অনুর উপাখ্যান পর্ব-১২

0
2117

গল্প : অনুর উপাখ্যান
পর্ব :১২

দুই জোড়া চোখ শাশুড়ি মায়ের দিকে অপলক চেয়ে আছে । ডাক্তারদের শত চেষ্টার পরও কিছুই করা গেল না । মারুফ হাত দিয়ে নিজের কপাল চাপড়ে কাঁদছে । অনু ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করছে বার বার কি হয়েছে ? মারুফ অনুকে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করছে । অনুর যেনো কোনো দিকেই খেয়াল নেই ! চোখের পলক পড়ার আগেই সব শেষ হয়ে গেল ! জীবনে এই প্রথম অনু কারো মৃত্যু চোখের সামনে দেখল । যাকে সে একটা বাচ্চার মতো করে এতদিন আদর যত্ন করেছে, সে আজ নেই ! এটা মনে পড়তেই অনু হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল । আইসিইউর বাহিরে সীমা দাড়িয়ে ছিল । ভাই,ভাবির কান্না দেখেই বুঝে গেছে সে মা আর নেই ।

মায়ের লাশটা আইসিইউ থেকে বের করতেই তিন জনেই ঝাপিয়ে পড়ল মায়ের বুকে ।

— ওমা তুমি যাইয়ো না । তুমি তাকাও একটু । মাগো তাকাও তুমি ।

সীমাকে জড়িয়ে ধরে অনু কেঁদেই চলছে । মারুফ মাকে নেয়ার জন্য গাড়ী ঠিক করতে গেছে । সাথে কোনো পুরুষ লোক নেই ভেবে মাকে লাশের ঘরে নিয়ে যাচ্ছিল এক লোক ।

— এ্যাই খবরদার ! খাট ছাড়েন বলছি । কোথায় নিচ্ছেন উনাকে ? কে আপনাকে অনুমতি দিল নেয়ার ?

— মারা গেছে লাশের ঘরে নিয়া রাখি, যখন নিবেন নিয়া যাইয়েন ।

— কেনো মাকে লাশের ঘরে দিব ? আমাদেরকে ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন । এখনই আমারা চলে যাব ।

— আইচ্ছা ঘর থাইক্কা নিবেন সমস্যা নাই ।

— ঐ অসভ্য কোথাকার ! তোরে বলছি না খাট ছাড়তে ? হাত সরা বলছি ।
কোনো মেয়ের এমন ভয়ংকর রুপ মনে হয় সে আগে কখনো দেখেনি ।লোকটি মায়ের খাট ছেড়ে দিয়ে কেটে পড়ল । অনুর চিৎকারে এরই মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে । অনু আর পারছিল না সহ্য করতে । চিৎকার করে কাঁদতে লাগল । সীমা বিরতীহীন ভাবে কেঁদেই চলছে । ওর যেনো দুনিয়ার কোনো হুস নেই ।

গাড়ি ছুটছে বাসার দিকে । নিহানকে আপুর বাসা থেকে তুলে নিয়ে মারুফ বড় আপুকে বলল বাড়িতে ফোন করে যেনো জানিয়ে দেয়, মাকে নিয়ে বাসায় আসছি আমরা ।

ছোট নিহান সবার কান্না দেখে ভয় পাচ্ছে । অনু চেষ্টা করছে ছেলেকে ঘুম পাড়াতে । ছেলে বার বার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আর ঠোঁট উল্টে কাঁদে । ওর কান্না দেখে সবার কান্নার বেগ যেনো আরও বেড়ে গেছে ।

বাসার সামনে গাড়ি থামতেই লীমার চিৎকার কানে এলো । পুরো বাড়ি মানুষে ভরে গেছে ।

— অনু, মার দাফনের লাইগা টেকা লাগব । কিন্তু, আমার কাছে তো টেকা নাই । কত দিন ফার্মে যাই নাই, টেকা আনা ও হয় নাই । চিন্তা করতাছি কার কাছে ধার চামু ?
লীমা, সীমা সবই শুনল । কিন্তু, কেউ কিছু বলল না ।

— নিহানের আব্বু, আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? মায়ের দাফন করবেন টাকা লোন করে !

— তো কী করতাম ? আমার কাছে তো টেকা নাই ।

— আমার কাছে আছে । দশ হাজার টাকায় হবে না ? আমার কাছে দশ হাজার টাকাই আছে ।এটা নিয়ে সব ব্যবস্হা করেন ।

— হ অইবো। কিন্তু, তুমি এত টেকা পাইলা কই ?

— জমিয়েছি । আপনি তো আমাকে কখনো টাকা দেন না । যদি দিতেন তবে আরও দিতে পারতাম ।

মারুফ অবাক হয়ে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । বাসায় মাঝে মাঝে রান্না ঘরের টুকটাক কেনার লাইগ্যা একশ টেকা কইরা দিত সে । একশ টেকার বেশি টেকা তো তার হাতে উঠেনি কখনো অনুর লাইগ্যা । সেইখান থাইক্যা এত টেকা জমাইছে সে ! বউডা আমার আসলেই লক্ষী অনেক ।

বন্যার কারনে ফরিদপুর থেকে ঝুমা আপা আসতে পারে নি । শাশুড়ি মাকে দাফন করা শেষ করে সবাই ফিরে এসেছে । মায়ের ঘরটা খালি পড়ে আছে । ঐ রুমের দিকে গেলে ঠেলে কান্না আসে । সবাই অজু করে মায়ের জন্য সালাত আদায় করছে , দোয়া পড়ছে । আশে পাশের বাড়ি থেকে, আত্মীয়ের বাড়ি থেকে অনেক খাবার দিয়ে গেছে । অনু; লীমা, সীমা মঈনকে মাথা হাতিয়ে খেতে বসিয়েছে । মানুষ যে কতটা অসহায় তা এ মুহূর্তে অনু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে । যে মা জন্ম দিয়েছেন, আর কখনও সেই মায়ের মুখটা দেখতে পাবে না কেউ ! এটা জেনেও কেউ কিছু করতে পারছে না । তারপর ও সবাই নিরবে খাচ্ছে । কারণ, এ খাওয়া তো বাঁচার জন্য খাওয়া । যদি কারো জন্য মরে যাওয়া যেতো, তবে আর কেউ খাবার মুখেই তুলতো না ।

মঈন সব সময় মন খারাপ করে বসে থাকে । ওর মুখের দিকে তাকালে অনুর শুধু কান্না পায় । অনুর কাছে মনেই হয় না যে, মঈন বয়সে তার চেয়ে ভালোই বড় । বরং মনে হয় মঈন মা হারা এতিম একটা ছেলে । যার একটু আশ্রয় দরকার ।

— মঈন ভাই আমার, মন খারাপ করো না । মা নেই তো কি হয়েছে ? আমি তো আছি । তোমার যখন যা লাগে আমাকে বলবা । আমি যতদিন বেঁচে আছি তোমার কোনো চিন্তা নেই । মা থাকলে তোমার ভবিষ্যতের জন্য যা যা করতেন ; আমি ও তাই করব। তোমার ভাইকে দিয়ে সব করাবো তোমার জন্য । প্লিজ একটু স্বাভাবিক হও ।

— আমি ঠিক আছি ভাবি, আপনে চিন্তা কইরেন না । আমনের নিজের দিকে খেয়াল রাখেন । অনেক কষ্ট করলেন আমনে এত দিন ।

— থাক, আমার কোনো আফসোস নেই তাতে । আমি চাই সবাই ভালো থাকো । তোমার যখন যা খেতে মন চায় আমাকে বলবা কিন্তু।

— জি ভাবি বলব নে ।

এক সপ্তাহ পর ঝুমা আপা আসলেন হঠাৎ করে । উনাকে জানানোই হয়নি মা যে নেই । বাসায় এসে যখন জানতে পারলেন তখন আর আপাকে সামলানো যাচ্ছিল না । পুরো বাড়িতে আবার যেনো শোকের ছায়া নেমেছে । আপা পাগলের মতো আচরণ করছিলেন । অনু দিশেহারা হয়ে একটা ঘুমের ট্যাবলেট শরবতের মধ্যে মিশিয়ে আপাকে খাইয়ে দিলো । কিছুক্ষণ পর আপা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লেন । এখন যদি আপা একটু স্বাভাবিক হোন, সবাই এ আশায় বসে আছে ।

মানুষের জীবনটা কত বিচিত্র ! কত সহজে সব কিছু মানিয়ে নিতে পারে সে । মনের মধ্যে পাথর বেঁধে সংসারে দিব্যি জীবনযাপন করতে পারে । এটা বুঝি মহান আল্লাহর তার বান্দার প্রতি বিশাল এক অনুগ্রহ । এ অনুগ্রহ যদি আল্লাহ না করতেন, তবে মানুষ প্রিয়জন কে হারিয়ে পাগল হয়ে ঘুরত। সংসারে আর টিকে থাকতে পারত না । আমাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না । সবাই নিজ নিজ কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করছে । ঝুমা আপা তার সংসারে ফিরে গেছেন । লীমা বেশির ভাগ সময় সীমার বাসায় থাকে । মঈন সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকে । মারুফ তার ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত । মা থাকতে দুপুরে বাসায় খেতে আসতো; এখন আর আসে না । এখন ম্যানেজার সাইকেলে করে এসে খাবার নিয়ে যায় ।আর অনু ? অনুর জীবন সেই আগের মতোই । সংসার সামলানো , নিহানের যত্ন নেয়া ।

— মামি, ও মামি দ্যাহেন কে জানি আইছে ।আমনেরে ডাকে । রিনা গেটের সামনে থেকে অনুকে ডাকছে ।

— কে এসেছে রিনা ? একটু দাঁড়াতে বলো ।আসছি আমি ।

ওড়নাটা সুন্দর করে মাথায় দিয়ে অনু ঘর থেকে বের হলো । গিয়ে দেখে কালো করে, নরমাল চেহারার একটা মেয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছে ।

— আসসালামু আলাইকুম । স্যরি, আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না । কে আপনি ? আর কাকে চাচ্ছেন ?

— আপনি মিসেস মারুফ ?

— হ্যাঁ, কেনো ?

— আমি আসলে মারুফের কাছে এসেছি ।

— নিহানের আব্বু তো বাসায় নেই । রাতে ফিরবে ।
— সমস্যা নেই । আপনি শুধু বলবেন রোজি এসেছিল, তাহলেই চিনবে । আর এই কাগজ টা দিবেন । আসি তাহলে ।

— আচ্ছা দিব, আপনি ভিতরে আসুন । এভাবে বাহির থেকে চলে যাবেন ?

— না, আজ বসবো না । আসি এখন ।

— ওকে, আল্লাহ্ হাফেজ ।

অনু চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগল : “স্যারের সাথে কথা হয়েছে আমার, কাজটা করতে রাজি আমি ।স্যার বলছে দেখা করতে কাল ।— রোজি”

— কি এইটা মামি ? এই বেডি ক্যাডা ? আমনের দিকে কেমতে যে চাইয়াছিল !

— জানি না । দেখি তোমার মামা আসুক ।

রাতে মারুফ আসতেই অনু সকালের ঘটনা বলল। মারুফের হাতে চিরকুট টা দিলো ।চিরকুট পড়েই মারুফ একটা বিজয়ের হাসি দিলো যেনো । সেই হাসি অনুর চোখ এড়াতে পারে নি ।

— এই রোজিটা কে ? আর কী কাজের কথা মিন করেছে সে ? আপনি তারে কীভাবে চিনেন ?

— আমাদের স্কুলের স্যার বলছিল ওর জন্য একটা চাকরি ঠিক করে দিতে । হেই বিষয়ে মনে হয় যাইতে কইছে ।

— আপনি চাকরী কীভাবে দিবেন ?

— তাই তো, আমি কেমতে দিমু ? যাই স্যাররে কইয়্যা আহি কাইলকা ।

— তাই করেন , আমার এসব পছন্দ না ।

— বুঝতাম পারছি ।

একটা দিন ও অনু শান্তি মতো নামাজ আদায় করতে পারে না । যখন ই নামাজে দাঁড়ায়, তখনই ম্যানেজার নুরুল আসে মারুফের ভাত নিতে । অনু চার রাকাত সুন্নত পড়ে, জায়নামাজ একটু ভাঁজ করে উঠে যায় খাবার দেয়ার জন্য । আজ তাই অনু অপেক্ষা করছে নুরুলের জন্য । কিন্তু, আসছে না । বাধ্য হয়ে অনু নামজে দাঁড়ালো ।

— কী ? আইজক্যা এত দেরি করলেন ক্যা ? আমনের লাইগা মামি কতক্ষণ অপেক্ষা করছে ! যেই নামাজে দাঁড়াইছে;অমনি আসছেন আমনে ।

— কি করতাম ? এত কাম থাহে যে সময় বাইর করতে পারি না । রিনা ম্যাডাম কই ? একটু দরকার ছিল ।

— মামি নামাজ পড়ে । দাঁড়ান নামাজ শেষ হোক তাইলে ।

— রিনা, নুরুল কে ড্রয়িং রুমে বসতে দাও । আমি আসছি ।

বাটিতে খাবার রেডি করে নিয়ে অনু ড্রয়িং রুমে গেল ।

— কি ব্যপার কেমন আছেন আপনি ? কিছু বলতে চাচ্ছেন ? বলেন সমস্যা নেই ।

— ম্যাডাম, আমার অনেক কষ্ট অয় । আমি মানতে পারতেছিনা । প্রতিদিন যহনই এইহানে আসি,দেহি আমনে নামাজ পড়েন । আমনের মতো মানুষ গরো থাকতে, স্যারের এমন কাম করা উচিত না । এই সব বালা লাগে না আমার ।

— মানে কি নুরুল ? ক্লিয়ার করে বলেন তো ।

— ফার্মে রোজ স্যারের বন্ধু কালাম হোন্ডা কইরা এক বেডিরে নিয়া আহে । হ্যাসে দোতলাত উইঠা ঘন্টার পর ঘন্টা থাহে ।

— আপনের স্যার কই থাকে তখন ?

— স্যার তাগো লগেই থাহে বেশি সময়, আবার নিচে ও নামে কাজের লাইগা ।

— কত দিন ধরে আসে ? আর মেয়েটা দেখতে কেমন ? আপনি দেখছেন ?

— এক মাস অইবো । বেডি সুন্দর না বেশি ।

— হুম বুঝলাম । আমি কি আপনার কথা মারুফকে বলব ? আপনি যে আমাকে বলে দিছেন ?

— হ কইয়েন, সমস্যা নাই । আমারে খেদায় দিলে দিব । কাজের তো অভাব নাই ।

— না, আপনার কাজ যাবে না । আমি সেই ভাবেই বলব । চিন্তা করবেন না । এখন যান আপনি, দেড়ি হয়ে যাচ্ছে ।

অনুর বুঝতে আর বাকি রইল না মহিলাটা কে ? সেদিনের সেই রোজি হবে নিশ্চিত আমি । ঐ মহিলাকে কালাম ভাই ফার্মে নিয়ে খারাপ কাজ করে ! কালাম ভাইয়ের তো বউ বাচ্চা আছে । মারুফের অনেক আগেই সে বিয়ে করেছে ।

মঈন, লীমা খেয়াল করছে অনুর মুখ ভার । মনটা যে খুব খারাপ তা বুঝাই যাচ্ছে । বেচারি সারাটা দিন সংসারের সবকিছু করে । মায়ের অভাব বুঝতেই দেয় না আমাদের !

— কি অইছে ভাবি ? মন খারাপ ক্যান ?

— কিছু না । এমনি ভালো লাগছে না ।

— আমনের মন খারাপ দেখলে ভালো লাগে না কিছু । আমি আরও কাইলকা খিচুড়ি রানতে কইতাম। খিচুড়ি খাইতে মন চাইছে ।

— খিচুড়ি খাবা ? ঠিক আছে রান্না করে দিব কাল, সমস্যা কি ? অনু মুচকি হেসে বলল ।

— আমনের যে মন খারাপ ?

— তাতে কি ? তোমার উপর তো কোনো রাগ নেই আমার । চিন্তা কইরো না খিচুড়ি রাঁধবো তোমার জন্য ।

— বুঝছি রাগটা কার উপর । তবে তো ভাইয়ের কপালে খিচুড়ি জুটবে না ।

— হুম, তোমার ভাইরে খিচুড়ি দিব না,বিষ দিব খেতে । বুঝেছো ?

অনুর কথা শুনে মঈন, লীমা দু’জনই হাসছে । অনু ও যোগ দিলো ওদের সাথে । মনে মনে চিন্তা করছে আসুক আজকে বাসায় । বেটা বুড়ো হয়ে গেছে তাও জ্ঞান হয় না !

— কি গো তোমার মুখ কালা ক্যা ?

— আগে ভাত খান, পরে বলছি ।

— আগে বললে কি অয় ?

অনু চোখ বড় করে তাকাতেই মারুফ বুঝল কিছু একটা অইছে । আল্লাহই জানে অনু কি সব জানতে পারছে কিনা ?
সবাই এক সাথে খাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে গেল ঘুমুতে ।

— এখন কও কি অইছে তোমার ?

— কালামের সাথে ঐ মহিলাটা কে ? যে রোজ ফার্মে আসে ?

— কোন কালাম ? কোন মহিলা ?

— এ্যাই চুপ ! একটুও মিথ্যা বলবেন না । আপনি জানেন না ? কোন কালাম ? আপনার ঐ হারামি বন্ধুটা কোন সাহসে ফার্মে মেয়ে নিয়ে আসে ? আর আপনি কি করেন তার সাথে ? ঐ মহিলার নাম রোজি না ?

— তোমারে কে কইছে এগুলান ?

— তা আপনার কি দরকার ? আপনার কি ধারনা আশে পাশের মানুষ চোখ বন্ধ করে থাকে ?

— হুনো , ঐ টা কালামের বান্ধবী রোজি ।

— ছি: আপনার লজ্জা করে না এ গুলো বলতে ? যার ঘরে বউ আর দু’টো বাচ্চা আছে তার আবার বান্ধবী লাগে ? আপনার চোখের সামনে পাপ করে, আর আপনি তারে সাহায্য করেন ? শোনেন, আজকের পরে যদি আমি শুনতে পাই ঐ মহিলা আমার ফার্মে পা দিয়েছে;তবে আপনার কপালে দু:খ আছে । আর আপনার মনে কি একটু আল্লাহর ভয় নেই ? যেখান থেকে আমাদের রিজিক আসে, সেখানে এই পাপ আপনি কীভাবে করতে দিলেন ?

— হ, ঠিক কইছো তুমি । আমি না কইরা দিমু নে কালাম রে ।

— শুধু তাই না , কালামরে বলবেন সে যেনো আমার সামনে না পড়ে । ওরে দেখলেই আমি জুতা পেটা করব । হারামি কোথাকার !

মারুফ মনে মনে খুশি হয় অনেক । তার মানে ?অনু বুঝতেই পারে নাই যে, রোজিরে শুধু কালাম একা ভোগ করে না ; আমি নিজেও করি । কালাম রোজিরে ঠিক করছেই আমার লাইগ্যা । বিনিময়ে রোজির পড়ার খরচ দেই আমি । ইসস ! আমার বউটা এত বালা ক্যা ? দুনিয়ার কিচ্ছু বুঝেনা ! থাক,কম বুঝাই বালা ।

— তোমারে আইজকা খুব সুন্দর লাগতাছে বউ ।

— চুপ করেন, আর একটা কথা ও না । চুপ করে ঘুমান আপনি । আপনারে বেশি পাত্তা দিয়ে ফেলছি আমি । তাই আজ এ অবস্হা । শোনেন, এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে আমি ফার্মে যাব । আর সারা সপ্তাহের হিসেব নিবো আমি । আপনাকে কি আমি আমার ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট করতে দিব ?

চলবে…..

✍? নায়না দিনা