝাতে পারতাম!

-তুমি যাবে! কিন্তু……. আন্টি দ্বিধা নিয়ে বললেন।

-বুঝতে পারছি বিষয়টা অস্বস্তির কিন্তু আমার খুব আর্জেন্ট আন্টি, নয়তো আমি আসতাম না এত দূরে।

রেজার নিশ্চয়ই জরুরী, নয়তো এই ছেলে কোনোদিন আসেনা কারো বাসায়, সে চলে এসেছে, শায়লা বুঝতে পারছে।তবু মিঠিদের বাসায় ওকে নিয়ে গেলে কেমন দেখায়! মিঠিরও তো পায়ে ব্যাথা!

শায়লা বলল, তুমি একটু বসো, আমি আগে কথা বলে আসি!

শায়লা মিঠিদের বাসায় গিয়ে মিঠির মা কে খুলে বললো কাহিনী। তিনি অবস্থার গুরুত্ব বুঝে বললেন, ওকে নিয়ে আসো, সমস্যা কি! আমরা আমরাই তো!

তারপর একটু থেমে বললেন, শায়লা ওর বিয়ে হয়ে গেছে?

-না আপা, এনগেজমেন্ট হইছে মাত্র!

মিঠির মায়ের মন খারাপ হয়ে গেল, ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয়েছিলো! আহারে মিঠির বিয়েটা তখন হয়ে গেলে!!

মিঠি অবাক হয়ে দেখলো রেজা এসেছে! কিন্তু কোন কাগজটাগজের কথা মনে করতে পারলো না।
সামনে মা আছে, শায়লা আন্টি আছে, রেজা জিজ্ঞেস করলো, তুমি কোন কাগজ দেখোনি তাই তো!

মিঠি ঘাড় নাড়লো, ভীষণ অবাক হয়ে।

তুমি নাকি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো, এখন কেমন আছো!

মিঠি বিস্মিত হয়ে কথা বলতে পারলো না, ঘাড় নেড়ে জানালো সে ঠিক আছে!

আচ্ছা আসছি তাহলে, রেজা বসেনি, দাঁড়িয়ে কথা বলে চলে যাচ্ছিল।

প্রায় নয়টা বাজে, যদিও চা খাওয়ার সময় না তবুও মিঠির মা চা খেতে বললেন।

পরে কখনো আসবো আন্টি!

আবার পরে! মিঠি মনে মনে ভাবলো।

রেজা বের হয়ে যেতেই মিঠির মনে হলো, স্পষ্ট মনে আছে, কোনো কাগজ টাগজ ছিলই না রেজার হাতে।
এটা একরা স্রেফ অজুহাত! রেজা ইচ্ছে করে মিথ্যে বলেছে, কেউ ধরতেই পারেনি!

আর মিঠি এত টিউবলাইট এরা বুঝতে এতো সময় নিলো!
মিঠির ভীষণ ভালো লাগলো সাথে চিন্তাও হলো, রেজা এমন পাগলামি করছে কেন মৌরিন থাকতেও। এটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে না! কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মিঠি রাগ করতে পারছে না। কেন এমন হচ্ছে!

বেশ কিছুক্ষণ পরে রেজা টেক্সট করলো,

“সরি মিঠি, তুমি সিক শুনে কিছুতেই না এসে পারলাম না, তাই নাটকটা করতে হলো!
I dont know why am doing this, but sometime we do some strange thing, as we all r stranger sometime. ”

১২

গেটের বাইরে এসে মিঠি দেখলো একটা সিএনজি দাঁড়িয়ে, ছোকরা মতো চালককে তার পছন্দ হলো না।
মিঠিকে দেখে ছেলেটি বললো, আসেন আপামনি, ভাইয়ে পাঠাইছে আমারে!
ভাইয়ে মানে আকাশ ভাই, মিঠির একটু অস্বস্তি লাগছে, সে ভাবছে আকাশকে বিয়ে করতে রাজী হবে কিন্তু রেজার জন্য মন খারাপ লাগছে।
রেজার সাথে অবশ্য বিয়ের কোন সম্ভাবনা নেই।
–আপনি চলে যান, আমি রিক্সা করে চলে যাবো।
–আপনে যাইবেন না?
–না,

–তয় ভাইরে একটু বইলা দেন!

–আচ্ছা ফোন করেন!

ছেলেটি ফোন করে দিলো আকাশকে, ভাই, আপামনি তো যাইতে চায় না! কথা বলেন আপনে–

–হ্যালো?

–মিট্টি, তুমি যাইবা না ক্যান?

–যাবো, রিক্সায়,

–আজকে সিএনজিতে যাও! অয়ে যখন গেছে!

–না মানে…

–সিএনজি বইলা মন খারাপ লাগতেছে, আইচ্ছা, যাও, গাড়ি বলে দিমুনে!

–না ভাইয়া, আপনার কিচ্ছু বলতে হবে না।
আমি ঠিক আছি এখন।
সিএনজি কোন সমস্যা না, একা কখনো উঠিনি!

–আরে এইটা প্রাইভেট তো, অর নাম হাশেম, ভদ্র পুলা, তুমি যাও, পায়ে ব্যাথা কমছে নাকি?

–জি কমেছে!

–আমি বিকালে আসুমনে তোমার অফিসে!

–না না, আসতে হবে না, আমি ঠিক আছি!

-না, তোমার লগে কথাও আছে, বসা লাগবে!

–কি কথা?

–আইসা বলুমনে, এহন যাও! ভয় নাই, আমার খাস লোক আছে!

মিঠি অনিচ্ছায় উঠলো, আকাশ লোকটার বেশভূষা বা কথা ভালো না লাগলেও লোকটা খারাপ না।
কেন জানি মিঠির খারাপ লাগছে না। তবে রেজার জন্যও অনুভূতি তৈরি হচ্ছে।

অবশ্য রেজার জন্য ভালোবাসা বা প্রেম লজিক্যালি তৈরি হওয়ার কথা নয়, রেজার সাথে মৌরিনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
রেজা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে, মৌরিন কি জানে মিঠির কথা, রেজা মিঠির সাথে কথা বলছে এটা?

জানলে তো ভালো মনে করার কোন কারণ নেই।
মিঠি, জীবনটা আবেগ দিয়ে চলে না, রেজাকে আর এক পাও এগোতে দিও না, কারোই ভালো হবে না।
তাছাড়া এতদিন রেজা কোথায় ছিল, চার বছরে কোন যোগাযোগ রাখেনি।
দুদিনে এত আবেগ আসে কোথা থেকে, জীবনে চলার পথে এমন দুয়েকটা ছোট ছোট ঘটনা থাকে, তাকে বড় করে দেখো না মিঠি।

রেজা ফোন করছে, এই হাশেমের সামনে ধরা কি ঠিক হবে,

মিঠি কেটে দিলো! কি আশ্চর্য, আবারও ফোন করেছে,

-হ্যালো মিঠি?

–জি বলুন?

–অফিসে?

–না, পথে!

–ওকে, আজ না গেলে হয় না?

-সেকী, কেন?

–আমার আজ অফিস নেই,

–তো, আপনার অফিস নেই তাই আমি কামাই করবো!
তিনদিন ছুটি কাটবে, স্যালারীও কাটবে।

–তোমার সাথে একটু কথা ছিলো, রেজা বললো । গত দুদিন মিঠির স্বরে প্রশ্রয় ছিলো, আজ নেই।

কথা বলতে তো আকাশও আসতে চেয়েছে, মিঠি বললো, দেখুন, আপনি গতকাল যথেষ্ট বাড়াবাড়ি করেছেন, আর মনে হয় এগুনো ঠিক নয়, তাছাড়া আপনি অন্য একজনের ফিয়াসে। সে কি জানে আমার কথা?

রেজা উত্তর দিলো না।

বলুন? জানে?

না,

তাহলে? পুরো বিষয়টা আপনাকে মানাচ্ছে না।
এ পর্যন্তই থাক, বোঝার চেষ্টা করুন, জীবনে এমন ছোট ছোট আবেগকে প্রশ্রয় দিতে নেই!

রেজা বললো, বুঝতে পারছি, তুমি অনেকটা বড় হয়ে গেছো!

মিঠি বললো, ফোন রাখছি!

রেজা ফোন কেটে দিয়ে ভাবলো, মিঠির কথা গায়ে মাখলে জীবনের সব চাইতে বড় ভুলটা করা হবে।
তাই এগুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিই।
অভিমানে চার বছর হারিয়ে গেছে। মৌরিনকে বলে দিতে হবে
রেজা ওর জন্য কোন অনুভূতি পাচ্ছে না।
কোথাও মন জুড়ে মিঠি বসে আছে।

মিঠি ঠিকই বলেছে, এ দুদিন ছেলেমানুষি হয়েছে, এখন লজিক্যাল কাজটাই করতে হবে।আগে মিঠিকে সবটা বলা দরকার। মিঠি রাজী হবে তো!

রেজা ছুটি নিয়েছিলো আজ।
বারোটার দিকে মিঠির অফিসের সামনে গিয়ে ফোন করলো, মিঠি, নিচে চলে এসো, আমি অপেক্ষা করছি!

মিঠি কিছু বলতে পারলো না! তবে এড়াতেও পারলো না!
হাফডে ছুটি নিয়ে নিচে চলে এলো!
রাস্তার ওপারে জলপাই রঙের শার্ট গায়ে রেজা দাঁড়িয়ে আছে।

মিঠিকে বের হতে দেখে রেজা হাসলো!

অদ্ভুতভাবে এতক্ষণের সব যুক্তি চিন্তা মিলিয়ে গেল মিঠির কাছে, রেজার হাসি দেখে।
মনে হলো, এই মুহুর্তে এটাই সত্যি, রেজা!

ভবিষ্যত আর অতীত ভেবে সময় নষ্ট করে মানুষ, অথচ সবচাইতে সত্যি বর্তমান!

-১৩

কেমন আছো এখন, পায়ে ব্যাথা কমেছে, রেজা জিজ্ঞেস করলো।

হু কমেছে, আপনি অফিসে যাননি আজ?

না, ছুটি পাওনা ছিলো, তাই নিয়ে নিলাম। চলো একটা জায়গায় নিয়ে যাই তোমাকে।

কোথায়?

চলো ভালো লাগবে। সিএনজি নিয়ে নিই, রিক্সায় ভালো লাগত কিন্তু সময় লাগবে, এখন ধূপ করে বিকেল পড়ে যায়।

মিঠি ঘাড় নাড়লো।

বেড়িবাঁধ ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা পথ যাওয়ার পরে হুট করে শহর শেষ হয়েছে।
একটা জায়গায় সিএনজি থামিয়ে রেজা নেমে পড়লো মিঠিকে নিয়ে।

খুবই অদ্ভুত জায়গা, মানুষের বাড়িঘর আছে, বসত বাড়ি। আশেপাশে কিছু নেই দেখার মতো।
মিঠি চারপাশে তাকিয়ে দেখলো।

মিঠি এসো, রেজা উঁচু রাস্তা থেকে নিচে নামতে বলছে, একটা বাড়ির একদম পাশ থেকে মাটির রাস্তা।
মিঠি ইতস্তত বোধ করছে দেখে রেজা অভয় দিলো, চলে এসো, এই জায়গাটুকুই এমন।

মিঠি নামতে গিয়ে পড়ে যেতে পারো, দেখি হাত ধরে এসো,
মিঠি সাবধানে নামলো।

এই মুহুর্তে সে কোথায় আছে সেটা জানে না। এসেছে রেজার সাথে, পুরো বিষয়টা অস্বাভাবিক।

যাই হোক, বাঁশঝাড় এর পেছন থেকে হাঁটার সময় মিঠি ভাবলো, এটা ঢাকার এত কাছে, মনে হচ্ছে কোন গভীর গ্রামে এসে পড়েছি। অবশ্য বাড়িগুলো আঁধাপাকা।

কিছুটা পথ হাঁটার পরে নদী চলে এলো সামনে, বড় কোন নদী না, খালও বলা যায়।

রেজা বললো, এটা বংশী নদী, এখান থেকে একটু সামনে এগিয়ে গেলে একটা বাজার আছে, একদম গ্রাম বাজার। ওখান থেকে নৌকা পাওয়া যায়, ঘাট আছে।
চলো ওখানে যাই।

মিঠি বললো, একটু আস্তে যাই, পায়ে ব্যাথা করছে।

হঠাৎ রেজার মনে হলো, মেয়েটা পায়ে চোট পেয়েছে, আজই এখানে আসার দরকার ছিলো না।
কিন্তু এই জায়গাটা রেজার খুব প্রিয়, তাই কতবার ভেবেছে এখানে মিঠিকে নিয়ে আসবে!

এখানে কোন রাস্তা নেই? মিঠি জিজ্ঞেস করলো

না, এটাই রাস্তা।

আপনি আগে এসেছেন?

হু, যেখানে নামলাম, ওর কাছাকাছি আমার আসতে হয়, একটা গার্মেন্টস আছে কাছেই।

আচ্ছা।

রাস্তার পাশে অচেনা জংলী ফুলে ভরা, অযত্নেও বেড়েছে মাত্রাছাড়া।

বাজারের উঠতে হলো একটা দোকানের পেছন থেকে।

মিঠি চা খাবে? এখানে বেশ ভালো চা বানায়,

খাওয়া যায়, ওরা একটা দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেলো।

দোকানের পেছনে ঘাট, রেজা গিয়ে নৌকা ঠিক করে এলো, বেশ বড় নৌকা।

নৌকায় উঠতে সমস্যা নেই তো মিঠি?

সমস্যা! মিঠি কতবার ভেবেছে প্রিয় কারো হাত ধরে নৌকায় চড়বে, আজ সেটা কেমন সত্যি হয়ে গেল, তবে কেমন যেন, অনুভূতি ছাড়া।
যদি ভালোবাসাকে ফিকশন বা কল্পসাহিত্য ভাবা হয়, তাহলে আজকের এই গল্পটা কেমন নন ফিকশন, কাঠখোট্টা পাঠ্যপুস্তকের মতো।
সবই হচ্ছে কিন্তু কোথাও একটা শূন্যতা।

মিঠি নৌকার গুলুইয়ে গিয়ে বসলো,

সাবধানে, পড়ে যেও না কিন্তু, সাঁতার জানো?

না, সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো মিঠি।

যাই হোক এখানে অনেক পানি নেই যদিও, তাও সাবধানে, রেজা বললো।

রেজা একটু গ্যাপ রেখে বসেছে, নৌকাটা ছোট নয়, বড় নৌকা।

এখান থেকে কোথায় যায় নৌকাগুলি?

ওইপারে কয়েকটা গেরাম আছে, মানুষ বাজারে আসে, ঢাকায় যায়, মাঝি উত্তর দিলো।

নৌকাটা একদম পাশ দিয়ে চলছিলো, মিঠির মনে হচ্ছে কিছুই সত্যি না, সব স্বপ্ন।

একটু পরে রেজা সামনে এগিয়ে বসলো, মিঠির কাছাকাছি কিছুটা। তারপর খুবই আস্তে করে বললো, আমাকে বিয়ে করবে মিঠি?

কোন ভূমিকা নেই, সরাসরি জিজ্ঞাসা!

মিঠি একটু চমকে অন্যদিকে তাকালো। উত্তর দিলো না।

মিঠি, আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি!

এবারে মিঠি বললো, আপনার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে না?

–হু, কিন্তু বিয়ে হয়নি এখনো। আমি বুঝে শুনে, চিন্তা করে বলছি।

–আমার বিয়ের কথা অনেকটাই এগিয়েছে, আকাশ ভাইয়ের সাথে।

–বিয়ে তো হয়নি, এনগেজমেন্টও হয়নি।
এটা সারাজীবনের ব্যাপার, কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সাফার করার মানে হয় না।

– আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নেই না, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেটা পরিস্থিতি অনুযায়ী সব চাইতে উপযুক্ত বলেই নেওয়া হয়।
তাছাড়া মৌরিন নামের মেয়েটির সাথে আপনার এনগেজমেন্ট হয়েছে ছয় মাসের বেশি, মেয়েটা ধাক্কা খাবে।
আমি চাইনি আপনার সাথে আর এভাবে দেখা করতে।
আপনি জোর করলেন বলে এসেছি!

-আচ্ছা তুমিই বলো, আমার সাথে এসে তোমার কি খারাপ লাগছে? অনেস্টলি বলো!

–না,

–বছর চারেক আগে তুমি ছেলেমানুষি না করলে আমাদের বিয়ে হয়ে যেত মিঠি!

–যে কোন কারণেই হোক, বিয়েটা তো হয়নি। ভেঙে গেছে।
জীবন চার বছরে অনেক পাল্টে গেছে।

-তুমি তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাও না?

-এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেওয়ার জায়গা নেই, আমি চাইলেও পরিস্থিতি বদলে গেছে।
আকাশ ভাইয়ের পরিবার…..

মিঠি, আমি আকাশকে ছোট করছি না, কিন্তু তুমি কি তার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে?

পারব না হয়ত, হয়ত পারব আস্তে আস্তে।

শোন, কোন সিদ্ধান্ত হুট করে নিও না, আমাকে তোমার প্রথম থেকেই ভালো লাগেনি, এটা আমি জানি।
কিন্তু পুরো জীবনটা সামনে তোমার।
বিয়ে করার আগে খুব ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত নিও।

মিঠি কথা বাড়ালো না।

মাঝি জিজ্ঞেস করলো ফিরবে কিনা, রেজা মিঠির দিকে তাকালো? মিঠি ঘাড় নেড়ে হ্যা বললো, মানে ফিরতে বললো!

মিঠি তোমার ব্যাগে বাবল আছে?

হু, কিন্তু শেষ প্রায়!

দেখি? মিঠি বের করে দিলো! বাবলটা হাতে নিয়ে বললো, সত্যি বলতে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি সেভাবে, তবে তুমি যেদিন ছাদের কোণায় বসে বাবল ওড়াচ্ছিলে, মনে হয়েছিলো আমি তোমার পাশে গিয়ে বসি!

রেজা বাবল টা ফেরত দিয়ে দিলো, মিঠি বাবলটা খুলে নদীর ভেতরে ওড়ালো কিছুক্ষণ।

স্বপ্নদৃশ্যের মতো, রেজা অপলক ভাবে তাকিয়ে দেখছিলো।

(চলবে)

শানজানা আলম