অনুভবে তুমি পর্ব-০৬

0
409

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_মুগ্ধ_ইসলাম_স্পর্শ
সকালবেলা কলিংবেল বাজানোর শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দেখলাম উপমা দাঁড়িয়ে আছে হাতে বাটি নিয়ে। উপমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখের বিরক্তি উবে গেল। উপমাকে দেখে মনটা কেমন যেন খুশিতে ভরে ওঠে।
বুকে দু’হাত গুজে দিয়ে দরজা হেলান দিয়ে বললাম,
‘- কী ব্যাপার ম্যাডামের আজ আমার বাড়িতে আগমন?
উপমা মুখটা ভেঙচি দিয়ে বলল,
‘- এমন হিরোদের মত ভাব না নিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়াও আমি ভিতরে যাব।
অগত্যা সে আমাকে ঠেলে ভিতরে ঢুকলো৷ ওমনি আমার হাওয়া ফুস করে বেরিয়ে গেল।
‘- তোমার বেডরুম কোনটা?
আমি অসহায় ছেলের মত দেখিয়ে দিলাম। উপমা বাটি নিয়ে চলে গেল আমার রুমে। আমিও তার পিছু পিছু গেলাম। বাটিটা টেবিলের উপর রেখে কোমরে হাত দিয়ে আমাকে আদেশ করল,
‘- যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো৷
বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করছি আর ভাবছি বাপরে এই মহিলা বিয়ের আগেই এভাবে আদেশ করছে বিয়ের পর না জানি কি করে।
‘- কী হলো ব্রাশ করতে এতক্ষণ লাগে?
এই মেয়ে তো দেখি আমাকে সব সময় দৌঁড়ের উপর রাখবে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম। বাসায় আমাকে আদেশ করা হচ্ছে তাই না? একবার চলো থানায় তারপর দেখবে মজা।
ইতিমধ্যেই উপমা খাবার প্লেটে বেড়ে ফেলেছে। তাও আবার আমার পছন্দের ভুনা খিচুড়ি।
আমি খুশি হয়ে বিছানায় বসলাম। প্লেট হাতে নিয়ে খেতে যাব ওমনি উপমা আমার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো৷
‘- তোমার যে হাত কেটেছে এটা আমি জানি। তাই আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আমি ওর দিকে একটা মায়াবী চাহনি নিক্ষেপ করে খেতে শুরু করি৷ মেয়েটা কতো সুন্দর করে খাইয়ে দিচ্ছে। কখনো আবার ঠোঁটের কোণে খাবার আটকে গেলে সেটাকে আলতো করে সরিয়ে দিচ্ছে। এতটা ভালোবাসা আমার কপালে ছিল ❣️। কথাটি সত্যিই “দুখের পরে আসে সুখ “।
‘- এই তুমি কাঁদছো কেন?
উপমার কথায় হুঁশ হয় আমার। চোখের পানিতে গালদুটো ভিজে গেছে৷
‘- খুব ছোটবেলায় এভাবে আদর করে মা খাইয়ে দিত৷ এভাবে কেউ খাইয়ে দেয় না কতকাল হয়ে গেল৷ আজ তোমার এই মায়ের মতো ভালোবাসা দেখে মায়ের কথা মনে পড়ে গেল৷
উপমা প্লেট টা ডান হাতে নিয়ে বাম হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিল।
‘- অতীতের কথা ভেবে কী হবে বলো তো? শুধু শুধু মনটাকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া। এখন ভাববে শুধু বর্তমান নিয়ে। বর্তমানে ভালো থাকলেই ভবিষ্যতে ভালো থাকতে পারবে৷
আমি উপমাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘- এই দুনিয়ায় আমার সকল আপনজন আমায় ছেড়ে গেছে। তুমি কখনো আমায় একলা করে যেও না।
‘- যাওয়ার আগেই নিজের করে নাও।
‘- তাই করতে হবে।
‘- হয়েছে এখন বাকিটুকু খেয়ে নাও।
আবারও খাইয়ে দিচ্ছে উপমা। খুব ভালো লাগছে উপমার হাতে খেতে। যেমন মিষ্টি মেয়ে তেমনি ওর হাতের রান্নাও অতুলনীয়। খাইয়ে দিতে দিতে উপমা বলে ওঠে,
‘- শুনো পুরুষ মানুষ এতটা আবেগী হলে চলে না। পুরুষদের হতে হয় কঠোর। নাহলে যে কেউ মন নিয়ে খেলা করবে। (বাস্তব জীবনে আমিও অনেক আবেগী। তবে রাগ উঠলে আবেগের মায়রে বাপ 🥱)
খাওয়া শেষ করে উপমা ওঠার সময় বলে,
‘- একটা কথা বলি রাগ করবে না তো?
‘- বলো রাগ করব না।
‘- কাল আমি ইচ্ছে করে তোমার হাত কেটে দিয়েছি, যাতে তোমাকে খাইয়ে দিতে পারি হিহিহি।
বলেই উপমা পালাতে চাইলেও পারলো না। ওর বাম হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম। প্লেট টা মেঝেতে পরে গিয়ে ভেঙে একাকার।
‘- আমার সাথে শয়তানি তাই না। এবার দেখাচ্ছি মজা৷
বলেই উপমার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট দুটো নিয়ে গেলাম। একদম কাছাকাছি। দু’জনার নিঃশ্বাস বারি খাচ্ছে ঠোঁটের উপর।
‘- মুগ্ধ কি করছো?
‘- আমার হাত কেটে দেওয়ার মজা বুঝাবো।
‘- প্লিজ কিছু করো না।
আমি কোনো কথা না বলে ওকে কিস করব তখনি উপমা ওর হাত চার ঠোঁটের মাঝখানে নিয়ে আসে। তারপর আমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালাতে গেলেই প্লেটের ভাঙা টুকরো ওর পায়ে বিঁধে যায়। উপমা হালকা “আহ” বলে চিৎকার করে মেঝেতে বসে পরে।
উপমার চিৎকার শুনে আমি ধড়ফড়িয়ে উঠি।
তাড়াতাড়ি উপমার কাছে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলাম। তারপর ফাস্টএইড বক্স এনে মেঝেতে হাঁটি গেড়ে বসি।
কাঁচের অনেকটা অংশই ঢুকে গেছে পায়ে। এটা যদি এমনি এমনি বের করতে যাই তাহলে উপমা পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে চিৎকার করে। তাই প্রথমে কাঁচটাকে ভালো করে ধরলাম। তারপর এক হাত দিয়ে উপমার গলা জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁটদুটো গভীরভাবে ডুবিয়ে দিলাম। উপমা শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। আর ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পরছিল। ওর ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই হ্যাঁচকা টান দিয়ে বের করে ফেললাম কাঁচের টুকরো। ও বুঝতেই পারেনি কখন টানবো। কিন্তু কাঁচটি বের করার সময় ঝাঁকুনি দিয়েছে। এখন মেডিসিন দিয়ে পরিষ্কার করছি। উপমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে এখনো। ওকে শান্তনা দিয়ে বলি,
‘- আরে বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেন? কিচ্ছু হয়নি। এখুনি ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু ওর কান্না থামছেই না।
পরিষ্কার করে ওর কাটা জায়গায় আলতো করে একটা চুম্বন করলাম। তারপর ব্যান্ডেজ করে দিলাম।
‘- এতো ছটফট করো কেন সবসময়?
‘- ভালো লাগে তাই।
উপমা আমার বুকে মাথা দিয়ে বুকে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে।
‘- চলো না বিয়ে করি। আমরা দুজন রিলেশন শুরু করেছি এটা থানায় জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই ভালো বিয়ে করে ফেলি। আর তুমি একটু বেশি রোমান্টিক হচ্ছ। খালি কিস করতে চাও।
‘- হুম আমিও তাই ভাবছি। কিস করার জন্য হলেও একটা বউ চাই।
উপমা আমার বুকে কিল-ঘুষি মারে খানেক৷
দু’দিন পরে থানার সবাইকে জানিয়ে দিলাম আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত। সবাই মিষ্টি খেতে চাইলো। সবার সামনে যখন আমার আর উপমার বিয়ের কথা বলছিলাম তখন উপমা লজ্জায় সবার সামনেই আমার বুকে মুখ লুকিয়েছিল। কিন্তু সে ভুলেই গেছে সে আরও বেশি লজ্জায় পড়ার কাজ করলো। সামনে যে এসপি স্যার দাঁড়িয়ে আছে সেটাও ভুলে গেছে। মেয়েরা এতটা লজ্জাবতী হয়!
‘- এখানে যে আমরাও আছি সেদিকে কি খেয়াল আছে?
এসপি স্যারের বাক্যটি সুন্দর উপমা আরো বেশি লজ্জা পেল। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না আর কিছুক্ষণ থাকলে উপমা লজ্জার ঠেলায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
আমি উপমাকে নিয়ে চলে আসতে যাবো ঠিক তখনই এসপি স্যার আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন,
‘- তোমাদের জন্য শুভকামনা রইল ইয়াং ম্যান।
‘- ধন্যবাদ স্যার। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
‘- আর শোনো ছ’মাস আগে উপমার মা-বাবা দুজনই মারা যায়। যদিও তোমাকে বলার কোন কারণ নেই! তবুও বলছি, মেয়েটাকে কখনও কষ্ট দিও না। কিছুদিন আগে অনেক বড় একটা ধাক্কা সামলিয়েছে৷ এখন এই পৃথিবীতে ওর আপন বলতে শুধুই তুমি।
‘- জ্বি স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমি উপমাকে সবসময় সুখে রাখার চেষ্টা করব।
উত্তর স্বরুপ এসপি স্যার এসে মুচকি হাসি দিয়ে স্থান ত্যাগ করল।
আমি উপমাকে নিয়ে নিজের কেবিনে চলে আসলাম। চেয়ারে বসিয়ে দিলাম।
‘- তুমি খুশি তো?
উপমা আমার কপালে আদর দিয়ে বলে,
‘- অনেক। জানো প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি, সেদিনই ক্রাশ নামক অখাদ্য জিনিস টা খেয়ে ফেলেছিলাম। ভাবছিলাম এতো কিউট, গলুমলু একটা ছেলে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। ভাবছিলাম তোমার সাথে তখনই প্রেম শুরু করতে। কিন্তু পরে যখন শুনলাম তুমি ছ্যাঁকা খেয়ে বেকা হয়ে গেছ তখন আর সাহস পাইনি বলার। কিন্তু ভাগ্য কতটা ভালো থাকলে আবার সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে ফিরে পাওয়া যায়? অবশেষে রসগোল্লা টা আমার জামাই-ই হচ্ছে।
বাপরে প্রশংসার কি বাহার 🥴। একবার কিউট, গলুমলু আবার রসগোল্লাও 😃।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,