অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-০৪

0
810

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________০৪




বিভোর গ্লাসটা ফ্লোরে আছরে ফেলে রেগে বোতল টা হাতে নিয়ে খেতে লাগলো।

অন্যদিকে কুহু চোখ বন্ধ করে ছিল হঠাৎ গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে হুর মুড়িয়ে উঠে পড়লো, কুহু উঠে পড়ে বলতে লাগল,,,,কোথায় আবার গ্লাস ভাঙ্গলো উনার রুমে না তো আবার কি হলো।
কুহু তাড়াতাড়ি উঠে বিভোরের রুমে গেল,গিয়ে বিভোর কাচের টুকরো গুলোকে হাতে মুঠোয় নিয়ে রেখেছে, আর হাত থেকে রক্ত পড়ে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে, কুহু এইসব দেখে ওর চোখ বড় হয়ে গেল, বিভোরকে বলে উঠল,,,,, আআ আপনি কি করছেন।বিভোর লাল বর্ণ আখিতে কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,এখানে এসেছো কেন জাস্ট লিভ মাই রুম। বিভোরের ধমকে কুহু কেপে উঠলো। কুহু নিজেকে ঠিক রেখে বলল,,,আপনি এইসব কি করছেন আপনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে। বিভোর তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,,,,এত রক্ত পড়ছে কিন্তু আমার যন্ত্রণা কেন কমছে না বলতে পারো। কুহু বিভোরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল কিসের যন্ত্রণার কথা বলছে বিভোর। কুহু ধিরে ধিরে বিভোরের কাছে গেল তারপর বলল,,,বসুন এখানে।বিভোর চুপ পয়ে দাড়িয়েই আছে।কুহু আবার বলল,,,,প্লিজ বসুন।এবার ও বিভোর কিছু বলল না।কুহু ধিরে ধিরে বিভোরের এক হাত ধরে বিভোরকে বসালো তারপর বিভোরের হাত থেকে ধিরে ধিরে কাচের টুকরো গুলো বের করলো,তারপর ধিরে ধিরে বিভোরের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল।

কুহু বিভোর কে বলল,,,আপনি ঠিক আছেন।বিভোর ধিরে ধিরে কুহুর দিকে তাকালো, কুহু বিভোরের চোখে তাকিয়ে বিভোরের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করলো, কুহু বিভোরের চোখে স্পষ্ট চাপা যন্ত্রণা দেখতে পারলো, বিভোর কিছু না বলে কুহুর কোলে মাথা রেখে বলল,,,,আমি পারছি না আমি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই ভালো থাকতে চাই আমি।কুহু বিভোরের এমন আচরণ চমকে গেল।কুহু কিছু খন চুপ হয়ে থাকলো তারপর বিভোরকে ধিরে ধিরে ডাকলো কিন্তু বিভোরের কোনো সারা নেই কুহু খেয়াল করলো বিভোর কাপছে, কুহু বিভোরের কপালে হাত দিয়ে দেখলো বিভোরের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, একটু জ্বর না অনেক বেশী জ্বর এসেছে কুহু ভয় পেয়ে গেল,তাড়াতাড়ি বিভোরকে বিছানায় শুয়িয়ে দিল কুহু কি করবে বুঝে পাচ্ছে না,কুহু তাড়াতাড়ি বাড়ী বাহিরে দারোয়ান চাচার কাছে গিয়ে বলল,দারোয়ান চাচা ডক্টর ডাকলো,বিভোরের অনেক জ্বর, কুহু কি করবে বুঝে পাচ্ছে, কিছু খনের মাঝেই ডক্টর চলে আসলো, জ্বর কমার জন্য ডক্টর একটা ইনজেকশন দিল তারপর কিছু মেডিসিন দিয়ে চলে গেল।কুহু বিভোরের কপালে জলপট্টি দিয়ে দিতে লাগল,সকাল ৬ টার দিকে দিয়ে বিভোরের জ্বর কমলো, এর মাঝে কাজের সবাই চলে আসলো, বিভা এসে কুহুকে বলল,,,,তুমি রেস্ট নেও কুহু আমি এখানে আছি স্যারে কাছে।কুহু বলল,,,,,,
– না আপু আমি ঠিক আছি
– আরে তুমিও তো অসুস্থ হয়ে পড়বে স্যার এখন অনেকটা ভালো আছে
– হুম এখন জ্বরটা কমেছে সারা রাত অনেক জ্বর ছিল
– তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে নেও
– ওকে আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি

কুহু নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো ওর চোখ গুলো খুব জ্বলছে কিন্তু কুহুর মনে প্রশ্ন জাগছে বিভোর মাঝে মধ্যে এত রেগে যায় কেন আর কাল রাতে ওমন কথা বলছিল কেন। হঠাৎ বিভা ওর রুমের সামনে আসলো, বিভাকে দেখে কুহু বলল,,,,,আপু তুমি এখানে কেন উনি তো একা রুমে আছে। বিভা বলল,,,,স্যার অফিসে চলে গেছে।কুহু অবাক হয়ে বলল,,,,কি।
– হ্যা স্যার ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেছে, না করে ছিলাম উনি কি কার ও কথা শোনে কড়া কন্ঠে বলে দিল আই এম ফাইন।বলেই চলে গেল।
– হুম কিন্তু অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হওয়া ঠিক হয় নিই
– স্যার তো কারও কথা শুনবে না
– আচ্ছা আপু তুমি উনার সাথে আছো কত দিন
– দুই বছর
– তাহলে তো তুমি উনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানো
– হুম অলমোস্ট সবই জানি
– আপু উনি কি কোনো ডিপ্রেশনে আছে,উনি মাঝে মাঝে অনেকটা রেগে যায়, আর কাল জ্বরের ঘোরে কিসব বলছি উনার কি কোনো পাস্ট আছে
– হুম
– আমাকে বলুন
– ঠিক আছে কিন্তু তুমি স্যারকে বলতে পারবে না যে আমি বলেছি
– ওকে
– তাহলে শোনো স্যারের দুই বছর একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল, স্যার মেয়েটাকে খুব ভালোবাসতো প্রথম ভালোবাসা ছিল তো স্যার খুব উইক ছিল মেয়েটার প্রতি সব ঠিকই চলছিল স্যার যখন মেয়েটাকে বলল বিয়ের কথা তখন মেয়েটা রাজি হলো না নানা অজুহাত দেখাতে লাগল, কিন্তু মেয়েটা বেশী ভালো ছিল না, মেয়েটা স্যারের সাথে চিট করে, স্যারের থেকে ধনী উনার বন্ধু মাহমুদকে বিয়ে করে নেয়। তখন স্যার অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে, ওই মেয়ে যে বিয়ে করেছে মাহমুদ লোকটা ভালো না, ওই মেয়ে বিয়ে করে সুখি হয় না এখন কান্না কাটি করে আর স্যারের কাছে ফিরে আসতে চায়।
– উনি কি এখনো ভালোবাসে
– বলতে পারি না
– উনি এখনো ওই মেয়েটার জন্য কষ্ট পায়
– না স্যার মাঝের দিক দিয়ে নিজেকে সাভাবিক করে তুলে ছিল কিন্তু মেয়েটা আবার যখন উনার লাইফে বেক করতে চাইছে তাই স্যার আবার কেমন একটা অসাভাবিক হয়ে উঠেছে।
– ওই মেয়েটার নাম কি
– মিমি
– তো মিমির কি এখনো উনার বন্ধুর সাথে সংসার করছে
– না বিয়ের এক বছর না হতেই দুজন ডিভোর্স নিয়েছে
– হুম
– তুমি আবার স্যারকে কিছু বল না তাহলে আমার রক্ষে নেই
– না কিছু বলব না, আমি ভার্সিটি যাব
– কিন্তু তোমার পরিবার যদি তোমাকে খুজে পেয়ে যায়
– আসলেই তো তখন কি করব
– তোমার আর কিছু দিন এখানে থাকলেই ভালো হবে
– হুম কিন্তু সামনে পরিক্ষা আছে আর আমার বই খাতা কিছু নেই এখানে
– হুম
– কিন্তু আমি অফিসে যাব
– অফিসে কেন
– উনি আমাকে একটা পার্টটাইম জব দিয়েছে
– ও তাই নাকি তো কাজ কি
– উনার পিএ মিস্টার আকাশের এ্যাসেসটেন্টের পদে নিয়োগ দিয়েছে
– ওহ আমি একটু আসছি

বলেই বিভা চলে গেল,আকাশের নাম শুনতেই বিভা একটু কেমন যেনো হয়ে গেলো,কুহু ব্যাপারটাকে নিয়ে বেশী মাথা গামালো না।

গোধূলির বেলা আকাশ লালচ্ছে রঙ ধারণ করেছে, ঝাকে ঝাকে কবুতর উন্মুক্ত আকাশে নিজেদের স্বাধীনতা উপভোগ করছে, বিভোর নিজের কেবিনে ল্যাপ্টবে মন দিয়ে রেখেছে, হঠাৎ দরজা কেউ টক্কা দিল, বিভোর ল্যাপ্টবের দিকে নজর দিয়ে বলল,,,কামিং।
কেউ বিভোরের সামনে এসে দাড়িয়েছে তা অনুভব করলো বিভোর অতঃপর মুখ তুলে তাকিয়ে বিভোরের চোখ মুগ্ধতার চাদরে ঢেকে গেল।বিভোর নিজের সামনে এক মায়াবতীকে আবিষ্কার করলো যার কাজল কালো চোখে তাকিয়ে যেন এক সমুদ্রের অতল গভীরে চলে যাচ্ছে যার জমিন সে স্পর্শ করতে পারবে না, তার কোমড় ছাড়ানো চুল যেন এক রেশ ছড়াচ্ছে চারপাশ মাতিয়ে তুলছে, এক শ্যামলাবর্তী সুন্দরী রমণীকে নিজের চোখের সামনে আবিষ্কার করলো বিভোর, খানিক সময়ের জন্য ঘোরে হারিয়ে গেল বিভোর,পরক্ষণেই নিজেকে সাভাবিক করে বিভোর বলে উঠল,,,,
– কুহু তুমি এখানে
– ও মা ভুলে গেলেন আমাকে তো আপনি জব দিয়েছেন
– তোমার এইসব করার দরকার নেই
– দেখুন আমি এমনি এমনি আপনার এত সাহায্য নিতে পারব না
– ওকে কর কাজ কিন্তু বি কেয়ার ফুল
– হুম
– আপনি মেডিসিন খেয়েছেন
– না প্রয়োজন নেই
– প্রয়োজন আছে কি নেই সেটা আপনাকে বুঝতে হবে না, এই নিন চুপচাপ খেয়ে নিন
– এই না আমি খাব না
– নিন বলছি
– ওকে

কিছুখন পর আকাশ আসলো এসে বলল,,,জ্বি স্যার ডেকেছেন।বিভোর বলল,,,চুপ কর এখানে তেমন কেউ নেই যে তুই আমাকে স্যার বলছিস।আকাশ বলল,,,,ও কে।বিভোর বলল,,,,,,,ও কুহু ওর কথাই বলে ছিলাম। আকাশ বলল,,,ওহ কেমন আছো।কুহু মুচকি হেসে বলল,,,,আলহামদুলিল্লাহ আপনি।আকাশ সামান্য হেসে বলল,,,আলহামদুলিল্লাহ।
বিভোর বলল,,,,কুহু তুমি আকাশের সাথে যাও ও তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে।কুহু বলল,,,,কিন্তু বিভা আপুর কি হবে। বিভোর বলল,,,,, বিভা তোমার সাথেই থাকবে।কুহু বলল,,,ঠিক আছে।

কুহু আকাশের সাথে বাহিরে গেল,কেবিন থেকে বেড়িয়েই দেখে বিভা দাড়ানো,কুহু বিভাকে বলল,,,আপু চল আমাদের সাথে। বিভা কিছু না বলে চুপচাপ যেতে লাগলো ওদের সাথে,আকাশ কুহুকে বলল,,,ওইটা তোমার জায়গা ওখানে বসো প্রয়োজন পড়লে আমি ডাকবো। কুহু বলল,,,ঠিক আছে। আকাশ বলল,,,আর তোমার কিছু প্রয়োজন পড়লে আমাকে বলতে পারো।কুহু বলল,,,ঠিক আছে আচ্ছা আপনারা কি বন্ধু। আকাশ বলল,,,হ্যা খুব ক্লোস ফ্রেন্ড ছোট থেকে এক সাথে বড় হয়েছি।কুহু বলল,,,,ওহ।আকাশ বলল,,,,তুমি এখন যাও।কুহু বলল,,,ঠিক আছে।কুহু গিয়ে ওর জায়গায় বসলো তারপর বিভাকে বলল,,,,আপু তোমার কি হয়েছে। বিভা বলল,,,কই কিছু না তো।কুহু বলল,,,,,,
– না অফিসে আসার পর থেকে তুমি কেমন যেন হয়ে আছো
– না তেমন কিছু না, আচ্ছা কুহু
– বল না
– আমার একটা কথা রাখবে
– বল
– তুমি যখন অফিসে আসবে তখন কি আমি বাড়ীতে থাকতে পারি অফিস টাইমটা বাদ দিয়ে সব সময় তোমার সাথে থাকব, তুমি স্যারকে একটু বুঝিয়ে বল
– ঠিক আছে কোনো প্রবলেম নেই কিন্তু কি সমস্যা
– আহ আসলে

বলার আগেই পিছন থেকে আকাশ বলল,,,বাদ দেও কুহু উনাকে যেতে দেও কাউকে হয় তো উনার সহ্য হচ্ছে না।আকাশের কথা শুনে বিভা আর কুহু আকাশের দিকে তাকালো,আকাশের কথা শুনে বিভার মুখে রাগ স্পষ্ট বুঝা গেল, বিভা বসা থেকে উঠে বলল,,,কুহু আমি গেলাম কাল সকালে দেখা হবে।বলেই আকাশের দিকে গরম মেজাজে তাকিয়ে চলে গেল।আকাশ বিভার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, কুহু দুজনের ব্যাপার টা বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।আকাশ কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,এই ফাইল গুলো একটু দেখে বিভোরকে দিয়ে আসো। কুহু বলল,,,শুনুন স্যার।আকাশ বলল,,,স্যার বলার দরকার নেই তুমি আমাকে ভাইয়া বলতে পারো।কুহু বলল,,,ঠিক আছে কিন্তু তখন আপনি ওই কথা বললেন কেন।আকাশ বলল,,,কোন কথা।কুহু মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,,,আরে ওই যে ওই কথা।আকাশ না বুঝার ভান ধরে বলল,,,কোন কথা কুহু আচ্ছা বাদ দেও তুমি তোমার কাজ কর।

চলবে…………

#অদ্ভুর_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট_ ( বোনার্স)




কুহুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আকাশ চলে গেল, কুহুর কাছে ওদের দুজনের ব্যাপারটা বেশ ঘোলাটে লাগছে।কুহু আর কিছু না ভেবে ফাইল নিয়ে বসে পড়লো,হঠাৎ কুহু বুঝতে পারলো ওর সামনে কেউ এসেছে কুহু মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে স্কায় ব্লু কালারের শার্ট পড়া একটা ছেলে,কুহু ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো একে কি ও চেনে নাকি কিন্তু না এই ছেলেকে কুহু চেনে না, কুহু কিছু বলার আগেই ছেলেটা হেসে বলল,,,,,হ্যালো আমি রেহান।কুহু চুপ হয়ে রইলো, ভ্রু কুচকে ছেলেটা বলল,,,,,,,
– আমাকে দেখে কি ভাবছেন
– আমি কি আপনাকে চিনি, আগে কি দেখা হয়েছে
– না, আজই প্রথম দেখা, আপনি মনে হয় নতুন
– হ্যা আজই প্রথম
– হুম পরিচয় হতে পারি
– অফকোর্স
– আমি রেহান আপনার নাম
– আমি কুহু
– ওয়াও খুব কিউট নাম তো কে রেখে ছিল
– আব্বু
– ওহ আপনার বাবা মা কেমন আছে
– উনারা বেচে নেই
– ও সরি
– ইটস ওকে,আপনার বাবা মা কেমন আছে
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো
– আমার এখন কাজ আছে পড়ে কথা বলি
– হ্যা আর একটা কথা ছিল
– জ্বি বলুন না
– আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি
– হুমমম ওকে
– ঠিক আছে তো কাজ করেন
– হুম

রেহান চলে গেল, কুহু বসে কাজ করতে লাগল, কাজটা শেষ করে বিভোরের কাছে গিয়ে ফাইলটা দিয়ে বলল,,,ফাইল। বিভোর বলল,,,ওকে। কুহু চলে যেতে নেবে তখনি বিভোর বলল,,,,,কুহু।বিভোরের ডাক শুনে কুহু বলল,,,জ্বি।বিভোর বলল,,,,অফিস ছুটি কয়টায় জানো তো।কুহু বলল,,,হুম। বিভোর বলল,,,,সময় মতো চলে যেও গাড়িতে করে।কুহু বলল,,,ঠিক আছে আপনি কখন যাবেন।বিভোর বলল,,,,কিছু কাজ আছে ওই গুলো শেষ করে।কুহু বলল,,,,ঠিক আছে।বলেই কুহু কেবিনের বাহিরে চলে গেল,আর বিভোর ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

কুহু নিজের টেবিলে গিয়ে বসতেই ওর পাশের টেবিলের একটা মেয়ে বলে উঠল,,, কি ম্যাডাম নতুন নাকি আজ।কুহু পাশে তাকিয়ে দেখে,একটা মেয়ে, কুহু মুচকি হেসে বলল,,,জ্বি। মেয়েটা বলল,,,,নাম কি তোমার।কুহু বলল,,,
– কুহু,আপনার
– কোণা
– ওহ
– তো অফিস কেমন লাগলো
– ভালো
– আর বসকে
– ভালো মানে…… ( চমকে উঠে বলল)
– ভালো লাগলে ভুলে যাও এই বসটা শুধু আমার ভুলেও নজর দিও না।

কুহু মেয়েটার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালো, মেয়েটা কি কিছু খেয়ে আছে নাকি কি সব বলছে। হঠাৎ আরেকটা মেয়ে বলে উঠল,,,,,, কোণা কি সব বলছিস। কুহি তাকিয়ে দেখে চোখে চশমা পড়া মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে।কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,ওর কথায় কিছু মনে কর না ও হলো একটা পাগল।কুহু বলল,,,,না আমি কিছু মনে করি নিই আপু।মেয়েটা বলল,,,হায় আমি রুশা তোমার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।কুহু বলল,,,,,আমি কুহু আপনার সাথে পরিচয় হয়ে আমারও ভালো লাগলো।রুশা বলল,,,,আজ নতুন।কুহু বলল,,,,,
– জ্বি
– ওহ কোনো প্রবলেম হলে বলবে
– থ্যাংক ইউ আপু
– থ্যাংকস বলার দরকার নেই, পরে কথা বলব কাজ কর স্যার যদি দেখে কাজ ছেড়ে গল্পে মোজে আছি আর রক্ষে থাকবে না।
– ঠিক আছে

অফিস ছুটও হয়ে গেছে কুহুও রেডি হয়ে বের হলো, অফিস থেকে বের হতেই রেহান ওর সামনে এসে বলল,,,,কোথায় যাচ্ছেন।কুহু ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,,বব,বাড়ী যাচ্ছি।রেহান বলল,,,,আমি পৌছে দিয়ে আসি চলুন।কুহু ঘাবড়িয়ে বলে উঠল,,, না না আমি চলে যেতে পারব।রেহান বলল,,,চলুন দিয়ে আসি।কুহু বলল,,,, আজ না অন্য কোনো দিন।রেহান বলল,,,,,ওকে সাবধানে যাবেন।কুহু বলল,,,,আপনিও আসি আল্লাহ হাফেজ। রেহান মুচকি হেসে বলল,,,আল্লাহ হাফেজ। বলে চলে গেল।কুহুও তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো।বাড়ীতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।আর ভাবতে লাগল,,,যদি সেই দিন মুহিদ এর সাথে ওর বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে এখন ওর অবস্থা কেমন হতো,আচ্ছা কুহুকে তো অবশ্যই সবাই খুঁজাখুঁজি করছে, আর মুহিদ তো মনে হয় পাগলের মতো খুজছে কুহুকে, কুহুকে যদি পেয়ে যায় তাহলে তো কুহুর আর রক্ষে নেই, আবার সামনে কুহুর পরিক্ষা ও চলে আসছে।এসব চিন্তা ভাবনার ছেদ ঘটলো কারও হাটার আওয়াজে,কুহু বের হয়ে দেখে বিভোরের এসেছে, কুহু বিভোরের কাছে গিয়ে বলল,,,,আপনি চলে এসেছেন, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।বিভোর সাই দিয়ে উপরে চলে গেল।

কিছুখন পর বিভোর ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলো, বিভোর কুহুকে বলল,,,একটা কথা বলার ছিল।কুহু বলল,,,বলুন।বিভোর বলল,,,,,,না মানে আসলে কাল রাতের কথা আমার কিছু মনে নেই আমি কি উল্টাপাল্টা কিছু বলেছি তোমাকে।কুহু তো সবটা জানে তবুও না জানার ভান ধরে বলল,,,না তো।বিভোর বলল,,,,ওহ ভালো কথা আর তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কাল রাতের জন্য।কুহু বলল,,,আরে কি বলছেন আপনি যা করেছেন আমার জন্য তার কাছে তো এইসব কিছুই না।বিভোর বলল,,,,,আর একটা কথা কাল তোমার সব বই আনা হবে আবার পড়া শুরু করবে।কুহু খুশিতে আত্তহারা হয়ে পড়লো, কুহুর খুব বলতে ইচ্ছে করছে, আপনি এত ভালো কেন।কুহু বলল,,,থ্যাংক ইউ। বিভোর বলল,,,,আজ অফিসে কেমন লাগলো। বলতেই কুহু বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

আজ তো খুব ভালো লেগেছে, ওখানে সবাই খুব ভালো, আকাশ ভাইয়াও খুব ভালো,ওখানে আজ কয়েক জনের সাথে পরিচয় হয়েছে, রুশা যে নাম ওই আপুটা অনেক ভালো আর কোণা আপু ও কিন্তু আমার মনে হয় উনি আপনাকে পছন্দ করে, আমাকে বলল বসের দিকে নজর দিও না হিহিহিহি ওই আপুটা কেমন পাগল পাগল হিহিহিহি,আর আ……….

বলার আগে বিভোর বলল,,,,তুমি চুপ কর তুমি তো শুরু করেছো শেষ করার নাম নেই।কুহু বলল,,,,,ওহ আচ্ছা আর একটা কথা বলব।বিভোর বলল,,,হুম শুধু একটা কিন্তু। কুহু বলল,,,,হুম আসলে তখন আকাশ ভাইয়া আর বিভা আপুর বিহেভিয়ার কেমন যেন লাগলো।
বিভোর বলল,,,ওদের মান অভিমানের একটা বড় অধ্যায় চলছে।কুহু বলল,,,মানে।বিভোর বলল,,,,বিভা আমার সাথে আছে দুই বছর, আর আকাশ যে দিন প্রথম অফিসে জয়েন করে সে দিনই বিভার সাথে আকাশের কথাকাটা কাটি হয়, কিন্তু দুজনের সম্পর্ক টা ঝগড়া থেকে অন্য দিকে ঘুরতে লাগল,দুজন দুজনের টেক কেয়ার করা শুরু করলো বন্ধুর মতো মিশতে লাগলো,দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ শিকার করে না,একদিন আমি আকাশ আর সাথে বিভাও ছিল অফিসের একটা বড় ডিল পাওয়ার আনন্দে সবাই আনন্দ করছিলাম তো অন্য কোম্পানির একজন মেয়ে সবাইকে অভিনন্দন জানাতে লাগল,ওই মেয়েটা আকাশকে হাগ করলো ব্যসসস ওই খান থেকে বিভা ফুলে আকাশের সাথে কথা বলে না আর আকাশও অনেকটা বদমেজাজি ও নিজেও কিছু বলে না, দুজন দুজনকে দেখলে মুখ ঘুড়িয়ে রাখে এটা হলো ওদের ঘটনা।

কুহু বলল,,,,,ওহো আমি তো ভাবতেই পারি নিই। বিভোর বলল,,,যাও ঘুমাও এখন।কুহু বলল,,,ঠিক আছে। কুহু উঠে নিজের রুমে যেতে লাগল আর বিভোর কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, এক ছাদের নিচে থাকা নিজেদের মনের ভাব একে অপরের সাথে আদান প্রদান করা, এক সাথে রাতের খাবার খাওয়া যেন ওরা কোনো সংসার করছে,এভাবে কেটে যেতে লাগলো দিন গুলো,কুহুর পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো, কুহু লুকিয়ে লুকিয়ে খুব সাবধানে পরিক্ষা দিতে লাগল।

এখন বিকেল ৫ টা বেজে ৪৫ মিনিট, বিভোর অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে, এর মাঝে আকাশ আসলো ওর কাছে তারপর বলল,,,,,,কিরে দোস্ত আজ তো কুহু আসলো না। বিভোর বলল,,,জানি না হয় তো ওর শরীর ভালো লাগছে না বাদ দেয় তোকে তো বলেছি ও কাজ করতে চায় তাই নামে একটা কাজ দিয়েছি। আকাশ দুষ্টু হেসে বলল,,,তো বন্ধু তুই কি সংসার সংসার ফিলিংস পাচ্ছিস।বিভোর বলল,,,,মানে।আকাশ বলল,,,,মানে হলো এই যে এক ছাদের নিচে থাকছিস একে ওপরে খেয়াল রাখছিস ওর প্রতি তোর কোনো অনুভূতি জন্মায় না। বিভোর রেগে বলল,,,কি বলছিস।আকাশ বলল,,,আরে কি সমস্যা ও মেয়েটা খারাপ না, এখন কার মেয়েদের হিসেবে যথেষ্ট ভালো মেয়ে যদি কিছু হয় সমস্যা কোথায় আমার মনে হয় না দাদু অমত জানাবে।বিভোর বলল,,,,এইসব কথা আর বলবি না আমার মনের অনুভূতি গুলো আরও অনেক আগে দাফন করেছি। আকাশ বলল,,,,বিভোর তু…………

বলার আগেই বিভোরের ফোন বেজে উঠল, বিভোর কল রিসিভ করলো, আকাশ বিভোরের মুখে ভয়ের ছাপ দেখতে পেল, আকাশ বিভোরকে বলল,,কি হলো বিভোর কি হয়েছে। বিভোর হতাশ হয়ে বলল,,,ড্রাইভার কাকুর ফোন ছিল উনি হাসপাতালে। আকাশ আতকে উঠলো আর বলল,,,হাসপাতালে মানে ওরা ঠিক আছে তো।বিভোর বলল,,,,কুহুকে আর বিভাকে কারা যেন তুলে নিয়ে গেছে।আকাশের মাথায় মনে হয় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আকাশ আর বিভোর দেরি না করে হাসপাতালে গেল ওখানে ড্রাইভার কাকু বেডে শুয়ে আছে, বিভোর আর আকাশ গিয়ে উনার পাশে বসলো বিভোর বলল,,,,,,কাকু বলুন তো কি হয়েছে। উনি বললেন,,,,আসলে বাবা কুহু আম্মার পরীক্ষা শেষ করে বিভা আম্মা আর কুহু আম্মারে বাসায় নিয়া যাইতাসিলাম হঠাৎ রাস্তায় আমাদের সামনে কয়েকটা গাড়ি থামাইলো যার কারনে আমারে গাড়ি থামাতে হলো, সামনের গাড়ি থেকে অনেক গুলো পোলা নামলো তারপর এসে কুহুর আম্মার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল বিভা আম্মা বাধা দিতেই বিভা আম্মারেও সাথে নিয়া গেল আমি আটকাতে গেলাম যখন ওরা কয়েক জন আমাকে অনেক মারলো।

এইসব কথা শুনে বিভোরের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে, আকাশ রেগে বলল,,,,কাকু আপনি কি বলতে পারেন ওরা করা ছিল।লোকটা বলল,,,,আমি তো জানি না কিন্তু কুহু আম্মারে মুহিদ বলতে শুনেছি কয়েকবার।মুহিদ শুনেই বিভোর বুঝে গেলো এটা ওই ছেলেরই কাজ, বিভোর উঠে যাচ্ছি তখনি আকাশ বলল,,,,আমি পুলিশকে খবর দিচ্ছি। বিভোর আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো, বিভোর কুহুদের বাড়ীর ঠিকানা গিয়ে দেখে বাড়ীতে তালা ঝোলানো, তারপর ঠিকানা নিয়ে মুহিদ এর বাড়ীতে গেল কিন্তু ওখানেও কাউকে পেল না, বিভোর হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরলো সে কি করবে বুঝে পাচ্ছে না,বিভাের এসে হোল রুমে বসতেই বিভোরের কাছে নিজেকে খুব ফাকা ফাকা মনে হতে লাগল,এখন কুহু থাকলে অবশ্যই দৌড়ে এসে বিভোরকে বলতে আপনার কিছু লাগবে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খেতে দিচ্ছি।কুহু পাগলের মতো একা একা কথা বলতেই থাকতো আর বিভোর মুগ্ধ হয়ে পাগলমি গুলো উপভোগ করতো, এই কয়েক দিনে মেয়েটার প্রতি বিভোরের মায়া পড়ে গেছে।বিভোর নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,,,,,,আমি তোমাকে আবার নিয়ে আসবো কুহু। তখনি আকাশের ফোন আসে, বিভোর সাথে সাথে রিসিভ করে বলল,,, হ্যালো আকাশ কিছু জানতে পারলি।আকাশ বলল,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

চলবে………………….

ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙