অন্তরালের অনুরাগ পর্ব-৭৩+৭৪

0
976

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭৩ ❤

শ্যাম পুরুষদের রাগ বড্ড ভয়ংকর। রাগের তোপে তখন শ্যাম বর্ণটা ঈষৎ কালচে হয়ে দাড়ায়। আপাতদৃষ্টিতে সামনের ব্যক্তির জন্য সেটা মুহূর্তেই অপ্রস্তুতের উৎস বহন করে উঠতে পারে। শান্তর বর্তমান পরিস্থিতিটাও কিছুটা তেমনই। তানবীরের রাগের অগ্নিলাভার ন্যায় গরম নিঃশ্বাসগুলো তার মুখের উপর এসে আছড়ে পরছে৷ গালে চেপে রাখা হাতের বাঁধন যেন আরও জোরালো হলো।

— ‘ আ..মার খু..ব লাগছে। ‘

শরীরের শিরা-উপশিরাগুলোতে প্রচন্ড রাগ কাজ করলেও প্রিয় নারীর আকুল আবেদনে তানবীরের হাতের বাঁধন কিছুটা আলগা হয়ে এলো। পুরোপুরি না ছাড়লেও একদম না ধরে রাখার মতনই তার হাতের চাপ। ভালোবাসে যে। আর ভালোবাসলে প্রিয় মানুষের কষ্টেভরা মলিন মুখটা কি সহ্য করা যায়? যায় না তো।
তানবীর শান্তকে নিজের সাথে আরও খানিকটা মিশিয়ে ধরলো। দুইজোড়া ঠোঁট প্রায় লেগে আসা দূরত্বে নিয়ে পূর্বেকার ন্যায় ক্ষেপা স্বরেই বলল,

— ‘ কতদিন ধরে এসব চলছে? আমাকে বলিসনি কেন? ‘
— ‘ আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না। ‘

তানবীর প্রচন্ড আক্রোশে শাড়ির ফাঁক দিয়েই শান্তর কোমড় চেপে ধরলো৷ হয়তো বা রাগের বশেই কোমড়ের নরম ত্বকে নখের আঁচড় লেগে গিয়েছে। যার ধরুণ কোমল নারী শরীরে সেটার প্রভাব জ্বলমান হচ্ছে।
তানবীর শান্তর ফোনের ডিসপ্লেটা তার মুখের সামনে ধরলো। ইনবক্সের কিছু বাজে ম্যাসেজে চোখ পরতেই শান্তর কলিজা যায় যায় অবস্থা। এই রাগী পুরুষ নির্ঘাত আজ তার জান কবজ করে ফেলবে। নিশ্চিতভাবে বলা যায় বুঝিয়ে বলার টাইমটুকু তাকে দেওয়া হবে না। তাই শান্ত নিজের সবটুকু শক্তি খরচ করে তানবীরকে জড়িয়ে ধরল। নিঃশ্বাস একপ্রকার বন্ধ করে একদমে বলতে লাগলো,

— ‘ প্লিজ আমার কথাটুকু একবার শুনুন। আপনি রেগে যাবেন বিধায় এতদিন সাহস করে বলতে পারিনি৷ আর এই ম্যাসেজগুলো আমি চেক করিনি। এর পিছনে কে রয়েছে সেটাও আমি জানি না। আমিতো বিরক্ত হয়ে উল্টো ব্লকলিস্টে ফেলে রেখেছি৷ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আপনাকে ধোকা দেওয়ার চিন্তা আমি স্বপ্নেও করতে পারি না৷ বড্ড ভালোবাসি তো৷ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। ‘

শান্ত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। গলা বোধহয় শুকিয়ে গিয়েছে। বেশ ক্লান্ত হয়েই তানবীরের বুকে মুখ গোঁজে অনবরত ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। পুরুষালি শক্তপোক্ত একটা হাত শান্তর মাথাটা আলতো হাতে বলিষ্ঠ বুকে চেপে ধরতেই আবহাওয়াতে যেন শীতলতা নেমে এলো। এতক্ষণের দমবন্ধ করা শ্বাসটুকু যেন সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়াতে শুরু করেছে। শান্ত মুখ উঁচু করে তানবীরের দিকে তাকাতেই তার কপালের মধ্যেখানে সদ্য গোসল শেষ হওয়া সিক্ত ঠোঁটজোড়া জায়গা পেল। স্বামীর হৃদয়জুড়ানো ভালোবাসায় শান্তর চোখযুগল পিটপিট করে বন্ধ হয়ে গেল। তানবীর শান্তর ছোট্ট পানপাতা আকৃতির মুখটা আঁজলাভরে ধরে ভীষণ আদুরে ভালোবাসা মিশ্রিত স্পর্শ বিলাতে লাগলো। পুরুষালি ঠোঁটজোড়া কোমল ঠোঁট ছুঁয়ে যেতেই শান্তর হাতগুলো তানবীরের মাথার পিছনের ছোট্ট চুলগুলো টেনে ধরল। তানবীর শান্তর নরম-পাতলা শরীরটা মুহূর্তেই নিজের বুকের সাথে আগলে নিয়ে দরজাটা লক করে দিলো। তানবীরের নিকট একেবারে ভারহীন শরীরটাকে নিজের ছন্দে বালিশে সযত্নে এসে শুইয়ে দিলো। পুরুষালী শরীরী ভরটা আলতো করে শান্তর উপর পরতেই তার মুখ ফুটে চাপা অস্ফুট একটা শব্দ বেড়িয়ে এলো। তানবীর আলতো করে তার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়েই আবারও ঠোঁটযুগল মিলিত করলো। রুক্ষ বলিষ্ঠ হাতগুলো নিষিদ্ধ সব জায়গায় ছুঁয়ে যেতেই কোমল নারী শরীরটাতে ঝড় বয়তে শুরু করলো। শান্ত তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতেই তানবীরের অসভ্য হাতগুলোর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দুর্বল হাত দিয়ে তাকে বাঁধা দিতে চাইল। কিন্তু তানবীরের পাল্টা আক্রমণে শরীর যেন অসার হয়ে পড়ল। নরম গোলাকার বিছাটাতে একেবারেই শরীর ছেড়ে দিয়ে সে পরে রইল। তানবীর চোখের পলকে কোমল নারী শরীরটাকে নিজের উন্মুক্ত বুকের উপর তুলে নিলো। আলতো করে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

— ‘ তুই কি ভাবিস আমাকে? হ্যাঁ তোর বিষয়গুলো আমার কাছে আর দশটা বিষয় থেকে বহুগুণ আলাদা। তোকে নিয়ে আমার চিন্তাগুলো চব্বিশ ঘণ্টায় শেষ হতে চায় না। কিন্তু তাই বলে কি তোকে আমি অবিশ্বাস করি কিংবা তোর চরিত্র নিয়ে আমার মনে কোনো দ্বিধা আছে? এমনটাই কি তোর ভাবনা? ‘

শান্ত মুখ তুলে তানবীর হালকা রাগ মিশ্রিত মুখটাতে নজর দিলো। শুনতে খারাপ লাগলেও তখন তানবীরকে এমনভাবে রেগে যেতে দেখে শান্তর ভয়ার্ত মনটা এমনটাই চিন্তা করে নিয়েছে। তাই প্রশ্নের কোনোরকম প্রতিউত্তর দেওয়ার সাহস শান্তর হলো না। সে অপরাধীর ন্যায় মুখটা নিচু করেই রাখলো।
তানবীর মুহূর্তেই তার নিচু মুখটা তার বরাবরে নিয়ে আসলো। কোমড়ের দুইপাশে হালকা চাপ প্রয়োগ করে তাকে আরেকটু নিজের মুখ বরাবর করলো। ঠোঁটযুগল ছুঁইছুঁই করে পুনরায় বলল,

— ‘ হয়তো বা আর সবার মতো আমি আমার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো তোকে বলে বেড়ায় না। তাই বলে কি ভালোবাসাটা কম?
তোর চিন্তাশক্তির উপরে আমি তোকে চাই। খুব বেশি চাই। যেই চাওয়ার হার প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়েই চলেছে। কমার বিন্দুমাত্র নাম নেই। তাই তোকে নিয়ে চিন্তাও বেশি হয়। অনিচ্ছা স্বত্বেও বোধহয় হিংসুটে হয়ে উঠি। তার মধ্যে যদি তুই এমন বিরক্তিকর কাজ-কারবার করিস তাহলে আমার মাথাটা কিভাবে ঠিক থাকবে বলতে পারিস? এতসব হলো অথচ
আমাকে একবারও বলার প্রয়োজনবোধ অবধই করিসনি? এটা জানার অধিকার কি আমার নেই? ‘

তানবীরের সুক্ষ্ম দাঁড়ালো প্রশ্নবাণে শান্তর মুখটা আবারও চুপসে গেল। সে মাথা নুইয়ে মিনমিন করলো,

— ‘ এভাবের মতো ক্ষমা করে দিন। আর কখনও এমনটা হবে না। ‘
— ‘ তোর কথার গ্যারান্টি কি? মাসখানেক আগেও কিছুটা এই ধরণের কাজই করেছিলিস। ‘
— ‘ আমার কি দোষ? আপনার যেই মাথাগরম! এমনসব কথা বলতে ভয়ে আমার বুক কাঁপে। আর বলি কি, ভার্সিটির ছেলেগুলো এতোদিন কোথায় ছিল? যখন সিঙ্গেল ছিলাম তখনতো একটাকেও পাশে ঘুরঘুর করতে দেখেনি৷ যেই বিয়ে হয়ে মিঙ্গেল হলাম এমনি তাদের দেখা সাক্ষাৎ মিলতে শুরু করলো৷ বিষয়টা কি গ্রহণযোগ্য? এটা যে প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ! ‘

শান্তর কন্ঠে ঈষৎ রাগপূর্ণ আভাস। কিন্তু তানবীর এবার রাগ ভুলে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ছিটেফোঁটা বেঁচে যাওয়া রাগটাও এবার যেন বরফের ন্যায় গলতে শুরু করলো। সে শান্তর কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলল।
আর মুহূর্তেই শান্তর উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মুখশ্রীতে যেন কেউ আলতা ঢেলে দিয়ে গেল। লজ্জায় তার কানের লতিটাও লালচে হতে শুরু করেছে।

— ‘ ছিঃ কি অশ্লীল! ‘
— ‘ বউয়ের কাছে আবার কি শালীনতা! এখানেই তো যত সীমালঙ্ঘনের স্বাধীনতা। ‘

শান্ত চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে তানবীরের বুকে একটা কিল বসালো। সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসছে। অতঃপর আলতো করে শান্তর গালে হাত বুলিয়ে বলল,

— ‘ এবার কিন্তু সত্যিই এসব নিয়ে ভাবা উচিত। কি বলিস? ‘
— ‘ কি বলবো? ‘
— ‘ আরে বাচ্চা-কাচ্চা নিতে হবে না? আর এখনতো বাচ্চা নেওয়া রীতিমতো ফরজ হয়ে দাড়িয়েছে। বউয়ের পিছনে যেই পরিমাণ বেয়াদব ছেলেগুষ্টির লাইন পরেছে অতি শীঘ্রই মেয়ে থেকে মা তে কনভার্ট করা প্রয়োজন। ‘
— ‘ ইশশ চুপ করেন তো৷ সবসময় যত আজেবাজে কথাবার্তা। ‘

তানবীর থামলো না বরং শান্তকে নিজ বুকের সাথে আরেকটু চেপে ধরে অধৈর্য্য স্বরে বলল,

— ‘ তুই চুপ থাক। সাদি মেয়ের বাবা হয়ে গেল। অর্ণবও সেই পথের যাত্রী। আর আমি-ই কি-না সবার পিছনে রয়ে গেলাম! এই মেয়ে বল না কবে বাবা হচ্ছি? ‘
— ‘ ছাড়ুন তো আমাকে। আপনার মাথাটা পুরোই গিয়েছে। ‘

তানবীর তাকে ছাড়লো না। উল্টো মুহূর্তেই বুকের উপর থেকে নামিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরল। পূর্বেকার স্বরেই বলল,

— ‘ এতোসব বুঝি না। বল আমাদের বাবু কবে আসবে? ‘
— ‘ কি মহা জ্বালা! আমি এসব কিভাবে জানবো? এসবে কি আমাদের কারো হাত আছে? ‘
— ‘ সেটা না থাকুক। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তোর জন্য তো ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। ‘
— ‘ সরুন তো। মুখে কিছু আটকায় না। ‘
— ‘ কি আটকাবে! ঠিকই তো বলছি। এবার আর ছাড়াছাড়ি নেই। একেবারে বাবা ডাক শুনে তবেই ছাড়ছি। ‘

শান্ত এবার লজ্জারাঙা মুখেই ফিক করে হেসে ফেলল। এমনসব কথা বললে না হেসে পারা যায়! কিন্তু তানবীরের মুখ হাসিহাসি দেখা গেল না। বরং সে খানিকটা রাগ ঝরা কন্ঠে ধমকে উঠল,

— ‘ এমন পরিস্থিতিতে দাঁত কেলিয়ে হাসলে দাঁতটাই ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে। আমি এদিকে টেনশনে মরছি আর তুই কি-না হাসিস? ফাজিল মেয়ে-ছেলে। ‘
— ‘ এসব কথা বললে না হেসে উপায় আছে? আর তাছাড়া এতো টেনশনের কি আছে! যখন বাবু হবার হয়ে যাবে। ‘
— ‘ মানে! তোর ভাষ্যমতে কি কোনো প্রসেস ছাড়াই বাবু আকাশ থেকে উড়ে উড়ে আসবে? ‘

শান্ত তানবীরের এহেন কথায় আবারও হেসে ফেলল। তানবীর রাগী চোখে তাকাতেই সে মুখ চেপে ধরল। অতঃপর লজ্জামাখা কন্ঠেই মিনমিনিয়ে বলল,

— ‘ সবই হবে। আমি কি আপনাকে কখনও বাধা দিয়েছি বা বাবুর বিষয়ে না করেছি? ‘
— ‘ মুখফুটে হ্যাঁ ও তো বলিসনি। ‘
— ‘ আপনি কি এতোটাই বোকা নাকি! আমার বলতে লজ্জা লাগবে না বুৃঝি? ‘

বলেই শান্ত আবারও মাথা নুইয়ে নিলো। তানবীরের মুখটা এবার বেশ উজ্জ্বল। খুশিতে আত্মহারা হওয়ার জোগাড়। সে একে-অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হলো। শান্তর নিচু করে রাখা মুখটা আঁজলাভরে তুলে নিয়ে তপ্তস্বরে বলল,

— ‘ তার মানে হ্যাঁ বলছিস? ‘

দুনিয়ায় সব লজ্জার আবির বোধহয় আজ শান্তর কাছে এসেই ধরা খেয়েছে। সে আবারও লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। নিঃশব্দের হ্যাঁ বোধক উত্তরে তানবীর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। তার এতো খুশি খুশি লাগছে কেন!
তানবীর দীর্ঘ সময় নিয়ে শান্তর কপালে উষ্ণ পরশ দিলো। আবেশে শান্তর চোখজোড়া তৎক্ষনাৎ বন্ধ হয়ে এলো। কিন্তু শাড়ির আঁচলে তানবীরের হাত পরতেই সে বাধা দিতে গেল,

— ‘ কি করেন? ‘
— ‘ যা করা উচিত। ‘
— ‘ ছাড়ুন তো৷ ডিনার রেডি করা আছে। নিচে চলুন। ‘

শান্তর কথায় ছটফটানি ভাব। তানবীরকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরাতে চাইছে। কিন্তু তানবীরের মতো শক্ত সামর্থ্য পুরুষের সাথে কি শান্ত নামক পিচ্চি মেয়েটা পারে!
তানবীর হাত বাড়িয়ে রুমের লাইট সুইচগুলো অফ করে দিয়ে মুহূর্তেই রুমটাকে অন্ধকার রাজ্যে নিয়ে গেল।
পরিস্থিতি হাতের বাহিরে যাবার উপক্রম ধরতেই শান্ত আরেকবার লাস্ট চেষ্টা করলো,

— ‘ খাওয়া-দাওয়া করবেন না? প্লিজ ডিনারটা…

তানবীর তাকে বাক্যটা সমাপ্ত করতে দিলো না। উন্মুক্ত গলায় হালকা করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। অতঃপর অবাধ্য হাতগুলোর অসভ্য কার্যক্রম চালাতে চলাতেই ঘন স্বরে বলে উঠল,

— ‘ খাব তো। কিন্তু আজ যে রেগুলার ডিনারে পেট ভরার নয়। স্পেশাল ডিনার চাই। ‘

আধা আলো-অন্ধকার রুমটাতেও তানবীরের মুখের দুষ্টু হাসিটা শান্তর নজর এড়ালো না। যার ফলে মেয়েলি লজ্জাগুলো যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলতে লাগলো।
তানবীর শান্তকে কাছে টানলো। যতটুকু কাছে টানলে আর মিনিমাম ফাঁকা জায়গাটুকু অবশিষ্ট থাকে না। অতঃপর.. অতঃপর আকাশের চাঁদটাও কাপলযুগলের উষ্ণ ভালোবাসায় লজ্জা পেয়ে মেঘের আড়ালে গা ঢাকা দিলো। চৈত্রের শেষ সময়ে এসেও যেন ফাল্গুনের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত তপ্ত আকাশ-বাতাস।

__________________

পিচ্চি মেয়েটা ইতিমধ্যে যেন বাবার দুনিয়ার প্রায় সবটুকুই দখল করে নিয়ে বসে আছে। বাবা যে ব্যস্ততায় থাকে সব বুঝতে পারলেও এটা সে মানতে নারাজ। এমনকি বাবার সবটুকু সময় সে নিজের জন্যই চায়। সাদিদ একহাতে মেয়েকে নিজের বুকের সাথে আগলে রেখেছে আর অপর হাতে কোনোরকমে চামচ চালিয়ে খাবার শেষ করার চেষ্টা করছে।

— ‘ তাহলে বাবা কি সিদ্ধান্ত নিলে? অর্ণব কিন্তু বেশ জোর দিচ্ছে। না গেলে পরে আন্টি-আঙ্কেলকে নিয়ে বাসায় এসে হাজির হবে। ‘
— ‘ সিদ্ধান্ত আর কি নিব? পরশু আমার একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। সেটা শেষ করে আমি ডিরেক্ট সেখানে পৌঁছে যাব। আর তোমরা নিজেদের সময় ম্যানেজ করে পৌঁছে যাবে৷ ‘
— ‘ ভাইয়া তোমার কোনো প্রবলেম নেই তো? ‘
— ‘ না আমিও ম্যানেজ করে নিব। সবসময় তো আর কাজ নিয়ে পরে থাকলে চলবে না৷ ফ্যামিলি প্রোগাম বলেও তো কিছু আছে৷ তা প্রিয়তীর অবস্থা এখন কেমন? মেয়েটার সাথে দেখা হয় না বহুদিন হলো৷ ‘
— ‘ ভালোই তো দেখলাম। মানে এইসময়ে যেরকমটা থাকে আরকি। কিন্তু নীলাঞ্জনার মতো না। ওর প্রেগন্যান্সিতে এখন পর্যন্ত কোনো কমপ্লিকেশন পাওয়া যায়নি। ‘
— ‘ ভালো থাকলেই ভালো। আমাদের নীলার সময় শ্বাসটা গলায় এসে আটকে থাকতো। আল্লাহ যে শেষ পর্যন্ত সকলের দোয়া কবুল করেছে এটারই হাজার শুকরিয়া। ‘
— ‘ হ্যাঁ বাবা, এটা যা বলেছিস। ‘

সাদিদ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার নীলার মুখের দিকে তাকালো। সেই দমবন্ধকর মুহূর্তটা পেরিয়ে আসার বিজয়ের উল্লাস নীলার মুখে যেন এখনও বহমান। সাদিদ নিজেও মৃদু হাসলো। অতঃপর চামচে করে চিকেন ক্যাশুনাট সালাদের বাকি অংশটা মুখে তুলতে যেতেই পিচ্চি মেয়ের জন্য কিছুটা নিচে পরলো। নীলা তার পাশেই ছিল। তাই দ্রুত বলে উঠল,

— ‘ অনেক হয়েছে এবার আমার কাছে দিন। মেয়ের জন্য ভালোভাবে নাস্তাটুকু শেষ করতে পারছেন না। ‘

লোকে আসলে সত্যি কথাই বলে। আজকাল ভালো কথার দাম নেই বললেই চলে। তাইতো দুইজোড়া তীক্ষ্ণ চোখ একাধারে নীলাকেই পর্যবেক্ষণে লেগেছে। নীলারও এবার রাগ হলো। পেয়েছে টাকি এই বাপ-মেয়ে তাকে?
বাপের দোষেও কিছু বলা যায় না আবার মেয়ের দোষেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে হয়৷ আর যদি ভুলবশত দুইজনের মধ্যে কারো বিরুদ্ধে মুখ ফুটে কিছু বেড়িয়ে আসে তাহলে দুইজনেরই বাড়া ভাতে যেন কেউ মই দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। সবসময় কি এসব ভালো লাগে?

— ‘ মা, আমি বাড়ি যাব। এই বজ্জাত বাপ-মেয়ের সাথে আমি আর নেই৷ ‘
— ‘ নীলাঞ্জনা, আমাকে বললে ঠিক আছে। কিন্তু আমার মেয়ের উপর অপবাদ দিবে না। সেটা তার বাবা একেবারে সহ্য করবে না। ‘

পিচ্চি ব্রিটিশটা তখন ঠোঁট উল্টো করে সাদিদের মুখের দিকে তাকালো। যেন নিঃশব্দে বাবাকে বলে দিচ্ছে আমার বেলায় নিয়ম উল্টো হবে কেন? মাকে বলো প্রিন্সেসের বাবাকে কিছু বলা যাবে না। তাহলে সেটা প্রিন্সেস সহ্য করবে না।
সাদিদ মেয়ের মিষ্টি মুখটার দিকে তাকিয়ে আপ্লূত হলো। ছোট্ট শরীরটা আরেকটু কাছে এনে নরম গালগুলোতে স্নেহের পরশ দিলো। মেয়ে এবার হাসে।
নীলা হাতের চামচটা শব্দ করেই টেবিলের উপর রাখলো৷ বাপ-মেয়ের এমন আধিখ্যেতা দেখে তার শরীর রীতিমতো জ্বলে যাচ্ছে।
ডাইনিং টেবিলে বসা বাদবাকি সবাই তাদের কান্ডে ঠোঁট টিপে হেসে যাচ্ছে।

— ‘ বাবা-মা আমি কিন্তু সিরিয়াস। এবার যাচ্ছি মানে যাচ্ছি। এদের সাথে আমি আর নেই। ‘
— ‘ তুইও না পিচ্চু! কি করেছে তারা? ‘
— ‘ কি করেছে তারা! তোমাদের চোখে এসব পরছে না। বাপ-মেয়ে এখনই একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি আর এদের মধ্যে নেই৷ ‘

সাদিদ এবার মেয়ের দিকে তাকালো। পিচ্চি মেয়েটাও তার মুখের দিকেই উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে রয়েছে। সাদিদ আলতো হাতে মেয়েকে আদুরেভাবে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ‘ আম্মা, তোমার মা কিন্তু এবার সত্যিই রেগে ফায়ার। একটা কারিশমা দেখাও না৷ নতুবা এবার সত্যিই আমাদের দেবদাসের জীবন ধারণ করতে হবে। ‘

পাকাবুড়িটা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ অতঃপর বাবার শিখানো বুলিতে বাজিমাত।
মেয়েটা মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙে কান্না করতেই নীলা গলে গিয়ে মোম। বাপ-মেয়েকে শায়েস্তা করতে মেকি রাগটা আর ধরে রাখতে পারলো না। টিস্যু পেপার দিয়ে ভেজা হাত মুছে সাদিদের দিকে মেয়েটাকে কোলে দিতে হাত বাড়িয়ে দিলো।
সাদিদ নিঃশব্দে হেসে নিজের পাশের চেয়ারটা নীলার জন্য টেনে দিলো৷ নীলা একপলক সাদিদের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে নিয়ে চেয়ারে বসলো। বিচ্ছুটা মায়ের অগোচরে সাদিদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সাদিদ পাকা মেয়ের কান্ডে নিঃশব্দে হেসে ফেলল। নীলার আপাতত তাদের ষড়যন্ত্রের দিকে নজর নেই। সে ছোট্ট মেয়েটাকে ভীষণ আদুরেভাবে নিজের উষ্ণ বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।
সাদিদের খাওয়া শেষ হতেই সে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে একপলক বাকি সবার দিকে তাকালো। অতঃপর খুবই সংগোপনে চোখের ইশারায় নীলাকে উপরে আসতে বলল। নীলা সেটা দেখেও অদেখা করলো৷ যার ধরুন তৎক্ষনাৎ ফ্রিতে একটা চোখ রাঙানি খেল। নিরুপায় হয়ে নীলা মেয়েকে কোলে নিয়েই উপরে উঠার জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু শাদের ডাকে পিছনে ফিরল,

— ‘ খালামণি বউকে একটু কোলে দাও। সারাদিন কোলে নেইনি। ‘

শাদের কন্ঠে ভীষণ হতাশা। উপস্থিত সবাই নিচু শব্দে হেসে ফেলল। না হেসে উপায় আছে? মাত্রই সকাল হয়েছে। আর নাস্তার পূর্বে অবধি শাদ ছোট্ট নীয়ানার সাথেই ছিল। আর এখন কি-না বলছে এই কথা! কিন্তু শাদ তাদের হাসিতে যোগ দিতে পারলো না। উল্টো চোখ বাঁকিয়ে সবার দিকে তাকালো। নীলা হাসি মুখেই পিচ্চিটাকে শাদের কোলে দিতে চাইল। কিন্তু নিধি তাতে অমত পোষণ করে বসলো।

— ‘ পিচ্চু একদম না। ওর কোনো বিশ্বাস আছে? বাবুকে নির্ঘাত ফেলে দিবে। ‘
— ‘ মা! ‘

শাদের কন্ঠেও মায়ের অভিযোগের বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি। নীলা ফেঁসেছে মা-ছেলের টক-ঝাল-মিষ্টি ঝগড়ার মধ্যেখানে। অবশেষে শাহেদ এসে আদরের পুত্রের পক্ষ নিলো।

— ‘ এটা কিন্তু ঠিক না নিধি। তুমি আমার ছেলেকে সবসময় ছোট মনে করো৷ আমার আব্বা কি এখনও ছোট রয়েছে? ‘

শাদ বাবার কথায় ব্যাপক খুশি। পারলে এখনই এসে গলায় ঝুলে পরবে। শাহেদ ছেলের হাসিমুখটা দেখে নিজেও হাসলো। অতঃপর নীলার উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ নীলা, আম্মুটাকে তার চাচ্চুর কোলে দাও তো। ‘

নীলা শাহেদের কোলে নীয়ানাকে দিতেই শাদ এসে ঝুঁকে পরল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছোট শরীরটা দেখতে লাগলো। নিধি ছোট্ট একটা হতাশাজনক শ্বাস ফেললো। কেউ কারো থেকে কম নয়। কাদের কাছে কার নালিশ নিয়ে যাবে?

— ‘ পাপা, বউটা সুন্দর না? ‘
— ‘ সুন্দর তো আব্বা। কিন্তু এটাতো বোন হয়। ‘
— ‘ না হয় না। আমার বউ হয়। ‘
— ‘ এমনি এমনি বললে তো বউ হয় না৷ বউ বানাতে অনেককিছু লাগে। ‘
— ‘ কি কি লাগে? ‘
— ‘ আরে আব্বা অনেক কিছু। ‘
— ‘ সেই অনেককিছুই জানতে চাচ্ছি। সব বলবে কিন্তু। ‘
— ‘ আহ্ শাহেদ, দাদু ভাইয়ের সাথে আবার কেন লাগলি? ‘
— ‘ লাগছি কই বাবা? ছেলে তো বুঝতে চায় না। মানুষ ছোট কিন্তু কথা বলে বড় বড়। ‘
— ‘ মানুষও বড়। এখন বলো বউ বানাতে কি কি লাগবে? দোকানে পাওয়া যাবে নাকি মায়ের মতো অনলাইনে অর্ডার দিতে হবে? ‘

বসার ঘরের সবাই হালকা স্বরে হেসে ফেলল। নীলারও বিচ্ছুটার পাকনামি দেখে ঠোঁটের কোণে প্রশয়ের হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু হঠাৎ করে তার উপরে চোখ পরতেই সাদিদের হালকা রাগী মুখশ্রী নজরে এলো। তাই রাগী মানুষকে আর রাগাতে না চেয়ে আস্তে করে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।
ঘরের চৌকাঠে পা রাখতেই শক্তপোক্ত একজোড়া হাত তাকে টেনে ভিতরে আনলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই বলিষ্ঠ বুকে কোমল নারী শরীরটাকে একপ্রকার চেপে ধরল। গমগমে ধারালো কন্ঠে বলল,

— ‘ কখন আসতে বলেছি? ‘

নীলা কয়েক মুহূর্ত থমকালো। কিন্তু পরবর্তীতেই নিজের ভয়কে জয় করার উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ কি আজব! নিচে সবাই ছিল তাদের মধ্যে থেকে কিভাবে আসবো? ‘
— ‘ না আসবার তো কোনো কারণ দেখছি না। স্বামী বাহিরে যাবে বউ তো তার সাথেই থাকার কথা। ‘
— ‘ চুপ করুন। সবসময় দুষ্টুমি। ‘
— ‘ দুষ্টুমির কি দেখলে! এটাই তো স্বাভাবিক। বউরা পাশে থাকবে। একটু আধটু সেবাযত্ন করবে, মিষ্টি মিষ্টি আদর দিবে। ‘

নীলা কপাল কুঁচকে সাদিদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিদ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাত দিয়ে নীলার কপালটা সোজা করে দিলো৷ অতঃপর নাকটাতে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,

— ‘ এখন ঝটপট আদর-টাদর দিয়ে ফেলো তো৷ লেইট হয়ে যাচ্ছে। ‘
— ‘ কিসের আদর! সরুন তো। ‘
— ‘ তুমি এতো কিপ্টা কেন? বউরা হুমড়ি খেয়ে আদর বিলাতে প্রস্তুত থাকে। অথচ আমার বউটা এখনও পালাই পালাই করে। ‘

নীলা এবার লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। সাদিদ বৃদ্ধাঙ্গুলে তার ঠোঁটের কোণ ছুঁইয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,

— ‘ আমার তো আদর চাই৷ সারাদিন কাজ করতে এনার্জি লাগবে তো। ‘
— ‘ এতক্ষণের খাবারের এনার্জি কোথায় গেল? সেগুলো দিয়েই দিন পার করুন। ‘

নীলা মৃদুস্বরে মাথা নুইয়েই কথাটুকু বলল। সাদিদ একপলক তার লজ্জারাঙা লালচে মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে ভীষণ অসভ্য স্বরে বলল,

— ‘ বিবাহিত পুরুষদের কেবলমাত্র রেগুলার রুটিন খাবারের এনার্জিতে পোষায় না সোনা। তাদের যে আরও কিছু চাই। এজ লাইক চুমু-টুমু, অর সে..

নীলা আন্দাজের উপর ঢিল মেলেই সাদিদের মুখের উপর হাত চেপে ধরল। সাদিদের দুষ্টুমিতে ঝকমক করা চোখজোড়া দেখে লজ্জায় কানের লতি পর্যন্ত লাল হতে শুরু করলো। অর্থাৎ তার অনুমান সঠিক।
সাদিদ আলতো করে নীলার হাতের উল্টো পাশে রুক্ষ ঠোঁটযুগল ছুঁইয়ে দিতেই সে হাত সরিয়ে নিলো। সাদিদ তার পূর্বের দুষ্টুমি বজায় রেখেই আবারও বলল,

— ‘ সেকেন্ড অপশনতো আপাতত হওয়ার নয়। ফাস্ট অপশনই তাহলে চলুক। ‘

দুষ্টু ছেলেটা নীলাকে আর উত্তর দেওয়ার সময় দিলো না। আলতো করে নরম ঠোঁটযুগল চেপে ধরল। বারকয়েক ভীষণ আদুরে স্পর্শ দিতেই নীলা কাঁপা হাতে অফিসের জন্য সদ্য আয়রন করা সাদিদের বাহুর শার্টটি খামচে ধরলো। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সাদিদের ভিতরের পুরুষ পশুটা যেন বারবার বেড়িয়ে আসতে চাইছে। যা হলে নির্ঘাত অনর্থ হয়ে যাবে। তাইতো জোরপূর্বক নীলার থেকে সরে আসতে চাইছে। কিন্তু কিসের এক টানে যেন বারবার আটকা পরে।
অবশেষে মেদহীন কোমড়টা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নীলাকে সামান্য উপরে তুলে ওয়াল কেবিনেটটার সাথে আলতো করে চেপে ধরে বিরামহীনভাবে চলতে লাগলো ঠোঁটের আদর। নীলার চোখজোড়া আবেশে বন্ধ হয়ে এলো। বন্ধ চোখজোড়াতেও যেন সুখের অশ্রুর নোনা জলগুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান। যুগের তালে যেখানে ভালোবাসাগুলো ক্রমশ মৃত্যুের পথে। ধোকা-পরকীয়াতে যখন সংসারগুলোতে মরিচা ধরছে এই প্রেমিক পুরুষটি এখনও সেই প্রথমবারের মতোই ভালোবাসতে ব্যস্ত। দিনকে দিন যে ভালোবাসাটা কেবল বেড়েই চলছে। যেখানে যুগের প্ররিক্রমায় ভালোবাসাটা হ্রাস পাওয়া উচিত সেখানে এই কাপলযুগলের পবিত্র সম্পর্কের আবেগঘন প্রেম যেন বেড়েই চলেছে। কমার যেখানে বিন্দুমাত্র কোনো চিহ্ন নেই।

#চলবে…

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭৪ ❤

প্রায় তিনমাস পর…

ক্লাসের ফাইনাল এক্সামের চাপে শাদের লাইফ প্রায় ওষ্ঠাগত। এই বই সেই বইয়ের চাপে তার ছোট্ট মাথাটা পুরোপুরি আউলিয়ে যাচ্ছে। স্টুডেন্ট হিসেবে সে বরাবরই ফাস্ট ক্লাস। কিন্তু বিগত দিনে তো সে কেবল ফাস্ট ক্লাস স্টুডেন্টের খাতায় নাম লিখিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি! বরং আজকাল যে উঠতি বয়সী নব্য প্রেমিক। পিচ্চি প্রেমিকার মন পেতে সে দিবারাত্রি মরিয়া। তাই এখন একের পর এক ক্লাস নোট তার মস্তিষ্কটাকেও ছিন্নবিচ্ছিন্ন করতে মরিয়া হয়ে লেগেছে।

— ‘ মা, কফি দাও। ‘
— ‘ মাইর চিনো? মাইর দিব। ‘
— ‘ আজকাল কি কফি অর্ডার করলে পার্সেলে মাইর রিটার্ন আসে! ‘

নিধি চোখ বাঁকিয়ে বিচ্ছুটার দিকে তাকালো। অতঃপর কাছে এসে আলতো করে কান মলে ধরলো,

— ‘ আহা মা, লাগে। ‘
— ‘ লাগার জন্যই দিয়েছি। খুব বেশি পেকেছিস। বয়স যতটা না কথা বলিস তার দ্বিগুণ বয়সীদের মতো। ‘
— ‘ শুধু বলা নয় বড়দের মতো কাজও করতে হবে। দায়িত্ব বেড়েছে যে। ‘

শাদের মিনমিনিয়ে কথাটা নিধির কানে গেল না। নিধি আবারও কপাল কুঁচকে পাকনাটার মুখের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। আজকাল সে প্রায়শই এমন বিড়বিড় করে। যার মাথামুণ্ডু কোনোটাই নিধির মাথায় ঢুকে না।

— ‘ কি বলিস? ‘
— ‘ কিছু না। এবার কফি দাও। আমার মাথায় ধরেছে। ‘
— ‘ এমন পাকামি করলে মাথাতো ধরবেই৷ কোনো কফি-টফি পাওয়া যাবে না। দুধ গরম করে আনছি। ‘
— ‘ ইশশ মা! দুধ ছোটদের খাবার জিনিস। আমি কি এখনও ছোট রয়েছি না-কি? ‘
— ‘ তাহলে কি তুই বড়? সাইজ দেখেছিস নিজের? ‘
— ‘ সাইজ নিয়ে কথা হবে না মা। এটা শাদ কখনোই মেনে নিবে না৷ ‘

দুষ্টুটা মাথার ঘন চুলগুলো আঙুল দিয়ে পিছনে ঠেলে ভাব ধরতেই নিধি মুখ চেপে হাসলো। নিজের আদরের ছেলেটাকে হাসতে হাসতেই বুকের সাথে মিশিয়ে ধরল। চুলে সযত্নে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

— ‘ তুই এতো বড় কিভাবে হয়ে গেলি আব্বা? এইতো সেদিনই তো হসপিটালের বেডে তোকে ছোট্টটি দেখেছিলাম। এতো ছোট ছিলি যে কোলে নিতে ভয় পেতাম। না জানি কবে হাতের ফাঁক দিয়ে পরে যাস। ‘

নিধির মুখে এখনও তৃপ্তির হাসি। ছোট শাদমানেরও মায়ের খুশিতে ঠোঁটের কোণজুড়ে ঈষৎ মিষ্টি হাসি খেলা করছে। ‘

— ‘ এটা ঠিক বলেছো মা। সময় খুব দ্রুত চলে যায়। এই যে দেখ, আমার পিচ্চি বউটাও এখন বড় হয়ে যাচ্ছে। উঠে বসার চেষ্টা করে। সময়ের সাথে সাথে ফাজিল মেয়েটা বেয়াদবও হচ্ছে। আমার দিকে আগের থেকেও বড় বড় চোখ করে তাকায়। ‘
— ‘ শাদ এবার কিন্তু মা সত্যিই মার দিবে। তোমাকে বলেছি না নীয়ানা তোমার বোন হয়? ‘
— ‘ বউ হলে সমস্যা কি? ওকে দেখলে আমার বউয়ের মতোই ফিলিংস আসে। বোনের মতো ফিলিংসের জন্য অন্য কাউকে আনো। ‘

নিধি ছেলের পাকামোতে৷ পুনরায় চোখ গরম করে তাকালো। কিন্তু শাদের মধ্যে তেমন কোনো হেলদোল নেই৷ সে দিব্যি পৃষ্ঠার উপর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বইয়ের হালচাল দেখছে।
নিধি অবশেষে তপ্ত শ্বাস ফেলল। না ছেলেটা পরিপূর্ণভাবে পেকে গিয়েছে। কোনো ফাঁকফুকুর রাখেনি।
পড়াশোনার চাপ কেবলমাত্র শাদমানের একার নয় কিন্তু। নীলারও সেই পথের পথিক এবং তারও একই অবস্থায় দিন যাচ্ছে।
সে হাজারবার বলেছে নীয়ানা আছে এখন আর পড়াশোনা কন্টিনিউ না করলে কি হবে?
কিন্তু সাদিদ তার একটা কথা শুনেনি। তার এককথা মেয়ের সাথে তার পড়াশোনার কোনো সম্পর্ক নেই। আজ যদি সে মেয়ের কথা ভেবে পড়াশোনা মাঝপথে স্কিপ করে তাহলে একসময় সেটাতে তাদের মেয়েটাই হয়তো সবথেকে বেশি কষ্ট পাবে। কেননা কোনো সন্তানই চায় না, সে তার মা-বাবার জন্য পথের কাটা হয়ে দাঁড়াক। হাজার নীলার মনে এমন কোনো কিছু না থাকলেও তাদের কলিজার টুকরোটা একদিন না একদিন এমনটাই হয়তো ভেবে বসবে৷ আর আপনমনে কষ্ট পাবে। তাই নিজের জন্য, তাদের মেয়ের জন্য এমনকি সাদিদের জন্যও পড়াশোনাটা তার শেষ করতেই হবে। এতে সাদিদ বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয়। তাইতো এতো এভসেন্সের পরও সাদিদ দৌড়াদৌড়ি করে তার ফাইনাল এক্সাম দেওয়াটা নিশ্চিত করেছে। অবশ্য এগুলো সব নীয়ানা হবার আগেই ঠিক করা ছিল। কিন্তু মেয়েকে পেটে নিয়ে তার ক্লাস করাটা সাদিদ উপযুক্ত মনে করেনি। আর তখন নীলার শারীরিক অবস্থাটাও আশংকাজনক ছিল। তাই সেই অবস্থায় ইউনিভার্সিটিতে কথা বলে সাদিদ বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করেছিল। মেয়ে হবার পরও অবশ্য ক্লাস করা হয়ে উঠেনি। মাত্র কিছু ফর্মালিটিসের জন্য এক-দুইবার যাওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল।
কিন্তু এখন যে বইয়ের গন্ডিতে হাত দিতেই হবে। মাত্র পনেরদিন পরেই নীলার ফাইনাল এক্সাম৷ তাই পড়ার চাপও প্রচুর।
নীলা একপ্রকার হাঁফাতে হাঁফাতেই নিধির রুমে আসলো,

— ‘ আপুনি মেয়েটাকে একটু ধরো তো। আমার এখনই শাওয়ার নিতে হবে। মাথা পুরো সাহারা মরুভূমির মতো গরম হয়ে গিয়েছে। ‘

নিধি তার এহেন কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো। আর শাদ ইতিমধ্যে নিজের জায়গা ছেড়ে নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পাশের সেন্টার টেবিলটা টেনে তার উপর দাড়িয়ে নীলার মাথায় হাত দিয়ে সে বিচক্ষণের ন্যায় বলল,

— ‘ হ্যাঁ মা, খালামণির মাথা সত্যিই ভীষণ গরম। তুমি এককাজ করো খালামণির গোসলের পানিতে আইস কিউব দিয়ে দাও৷ তাহলে আরও ভালো হবে। তাই না খালামণি? ‘

ইশশ নীলা ভাগ্নের কথায় আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়ল। তার চোখ বেয়ে এখনই জল গড়িয়ে আসার উপক্রম৷ কিন্তু আচমকা নিধির ধমকে তার চোখের পানি চোখেতেই জমা রইল।

— ‘ দুইটাকেই দুটো দুটো করে চারটা দিব। মজা করিস তোরা আমার সাথে? একজনে মাথাকে মরুভূমি বলিস, অপরজনে সেই মরুভূমি ঠান্ডা করার উপায় হিসেবে বরফের ব্যবস্থা করতে বলিস! ‘

নিধির রাগী গলায় খালামণি-ভাগ্নে দুইজনেই একে-অপরের দিকে অপরাধীর চোখে তাকাচ্ছে। নিধি তাদের সেই চোখের কথোপকথনকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে নীলার উদ্দেশ্য আবারও বলল,

— ‘ আর তোকে বলি পিচ্চু, সাদিদ জানে এসব? তোকে না বলা হয়েছে টেনশন কম নিয়ে পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে। তাহলে এখন এমন মাথা গরম করছিস কেন? ‘
— ‘ কি করবো বলো? সামনেই পরীক্ষা অথচ পুরো বই মনে হচ্ছে নতুনের মতন। কিছুই পড়া হয়নি আপুনি৷ আমি নির্ঘাত ফেইল মারবো। ‘

নিধি ছোট বোনের কথায় মুখ চেপে হেসে ফেলল। অতঃপর এগিয়ে এসে ছোট নীয়ানাকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,

— ‘ এমন কিছুই হবে না৷ এই কয়েকমাসে তুই বেশ ভালো প্রিপারেশন নিয়েছিস৷ সাদিদ নিজে তোর পড়াশোনার খেয়াল রেখেছে। এখন সামনে পরীক্ষা বিধায় এমন লাগছে। এখানে বস আমি তোর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছি। মাথা গরম করে পড়তে হবে না৷ ‘
— ‘ কিন্তু আপুনি অনেক পড়া বাকি…
— ‘ চুপ৷ বস এখানে। শাদ বোনের সাথে একটু খেলা করো তো। ‘

শাদমান মায়ের দিকে চোখ কুঁচকে তাকালো। বিরক্তিতে তার ফর্সা মুখটা ইতিমধ্যেই লালচে হতে শুরু করেছে। এই কয়েকমাসে একমাত্র নিধি ব্যতিত সে সবাইকে নিজের লাইনে আনতে পেরেছে। বাড়ির কাজের লোকটা পর্যন্ত নীয়ানাকে শাদের বোন বলে সম্বোধন করে না৷ একমাত্র তার মা ব্যতিত। আর নিধিকে এই নিয়ে বলা মানেই ফ্রিতে দুই-চারটে রাম ধমক খাওয়া। আর আজকে এমনিতেই পাল্লা ভারি। তাইতো শাদমান আপতত কোনোভাবে এই বিশ্রী বোন নামক শব্দটা হজম করার চেষ্টা করছে। তবে বোন শব্দটা কিন্তু তার নিকট ভারী মিষ্টি। কিন্তু নিদিষ্ট জায়গা বেধে শাদের নিকট সেটা বরই বিরক্তিকর এবং জঘন্য শব্দ হয়ে দাড়ায়।
নীলাও চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতে কার্পেটের উপর এসে বসলো। নিধি পরম যত্নে নীলার ঘনকালো চুলগুলোতে তেল লাগাতে ব্যস্ত।
মেয়েটার চুল এতটাই ঘন যে এমনিতেই হয়তো মাথা ধরে যাবার অপেক্ষায় থাকে। নিধি হাসি মুখে নীলার চুলের গোড়ায় তেল লাগাচ্ছে। আরাম পেয়ে নীলাও নিধির পায়ে হেলান দিয়ে বসেছে৷
আর বিছানায় ছোট নীয়ানার কর্মকান্ড লক্ষ্য করে একনিষ্ঠভাবে পাহারায় রয়েছে প্রেমিক পুরুষ শাদ।

— ‘ খালামণি, বউটা এতো নড়ে কেন? বারবার কিনারায় চলে আসতে চায়। পড়লে ব্যাথা পাবে না বলো? ‘

নীলা শাদের কথায় উত্তর দিলো না। সে কেবল মাথা নুইয়ে হাসে। আজকাল মেয়েটা সত্যিই ভীষণ নড়াচড়া করে। একজায়গায় স্থির থাকতে চায় না৷ সাদিদ তো বরাবরই বলে মেয়ে এই বাজে স্বভাবটা নাকি নীলার থেকেই পেয়েছে। মা যেমন সারাদিন এখানে-সেখানে টইটই করে মেয়েও আজকাল সেটাই করতে চায়। এখনও তো হাঁটতে পারে না। কিন্তু তাতে কি? আগের থেকেই নাকি পেক্টিস নিয়ে রাখছে।
নিজেদের দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটিগুলোর কথা মনের কুঠিতে ভেসে আসতেই নীলার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠল। একটু আধটু লজ্জাও পেল।
কেননা সাদিদ মানেই তো নীলার জন্য একরাশ লজ্জার জায়গা। নীলার অনেকসময় মনে হয় দুনিয়ার যত অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতি আছে সাদিদ বোধহয় সবগুলোতেই নীলাকে ফেলতে পারলে স্বস্তি পেত। নতুবা হুটহাট এমন অসভ্যদের মতো কর্ম করার কি মানে?
নীলা আবারও একবার মাথা নুইয়ে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসির শব্দ আটকালো।
শাদ বরাবরই নীয়ানাকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখে রাখছে৷ কিন্তু পাঁজি মেয়েটা যেন তাকে নাচিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে। তাইতো ঠোঁট বাঁকা করে হেসে সে এদিক-ওদিক গড়াগড়ি খেতে চাচ্ছে। আর বারবারই শাদ বিরামহীনভাবে তাকে নিজের কার্য হাসিল করা থেকে বিরত রাখছে।
শাদ এবার একটু বিরক্তই হলো। মেয়েটা ইচ্ছে করে তার সাথে এমন করছে। নতুবা নড়াচড়া করলেও এতোটা হয়তো করে না। আজ যেন শাদকে বিরক্ত করতেই নীয়ানার ছোট্ট মাথায় যত দুষ্টুমি চেপেছে। কিন্তু শাদও কি দুষ্টুমির লেবেলে কিছু কম রয়েছে না-কি?

— ‘ শুনো বউ, আরেকবার এমন তিড়িংবিড়িং করলে কিন্তু ঠেসে ঠেসে চুমু খাবো। লিমিটেশনের উপর ডিপেন্ড করে ঠোঁটেও খেয়ে নিতে পারি। ইউ নো না, এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ? সো যেখানে লাভ আছে সেখানে বিয়ে না হলেও সমস্যা নেই৷ বিয়ের আগেই কার্য সমাপ্ত। ‘

শাদ নীয়ানার কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে ভীষণ ফিসফিসিয়ে কথাটুকু বলে ফেলল। সামনের দুই নারীর নিকট যা পৌঁছাবার নয়। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটা ঠোঁট বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে।
বোধহয় এই শাদ বাঁদরটার শয়তানিতে সে এখনই কেঁদে ফেলবে।
শাদমানও এবার অন্য সময়ের মতো তাকে পাত্তা দিলো না৷ উল্টো নরম গালগুলো আলতো হাতে টেনে দিয়ে চোখ টিপলো। যার অর্থ তুমি বউ হলে আমিও তোমার বর!

__________________

গোধুলির লগ্নের প্রায় শেষ অংশ। কিন্তু এখনও পশ্চিম আকাশে সম্পূর্ণ সূর্য হেলে পরেনি, না আকাশ নিজের লালিমাতে সেজেছে। কেবল পাখিগুলো নিজ খাঁচায় ফিরে যাবার রাস্তা খোঁজে চলেছে। মেয়েটা তার দাদা-দাদুর রুমে। একলা প্রহর নীলা আর কিভাবে কাটাবে? দুপুরের পরও মেয়েটাকে ঘুম পারিয়ে অনেকক্ষণ পড়েছে৷ তাই এবার কিছুটা রিলাক্স প্রয়োজন। নীলা তেলে চিটচিটে চুলগুলোকে একপাশ এনে ধোয়া উঠা কফির মগে চুমুক দিলো। দৃষ্টি তার ঈষৎ লালচে পশ্চিম আকাশে।
নিঃশব্দে, খুবই সঃগোপনে রুক্ষ, বলিষ্ঠ পুরুষালী হাতগুলো পেটের নরম অংশ ছুঁয়ে গিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে ধরতেই নীলার শরীর হালকাভাবে কেঁপে উঠল। আবেশে মুহূর্তেই চোখজোড়া পিটপিট করে বন্ধ হয়ে এলো। বড্ড অবলীলায় ঘর্মাক্ত শরীটাতে সে নিজের ভর ছেড়ে দিলো। সাদিদও নিজের সাথে নীলার নরম শরীরটাকে মিশিয়ে নিয়ে ক্ষান্ত হলো। সারাদিনের ক্লান্ত ব্যস্ততার পর এখন যেন শান্তি। ধীরে ধীরে সবকয়টা নিউরনে প্রশান্তির বার্তা বয়ে গিয়ে যেন শরীরকে মুহূর্তেই হিমায়িত করছে।

— ‘ আজ এতো তাড়াতাড়ি? ‘
— ‘ কেন? স্বামী তাড়াতাড়ি আসাতে খুশি হওনি বুঝি? তুমিতো দিনদিন ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছো পাখি! ‘

সাদিদ নীলার তেলে চিটচিটে ঘাড়ে মুখ ঘষতে ঘষতেই অস্ফুটস্বরে কথাটুকু বলল। নীলা তার অবুঝদের মতো কথা শুনে হালকা শব্দে হেসে ফেলল। অতঃপর হাসিমুখেই বলল,

— ‘ আমি কি সেটা বলেছি না-কি? এতো তাড়াতাড়ি তো আসেন না৷ আজকে এলেন তাই বলে ফেললাম। ‘
— ‘ না তারপরও। বিয়ের পর নাকি কাপলদের একে-অপরের প্রতি ইন্টারেস্ট কমে যায়। তোমার ক্ষেত্রেও কি সেই রকম? ‘

নীলা মুহূর্তেই সাদিদের কোমড়ের বাঁধন আলগা করে ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে তাকালো। নীলা যতটাই না ক্ষেপা দৃষ্টিতে সাদিদের দিকে তাকিয়েছিল সাদিদ কিন্তু ততটাই স্বাভাবিক। এমনকি তার ঠোঁটের কোণে স্পষ্ট বাঁকা হাসিটা এখনও ঝুলছে।
নীলা নিজের মধ্যেকার রাগ থেকেই হালকা করে সাদিদের বুকে কিল বসালো। এবার সাদিদ হাসিটা আর চেপে রাখতে পারলো না। শব্দ করেই হাসলো। নীলার রাগ যেন তাতে আরও বাড়ল। পথ কাটিয়ে সে চলে যেতে ধরতেই সাদিদ হাসি থামিয়ে দ্রুত তাকে নিজের সাথে চেপে ধরল। তার ছটফটানি কমাতে আলতো করে কানের পিছনে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আর মুহূর্তেই নীলা জমে গিয়ে বরফ।
সাদিদ হাসলো। কিন্তু একেবারে নিঃশব্দের সেই হাসি। আবারও গলায়-ঘাড়ে রুক্ষ ঠোঁটগুলো ছুঁইয়ে দিতে দিতেই দুষ্টুমিমাখা স্বরে সে বলে উঠল,

— ‘ মা কল করে বলল বাড়িতে জলদি ফিরতে। কি না-কি যেন ইম্পরট্যান্ট কথা বলার আছে। কেবল আমিই নই। বাবা-ভাইয়া সবাই আমরা একসাথেই ফিরেছি৷ কি এমন জরুরী তলব বলো তো? আমরা এতো করে জিজ্ঞাসা করার পরেও মা কিচ্ছুটি বললো না৷ ‘

নীলারও এবার কপাল কুঁচকে এলো। বিষয়টা আসলে কি? একই বাড়িতে থেকেও সে নিজেই তো এসবের কিছু জানে না।

— ‘ কই? আমি কিছু জানি না তো। ‘
— ‘ বলো কি! তাহলে বিষয় দেখছি বড্ড রহস্যঘেরা। এই রহস্যের উন্মোচন কবে? ‘

সাদিদের দুষ্টু কন্ঠে এবার নীলাও হাসলো। সাদিদের ধূসর বর্ণের শার্টের উপরের বোতামগুলো খুলতে খুলতে বলল,

— ‘ একটা কথা বলি? ‘
— ‘ মাইর চিনো পাখি? সেটাই পরবে৷ ‘

সাদিদ আস্তে করে নীলার মাথায় থাপ্পড় দিলো। নীলা তাতে রাগলো না। বরং হেসে ফেলে বলল,

— ‘ সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। তাই না? মেয়েটা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। অর্ণব ভাইয়ারও আমাদের কলিজাটার মতো ফুটফুটে মেয়ে হলো। আর গতকাল তো খুশির তালিকায় আরেকটা খুশি এসে যুক্ত হলো। আপনি দেখেছেন তানবীর ভাইয়া কতটা খুশি ছিল? আমিও কিন্তু মারাত্মক এক্সাইটেড। আমার শান্ত জানুটাও মা হবে৷ তাদেরও আমাদের রাজকন্যাটার মতো ঘর আলো করে ফুটফুটে বাবু আসবে। আমি না ঠিকঠাকভাবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারছি না। আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন তো? ‘

সাদিদের ঠোঁটের কোণজুড়ে ঈষৎ হাসির রেখা ফুটে উঠল। নীলার মুখটা কাছে টেনে নিয়ে প্রিয়তমার তেল চিটচিটে মাথায় সে সময় নিয়ে চুমু দিলো। ভালোবাসাকে আদরমাখা ভালোবাসার স্পর্শ বিলিয়ে দিয়ে অতঃপর বলল,

— ‘ হুম সোনা। সুখের সময়তো। আর কোথাও একবার পড়েছিলাম ভালো সময়গুলো নাকি দ্রুতই যায়। ‘
— ‘ এমনটাই হবে হয়তো। এবার যান তো ফ্রেস হয়ে আসুন। তাহলেই বাড়িতে জরুরী তলবের রহস্য উন্মোচন করার জন্য একধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে। ‘
— ‘ হ্যাঁ সেটাও ঠিক। কিন্তু তুমিও চলো। ‘

সাদিদের একেবারে স্বাভাবিক স্বর। কিন্তু নীলা কথাটা ঠিক বুঝতে পারলো না। তাই অবুঝ মনেই পুনরায় জানতে চাইল।

— ‘ কি চলো? ‘

সাদিদ একপলক নীলার প্রশ্নবোধক মুখশ্রীতে নজর বুলালো। তার অবুঝ পাখিটা কি আগ্রহ নিয়ে সাদিদের কথার সারমর্ম বুঝতে চায়। অথচ বোকা মেয়েটা হয়তো ভুলেও মনের ভেতর এটা আনবে না যে তার বরটা কতো নম্বরের অসভ্যের ঘরে গিয়ে দাড়িয়েছে!
সাদিদেরও ইচ্ছে হলো না মেয়েটাকে এমন নিরাশ করতে। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যে বাধ্যতামূলক। হাজার হলেও তার বউপাখি বলে কথা। তার কোনো কিছুতে জানবার পিপাসা থাকবে অথচ সে জানবে না এটা কি সাদিদ মেনে নিবে?
তাইতো নীলাকে আলতো করে নিজের বুকে চেপে নিয়ে একবার নেশালো চোখজোড়া দিয়ে কোমল নারীশরীরটার আনাচে-কানাচেতে নজর বুলিয়ে পুরুষালি ঘনস্বরে বলল,

— ‘ এখনতো আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছো। অপূর্ণতাকে পূর্ণতায় রুপ দেওয়ায় যেতে পারে। একটু বেশি আদর দেওয়ায় যায়। একটু গভীর ঘনিষ্ঠতায় দোষ আর কতোদিন? ‘

নীলার ছোট মুখটা মুহূর্তেই লজ্জায় যেন আরও ছোট হয়ে গেল। কানের লতিটা পর্যন্ত লাল হতে শুরু করেছে৷ সাদিদ নীলার অবস্থায় ঠোঁট কামড়ে হাসলো। প্রিয়তমা যে বরাবরের মতোই ভীষণ লজ্জায় জড়সড়। কিন্তু তারপরও পূনরায় বলল,

— ‘ কি? আসা যায় না? ‘

নীলা লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে সাদিদের থেকে সরে যেতে চাইল। কিন্তু সাদিদ তাকে ছাড়তে অনিচ্ছুক। আজ একটু বেশি ভালোবাসলে ক্ষতি কি? কতদিন ভালোবাসা হয় না!
নীলার হালকা শরীরটাকে সাদিদ আলতো হাতে কোলে তুলে নিলো৷ নীলার সব বাধা উপেক্ষা করেই তাকে নিয়ে ওয়াসরুমে গেল।

— ‘ ইশশ কি করেন? আমি কয়েক ঘণ্টা আগেই শাওয়ার নিয়েছি। ‘
— ‘ সমস্যা কি তাতে? স্বামীর সাথে আরেকবার নিবে। তাছাড়া এতকিছুর পর যদি তুমি শাওয়ার নিতে না চাও তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। ‘

সাদিদের ঠোঁটের কোণ জুড়ে এখনও বাঁকা হাসিটা খেলা করছে। নীলা বরাবরের মতোই বেশ লজ্জা পেল। সাদিদের বাহুবন্ধনী থেকে রক্ষা পেতে খানিক চেষ্টাও করলো। কিন্তু সাদিদ যে নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। ওয়াসরুমের দরজাটা লক করে মুহূর্তেই সে নীলাকে দরজার সাথে চেপে ধরল। আর কালবিলম্ব না করে প্রিয়তমার নরম গোলাপি ঠোটযুগলও নিজের আয়ত্তে নিয়ে এলো। ক্লান্তহীনভাবে চলতে লাগলো ঠোঁটে ঠোঁটে উষ্ণ ভালোবাসা। নীলার শরীরে মুহূর্তেই শিরশিরানিরা খেলা করতে লাগলো। আর সাদিদের দুষ্টু হাতগুলো সেক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা অপরিহার্যতার সহিত পালন করছে। সাদিদ ওষ্ঠযুগলের কার্যক্রম অব্যহত রেখেই হাত ঘলিয়ে নীলার কামিজের সিফন ওড়নাটা নিচে ফেলল। একেবারে অধৈর্য্যের মতো শার্টের বাকি বোতামগুলোও খুলে নিয়ে শার্টটাকে দিকবিদিকশুন্য করে ছুঁড়ে ফেলল। উন্মুক্ত বলিষ্ঠ বুকে নীলার নরম শরীরটাকে একপ্রকার পিষে নিয়ে তার ঘাড়ে মুখ গোঁজল। ছোট্ট ছোট্ট চুমু খেয়ে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে যাবে তখনই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাদের রুমের দরজায় নক পরলো। সাদিদ প্রথমে কান দিতে চাইল না। এই মুহূর্তে ডিস্টার্ব করাতে সে এমনিতেই খানিক বিরক্ত। কিন্তু কিছু সময় যেতে কাঁপা কন্ঠে নীলাই বলল,

— ‘ কেউ এসেছে। ‘
— ‘ থাকুক। ‘

সাদিদের নেশালো স্বর। ইতিমধ্যে তার কন্ঠ লেগে গিয়েছে। নীলারও একই দশা। সে ভাঙা স্বরেই কোনোমতে বলল,

— ‘ বারবার নক করছে। দরকারী কিছু হয়তো। ‘

সাদিদ নীলার গলা থেকে মুখ তুলে তার দিকে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। নীলা সাথে সাথেই মাথা নুইয়ে ফেলল। মিনমিনিয়ে বলল,

— ‘ কতোবার নক করছে তাই বললাম। ‘
— ‘ যাও। খুলে দেখো কে। ‘

সাদিদ তাকে পিছন ফিরে দাড়ালো। নীলার মুহূর্তেই মনটা বিষন্নতায় ভরে উঠল। না চাইতেও বোধহয় সে মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সাদিদ তাকে কতোটা ভালোবাসে এটা নীলার থেকে ভালো আর কে জানে? এতোগুলো দিন পর মানুষটা তার কাছে আসতে চেয়েছে। একান্ত ঘনিষ্ঠতায় সময়টা কাটাতে চেয়েছে। আর নীলা কি-না এখনও তাকে কষ্ট দেয়?
নীলা নিজের শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে সাদিদকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলো। মলিনস্বরে ক্ষমাপ্রার্থনা করলো,

— ‘ প্লিজ ক্ষমা করে দিন৷ আমি বুঝতে পারিনি। দরজা খোলার প্রয়োজন নেই৷ আসুন, কাছে আসুন। ‘

সাদিদ এতক্ষণ কিছুটা রেগে গেলেও এখন নীলার এমন বোকা কথায় সবটুকু রাগ শুকনো পাতার ন্যায় ঝরে গেল। সে সামনে ফিরে নীলার মুখটা আঁজলাভরে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। অতঃপর আলতো করে ঠোঁটযুগলও চেপে ধরল।

— ‘ সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি। যাও কে এসেছে দেখো। ‘
— ‘ না, না দরকার নেই আপনি…
— ‘ আমি বলছি পাখি। যাও। ‘

আদেশপূর্ণ গলার সামনে নীলা কিছু বলতে পারলো না। কিন্তু দরজার লকে হাত দিয়ে আবারও সে সাদিদের দিকে ফিরে তাকালো। সাদিদও খালি গায়ে আধভিজা হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। নীলার এমন চুপসে যাওয়া মুখ দেখে সে এবার ঠোঁট এলিয়ে হেসেই ফেলল। অতঃপর হাসিমুখেই বলল,

— ‘ আরে বোকা মেয়ে যাও। নতুবা এখন ধরলে কিন্তু আর ছাড়বো না। সর্বনিম্ন একেবারে ঘণ্টা দুয়েক পার করে তবেই ছাড়া পাবে। ‘

সাদিদের ঠোঁটের কোণজুড়ে দুষ্টু হাসিটা ফুটে উঠতেই নীলার মুখেও এতক্ষণে হাসি ফুটে উঠল। সে লজ্জারাঙা মুখেই ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। দরজা পর্যন্ত এসেই ওড়নার কথা খেয়াল হলো। তাই আগেপিছে না ভেবে সে দ্রুত ওয়াসরুমে ওড়না নিতে ডুকলো। আর মুহূর্তেই লজ্জায় সে মুখফুটে একটা চিৎকার দিলো। সাদিদ দ্রুত কোমড়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে নীলার মুখ চেপে ধরল।

— ‘ আরে কি করো! এতো জোরে কেউ চিৎকার দেয়? বাড়ির সবার কানে গেলে কি ভাববে? ‘
— ‘ আপনি এমন নির্লজ্জ কেন? ড্রেস চেইঞ্জ করার আগে দরজা লক করবেন না? ‘
— ‘ এখানে নির্লজ্জের কি হলো? আমাদের ওয়াসরুম এটা। এখানে তুমি-আমি ছাড়া আর কে আসবে? আর তুমি আমার বউ৷ তোমার সামনে আবার লজ্জা কিসের? ‘

দুষ্টুটা কাছে আসলো। অতঃপর বাকি কথাটা কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে একেবারে নিচু কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ‘ তাছাড়া লজ্জা পাবোই বা কেন? বউ না তুমি, সবকিছুই তো দেখেছো। এসব আর নতুন কি? ‘

ইশশ কি ঠোঁটকাটা এই ছেলে! নীলা টকটকে লালচে মুখ নিয়েই সাদিদকে দূরে সরালো। আর একবারও এই অসভ্যেটার মুখোমুখি না হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এলো। কিন্তু তাকে শুনিয়ে বাকি কথাটুকু বলতে ভুল করলো না।

— ‘ আমি আপনার মতো অসভ্যের কাতারে পরি না। নিজে যেমন সবাইকে তেমনই ভাবেন। ‘
— ‘ ভাবাভাবির কি আছে? আমিতো দেখেছি। বলতে গেলে একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। কোন জায়গায় কতগুলো লাল, কালো তিল আছে সেগুলোও কিন্তু মুখস্থ। ‘

ওয়াসরুমে ভিতর থেকে পুরুষালী রাশভারি কথাটা শুনে নীলা আবারও একদফা লজ্জা পেল। অতঃপর লজ্জা মুখেই বলে উঠল সেই চিরচেনা শব্দ,

— ‘ অসভ্য একটা। ‘

দরজা খুলতেই মিনুর মুখোমুখি হলো। সে কিছুটা কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। আসলে নীলারা দরজা না খুলাতে সে অনেকবারই নক করে ফেলেছে। তাই এবার ভয়। যদি ধমক খেতে হয়। কিন্তু নীলা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়ায় দেখালো না। বরাবরের মতোই স্বাভাবিক কন্ঠে জানতে চাইল,

— ‘ কি হয়েছে মিনু? কিছু বলবে? ‘
— ‘ জ্বি ছোট ভাবি। খালাম্মা-খালু সবাই নিচে বইসা রইছে। আপনে আর ভাইরে যাইবার কইছে। ‘
— ‘ অহ্ আচ্ছা। তুমি যাও আমরা আসছি। ‘

সাদিদ ওয়াসরুম থেকে বের হতেই নীলা তাকে নিচে যাবার কথা বলল। অতঃপর সাদিদ পাতলা একটা ট্রি-শার্ট আর টাওজার গায়ে চড়িয়ে দুইজনই একসাথে নিচে নামলো।
সাদিদ গিয়ে সর্ব প্রথম শায়লা রহমানের কোল থেকে পিচ্চি মেয়েটাকে নিলো। নরম গালে-কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই মেয়ে খুশিতে কাদাকাদা। বাবার মুখটা আলতো হাতে ছুঁইয়ে দিতে চাইছে। সাদিদ হাসিমুখেই মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে সোফায় বসলো।

— ‘ এবার বলো মা। কি এমন জরুরী তলব? ‘
— ‘ বন্ধু ভীষণ জরুরী। আমিতো ভাবতাসি তুই না লাফিসে উঠিস। ‘

সাদিদ শব্দের উৎসের দিকে তাকালো। তাদের ঠিক সামনেই একেবারে সবার দৃষ্টি বরাবর ভিডিও কলে তানবীরের কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। শুধু সে আর শান্ত একা নয়। বরং অর্ণব-প্রিয়তী, আরিফ মাহমুদ এবং নার্গিস খাতুনও একসঙ্গে কানেক্টেড রয়েছে। সাদিদের ভ্রুযুগল মুহূর্তেই কুঁচকে এলো৷ নির্ঘাত কিছু বড়সড় কান্ড ঘটে গিয়েছে। নতুবা এমনটা হওয়ার হয়।

— ‘ আন্টি বেচারাকে একটু ধরে রাখো। না হয় এক্সাইমেন্টে পড়ে-টড়ে যেতে পারে। ‘

সাদিদ রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। কিন্তু নীলা ব্যতিত বাকি সবাই ঠোঁট টিপে হাসছে। অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হালকা গলা কেশে শায়লা রহমানই বলে উঠলেন,

— ‘ আমরা ঠিক করেছি আমাদের নীয়ানা দাদুমণির মা-বাবার আবারও বিয়ে হবে। ‘

— ‘ কি? ‘

সাদিদ-নীলা দুইজনই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো। পিচ্চি মেয়েটা আচমকা এমন শব্দে হালকা ভয় পেল। সাদিদ মেয়েকে শান্ত করতে দ্রুত দাড়িয়ে গিয়ে পুনরায় নীলার দিকে তাকালো। নীলার চোখগুলোও প্রায় অক্ষিকোটর থেকে বেড়িয়ে আসার জোগাড়।
তাদের দুইজনের অবস্থান বিবেচনায় কানে যেটা শুনেছে এখনও সেই আজব শব্দটা বিশ্বাস করতে পারছে না। সাদিদ-নীলার এমন অবস্থা দেখে পরিবারের সবাই পুনরায় একদফা হাসলো। অতঃপর ভিডিও কলে যারা যুক্ত এবং উপস্থিত সবাই একসাথে বলে উঠল,

— ‘ তোদের আবারও বিয়ে করতে হবে৷ অর্থাৎ যেখানে মানুষগুলো সেইম কিন্তু কার্য পুনরাবৃত্তি। ‘

#চলবে…