অদ্ভুত নেশা পর্ব-০১

0
5431

#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০১
#অধির_রায়

১.
ছোঁয়ার রক্তে সারা রুম ভেসে যাচ্ছে। ছোঁয়া চিৎকার করে যাচ্ছে কিন্তু তার কন্ঠ কারো কর্ণধারে পৌঁছে না৷

ছোঁয়া ঘুমের মাঝে অনুভব করে কে বা কারা জানি ছোঁয়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে৷ ছোঁয়া চোখ খোলার চেষ্টা করে কিন্তু কোন ভাবেই তার চোখ খোলতে পারছে না৷ চোখের সাথে যুদ্ধ করে পরিশেষে চোখ খোলে৷ চোখ খোলার পর ছোঁয়া কাউকে দেখতে পারছে না৷ অথচও সে এখনও অনুভব করছে কে জানি তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে আছে৷

— কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন কেন? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন? আমার ধম আটকে যাচ্ছে তো।

— কোমল মিষ্টি কণ্ঠে বলে উঠে ভয় পাবার কোন কারণ নেই৷ আমি তোমাকে বিয়ে করেছি৷ আর তুমি এখনও সিঁদুর সাখা পলা পড়নি কেন?

— কিসের বিয়ে?

— সেদিন মন্দিরে তোমার সিঁথিতে আমার সিঁদুর পড়েছে৷

— কোন মন্দির। আমি জীবনে কোনদিন মন্দিরে যায় নি৷ বাজে কথা বন্ধ করেন৷

ছোঁয়া আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই তার কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়৷ ছোঁয়ার ঠোঁট অনবরত নড়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সে নিজেকে সুপেয় দিতে বাদ্য৷ সেই অদ্ভুত লোকটি তার সাথে সহবাস করে যাচ্ছে। অনবরত রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। সে দিকে অদ্ভুত লোকটির কোন খরব নেই৷ সে নিজের কাছে মর্ত্য হয়ে আছে৷

ছোঁয়া কান্না করে যাচ্ছে আর একের পর এক কিল ঘুশি মেরে যাচ্ছে নিজের গায়ের উপর৷ কিন্তু তার গায়ে একটাও আঘাত পড়ছে না৷

ভোরে মন্দিরের সঙ বেজে উঠতেই অদ্ভুত লোকটি ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়। আর কোথায় চলে যায় জানা নেই৷

ছোঁয়া ফ্লোরে বসে চেখের জল ফেলে যাচ্ছে। তার দেহে কোন শক্তি পাচ্ছে না৷ সে কি করবে৷ এসব কথা তার পরিবারের লোকদের বলবে নাকি চেপে যাবে। তাছাড়া ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক। কিভাবে তারা এই শক মেনে নিবে।

ছোঁয়া নিজের মনকে শক্ত করে শাওয়ার নিতে যায়। ছোঁয়া দেখতে পায় দুই তিনটা পটেকশক পড়ে আছে৷ তার মানে ছোঁয়ার সাথে যা হয়েছে পটেকশন ছিল। কিছু তার ক্ষতি হবে না৷ কিন্তু বিছানার চাদর৷ সেটা ব্লাড দিয়ে পরিপুর্ণ৷

ছোঁয়া ওয়াসরোম থেকে বের হয় চাদর নেওয়ার জন্য৷ কিন্তু সে বিছানায় অন্য কারুকাজ যাক্ত চাদর দেখতে পাই। সাথে একটা চিরকুট।

ছোঁয়া আবেগ বিয়ে সেই চিরকুটটা খোলে।

লেখাঃ
প্রিয় লাইফ পার্টনার ছোঁয়া
রাতের ঘটনা সব ভুলে যায়। কারো সামনে এসব কথা বললে তোমার অবস্থা আমার মতো হবে বুঝতে পারোনি তাই তো। কাউকে আমার ব্যাপারে কিছু বললে তুমি তোমার মা বাবাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে। বেলকুনীতে চাদর শুকাতে দেওয়া আছে৷ এখন ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে যাও।
ইতি

ছোঁয়া চিরকুটটি পড়ে খুব ভয় পেয়ে যায়৷ সে কি করবে এখন৷ তার প্রাণ ভুমরা মা বাবাকে সে কিছুতেই হারাতে পারবে না৷ ছোঁয়া অদ্ভুত লোকটির কথা মতো নিজেকে শক্ত করে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়।

— একি ছোঁয়া আজ এত তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পরলি? (ছোঁয়ার মা)

— আসলে মা সকাল সকাল আজ ঘুম ভেঙে গেছে৷ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে আমাকে খেতে দাও৷

— একি যে মেয়েকে জোর করে ধরে খাবার খাইয়ে দিতে হয় সে কিনা আজ নিজের হাতে খাবার খেতে চায়৷

— মা বাজে কথা বন্ধ করে খাবার দাও৷

— আমি এখন রুচি বেলছি৷ তুই বরং ফ্রিজ থেকে কিছু নিয়ে খেয়ে নে।

— ওকে মা৷

ছোঁয়া ফ্রিজ থেকে কিছু ফল নিয়ে খায়৷ খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে ফিরে আসে৷ রুমে এসে অভাগ৷ সারা রুম থেকে রজনী গন্ধা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে। কিন্তু কোথাও রজনীগন্ধা ফুল নেই৷ ছোঁয়া সারা রুমে খোঁজতে লাগে কিন্তু কোন ফুল পাই না৷ সে রহস্য জানার জন্য সেই সৌরভ ভেসে আসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার চোখ পড়ে নীল চিরকুটের দিকে। সেই চিরকুট থেকে রজনীগন্ধা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে। অজান্তেই ছোঁয়ার ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হাসি পায়৷

২.
–ছোঁয়া তোর কি হয়েছে এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? ( ছোঁয়ার বান্ধবী রিয়া)

–কই মন খারাপ করে বসে আছি। এই তো হেঁসে হেঁসে কথা বলছি৷

— ছোঁয়া আমি তোর ফ্রেন্ড হয়৷ আমি তোর মনের খবর জানি৷ কি হয়েছে আমাকে বল?


কি করে তোকে বলবো। আজ রাতে আমার সাথে যা হয়েছে। তোকে বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু আমি শিকলে বাঁধা। তোকে কিছু বললে আমার মা বাবার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে৷ ক্ষমা করে দিস আমায়৷


— কি রে কোথায় হারিয়ে যাস?

— কই নাতো?

— কি ভাবছিলি?

— কিছুনা৷

— আমি এতক্ষণ ধরে তোকে ডেকে যাচ্ছি কোন সাড়া দিলি না কেন?

— ভালো লাগেনি তাই।

— চল ফোসকা খাবো৷

— হুম চল৷

— আজ তোর খাওয়ানোর কথা।

— ছোঁয়া আকাশ পাণে চেয়ে কি বলিস?

— হুম আমি টানা ২ দিন তোর ফুসকার দাম দিয়েছি৷

— তাহলে থাক?

— কি থাক😡

— আমার দেহটা আজ কেমন কেমন জানি লাগতেছি৷ আমি আজ খাবো না তুই বরং খা।

— কুত্তী তুই আমার ফুসকার দাম দিবি তোকে খেতে হবে না৷

— ওকে বাবা ফুসকা কি সেটাই তো আমি জানি না৷ আমি তো ফুসকা এই নামটা কোনদিন শুনি নাই৷

— সা* তুই এখন আমাকে ফুসকা না খাওয়ালে তোর ১২ টা বাজিয়ে ছাড়বো।

— এই রে আজ ভুলে ঘড়ি রেখে আসছি৷ তোকে কথা দিচ্ছি আমি এখনই বাসায় যাওয়ার পর ঘড়ির কাটা ১২ টার ঘরে দিব৷ সত্যি বলছি৷

— তুই যদি আজ আমাকে ফুসকা না খাওয়াস তোর সাথে কোন কথা নেই৷

— তাহলে তুই কাল থেকে বোবা হয়ে যাবি৷ চিন্তা করিস না আমিও ইশারায় কথা বলতে পারি।

— তুই যদি আজ সাথে বেইমানি করিস তপেসের কাছ থেকে ১২ প্লেট ফুসকা খাবো৷

— সা* তুই আমার হবু বরের নাম নিস৷ লজ্জা করে না৷ তোর একদিন কি আমার একদিন৷

— তো কি করবো৷ তোর মতো কিপ্টা লোক আমি আর দেখি নি।

— ওই কিপ্টা বলবি না৷ আমি কিপ্টা না৷

— তাহলে তুই কি?

— আমি আমার টাকা সঞ্চয় করি৷ জানিস না অপচয় কারী শয়তানের দাদা। আমি তো ভালা মানুষ। আমি অপচয় কেন করবো। তাও আবার তোর জন্য। যা ভাগাড়ে গিয়ে মর৷

— আমাকে মরতে হবে না৷ ওই দেখ কে এসেছে৷

— দূর বা* আবার কে আসলো।

— তোর ইয়ে৷

— ইয়ে মানে কি? আমি বাসা থেকে ইয়ে করে আসছি🤣

— পিছু তো দেখো?

— ওকে,, পিছু তো দেখলাম।

— ওই শয়তান তপেস এখানে এসেছে তুই বলবি না৷

— আমি কেন বলতে যাবো তুই তো আমার সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছিস৷

— তোকে পরে কোন একদিন দেখে নিব৷

— দেখ তপেস কে খুব কিউট লাগছে৷ গাড়ীর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে কালো সানগ্লাস। যা লাগছে না তোকে বলে বুঝাতে পারবো না৷

— এভার দয়া করে তোর মুখটা বন্ধ রাখ।

— আমি বন্ধ রাখলেই কি? সবার মুখ বন্ধ করে রাখতে পারবি৷

— তোর সাথে আমার কাল ভার্সিটিতে আবার কথা হবে এখন আসছি৷

ছোঁয়া রিয়াকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে চলে যায়৷

৩.
— আপনি এখানে কখন আসলেন?

— এখানে এসেছি তো অনেক আগে৷ কিন্তু তোমার তো কোন খোঁজ নেই৷ (তপেস)

–আসলে রিয়ার সাথে কথা বলছিলাম। আপনি এখানে এসেছেন খেয়াল করি নি৷

–চল আমরা দূরে কোথায় ঘুরে আসি।

— না আজ বাড়িতে যেতে হবে৷

— আমি তোমার বাড়ি থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছি৷

— কি আপনি আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন?

— হুম। কেন কোন সমস্যা?

— না কোন সমস্যা নেই৷ এমনেই বলছিলাম।

— চল আজ নদীর তীরে ঘুরতে যাবো৷

— সত্যি বলছেন (ছোঁয়া নদীর কথা শুনলে নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারে না)

–হুম সত্যি বলছি৷

তপেস ছোঁয়াকে নিয়ে নদীর তীরে নিয়ে আসে৷ ছোঁয়া নিজেকে নদীর তীরে আবিষ্কার করতে পেয়ে মহা খুশি। ছোঁয়া ছোট বাচ্চাদের মতো হাত তুলে উঠে যাচ্ছে।

হঠাৎ করেই তার চোখ পড়ে বালির উপর আঁকা একটা কারুকাজের উপর৷ ছোঁয়া কাছে কাছের কাছে যেতেই অভাগ। কেননা কারুকাজ টা ঠিক তার বিছানায় আজ যে চাদর বিছানো হয়েছে ঠিক তেমন কারুকাজ।

ছোঁয়া কারুকাজের উপর হাত রাখতেই তার কানে সেই মুগ্ধ করা কোকিলের কন্ঠের মতো ভেসে আসলো অদ্ভুত লোকটির কন্ঠ।

— এই মুহুর্তে এই নদীর তীর থেকে চলে যাও৷ এখানে আর কোনদিন আসবে না৷

— কেন?

— আমি যা বলছি তাই৷ এখানে আসবে না মানে আসবে না৷

— আমি তো এখানে অনেক আগে থেকেই আসি৷

–এখানে তোমার বিপদ আছে৷ তপেসের সাথে তোমাকে যেন না দেখি৷

— কে আপনি? আমি আপনাকে ভয় পায়৷

— ভয় পেতে হবে৷

— সাহস থাকলে চোখের সামনে আসেন৷

— সময় হলে ঠিক আসবো৷

–ভিতুর মতো পিছন থেকে আঘাত করেন লজ্জা লাগে না।

— এক মিনিটের মাঝে এখান থেকে চলে যাবে।

— আমি এখান থেকে ১ ঘন্টার মাঝেও চলে যাবো না৷ তোর সাহস থাকলে দেখা৷

— তাহলে দেখো আমার সাহস৷

ছোঁয়া কিছু তরল জাতীয় পদার্থের অনুভব করলো। শুধু তার মুখ দিয়ে তপেস বের হলো আর ছোঁয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেললো৷

তপেস ছোঁয়ার দিকে দৌড়ে এসে।

— ছোঁয়া চোখ খোল? কি হয়েছে তোমার৷

ছোঁয়ার আঙ্গুল গাড়ির দিকে।

— ছোঁয়া তুমি বলতে চাইছো চলে যাবে৷ ঠিক আছে আমরা এখনই চলে যাবো৷

তপেস ছোঁয়াকে কোলে তুলে নেয়৷ গাড়িতে নিয়ে এসে এক হাত দিয়ে আলতু করে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে রাখে। অন্য হাত দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে ছোঁয়াকে বাড়ি পৌঁছে দেয়৷



রাতের বেলা ছোঁয়া আজও ঠিক তেমনই অনুভব করছে,, কিন্তু আজ অদ্ভুত লোকটি খুব রেগে আছে৷ যা তার আচরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে।

চলবে,,,