অন্তরালের অনুরাগ পর্ব-৬১+৬২

0
812

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৬১ ❤💛❤

[ প্রাপ্তবয়ষ্কদের বিষয়বস্তু উপস্থিত। মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা এবং বয়সভেদে পড়ার অনুরোধ। ]

আপাতদৃষ্টিতে বিয়ে বাড়ির সুন্দর মহলকে এখন ঝগড়াটে বাড়ির চিত্রমহল মনে হচ্ছে। আর পায়ে পা দিয়ে ঝগড়াঝাটিতে মত্ত রয়েছে বিয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তিত্ব তথা স্বয়ং বর এবং কনে।

— ‘ না। সম্ভব না। মাথায় জলদি পানি দেও। এই ছেমরি মাথা চূড়ান্ত হট করে দিছে। ‘
— ‘ পাগলদের মাথা বরাবরই হট থাকে। ‘
— ‘ তোকে..
— ‘ চুপ। আর একটাও কথা নয়। কখন থেকে দুইজন ইঁদুর বেড়ালের মতন ঝগড়াঝাটি করছিস! লোকে কি বলবে? ‘
— ‘ বাপ, আমি আবার কি করলাম! এসব এই দুর্দান্ত বদমহিলার কামাল। ‘
— ‘ আমি! এতো বড় মিথ্যাবাদীর জ্বিব আল্লাহ নির্ঘাত কেটে দিবে। ‘
— ‘ তোর টা না কাটলেই হয়। তোর জিহ্বাতো কাটার ও যোগ্য না। ‘

শান্ত বেচারি এবার বোধহয় কেঁদেই ফেলবে। আর কতো অপমান সহ্য করা যায়? সে সকলের নিকট লোকায়িত ছলছলে চোখ নিয়েই স্টেজ থেকে নেমে পড়ল। বাদবাকি সবাই মিথ্যা স্বান্তনার বাণী শুনালেও সাদিদ নির্বাক। আচমকা তানবীরের চোখ তার দিকে পরতেই সে মাথা নিচু করে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। ভাবখানা এমন যে তানবীর ভিষণ লজ্জা পেয়েছে।
নীলা এতক্ষণ প্রাণের বান্ধবীকে সামলাতে ব্যস্ত থাকলেও এবার অবাক হলো। বলা যায় অনেকটাই। কেননা সাদিদের ঠোঁটের কোণে চাপি হাসিটা তার নজর এড়াতে পারলো না। আর সেটার কারণই তার মাথায় আসছে না। সবাই যেখানে বিয়ে হবে কি হবে না এই চিন্তায় দিশেহারা সেদিকে দুই বন্ধুর এমন নীরব চক্ষু বার্তালাপ তার ঠিক হজম হচ্ছে না। আর ঐদিকে শান্ত গিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত সেন্টারের রুমে সজোরে দরজা আটকে দিয়েছে। এতো ডাকাডাকির পরও দরজা খোলার নাম নিচ্ছে না।
নীলাও এতো হট্টগোলে এবার ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। সাদিদের চোখে সেটা পরা মাত্রই সে দ্রুতপায়ে এগিয়ে আসলো৷ একহাতে নীলার বাহুতে চেপে ধরে তাকে নিজের বুকে আলতো করে জড়িয়ে নিলো। ক্লান্ততার দরুন নীলাও আর কিছু বলতে পারলো না। শুধু আস্তে করে সাদিদের বুকে নিজের মাথাটা মাথাটা হেলিয়ে দিলো।

— ‘ ম্যাডামের জন্য একটা লেমন-মিন্ট জুস। কুইক। ‘

সাদিদ ওয়েটারকে অর্ডার দিয়ে আর দেরি করলো না। ততক্ষণে নীলাকে নিয়ে জনসমাগম থেকে একটু দূরে সরে সোফায় এসে বসিছে। ওয়েটার জুস নিয়ে হাজির হতেই সাদিদ নিজের হাতেই নীলাকে খাইয়ে দিলো।

— ‘ ফিলিং বেটার? ‘
— ‘ হুম। ‘

সাদিদ নিঃশব্দে মৃদু হেসে তার মাথায় হাত রাখলো। চুলের ভাঁজে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে অতঃপর সযত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। যেন ছোট একটা বাচ্চাকে আদর করে কেউ শান্ত করছে। নীলাও প্রিয় মানুষটার বুকের ওম পেয়ে চুপটি করে বসে রইল। নো নড়নচড়ন।
নিঃশব্দে কয়েক মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই নীলা আস্তে করে এবার তখনকার প্রসঙ্গ টেনে বলে উঠল,

— ‘ সবাই এতো টেনশনে রয়েছে। কিন্তু আপনি তখন এমনকরে হাসলেন কেন? ‘
— ‘ কই হাসলাম? ‘
— ‘ মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন না। আপনার মুখের চাপা হাসিটা আমি দেখেছি। ‘
— ‘ তাই? ‘

ঘন গলার প্রশ্নটার পরে নীলা আর কিছু বলতে পারলো না। কেননা চোখ যে কথা বলে। আর সাদিদের সেই জ্বলজ্বলে চোখজোড়ায় নীলা যে নিজের মরণ দেখে। তাই লজ্জা পেয়ে তার বুকে আরেকটু মুখ লুকিয়ে বসলো। অপরদিকে সাদিদও আর কিছু বললো না। কেবলমাত্র তার ঠোঁটের কোণে ঈষৎ চাপা নিঃশব্দের হাসিটা নীলার বুকে যেন ঘূর্ণিঝড় তুলছে। ভয় হচ্ছে এই ধিরিম-দারিম আওয়াজটা না সাদিদের কর্ণকুহর অবধি পৌঁছে যায়? তাহলে যে নীলার লজ্জার পরিমাণটা আরও কয়েকদাপ বৃদ্ধির খাতায় নাম লেখাবে।

.

— ‘ করবো না বিয়ে। ঐ অভদ্র শয়তান ছেলেকে কোনোভাবেই বিয়ে করা সম্ভব নয়। মরে গেলেও না। এটা কোনো মানুষের কাতারে পরে? ‘

শান্ত নিজের মনে বকবক করে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। আর রাগের তোপে অনবরত বিছানার চাদর এলেমেলো করছে। ইতিমধ্যে সুন্দর পরিপাটি রুমটার সে একদম বেহাল দশা করে ছেড়েছে। নিজের মনে সে এতটাই বিভোর ছিল যে, কখন তার পিছনে এসে বলিষ্ঠ শরীরের পুরুষটির আগমন ঘটেছে সেদিকে তার লক্ষ্য নেই। রাগে-দুঃখে সে রীতিমতো সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে যাচ্ছে।

— ‘ বাইদ্দারা কি নদীর কূল ছাইরা ঢাকার জ্যামবহুল লোকালয়ে সাপের খোঁজে আইয়া পরছে না-কি তা? নাইলে কালনাগিনী এমন ফণা তুইল্লা আছে ক্যান? ‘

অবাকচাহনিতে শান্ত পিছনে ফিরে তাকালেও পরমুহূর্তেই সে রাগে অগ্নীশর্মা। তার বোধহয় ইচ্ছে হচ্ছে তেঁতুল-বরই চাটনির পরিবর্তে এই তানবীর নামক ছেলেটাকেই চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে।
তানবীর তার জ্বলন্ত চোখের বুঝলো কি-না সেটা বুঝা দায়, কিন্তু সে এগিয়ে আসলো। শান্তর একেবারে শরীর ঘেঁষে বিছানায় বসলো। শান্তর শরীরে বোধহয় নিয়ন্ত্রণহীন বিষের জ্বলন। তাই সে দ্রুত নিজের স্থান পরিবর্তন করে উঠতে গেল। কিন্তু আচমকাই একটা রক্তপোক্ত রুক্ষ হাত তার কব্জি টেনে ধরলো। শান্ত নিজের চমকিতভাব প্রকাশ করার আগেই নিজেকে তানবীরের একান্ত কাছে অনুভব করলো। গরম নিঃশ্বাসগুলো নিঃসন্দেহে তার দম আটকে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এতক্ষণের রাগ-ক্ষোভ সব জানালা দিয়ে বোধহয় পালিয়ে গেল। নিজেকে একজন বছরজুড়ে রুগ্ন ব্যক্তির ন্যায় কাঁপা অবস্থায় দেখে শান্ত নিজেই হতবাক। কিন্তু তারপরও নিজেকে সামলাতে পারলো না। তার চোখ-ঠোঁট লাগামহীনভাবে কেঁপে চলেছে। মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলার সাধ্যি নেই।
মুহূর্ত অতিবাহিত হয়ে তানবীরের ডানহাতটা শান্তর শাড়ির ফাঁক দিয়ে উন্মুক্ত কোমড়ে পরতেই মেয়েটার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলো। আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে শান্ত শরীরের জোর প্রয়োগ করে আবারও উঠতে গেল। কিন্তু বরাবরের মতোই বিফল।

— ‘ এতো তাড়াহুড়ো কেন? ‘

ঘন স্বরটা যেন শরীরটাকে আরও কাঁপিয়ে তুলছে। অস্ফুটস্বরে কেবল মুখফুটে একটাই বাক্য বের হলো,

— ‘ প্লি…জ যে..তে দি..ন। ‘

তানবীরের ঠোঁটের কোণে ঈষৎ চাপা হাসি। অবশেষে বাঘিনী তাহলে বিড়ালে পরিণিত হলোই। দুষ্টুর মাথায় আরও দুষ্টুমি চাপলো। হাত তো সরালোই না। উল্টো রুক্ষ হাতটা দিয়ে নরম কোমড়টা আরও চেপে ধরলো। তাতে শান্তর মুখফুটে অস্ফুট একটা উত্তেজক শব্দ বেড়িয়ে আসলো।
যা শুনে তানবীরের দুষ্টুমি মুহূর্তেই হিংস্রতায় পরিণত হলো। একটানে শান্তকে নিয়ে বিছানায় পরলো। নরম শরীরের উপর বলিষ্ঠ পুরুষালী শরীরটা আধশোয়া হতেই মেয়েটার বুকে ঝড় উঠার উপক্রম।
তানবীরের নিকট বোধহয় নিজেদের মধ্যের এই সামান্য দুরত্বটুকু আর সহ্য হচ্ছে না। তাই ক্ষেপা বাঘের মতোই শান্তর একেবারে মুখোমুখি হলো। দুইজনের গরম নিঃশ্বাসগুলো তখন একে-অপরের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শান্ত আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না। কিন্তু বন্ধ চোখের পাতাগুলোও অনবরত তিরতির করে কেঁপেই চলেছে।
হঠাৎ বাহির থেকে দরজায় আবারও বিরামহীন করাঘাতে তানবীরের টনক নড়লো। শান্তর থেকে থেকে কেঁপে চলা মুখশ্রীতে নজর পরতেই তানবীরের হাতের শক্ত বাঁধন আলগা হয়ে গেল। এতক্ষণ হুঁশ না থাকলেও এখন যেন পরবর্তী পদক্ষেপটা ভাবতেই নিজের শরীরেই কাটা দিচ্ছে।
সে আস্তে করে শান্তর কোমড় থেকে হাত সরিয়ে আনলো। নিজে উঠে শান্তর দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো।

— ‘ উঠো। ‘

শান্ত এখনও কেঁপে যাচ্ছে। তানবীর আগেও তার কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু আজকে যেন তার চোখের ভাষা ভিন্ন ছিলো। জ্বলজ্বলে চোখজোড়াতে শান্তকে একান্তভাবে কাছে পাওয়ার, শরীরে শরীরে মিশে যাওয়ার পরিপূর্ণ মনোভাব।
শান্তকে তারপরও ভাবলেশহীন দেখে তানবীর আবারও তাকে ডাক দিলো,

— ‘ কি হলো? উঠো। ‘

শান্ত এবার ধীরেসুস্থে উঠে বসলো। শরীরটা এখনও মৃদুভাবে কেঁপে যাচ্ছে। সে অহেতুকই এই অপ্রস্তুত পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য শাড়ির আঁচল, কানের দুল, মাথার টিকলি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। দৌড়ে যে পালাবে এই শক্তিটুকু যেন হ্রাস পেয়েছে। শরীরের অবিচ্ছেদ অঙ্গ পা একেবারে অসার।
তানবীর তীক্ষ্ণ চোখে তার সবটা পরখ করলো। অতঃপর তার অগোচরে ছোট একটা শ্বাস ফেলল। সে নিজেও যে কম অপ্রস্তুত নয়। কিন্তু এখন সেসব ভেবে সময় নষ্ট করার টাইম নেই। বাহিরে বোধহয় দরজা ভেঙে ফেলার উপক্রম। তাই সহসাই তানবীর একটানে আবারও শান্তকে নিজের কাছে আনলো। সর্বদা ঝগড়াঝাটিতে ব্যস্ত থাকা মেয়েটাও আজ ভিতু মেয়ের মতো দুর্বলভাবে চোখ পিটপিট করে যাচ্ছে। তানবীর নিচুস্বরে হেসে ফেলল। তারপর নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজটাতে হাত দিলো।
উন্মুক্ত কোমড়ে ঠান্ডা হলুদের ছোঁয়া পরতেই শান্ত আবারও কেঁপে উঠে নিজের শাড়ি খামচে ধরলো। তানবীর নিজেও সেটা অনুভব করতে পারলো। কিন্তু কিছু করার নেই। এগুলো যে মেয়েটাকে এবার সহ্য করতেই হবে। নতুবা এতো ভালোবাসা নিজের বুকে তানবীর আর কতদিন আগলে রাখবে? বুক না-হয় যেকোনো দিন ফেটে যাবে!

— ‘ এতো সৌন্দর্য দিয়ে আমার চোখ ঝলসে দেওয়ার সামান্য পুরস্কার। দিনকাল বিবেচনায় শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টায় শাস্তির পরিমাণ দিগুণের পরিবর্তে চারগুণ করার দলিল ছাপানো হলো। আর আমি কিন্তু হিসেবে একেবারে পাকাপোক্ত। এক চুল শাস্তির ভাগ কিন্তু বাকিতে রাখবো না। ‘

অতঃপর লজ্জারাঙা মুখটাতে আলতো করে ধরে তানবীর ছোট্ট কপালটাতে চুমু খেলো। তারপর যেদিক দিয়ে এসেছিলে সেদিক দিয়েই পগারপার।
শান্ত সেদিকে তাকিয়ে এবার মাথা নুইয়ে লাজুক হেসে ফেলল। আর সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত হয়ে আসা প্রত্যেকটা ঘটনা বুঝতে পেরে সে নিজের মুখেই হাত চেপে ধরলো। কিন্তু লজ্জাটা পুরোপুরি নিবারণ করার আর সময় পাওয়া গেল না। দরজা বোধহয় এবার ভেঙেই ফেলবে।

— ‘ আরে আস্তে। আসছি রে বাবা। ‘

নিজের এমন লেগে যাওয়া কথা শুনে শান্ত আবারও নিচুস্বরে হেসে ফেলল। তার এতো সুখ সুখ লাগছে কেন? দমবন্ধকর এক সুখানুভূতি!

_____________________

অতঃপর রাত বাড়ার সাথে সাথে বর-কনের হলুদের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান বিনা বিঘ্নে শেষ হলো। উপস্থিত দর্শকমহল আধো বুঝতে পারলো না হঠাৎ করে কি এমন কেরামতি খেলে গেল যে দিন-ক্ষণ না মেনেই চন্দ্র সূর্য একত্রিত হয়ে গ্রহণ লেগে গেল! বিষয়টা সবার মাথার উপর দিয়ে গেলেও তারা নির্বাক শ্রোতা। অবশেষে অনুষ্ঠানের পর্বটা যে চুকে গিয়েছে এটাতেই বোধহয় গুরুজনেরা শান্তি। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে সাদিদের ঠোঁটের কোণের চাপা হাসিটা নীলার কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। এমনকি শান্তর এমন লজ্জায় নুইয়ে পরা চেহারা দেখে সেটা ক্ষণে ক্ষণে নিচুস্বরের ধ্বনি তুলছে। তারপর শান্তর গরম করে চোখ রাঙানো দেখে কয়েক মুহূর্ত শান্ত বাচ্চা হয়ে থাকলেও পরমুহূর্তেই শান্তশিষ্টতা ভুলে গিয়ে তার আবারও একি অবস্থা।

— ‘ খুব খুশি মনে হচ্ছে? ‘

সাদিদ মিচকি হেসে ভ্রু নাচাতেই নীলা আবারও মাথা নিচু করে হাসলো। রয়েসয়ে বলল,

— ‘ আপনি খুব দুষ্টু। ‘
— ‘ এতোবড় অপবাদ! এমন সহজ-সরল ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কেন? ‘

সাদিদ কথা বলতে বলতেই হালকা করে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো। নীলা তার বুকে মুখ চেপে নিচুস্বরে বলল,

— ‘ সব বুঝে বুঝে এমন করেন। ‘
— ‘ আমি আবার কি করি? ‘

সাদিদের রাশভারি কন্ঠটা শুনে নীলা আর প্রতিউত্তর করলো না। শুধু আলতো করে বুকে একটা চিমটি কাটলো। সাদিদের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল অদ্ভুত খুশির এক রেখা। পাখিটাকে ধরে রাখা হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে দিনদুনিয়া ভুলে কপালের একপাশে আর্দ্র স্পর্শ দিলো।

— ‘ ছিঃ ছিঃ ভাই। একটু তো লজ্জা শরম কর। সবাই না থাক আমার মতো ভুলা বালা পুলাডার সামনে ইতা কিতা করস! লজ্জায় তোর বউয়ের না হইয়া আমার কান দিয়া-ই ধোয়া বাহির হইতাসে। ‘

তানবীরের দুষ্টুস্বরের কুটিল বাক্যে নীলা মুহূর্তেই ছিটকে সরে যেতে চাইল। কিন্তু সাদিদ সেসবের বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে তাকে নিজের সাথেই পূর্বেকার ন্যায় মিশিয়ে রাখলো।

— ‘ ওহ্ তাই নাকি? তাহলে সবার সামনে তোর লজ্জার পাঠ্যপাঠ করি? ‘

বলেই সাদিদ ঠোঁট বাঁকিয়ে চোখ টিপলো। তাতেই যা বুঝার তানবীরের বুঝে চলে এসেছে। নিচুস্বরে সে বিড়বিড়িয়ে উঠল,

— ‘ হারামি বন্ধু জুটাইছি যতসব। ‘

তানবীরের বিরক্তিভরা মুখভঙ্গি দেখে উপস্থিত আড্ডামহলের সবাই-ই হেসে উঠল।

— ‘ আচ্ছা অনেক তো হলো। বিয়ের আমেজে একটু গান-টান না হলে কি হয়? ‘
— ‘ ইশশ আমার বউটাকে দেখ। কত বুদ্ধিমতী। বিউটি উইথ ব্রেইন। উম্মা। ‘
— ‘ পাপা আমাকেও উমম্মা দাও। আই নিড বিগ পাইজ উমম্মা। মায়ের থেকেও বড়। ‘

নিধি দ্রুত ছেলের মুখের উপর লাগাম টেনে ধরলো মানে মুখ চেপে ধরলো আর অপরদিকে ছেলের বাপকে কনুই খোঁচা দিলো।
অতঃপর আরেকদফা হাসির রুল পড়লো৷

— ‘ হ্যাঁ সত্যিই। জিজু আপনার গলার একটা গান দিয়ে এই সুন্দর রাতটুকুর সমাপ্তি চাই। ‘
— ‘ শান্তর বাচ্চা তুই তো দেহি কবি হইয়া গেলি! না, না কবির মহিলা ভার্সন যেন কি-তা? ‘
— ‘ আপনার মাথা। এটা উভয় লিঙ্গ। ‘
— ‘ ছিঃ তুই সবার সামনে লিঙ্গ নিয়ে আলাপ করছ! ভাইসব, আমার মতো এমন ভদ্র পোলা এই কি নির্লজ্জ মেয়েরে ঘরের বউ বানাইয়া আনতাসি? ‘

শাহেদ নিজের ইজ্জতের ফালুদার পাঠ চুকিয়ে এবার সজোরে তানবীরের কান টেনে ধরলো।

— ‘ আহ্ ভাই লাগে। ‘
— ‘ লাগার জন্যই ধরেছি। মুখটা এতো বেশি বেশি চলে ক্যান। ‘
— ‘ তোমার যে কতকক্ষণ আগে উম্মা পর্যন্ত চইলা গেছিলি! তার বেলা? ‘

শাহেদ সঙ্গে সঙ্গেই অপ্রস্তুত হয়ে পরে শুকনো কাশি দিলো। অতঃপর কানে টান রেখেই নিচুস্বরে ধমক দিলো,

— ‘ চুপ কর। আমি বড়। কিন্তু তোর মুখ এতো বেশি চলে কেন? বোন-ভাবীবের সামনে কিসব কস? ‘

তানবীরের বোধহয় ফাঁকা মস্তিষ্কে এবার কিছু জ্ঞান প্রবেশের রাস্তা বের হলো। তাই ভদ্র সেজে চুপচাপ সে মুখে তালা লাগালো। শান্ত এখনও মাথা নিচু করেই রয়েছে। আল্লাহ জানে এই ছেলের জন্য তার আর কি কি দেখে যেতে হবে!
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শাহেদই বলল,

— ‘ সাদি, একটা গান হলে কিন্তু খারাপ হয় না। ‘
— ‘ তোমরা শুরু করো। সবসময় তো আমাকেই বলির পাঠা বানাও। ‘
— ‘ শালা গলা একখান পাইছো বইলা দাম মারো? মনে রাইখো তোমার ঐ দাম আমার..
— ‘ থাক দোস্ত বাক্যটা অসমাপ্ত রাখ। নতুবা তোর বাক্যের সমাপ্তির সাথে সাথে উপস্থিত সবার সমাপ্তি হয়ে যাইবো। ‘
— ‘ আমি কইলেই দোষ? বোধহয় তোর মুখখান তুলসিপাতাসহ দুধে ধইছোস? ‘
— ‘ আমি দুধে না ধুই কিন্তু তুই গোবর দিয়া অবশ্যই ধইছোস। ‘
— ‘ শালা হারামি..
— ‘ তুই বইনরে বিয়া করতাম বইসা নাই। অলরেডি হ্যাপিলি মেরিড উইথ উডবি ফ্রাদার। ‘

আবারও সাদিদ-তানবীরের একদফা কথার খুনসুটির পরে একজন স্টাফ এসে সাদিদের হাতে গিটার দিয়ে গেল। নীলা এতক্ষণ নির্নিমেষ প্রিয়মানুষটার হাসিমুখটা দেখে যাচ্ছিল। সময় ভেদে মানুষটা কতটা পরিবর্তন! কখনও বা দায়িত্বশীল স্বামী, আড্ডায় বন্ধুদের সাথে মেতে থাকা উচ্ছল এক যুবক। কখনও বা আদুরে বাচ্চা। এই ছেলেটাকে ঘিরে যেন নীলার মুগ্ধতার শেষ নেই৷

— ‘ এই পাখি, কোথায় হারালে? ‘
— ‘ ভীষণ ভালোবাসি। ‘

ঘোরের মধ্যেই নীলা এই বাক্যটা ব্যবহার করে বসলো। অপরদিকে এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ এমন কথায় সাদিদও কিছুটা অবাক হলো। দৃষ্টিতে সেটা পরিলক্ষিত৷ কিন্তু ধীরে ধীরে সেই চমকিত ভাব কেটে গিয়ে একরাশ মুগ্ধতায় মন-প্রাণ যেন জুড়িয়ে গেল।
সে আলতো করে নিজের পাখিটাকে কাছে টানলো। বড়-ছোট কাউকে পরোয়া না করে তুলতুলে নরম গালে হাত রেখে মুখটা আঁজলাভরে ধরলো। ছোট্ট কপালটাতে দীর্ঘ একটা চুমু খেল।

— ‘ আমিও। সেই প্রথম থেকে, সেই অদূরে থেকেও। এমনকি ভবিষ্যতেও। বারংবার। ‘

একসাথে অনেকগুলো উৎসাহ পূর্ণ শিস বাজানোতে সাদিদ মৃদু হেসে সরে আসলো। অপরদিকে নীলা পারে না মাটি ফাঁক করে নিচে ডুকে যেতে। বোন, বোনের হাসবেন্ড আর এতগুলো মানুষের সামনে এই নির্লজ্জ ছেলেটা কি করে বসলো!
কিন্তু সাদিদের তাতে খেয়াল নেই। তার মুখে চাপা হাসি।

Jab-jab tere paas main aaya ik sukun mila
Jise main tha bhoolta aaya woh wajud mila
Jab aaye mausam gam ke tujhe yaad kiya
Ho jab sehme tanhapan se tujhe yaad kiya

Dil sambhal ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu
Dil yahin ruk ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu

সবাই গানের প্রথম কলিতেই আবারও একসাথে হাতের করতালি আর শিস বাজাতে শুরু করলো। কেননা সাদিদের একদৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে গান গাওয়াতে কারো আর বুঝার বাকি নেই গানটা কাকে ডেডিকেট করে গাওয়া হচ্ছে। স্থান-কাল ভুলে গিয়ে বর-কনে পর্যন্ত এই কাপলকে নিয়ে পরেছে। সবাই হইহট্টগোল শুরু করলেও দুটি ব্যক্তির কোনো তাড়াহুড়ো নেই। একজনে নির্বাক শ্রোতা আর অপরজনে মনের মাধুরি তুলে কন্ঠে তাকে ভালোবাসার জানান দিচ্ছে।

Aisa kyun kar hua jaanun na main, jaanun na
O dil sambhal ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu
Dil yahin ruk ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu

Jis raah pe hai ghar tera
Aksar wahan se haan main hoon ghuzra
Shaayad yehi dil mein rahaa
Tu mujkho mil jaaye kya pataa
Kya hai yeh silsila jaanun na, main jaanun na
Dil sambhal ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu
Dil yahin ruk ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu

Kuchh bhi nahin jab darmiyaan
Phir kyun hai dil tere hi khwaab bunta
Chaha ki dein tujhko bhula
Par ye bhi mumkin ho na sakaa

Kya hai yeh mamla jaanun na, main jaanun na
Dil sambhal ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu
Dil yahin ruk ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu
Dil sambhal ja zara
Phir mohabbat karne chala hai tu

আবারও একদফা হাসির করতালির শব্দের আওয়াজের সাথে এতক্ষণের মুগ্ধতায় ঘেরা পরিবেশটার সমাপ্তি হলো। কিন্তু সমাপ্তি হলো না কেবল দুইজোড়া চোখের নীরব কথোপকথন। নীরবতায় ভালোবাসার প্রকাশ।

— ‘ আবে আর কতো! বেচারা চোখজোড়ারে একটু রেহায় দে। হেদের ও তো একটু নিজেদের মধ্যে বিশ্রামের দরকার আছে। না-কি তোর মতো চেহারা দেইখাই হেগো পেট ভরে? ‘

সাদিদ এবার আর পাল্টা উত্তর দিলো না। মাথা চুলকে কেবল হাসলো। আর আবারও আড়চোখে একবার নীলাকে দেখে নিলো৷ কেবলমাত্র দুইহাতের দুরত্বটুকুও যেন সাদিদের নিকট পাহাড় সমান। ছোট্ট তুলতুলে শরীরটাকে সর্বদা আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়।
সবাই সাদিদের গানের এতো প্রশংসা করছে, পরিবেশ মুহূর্তেই এতো জমজমাট কিন্তু নীলা সেদিকে এখনও নির্বাক। শব্দগুলো যেন তার থেকে হাজার কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থান নিয়েছে।

— ‘ আর ইউ অলরাইট জান? ‘

সাদিদের মৃদু ঝাঁকানিতে নীলা হকচকিয়ে উঠল। সেটা লক্ষ্য করে সাদিদ মুহূর্তেই বিচলিত হয়ে পড়ল এবং উদ্ধিগ্নস্বরে বলল,

— ‘ কি হয়েছে আমার পাখির? দেখি, তাকাও আমার দিকে। আরে বাবা তাকাও না। ‘

নীলা মুখ তুলে তাকালো না। শুধু সাদিদের বুকে মুখ গোঁজে নিচুস্বরে বলল,

— ‘ আমাকে এখনই বাড়ি নিয়ে যান। ‘

সাদিদ হঠাৎ নীলার এমন পরিবর্তনে স্বস্তি পেল না। মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে আছে৷ কিন্তু নীলার এমন ভেজা স্বর শুনে আর প্রতি উত্তর করতে পারলো না। এমনিতেই রাত অনেক হয়েছে। তারা আর একটু পরেই ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য রউনা দিতো। কিন্তু নীলাকে এমন দেখে সাদিদ আর দেরিটুকু করলো না। সবাইকে বলে তৎক্ষনাৎ নীলাকে নিয়ে রউনা দিলো।

.

গাড়ি চলেছে অনেকক্ষণ। রাতের ফাঁকা রাস্তায় সাদিদ কিছুটা অমনোযোগী হয়েই ডাইভ করে যাচ্ছে। নীলা সাথে থাকলে সে কখনও এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার কাজ করে না। কিন্তু আজ করে যাচ্ছে। ডাইভ করাকালীন তার সম্পূর্ণ নজরটুকু নীলাতেই আটকে রয়েছে। কিন্তু নীলার সেদিকে খেয়াল নেই।
সে একধ্যানে খোলা জানালার বাহিরে তাকিয়ে। পুরোটা রাস্তা সাদিদ এতকথা বললেও নীলা প্রতিউত্তরে বরাবরই নির্বাক ছিল। সাদিদ নিজের অস্থিরতাটা আর আটকে রাখতে পারলো না। ফাঁকা জায়গা দেখে তৎক্ষনাৎ গাড়ি ব্রেক করলো।

— ‘ পাখি? ‘

নীলা এখনও নির্বাক। এমনকি সাদিদের দিকে একবার ফিরেও তাকালো না। সাদিদ এবার সিটবেল্ট খুলে নীলার দিকে ক্রমশ এগিয়ে গেল। তার বাহুতে চেপে নিজের দিকে ফিরাতেই,

— ‘ কখন থেকে…

সাদিদ নিজের মুখের কথাটা শেষ করতে পারলো না। গলাটা বোধহয় কেউ শক্ত করে চেপে ধরেছে। বুকটা তার অসহ্যকর এক ব্যাথায় তড়পাচ্ছে। সাদিদ এটা কিভাবে সহ্য করবে? তার পাখিটার চোখে যে জলের ধারা!
তুলতুলে নরম মুখশ্রীতে নোনাজল চিকচিক করছে। মায়াবী আঁখিযুগলে যেন রক্ত জমেছে। সিঁদুররাঙা আবিরে চোখজোড়া টকটকে লাল। ফর্সা বর্ণের মুখটাতে লালচে আভা৷

— ‘ কলিজা, কি হয়েছে? তোমার.. তোমার চোখ-মুখ এমন কেন? শরীর খারাপ পাখি? ডক্টরের কাছে যাই? ‘

নীলা তারপরও কথা বললো না৷ শুধু ছলছলে চোখে নির্নিমেষ সাদিদের অস্থিরতাভরা মুখটাতে তাকিয়ে রইল। সাদিদ যেন এবার পুরোপুরিই দিশেহারা।

— ‘ প্লিজ সে সামথিং। ফর গড সেক প্লিজ জান। ‘
— ‘ আই ওয়ান্ট টু লিভ। আই ওয়ান্ট টু লিভ উইথ ইউ এন্ড আওয়ার বেবি। প্লিজ আই ওয়ান্ট টু লিভ। ‘

অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরে নীলা সাদিদের বুকে হেলে পড়ল। সাদিদের কাছে এই চোখের জল সহ্যের বাহিরে। তার অবস্থা মুহূর্তেই পাগলপ্রায়।

— ‘ লক্ষীটি আমার। এমন করে কাঁদে না জান। দেখি তাকাও। ‘

নরম মুখটা আঁজলাভরে ধরে সাদিদ কপালো শব্দ করে চুমু দিলো। সযত্নে ভেজা গাল থেকে চোখের জলগুলো মুছিয়ে দিলো। তার নিজের গলাও যেন লেগে আসছে।

— ‘ আমি বাঁচতে চাই বাবুর আব্বু। আমি আমাদের ছোট্ট প্রাণটাকে নিয়ে অনেকগুলো বর্ষ বাঁচতে চাই। আমি এই ভালোবাসাগুলো ছেড়ে যেতে চাই না। আমি মরতে চাই না। আমি আরও বাঁচতে চাই। ‘

কান্না ভেজা কন্ঠের এই আকুতি যেন সাদিদের কানে লোহিত ধাতুর প্রলেপ। অসহ্যকর এক যন্ত্রণা। তুলতুলে শরীরটাকে সাদিদ নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। ধরা গলায় একপ্রকার আকুতি জানালো,

— ‘ আমরা বাঁচবো পাখি। আমাদের প্রিন্সেসকে নিয়ে অনেক অনেক বছর বাঁচবো। ওর আধো বুলিতে মা-বাবা ডাক শুনবো, একপায়ে-দুইপায়ে ওর হাঁটা দেখবো। আরও অনেক কিছু। আমরা অনেকদিন বাঁচবো জান। তুমি কান্না থামাও। আমার সহ্য হচ্ছে না কলিজা। প্লিজ কান্না করে না। ‘

নীলার কান্না আজ থামবার নয়। ঐদিকে এমন করে কান্নার ফলে নীলার শরীর মুহূর্তেই খারাপ হবার আশংকায়। সাদিদের অবস্থা বেহাল। সে তুলতুলে গালগুলোতে অজস্র চুমু খেল।

— ‘ তুমি আমার লক্ষ্মি পাখি না? এমন করে না। শরীর খারাপ করবে যে। ‘

সাদিদের এতো আকুতি-মিনুতির পরও নীলা হেঁচকি তুলে কান্না করছে। নিজের ভাগ্যকে বোধহয় তার নিজেই নজর লেগে গিয়েছে। নতুবা এতো স্বামী সুখ পেয়েও কেন হাতেগোনা দিনটুকু তার ভাগ্য নিয়ে এসেছিল? তার যে ভালোবাসা চায়। এমন অন্তরালের ভালোবাসার মায়ার বাঁধন ছেড়ে সে কিভাবে যাবে? তার যে সহ্য হচ্ছে না। সৃষ্টিকর্তা কি একটুখানি রহম করবেন না?
সাদিদ এবার নীলাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চুলই টেনে ধরলো। এই কান্নার আওয়াজ তার সহ্যসীমার বাহিরে।

— ‘ কান্না থামাও নীলাঞ্জনা। আই সেইড স্টপ দ্য ক্রায়িং ড্যাম ইট। ‘

সাদিদের রাগীস্বরের ধমকিতে কাজ দিলো। নীলার কান্নার বেগ না থামলেও অভিমানী মেয়ে মুখ চেপে কান্না বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাদিদ একবার সেদিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল। না আর এই দৃশ্য সহ্য করে যাওয়া সম্ভব নয়।
নিঃশব্দে গাড়ির ভিতরকার লাইট এবং হেডলাইটের আলো নিবিয়ে দিয়ে সে ডাইভিং সিট থেকে বাহিরে বেড়িয়ে আসলো। এবং দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে পিছনের দরজা খুলে দিয়ে নীলার পাশের দরজাটাও খুলে দিলো। এবং মুহূর্তেই তাকে আলতো করে পাঁজাকোলে তুলে নিলো।
যেভাবে যত্নে সহকারে কোলে নিয়েছিল সেই একইভাবে তাকে কোলে নিয়েই পিছনের সিটে এসে বসলো।
এই পুরোটা সময় নীলা অবাক হলেও কান্নার বেগ থামাতে পারেনি। কান্নাভেজা চোখেই নিঃশব্দে সে সাদিদের এইসব পাগলামি দেখে গেল।
কিন্তু এতেই যে শেষ হবার নয়। ভালোবাসার পাগলামি যে কেবল শুরু। পিছনের সিটে এসে বসার পরমুহূর্তেই বোধহয় বন্ধ গাড়িতে একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। প্রবল আশ্লেষে সাদিদ নীলার নরম অধরযুগল নিজের মধ্যে নিয়ে নিলো। লাগাতার, বিরামহীনভাবে ভেজা ঠোঁটজোড়া একইসাথে মিলিত হতে লাগলো।
নীলা বোধহয় এতোটা পাগলামিও আশা করেনি। তার চোখজোড়া হিসেবের চেয়ে বড় আকার ধারণ করেছে। অপরদিকে সাদিদ চোখ বন্ধ করে একমনে প্রিয়তমার গোলাপের পাপড়ির ন্যায় নরম ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত। এতটাই বিভোর যে অবাধ্য হাতগুলো কোথায় কোথায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছে সেদিকেও তার খেয়াল নেই। আর থাকবেই বা কেমন করে?
এতক্ষণ পাখিটাকে কান্না বন্ধ করতে বহুত বারণ করে গিয়েছে। কিন্তু তার নরম পাখিটা যে কথা শুনতে অনিচ্ছুক। তাই এবার সাদিদকেই তার কান্নায় লাগাম টানতে হতো।
একাধারে এমন উষ্ণ ভালোবাসাময় আদরের পর নীলার আবেশে শরীর অসার হয়ে যাচ্ছে। সাদিদের বাহুবন্ধনী এতটাই প্রবল যে ছুটবার সম্ভাবনা একেবারেই দূর্লভ।
তাই আবেগে-আবেশে, শরীরী উত্তেজনায় নীলাও সাদিদের ঘাড়ে-গলায় জড়িয়ে ধরেছে।
এতক্ষণের আদর যেন নীলার এককদম এগিয়ে আসাতে আরও প্রখর হলো। সাদিদ নীলাকে নিজের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে মিশিয়ে নিলো। প্রিয়তমা যে এখন কেবল প্রাণোচ্ছল রমণী নয় বরং তার অনাগত সন্তানের মা সেদিকে পাগল বাবার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। সম্পূর্ণ বিষয় মাথায় রেখেই সে শরীরী উত্তেজনায় প্রিয়তমাতে ডুব দিয়েছে। অবাধ্য হাতগুলো ততক্ষণে নীলার ঢিলেঢালা জামার জিপারে গিয়ে ঠেকেছে। খুবই অভ্যস্তভাবে সাদিদ অন্ধকারেই নীলার কামিজের জিপ খুলে দিলো। অতঃপর নগ্ন পিঠে চলতে থাকলো নিজের পুরুষালী হাতের অসহ্যকর আদর। নীলা ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠতেই সাদিদ ঠোঁট ছেড়ে দিলো। নরম শরীরের গলায় মুখ গোঁজে ভেজা ঠোঁটের চুমু দিতে লাগলো। কাঁধে, পিঠে, গলা, গালে, কপালে কোথায় কোথায় ভেজা ঠোঁটের চুম্বন পড়লো না! প্রিয়তমার তুলতুলে নরম শরীরটার প্রত্যেকটা ভাঁজে যেন সাদিদ নিজের ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত। নরম বুকে বলিষ্ঠ হাত পরতেই নীলা এবার লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে সরে যেতে চাইলো। কিন্তু সাদিদ এতো সহজে দিলে তো? তাকে কষ্ট দেওয়া তাই না?
তাই এবার সে ও কষ্টের ভাগ ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু স্বামীর দেওয়া পরম সুখের কষ্ট।
বুকে আলতো করে চাপ প্রয়োগ করে সাদিদ নরম বুকে মুখ গোঁজল। ছোট্ট বড় অসংখ্য চুমুর বন্যায় প্রিয়তমার কান্নার সাথে সাথে সে নিজেও থেমে গেল। বুকে মুখ রেখেই সাদিদ মাথা তুলে নীলার মুখপানে তাকালো।
নীলার একটাহাত সাদিদের কালচেবাদামি চুলে আর অপর হাতটি অনবরত নিজেকে সামলাতে সাদিদের ঘাড়ে খামচে আঘাত করে যাচ্ছে। নীলার নিঃশ্বাস ইতিমধ্যে ঘন হয়ে এসেছে। সাদিদের নিজেরও একি অবস্থা। কিন্তু আর সামনে যাওয়া সম্ভব নয়। শরীরের খিদে জেগে উঠলেও সাদিদ সেগুলোকে নিঃশব্দে ধমকে বিদায় করলো। অতঃপর ঘর্মাক্ত মুখটা নীলার খোলা বুকে ঘষে মুছিয়ে নিয়ে মাথা উঁচু করলো। গোলুমোলু মুখটা তিরতির করে কেঁপেই চলেছে। নিঃশব্দে চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে সাদিদ নীলার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।
কয়েক মুহূর্ত নীরবতায় কেটে যেতে সাদিদ গম্ভীর কিন্তু নরমস্বরে বলে উঠল,

— ‘ আর কখনও যেন এমনটা না শুনি পাখি। আজকেই ফাস্ট এবং আজকেই লাস্ট। এই শব্দটা উচ্চারণ করা তোমার জন্য নিষিদ্ধ। আমি এটা তোমার ডিকশনারিতে বরদাস্ত করবো না। কোনোভাবেই না। ‘

নীলার এতক্ষণে কান্না-কষ্ট, আবেগ ভুলে গিয়ে হাসি পেল। এবং সে আটকাতে না পেরে নিচুস্বরে হেসেও ফেলল। এবং সেটা মুহূর্তেই সাদিদের কাছেও স্থানান্তরিত হয়ে গেল। সে নিজেও তার হাসি দেখে নিঃশব্দে হেসে নীলার মাথায় চুমু খেল। এবং জামার জিপারটা লাগাতে হাত দিলো। নীলা আবারও তাতে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করতেই সাদিদের দুষ্টুমিরা পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠল,

— ‘ আগেও তুলতুলে ছিলে কিন্তু প্রিন্সেস আসার আগমনে আরও বেশি তুলতুলে হয়ে গিয়েছো পাখি৷ শুধু আদর করতে ইচ্ছে হয়। সারাটাদিন নরম শরীরটাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়। আমার এতো ইচ্ছেগুলো কি পূরণ হবার নয়? ‘

নীলা উত্তর দিতে পারলো না। আরেকদফা এমন লাগামহীন কর্মকান্ড এবং কথাবার্তায় কুঁকড়ে গিয়ে লজ্জার স্থানেই মুখ লুকিয়ে নিলো। ইশশ দিনশেষে কি লজ্জাটাই না তার প্রাপ্য ছিল! এখনও শরীরে যেন লজ্জার বিষাক্ত নীল বিষেরা নিজেদের কার্যসিদ্ধিতে মত্ত রয়েছে।

#চলবে…

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৬২ ❤❤❤

রৌদ্রদীপ্ত সকালের মিষ্টি কিরণ এসে নীলার চোখে-মুখে পরতেই তার গভীর ঘুমটা ধীরে ধীরে হালকা হতে শুরু করলো। গতরাতে ঘুমাতে গিয়ে অনেকটাই লেইট হওয়ার দরুন বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। নীলা চোখ পিটপিট করে খোলতেই নিজেকে কারো সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো অনুভব করলো৷ ব্যক্তির দিকে না তাকিয়েই নীলা নিঃশব্দে হাসলো। এই পুরুষের ঘ্রাণ যে নীলার সমস্ত অঙ্গে বহমান। তাকে কিভাবে অনুভব করতে সে ভুল করবে?
এইবার ঢাকায় শীতের মাত্রা বেশ প্রবল। ইংরেজি মাসের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এসে পড়ছে অথচ এখনও আবহাওয়াতে শীতের প্রকোপ রয়ে গিয়েছে। কিন্তু বেচারা সাদিদ এই শীতেও ঘেমে নেয়ে অস্থির। নীলার জন্য সে এসিও ছাড়তে পারে না। আবার কম্বল না দিয়েও পারে না। নতুবা পাখিটাকে নিজের বুকের সাথে আগলে রাখবে কিভাবে? মেয়েটা যে একেবারে শীতকাতুরে! তাই প্রতিদিন তাকেই খালি গায়ে ঘুমাতে যেতে হয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
নীলা একপলক মাথা তুলে সাদিদের মুখশ্রীতে নজর দিলো। দেরিতে ঘুমিয়ে তার ও এখন অবধি ঘুম ভাঙেনি৷ তাই আপনমনে ভেবে নেওয়া নিজের দুষ্টু ইচ্ছেটাকে প্রশয় দেওয়া যেতেই পারে।
নীলা সাদিদের লোমশ বুকটাতে আঙুল দিয়ে অযথাই খানিক আকিঁবুকিঁ করলো। সাদিদের এতেও কোনো নড়াচড়া না দেখে চুপি চুপি তার পুরুষালী বুকটাতে নাক ডুবালো। টেনে টেনে তার শরীরের পাগল করা নেশা ধরানো ঘ্রাণটা তার নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে নিতে লাগলো। এ যেন ড্রাগের থেকেও বড় নেশালো দ্রব্য। পুরুষালী এই তীব্র স্মেলে নীলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বারংবার প্রলয়কারী ঝড় উঠে।

— ‘ নটি গার্ল! আমার ঘুমিয়ে থাকার এডভান্টেজ নেওয়া হচ্ছে? ‘

আচমকা সাদিদের ঘুম জড়ানো আওয়াজ পেয়ে নীলা হুড়মুড়িয়ে বুক থেকে মুখ তুলতে গেল। কিন্তু সাদিদ বরাবরের মতোই নিজের বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে তাকে আটকে দিলো। খুবই সাবধানে নীলাকে বালিশে শুইয়ে তার উপর আধশোয়া হলো। এমনিতেই শরীরে পানি চলে আসাতে নীলা আগের তুলনায় অনেকটাই গোলুমোলু হয়ে গিয়েছে। তারউপর ঘুমিয়ে উঠার পর নীলার ফোলা গালগুলো আরও যেন ফুলে থাকে। সাদিদের তো ইচ্ছে করে কামড়ে-কুমড়ে একেবারে খেয়ে নিতে। বউটা এতো কিউট কেন?

— ‘ আমি.. মানে.. ছাড়ুন। আমি উঠবো। ‘
— ‘ সেটা বললে কি হয়? চুরি চুরি এসব করে এখন পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে? ‘
— ‘ আ..মি কি করলাম? ‘
— ‘ তুমি কি করলে? ‘

নীলার ভিতু মুখশ্রী দেখে সাদিদের দম ফেটে হাসি পাচ্ছে। কিন্তু কোনোরকমে হাসিটা চেপে রাখলো। আপাতত সকাল সকাল বউটাকে একটু না জ্বালালে কি হয়?

— ‘ তুমি কি করছিলে? এমন নেশাগ্রস্তদের মতো বুকে নাক টানার কি মানে? আমার বুঝি লজ্জা লাগে না? ‘

ইশশ তার আবার লজ্জা! একেবারে নির্লজ্জের একশেষ। কিন্তু এটা কি এখন বলা যায়? নীলা নিজেই তো ধরা পরে গিয়েছে। তাই খানিকটা তোতলানো স্বরেই বলল,

— ‘ একেবারেই না। আমি আর এসব! ছাড়ুন বলছি৷ আজকে শান্তর বিয়ে না? পরে সেন্টারে পৌঁছাতে লেইট হয়ে যাবে। ‘
— ‘ তাই বললে কি হয়? চুপি চুপি নিজের পাওনা নিয়ে গিয়ে আমাকে রিটার্নে কিছুই দিবে না! এটা মানা যায়? একদমই নয়৷ ‘
— ‘ কি রিটার্ন! সকাল সকাল কি আবোলতাবোল বলা শুরু করেছেন বলুন তো? ‘

সাদিদ আর উত্তর দিলো না। শুধু দুষ্টু হেসে ক্রমচ নিচের দিকে নেমে পড়ল। নীলার পরনে রাতের ঢিলেঢালা ক্রপটপটা আরও উপরে উঠিয়ে সাদিদ নগ্ন পেটে মুখ রাখলো। গরম নিঃশ্বাস খালি পেটে পরতেই নীলা দুর্বলভাবে তাকে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু সাদিদ কি এতোটাই ভালো মানুষ?
নীলার বাঁধা না নেমে উঁচু পেটটাতে সময় নিয়ে গাঢ় চুমু খেল। নীলা মৃদু কেঁপে উঠতেই সাদিদ তাতে নিঃশব্দে হেসে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো।

— ‘ বিয়ের এতদিন পর, এতোবার কাছে আসার পরও আমার অল্প স্পর্শতেই এতো কাঁপা-কাঁপি! ইজ এন্ট ইট স্টেইঞ্জ? ‘

নীলা এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলো না। শুধু তার লাল মুখটা লজ্জায় আরও লালচে বর্ণ ধারণ করলো। প্রিয়তমার লজ্জায় রক্তিম মুখশ্রী দেখে সাদিদের ঠোঁটের কোণেও মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। প্রিয়তমার এই রূপটা যে সাদিদের বরাবরের মতোই ভীষণ প্রিয়। বারবার দেখেও যেন মন ভরে না। আরও দেখতে ইচ্ছে হয় এবং তাতে পাগল হয়ে আরও ভালোবাসায় উন্মাদ হতে ইচ্ছে হয়।
সাদিদ তুলতুলে নরম পেটটাতে হাত বুলিয়ে আরও গুটকয়েক উষ্ণ চুমু খেল। অতঃপর পেটে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

— ‘ প্রিন্সেস, তুমি পাপার গুড গার্ল না? তাই এখন চুপটি করে চোখ বন্ধ করে রাখবে। বাবা তোমাকে আদর দিয়েছি না? এখন মাকেও তো আদর দিতে হবে৷ তাই লক্ষ্মি মেয়ের মতো ঘুমিয়ে থাকো। ‘

নীলা সাদিদের কান্ডে ফিক করে হেসে ফেলল। তা দেখে সাদিদ তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকালো,

— ‘ সমস্যা কি? হাসার মতন কি হয়েছে? ‘
— ‘ না না। আমার আবার কি সমস্যা? কিন্তু আপনার মেয়েকে যে এতসব বললেন, সে যদি চোখ বন্ধ না করে? আপনি তো তাকে দেখতে পাবেন না। বুঝবেন কি করে? ‘

সাদিদের মুখে এবার চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা গেল। মনে হয় বিষয়টা সে খুবই সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে। মিনিট দুই-এক সে চুপচাপই থাকলো। কিন্তু আচমকাই নীলার উপর আধশোয়া হয়ে তার মুখোমুখি হলো। এবং বেশ ভাব নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলল,

— ‘ একদমই না। আমার প্রিন্সেস গুড গার্ল। সে আমার মতোই হয়েছে। তাই বাবার কথা না শুনে সে থাকতেই পারবে না। কিন্তু তার মায়ের মতন হলে সমস্যা ছিলো। প্রিন্সেসের মা যে বাবার একটা কথাও শুনে না। ‘

সাদিদের মুখে মেকি অসহায়ত্বের ছাপ। তা দেখে নীলা রাগ করলো না বরং আবারও খিলখিলিয়ে হেসে ফেলল। সাদিদ নিজেও মৃদু হাসলো। আর প্রাণোচ্ছল তরুণীর ন্যায় প্রিয়তমার হাসিমুখটা মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলো।
অতঃপর শক্ত হাতের আঙুলগুলো তুলতুলে নরম গালগুলোতে স্থান পেল। নীলা এখনও থেকে থেকে হাসছে। আর সাদিদ অপলক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অবাধ্য আঙুলগুলোর স্থান পরিবর্তন করতে লাগলো। ঠোঁটের কোণ, গলায়, গালে আঙুলের খেলা চলতেই থাকলো।
নীলার হাসিমুখটাতে এবার লজ্জারা এসে ভিড় জমিয়ে। প্রিয়তমের চোখজোড়া যে নীরবে কথা বলে।
সাদিদ একপলক নীলার চোখের দিকে তাকালো। তাতে নীরব সমর্থনের আশ্বাস পেয়েই আলতো করে নিজের পুরুষালী ঠোঁটজোড়া কোমল নারীর ঠোঁটে মিলিয়ে দিলো। প্রবল আবেগ মিশিয়ে ছোট্ট ছোট্ট আদর দিতে লাগলো। কিন্তু নীলার উপর কোনোরকম শরীরী ভার না দিয়েই।
সাদিদকে এটা কখনই নীলার তরফ থেকে বলতে হয় না। সে যতই নিজের ভালোবাসায় হিংস্রতা প্রকাশ করুক না কেন? কিন্তু নীলার শারিরীক অবস্থার কথা তার মাথা থেকে এক মুহূর্তের জন্যও যায় না। হাজারো আবেগের ভেলায় চড়েও যেন প্রিয়তমার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তার চোখ-কান সর্বদা সচেতন।
সময়ের সাথে সাথে সাদিদের বাহুবন্ধনী আরও গাঢ় হলো। দৃঢ় হলো ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে নেওয়ার প্রবল আকর্ষণ। নীলাও ইতিমধ্যে নিজেকে সামলাতে সাদিদের ঘাড়ের পিছনের ছোট ছোট সিল্কি চুলগুলোতে সজোরে নিজের মুঠিতে টেনে নিয়েছে। যখন বুঝতে পারলো প্রিয়তমা আর সহ্য করতে পারবে না তখন ধীরে ধীর সাদিদ নিজেকে তার ঠোঁট থেকে সরিয়ে আনলো। নীলার হালকা গোলাপি ঠোটযুগল তিরতির করে কেঁপেই চলেছে। আর এতক্ষণের বিরামহীন আদরে সেগুলো এখন টকটকে লাল বর্ণ পরিণত হয়েছে। যেন হালকা একটা টুকা দিলেই গড়গড়িয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসবে।
সাদিদ আবারও মাথা নুইয়ে নীলার ঠোঁটে দীর্ঘ একটা চুমু খেল। অতঃপর আস্তে ধীরে সরে আসলো।
কিন্তু নীলাকে এখনও চোখ বন্ধ করে একরকমে শুইয়ে থাকতে দেখে দুষ্টু হেসে ফিচেল স্বরে বলে উঠল,

— ‘ পাখি, আরও আদর চাই? ‘

নীলার যেন এবার হুঁশ ফিরলো। সে পাশ থেকে একটা কুশন নিয়ে সাদিদের গায়ে ঢিল দিলো। আর যেতে যেতে নিচুস্বরে বলে গেল,

— ‘ অসভ্য একটা। ‘
— ‘ অসভ্য আর কোথায় হতে দিলে জান? রেড এলার্ট যে আগেই জারি করে রেখে দিয়েছো। একবার প্রিন্সেস আসুক, তারপর না বুঝবে অসভ্য কাকে বলে কত প্রকার এবং কি কি? ‘

সাদিদের গলায় এখনও দুষ্টুমিরা খেলা করছে। আর অপরদিকে নীলা দ্রুতপায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। নতুবা এই অসভ্য ছেলের মুখ যে কন্টিনিউসলি চলতেই থাকবে৷

__________________

শুক্রবার বিধায় বরপক্ষ জুম্মার সালাত আদায় করে তারপর কনভেনশন সেন্টারে আসবে। তাই ইতিমধ্যে কনেপক্ষ এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। নীলা, নিধি, শায়লা রহমানকে এখানে ড্রপ করে দিয়ে সাদিদ, শাহেদ আবারও তানবীরদের সাথে জয়েন করেছে। কেননা নামাজ শেষে তারা একসাথেই এখানে আসবে।
নীলার শরীরের কন্ডিশন বিবেচনায় সাদিদ খুবই আরামদায়ক একটা পোশাক তার জন্য চুজ করেছে। কোনোরকম স্টোনের কাজ বিহীন পিচ কালারের সফ্ট কাপড়ের লেসের শর্ট স্লিভের ঢিলেঢালা একটা গ্রাউন। তাতে নীলার কমফোর্ট ফিলের সাথে সাথে বিয়ের অনুষ্ঠানের সাথেও মিলিয়ে যাচ্ছে।

— ‘ দোস্ত চয়েজ কার? জিজুর নাকি, হুহ? ‘

শান্তর দুষ্টুমি স্বরে নীলার ভাবনা থেকে খেয়াল ফিরলো। সে এতক্ষণ খুটিয়ে খুটিয়ে সাদিদের পছন্দটাই দেখে যাচ্ছিল। নীলাকে আগ বাড়িয়ে কখনোই কিছু বলতে হয় না। সে যেন এমনিতেই নীলার অন্তর্যামী। নীলা মৃদু হেসে শুধু মাথা নাড়ালো।

— ‘ বাহ্ বাহ্ তোদের প্রেম দেখি সময়ের সাথে সাথে সমানুপাতিক না সরি দ্বিগানুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে। ‘
— ‘ তানবীর ভাইয়া বুঝি আপনাকে কিছু কম করে? আমি শপিংয়ে যাইনি তো কি হয়েছে, আপনার মাথার টিকলি থেকে পায়ের নুপুর পর্যন্ত যে তানবীর ভাইয়ার পছন্দ করা সেগুলো কি আমি জানি না মনে করেছেন? ‘

শান্ত এবার থেমে গেল৷ কেননা প্রসঙ্গ যে নিজের ঘাড়ে এসে পড়েছে। সে আমতাআমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু নীলাই তাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিলো,

— ‘ হয়েছে এখন আর প্রসঙ্গ পাল্টাতে মিথ্যা বলতে হবে না। খুব সুন্দর লাগছে রে তোকে। আমারই নজর না লেগে যায়। ‘

বলেই নীলা প্রিয় বান্ধবীর গালে ছোট্ট করে একটা ভালোবাসার উষ্ণ পরশ দিলো। হাসিখুশি মুহূর্তটা যেন নিমিষেই পাল্টে গিয়ে থমথমে হয়ে গেল। এতক্ষণ বহুত আজেবাজে জিনিস করে শান্ত নিজের কান্নাটা লুকিয়ে রাখলেও এখন যেন বাঁধ ভেঙে গেল। শান্তর জলে ছলছলে চোখ দেখে নীলারও চোখে জল এসে গেল।

— ‘ শান্ত, তুই কি বোকা? কান্না করছিস কেন? ‘
— ‘ আই উইল মিস ইউ বেব। ‘
— ‘ ইশশ ভাবটা এমন যেন কোন বিলাতে চলে যাচ্ছিস! পাঁচ মিনিটের পথ। ভাইয়াকে বললে রাত হোক দিন হোক নিয়ে চলে আসবে। ‘
— ‘ ঐটাতো একটা উল্লুক। আমার কোনো কথা শুনে বুঝি? ‘
— ‘ আহারে! শুনে না বলেই কি সকলের অগোচরে আপনাকে প্রথম হলুদ লাগিয়ে আসে? ‘

বলেই নীলা ঠোঁট বাঁকিয়ে ভ্রু নাচালো। এতক্ষণের কান্না ভুলে গিয়ে তৎক্ষনাৎ শান্ত আবারও লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। শাড়ি দিয়ে পেট এতো ঘুরে রাখলেও দুষ্টু বান্ধবীটার চোখে ঠিকই সেটা পরে গিয়েছে। ইশশ কি লজ্জা! তখনই দুই বান্ধবীর কথোপকথনে বিঘ্ন ঘটিয়ে শান্তর ছোট্ট চাচাতো বোনটা এসে বলতে শুরু করলো,

— ‘ নীলা আপু বর এসেছে। তাড়াতাড়ি চলো বর এসে গিয়েছে। জলদি আসো। ‘

নীলা কেবল পিচ্চিটার দিকে অসহায় চোখে তাকালো। ছোট্ট মেয়েটাতো আর জানে না নীলা এই রুম থেকে বেড়িয়ে সেন্টারে ঢ্যাং ঢ্যাং করলে তার গালে আরেকজন একটা থাপ্পড়ও মিস করবে না। তাই নিঃশব্দে বিরস মুখে নীলা সেখানেই বসে রইল। আর সবাই হইহট্টগোল করে বরের আগমনে বের হলো।

— ‘ দোস্ত আমার বুকটা দেখ, কেমন করে যেন ধকধক করতাসে। ‘

শান্তর ভয়ার্ত মুখের কথা শুনে নীলা এবার হেসে ফেলল। হাসিমুখেই বলল,

— ‘ আরে ভয় পাস না। বিয়ের সময় সবারই এমন নার্ভাসনেস হয়। ‘
— ‘ না দোস্ত। আমার বুক বোধহয় ফাইট্টা যাইব। কবুল বলার আগেই কি মইরা-টইরা যামু নাকি? ‘
— ‘ চুপ। বাজে কথা কম বল। ভাইয়া শুনলে থাপ্পড় একটাও মিস হবে না। ‘

এবার বোধহয় কাজ হলো। শান্ত আজেবাজে বকা ছেড়ে শান্ত মেয়ের মতোই চুপচাপ বসলো। কিছু সময় পর বড় কয়েকজন এসে শান্তকে স্টেজে নিয়ে যেতে আসলো। কিন্তু ভিতু মেয়েটা কিছুতেই নীলার হাত ছাড়বে না। তাই হাসিমুখে নীলাও তার সাথেই চললো।

________________

— ‘ কিরে এমন ঘামছিস কেন? ‘
— ‘ না ঘাইম্মা উপায় আছে বাল? এতো টাকা কি সেন্টারের মালিকের মাথায় ঢালবার লিইগ্গা দিছিলাম? গরমে শরীর জ্বইলা যাইতাসে। ‘
— ‘ কই! হলের ভিতরে তো বেশ ঠান্ডা। ‘
— ‘ মামা তুমি আমার অবস্থাটা বুঝবা না। হট মামা ভীষণ হট। ‘

তানবীরের নিচুস্বরের আবোলতাবোলের অর্থ সাদিদ বুঝতে পেরেও আর কিছু বললো না। সে বারবার কেবল অস্থির হয়ে ঘড়িতেই সময় দেখে যাচ্ছে।

— ‘ এই সাদি, বিয়ে কি তোর নাকি? তুই এতো টেনশনে কেন? ‘
— ‘ বিয়ে না হলে কি হয়েছে? বাবা তো হচ্ছি। আর বউটা সেই কখন থেকে সাথে নেই। এই টেনশন তুই বুঝবি? ‘

অর্ণব সাদিদের কথার প্রতিউত্তরে কেবল মাথা নুইয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সাদিদের বিষয়টা স্বাভাবিক লাগলো না। গতকাল থেকেই অর্ণবকে সে বেশ চিন্তিত দেখছিল। কিন্তু কি ভেবে যেন আর জানতে চায়নি। আর আজকে আবার প্রিয়তীকেও সাথে নিয়ে আসেনি৷ তাই সন্দেহের বশে বলেই ফেলল,

— ‘ কি হয়েছে বল তো। তোর হাব-ভাব আমার ঠিক ভালো ঠেকছে না। আর প্রিয়তীকেও যে দেখছি না। বিয়েতে আসেনি নাকি? ‘

অর্ণব মুখে উত্তর না দিয়ে সাদিদকে শক্ত করে ঝাপটে ধরলো। মুখে উপচে পরা হাসি নিয়ে বলে উঠল,

— ‘ চাচ্চু হচ্ছিস দোস্ত। ‘
— ‘ কি? ‘
— ‘ হ্যাঁ রে। প্রিয়তী প্রেগনেন্ট। গত দুইদিন থেকেই বলছিল শরীরটা ভালো লাগছে না। প্রথম প্রথম এতো গুরুত্ব দিতে চায়নি। কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছিল। আর আজকে সকালেই তাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। আর রেজাল্ট পজিটিভ। সে ইচ্ছে করেই আসেনি। এতো লোকজনের মধ্যে নাকি আসতে ভালো লাগছিল না। তাই আমিও আর জোর দিতে পারলাম না। ‘
— ‘ কনগ্রেস ইয়ার। ‘

সাদিদও হাসি মুখে অর্ণবের পিঠ চাপড়ে দিলো। তাদের দুইজনকে কোম্পানি দিতে তানবীরও নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ধরাম করে অর্ণবের পিঠে এক চাপড় বসালো। বেচারার বোধহয় পিঠটাই ভেঙে যাবার উপক্রম ছিলো।

— ‘ হারামি করস কি? লাগে না? ‘
— ‘ অভিনন্দন জানাইতে আইলাম। আর তানবীরের অভিনন্দন জানানোর স্টাইলই এমন। ‘
— ‘ তোর পিঠে এমন কয়েকটা পড়লে স্টাইল চলে যাবে। ‘
— ‘ হাতে গুনে চারমাস। তারপর আমিও তোদেরকে পিঠে চাপড় দেওয়ার চান্স করে দিব বাডি’স। ‘

বলেই তানবীর চোখ টিপলো। আর সাদিদ আর অর্ণব দুইজনই তার দুষ্টুমির টপিকে শব্দ করে হেসে ফেলল।
তানবীরের মুখেও হাসি। কিন্তু আচমকাই যেন তার দুষ্টুমিরা নিজেদের জায়গা ছেড়ে লুকিয়ে পালালো। সে থম মেরে দাঁড়িয়েই রইল।
সাদিদ আর অর্ণব তার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো। আর বন্ধুর এহেন আচরণের কারও ঠিক বুঝে উঠতে পারলো। তাই তারা আবারও একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো।
সিঁদুর রাঙা লেহেঙ্গায় গোল্ডেন আর সিলভার স্টোনের ভারি কাজের সাথে শরীরজুড়ে ব্রাইডাল গোল্ডের জুয়েলারিতে শান্তকে যেন আজ চেনা-ই যাচ্ছে না। দুইহাতে অর্গানিক মেহেদীর টকটকে লাল রং। হাত ভরা চুড়ি। ব্রাইডাল সাজে সে যেন এক মানুষরূপী পরী। তানবীর বারকয়েক চোখ বুজে আবার তাকালো। না সহ্য করা যাচ্ছে না। এই ভয়ংকর সৌন্দর্য যে চোখ রীতিমতো পুড়িয়ে দিচ্ছে।
শান্তকে এনে তানবীরের ঠিক পাশে বসানো হলো। সর্বদা দাপটে চলা মেয়েটাও আজ নিজের বিয়ের দিনে এসে চুপসে গিয়েছে। চোখ উপরে তুলে তাকাতেই পারছে না। কেননা সে যে না তাকিয়েও উপলব্ধি করতে পারছে পাশের মানুষটির ঝলসানো দৃষ্টি তার সমস্ত অঙ্গে খেলা করে যাচ্ছে। আর এখানেই যে শান্তর সবচেয়ে বেশি ভয়। লজ্জা-জড়তা সব।

— ‘ হসপিটালের জন্য এডভান্স সিট কাটতে হবে বোধহয়। ‘

শান্ত এতক্ষণে চোখ তুলে তানবীরের দিকে তাকালো। কিসের মধ্যে কি! কিন্তু তার অবাককরা চাহনিতে তানবীর থেমে গেল না। বরং মুখ নিচু করে শান্তর কানে নিচুস্বরে বলে উঠল,

— ‘ কাইঁজ্জাখুন্নি মাইয়া, তুইতো শেষ। আজকে আমার ধ্বংসকারী হাত থেকে তোকে কে বাঁচাবে? ‘

মুহূর্তেই শান্তর শরীরে যেন কাঁপন ধরেছে। সমগ্র অঙ্গে থরথর করে কাঁপুনি শুরু হয়েছে। তানবীরের কন্ঠস্বর নিচু হলেও তাতে নেশালো আভাস স্পষ্ট। গরম নিঃশ্বাসগুলো যেন এই এয়ারকন্ডিশনেও শান্তর শরীর পুড়িয়ে দিয়ে যাবে।

— ‘ ওহ্ ওহ্। দেবরসাহেব এখনই সব কথা শেষ করে ফেলবেন নাকি? রাতের জন্যও কিছু বাকি রাখুন। ‘
— ‘ রাতে কি আর কথা বলার সময় পাওয়া যাবে ভাবী? অন্য কাজ আছে না? ‘

নিধি এসেছিল তানবীরের কান টানতে। কিন্তু নির্লজ্জ ছেলের এমন কথায় তার নিজের কান দিয়েই যেন ধোয়া বের হবার জোগাড়। তাই নিজের সম্মান বাঁচিয়ে সে জলদি কেটে পড়ল। সকলের টুকিটাকি দুষ্টুমি, হাসি-ঠাট্টার মধ্যে দিয়েই অবশেষে বিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা এসেই গেল। কাজি সাহেব যখন শান্তকে কবুল বলতে বলল এই মেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই শেষ।

— ‘ আরে শান্ত কি হচ্ছে এটা? ওনাদের কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে। বলে দাও। ‘
— ‘ হ্যাঁ ছুটকি বলে ফেল। ওনারা বিরক্ত হচ্ছে। ‘

কে শুনবে কার কথা। একটা মেয়েই বোধহয় এই সময়টা উপলব্ধি করতে পারে। তিন অক্ষরের কবুল শব্দটা যে তখন কতটা ভারী, আর সেটা মুখে বলা যে কি কঠিনতম কাজ সেটা কাউকে বুঝিয়ে বলা হয়তো কোনো কালেই সম্ভব নয়। তানবীর নিজেও সেটা বুঝতে পারছে। কিন্তু তাই বলে কি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে এই মেয়ের নাকের জল চোখের জল দেখবে নাকি?

— ‘ চুপ। আর একটা কান্নার আওয়াজ শুনলে তোর খবর আছে৷ চুপচাপ কবুল বল। তোকে কি কিডনাপ করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি নাকি! নাহলে এমন ছিঁচকাঁদুনের মতো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছিস কেন? ‘

উপস্থিত সবাই আবারও একবার হতবাক। এই বর-কনে বিয়ের আগেই যেমন করে সকলের সামনে ঝগড়াঝাটি করে যাচ্ছে, আল্লাহ ভালো জানেন ভবিষ্যতে এদের কি অবস্থা হবে। সবাই আর যাই ভাবুক না কেন কিন্তু তানবীরের এই ধমকে বেশ কাজ হলো। শান্ত হুরহুর করে বলে ফেলল,

— ‘ কবুল। ‘

একইভাবে তিনবার কবুল বলার পর তানবীরের পালা আসতে সে একদমই সময় নিলো না। কাজিসাহেব বলার সাথে সাথেই সে কবুল বলে ফেলল। সবাই একদফা হাসাহাসি করলেও সে তাতে নির্বাক। আপাতত তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি শান্তর উপরেই বিরাজমান। আপাতদৃষ্টিতে তার দৃষ্টির ভাষা বুঝা ভীষণ কঠিন। সে নিজেই জানে তার মনে মনে কি ফন্দি চলছে।

________________

বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে এবার সময় বিদায়ের পালা। বিদায়বেলা বরাবরই বড্ড করুণের। কিন্তু তানবীরের আগে থেকেই সর্তকবাণীতে শান্ত এবার আর কাঁদার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারল না। শুধু নিচুস্বরে বারবার নাক টেনে গিয়েছে। আর মনে মনে ইচ্ছে মতন তানবীরকে গালাগাল মানে নিজের সদ্য বিবাহিত জামাইকেই মনের দুঃখে বকে যাওয়া।
ঐ বাড়িতে কিছু নিয়মকানুনের জন্য নিধি-নীলার সাথে সাথে আরও কয়েকজন আত্মীয়রা তানবীরের বাড়িতে আজকের রাতটা কাটাবে। তানবীরের এতো সহায়সম্পদের মধ্যেও হাতেগোনা কয়েকজন কাছের আত্মীয়। নতুবা সবাই সুসময়ের অর্থের পাগল। তাই শায়লা রহমান নিজে এসে শান্তকে গৃহ বরণ করে গিয়েছেন৷ তারপর নিধি আর নীলাদের আজকের রাতটা এখানেই কাটানোর জন্য বলে গিয়েছেন। বিয়ে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন না থাকলে কি বিয়ে বাড়ি মনে হয়?
টুকিটাকি কিছু নিয়মনীতি শেষ করে শান্তকে তানবীরের রুমে নিয়ে এসে বসাতেই তার বুকে আবারও হাতুড়িপেটা শুরু হয়েছে।

— ‘ শান্ত এবার তাহলে তুই থাক। আমরা গেলাম। ‘
— ‘ আরে বস না। এতো তাড়া কেন? চল আজকে সারারাত দুইজনে বসে আড্ডা দেই। ‘

অতি উত্তেজনাতে শান্তর বোধহয় মাথাটাই গিয়েছে। নীলা এতজনের সামনে কিছু না বললেও তানবীরের আত্মীয়দের মধ্যে একজন বলেই ফেলল,

— ‘ কিগো নতুন বউ, জামাইরে বাহিরে বসাইয়া বান্ধবীরে নিয়া আড্ডা দিবা? জামাই কি এতসহজেই ছাইরা দিব? ‘
— ‘ আরে ছাড়বো কি, আজকে রাতে তো সুপার গ্লুর মতো চিপকে থাকবো। ‘
— ‘ শুধু কি চিপকেই থাকবো? আর কিছু করবো না? ‘

শান্ত পারে না দৌড়ে এই বেশরম মহিলাদের সামনে থেকে পালাতে। নীলাও এসব কথায় বেশ লজ্জা পাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে এমনিতে যতই দুষ্টুমি করুন না কেন, কিন্তু সবার সামনে তারা বরাবরই ভদ্র বাচ্চা। তাই দুইজনই বেশ লজ্জা পাচ্ছে।
নিধিই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এগিয়ে আসলো,

— ‘ আচ্ছা হয়েছে। তোমরা আর বেচারিকে ভয় পাইয়ে দিও না। এবার আসো তো৷ তানবীর বোধহয় বাহিরে অপেক্ষা করে আছে। ‘

সবাই আরও কিছু হাসি তামাশা করে অবশেষে রুম থেকে বের হলো। নীলাও তাদের সাথে বেড়িয়ে আসলো। একটু দূরেই সাদিদকে দেখা গেল। তারা বন্ধুরা মিলে ক্রমাগত তানবীরের টাং খিঁচে চলেছে। নীলাকে তানবীরের রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখেই সাদিদ এদিকে এগিয়ে আসলো। মুখে তার মৃদু হাসি৷

— ‘ অবশেষে ম্যাডামের আমার জন্য সময় হয়েছে? ‘

নীলা তার এহেন কথায় চোখ ছোট করে তাকাতেই সাদিদ তাকে আলতো করে ধরে কাছে টানলো। ডান গালটা আস্তে করে টিপে দিয়ে বলল,

— ‘ কিছু খাবে? ‘
— ‘ ইশশ না৷ আর কত? একটু আগেই না খেলাম! ‘
— ‘ আচ্ছা খেতে হবে না। কিন্তু এখানে প্রথমবার এসেছো৷ কিছু লাগলে আমাকে কিন্তু অবশ্যই বলবে। ‘

নীলাকে এতটুকু বলে সাদিদ গলা উঁচিয়ে পিছনে তাকিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্য বলে উঠল,

— ‘ আমি গেলাম। দায়িত্বটা তোদের উপর বরাদ্দ। হারামি এতদিন আমাদের পকেট খালি করছে। আজকে এর একেবারে কানাকড়িও ছাড়বি না। সবটুকু উশুল চাই৷ ‘

অতঃপর নীলাকে নিজের সাথে আগলে নিয়ে সাদিদ তাদের জন্য গুছিয়ে রাখা রুমে চলে আসলো। দরজা লক করে দিয়ে পিছন ঘুরতেই পাখিটাকে খোলা জানালার বাহিরে একধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখল। আর মুহূর্তেই সাদিদ দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসলো।

— ‘ পাখি এসব কি? বলেছি না এমন সময়ে-অসময়ে চুল ছেড়ে বাহিরে আসবে না। ‘

বলতে বলতেই সাদিদ তার লম্বা চুলগুলোকে নিজের একহাতের মুঠিতে নিয়ে নিলো। তাতে নীলার নিচু গলার অভিযোগ,

— ‘ বাহিরে কোথায়? এখন কি জানালার পাশেও দাড়াতে দিবেন না? ‘
— ‘ না দিব না। তুমি বুঝো না কেন? আমার এসবে ভয় হয় পাখি। আমি তোমার ক্ষেত্রে কোনোরকম রিক্স নিতে রাজি নই। এসব কুসংস্কারকেও নই। ‘
— ‘ আমার জন্য আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তাই না? ‘

সাদিদ নিজের পাখিটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। মাথায় দীর্ঘ একটা চুমু খেয়ে প্রচন্ড আবেগ মিশানো জড়ানো গলায় বলল,

— ‘ না জান। একবারেই না। বরং তুমি পাশে না থাকলেই আমার যত কষ্ট হয়। সহ্য করার মতো নয়। তাই সবসময় আমার পাশে থেকে অনবরত পাগলামি করে যাবে। আমি কিছু বলব না। লক্ষ্মি পাখি আমার। ‘

নীলার মনটাও নিমিষেই আবার খারাপ হয়ে গেল। আজকাল সাদিদ নীলা দুইজনই খুব ভালো অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বাহির দিয়ে তারা বড্ড সুখি, বড্ড পাগল। কিন্তু একমাত্র ভিতরটাই জানে তারা কত খন্ডে বিভক্ত হয়ে আছে। দিনশেষে আপনজনের মুখেই হাসি ফুটাতে তারা সর্বদা হাস্যমুখের অভিনয়ে মেতে থাকে। কিন্তু দিনশেষে দু’জনেই চোখের দৃষ্টিতে ধরা। আবার পরমুহূর্তেই সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে সম্পূর্ণ অজানার ভাণ ধরে। নীলা এবার মুখ তুলে সাদিদের দিকে তাকালো। সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে তার মনটা ভালো করতে বলে উঠল,

— ‘ বাবু আবারও তার বাবার আদর চায়ছে। ‘
— ‘ তাই? ‘
— ‘ হুম তাই। জলদি জলদি। ‘

সাদিদ তার কথায় মৃদু হাসলো। প্রিয়তমার ছোট্ট কপালটাতে আদুরে একটা চুমু খেয়ে তাকে সাবধানে কোলে তুলে নিলো। এগিয়ে গেল নরম বিছানাটার দিকে৷ প্রিয়তমাকে যে এখন আদর দিতে হবে। আদরে আদরে তার সবটুকু কষ্ট শুষে নিয়ে শূন্য কোঠায় স্থান দিতে হবে।

.

ঘরে উপস্থিত লোকের সংখ্যা একে একে কমে যেতেই শান্তর আবারও মৃগী রুগীদের ন্যায় কাঁপাকাঁপি শুরু হলো।
ভয়ার্ত চোখেই সে তানবীরের রুমটাতে নজর বুলালো। এতক্ষণ সবার মধ্যে থেকে কিছু দেখার সুযোগই ছিল না। লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধায় রুমটা ডেকোরেশন করা হয়েছে। এতো এতো ফুলে মনে হচ্ছে কোনো রুম নয় সাক্ষাৎ ফুলের বাগান। সাথে জেসমিনের সৌরভের অসংখ্য ক্যান্ডেলে রুমটা আলোকিত। শান্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে যাচ্ছে নিজের রুমটাকে। হ্যাঁ এটাতো আজ থেকে তারই রুম। বিবাহের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুধু এই রুমটুকুই তার নয়। বরং এই বাড়ি এবং এর প্রতিটি আনাচে-কানাচেতে আজ থেকে শান্তর দায়িত্ব। তার নিজের ছোট্ট সংসার।
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে শান্ত সেদিকে ফিরে তাকালো। আজ সারাদিকে যেন তানবীরের দিকে তাকানোর তার সাহসই হয়নি। এখনও হচ্ছে না৷ কিন্তু বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকতে যে বড্ড ইচ্ছে হয়। এই দুষ্টু ছেলেটা যে একান্ত তার নিজের। তার উপর শান্তর অনেক অধিকার, অনেক মুগ্ধতা। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের এই ছেলেটিকে মেরুরের মধ্যে গোল্ডেন শেরওয়ানিতে বর সাজে মারাত্মক লাগছে। চোখ ফিরানো যে দায়। আবার ঐদিকে বড়রা শিখিয়ে দিয়েছে বাসরঘরে তানবীর আসলে তাকে যেন পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। তাই শান্ত ধুরু ধুরু বুক নিয়েই ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেল।
তানবীর ডেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলে পাঞ্জাবির বোতাম খুলছিল। আচমকাই শান্ত নিজের মতো করে তানবীরে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ফেলল। হঠাৎ এমন করাতে তানবীরও বিষয়টা বুঝে উঠতে পারলো না।

— ‘ সালাম করার দরকার ছিল না। এসব আমি মানি না। ‘
— ‘ আস..লে বড়রা বলে দিয়েছে। তাই। ‘
— ‘ আচ্ছা থাক। আর বলতে হবে না। এসব পরে আর কতক্ষণ থাকবে? ভারি জিনিসপত্র ছেড়ে ফ্রেস হয়ে আসো। ‘

শান্ত বিনাবাক্য তানবীরের কথা পালন করলো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো এতো এতো অলংকার, সেফটিপিনে। শান্তর এসবের সাথে এমন নীরব যুদ্ধ দেখে তানবীর এগিয়ে গেল। এবং নিঃশব্দে তার কাজে সহায়তা করলো। এদিকে পুরোটা সময় শান্ত যেন দম আটকে বসে ছিল। শরীরে তানবীরের রুক্ষ বলিষ্ঠ হাতগুলোর ছোঁয়া পরতেই যেন শরীর বরফ শীতল হয়ে যাচ্ছিল।

— ‘ হুম সব খোলা শেষ। এখন যাও। ‘

শান্ত এবারও বিনাবাক্য তার কথা পালন করলো। তার নিজের শব্দ ভান্ডার যেন আজ ফাঁকা। হালকা কমলা রঙের একটা সুতি শাড়ি নিয়ে সে ওয়াসরুমের দিকে এগিয়ে গেল। সারাদিনের ক্লান্ততায় বেশ সময় নিয়ে একটা শাওয়ার নিলো। অতঃপর ভেজা চুলে তোয়ালে পেচিয়ে সে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। কিন্তু কয়েকদম সামনে এগুতেই শান্ত নিজেকে শূন্য অনুভব করলো৷ আচমকা এমন হওয়াতে ভয় পেলেও ক্যান্ডেলের মৃদু আলোয় তানবীরের কোলে নিজেকে দেখে কোনোভাবে বুকে ফুঁ দিয়ে সামলে নিলো। কিন্তু তানবীরের বলা নেই কওয়া নেই এমন করার কারণটা কি?

— ‘ কি হয়ে..ছে? এমন করে..

বাকিটা বাক্য সমাপ্ত করতে না দিয়েই তানবীর তাকে নরম বিছানায় একপ্রকার ছুঁড়ে ফেলল। আর সেকেন্ড সময় অতিবাহিত না করেই নিজের সবটুকু ভর তার নরম শরীরের উপর তুলে দিলো।

— ‘ কি কর..ছেন কি? আমি ব্যাথা পা..চ্ছি। উঠুন। ‘

তানবীর উঠলো তো না-ই উল্টো শান্তর নরম গালগুলো শক্ত হাতে চেপে ধরলো,

— ‘ তখন ওভাবে কান্না করার কি মানে? তোকে কি আমি জোর করে বিয়ে করেছিলাম? নাকি মন এখনও বিদেশের বাগদত্তার কাছে পরে আছে? ‘

শান্তর চোখ বোধহয় বেড়িয়ে আসার উপক্রম। এই ছেলেতো আচ্ছা পাগল। কবুল বলার সময় কি কোনো মেয়ে হাসবে নাকি? এটাতো একটা বাচ্চাও বুঝে।

— ‘ এটাতো…
— ‘ চুপ। সবাইকে কি জানাতে চাস? আমি খারাপ? আমার কাছে তুই খারাপ থাকবি? তাই এতো কান্নাকাটি? ‘
— ‘ আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমি কেন এমনটা মনে করাতে যাব? ‘
— ‘ তাহলে বল এতো কান্নাকাটির কি মানে? তুই দেখেছিস? তোর বাপ মানে আমার শ্রদ্ধেয় শশুর আব্বা কেমন বড় বড় চোখ করে তাকাইয়া ছিল! না জানি উনার আদরের দুলালীরে আমি কতই না দুঃখে রাখুম। ‘
— ‘ ইশশ আপনি তো আমাকে কিছু বলতেই দিচ্ছেন না। ‘
— ‘ আর বলতে দিবোও না। ‘

কথাটুকু শেষ করেই তানবীর নিজের মুখ শান্তর গলায় ডুবিয়ে দিলো৷ খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ঘষাতে শান্তর অবস্থা বড্ড করুণ। ঐদিকে তানবীর নিজের কাজে মত্ত। এতদিনের পিপাসিত প্রাণের কাছে আজকে যেন জলের সন্ধান। তাই সে সবকিছু ভুলে নিজের পিপাসা নিবারণে ব্যস্ত।

— ‘ আমি ব্যাথা পাচ্ছি। ‘

শান্তর অস্ফুটস্বরের কথাটাতে তানবীরের মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না। শুধু শান্তর কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে ঘন শ্বাস ফেলে বলল,

— ‘ মাত্র এতটুকুতেই? এখনও যে অনেক ব্যাথা পাবার বাকি। এখনই কাহিল হলে চলবে? ‘

কি ছিলো বাক্যটাতে শান্ত সেটা জানে না। কিন্তু এমন নেশালো বাণে শান্তর শরীর অসার থেকে অসার হতে চলেছে। শরীরে যেন একবিন্দু পরিমাণ শক্তি নেই। বড্ড অভাব। কিন্তু চরম এক সুখানুভূতি। বোধহয় এমন জ্বালাময়ী সুখ কেবল বিবাহের পবিত্র বন্ধন থেকেই উপলব্ধি করা সম্ভব। আর ঐদিকে রাতের প্রহরের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে যেন ভালোবাসার প্রহরেরও পরিবর্তন হচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে ভালোবাসার গভীরতাটুকু যেন ক্রমশ বৃদ্ধির পথে।

#চলবে…