অন্তঃকরণে তোরই পদচারণ পর্ব-০৬

0
483

#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৬
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★প্রায় ত্রিশ মিনিট পর গাড়ি এসে ঢুকলো একটা গেটের ভেতর। খুশি এখন পর্যন্তও কিছু বলেনি প্রহরকে। আসলে বলার সাহসই পায়নি।প্রহর পূর্বের রাগের মাত্রা বজায় রেখে গাড়ি থেকে নেমে এসে, আবারও খুশির হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো। তারপর টানতে টানতে সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। খুশি যেতে যেতে আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো জায়গায় টা।অনেক বড়ো আর সুন্দর জায়গাটা।চারিদিকে হরেক রকমের গাছগাছালির মেলা।সামনে একটা দোতলা বিশিষ্ট বাড়ি। চারপাশের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন ফার্মহাউস। কিন্তু প্রহর ওকে এখানে এনেছে কেন? এটা কি প্রহরের কোন গোপন জায়গা? যেখানে ও আমাকে মেরে গুম করে দিবে?

খুশির আসমান জমিন চিন্তাভাবনার মাঝেই প্রহর ওকে বাসার ভেতর নিয়ে এলো। সিড়ি বেয়ে উপরে একটা রুমে নিয়ে এলো ওকে। রুমে নিয়ে এসেই খুশিকে বিছানায় ছুড়ে মারলো প্রহর।খুশি বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে গেল। প্রহর নিজেও বিছানায় উঠে খুশির দুই হাতের মাঝে নিজের হাত দিয়ে খুশিকে বেডের সাথে আটকে দিয়ে ক্রোধিত কন্ঠে বললো।
–আজকে তোমাকে এমন শাস্তি দিবো যা তুমি সারাজীবন মনে রাখবে। আমার পুরুষত্বের ওপর তোমার ডাউট আছে তাই না? ইউ থিংক অ্যাম এ গে? ওকে দেন, আজকে তোমাকে সেটারও হাতে নাতে প্রমাণ দিয়ে দিবো। যাতে তোমার মনে কোন ডাউট না থাকে।

খুশি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো প্রহরের দিকে। তারপর হঠাৎ ফট করে বলে উঠলো।
–তুমি কি আমার সাথে জবরদস্তি করতে চাচ্ছো?

প্রহর সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
–তোমার কি মনে হয়? এখানে এই নির্জন জায়গায় কেন এনেছি আমি? আগেই বলেছিলাম আমার থেকে দূরে থাক।কিন্তু তুমি শোননি। এখন এর পরিণাম ভোগ কর।

খুশির চেহারার ভাবভঙ্গি তৎক্ষনাৎই পাল্টে গেল। চমকিত হয়ে উৎসাহী কন্ঠে বলে উঠলো।
–সত্যিই?? আরে আগে বলবে তো। আমি আরও কিনা কি ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। হায় এটাতো আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। আমার বয়ফ্রেন্ড আমার সাথে ইলুইলু করবে। আজ ফাইনালি সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। অ্যাম সো হ্যাপি।

খুশির এমন উদ্ভট কথায় প্রহর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আশ্চর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল সে। ওতো ভেবেছিল এসব করে খুশিকে ভয় দেখাবে। যাতে খুশি ভয় পেয়ে আর কখনো ওর সামনে না আসে। কিন্তু এই মেয়ে তো দেখছি ভয় পাওয়ার বদলে আরও খুশি হচ্ছে। প্রহরের আশ্চর্যকে আরও হাই লেভেলে নিয়ে খুশি দুষ্টু হেসে বললো।
–বাহ্ তুমিতো দেখছি ছুপা রুস্তম। মনে মনে এসব চলছে তাহলে? এমনিতে তো সবার সামনে আমার সাথে কথাই বলতে চাওনা। আর সোজা রুমডেটে নিয়ে এলে,হুম? নটি বয়। ওকে ওকে এখন শুরু করো। দাঁড়াও দাঁড়াও আগে আমি আমার ডায়লগ টা বলে নেই হ্যাঁ।
খুশি এবার নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠলো।
–নেহিই, নেহি ছেড়না আমায় ছেড়না। তুমি আমার দেহ পাবে মন পাবে,সাথে অনেকগুলো কিচ্ছিও ফ্রী পাবে। নাও এখন শুরু করো। আমার ডায়লগ বাজি হয়ে গেছে।

প্রহর যেন তব্দা খেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেললো। প্রহরের রেসপন্স না দেখে খুশি বলে উঠলো।
–কি হলো চুপ করে রইলে কেন? নাকি লজ্জা পাচ্ছ হুম? আচ্ছা ঠিক আছে আমিই শুরু করছি।
কথাটা বলে খুশি ঠোঁট চোখা করে প্রহরের মুখের দিকে এগুতে লাগলো। প্রহর বেচারা থতমত খেয়ে এক ঝটকায় খুশিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো। খুশিও উঠে বসে বললো।
–আরে কি হলো উঠে গেলে কেন? আরে এতো লজ্জার কি আছে? আমরা আমরাই তো।
খুশি প্রহরের হাতের ওপর দিয়ে নিজের দুই আঙুল দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে কাঁধের দিকে উঠতে লাগলো। প্রহর রেগে উঠে বললো।
–স্টপ ইট খুশি। হোয়াট আর ইউ ডুয়িং।

কথাটা বলে প্রহর আবারও সরে বসলো। খুশি এবার প্রহরের পাশে পা ঝুলিয়ে বসলো। তারপর হঠাৎ স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো।
–কি হলো পারলে নাতো? আমি জানতাম তুমি পারবে না।আমি ভালো করেই জানি তুমি কখনো আমার সাথে। শুধু আমার সাথেই না। তুমি কখনো কোন মেয়ের সম্মানহানি করতে পারবে না।

খুশির কথায় প্রহর অবাক চোখে তাকালো ওর দিকে। খুশির কাছ থেকে এমন কথার আশা করে নি ও। খুশি প্রহরের চোখে চোখ রেখে শান্ত কন্ঠে বললো।
–তুমি কি ভেবেছ আমি তোমাকে শুধু তোমার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে পছন্দ করেছি? উইুম এটা তোমার ভুল ধারণা। তোমার মনে আছে মাসখানেক আগে তুমি এক এক্সিডেন্ট করা পথ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছিলে?

প্রহর ভ্রু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করলো। অতঃপর তার মনে পরলো সেদিনের কথা। সেদিন ও কার ড্রাইভ করে ভার্সিটি আসছিলো। হঠাৎ রাস্তার মাঝে এক জায়গায় কেমন ভীড় জমায় জ্যাম পড়ে যায়। তখনই হঠাৎ একটা মেয়ে এসে ওর গাড়ির জানালায় টোকা দেয়। মেয়েটির মুখে স্কাফ বাঁধা ছিল। প্রহর জানালার কাচ নামিয়ে দিলে মেয়েটি খুব উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো।
–শুনুন প্লিজ একটু হেল্প করুন আমাদের। ওখানে এক বাচ্চার এক্সিডেন্ট হয়েছে। প্লিজ একটু হসপিটালে নিয়ে যাবেন দয়া করে।

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই চলুন।
প্রহর গাড়ি থেকে মেয়েটির পিছে যায়। ওই ভিড়ের মাঝে গিয়ে দেখতে পায়। একটা পথশিশু এক্সিডেন্ট হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রহর দ্রুত গিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে দৌড়ায়। মেয়েটিও পিছে পিছে আসে। বাচ্চাটিকে পেছনের সিটে শুইয়ে দেয়। মেয়েটিও বাচ্চাটির পাশে বসে। তারপর প্রহর দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেয়। পেছনে মেয়েটি নিজের ব্যাগে থেকে রুমাল বের করে বাচ্চাটির ক্ষতস্থানে চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর প্রহর একটা হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামালো। আবারও বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে হসপিটালের ভেতরে যায়। ডাক্তার ডেকে তাকে ডাক্তারের কাছে হস্তান্তর করে। ডাক্তার বাচ্চাটির চিকিৎসা শুরু করে দেয়। প্রহর রিসিপশনে বাচ্চাটির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে বাচ্চাটির ভালো চিকিৎসার কথা বলে চলে আসে।

প্রহরের ভাবনার মাঝেই খুশি বলে উঠলো।
–কি মনে পড়েছে?

–হ্যাঁ মনে পড়েছে। কিন্তু তুমি সেটা কি করে জানো?

খুশি স্মিথ হেঁসে বললো।
–কারণ সেদিনের ওই মেয়েটা আমিই ছিলাম।

প্রহর আরও একদফা অবাক হলো। সেদিনের সেই মেয়েটা খুশি ছিলো? একটা অচেনা শিশুর জন্য মেয়েটা সেদিন কেমন মরিয়া হয়ে গিয়েছিল। যেন নিজের আপন কেউ। যা একবারের জন্য প্রহরকেও ভাবিয়ে দিয়েছিল।
খুশি আরও বললো।
–হ্যাঁ আমিই ছিলাম। জানো সেদিন ওখানে হাজার মানুষের ভীড় ছিল।কিন্তু কেউই ওই শিশুটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামশা দেখছিল। অথচ তুমি, তুমি কোনকিছু না ভেবে ওই রক্তাক্ত বাচ্চাটিকে নিজের কোলে তুলে নিলে। তোমার শরীরে রক্তের দাগ লেপ্টে গেল।সেটার কোন তোয়াক্কাই করলে না। বিনা বলাতেই তুমি বাচ্চাটার চিকিৎসার খরচও দিয়ে গেলে। আর এটা থেকেই বোঝা যায় তোমার মন কতটা সাফ। কতটা মহৎ। সেদিন থেকেই তুমি আমার এই ছোট্ট মনে জায়গা করে নিয়েছিলে। আমি সেদিন বাইরে এসে তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই তুমি চলে গিয়েছিলে। তুমি জানো সেদিন থেকেই তুমি আমার ড্রিম ম্যান হয়ে গিয়েছিলে। রোজ আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখতাম। তোমার অপেক্ষায় আমি দিন কাটাচ্ছিলাম। আমি জানতাম আমি তোমাকে একদিন না একদিন ঠিকই পাবো। আর দেখ আমি সত্যিই পেয়ে গেছি তোমাকে।

প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললো।
–এতটুকুতেই আমাকে মহান মনে করার কিছু নেই। আমার কাছে কিছুই পাবে না তুমি। আমার মাঝে কোন অনুভূতি নেই। আমার কঠোরতায় নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিওনা।

–কঠোর না। শুধু দেখানোর চেষ্টা করো তুমি কঠোর। আসলে সত্যি বলতে তুমি ভয় পাও।কারোর ওপর ভরসা করতে ভয় পাও তুমি।

খুশির কথায় প্রহর ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললো।
–হোয়াট? কি বলছো এসব? আমি কেন ভয় পেতে যাবো?

–হ্যাঁ পাও। তোমাকে এতদিন দেখে এতটুকু আমি বুঝে গেছি। তোমার ভেতর নিশ্চয় কোন কষ্ট আছে। আর সেই কষ্টটাকেই তুমি কঠোরতার আড়ালে ঢেকে রাখতে চাও। যাতে মানুষের সামনে তোমার দূর্বলতা প্রকাশ না পায়। তুমি ভয় পাও, কারোর সামনে দূর্বল হয়ে পড়লে সে তোমার দূর্বলতার সুযোগ নিবে। কাওকে বিশ্বাস করতে পারো না। ভাবো সবাই তোমাকে ধোঁকা দিবে। আবারও তোমাকে কষ্ট দিবে। তাইতো নিজের চারপাশে কঠোর শক্ত এক দেওয়াল বানিয়ে রেখেছ। যাতে কেউ তোমার মন পর্যন্ত পৌঁছাতেই না পারে।

প্রহর বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছে খুশির দিকে। মেয়েটি ওর জীবনের চরম সত্যি টা কিভাবে বুঝে গেল? ওতো ভেবেছিল খুশি যথাযথই একটি ইম্যাচিওর, পাগলাটে, উচ্ছন্নে যাওয়া কোন মেয়ে। যে কিনা বাকি সব রেনডম মেয়েদের মতোই ওর বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ওর প্রতি সাধারণ আকর্ষণের বশবর্তী হয়েছে। কিন্তু আজকের খুশি যেন অন্যই এক খুশি। ওর কথাগুলো যেন না চাইতেও প্রহরকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে। প্রহরের ভাবনার আনাগোনার মাঝে খুশি বলে উঠলো।
–তবে যত দামি সিমেন্ট দিয়েই দেওয়াল তৈরি করোনা কেন। এই খুশি নামের বুলডোজার তা একদিন ভেঙেই ছাড়বে বুঝেছ?
কথাটা বলেই খুশি দুষ্টু হেসে একটা চোখ মেরে দিল। প্রহর আবারও থতমত খেয়ে গেল।

অতএব খুশি তার আগের ফর্মে ফিরে এলো। উঠে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো।
–বায়দা চিপাগলি, তুমি কিন্তু আমাদের ডেটের জন্য দারুণ একটা জায়গায় এনেছ। আমি একটু ঘুরে দেখি প্লিজ?

–না করলে কি মানবে তুমি?

খুশি হাসিমুখে বললো।
–একদমই না।
ব্যাস কথাটা বলেই খুশি ধেইধেই করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। প্রহর ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ও কি ভাবলো আর কি হয়ে গেল? এই বালা থেকে কিভাবে নিস্তার পাবে ও?

খুশি বাইরে এসে মনের খুশিতে পুরো ফার্মহাউস টা ঘুরে দেখতে লাগলো। ফার্মহাউসের একপাশে নানান রকমের পশুপাখির খামার আছে। সেখানে পশুপাখি পালা হয়। তাদের দেখাশোনার জন্য কয়েকজন লোকও আছে। এসব পশুপাখি দেখে খুশি আরও এক্সাইটেড হয়ে গেল। সে প্রচুর উৎসাহ নিয়ে সেই পশুপাখি গুলোর কাছে গেল। পশুপাখি গুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। একটা ছাগলের কাছে দুটো ছোট্ট ছাগল ছানা ঘুরঘুর করছে। খুশি অত্যাধিক আনন্দিত হয়ে একটা ছাগল ছানা কোলে তুলে নিল। ছানাটাকে আদর করতে করতে ঠোঁট চোখা করে বলতে লাগলো।
–অওওওও… কত্তো কিউট তুই ।কিউটি গোলি, মোলি, লোলি,পোলি,টুলটুলি উম্মাহ। এই তোর নাম কিরে? নাম নেই বুঝি? দাড়া আমি তোর একটা নাম রেখে দিচ্ছি। তুই একটা মেয়ে ছাগল। আর অনেক সুন্দরও। তাই তোর নাম আজ থেকে কাটরিনা। ভালো লেগেছে নাম? আই নো আই নো, ভালো না লেগে যাবে কই? সালমান খানের এক্স গার্লফ্রেন্ড বলে কথা। দেখা যাবে ওই কাটরিনাকে না পেয়ে তোকেই বিয়ে করতে চলে আসবে। তোর লাইফ তো সেট হয়ে যাবে।এক্কেরে ভিআইপি পারসন হইয়া যাবি। দেখিস তখন জানি আবার আমারে ভুলে যাসনা। সালমান ভাইয়ের কাছে আমার নাম মেনশন করিস। তাহলে আমিও তার ফেবারিট লিস্টে থাকবো। তোর মতো এমন সুন্দর বউ খুঁজে দেওয়ার জন্য সে নিশ্চয় খুশি হয়ে আমাকে কিছু উপহার তো অবশ্যই দিবে তাইনা? হি হি..

এদিকে প্রহর একটু দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ খুশির এসব উদ্ভট মহান বাণীগুলা শুনছিল। খুশির এই আউট অফ সেন্স কথাবার্তা শুনে হঠাৎই প্রহরের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের ওপর দুই আঙুল চেপে নিরবে হাসছে। মেয়েটা সত্যিই পাগল। কিসব বলে। হঠাৎ চমকে গেল প্রহর। এক মিনিট! ওকি হাসছিল? সত্যিই হাসছিল? তাও আবার ওই মেয়েটার জন্য? লাইক সিরিয়াসলি? প্রহর শেষ কবে হেসেছিল তা হয়তো ওর নিজেরও মনে নেই। আর আজ কিনা…।

খুশি আর ছাগল ছানার গুরুত্বপূর্ণ কথপোকথনের মাঝে ওখানে একজন বয়স্ক মহিলা এসে হাজির হলো। খুশিকে দেখে বলে উঠলো।
–জে আফা আপনে কেডা চিনবার পারলাম নাতো।

খুশি হাসিমুখে বলে উঠলো।
–আগে বলুন আপনি কে?

–জে আমি রোজিনা। এই খামারের দেখাশোনা করি। প্রহর বাবাই রাকছে আমগোরে।

–ওও হাই আমি হলাম খুশি। আপনাদের প্রহর বাবার গার্লফ্রেন্ড। আর খামারের হবু মালকিন বুঝেছেন?

মহিলা খুশির কথায় মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম। প্রহর এবার এগিয়ে এসে ধমকের সুরে বললো।
–শাট আপ খুশি। কি আবোল তাবোল বলছ এসব?
তারপর রোজিনার উদ্দেশ্যে বললো।
–চাচী মা ওর কথায় কান দিয়েন না। ওর মাথার তার ছিঁড়া। আপনি আপনার কাজ করুন।

রোজিনা বেগম মাথা ঝাকিয়ে চলে গেল। প্রহর এবার খুশির উদ্দেশ্যে বললো।
–অনেক হয়েছে এখন চলো। নাহলে কিন্তু তোমাকে রেখেই চলে যাবো আমি। তারপর যেমন খুশি তেমন করে যেও।

–সবসময় শুধু এভাবে পাপড় ভাজার মতো মড়মড় করে কথা বলো কেন? একটু কি স্টবেরি আইসক্রিমের মতো সুইট করে কথা বলা যায় না?

–তোমার সাথে কোনভাবেই কথা বলতে চাই না আমি। বারবার জিজ্ঞেস করবো না আমি। যাবে নাকি চলে যাবো আমি?

–হ্যাঁ যেতেই হবে। ইচ্ছে হলেও এখন আর থাকতে পারবোনা। বাসায় যেতে এমনিতেই লেট হয়ে গেছে। আমার মাদার বাংলাদেশ তো বোধহয় রাগের বুস্টার ডোজ নিয়ে বসে আছে। সব তোমার জন্য হয়েছে। আচ্ছা শোন না, বলছি কি। যদি আমার আম্মাজান আমারে মারে তুমি একটু আদর করে দিও কেমন?

প্রহর চোয়াল চিবিয়ে বললো।
–জাস্ট শাট আপ ইডিয়ট। ফালতু কথা বাদ দিয়ে চলো এখন।

দুজনে গাড়িতে উঠে রওয়ানা হলো। ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে প্রহর বলে উঠলো।
–নাও এসে গেছি নামো এখন।

খুশি ভ্রু কুঁচকে বললো।
–নামো মানে এখানে কেন নামবো?

–তো কোথায় নামবে? তোমাকে আমি এখান থেকেই নিয়ে গিয়েছিলাম তাই এখানেই নামিয়ে দিলাম। ব্যাস আমার দায়িত্ব শেষ। এখন তুমি তোমার মতে চলে যাও।

–আরে বললেই হলো? এমনিতেই আমার দেরি হয়ে গেছে। এখন যদি আবার আমি অন্য গাড়ি খুঁজতে যাই তাহলে আমার আরও দেরি হয়ে যাবে। তাই আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিবে তুমি। চিন্তা করোনা মিটার হিসেবে ভাড়া দিয়ে দিবো তোমায়।

–আমাকে কি তোমার ট্যাক্স ড্রাইভার মনে হয়?

–এতকিছু আমি জানি না। আমাকে বাসায় নামিয়ে দিবে ব্যাস। নাহলে আমি এই গাড়িতেই বসে থাকবো।

মহা বিড়ম্বনায় পড়ে গেল প্রহর। শেষমেশ আর না পেরে খুশির বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।খুশির বলা ঠিকানা অনুযায়ী মিনিট পনেরো পর খুশির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে প্রহর বললো।
–নাও এসে গেছি। এখন তো নামো।

খুশি হাসিমুখে বললো।
–ওকে বাই। আচ্ছা শোন দেখতো ওটা কি?
খুশির ইশারা অনুযায়ী প্রহর জানালার বাইরে তাকালো। সেই সুযোগে খুশি ফট করে প্রহরের গালে একটা চুমু দিয়ে দিল। চুমু দিয়েই পাগাড় পার। আর প্রহর মুহূর্তেই অটো হয়ে গেল। বসে বসে ভাবতে লাগলো ওর সাথে আসলে হলো টা কি।

চলবে……