অতঃপর মিঠিকথা পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
553

অতঃপর_মিঠিকথা -১৯ (শেষ পর্ব)

মিঠি,
ভালোবাসা নিও, জানি তুমি ভীষণ অবাক হয়েছো চিঠি পেয়ে।
কারণ তিন চারবার ফোন করার পরেও আমি তোমার ফোন রিসিভ করিনি।
তবে কি জানো, এতে তুমি ঠিক যতো কষ্ট পেয়েছো, ফোন ধরতে না পেরে আমি আরও বেশি কষ্ট পেয়েছি।

মিঠি, তোমাকে বলেছিলাম, গতবছর আমি একটু অসুস্থ হয়েছিলাম।
ডাক্তার তখন শুধু সাবধানে থাকতে বলেছেন।
কিন্তু গতসপ্তাহে যখন রুটিন চেকআপে গেলাম, তিনি বললেন, এনজিওগ্রাম করাতে।
এটা ডাক্তার তখনি বলবেন, যখন তিনি আশংকা করবেন, হয়তো রক্তনালীতে ব্লক থাকতে পারে।
হয়তো কেন, আছেই।
বুকের চাপা ব্যাথা তারই জানান দিচ্ছে।

তাই তোমাকে দ্বিতীয়বার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিলাম। হয়ত এখনি মরে যাবো না, কিন্তু স্বাভাবিক জীবনটা তো আর থাকছে না।
এই অস্বাভাবিক জীবনে তোমাকে জড়াতে চাই না।

তুমি আমার স্বপ্ন দৃশ্যে হাওয়ায় ভাসমান বাবলকন্যা হয়ে থাকো। একজীবনে সবাই সবকিছু পায়না।

চার বছর আগে একটা উটকো ফোনে অভিমান করে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার তোমার সাথে দেখা হওয়ার পরে খুব আফসোস হচ্ছিলো জানো!
কিন্তু পরিকল্পনা করেন অন্য কেউ, আড়াল থেকে।
তাই হয়ত যেটা হয়েছে, সেটাই খুব ভালো হয়েছিলো।

এতক্ষণ যেটা লিখলাম, সেটা যৌক্তিক কথা।
তবে অযৌক্তিক কথা হচ্ছে, আজ নার্সিংহোমে এসেছি। ভীষণভাবে ভয় করছে, খুব ইচ্ছে করছে, তুমি পাশে এসে হাতটা ধরো।
হয়ত তুমি আসবেও একথা শুনে, কিন্তু সহানুভূতি নিয়ে।
প্লিজ এসো না, তোমার কাছে সহানুভূতি চাইনা আমি, কি চেয়েছিলাম সেটা তুমি জানো। এখন সেসব চাওয়া মূল্যহীন।

এই ইন্টারনেটের যুগে হাতে চিঠি লিখলাম, এখনো কিছু কথা লিখে যত ভালো করে প্রকাশ করা যায়, বলে প্রকাশ করা যায় না।

ভালো থেকো,

রেজা

মিঠি চিঠিটা অনেকটা সময় নিয়ে পড়লো।
তারপরে কিছুক্ষণ ভাবলো।
এরপর অফিস থেকে বের হয়ে রেজার কাছে চলে গেলো!

নার্সিংহোমের রিসিপশনে গিয়ে রেজার কেবিন নম্বর জানতে চাইলো মিঠি, ওরা শুধু একজনকেই যেতে দেয়।
মিঠি অবাক হয়ে দেখলো, রেজা একাই এসেছে।
কেউ সাথে আসেনি নাকি ইচ্ছে করে আনেনি সে।
হয়ত অবচেতন মনে মিঠির জন্য অপেক্ষা করে আছে!

রেজা ঘুমাচ্ছিল, মিঠি গিয়ে পাশে দাঁড়ালো!
হাত ছুঁয়ে পাশে বসে, ফিসফিস করে বললো, ভবিষ্যৎ কেউ দেখতে পায়না রেজা, অনিশ্চয়তার কথা ভেবে বর্তমানে পাওয়া মুঠোভরা ভালোবাসা আমি হারাতে পারবো না।
তুমি সুস্থ হয়ে চলে এসো! অনেকটা পথ একসাথে হাঁটার বাকি আছে।

মিঠির উষ্ণস্পর্শ ছুঁয়ে যায় রেজার ললাটে!

(শেষ)

শানজানা আলম