অতলস্পর্শ পর্ব-০৮

0
365

#অতলস্পর্শ
#পার্ট_০৮
#জান্নাতুল_বিথী

কথাটা শুনেই কুশান ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি।হঠাৎ ভাইয়া আমার সামনে থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়।আমিও ছাড়ার পাত্রী নয় তাই আমি উঠে ভাইয়ার পেছনে পেছনে বেলকনিতে যাই।ভাইয়া দুই হাত বুকে গুজে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ার পাশে দাড়াই।তারপর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি…

“ভাইয়া আমার প্রশ্নটার উত্তর দেন প্লিজজজজ।”

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলি কুশান ভাইয়া কোনো কথা না বলে আগের মতোই দাড়িয়ে আছে।আমার এবার অনেক বিরক্ত লাগছে।..

“আমি চলে যাই তাহলে.??”

“আসতে যেহেতু কোনো অনুমতি লাগে নাই তাহলে যেতে অনুমতি লাগার কথা না।”

অবশেষে তার মুখ থেকে কথা বের করতে পারলাম।..

“ওকে আমি চলে যাবো তার আগে একটা কথা বলেন।আমার মতো থার্ডক্লাশ… ”

আমি কথা পুরোটা শেষ না করতেই ভাইয়া আমার দিকে রাগী লুকে তাকায়।তাকে এভাবে তাকাতে দেখে আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই।ভাইয়া আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এসে আমার কোমড় জড়িয়ে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।কুশান ভাইয়ার কাজে আমি পুরোই শকড।আপাত আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে কোনো কিছুতেই কাজ করছে না।ভাইয়া আমার কপাল থেকে ছোট ছোট চুল গুলো কানের কাছে গুজে দেয়।তার প্রতিটা স্পর্শে আমি কেপে উঠি।অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া আমাকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে..

“তোর মতো একটা থার্ডক্লাশ মেয়ের যদি বফ থাকে তাহলে আমার অনেক কিছু।ইভেন যদি তোর কোনো বফ থাকেও তাকলে তার কথা ভুলে যা।”

আমি এখনো ভাইয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।..

“কেনো.??”

“কজ আমি বলছি তাই।কেনো তার জন্য বুঝি আলাদা কোনো রিজন দেখাতে হবে।”

কথাটা বলেই ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দেয়।তারপর আবার আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বলে..

“এখন গিয়ে সুন্দর করে খেয়ে নিস।আমি একটু পর ওই ফ্ল্যাটে আসছি। আর এসে যদি শুনি তুই এখনো খাওয়া দাওয়া করিস নাই তাহলে তখন কি হবে তা তখন দেখবি।এখন যা।”

রুমে বসে বসে মিতুর সাথে চেটিং করছি।রুমে এসে সবার আগে খাওয়া দাওয়া করে নেই।কারন কুশান ভাইয়াকে বিশ্বাস নেই।যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।তাই বাসায় এসেই আগে খেয়ে নেই।হঠাৎ আমার রুমে জিদান ভাইয়া আসে।ভাইয়া এসেই আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।হঠাৎ ভাইয়ার আগমনে আমি কিছৃটা হকচকিয়ে যাই।ভাইয়া ছোট বাচ্ছাদের মতো চকলেট খেতে খেতে আমাকে বলে..

“কিরে মিসেস পেত্নি কি করিস।.??”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে ভাইয়ার চুল টেনে দেই।ভাইয়া আউচ বলে মৃদু চিৎকার করতেই আমি হেসে দেই।…

“ভাইয়া আমি মিসেস হলাম কখন?? কোন দিন?? কিভাবে..?”

আমার কথা শুনে ভাইয়া ফিক করে হেসে দেয়।তারপর আমার মাথায় টোকা দিয়ে বলে..

“খুব তাড়াতাড়ি তো বড় হয়ে গেছিস।এখন তো বিয়ে দিতে হবে। তা কবে বিয়ে করবি শুনি.??”

“আমি কখনোই এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না।সবার আগে তোমার বিয়ে হবে। তারপর তুমি ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত আমার মাথা থেকে যতো গুলো চুল চিড়লে ঠিক ততোগুল চুল তোমার বউয়ের মাথা থেকে চিড়বো।তারপর চিন্তা করে দেখবো বিয়ে করবো কি করবো না।”

তারপর শুরু হয়ে যায় আমাদের দুই ভাই বোনের খুন শুটির ঝগড়া।ভাইয়ার সাথে অনেক্ষন হাসি ঠাট্টা মারামারি করে ক্লান্ত হয়ে দুজনেই বসে পড়ি।ভাইয়া লস্বা হয়ে খাটের উপর শুয়ে পড়ে।হঠাৎ ভাইয়া কল আসায় ভাইয়া মোবাইল নিয়ে উঠে চলে যায়।আমি ফ্রেস হয়ে এসে পড়তে বসি।প্রায় অনেক্ষন পড়ার পর হঠাৎ গিটারের টুংটাং শব্দে আমি চমকে উঠি।কিছুটা অবাক হয়ে আমি উঠে দাড়াই।গিটারের শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে যাই।বেলকনিতে গিয়ে দেখি কুশান ভাইয়া তার বেলকনিতে দোলনায় বসে গিটারে সুর তুলছে।হঠাৎ ভাইয়ার আজকে করা কাজ গুলো আমার মনে পড়ে যায়।আনমনেই হেসে উঠি।মনে মনে ভাবছি সত্যিই ভাইয়া একটা আজব ধরনের প্রানী।যে প্রানী সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি অনেক বুঝি তাকে কিন্তু তাও মনে হয় কে সে আমি তো তাকে ছিনি না।তাকে বুঝিই না।আচ্ছা সে কি আমার জীবনের বিশেষ কেউ.??কথাটা একবার মনে আসতেই নিজেকে নিজে গালী দিতে থাকি।

“ছিহহহহ জিহা তোর ভাবনার কোন দিন থেকে এতোটা নিচে নেমে গেলো।ও তোর ভাই শুধুই ভাই আর কিছুই না।এর চাইতেও বেশি কিছু ভাবা টা তোর ঠিক না।কোথায় তোর কুশান ভাইয়া আর কোথায় তুই।এই দিকটা অন্তত্য একবার চিন্তা করবি।”

এসব বলে নিজেকে সান্তনা দিতে থাকি।হঠাৎ কুশান ভাইয়া গান গেয়ে উঠে…

“যদি এমন হতো তোমায় নিয়ে;
স্বপ্ন গুলো সত্যি হতো;
যদি এমন হতো তোমার সাথে;
সময় টুকু অসীম হতো;
তুমিও কি তাই চাও বলো আমায়;

ওওও আর সইছে না যে দুরে থাকা;
একা একা স্বপ্ন গুলো পাহারায়;
ওওও হৃদয় টা যে তোমার কাছে;
অনুভবে তোমার খোজে দিশেহারা;

এই সুরে রেশ ধরে যাবো হারিয়ে;
সুখ পাখিটার ডানায় চড়ে যাবো উড়ে উড়ে;
তুমিও কি তাই চাও বলো আমায়;
ওওও আর সইছে না যে;
দুরে থাকা একা একা স্বপ্ন গুলো পাহারায়;
ওওও হৃদয় টা যে তোমার কাছে;
অনুভবে তোমার খোজে দিশেহারা;

গৌধুলির লঘ্নে তোমার হাত ধরে;
বলবো কথা চুপিসারে অচিনপ্রান্তরে;
তুমিও কি তাই চাও বলো আমায়;
ওওও আর সইছে না যে;
দুরে থাকা একা একা স্বপ্ন গুলো পাহারায়;
ওওও হৃদয় টা যে তোমার কাছে;
অনুভবে তোমার খোজে দিশেহারা;

#চলবে

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গঠন মুলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ]