অনুভবে তুমি পর্ব-২+৩ | গল্পেরমহল

0
902
golpermohol
Bangla romantic golpo.Bangla new golpo in golpermohol

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_০২+০৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করলাম।দিন না রাত কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।এদিকে মাথাটা কেমন যেনো ভারী ভারী লাগছে।হঠাৎ খেয়াল করলাম এটা তো আমারই রুম।কিন্তু কিভাবে এলাম বাসায়?কে আনলো আমাকে?
আমি তো ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম?

আমি ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামলাম।পা টিপে টিপে দরজার কাছে যেতেই দেখি বাসার সবাই গেস্ট রুমে বসে আলাপ আলোচনা করছে।ভাইয়া জোরে জোরে চিৎকার করছে।বুঝতে পারলাম আমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে।সেজন্য তাড়াতাড়ি করে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

কিছুক্ষন পর রুমে দাদী আসলো।আমার পাশে এসে বসলো।তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো কেমন লাগছে এখন?আমি তখন দাদীর হাত ধরে বললাম,ভাইয়া নিশ্চয় খুব রেগে আছে তাই না?এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও না প্লিজ।

–ওসব চিন্তা বাদ দে এখন।আগে বল হয়েছিলো টা কি?তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি কেনো?

–জানি না আমি।কি যে হয়েছিলো?এই বলে অন্য পাশ হলাম।কিন্তু চোখের সামনে সেই ঘটনায় ভাসতে লাগলো যা আমি নিজের চোখে দেখেছি।ভয়ে বুকঁটা আমার আবার কেঁপে উঠলো।আমি দাদীর হাত টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকলাম।

আমি ভাইয়াকে দেখে যখন এক দৌঁড়ে ভার্সিটির ভিতর প্রবেশ করলাম,তখন ভীষণ হাঁপাচ্ছিলাম।মনে হচ্ছিলো শরীরে একদম জোর নেই।এদিকে আমাকে দেখামাত্র আমার ফ্রেন্ড লিশা হাত ধরে টেনে সাইডে নিয়ে গেলো।আর বললো,
–কি ড্রেস পড়েছিস এটা?হাতে জুতা, ব্যাগ এসবের মানে কি?প্রোগ্রাম এ কেউ এভাবে আসে?
তোকে না বলেছি সুন্দর করে সেজে আসবি!

আমি তখন বললাম,রাখ তোর প্রোগ্রাম।আগে নিজের জীবন বাঁচাই।যে করেই হোক বাসায় যেতে হবে এখনি।
ভাইয়া আসছে ভার্সিটিতে। আমাকে দেখলে ভীষণ রেগে যাবে।
এই বলে আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলাম।পিছন দিক থেকে লিশা চিৎকার করে ডাকতে লাগলো।
এই কই যাচ্ছিস ওদিকে?আজ তো ক্লাস হবে না।

আমি তখন বললাম, ক্লাসে যাচ্ছি না আমি।পিছনের গেট দিয়ে বাসায় চলে যাবো।এই বলে গেটের দিকে চলে গেলাম।আর আমার বান্ধুবীদের বকতে লাগলাম।
শুধুমাত্র এদের জোড়াজুড়ির কারনে আজ ভাইয়ার বারণ সত্ত্বেও ভার্সিটিতে এসেছি।আজ ভার্সিটির বড় ভাইয়েরা পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে একটা প্রোগ্রাম এর আয়োজন করেছে।শুধুমাত্র সেটা দেখার জন্যই এসেছিলাম।কিন্তু ভাইয়া কেনো ভার্সিটিতে এসেছে কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলো না।
কারন ভাইয়া তো তার ফ্রেন্ডদের সাথে বেড়াতে গিয়েছিলো।

ভার্সিটির পিছনের গেট দিয়ে বের হতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। আমি আমার নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।ভয়ে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো আমার।
চার পাঁচজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।প্রত্যেকের হাতে পিস্তল আর সবার মুখ রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিলো।আর দুইজন ছেলে একটা বস্তা টেনে টেনে ডোবার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।বস্তাটা রক্তাক্ত ছিলো।যা দেখে আমার পুরো শরীর স্তব্ধ হয়ে গেলো।

আমি আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলাম না,তাড়াতাড়ি করে আবার ভার্সিটির ভিতর যেতে ধরলাম।

হঠাৎ এক ছেলে আমাকে দেখে ফেললো,সে আমার কাছে এসে বললো,তুমি কে?এখানে কি করো?
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে ধরলাম।

কিন্তু হঠাৎ আরেকজন ছেলে আমার কাছে এসে হাত টেনে ধরে বললো,
ওয়েট?ওয়েট?কই যাচ্ছো?

ছেলেটির এমন ব্যবহার দেখে আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলাম।এভাবে হাত টেনে ধরায় আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।কি করবো এখন বুঝতে পারছিলাম না।
তবে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।

কিন্তু ছেলেটি আমাকে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো,
তাকাও আমার দিকে।আর সত্যি করে বলো।তুমি কি কিছু দেখেছো?

আমি ভয়ে কথা বলতে পারছিলাম না।
তবুও মাথা নাড়লাম,যে কিছু দেখি নি।

তখন তিনি বললেন, মিথ্যা বললে কেনো?
তুমি অবশ্যই দেখেছো।আমি সেই কথা শুনে বললাম,আমার হাত ছাড়ুন প্লিজ।
লাগছে আমার।আমি দেখি নি কিছু।যেতে দিন আমাকে।

–হ্যাঁ যাবেই তো।
তার আগে সত্যি করে বলো কি দেখেছো?

আমি তখন ভয়ে কেঁদে উঠলাম। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,কিছুই দেখি নি আমি।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।

হঠাৎ অন্য আরেকটি ছেলে দৌঁড়ে এলো আর বললো, বায়োডাটা নিয়ে রাখ মেয়েটার।কাউকে কিছু বলে দিলে একদম শেষ করে ফেলবো।

আমি সেই কথা শুনে ভয়ে একদম চুপসে গেলাম।

তখন আরেকটি ছেলে হুংকার দিয়ে বললো,
কি হলো?তাড়াতাড়ি বলো ঠিকানা।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
আমার নাম অতশী।ভাইয়ার নাম অ,,,,,
ভাইয়ার নাম বলতেই হাত ধরা ছেলেটি বললো,শুধু বাড়ির ঠিকানা দাও।এতো বিস্তারিত বলতে হবে না।
আমি ভয়ে বাড়ির ঠিকানা বলে দিলাম।

এতোক্ষনে ছেলেটি আমার হাত ছেড়ে দিলো।আর আমার কানের কাছে এসে বললো,
এই ঘটনা যদি বাহিরের আর কেউ জানতে পারছে তাহলে কিন্তু,,,,,,,,,,,,
বুঝতেই পারছো?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম হুম।
–যাও এখন।
আমি আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলাম না।

আমার পুরো শরীর তখনো কাঁপছে।নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না।তবুও টেনেটুনে ভার্সিটির মাঠ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেলাম।
লিশা বা আমার বাকি কোনো ফ্রেন্ডকেই দেখতে পেলাম না।হঠাৎ মাঠের মধ্যেই ধপাস করে পড়ে গেলাম।
তারপর আর কিছু মনে নাই।

দাদী সেই থেকে আমার পাশেই বসে আছে। কিছুক্ষন পর ভাইয়াও রুমে আসলো।
আমি ভাইয়াকে দেখামাত্র চোখ বন্ধ করলাম।আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম।এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ। আর ভাইয়ার অনুমতি ব্যতীত বাহিরে যাবো না।বড় রকমের শিক্ষা হয়ে গেছে আমার।

ভাইয়াকে দেখামাত্র দাদী বললো,অয়ন ওকে আর কিছু বলিস না।ও তোর ভয়েই আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।যা তুই তোর কাজে যা।

অয়ন দাদীর কথা শুনে বললো,তুমি থামবে দাদী?কে আমাকে ভয় করে?যদি ও বিন্দুমাত্র ভয় করতো তাহলে আমার বারণ সত্ত্বেও ভার্সিটিতে আজ যেতো না।

–থাম দাদু ভাই।ও বুঝতে পারে নি।

–এখানে বোঝাবুঝির কি আছে?আমি বারণ করা সত্ত্বেও কেনো বের হলো বাসা থেকে?কেনো?
যদি আজ ভার্সিটিতে না যেতাম কি হতো তখন?আমার তো ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।

অয়ন ভাইয়া আমাকে শাসাতেই হঠাৎ ভাইয়ার ফোনে কল আসলো।ভাইয়া মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

এই ঘটনার পর আমার বড় রকমের শিক্ষা হলো।কান ধরে তওবা করলাম আর কখনোই ভাইয়ার অনুমতি ব্যাতীত কোথাও বের হবো না।

সেদিন আর ভাইয়া বাসায় ফিরলো না।সেজন্য বাসার সবাই ভীষণ টেনশন করতে লাগলো। বার বার কল দিচ্ছে আম্মু তবুও ভাইয়া রিসিভ করছে না ফোন।
একসময় ভাইয়ার ফোন বন্ধ দেখায়।ফোন বন্ধ থাকায় সবার আরো বেশি টেনশন হতে লাগলো।পরের দিনও ভাইয়া বাসায় ফিরলো না।বাসার সবাই টেনশনে খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।আমি সেজন্য আজ আর ভার্সিটিতে গেলাম না।পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এলো।ভাইয়ার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে আমার।কোনো ক্ষতি হয় নি তো আবার?
কারন বার বার সেই সন্ত্রাসী গুলোর কথা মনে পড়ছিলো।

আমার কিন্তু আব্বু নাই।অনেক আগেই মারা গেছে।
পুরো সংসারের দায়িত্ব ভাইয়ার উপর।সেজন্য ভাইয়ার কথামতোই পুরো সংসার চলে।
সে যা বলবে সবাই সেই ডিসিশনই মেনে নিবে।

দুইদিন পর ভাইয়া ফোন দিলো আম্মুকে।ভাইয়া জানালো তার এক ফ্রেন্ড নিঁখোজ হয়েছে।তাকে খুঁজতে বের হয়েছে সবাই।এজন্য সময় পাই নি বাসায় আসার।
আম্মু তা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।
তাই বলে তুই একটিবার ফোন করে জানাবি না?আমাদের কত টা দুশ্চিন্তা হচ্ছে?ভাইয়া আর একটা কথাও বললো না।কল কেটে দিয়ে আবার ফোন বন্ধ করে রাখলো।

পরের দিন শুনলাম ভাইয়ার বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া গেছে।তবে জীবিত অবস্থায় না।কে জানি মেরে ফেলে বস্তায় করে ডোবায় ফেলে দিয়েছে।

কথাটা শোনামাত্র আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
আমার আর বুঝতে দেরী হলো না সেদিন তাহলে সন্ত্রাসী রা ভাইয়ার বন্ধুকেই মেরে ফেলেছে।আমি ভাইয়াকে সেদিনের ঘটনার কথা কিছু বললাম না।
কারন সন্ত্রাসী দের কাছে আমার ঠিকানা আছে।যদি আবার ভাইয়ার কোনো ক্ষতি করে?
না, না বলা যাবে না কাউকে।

সারাদিন শুধু ঐ ঘটনায় চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।
ভার্সিটিতেও যাই না আর।
সারাক্ষন ঘরের মধ্যেই বসে থাকি।

কিন্তু আজ হঠাৎ ভাইয়া রুমে ঢুকলো আমার।আমাকে বললো,
রেডি হয়ে নে।
ভার্সিটিতে রেখে আসি।

আমি তা শুনে বললাম,যেতে ইচ্ছে করছে না।কয়েকদিন পরে যাই।

–কেনো কি হয়েছে?
শরীর খারাপ?
এই বলে ভাইয়া আমার কপালে হাত দিলো আর বললো আচ্ছা ঠিক আছে।তোর যা ভালো মনে হয়।
এই বলে ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আমি জানালা দিয়ে ভাইয়ার যাওয়া দেখতে লাগলাম।আজও ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা এসেছে।
দূর থেকে কারো চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
আমি জানালার রেলিং ধরে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম।

হঠাৎ কে যেনো কলিং বেল বাজাতে লাগলো।
এই সময়ে আবার কে এলো?আমি দরজা খুলে দেওয়ার আগেই আম্মু খুলে দিলো।আর একটা পার্সেল রিসিভ করলো। আমি ভাবলাম আম্মু কিছু অর্ডার করেছে।

কিন্তু আম্মু পার্সেল টা হাতে নিয়ে বকতে বকতে আমার কাছে এগিয়ে এলো।

–তুই আজও অনলাইনে অর্ডার করেছিস?ডেইলি ডেইলি কি এতো কিনিস?এই বলে আম্মু পার্সেল টা আমার হাতে দিলো।

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।পার্সেল টা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখতে লাগলাম।

হ্যাঁ আমার নামেই তো এসেছে।
ইংরেজি বড় অক্ষরের লেখা অতশী।

কিন্তু আমি তো আজ কোনো অর্ডার দেই নি?তাহলে কে পাঠালো?

#চলবে,,,,,
ভালো লাগলে অবশ্যই রেসপন্স করবে।

#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_০৩
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আমি ভয়ে পার্সেল টা আর খুললাম না।
কে জানে কি আছে এতে?
যদি আবার বোম হয়?

বাসার কাউকে কি বলবো?
না,না আগেই বলা যাবে না।
এমনও তো হতে পারে ভুল করে এসেছে।
থাক রেখে দেই।
এই ভেবে পার্সেল টা আলমারির মধ্যে রেখে দিলাম।

কিন্তু সারাদিন এই টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।
রাতে কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না।
কি আছে এই বক্সে?
কে পাঠিয়েছে?

রাতে অনেক কষ্টে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু ভয়ানক একটা স্বপ্ন দেখে মাঝরাতে ঘুম ভেংগে গেলো।
আমি এক লাফে বিছানা থেকে উঠলাম।
গলা শুকে একদম কাঠ হয়ে গেছে।
সেজন্য পানি খাওয়ার জন্য বিছানা থেকে নামলাম।
কিন্তু আমার আর কিচেনে যাওয়ার সাহস হলো না।
কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে।
সেজন্য দৌঁড়ে আবার বিছানায় চলে এলাম।
আর কম্বল মুড়ি দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম।
সেদিনের ঘটনার পর থেকে একটুতেই ভয় পাই।
আগের চেয়ে অনেক দূর্বল হয়ে গেছি।

পরের দিন আম্মুর সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলাম।
কারন ভাইয়া আজ ভীষণ ব্যস্ত আছে।
বাসা থেকে বের হতেই পাশের বাসার আন্টি এগিয়ে আসলো।
তার হাতে ছিলো সেই পার্সেল টা।
যেটা আমি ভয় পেয়ে কাল ফেলে দিয়েছিলায়াম।

আন্টির হাতে পার্সেল টা দেখামাত্র জিহবায় একটা কামড় দিলাম।
কি করে ভুলটা করলাম?
পার্সেলের গায়ে লেখা “অতশী” নামটা তুলে ফেলতে ভুলে গেছি।

আন্টি আমাকে দেখামাত্র বললো, অতশী মা এটা তোমার না?

আমি আন্টিকে কিছু বলার সুযোগই দিলাম না।
তাড়াতাড়ি করে ওনার হাত থেকে পার্সেল টা নিয়ে ব্যাগে রাখলাম।
আর আম্মুকে বললাম,তাড়াতাড়ি চলো।
দেরী হয়ে যাচ্ছে।

আন্টি হা করে তাকিয়ে রইলো।
হয় তো ভেবেছে পার্সেল টা কুড়িয়ে এনে দিলাম,একটা ধন্যবাদ ও দিলো না।
আমি তখন পিছন ফিরে বললাম,
আন্টি আজ একটু তাড়া আছে।
পরে কথা বলছি।

এদিকে আম্মু ভেবেছে আমি আজও অর্ডার দিয়েছি।
সেজন্য আম্মু আমাকে বকা শুরু করে দিয়েছে।
তুই আজও অর্ডার দিয়েছিস?
কালকেই না দিয়েছিলি?
দুই এক দিন পর পর কি এতো অর্ডার দেস?

এখন আম্মুরে আমি কি করে বোঝায় এটা সেই কালকের পার্সেলই।
বুদ্ধি করে বললাম,
আম্মু আমার কিছু পার্সোনাল জিনিস কেনার ছিলো।
মার্কেটে যেতে ইচ্ছে করছিলো না।
সেজন্য অনলাইনে অর্ডার করেছিলাম।

–সবকিছু কি অনলাইনেই কিনতে হবে?
যেসব জিনিস বাজারেই পাওয়া যায় সেগুলো কেনো অর্ডার করতে গিয়েছিস?

–না মানে খুব এমারজেন্সি ছিলো আম্মু।
আমার বাহিরে যেরে ইচ্ছে করছিলো না তাই,,,,,,,,,

–তোর ভাইয়াকে বললেই তো হতো!

আমি তখন বললাম,
বললাম তো পার্সোনাল জিনিস।
সব কিছু কি ভাইয়ার দ্বারা আনা সম্ভব?

আম্মু সেই কথা শুনে বললো,
আমাকে বললেও তো পারতিস?
আমি তো কোন না কোন প্রয়োজনে মার্কেট এ সবসময় যাই।

আমি এবার আর কোনো উত্তর দিলাম না।
কারন কথা বললেই আম্মু আরো বেশি প্রশ্ন করবে।
সেজন্য চুপ করে থাকলাম।
এদিকে আম্মু একা একা বকর বকর করেই যাচ্ছে।
আমি শুধু অপেক্ষা করছি কখন কলেজ বের হয়?

কলেজের কাছাকাছি যেতেই দেখি পুরো কলেজ জুড়ে শুধু ভাইয়ার বন্ধু তমালের ছবি।
কিছু কিছু ছবি ভালো থাকলেও বেশিরভাগই ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলছে।
তমাল হত্যার বিচার চেয়ে এই কয়েকদিন অনেক মানববন্ধনও হয়েছে।
সেজন্য ভাইয়া কলেজে আসতে দেয় নি আমাকে।
এখন মোটামুটি পরিবেশ টা শান্ত হয়েছে।
ভাইয়ার বন্ধুকে আগে কখনোই দেখি নি।
এই প্রথমবার দেখলাম পোস্টারে।

আম্মু আমাকে গেটে রেখেই চলে গেলো।
যাওয়ার সময় বলে গেলো তোর ভাইয়া না আসা পর্যন্ত বের হবি না।
খবরদার একা একা আসবি না বাসায়।
আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
তুমি সাবধানে যেও।

অনেকদিন পর আমি কলেজে আসলাম।
আমাকে দেখামাত্র সবাই এগিয়ে আসলো।
আমার কোনো ছেলে ফ্রেন্ড ছিলো না।
কারন ভাইয়ার ভয়ে আমি কোনো ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বলি না।
আমরা ছিলাম চারবান্ধুবী।
নেহা,লিশা আর সুইটি।

ক্লাস শেষে সবাই কলেজের ক্যান্টিনে গেলাম।
আর সবার জন্য এক প্লেট করে ফুঁচকা অর্ডার করলাম।
সবাই অনেক হাসিঠাট্টা করছে।
নানা ধরনের গল্পও করছে।
বাট আমার মুখে কোনো হাসি ছিলো না।
আমি পার্সেল টার কথা ভাবছিলাম।
আর ভাবছিলাম সেদিনের ঘটনা।
কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?
কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

খাবারের বিল দিতে গিয়ে লিশা বক্স টা দেখে ফেলে।
আর জিজ্ঞেস করে দোস্ত এটা কিসের বক্স?

আমি তা শুনে চমকে উঠলাম।
আর লিশার হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু লিশা সেটা কিছুতেই দিলো না।

এদিকে লিশার হাত থেকে বক্সটা নেহা আবার নিলো।
সে হাসতে হাসতে বললো তলে তলে এতোদূর?
কে গিফট দিয়েছে সত্যি করে বল?
এই বলে নেহা গিফটা খুলতে ধরলো।

আমার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।
ভিতরে যদি আবার খারাপ কিছু থাকে!
এদের কে তো বোঝানোও যাচ্ছে না।
আর এরা আমার কথা শুনলে তো?

আমি তখন বললাম, এই প্লিজ তোরা বাড়াবাড়ি করিস না।
আমি নিজেও জানি না কে দিয়েছে এটা?
আর ভিতরে কি আছে?

সুইটি সেই কথা শুনে বললো, ধরা পড়ে এখন বাহানা করছিস?
তাহলে তোর কাছে এই বক্স আসলো কিভাবে?
আমরা দেখবোই কি আছে এতে?
এই বলে ওরা সবাই মিলে ক্যান্টিনের মধ্যেই বক্স টা ওপেন করলো।

ওদের এমন দুষ্টামি দেখে আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিলো।
আমি রাগ করে উঠে যেতে ধরলাম।
হঠাৎ নেহা তার মিষ্টি কন্ঠে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলো।

❝মনের নীল খামে
এই চিরকুট দিলাম তোমার নামে
তুমি পড়ে নিও গোপনে
একদিন তোমায় নিজের করে পাবো আমার এই জীবনে❞

❝ওহে প্রিয়তমা!
তোমার রুপের নেই যে তুলনা!
তুমি যে অপরুপা!
সেজন্যই যায় না ভোলা!
মায়াবি তোমার আঁখি!
আর পাগল করা মুখের হাসি!
সেজন্যই বোধ হয় রোজ রোজ নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ি!

কবিতাটি শুনে ওরা সবাই হাসাহাসি করছে।
আমি সেজন্য আবার এগিয়ে এলাম।
আর চিরকুট টা নেহার হাত থেকে কেড়ে নিলাম।
আমি নিজেও পড়লাম।
একবার নয় দুইবার নয় বার বার পড়লাম।
আর ভাবতে লাগলাম কে পাঠিয়েছে এই চিরকুট?
এমন আবেগ দিয়ে কে লিখেছে আমার জন্য?

নেহা হঠাৎ একটা চকলেট আমার মুখে পুরে দিলো আর একটা গোলাপ ফুল কানে নিয়ে বললো,
এতোদূর গিয়েছিস?
আর আমরা কিছুই জানি না?
যা তোর সাথে কোনো কথা নাই আমাদের।
এই বলে একটা চকলেট বক্স আর কিছু ফুল হাতে দিলো যেগুলো এই বক্সের মধ্যে ছিলো।
ফুলগুলো কিছুটা শুকিয়ে গেছে।
তবে খুব সুন্দর ছিলো।
একদম গাঢ় খয়েরী কালারের গোলাপ।

আমি তখন চিরকুট টা ভাজ করে নেহার হাতে দিলাম।
চকলেট বক্স দিলাম লিশার হাতে।
আর ফুলগুলো দিলাম সুইটিকে।
তারপর বললাম,
সব তোদের কাছেই রাখ।
এসবের কোনো প্রয়োজন নেই আমার।
যেখানে আমি নিজেই জানি না কে পাঠিয়েছে এগুলো, সেখানে তোরা যা নয় তাই ভাবছিস?
তোরা এটা ভাবলি কি করে?
আমার ভাইকে তোরা চিনিস না?

সুইটি তখন বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।
রাগ করিস না।
তোর কথা বাদ দে।
ধরলাম তুই কিছু জানিস না।
কিন্তু যে এগুলো পাঠিয়েছে সে তো তোকে পছন্দ করে।
তোকে অনেক ভালোবাসে।
কি করবি এখন?

–জানি না।

লিশা তখন বললো, ছেলেটি যদি তোর সামনে এসে দাঁড়ায়?
সবার সামনে প্রপোজ করে তখন কি করবি?

আমি এবার চুপচাপ থাকলাম।
কারন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
শুধু মনে মনে প্রার্থনা করলাম এমন ঘটনা যেনো না ঘটে।
তাহলে সেই ছেলের অবস্থা তো খারাপ হবে হবেই সাথে আমারও খবর আছে।

আমার বান্ধুবীরা এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে ভীষণ আনন্দ করছিলো।
আর জোরে জোরে হাসিঠাট্টা করছিলো।

হঠাৎ পাশের বেঞ্চ থেকে একদল ছেলে জোরে করে বললো,
স্টপ।
এতো জোরে কথা বলছো কেনো তোমরা?
ভদ্রতা শেখো নি?
এটা ক্যান্টিন কোনো মাছের বাজার না।

আমরা তা শুনে সবাই পিছন ফিরে তাকালাম।
ওনারা সবাই ভার্সিটির বড় ভাই ছিলেন।
আর সাথে আছেন আমাদের ভার্সিটির ছাত্রনেতা আহসান।
আমরা ওনাদের খেয়ালই করি নি।
আমি শুধু একবার তাকিয়েছি তাতেই কেমন যেনো বুকটা ধক করে উঠলো।
আর দ্বিতীয় বার তাকানোর সাহস হলো না।
কারন চার পাঁচজন ছেলেকে একসাথে দেখলেই আমার এখন ভীষণ ভয় করে।
সেদিনের ওই সন্ত্রাসী গুলোর কথা মনে পড়ে।

আমাদের ভার্সিটিতে ছাত্রদলের নেতা হলো আহসান।
আর আহসানের সাথে সবসময় এক ঝাঁক ছেলেকে দেখা যায়।

ভাইয়ার বন্ধু তমাল ছিলো বিপক্ষ দলের।
ভাইয়া আমাদের ভার্সিটিতে না পড়লেও তমালের সাথে তার অনেক ভালো বন্ধুত্ব ছিলো।
তমাল মারা যাওয়ার পর অনেকেই আহসান কে দায়ী করছে।
কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে আহসান কে কেউ কিছু বলছে না।
এদিকে আমার মনেও প্রচন্ড ভয়।
সাহস করে ভাইয়াকে এখন পর্যন্ত কিছুই বলি নি।
তাছাড়া আমি নিজেও তো জানি না সেদিনের ছেলেগুলো আসলে কে ছিলো?
হঠাৎ মনে হলো যদি আবার এরাই সেই সন্ত্রাস হয়, এরা তো আমাকে দেখেছে সেদিন।
যদি চিনতে পারে?
না,না আর এখানে থাকা যাবে না।
এই ভেবে আমি তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে উঠে গেলাম।
আমার দেখাদেখি আমার ফ্রেন্ডরাও উঠে এলো।
আমরা সবাই সোজা ক্লাস রুমের দিকে চলে গেলাম।

কিন্তু হঠাৎ নেহা বললো,
এই একটা তো ভুল হয়ে গেলো?

–কি ভুল?

–চিরকুট টা তো ক্যান্টিনেই রেখে এসেছি।

আমি তখন বললাম কি করেছিস এটা?
ঐ ভাইগুলোর হাতে গেলে কি হবে?

নেহা তখন বললো চিরকুটে তো তোর নাম লেখা নাই।
কিছুই হবে না।

সুইটি তখন নেহার মাথায় একটা চড় দিয়ে বললো,চিরকুটে নাম লেখা নাই তো কি হয়েছে?
বক্সটাও তো ওখানেই রেখে এসেছি।
বক্সটাতে তো বড় করে লেখা “অতশী”

আমি সেই কথা শুনে আর কারো অপেক্ষায় না থেকে দৌঁড়ে চলে গেলাম ক্যান্টিনে।

#চলবে,,,