অন্তরালের অনুরাগ পর্ব-৭৫+৭৬

0
852

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭৫ 💚💛💚

সবার জীবনেই এমন কিছু অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত আসে যখন আমরা আনন্দ বা দুঃখের কোনো কিছুরই অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না৷ একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে প্রহরগুলো তখন মস্তিষ্কে এটে বসে। সাদিদ-নীলারও বর্তমানে একই অবস্থা। কিন্তু তাদেরকে এমন অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে ফেলে পরিবারের বাকি সদস্যগুলো কিন্তু ঠিকই স্বাভাবিক রয়েছে। বরং একটু বেশিই যেন স্বাভাবিক।

— ‘ কি বলছো এসব? বিয়ে মানে? ‘
— ‘ এই সাদি, তুই কি বোকা নাকি? বিয়ে মানে আবার কি? বিয়ে মানে বিয়ে। এটার আর অন্য কি অর্থ আছে? ‘
— ‘ কিন্তু ভাইয়া কথা হচ্ছে কেন? এতোদিন পর আবার বিয়ে! মানে বিষয়টা একটু কেমন না? ‘
— ‘ তোদের দুইটার…
— ‘ শাহেদ তুই থাম আমি বলছি। দেখ সাদি, তোদের দুইজনের বিয়েতে আমরা কেউই উপস্থিত ছিলাম না। আমি সেটাতে তোদের দোষ আছে এমনটা বলছি না। কিন্তু মা-বাবা, তোর ভাই-ভাবী এমনকি বেয়াই-বেয়াইনেরও কিন্তু মেয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক আশা ছিল। যা তোদের হঠাৎ বিয়েতে অপূর্ণই রয়ে গেল। আর সেই হিসেবেই আমরা তোদের পুনরায় বিয়ে দিব এমনটাই ঠিক করেছি। অবশ্য এটা কিন্তু আমাদের হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্ত না। নীলাকে যখন ফিরে পেয়েছিলি তখন থেকেই এটা আমাদের মনে ছিল। কিন্তু তখন সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। কেননা ইসলামে গর্ভবর্তী থাকা অবস্থায় বিয়ে জায়েজ নয়। তাইতো এই দিনটার জন্য অপেক্ষা। নীলা মামণিও এখন পরিপূর্ণ সুস্থ রয়েছে। তাই আমাদের মনে হয় না এখন আর কোনো বাধা রয়েছে। ‘

সাদিদ এই কথার পরে আর কোনো না-বোধক প্রতিউত্তর করলো না। তাদের অসম্পূর্ণ বিয়েটা নিয়ে সাদিদের বরাবরই মনে একটা কষ্ট ছিল। কিন্তু সে কোনোদিন সেটা কারো সামনে আসতে দেয়নি। এখন যদি সেই অসম্পূর্ণ কাজটা পূর্ণতা লাভ করে তাতে ক্ষতি কি? তার ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা ফুটে উঠল।
কিন্তু নীলা বিষয়টাকে এখনও মেনে নিতে পারেনি। হ্যাঁ পরিবারের বিষয়টাও ঠিক। কিন্তু লোকে কি বলবে? তাদের এখন একটা মেয়েও আছে। আর এই সময়ে মা-বাবার বিয়ে!
তাই একরাশ জড়তা নিয়ে সে বলেই উঠল,

— ‘ কিন্তু মামণি লোকজনের কথাটাও একটু ভাবুন। সবাই হাসাহাসি করবে। ‘
— ‘ আরে ধুর। ভাবী আপনি যে কি বলেন না! লোকজন আর কি বলবে? আজকাল এনিভার্সারিতে বিয়েটা একটা টেন্ড হয়ে গিয়েছে। সেখানে বুড়ো-জোয়ান কেউ বাদ যাচ্ছে না। সবাই পুনরায় বিয়েটাকে বেশ স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করছে। ‘
— ‘ কিন্তু ভাইয়া তারপরও..
— ‘ ভাবী তার পরেও আপনাগো বিয়া হয়তেই হয়বো। এইডা ছাড়া মাথায় এই মুহূর্তে আর কিছুই আসবো না। আপনি না হয় কম খান কিন্তু আমরাতো গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে খাওয়ার মানুষ। আর বন্ধুর বিয়ের খাবার কি মিস করা উচিত? এটাতো আমার জন্য ফরজ। ‘
— ‘ আপনি আর আপনার খাওয়া দাওয়া! বাসায় কি উপোস থাকেন নাকি? শুন নীল, আর সব বাদ দিলেও ছবির কথা কিন্তু বাদ দেওয়া চলবে না। আমার বেস্টুর বিয়ে হয়ে গেল অথচ আমার সাথে তার কোনো ছবিই নেই! এটা কি মানা যায়? আলবাত মানে যায় না। তাই পিক-সিকের জন্য হলেও তোদের আরেকবার বিয়ে করা ফরজ। ‘

সবাই আরেকদফা হাসাহাসি করলো। তাদেরকে ঘিরে যে এতোগুলো ভিন্ন টাইপের জোকার বিদ্যামান সেটা হয়তো সাদিদ-নীলার পুনরায় বিয়ের কথা না উঠলে অজানাই রয়ে যেত।
অবশেষে সবার বিভিন্ন বিভিন্ন অদ্ভুত মতবাদের সামনে নীলাকেও হার মানতেই হলো৷ অবিশ্বাস যোগ্য হলেও সত্য এই পুরোটা সময় সাদিদ একেবারে নীরব ছিল। যেখানে তার একটা না-এর সামনে সবাই মুখে ট্যাপ লাগাতে বাধ্য ছিল সেখানে সাদিদ বিন্দুমাত্র টু শব্দটা পর্যন্ত করলো না। নীলা এটা নিয়ে বেশ হতাশ!
বিকেলের নাস্তা, রাতের ডিনার সবকিছুতেই আজ খাওয়ার থেকে বেশি সাদিদ-নীলার বিয়ে নিয়ে প্ল্যান হয়েছে। নীলা বারবার এটা ভেবেই অবাক হচ্ছে সবাই এতো বেশি এক্সাইটেড কেন? যদি এটা তাদের প্রথম বিয়ে হতো তাহলে হয়তো বিষয়টা মানা যেত। কিন্তু ব্যাপারটা তো সেইরকম না। মনের মধ্যে কিছুটা বিরক্তবোধ নিয়েই সে বাকি কাজগুলো সমাপ্ত করলো।
সন্ধ্যার পর থেকে সাদিদকে একবারের জন্যও আলাদাভাবে পাওয়া যায়নি। হয় বাড়ির কারো সাথে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল নতুবা ভিডিও কলে তার প্রাণের বন্ধুদের সাথে কানেক্টটেড ছিল। এতক্ষণ পর নিজেদের রুমে তাকে একা পেয়ে নীলা তার অভিযোগের জুড়ি নিয়ে সাদিদের সামনে হাজির হলো।

— ‘ সবাই এতো কিছু ঘটিয়ে ফেলল অথচ আপনি কোনো বাধা দিলেন না কেন? বাধা আর কি দিবেন? আপনিতো নিচে কিছুই বললেন না। চুপচাপ কেবল সবার কথা শুনেই গেলেন। কই আমি কিছু বললে তো ধমকিয়ে চুপ করিয়ে রাখেন অথচ নিচে একটা টু শব্দ করেননি। ‘

নীলা লাগাতার একটার পর একটা অভিযোগের বাণ সাদিদের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে। অথচ সাদিদ এখনও ভাবলেশহীন। বিছানায় হেলান দিয়ে সে অনবরত ফোনে স্ক্রল করতে ব্যস্ত। এতক্ষণ কথা বলাতে নীলা সাদিদের এমন উদাসীনতা খেয়াল করেনি। কিন্তু এখন খেয়াল হওয়াতে যারপরনাই বিরক্তির মাত্রাটা যেন কয়েকদাপ বেড়ে গেল। নীলা তেড়ে গিয়ে সাদিদের হাত থেকে ফোনটা একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো। কিন্তু সাদিদ এতেও বেশ স্বাভাবিক। নীলার উপর রাগ দেখিয়ে কিছুই বলল না। নীলা এবার হাল ছেড়ে দিলো। ভীষণ হতাশা মিশ্রিত কন্ঠে পুনরায় একই স্বর আওড়ালো,

— ‘ প্লিজ কিছু তো একটা বলেন। আমি এসব সত্যিই নিতে পারছি না। পরিবারের লোকজন না হয় সবকিছু মন থেকে চিন্তা করে। আমাদেরকে ভালোবাসে বলেই এমনটা করতে চায়ছে। কিন্তু বাহিরের সবাই?
কয়জনকে আপনি-আমি আটকাবো? বলার সময় কেউই কম বলবে না। আর বলার অবশ্য কথাটাও এইটা। দ্বিতীয় বিয়ে যে হয় না এমনটা নয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটা ভিন্ন। আমি আপনার সাথে পদ্মলয়ায় থাকছি তার উপর এখন মেয়েটাও আছে। শুনতেই তো কেমন লজ্জাজনক ব্যাপার লাগছে! ‘

কথা বলতে বলতে নীলার মুখটা একেবারে চুপসে গিয়েছে। সাদিদ এতক্ষণ নীলাকেই দেখছিল। এখনও তার দৃষ্টি নীলার উপরই সীমাবদ্ধ। এতসব শুনে নীলার মতো সেও হতাশায় ভেঙে পড়ল না বরং তার ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা প্রতিফলিত হলো।

— ‘ লোকজনের কাজই হলো অপরের নিন্দা করা। সেক্ষেত্রে তারা ভালো-খারাপটা যাচাই করে না। অকাজের মানুষজনদের একমাত্র কাজ হলো ঘরে ঘরে তৈরি হওয়া খবরগুলো গরমমসলা মাখিয়ে রসালোভাবে উপস্থাপন করা। এটা তারা আদি থেকেই পেয়ে এসেছে। তাই তোমার-আমার থেমে থাকাতেই তারা থেমে থাকবে না। ‘

এইকথার পরিপ্রেক্ষিতে কি সঠিক বাক্য উপস্থাপন করা যায় নীলা একধ্যানে সাদিদের মুখের দিকে তাকিয়ে সেটাই ভেবে যাচ্ছে। সাদিদ হয়তো নীলার মনোভাবটা বুঝতে সক্ষম হলো। তাই ঠোঁট এলিয়ে বাঁকা হাসলো। অতঃপর গম্ভীর পুরুষালী স্বরটাতে দুষ্টুমির রেশ মাখিয়ে বলে উঠল,

— ‘ তাছাড়া কিছু গুরত্বহীন মানুষের লজ্জাজনক কথার পরিবর্তে যদি মনের সংগোপনে জমিয়ে রাখা অপূর্ণতাটা পূর্ণতা লাভ করে সেক্ষেত্রে ক্ষতি কি? ‘

এতক্ষণ যাও সাদিদের কথাগুলোর সারমর্ম বুঝতে সক্ষম ছিল এবার সবকিছুই যেন নীলার মাথার উপর দিয়ে গেল। সে সাদিদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। তাই সে এখনও হতভম্ব দৃষ্টিতে সাদিদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। সাদিদ হয়তো নীলার দৃষ্টির অর্থোদ্বার করতে সক্ষম হলো। তাই ঠোঁটের কোণে ঈষৎ মিষ্টি হাসির রেখা ঝুলিয়ে সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। নিঃশব্দে ক্লোজেট খেলে নিজের ব্যক্তিগত লকার ওপেন করলো।
নীলাও ততক্ষণ কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে গিয়েছে। সাদিদ আসলে কি করতে চাইছে এইটা পর্যবেক্ষণ করাই এখন তার একমাত্র গুরত্বপূর্ণ কর্ম। আর সে সাদিদের কান্ডে আসলেই চরম বিস্মৃত। কেননা এতদিন একই রুমে থেকেও আজ পর্যন্ত নীলার এই লকারের উপর নজর পরেনি। আসলে পরেনি বললে ভুল হবে এখানে যে একটা হিডেন লকার তৈরি করা আছে সেটা নীলা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেনি।
সাদিদ লকার থেকে পরপর দুটো বড় বড় গিফট বক্স বের করলো। এবং সেগুলো খুবই যত্নের সহিত বিছানার উপর এনে রাখলো।
নীলা একবার তার অবাকপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে সাদিদকে দেখছে তো আরেকবার বিছানার উপর রাখা গিফট বক্সগুলো।
সাদিদ আবারও একবার নীলার দিকে তাকালো। নীলার এমন মুখশ্রী দেখে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবে হাসিটাকে চেপে রেখে সে বক্সগুলো একে একে খুলতে লাগলো।
এবং মিনিট-দুয়েকের মধ্যেই নীলার মুখশ্রীর গতিবিধি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হলো। চোখের পলক না পড়ার মতোই অবস্থা। মুখটা অপ্রত্যাশিতভাবেই একটু হা হয়ে গেল। এগুলো সাদিদ এতো যত্নের সাথে আগলে রেখেছে বিষয়টা নীলা চিন্তাই করতে পারেনি। তার ডাগর ডাগর চোখজোড়াতে মুহূর্তেই অশ্রুকণারা এসে ভিড় জমালো।
সাদিদের ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি। সে নীলার মুখটা আলতো হাতে আঁজলা ভরে ধরলো। অতঃপর সময় নিয়ে প্রিয়তমার কপালের মাঝ বরাবর চুমু আঁকলো। কি মনে করে হালকা করে ঠোঁটজোড়াও ছুঁয়ে দিলো। নীলার ততক্ষণে চোখের পাতা আবেসে মিটমিট করছে। সাদিদ প্রিয়তমার পাগল করা মিষ্টি মুখটার দিকে একপলক তাকিয়ে নীলাকে বুকে টেনে শক্ত করে ছোট মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরল। চুলের ভাঁজে রুক্ষ পুরুষালী ঠোঁটযুগল ছুঁয়ে দিয়ে ঘন স্বরটা পুনরায় বলে উঠল,

— ‘ প্রাণপাখিটাকে লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে নিজের রাজ্যের রাণী করে আনার বহুদিনের ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কিছু কাছের লোকের ভালো মানুষের চেহারার আড়ালে লোকায়িত হিংস্রতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করে দিলো। ইচ্ছেটা আমার অপূর্ণই রয়ে গেল। যেহেতু পুনরায় ইচ্ছেটা পূরণের সুযোগ এসেছে তাহলে না করার মানে কি? আমিতো সেটা একদমই চাই না। তুমি কি চাও? ‘

ব্যস! এতক্ষণ এতোজনকে না করতে পারলেও সাদিদের এহেন বাক্যে নীলা পুরোপুরি চুপ হয়ে গেল। আসলে এমন কথার পরিবর্তে আর কি বলার থাকতে পারে?
নীলা স্বেচ্ছায় সাদিদের উষ্ণ বুকের সাথে আরেকটু মিশে গেল। ছোট নরম হাতগুলো দিয়ে সাদিদের বলিষ্ঠ শরীরটাকে আঁকড়ে ধরতে চাইলেই প্রেমিক পুরুষটির মন পুলকিত হলো। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সাদিদ নিজেই সেই কাজটি দৃঢ়তার সহিত করে নিলো। শুধু পারে না নরম শরীরটাকে তার বুকের মধ্যে ডুকিয়ে ফেলতে!

_________________

আজকের সকালটা সুন্দর। সেইসাথে স্নিগ্ধতায়/সুগন্ধিতে পরিপূর্ণ তার সবকটি প্রহর। গাঁদাফুল, রজনীগন্ধা সেইসাথে সাদা আর লাল গোলাপের কম্বিনেশনে গার্ডেন এরিয়া সাজানো হয়েছে। অবশেষে নীলাসহ সবার হ্যাঁবোধক মতামত নিয়েই তাদের বিয়ের আয়োজনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
বিয়ের কথা যেহেতু উঠেছে সাদিদের ধারালো ব্রেনে প্রথমেই এসেছিল যে হয়তো তার থেকে কিছু সময়ের জন্য নীলাকে আলাদা করা হবে। আর নীলার সাথে সাথে অটোমেটিকলি মেয়েটাও তার নানা-নানুর বাসায় টান্সফার হবে। আর হয়েছিলও সেটা। যেহেতু বিয়েতে মুরুব্বি মানুষজন উপস্থিত থাকবে এটা চিন্তা করেই শায়লা রহমান সাদিদ-নীলার সামনে কথাটা তুলেছিলেন। তাদের এই নিয়ে কোনোরকম মাথাব্যাথা না থাকলেও মুরুব্বিরা বর-কনের একই বাড়িতে থাকা নিয়ে কথা তুলতে পারেন। আর সেইজন্যই মূলত কথাটা তোলার উদ্দেশ্য।
কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া সাদিদ সেটা প্রথমবারই নাকচ করে। এমনকি নাকচের লেবেল এতটাই বাঁকানো ছিল যে সেইকথার পরিপ্রেক্ষিতে আর কিছু বলার জায়গা ছিল না। দুনিয়া এপার থেকে ওপার চলে গেলেও সে নিজের পিচ্চি মেয়ে এবং মেয়ের মাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে বিয়ের আয়োজনে বসতে পারবে না। হয় দুইজন একই বাড়িতে থেকে একই সাথে বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সংগঠিত হবে। নতুবা কোনো আনুষ্ঠানিকতারই প্রয়োজন নেই।
নীলার সেই মুহূর্তে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল। সাদিদ অবশ্য বরাবরের মতোই এমন নির্লজ্জের প্রমাণ দিয়ে দিব্যি ছিল। অবশেষে তার এহেন কথার পরিবর্তে আর কিছু বলা যায় না।
তাইতো সাদিদ-নীলা দুইজনই পদ্মলয়ায় রয়েছে। আর বিয়ের সম্পূর্ণ আয়োজনটা তারা পদ্মলয়াতে করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর সেটার ভিত্তিতেই এখন বিয়ের আয়োজন জোরদার চলছে। নীলাতো ভেবে পায় না এতো দ্রুত তারা এতো আয়োজন কিভাবে করতে পারলো!
কিন্তু সে কি আর এটা জানে না? বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য যে তাদের এই খুশির মুহূর্তটা পালন করতে কতোটা উৎসাহী?
খুব দ্রুতই তারা সাদিদ-নীলার দ্বিতীয়বার বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে নিয়েছে। আর সেই জমজমাট আয়োজনের আজকে গায়ে হলুদ। সকালে বর কনের একসঙ্গে গায়ে হলুদ এবং সন্ধ্যায় সংগীতের আয়োজন। আর আগামীকাল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
বাড়িতে এতো কিছু হচ্ছে কিন্তু ছোট নীয়ানা এসব আয়োজনের কিছুই বুঝে না। কিন্তু তারপরও সে বারবার কোল থেকে নেমে যেতে চায়ছে। যেন মুখফুটে এটাই বলতে চাচ্ছে যে আমাকে ছাড়ো আমিও আমার মা-বাবার আনন্দের মুহূর্তে সামিল হতে চাই। নিজের ছোট হাত-পা নেড়ে দৌড়াদৌড়ি করে হইহট্টগোল করতে চাই।
কিন্তু যেহেতু সেটা পারছে না সেহেতু কোলেই অস্থির হয়ে ছটফট করছে।
নীলা-সাদিদকে গায়ে হলুদের জন্য রেডি হতে হচ্ছে। তাই এই সম্পূর্ণ সময়টা নীয়ানা তার নানি-দাদির কাছেই আছে। আর তারসাথে সবসময়কার মতো বিরামহীনভাবে পাহারায় রয়েছে শাদ। পিচ্চি নীয়ানার দিকে তার নিষ্পলক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। অনেকক্ষণ যাবই মেয়েটার অতিরিক্ত নড়নচড়ন তার নজর এড়াচ্ছে না। তাই বেচারা আরও বেশি সর্তক। না জানি কখন পড়ে-টড়ে যায়। তাহলে বেচারার কি হবে? নিজের ভালো তো সবাই বুঝে!

— ‘ দাদু মণি, বউ এতো নড়ে কেন? দড়ি আনবো? তাকে বাঁধার জন্য? ‘

শাদ সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন। যেন কথাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু নার্গিস খাতুন এবং শায়লা রহমান দুইজনই তার এমন কথায় একে-অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মানে কি বলা উচিত এটাই যেন চিন্তা-ভাবনা।
পিচ্চি নীয়ানা কি বুঝলো সেটা বুঝা গেল না কিন্তু চোখজোড়া ছোট ছোট করে সে একদৃষ্টিতে শাদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। শাদ কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক তার দিকে তাকিয়ে নরম গালগুলো টেনে ধরলো। দুধে ফর্সা মেয়েটাকে একটু ছুঁয়ে দিলেই লাল হয়ে যায়। আর শাদের লম্বা সময় নিয়ে টেনে ধরে রাখাতে পিচ্চিটার গালগুলো হালকা লালচে বর্ণে পরিণত হতে শুরু করেছে । বিষয়টা এতটাই দ্রুত ঘটলো যে নানি-দাদি হতবাক। শাদকে কিছু বলবে তার আগেই পিচ্চিটা ঠোঁট ভেঙে তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ নিঃশব্দে তাদের উদ্দেশ্য শাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছে, তোমরা থাকতে এই শয়তান ছেলেটা এতো সাহস কিভাবে পায়?
তাদেরকে উত্তর দিতে হলো না৷ শাদ আবারও হালকা করে পিচ্চিটার গাল টেনে বলল,

— ‘ এমনভাবে ঠোঁট উল্টাও কেন? আমি বারণ করেছি না? আর কখনও এমন করে ঠোঁট উল্টাবে না। ‘

অতঃপর আরেকটু কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

— ‘ তখন অনেক বেশি সুন্দর লাগে। কিউটও লাগে। আর.. আর তাতে আমার অনেক বেশি আদর দিতে ইচ্ছে হয়। যেহেতু তোমার আদরেও এলার্জি সেহেতু ঠোঁট উল্টানো যাবে না। একদমই না। এটা তোমার জন্য একপ্রকার নিষিদ্ধ জিনিস। ‘

শাদ নিজের কথা সমাপ্ত করে আবারও নিজের জায়গায় সরে গেল। নানি-দাদি এখনও শক। আর আমাদের শাদ মহারাজ বরাবরের মতোই রক!

.

শান্তকে তাড়াহুড়ো করে এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে তানবীর দ্রুত তার সামনে এসে দাড়ালো। শক্ত করে হাতের কব্জি চেপে ধরে রাগী স্বরে বলল,

— ‘ থাপড়িয়ে সবকটা দাঁত ফেলে দিব ফাজিল মেয়ে। তোর কি ট্রেন চলে যাচ্ছে নাকি? এমন করে দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন? ‘
— ‘ দৌড়াদৌড়ি কোথায় করলাম? ‘
— ‘ দোষ করে আবার তর্ক করিস? আরও কয়েকটা বাড়িয়ে থাপ্পড় লাগাবো। ‘

শান্ত এবার মাথা নিচু করে নিলো। আস্তে করে তানবীরের শক্ত হাতের মুঠি থেকে হাতটা সরানোর চেষ্টা করছে। তানবীর কয়েক মুহূর্ত স্থির শান্তর দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর কিছু একটা চিন্তা করে নিজের বেড়ে উঠা রাগটা দমনের জন্য লম্বা করে শ্বাস টানলো। শান্তর হাতটা না ছেড়ে তাকে নিয়ে পাশের সোফায় বসালো। আলতো করে গালে হাত বুলাতেই ভালোবাসার মানুষটার ভেজা গাল অনুভব করলো। মুহূর্তেই সব রাগ ঝরে পড়ল। কন্ঠ হয়ে উঠল একেবারে নরম।

— ‘ কষ্ট পেয়েছ? কিন্তু কি করবো বলো? চিন্তা হয়তো! ‘

তানবীর বরাবরই ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক। সবসময় হুমকি-ধমকি দিয়েই ভালোবাসাটা চালিয়ে নেই। তাই শান্তও চোখ তুলে তাকালো। আর আশেপাশের লোকসমাগম না দেখে চুপটি করে তানবীরের বুকে মাথা রাখলো। তানবীর নিজেও তাকে আগলে নিলো। চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুঁইয়ে আদরমাখা স্বরে বলে উঠল,

— ‘ খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে? ‘
— ‘ ওহু। ‘
— ‘ তাহলে এমন করে দৌড়াদৌড়ি করছিলে কেন? জানো না তুমি এখন একা নও? ‘
— ‘ ইশশ জানি তো। আর না জানার কোনো উপায় আছে? চব্বিশ ঘণ্টা কানের কাছে একই গান বাজতে থাকে। ‘

শান্তর কন্ঠস্বরে কিছুটা হতাশা। তানবীর সেটার কারণ ভালোভাবেই বুঝতে পারলো। কিন্তু সেদিকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে পূর্বের স্বরেই বলল,

— ‘ এসব শুনতে চাই না। কি জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিলে সেটা বলো। ‘
— ‘ পিচ্চিটাকে দেখেছেন? ‘
— ‘ কোন পিচ্চি? এখানে তো পিচ্চিদের সমারোহ। আমার সামনেও একটা পিচ্চি বসা। ‘
— ‘ আরে ধুর যতসব আজগুবি কথাবার্তা! ‘

তানবীরের শ্যাম বর্ণে হালকা ঠোঁট এলিয়ে হাসাটা বড্ড বেশি সুন্দর দেখালো। শান্ত পলকহীনভাবে শক্ত খোলসের আড়ালে সেই মায়াবী মুখটা দেখলো। অতঃপর নরমস্বরে আবারও বলল,

— ‘ আরে আমাদের নীয়ানার কথা বলছি। দেখেছেন তাকে? ‘
— ‘ হুম দেখলাম তো। গার্ডেনে রয়েছে। নার্গিস আন্টির কোলে দেখলাম। ‘
— ‘ একটু এনে দেন না। ‘
— ‘ কেন? ‘

শান্ত উত্তর দিলো না। কেবল তার ঠোঁটের কোণাটা ধীরে ধীরে বাঁকা হলো। তানবীর তীক্ষ্ণ চোখে শান্তর মুখশ্রীতে নজর বুলালো। মেয়েটার মাথায় কি চলছে সেটাই বুঝার চেষ্টা। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ভালো যে কিছু চলছে না সেটা নিয়ে তানবীর একেবারে নিশ্চিত!

_______________

গার্ডেনের মাঝখানে ভিন্ন রকমের ফুল আর লাইটিংয়ের মধ্যে সাদিদ-নীলার হলুদের স্টেজ করা হয়েছে। সাদিদ তৈরি হয়ে আগেই এসেছে। আর বারবার অস্থির হয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। শুধু কিছুটা লাজলজ্জার কথা চিন্তা করে নীলার কথাটা বলতে পারছে না।
সাদিদের শর্ত অনুযায়ী তারা এক বাড়িতে থাকলেও গতকাল থেকে সাদিদকে নীলার কাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না। এককথায় আপন মানুষগুলোই তার পিছনে ভিলেনের ভূমিকা পালন করছে। সাদিদ ভীষণ বিরক্ত তাদের এমন ছেলেমানুষী আচরণে। এটা কি তাদের প্রথম বিয়ে নাকি যে বর-কনেকে আলাদা থাকতে হবে?
সাদিদ বিরক্তিমাখা দৃষ্টিতে আবারও একপলক বাড়ির সদরদরজার দিকে তাকালো। কিন্তু বরাবরের মতোই হতাশ। এতো এতো মানুষ কিন্তু যাকে একনজর দেখার ইচ্ছে তাকেই দেখা যাচ্ছে না!
অর্ণব আর তানবীর সাদিদের পাশেই ছিল। তাই প্রথম থেকেই সবটা খেয়াল করে গিয়েছে। তাই অর্ণব এবার কিছুটা দুষ্টু কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ মামা তুমি তো দেখি সত্যিই বউ পাগল? ‘
— ‘ এটা কি আজ নতুন জানলি? ‘

অর্ণব এমন প্রতিউত্তর সত্যিই আশা করেনি। সাদিদ-তানবীর দুইটাই যে ঠোঁটকাটা সেটা তার ভালোই জানা। তাই বলে সবসময়ই এমন থাকবে!

— ‘ না দোস্ত জানি তো। কিন্তু এখনেরটা যেন একটু বেশিই। কারণটা কি? ‘

তানবীরের মুখভঙ্গি দেখে সাদিদ তার মতলবটা ঠিকই আঁচ করতে পারলো। এবার যেন অনিচ্ছা স্বত্বেও সাদিদ একটু লজ্জাই পেল। তাই মাথা নুইয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
অর্ণব সাদিদের পিঠে হালকা একটা চাপড় লাগিয়ে নিজেও হাসলো। আর তানবীরের মুখে তো প্রথম থেকেই বাঁকা হাসিটা ঝুলছে।
সদরদরজার ওপাশ থেকে হালকা মেয়েলি শব্দের চেঁচামেচি শুনে সাদিদসহ সবাই সেদিকে নজর ঘুরালো।
মুহূর্তেই সাদিদের ঠোঁটের কোণ বিস্তৃত হলো। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো।
আর বুক জুড়ে তৃপ্তির বাতাসও বয়ে গেল। এতগুলো দিন, কতশত রাত একসাথে কাটিয়েও যেন এই মেয়েটার প্রতি আসক্তি তার একটুও কমে না। প্রতিবারই যেন নতুনভাবে প্রেমে পরে। মেয়েটা যে এখন তার এক বাচ্চার মা এটা যেন সাদিদের নিজেরই বিশ্বাস হয় না। এখনও সেই ক্লাস এইটের সবেমাত্র উঠতি বয়সী নীলাকে দেখে সমস্ত শরীরে যেমনটা বিদ্যুৎ খেলেছিল সেই একই রকম ফিলিংস কাজ করে। সাদিদ আধো জানে না এই মেয়েটা তার উপর কি এমন জাদুর মায়াজাল বিছিয়েছে যে সাদিদ সেটা হতে বের হতেই পারে না!
সবুজের মধ্যে বাসন্তী রঙের হলুদের জমকালো কারুকার্যের শাড়ি তারসাথে সূর্যমুখী আর রজনীগন্ধার কাঁচা ফুলের গয়না। টকটকে লাল ঠোঁটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হালকা মেকাপ। সবমিলিয়ে সাদিদের চোখজোড়া নীলার উপর থেকে সরছেই না। পাশ থেকে শাহেদ হালকা কেশে সাদিদের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে উঠল,

— ‘ ভাই, আত্মীয়-স্বজন অনেক রয়েছে। আমরা না হয় জানি তুই কি পরিমাণ নির্লজ্জ কিন্তু তাদেরকে জানানোর কি প্রয়োজন আছে? ‘

শাহেদের কথায় সাদিদের ধ্যান ফিরলো। সে একবার তীক্ষ্ণ চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। যার অর্থ কে কি ভাবলো আর না ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু আমার কাজে বাধা দেওয়াতে আমি খুব একটা খুশি নই।
দুইভাইয়ের নীরব কথোপকথনের মধ্যেই নীলাকে নিধি এনে সাদিদের পাশে বসালো। নীলাও সকলের অগোচরে আড়চোখে প্রিয়তমের সুদর্শন মুখখানি একবার দেখে নিলো। নীলার সাথে মেচিং করে সাদিদের জন্যও হলুদের কস্টিউম করা হয়েছে। সবুজ পাঞ্জাবির উপর বাসন্তী আর সাদা কালারের কম্বিনেশনের কটি আর বাসন্তী রঙের চুড়ি পাজামা। আর চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে রাখাতে মুখে যেন গাম্ভীর্যের আভাস। হঠাৎ করে সাদিদের চোখের সাথে চোখাচোখি হতেই নীলা লজ্জা পেয়ে গেল। আর দ্রুতই চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। পাশ থেকে প্রাণপাখির লালচে মুখটা দেখে সাদিদও দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো।
অতঃপর বড়রা পরবর্তী নিয়মনীতি মানার জন্য এগিয়ে আসলো। কিন্তু সাদিদ-নীলা দুইজনই একসঙ্গে বলে উঠল,

— ‘ মেয়ে কোথায়? ‘

হইহট্টগোলে এতক্ষণ নীয়ানার কথা বেশিরভাগেরই মাথায় ছিল না। সাদিদ-নীলার কথা শুনে সবারই হুঁশ ফিরলো। আসলেও তো মেয়েটা কোথায়? সাদিদের মাথা মুহূর্তেই গরম হলো।

— ‘ তোমরা এতগুলো লোক থাকতে মেয়েটা কোথায় এটা জানো না? সামলে রাখতে না পারলে রাখতে চাও কেন? আমার মেয়েকে আমিই সামলাতে পারবো। দরকার নেই কারো। ‘

সাদিদের অস্থিরতার কারণ সবাই বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। তাই কেউ আর বেশি গায়ে লাগালো না। শায়লা রহমান উঠে গিয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে নরমস্বরে বললেন,

— ‘ বাবা অস্থির হবার দরকার নেই। আছে হয়তো কারো কাছে। এতক্ষণ তো আমার আর বেয়াইনের কাছেই ছিলো। ‘

বড় মানুষের মুখের উপর কিছু বলে সাদিদ বেয়াদবি করতে পারলো না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে শান্ত হতেও পারলো না। তানবীরের মুহূর্তেই কিছুসময় পূর্বের কথাটা মনে পরে গেল।

— ‘ আরে সাদি চিন্তা করিস না। নীয়ানা শান্তর কাছে আছে। আমি নিজেই তো দিয়ে আসলাম। ‘

এতক্ষণে যেন সাদিদ-নীলা দুইজনই স্থির হয়ে শ্বাস টানলো।
তানবীর দ্রুত শান্তর ফোনে কল লাগালো।

— ‘ আবে তুই কই? এইপাশে মেয়ের বাপতো হার্ট অ্যাটাক কইরা ফেলতো। ‘

আচমকা ফোন রিসিভ করার পর এমন বাক্য বোধহয় কেউই আশা করবে না৷ শান্তও করলো না। তাই খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়েই প্রতিউত্তর করলো,

— ‘ কি? ‘
— ‘ আবার বলস কি! যার মেয়েরে নিয়া এতক্ষণ নাচছিলি এই মুহূর্তে গার্ডেনে না আসলে মেয়ের বাপ তোকে আরেকদফা তাক দিন তানা করাবে। জলদি আয়। ‘

তানবীর খট করে ফোন কাটলো। উপস্থিত সবকয়টা চোখ তানবীরের দিকে তাক করা। কেউ যে নিজের বউয়ের সাথে এমন তুইতোকারি করে কথা বলতে পারে সেটা হয়তো তানবীর-শান্তকে না দেখলে তারা বিশ্বাসই করতে পারতো না!
তানবীর ফোন রাখার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই শান্ত নীয়ানাকে নিয়ে হাজির হলো। এতক্ষণ সাদিদ-নীলা মেয়েকে কাছে না পেয়ে অস্থির হলেও এবার সামনাসামনি দেখে হেসে ফেলল।
পিচ্চিটাকে শান্ত আর কয়েকজন মেয়ে মিলে শাড়ি পরিয়েছে। সাথে মায়ের সাথে মেচিং করে ফুলের গয়না। সাদিদ-নীলার মেয়ে এতটাই ছোট যে শাড়িতে তাকে বড্ড বেশি কিউট টাইপের অদ্ভুত লাগছে।
সাদিদ মুখে হাসি নিয়েই মেয়ের দিকে এগিয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে শান্তর থেকে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল,

— ‘ শান্ত, মেয়ের একি অবস্থা করেছ? ‘

ছোট্ট নীয়ানাও এবার শান্তর দিকে চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়েছে। পরিহিত কাপড়টা যে বেশ অদ্ভুত ধরণের এটা সে পরানোর পরই বুঝতে পেরেছে। এখন সবার সামনে নিজের প্রেস্টিজ নিয়ে সে বড়োই চিন্তিত। সাদিদ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। শান্তর প্রতিউত্তর শোনার আগেই মেয়ের কপালে স্নেহের পরশ দিয়ে বলল,

— ‘ আমার আম্মাটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। একেবারে লালপরী। ‘

ইশশ মেয়ে এবার গলে গেল। বাবার মুখে প্রশংসা শুনে মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। শান্ত হালকা করে বিচ্ছুটার পিঠে একটা চাপড় বসালো।

— ‘ দেখলি নীল, তোর মেয়ে কি বিচ্ছু! এতক্ষণ আমরা সবাই কতো বললাম সুন্দর লাগছে, কিউট লাগছে তাতে তার বিশ্বাস হলো না। আমার দিকে চোখ বাঁকিয়ে তাকায়। যেই জিজু বলল তখুনি হেসে কুটিকুটি। আচ্ছা পাঁজি মেয়েতো তোর! ‘

নীলাও তার কথায় মৃদু হাসলো। সাদিদের কোল থেকেই মেয়েকে আদর করলো।

— ‘ সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এসব তোরা কখন করলি? আর তার থেকেও বড় মেয়েকে শাড়ি! কিভাবে কি? ‘
— ‘ আর বলিস না। তোদেরকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই অনলাইনে পিচ্চিটার জন্য শাড়ি অর্ডার করেছিলাম। একেবারে ছোট সাইজ যেটাকে বলে। কিন্তু তারপরও শাড়ি বড় হয়েছে। তাই তোর মেয়ের সাইজ করতে একদিনের জন্য আমাকে দর্জি হতে হয়েছে। আর এজন্যই লেইট হয়ে গেল। ‘

শান্তর মেকি হতাশা পূর্ণ চেহারা দেখে সবাই আরেকদফা হাসলো। অতঃপর মেয়েকে কোলে নিয়েই চললো সাদিদ-নীলার হলুদের পরবর্তী আয়োজন। সবাই এক-এক করে তাদেরকে হলুদ -চন্দন লাগিয়ে আসলো। শাদও সেই লিস্ট থেকে বাদ পরেনি। কিন্তু যখন তার সিরিয়াল আসলো সে দুষ্টুমি করে সাদিদ-নীলাকে হলুদ লাগিয়ে একটুখানি হলুদ নীয়ানার ছোট গালেও ছুঁয়ে দিলো।
আর বাপের আদরের দুলালী মুহূর্তের মধ্যেই ঘাড় ঘুরিয়ে বাপের মুখের দিকে তাকালো। অর্থাৎ নিঃশব্দে বাপের কাছে বিচার দিয়ে দিলো।
সাদিদ হাসে। মেয়েটা সত্যিই বাপ বলতে পাগল। এইটুখানি বয়সেই সব অভিযোগ একমাত্র তার বাপের জন্যই বরাদ্দ।
শাদও পিচ্চি মেয়ের নিঃশব্দের কথাগুলো বুঝতে সক্ষম হলো। এইটা আর নতুন কি? এই মেয়ে জন্মের পর থেকেই সাদিদের কাছে তার নামে নালিশ করে আসছে। তাই কিছুটা রাগ নিয়েই এবার একটু বেশি করেই গালে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো।

— ‘ শাদ! কি হচ্ছে এটা? ‘
— ‘ আপুনি থাক ছোট মানুষ। ‘
— ‘ তোরা মাঝ দিয়ে কিছু বলবি না। তোদের আশকারা পেয়ে দিন দিন বড্ড বেয়াদব হচ্ছে। ‘
— ‘ আমি এমন করলেই বেয়াদবি আর বউ যে এমন করে সেগুলো কি? ‘
— ‘ শাদ! আবার? ‘

শাদমান সবার সামনে আরেকদফা বকা না খেতে চেয়ে আর কিছু বললো না। কেবলমাত্র সবার আড়ালে নীয়ানার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালো। অর্থাৎ তোকে একা পাই তারপর খবর বুঝবো!

_________

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হলুদের আনুষ্ঠানিকতা, ফটোগ্রাফি আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল থেকেই সংগীতের হরদম শুরু। সেই রাত বারোটা গড়িয়ে অবশেষে বড়দের ধমক খেয়ে সবাই এখন নিজ নিজ কক্ষে। এতক্ষণে বোধহয় সবাই ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছে। অথচ সাদিদ বিছানায় শুয়ে একাধারে কৈ মাছের মতো ছটফট করছে।

— ‘ ধ্যত! এসব কোনো নিয়ম হলো? রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ‘

ইশ বেচারা! সাদিদ বিছানায় উঠে বসে নিজের চুল টেনে ধরলো। ফাঁকা রুমটাতে নজর পরতেই আবারও বুকের বাম পাশটা হু হু করে উঠল।
সেই পাঁচ মাসের নীয়ানাকে পেটে নিয়ে নীলাকে পাওয়ার পর থেকে সাদিদ একরাতের জন্যও নীলাকে নিজের থেকে আলাদা রাখেনি। পুরোটা দিন হাজারো ব্যস্ততায় কাটালেও রাতে ঠিক উষ্ণ বুকটাতে পরম আদরে গুটিয়ে রাখতো। বহুদিনের অভ্যাসটা কিভাবে ত্যাগ করবে? তাইতো সবার বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে ভয়ানক একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।
বাবাকে ছাড়া ছোট মেয়েটাও ঘুমাতে চাচ্ছিল না। নীলা এতক্ষণ বহুত কসরত খেটে অবশেষে পিচ্চিটাকে ঘুম পারিয়েছে। চোখ এখনও লাগেনি কিন্তু তখনই দরজায় মৃদু শব্দ হলো। নীলা পাশ ফিরে দরজার দিকে তাকালো। এতোরাতে আবার কে?
মেয়েটা না উঠে যায় তাই খুব সাবধানে হাত সরিয়ে নীলা বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই খোলা চুলগুলোকে হাতখোপা করলো। মাথায় কাপড়টা টেনে দিয়ে দরজাটা খুলতেই তার মুখটা কিছুটা হা হয়ে গেল। এই মুহূর্তে এই ব্যক্তিকে নীলা কোনোভাবেই আশা করেনি।

— ‘ দরজা থেকে সরো। ‘

সাদিদের কথায় নীলার ধ্যন ফিরলো। তার কন্ঠে যেন বিরক্তিরা ঢলে পরছে। নীলা রবোটের মতো দরজা ছেড়ে সরে দাড়ালো। সাদিদ হনহনিয়ে রুমে প্রবেশ করে খট করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। এবং নীলাকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে হুট করে পাঁজাকোলে তুলে নিলো।

— ‘ আরে কি করেন? ‘
— ‘ চুপ। ‘

সাদিদের মৃদু কন্ঠে ধমক খেয়ে নীলা আর কিছু বলার সাহস পেল না। সাদিদ তাকে এনে সোজা বিছানায় শুইয়ে দিলো। পাশের টেবিল ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিয়ে শুধু হালকা নীল রঙের লাইটটা জ্বলন্ত অবস্থায় রেখে নীলার বুকে মাথা রাখলো। নরম শরীরটাকে শক্ত করে বাহুবন্ধনে আগলে নিয়ে নীলার ডান হাতটা টেনে এনে মাথার চুলে রাখলো।

— ‘ টেনে দাও। ‘

নীলা আর চুপ করে থাকতে পারলো না। আঙুলগুলো সাদিদের চুলে চালাতে চালাতেই বলল,

— ‘ আপনি এই রুমে! বড়রা যে বারণ করেছিল…

সাদিদের নিকট হয়তো এই মুহূর্তে এই কথাটা জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিল। তাইতো শাস্তি স্বরূপ নীলার কথা বলাটাই বন্ধ করে দিলো। কিছু মুহূর্ত নীরব ভালোবাসায় কেটে গেল। মস্তিষ্ক বারণ করতে চাইলেও যে মন আর শরীর সাদিদের কাছে গচ্ছিত। তাই এই পুরুষের প্রেমময়ী স্পর্শকে না করবে এমন সাধ্যি কোথায়?
সাদিদ আলতো করে নীলার গালে হাত রাখলো। ঠোঁটের মেলবন্ধন আরও জোরালে করতে শাড়ি গলিয়ে পাতলা কোমড়টাও হালকা করে চেপে ধরল। নিঃশ্বাসের শব্দগুলো ঘন হয়ে আসতেই যেন নীলা দুর্বল হাতে বাধা দিতে চাইল।
শরীর-মনকে জোরপূর্বক সাদিদের শীতল স্পর্শ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু সাদিদ যেন নারাজ। প্রিয়তমার শরীরের নেশালো ঘ্রাণে সাদিদ বরাবরই কপোকাত। আর আজকে যেন হলুদ-চন্দন মিশে সেটাতে চারচান্দ লাগিয়ে দিয়েছে। দূরে যাওয়া বড্ড কষ্টকর। সাদিদ বহুক্ষণ পরে নীলার ঠোঁট ছেড়ে গলাতে মুখ গোঁজল। টেনে টেনে প্রিয়তমার শরীরের ঘ্রাণ নিতে চাইলেই এতক্ষণ পর ছাড়া পেয়ে অবশেষে নীলা কোনোভাবে হাঁফানো স্বরে বলল,

— ‘ কি কর..ছেন? ‘
— ‘ ভয় নেই। কিছু করছি না৷ এতদিন যেহেতু নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পেরেছি আজকের রাতটাও পারব। এতোটা কাছে এসে স্পেশাল মুহূর্তটাকে এভাবে চাই না। তোমার স্বামী খুব ধৈর্য্যশীল পুরুষ। ‘

নির্লজ্জতার সব সীমারেখাকে পার করে বলছে কি-না ধৈর্য্যশীল! নীলার নিকট বাক্যটা বড্ড হাস্যকর মনে হলো৷ কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে উঠতে পারলো না৷ সাদিদ কথাটা কোন দিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে এটা বুঝতে নীলার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলো না। আর তাইতো সে এখন নিজের লালচে মুখটা সাদিদ হতে কোনোভাবে লোকাতে ব্যস্ত। নতুবা অসভ্যটা নতুন কিছু বলে আরও লজ্জা দিয়ে দিবে!

#চলবে…

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭৬ ❤(শেষ পর্ব)

প্রথম অংশ__

সিঁদুর লাল জমকালো বেনারসি শাড়িতে সোনালী কারুকার্য। সম্পূর্ণ অংশে যার চোখ ধাঁধানো আভিজাত্যের ছোঁয়া। ভীষণ আদুরে, ভীষণ আবেগ জড়ানো বছর খানেক পূর্বে তৈরিকৃত বিয়ের পোশাকটা গায়ে জড়াতেই নীলার কাজলকালো চোখগুলোতে অশ্রুকণারা এসে উঁকি দিলো। বহুত সময় নিয়ে দেওয়া চোখের কাজলটা হালকা লেপ্টে যেতেই পাশ থেকে নিধির ধমক শুনা গেল।

— ‘ এটা কিছু হলো? এতো কষ্ট করে সাজিয়ে-টাজিয়ে কান্নাকাটি করার কি মানে পিচ্চু? আর কান্না করবিই বা কি জন্য? এটা কি তোদের প্রথম বিয়ে নাকি! ‘

নীলা মুহূর্তেই টিস্যু পেপার দিয়ে চোখের কোণটা মুছে নিলো। সে কিভাবে বুঝাবে তার এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে? সব অনুভূতি যে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। কিছু অনুভূতি একান্তই নিজস্ব। তাদের কথোপকথনের মধ্যেই সাদিদের কাজিন সিস্টার অনামিকার হঠাৎ আধ খোলা দরজাটার দিকে নজর যেতেই সে একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠলো,

— ‘ তুই এখানে কি করিস? দেখো ভাবী, ভাইয়া এখানে দাড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে! ‘

অনামিকার কথা শুনে সবগুলো মেয়েলী চোখ মুহূর্তেই দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
সাদিদকে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিধি তাকেও একদফা ধমক লাগানো,

— ‘ এসব কি সাদিদ! তুমি এখানে কেন? জানো না এই মুহূর্তে তোমার এখানে আসা নিষেধ? এখনি বের হও। ‘
— ‘ মাই ডিয়ার সুইট ভাবীমণি রুমটা যেহেতু আমার সেহেতু প্রয়োজনে আসতেই তো পারি। আর এটা কিন্তু যেমন তেমন প্রয়োজন নয়, একেবারে শ্বাস আটকে থাকার মতো প্রয়োজন। সুতরাং প্রয়োজন না মিটলে অঘটন ঘটবার পরিপূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সময় থাকতে প্রয়োজনটা মিটিয়ে নেওয়া উচিত নয় কি? ‘

সাদিদ কথা বলছে আর আড়চোখে বারবার নীলার দিকেই তাকাচ্ছে। বিষয়টা নীলাসহ কারোরই নজর এড়ালো না। তাই কাকে ইন্ডিকেট করে কথাগুলো বলা হয়েছে উপস্থিত কারো আর বুঝার বাকি নেই। তাই সাদিদের পিন্চ কাটাটা বাদ গেল না।

— ‘ হ্যাঁ সেটাতো দেখতেই পারছি কি প্রয়োজন। তা দেবর সাহেব আপাতত প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে না। আপনি এখন যেতে পারেন। ‘
— ‘ দেবরের পূর্বে কিন্তু ভাই হয়। ভাইয়ের সাথে এতোবড় নাইনসাফি করতে পারবে? ‘
— ‘ এসব কিছু বুঝতে চাই না। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে কাজ হবে না। জলদি বের হও। ‘

সাদিদ আরও একবার মুখ নিচে নামিয়ে রাখা ব্যক্তিগত লজ্জাবতী লাজুকলতার দিকে তাকালো। অতঃপর হার না মানা স্বরে চরম নির্লজ্জতার পরিচয় দিলো।

— ‘ ওকে। ঠিক আছে তাহলে। তোমরা যেহেতু নিজেদের কথা থেকে সরে আসবে না তাই আমার প্রয়োজন আমাকেই দেখতে হবে। সুতরাং আমি আমার বউকে নিয়ে গেলাম। নিজস্ব মানসম্মান বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে নিজ দায়িত্বে চোখ বন্ধ করতে পারো। পরে আমাকে বলো না যেন, যে আমি সর্তক করিনি। ‘

বলেই সাদিদ এগিয়ে এসে সবার সামনেই নীলাকে কোলে তুলতে গেলে সবাই একপ্রকার চোখে হাত দিয়ে চিল্লিয়ে উঠল।

— ‘ আরে থাম ভাই থাম। তোর না হয় একেবারেই লাজশরম নাই তাই বলে কি আমাদেরও লজ্জা নাই নাকি? ‘
— ‘ ওহ্ তাই নাকি! তাহলে এতোই যখন লজ্জার ভয় তাহলে এসব বিষয়ে নাক গলাতে আসো কেন? ‘

নিধি এগিয়ে এসে আলতো করে সাদিদের কানটা টেনে ধরলো।

— ‘ ইশশ ভাবীমণি লাগে তো। ‘
— ‘ পাঁজি একটা! লাগার জন্যই ধরেছি। মেয়ের বাবা হয়ে গেল অথচ দুষ্টুমি কমে না। ‘
— ‘ এটার সাথে মেয়ের কি সম্পর্ক? তাছাড়া হিসেব মতো তো পদবি বৃদ্ধির সাথে সাথে সবকিছুই বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। আই মিন টু সে সবকিছু। তুমি জ্ঞানী। আর জ্ঞানীরা সব অল্পতেই বুঝতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছো? ‘

বলেই সাদিদ চোখ টিপলো। আর সবাই আরেকদফা হাসাহাসিতে লাগলো।

— ‘ মাত্র দুইমিনিট। এরথেকে বেশি এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ একটু পরেই নিচ থেকে ডাক পরবে৷ তাই জলদি নিজের প্রয়োজন শেষ করো। আমরা ততক্ষণ রুমের সামনেই আছি। ‘

নিধি দরজাটা হালকা চাপা দিয়ে সবাইকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তারা চলে যেতেই সাদিদ নীলার দিকে তাকালো।
একেবারে পাকা লাল টমেটো। শাড়ি লাল, দোপাট্টা লাল, ঠোঁটের লিপস্টিকও টকটকে লাল। সব লালের মধ্যে লাজকলতা যেন ফোটা লাল পদ্মা। সাদিদ অপরপাশে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। কেননা পাগলিটা এখনও মুখ নিচু করেই বসে রয়েছে। শুধু পারে না থুতনি এনে বুকের সাথে লাগিয়ে নিতে।
আর অপরদিকে বেচারি নীলার অবস্থা করুণ। এখনও বুকের হৃদযন্ত্রটা ধকধক আওয়াজ করে বেজেই চলেছে। তখনকার সাদিদের কৃতকর্মে নীলার আত্মাটা এসে প্রায় গলায় ঠেকেছিল। এই অসভ্য পুরুষের নির্লজ্জতাকে নীলা বরাবরই ভীষণ ভয় পায়।

— ‘ এখনও এতো লজ্জা! স্থান-কাল বিবেচনায় সেটা একটু বেশি নয় কি? ‘

নীলা এতক্ষণে সাদিদের কথায় মুখ উপরে তুলে তাকালো। লজ্জা পেলে এই ছেলে তাকে আরও বেশি পঁচাবে। তাই সাহসীকতার পরিচয় দিতে লজ্জাকে পরাজিত করে সাদিদের সামনে উঠে দাড়ালো। আলতো করে তার বুকে একটা কিল বসিয়ে বলে উঠল,

— ‘ এসব কি? লোকজন দেখেন না? আপুনিসহ সবাই কি ভাবলো! ‘

সাদিদের ঠোঁটের কোণ জুড়ে মৃদু হাসির রেখা যেন আবারও ফুটে উঠল। সে নীলার কোমড় পেঁচিয়ে হালকা টান দিয়ে তার বুকে এনে ফেলল। একহাত কোমড়ে আর আরেকহাত গালে বুলিয়ে বলল,

— ‘ আমার কি দোষ? তারাই তো কথা ঘুরিয়ে এতক্ষণ অপেক্ষা করালো। তুমি জানো একটু কাছে আসার জন্য আমি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেছি? তার মধ্যে তারা এসে বাধা দিতে চাইলে কিভাবে সহ্য করা যায়? ‘
— ‘ আপনি..আপনি একটা বেশরম। ‘

প্রেমিক পুরুষটি আবারও মৃদু হাসলো। আলতো করে নীলার মুখটা আঁজলাভরে ধরে একদৃষ্টিতে প্রিয়তমার মুখশ্রীতে তাকাতেই নীলা প্রশ্ন ছুঁড়ল,

— ‘ কি দেখেন? ‘

সাদিদ প্রিয়তমার শরীরটাকে নিজের আরও কাছে টানলো৷ সময় নিয়ে পুরুষালী ঠোঁটজোড়া নীলার কপালের মধ্যখানে চেপে ধরল। নীরবে কিছু উষ্ণ ভালোবাসাঘন মুহূর্ত পার হলো।

— ‘ আমার কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর। বর্ণনার উর্ধ্বে। এতোটা বেশি সৌন্দর্যের চিত্রকর্ম কল্পনাতেও আঁকা সম্ভব নয়। সত্যিই পূর্ণতাটা হৃদয়ে তৃপ্তি এনে দিলো। এই তৃপ্তিটা দেওয়ার জন্য সাদিদ তার প্রাণপাখির কাছে কৃতজ্ঞ। ‘

সৌন্দর্যের প্রশংসাতে সব মেয়েরাই লজ্জা পায়। নীলাও তো সেটার বাহিরে নয়। তাই সাদিদের মুখের এমন বাক্য যারপরনাই সে ভীষণ লজ্জা পেল। চোখ খুলে রাখা রীতিমতো দায় হচ্ছে। নীলা চোখ পিটপিট করে সাদিদের দিকে তাকালো।
সাদিদের পরনেও বিয়ের শেরওয়ানি। কেবলমাত্র মাথায় বরদের পাগড়িটা ব্যতিত। হয়তো বা বাসা বিধায় খুলে রেখেছে। আর বলাবাহুল্য সাদিদও সেই বছর পূর্বেকার শেরওয়ানিটাই পরেছে। নীলার অবশ্য সেদিন তাকে স্বচোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কেবলমাত্র শপিংয়ের সময় যা দেখার দেখেছিল অতোটুকুই। সাদিদ নিজেও যে বিয়ের জন্য এটাই পরবে সেটা নীলা আশা করেনি। সেদিনতো লকার থেকে সাদিদ শুধু নীলার জন্য কেনা বিয়ের সকল জিনিসপত্রগুলো বিছানায় রেখেছিল। সেখানে সাদিদের কিছু ছিল না। তাই এতোবড় সারপ্রাইজটা সে একদমই আশা করেনি। তাইতো সামনাসামনি এভাবে দেখে পুরোনো কিছু তিক্ততা চোখের পর্দায় ভেসে উঠল। আর প্রত্যাশিতভাবেই নীলার চোখে আবারও নোনাজলেরা এসে ভিড় জমালো।
সাদিদ খুব যত্নে নীলার চোখের কোণটা মুছিয়ে দিলো। জলে ভেজা লেপ্টানো কাজল চোখজোড়া হালকা ছুঁয়ে দিয়ে নরমস্বরে বলল,

— ‘ অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দিতে এই আয়োজন। আর পূর্ণতা সবসময় খুশিতে মানায়। তাই চোখে জল আসা বারণ। সব কিছু সহ্য করার ক্ষমতা থাকলেও এই চোখে জল সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই জান। তাই কোনো পরিস্থিতিতেই জল গ্রহণযোগ্য নয়। ‘

নীলা পরম আদরে সাদিদের বলিষ্ঠ পুরুষালী বুকের সাথে মিশে গেল।
একজনম কি? হাজার জনম ভালোবেসে গেলেও যেন এই কাপলযুগলের ভালোবাসার কমতি অনুভব হবে না। সুখে-দুঃখে, ভালো-মন্দে জীবনের সবকয়টি পরিস্থিতিতে কেবল এই হাতটাই যেন পাশে পাবার একান্ত আকাঙ্খা।
দুটি প্রেমিক মন এবং শরীর যখন একে-অপরের সাথে মিশে গিয়ে ভালোবাসার উষ্ণতায় হাবুডুবু খেতে ব্যস্ত তখনই অপ্রত্যাশিতভাবে দরজায় নক পরলো,

— ‘ আরে ভাই হলো? প্রয়োজন ছিল বুঝলাম। কিন্তু এখন দেখছি সীমাহীন প্রয়োজন চলছে! বর সাহেব, নিচে আপনাকে চিরুনী খোঁজার ন্যায় খোঁজ চলছে৷ আমরা কি বলবো আপনাদের বর এখন তার বউয়ের সাথে প্রয়োজন মেটাতে ব্যস্ত? ‘

দরজার ওপাশ থেকে আবারও হাসির ধুম পরতে সাদিদ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।

— ‘ ইশ কি ঝামেলা! শান্তি মতে একটু নিজের বিয়ে করা বউয়ের সাথেও সময় কাটানো যায় না৷ ভাগ্যিস বিয়েটা হয়েছিল। নতুবা এই অশান্তিগুলো হয়তো ধারে কাছেও ঘেঁষতে দিতে না। যতসব! ‘

নীলা সাদিদের ব্যঙ্গাত্বক স্বরে ফিক করে হেসে ফেলল। প্রিয়তমার হাসিমুখটা দেখে সাদিদের ঠোঁটেরও কোণেও ঈষৎ মিষ্টিরঙা রেখার সাদৃশ্য মিললো।

_________________

একই মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি। কিন্তু বুকের ছটফটানিগুলো যেন এখনো সেই প্রথম মুহূর্তটাতেই আটকে রয়েছে। নীলা বরাবরের মতো আবারও একবার সাদিদের মুখের দিকেই তাকালো। আগেরবার যেখানে ছিল অপরাধবোধ, অসহায়ত্ব আজ সেখানে উৎফুল্লতা। মেয়েকে কোলে নিয়ে সে দিব্যি নীলার উত্তর শুনার জন্য অপেক্ষা করে বসে রয়েছে। নীলার এমন সিচুয়েশনেও বেশ হাসি পেল। তাদের পাকনা মেয়েটা বড়দের মতো একবার বাবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মায়ের দিকে। আবার হঠাৎ হঠাৎ করে চোখ ঘুরিয়ে উপস্থিত সবার মুখের উপর নজর বুলিয়ে পরিস্থিতির অগ্রগতি লক্ষ্য করছে। আশেপাশের লোকজনকে মাথায় রেখে নীলা কোনোভাবে নিজের হাসি আটকালো। মেয়েটা সত্যিই না জানি কোনদিন তার নাক কেটে বসে!
কাজি সাহেব কবুল বলতে বললে নীলা হাসিমুখেই আবারও একবার কবুল বলল। নীলার পালা শেষ হতেই সাদিদ বলল।
আর আবারও তাদের পুনরায় বিবাহের কার্য সম্পূর্ণ হওয়াতে পরিবার বর্গ সাক্ষী হলো সেই বিশেষ আনন্দের মুহূর্তটাতে। সবার মুখেই উপচে পরা হাসি। শাহেদ এসেতো ভাইয়ের সাথে কোলাকুলিই করে নিলো। এই লিস্ট থেকে তার দুই প্রাণপ্রিয় বন্ধু সমতূল্য ভাইও কিন্তু বাদ পরেনি। সবাই তাদের বাচ্চামি কান্ডে ঠোঁট টিপে হাসছে। ভাবটা এমন যেন এটা তাদের বন্ধুর প্রথম বিয়ে। কিন্তু বন্ধুর যে একটা পাকনা মেয়েও আছে সেটা কেন তারা বারবার ভুলে যায়?
অতঃপর তাদের হাসিমুখের সাথে আরও দুইটি নতুন হাসি মুখও যুক্ত হলো। স্বয়ং কনে এবং তার গুণধর কন্যা। পিচ্চি নীয়ানার খুশি দেখে কে! নিষ্পাপ বাচ্চার দন্তহীন সেই খুশির হাসি এককথায় বর্ণনার উর্ধ্বে।

.

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই অতঃপর ফটোসেশনের পালা এলো। সাদিদ-নীলার সাথে সবার সিঙ্গেল ছবি আগেই তোলা হয়েছিল। কিন্তু এবার হবে ফ্যামিলি ফটো। তাইতো আয়োজনের কোনো কমতি নেই।
সাদিদ নীলাকে মাঝখানে বসিয়ে তাদের দুইপাশে পরিবারের বড়রা অর্থাৎ আরিফ মাহমুদ, হাসিবুর রহমান, শায়লা রহমান, নার্গিস খাতুনসহ সাদিদের দাদা বাড়ির বেশ কয়েকজন রয়েছে।
আসলে ফ্যামিলি বলতে কেবল আমরা পরিবারে যে গুটিকয়েক সদস্য থাকি তাদেরকেই হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সাদিদই চাই তাদের ফ্যামিলি ফটোটা সবাইকে নিয়েই হবে। যেখানে বন্ধু বান্ধব, কাছের কোনো মানুষই বাদ যাবে না। তাইতো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারকে এখন এতো বড় ছবি ক্যাপচার করার জন্য চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে। কেননা তাদের সংখ্যা যে খুব একটা কম নয়!

— ‘ এই মেয়ে তুই ওখানে কি করস? এখানে আস। ‘

শান্ত হাসিমুখে নীলার কাঁধে হাত রেখে ভাব নিয়ে পিছনে গিয়ে দাড়িয়েছিল। তাই হঠাৎ তানবীরের ধমকে চোখ বাঁকিয়ে তাকালো।
এই ছেলের ফেভারিট লিস্টে চিকেনের নাম না হয়ে করল্লা হওয়া উচিত ছিল। সর্বদা মুখ থেকে তিতকুটে বাক্য বের হয়।

— ‘ কেন! এখানে কি সমস্যা? ‘
— ‘ তুইতো সমস্যার গোডাউন তাই সমস্যা তোকে ছাড়তেই চায় না।
— ‘ কি! ‘

শান্তর চোখযুগল প্রায় বেড়িয়ে আসার জোগাড়। এই ছেলেটা এমন একটা সময়ে এসেও সবার সামনে তার সাথে ঝগড়া করছে! এসব মানা যায়?
তানবীর মুহূর্তেই চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। হনহনিয়ে শান্তর কাছে এগিয়ে গিয়ে তার বাহু টেনে সামনের সোফায় বসিয়ে দিলো।

— ‘ আহা, মেয়েটার সাথে সবসময় এমন করিস কেন? ওখানে সমস্যা কি? ‘
— ‘ হ্যাঁ সেটাই। আঙ্কেল বলেন তো উনাকে। তার মাথায়ই নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। ‘

তানবীর চোখ বাঁকিয়ে তাকাতেই শান্ত ভদ্র মেয়ের মতো মুখে ট্যাপ লাগালো।

— ‘ আমার কোনো সমস্যা নাই৷ কিন্তু আমার বাপের অবশ্যই সমস্যা হবার কথা। এই ভদ্র মহিলা নিজের আনন্দে আমার বাপকে ভুল্লাই গেছে। তুই সেখানে থাকলে তোর মুন্ডি না হয় দেখা যাইতো কিন্তু আমার বাপের? আমার বাপ কই যাইতো? গর্দভ ছেরি। তাই বাপ হিসেবে এসব দিকে নজর রাখা আমার কর্তব্য। ‘

তানবীরের মুখের বুলি শুনে শান্তর মুখটা একে-অপরের থেকে এতোটাই দূরে চলে গেল যে অনায়াসেই তার মধ্যে দিয়ে কয়েকশো মশা তাদের বংশধর নিয়ে ঢুকে যেতে পারবে।
তাকে ছাড়া বাদবাকি সবারও প্রায় একই হাল। কি বলে এই ছেলে!

— ‘ একদম নড়াচড়া করবি না। ‘

তানবীর নিজের ধমকা-ধমকির পালা শেষ করে এবার হাসিমুখে শাড়ির উপর দিয়ে শান্তর একেবারেই মসৃণ পেটটাতে আলতো করে হাত রেখে ফটোগ্রাফারের উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ এবার ঠিক আছে দাদা। এখন তুলতে পারেন। আমার বাপকে মিস দেওয়া চলবে না। নতুবা বাপ আইবার পর আমারে জিগাইলে আমি কি উত্তর দিমু? সো ক্যামেরাওয়ালা দাদা, ঠিকঠাক ক্লিক করবেন। ‘

সবাই এতক্ষণে আধা পাগলের সম্পূর্ণ কথাটা বুঝতে পারলো। আর তাদের সাথে শান্তও পারলো। আর সবার সামনে এমন পরিস্থিতিতে পরে লজ্জায় তার মুখটা মুহূর্তেই একটুখানি হয়ে গেল। রাগ আর লজ্জার সংমিশ্রণে নিঃশব্দে তানবীরকে উদ্দেশ্য করে শ’খানেক গালির বর্ষণ আওড়ালো। কিন্তু সেগুলো সবকটাই একান্ত নীরবে। নতুবা ঘুণাক্ষরেও পাশের জনের কানে পৌঁছাতে পারলে তাকে আর অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খোঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না।
ফটোগ্রাফার ক্যামেরাতে ক্লিক করার আগে আরও একবার ভালোভাবে সবাইকে দেখে নিলো।
সাদিদের কোলে পিচ্চি নীয়ানা এবং তার কাছ ঘেঁষে নীলা। তাদের সাথে মানে পিচ্চি নীয়ানার পাশেই নিজের জায়গাটা বেশ পাকাপোক্তভাবে করে নিয়ে শাদ বসা। আর তাদেরকে ঘিরে পুরো পরিবার।
কাছের মানুষগুলোর হাসি মুখখানা নিয়ে খুব সুন্দর একটা স্মৃতিছবি ক্যামেরার পর্দায় উঠে এলো। হয়তো বা বছরঘুরে এই সুুখ স্মৃতিগুলোই মুহূর্তটাকে পূনরুজ্জীবিত করবে। চায়ের কাপে বসবে ফিরে দেখা দিনগুলোর জ্বলমলে স্মৃতিপট নিয়ে লম্বা আলাপ। প্রহর পেড়িয়ে গোধূলি লগ্ন আসবে কিন্তু তারপরও থেমে থাকবে না সেই স্মৃতিকখন। সুখ-দুঃখ, ঝগড়া, মান অভিমান, দূরত্ব, আত্মীয়ের বিশ্বাস ঘাতকতা সবকিছুকে ছাপিয়ে যেই ভালোবাসা আপন রঙে খেলে গিয়েছে। ভালোবাসার রক্তিম আবিরে যারা রঙিন হয়েছে এবং নিজেদের রঙে পাশের মানুষজনগুলোকেও রাঙাতে বাধ্য করেছে। এ যেন এক অকুতোভয়, সীমাহীন, অবোধগম্য, ব্যক্তহীন, কবু না থেমে থাকা ভালোবাসার গল্প। এক অন্তরালের প্রেমিক মনের গল্প। যার শুরু এবং শেষটা পুরোটাই অনুরাগ নির্ভর। এ যেন এক হৃদয়ে ছুঁয়ে যাওয়া অন্তরালের অনুরাগের প্রেমময়ী স্মৃতিকাহন!

#চলবে…