অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব-০৫

0
461

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★–বন্ড, জেমজ বন্ড 000।

–আব্বে জেমস হবে কেন? এটা খুশি দ্যা ডিটেকটিভ এর মিশন। তো নামও খুশিই হবে। আর তিনটা জিরো লাগাই দিলি ক্যা হারামি? এইটা কি আমার ম্যাথ এক্সামের পেপার নাকি? নাম হবে খুশি বন্ড 999 বুঝছস?

–আরে এইডা তো পুলিশের নাম্বার।

–হ্যাঁ তো কি হইছে? আমরা কি কোন পুলিশের চেয়ে কম নাকি। আর নাইন হলো সবচেয়ে বড়ো নাম্বার। তাই এটাই থাকবে।

–ইয়ার আমিও তো এই মিশনে আছি। তো আমার নাম কই?

–আমরা এখনে রহস্য উদঘাটন করতে এসেছি, নাকি তোর নামকরণ করতে এসেছি? টাইমপাস না করে কাজে মন দে।

–হ হ ঠিক আছে।

কালো লম্বা কোট,প্যান্ট, মাথায় গোল হ্যাট, চোখে কালো চশমা, হাতে দূরবীন নিয়ে ডিটেকটিভ মিশনে নেমেছে খুশি আর দিয়া। তাদের মিশন হলো প্রহর আসলেই “গে” কিনা তার সত্যতা উদঘাটন। সকাল সকাল দুজন পুরো ডিটেকটিভ লুক নিয়ে এই মিশনে নেমেছে। নিজেদের আড়াল করে প্রহরের দিকে দূরবীন তাক করে প্রহরের সব গতিবিধির ওপর নজরদারী রাখছে। তার প্রতিটা ভাবভঙ্গি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষন করছে। আজকে তো ওরা রহস্য উদঘাটন করেই ছাড়বে।

দেখতে দেখতেই দিয়া হাতের আঙুল নাচিয়ে বলে উঠলো।
–কুছ তো গড়বড় হে দয়া।

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কিয়ের গড়বড় দেখলি?আর তোর নাম দিয়া, দয়া না।

–আরে ওটাতো এমনই সিআইডি ফিল আনার জন্য ওই ডায়লগ বলছিলাম। ইয়ার শোন না, আমাদের এই লুক দেখে আমার না ওই গানটা মনে পড়ছে।
♬ গোরে গোরে মুখরে পে কালা কালা চশমা

খুশি শীতল চোখের তীর নিক্ষেপ করে বললো।
–আমার না তোর হবু জামাইর লাইগ্যা বহুত আপসোস হইতাছে। বেচারা তোর মতো আবুলের জামাই হইতে জাইতাছে। তুই কি জন্ম থেকেই আবাল,নাকি মাথায় আঘাত পাইয়া এমন হইছস? এইহানে আমরা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে নেমেছি। আর তুই কিনা ছাগল মার্কা গান গেয়ে যাচ্ছিস? অহন অফ যা। আমারে কনসার্ট করতে দে।

–আরে ওটা কনসার্ট না, কন্সেন্ট্রেট হবে।

খুশি দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–এহন কি টিচারগিরি শুরু করবি? তুই বুঝবার পারছস তো? এইডাই যথেষ্ট।

প্রহর রোজকার সময় অনুযায়ী ক্যাফেতে বসে কফি খাচ্ছে। একটা জিনিস খেয়াল করছে সে। রোজ এতক্ষণে খুশি চলে আসে ওকে জ্বালাতে। তবে আজ এখনো আসছে না। তবে কি কালকে ওর বলা কথাগুলো মেনে নিয়েছে খুশি? যাক যা খুশি তাই করুক। আমি এতো ভাবছি কেন ওকে নিয়ে?

দেখতে দেখতে ভার্সিটির শেষ হয়ে চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেল। তবুও খুশি একবারের জন্যও এলোনা। না চাইতেও কেমন যেন উসখুস লাগছে প্রহরের। মেয়েটা কি সত্যিই ওর কথা মেনে নিয়েছে? নাকি শরীর খারাপ করেছে মেয়েটার? এক মিনিট, আমি এতো ভাবছি কেন ওকে নিয়ে? ওই আপদ যতো দূরে থাকে ততই তো ভালো।

কিন্তু প্রহর তো আর জানে না জনাবা খুশি তার উপরেই নজর গেড়ে বসে আছে। আড়াল থেকে ওর সব গতিবিধি ফলো করছে। খুশি আর দিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের দেখে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে দিয়া বলে উঠলো।
–ইয়ার একটা জিনিস খেয়াল করেছিস? জিজুকে কিন্তু কখনো কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে বা আড্ডা দিতে দেখিনি। সবসময় শুধু ওই ফাহিমের সাথেই দেখেছি। তাই তোর সন্দেহই আমার ঠিক মনে হচ্ছে।

খুশি দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–তুই কি আমার সাহস বাড়াইতে আইছস, নাকি আমারে হার্ট অ্যাটাক দিবার আইছস? আমার চোখ আছে। তোর বিশেষ টিপ্পনী করা লাগবে না।

–আরে রাগ করছিস কেন? আমি তো শুধু তোর হেল্প করার চেষ্টা করছি।

প্রহররা ওর গাড়ির কাছে আসতেই হঠাৎ ফাহিমের কিছু ফ্রেন্ড এসে হাজির হলো। আর ওরা এসেই হাসিমুখে ফাহিম আর প্রহরের সাথে ফ্রেন্ডলি হাগ করতে লাগলো। আর ওদের এসব মিলন সমারোহ দেখে খুশির চক্ষু কপালে উঠে গেল। চোখের সামনে জিলাপির মতন সব গোলগোল ঘুরতে লাগলো। ওর সন্দেহের বিষয় টা সত্যের পথে এগুতে দেখে বেচারির বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে।

ফাহিমের সব ফ্রেন্ডরা মিলে একটু আড্ডা দেওয়ার প্ল্যান করেছে। প্রহর যেতে না চাইলেও সবাই খুব জোড়াজুড়ি করে ওকে রাজি করালো। অতঃপর সবাই গাড়িতে উঠে রওয়ানা হলো। ওদের যাওয়া দেখে খুশিরাও দ্রুত একটা ক্যাব বুক করে ওদের পিছু করতে লাগলো। মিনিট বিশেক পর ওরা একটা রেস্টুরেন্টে এসে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে সবগুলো রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকলো। ওদের পিছু পিছু খুশি আর দিয়াও ঢুকলো। ওরা ভেতরে ঢুকে একটা টেবিলে বসে আড্ডার মহল তৈরি করে নিলো। খুশি আর দিয়া এককোনায় লুকিয়ে ওদের অবলোকন করছে।

একটু পরে প্রহর উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেল। ফাহিমের এক ফ্রেন্ডের টিশার্টে একটু খাবারের দাগ লাগায় সেও উঠে ওয়াশরুমের দিকেই গেল। ওদের কে ওয়াশরুমের দিকে যেতে দেখে খুশিরাও সন্দেহজনকভাবে সেদিকে এগুলো। ওয়াশরুমের দরজার বাইরে কান লাগিয়ে ভেতরের কার্যকলাপ জানার চেষ্টা করছে।

ভেতরে প্রহর আর ফাহিমের ফ্রেন্ড বেসিনে নিজদের হাত পরিস্কার করছে। তখনই ওখানে থাকা অন্য আরেক টা ছেলে ফোনে কথা বলতে বলতে এলো। বেসিনের কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে বলতে লাগলো।
–অওও বাবু কেমন আছ তুমি? কতদিন পর তোমার সাথে কথা হচ্ছে। আই মিসড ইউ সো মাচ। আই লাভ ইউ বাবু। বাবু কতদিন তোমাকে কিস করি না। আজ একটু কিস করতে মন চাচ্ছে। উমমম্মাহ….

বাইরে থেকে খুশি ভাবছে হয়তো এসব কথা ফাহিমের ওই ফ্রেন্ড, প্রহরকে বলছে। এসব কথা শুনে খুশির কোমায় যাওয়ার উপক্রম। খুশি এবার মাথাটা বাকিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।

প্রহরের চোখে হঠাৎ কিছু একটা এসে লাগায় প্রহর চোখ কুঁচকে ফেললো। চোখ ডলে পরিস্কার করার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না। ফাহিমের ফ্রেন্ড সেটা দেখে বললো।
–ভাই দাঁড়ান আমি দেখছি।
ছেলেটা প্রহরের মুখের ওপর ঝুঁকে চোখের ময়লা পরিস্কার করতে লাগলো। আর ঠিক ওই মুহূর্তের সাক্ষী হলো জনাবা খুশি। আর যেহেতু তার মাইন্ড বর্তমানে অন্য ট্র্যাকে চলছে।তাই সেই ভাবনার ফলস্বরূপ এই দৃশ্য টাকেও সে অন্যকিছু ভেবে নিল। আর সেই অনুযায়ী সে শক খেয়ে পুরো স্ট্যাচু হয়ে গেল। ইয়া বড়ো হা করে মুখের ওপর হাত চেপে ধরলো। নিজের চক্ষুদ্বয় কে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না তার। হায় এটা কি দেখলো সে? এই দৃশ্য দেখার আগে ধরনী ফেটে দুই ভাগ হয়ে গেলনা কেন? আমি তাতে ঢুকে গেলাম না কেন?
___

স্কুল মাঠের একপাশে বড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে আছে নিভান। নিচে পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো দেখে নিভানের ঠোঁটের কোনে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। নিভান হাত বাড়িয়ে ফুলগুলো একটা একটা তুলে ওর ব্যাগে রাখলো। ফুল আর ফুলগাছ নিভানের দূর্বলতা। শুধু ফুলগাছ না। সবধরনের গাছগাছালিই নিভানের পছন্দ। নিভান ওদের ছাদে ছোট্ট একটা বাগান করেছে। বাগানের সবগুলো গাছ ও নিজেই লাগিয়েছে। রোজ সেগুলোর যত্ন করে,পানি দেয়। তাদের সাথে সময় কাটাতে ওর অনেক ভালো লাগে। কৃত্রিমতায় ঘেরা এই রাজধানীতে একটু হলেও প্রকৃতির ছোঁয়া পায় তখন।

নিভানের ফুল কুড়ানোর মাঝেই ওখানে স্পৃহা এসে হাজির হলো। এসেই বলে উঠলো।
–কি করছ?

হঠাৎ স্পৃহার আগমনে একটু থতমত খেয়ে গেল নিভান। দ্রুত নিজের হাত পেছনে লুকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
–ক কই কিছুনাতো।

স্পৃহা কোমড়ে দুই হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বললো। –পেছনে কি লুকাচ্ছো? দেখাও আমাকে?

নিভান ধীরে ধীরে হাতটা সামনে আনলো। নিভানের হাতে কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে স্পৃহা উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–ওয়াও কৃষ্ণচূড়া ফুল। কত্তো সুন্দর। কিন্তু তুমি এটা লুকাচ্ছিলে কেন? যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছ।
কথাটা বলে স্পৃহা ফিক করে হেঁসে উঠলো। নিভান একটু লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
–আসলে ফুল তো সবসময় মেয়েরা কুড়ায়। তাই আমার হাতে ফুল দেখলে তুমি আমার ওপর হাসতে পারো। তাই লুকাচ্ছিলাম।

স্পৃহা মুচকি হেসে বললো।
–কে বলেছে তোমাকে?

–আগে অনেকেই এটা নিয়ে হাসাহাসি করেছে।

–যারা করেছে তারা বোকা তাই করেছে অমন। আর আমি মোটেও বোকা না বুঝেছ?
কথাটা বলে স্পৃহা আবারও হেসে উঠলো। নিভানও মাথা চুলকে হালকা হাসলো। স্পৃহা হাসলে গালে টোল পড়ে। দেখতে ভারি মিষ্টি লাগে তখন। নিভান সেটা কতক্ষণ অবলোকন করলো। স্পৃহা তখন বলে উঠলো।
–আচ্ছা এই ফুল দিয়ে তুমি কি করবে?

নিভান মুচকি হেসে বললো।
–আপুর জন্য নিয়েছি। এগুলো আপুর চুলে লাগালে তাকে অনেক সুন্দর লাগে। আমার ফুলগাছের সব ফুল শুধু আপুর চুলেই লাগাই আমি।

–ওয়াও তোমার ফুলগাছও আছে বুঝি?

–হ্যাঁ আছেতো। আমার ছোট্ট বাগান আছে। সেখানে কয়েক প্রজাতির ফুলগাজ আছে।

–হাউ সুইট নিভান। তোমর ব্যাপারে যতো জানছি ততই অবাক হচ্ছি। সত্যিই তোমার কতো ট্যালেন্ট।পড়ালেখায় নাম্বার ওয়ান,আর্টও করতে পারো,আবার গার্ডেনিং ও করো।নাজানি আরও কতো গুন আছে তোমার মাঝে। আর এক আমাকে দেখ। নিজের চুলটাও এখনো একা বাঁধতে পারি না। অ্যাম গুড ফর নাথিং।
ঠোঁট উল্টে কথাটা বললো স্পৃহা।

স্পৃহার কথা বলার ভঙ্গি দেখে নিভান হালকা হাসলো। তারপর বলে উঠলো।
–আরে এতটাও ট্যালেন্টেড না। তুমি একটু বাড়িয়েই বলছো। আচ্ছা এসব বাদ দাও। চলো এখন আমরা তোমার আর্ট ক্লাস শুরু করি।

–হ্যাঁ হ্যাঁ শুরু করি। কিন্তু তার আগে একটা কথা বলবো।

–হ্যা বলো।

–আচ্ছা তুমি কিছু মনে না করলে, তোমার ওখান থেকে একটা ফুল আমি নিতে পারি? আসলে আমারও না কৃষ্ণচূড়া ফুল অনেক পছন্দ।

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। নাও না।
নিভান ওর হাতের ফুলগুলো থেকে কয়েকটা ফুল স্পৃহাকে দিলো। স্পৃহা প্রফুল্ল মুখে ফুলগুলো হাতে নিয়ে নিজের কানের পেছনে গুঁজে দিল। ফুলগুলো লাগিয়ে স্পৃহাকে অনেক সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে এক ফুলের সৌন্দর্য আরেক ফুলের সোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিভানের এই সৌন্দর্য টা ধরে রাখার ইচ্ছে হলো। নিভান স্পৃহাকে সামনে বসিয়ে, স্কেচ খাতা বের করে স্পৃহার চুলে লাগানো ফুলসহ ওর চুলের স্কেচ করতে লাগলো।

স্পৃহাও সেটা দেখে অনেক খুশি। সেও চুপচাপ বসে রইলো।
___

–হায় মেতো লুটগায়ি, বরবাদ হো গায়ি। আব মেরা কেয়া হোগা?? 😭

খুশি মরা কান্নার আহাজারি করতে করতে করতে এসব বানী আওড়িয়ে যাচ্ছে। তখন ওই দৃশ্য দেখার পর আর কিছু দেখার চাহিদা থাকে না। সেই মুহূর্তেই ওখান থেকে ওরা চলে আসে। বর্তমানে এক নদীর কিনারায় বসে এমন মরা কান্না করে যাচ্ছে। দিয়া বেচারি ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ওকে শান্ত করতে পারছে না। এদিকে আশেপাশের লোকজন সব তাকিয়ে তাকিয়ে বিনা টিকেটে তামশা দেখছে। দিয়া বলে উঠলো
–ইয়ার একটু শান্ত হ। দেখ সবাই চেয়ে আছে। কান্না বন্ধ কর।

খুশি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
–আমার এখানে মন ভেঙে গেছে। আর তোর লোকচক্ষুর চিন্তা হচ্ছে? কিভাবে শান্ত হবো আমি বল কিভাবে? আমার যে সব শেষ হয়ে গেল। আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। যাকে ভেবেছিলাম স্বপ্নের পুরুষ, ড্রিম ম্যান, মাচো ম্যান। সেতো “গে” ম্যান বের হলো। যাকে নিয়ে মোহাব্বতে বানাতে চেয়েছিলাম।সেতো আগে থেকেই দোসতানা বানিয়ে বসে আছে। যার সাথে হাতে হাত রেখে রোমান্টিক ডুয়েট সং গাইতে চেয়েছিলাম। আর এখন তার জন্য “মা দা লাডলা বিগাড় গায়া” গান গাইতে হচ্ছে। আমার ঐতিহাসিক প্রেম কাহিনির তো ব্যান্ড বেজে গেল। এখন আমার কি হবে?

দিয়া আপসোসের সুরে বললো।
–হ্যাঁ ইয়ার আমারও খুব খারাপ লাগছে। অমন হ্যান্ডসাম গুডলুকিং ছেলের মাঝে যে এমন ইফেক্ট আছে তা কল্পনাও করিনি। লোকে ঠিকই বলে উপরের সুন্দর কাভার দেখে মোহিত হতে নেই। ভেতরের মাল ইফেক্টিভও হতে পারে। চকচক করলেই সোনা হয় না।

–তুই আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিসনা। কোন সলুশন দিতে পারলে বল। নাহলে যা এখান থেকে।

দিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো।
–পেয়েছি। হ্যাঁ একটা উপায় আছে।

খুশি অতি কৌতুহলী হয়ে বললো।
–সত্যিই? কি উপায় বলনা?

–ঝিঙুর বাবা।

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–ঝিঙুর বাবা???

–হ্যাঁ ঝিঙুর বাবা। ঝিঙুর বাবা একজন আলৌকিক বাবা। শুনেছি উনার কাছে অনেক কেরামতি আছে। উনার কাছে সব রোগের চিকিৎসা আছে। আরে আমার দাদী তো তার অনেক বড়ো ভক্ত। যেকোনো কিছু হলেই ঝিঙুর বাবার কাছে চলে যায় সে। আর বাবা নাকি ঝাড়ফুক দিয়ে তার সব রোগ নিবারন করে দেয়। আর জিজুর এটাও একধরনের রোগ বুঝেছিস? আর এর চিকিৎসা ঝিঙুর বাবাই করতে পারবে।

দিয়ার কথায় এক আশার আলো দেখতে পেল খুশি। সে উৎসুক কন্ঠে বললো।
–সত্যিই ইয়ার? কোথায় সেই ঝিঙুর বাবা? চল আমরা এখুনি সেখানে যাই।

–হ্যাঁ চল যাই।

অতঃপর দুজন চললো ঝিঙুর বাবার উদ্দেশ্যে।
ঘন্টাখানিক পর ওরা এসে পৌঁছাল ওরা ঝিঙুর বাবার দরবারে। যেখানে ঝিঙুর বাবা ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছে। লম্বা চুল আর দাঁড়ি তার। চুলগুলো জট লেগে আছে। পরনে জুব্বার মতো কালো এক পোশাক। গলায় হরেকরকমের মালা আর তাবিজ-কবচের বাজার ঝুলিয়ে রেখেছে। খুশির কাছে এই ঝিঙুর বাবাকে কোন ভুত ঝাড়া ওঝার মতো লাগছে। তার সামনে কিছু ভক্তরা বসে বসে তার নাম জোপছে।
–জয় বাবা, ঝিঙুর বাবার জয়।

খুশি আর দিয়া ধীরে ধীরে ঝিঙুর বাবার সামনে গিয়ে বসলো। ঝিঙুর বাবা তখন চোখ খুলে বলে উঠলো।
–ঝিঙে ঝিঙে দাদা কাচা ঝিঙে,
আমার কাছে নাইতো বুবু রান্না ঝিঙে
আমার কাছে ভাবি কা……চা……ঝিঙে ।
জয় ঝিঙুর বাবা। তো বলো বাচ্চা কি সমস্যা তোমাদের?

খুশি বলে উঠলো।
–বাবা আমার লাইফে অনেক বড়ো লোচা হয়ে গেছে।

ঝিঙুর বাবা ভ্রু কুঁচকে বললো।
–লোচা? হোয়াট ইজ লোচা বালিকা?

–লোচা মিনস লাফরা, মানে অনেক বড়ো ঝামেলা হয়ে গেছে। বাবা আপনি কিছু করুন প্লিজ। এখন আপনিই আমার একমাত্র আশা।

–কি সমস্যা সেটা খুলে বলো।

খুশি ঝিঙুর বাবাকে সবটা খুলে বললো। ঝিঙুর বাবা সব শুনে কিছুক্ষণ ভাবনায় মগ্ন হলেন। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন।
–হুমমম এটাতো অনেক গম্ভীর বিষয়। আসলে তোমার বয়ফ্রেন্ড এর মাঝে অন্য এক প্রেতাত্মা ঢুকে গেছে। তাই সে এমন করছে। পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে সে। তাই ঝাড়ফুক আর আমার মন্ত্রতন্ত্র দিয়ে তার ভেতর থেকে ওই পিশাচনী কে বের করতে হবে। তুমি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো।

–কিন্তু সেতো আমার সাথে কখনোই আসবে না। দয়া করে আপনিই আমাদের সাথে চলুন। ওর সামনে গিয়ে ওর চিকিৎসা করবেন প্লিজ? আমি প্রমিজ করছি আমার কাজ করে দিতে পারলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে একদম ভাইরাল করে দিবো। তারপর দেখবেন আপনার মিলিয়ন ফলোয়ার হয়ে যাবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে বালিকা। ভক্তদের সেবার জন্য আমি সবই করতে পারি।

–ধন্যবাদ বাবা। তাহলে কাল সকালে ****ভার্সিটিতে চলে আসবেন কেমন?

–আচ্ছা।

–তাহলে এখন আমরা যাই। জয় বাবা, ঝিঙুর বাবার জয়।
জয়ধ্বনি দিতে দিতে দুজন বেড়িয়ে গেল।
__

ক্যাফেতে বসে আছে প্রহর আর ফাহিম। কফির কাপ হাতে থাকলেও নজর তার কেন যেন আশেপাশে বিস্তার করছে। এমন টা কেন হচ্ছে তা সে নিজেও জানে না। খুশি আজও এলো না। মেয়েটা ঠিক আছে তো? নাকি সত্যিই মাথায় এবার বুদ্ধির উদয় হয়েছে? যাক বুদ্ধি হলেই ভালো। কিন্তু আমি এতো ভাবছি কেন ওকে নিয়ে? ওই মেয়েটা সত্যি আমার মাথাই নষ্ট করে দিয়েছে।

প্রহরের মতিগতি দেখে ফাহিম দুষ্টুমি করে গুনগুন করে গাইতে লাগলো।
♬ বন্ধু তুমি কোওওওই রে
♬ এ প্রাণ বুঝি যায় রে

প্রহরের শীতল চোখের তীক্ষ্ণ চাহুনি দেখে ফাহিম গান বন্ধ করে বললো।
–হোয়াট? এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? এখন কি গানও গাইতে পারবোনা?

প্রহর দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই খুশি ঝিঙুর বাবাকে নিয়ে আচমকা প্রহরের ওপর অ্যাটাক করলো। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝিঙুর বাবা প্রহরের দিকে তাকিয়ে তার আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স মন্ত্র পড়া শুরু করে দিলো।
–আরামানি, ঝাড়ামানি আমি একখান ঝাড়া জানি।
চলে আমার মন্ত্র হাওয়ার বেগে ঘুইড়া ঘুইড়া,
শরীর ছাইড়া ভুত যাইবো উইড়া উইড়া।

এদের কাজকর্ম দেখে প্রহর আর ফাহিম দুজনেই আশ্চর্য হয়ে গেল। প্রহর হড়বড়িয়ে উঠে বললো।
–হোয়াট দ্যা হেল? হোয়াট ইজ দিস ননসেন্স?

খুশি বলে উঠলো।
–আরে ননসেন্স না। আপনার সেন্স ফিরানোর এই চিকিৎসা চলছে। একবার চিকিৎসা হয়ে গেলে আপনার সব সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

–হোয়াট? আমার আবার কি সমস্যা হয়েছে? আমি একদম ঠিক আছি। আর ননসেন্স বন্ধ করো তাড়াতাড়ি।

–আরে শুধু একটু সময় বসুন না প্লিজ। দেখবেন তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। আরে দেবরজী আপনি একটু ওকে শক্ত করে ধরুন না?

যদিও ফাহিম এসব কাজের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবুও খুশির কথায় মাথা ঝাকিয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবিজী আমি ওকে একদম ধরে রাখছি। আপনি আপনার ক্রিয়া চালু রাখুন।
কথাটা বলে ফাহিম প্রহরকে দুই হাতে শক্ত করে ধরে রাখলো। প্রহর বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ফাহিম কিছুতেই ছাড়ছে না। এই সুযোগে ঝিঙুর বাবা তার কারসাজি আবারও শুরু করে দিলো। তিনি মন্ত্র বলতে লাগলেন।
–আতমা, খাতমা,প্রেতাত্মা, মাসি মা,পিসি মা, সৎ মা, নিজের মা, কারিশমা, ♬ তাম্মা তাম্মা লোগে, তাম্মা তাম্মা লোগে তাম্মা। জান্তর মন্তর, কালি কালান্তর ,চকোবার,ম্যাঙ্গোবার, ♬ দিলবার দিলবার, হো দিলবার দিলবার। ছু মন্তর ছু, কালি কুত্তার গু, ছুহ ছুহ ছুহ..

মন্ত্র পড়তে পড়তে ঝিঙুর বাবা প্রহরের ওপর পাউডার জাতীয় কিছু ছিটাতে লাগলো। প্রহর এবার চরম পর্যায়ে রেগে গিয়ে বললো।
–স্টপ দিস ননসেন্স রাইট নাও। আদারওয়াইজ আই কিল ইউ।

–আরে রাগছেন কেন? এসব আপনার ভালোর জন্যই করা হচ্ছে।

–টু হেল উইথ ইয়োর ভালো। কিসের ভালো হ্যাঁ? আমার কি সমস্যা হয়েছে?

–আরে সমস্যা মানে অনেক বড়ো সমস্যা। আরে আপনি যে “গে” এই সমস্যার নিবারণ করতেই ঝিঙুর বাবা এসেছে।

প্রহর আর ফাহিম দুজনেই যেন আকাশ থেকে পড়লো। প্রহর চোয়াল শক্ত উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
–হোয়াট? আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড?

ফাহিম এবার ঝট করে প্রহরকে ছেড়ে দিয়ে বললো।
–হোয়াট? তুই “গে”? ছিঃ ছিঃ এই ছিলো তোর মনে মনে? আজকের পর থেকে আমার থেকে দূরে থাকবি তুই। নাজানি কখন আমার ইজ্জতের ওপর নজর দিয়ে বসিস।

ফাহিম মজা করে বললেও প্রহরের রাগ এবার সর্বোচ্চ মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। খুশির এই বেহুদা কাজকর্মে প্রহরের সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে বিশাল সমুদ্রের স্রোত সমান ক্রোধ উপচে পড়লো প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে রগ ফুলিয়ে বললো।
–ব্যাস অনেক হয়েছে। তুমি আজকে সব সীমা অতিক্রম করে গেছ। তোমাকে অনেক বার ওয়ার্ন করেছি। তুমি শোনোনি। এবার যা হবে তার জন্য তুমি দ্বায়ী থাকবে।
প্রহর খুশির হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলো।
–আজকে তোমাকে এমন শিক্ষা দেব যা সারাজীবন মনে রাখবে তুমি। প্রহর মাহবুবের পিছে লাগার স্বাদ তোমাকে হারে হারে টের পাইয়ে দেব।

কথাটা বলেই প্রহর খুশির হাত ধরে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে এলো।বাকিরা সবাই প্রহরের ক্রোধের সামনে ভয়ে আর কিছু বলতে পারলোনা। প্রহর খুশিকে সোজা নিজের গাড়ির কাছে নিয়ে এসে,গাড়ি খুলে খুশিকে ধাক্কা দিয়ে সিটে বসিয়ে দিল। তারপর নিজেও হনহন করে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। খুশির ভয় যে একটি লাগছে না, তেমন না। তবে চেহারায় সেটা দেখাচ্ছে না সে। ঠিক ওইমুহূর্তে খুশির মনোদেবি এসে হাজির হয়ে বলে উঠলো।
–এই খুশি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তোকে? মেরে টেরে দিবে নাতো আবার?

খুশি উপর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–এই চুপ কর তুই। সব তোর জন্য হয়েছে। তুইই আমার মাথায় ওসব ঢুকিয়েছিস। নিশ্চয় ওসব ভুল ভেবেছি তাইতো প্রহর এতো রেগে গেছে। এর জন্য তুই দ্বায়ী। এই তুই বারবার বিনা দাওয়াতের বরযাত্রীর মতো কেন চলে আসিছ বলতো? মান না মান, মে তেরা সালমান খান। হায় আব মেরা কেয়া হোগা? ওকি আমাকে সত্যিই মেরে ফেলবে? ঠিক আছে প্রেমিকের হাতে মরে গিয়ে আমিও নাহয় ইতিহাস তৈরি করবো। বিদায় পাঠকগন। দুয়াওমে ইয়াদ রাখনা।

চলবে…….