অন্তরালের অনুরাগ পর্ব-৬৩+৬৪

0
898

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৬৩ ❤

রাত তখন তিনটে কি চারটে হবে বোধহয়। ঘুমের ঘোরে অভ্যাসবশত নীলা নিজের ডানপাশে হাত দিলো। জায়গাটা ফাঁকা অনুভব করে চোখ বন্ধ রেখেই ক্রমাগত নিজের জন্য বরাদ্দকৃত উষ্ণতম বুকটা খোঁজে চললো। কিন্তু সেই উষ্ণতার অনুপস্থিতি অনুভব করে পিটপিট করে চোখ খুলল। সবুজ ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় আধা আলো-অন্ধকার রুমটার এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো। হঠাৎ চোখ পড়ল রুমের পশ্চিম পাশে। আর তখনই নীলার বুকটা তীক্ষ্ণ ব্যাথায় যেন কেঁদে উঠল। আর কত? নীলার যে এই মানুষটার কষ্ট আর সহ্য হয় না।
সাদিদ বরাবরই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আগ্রহী। হাজার ও ব্যস্ততায় থাকলেও ফরজ সালাতটুকু সে আদায় করে নিতে ভুল করবে না৷ কিন্তু তাহাজ্জুদের সালাতটা বরাবরই মিস হয়ে যায়। এমনকি নফল ইবাদত বলে বছরের দুই তিনটা উপলক্ষ ব্যতিত কোনোকালেই তার পড়া হয় না। কিন্তু আজকাল! মানুষটা সারাদিন এমন কঠিন খাটুনি খেটেও রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় করে। অন্য সময় হলে নীলা হয়তো বা স্বামীর এমন নেক আমলে ভীষণ খুশি হতো৷ কিন্তু এখন যে ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও হতে পারে না৷ প্রচন্ড দুঃখে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কেন তার জন্য এই মানুষটা এতো কষ্ট পায়? নিজের কষ্টের থেকেও যে নীলার নিকট তার কষ্টের আঘাত ব্যাপক গাঢ়। সহ্য হয় না নীলার।
কতক্ষণ এভাবে কান্নাভরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে নীলা তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর দিকে তাকিয়ে ছিলো সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু চারপাশ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসতেই নীলার নিকট সময়টা অনুমান হলো। সাদিদ একেবারে ফজরের সালাত শেষ করে জায়নামাজ থেকে উঠে দাড়ালো।
সাদিদকে সালাম ফিরাতে দেখেই নীলা তখন দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। মানুষটা যখন নীলার নিকট হতে এই মোনাজাতগুলো গোপন রাখতে চায় তাহলে সেটাই হোক। নীলাও তাকে এই নিয়ে কোনোরকম প্রশ্ন করবে না। থাকুক না কিছু নীরব পবিত্র ভালোবাসা একান্ত সযত্নে। তাতে কি খুব ক্ষতি?
সাদিদ জায়নামাজটা যথাস্থানে রেখে বিছানার দিকে এগিয়ে আসলো। নীলার মাথার কাছে বসে তার সারা শরীরে ফুঁ দিলো। এবং খুবই আলতো করে তিন সেকেন্ড সময় নিয়ে মাথায় একটা চুমু খেল। এবং তারপরই নিচু হয়ে কম্বলের উপর দিয়েই নীলার উঁচু পেটটাতে ঠোঁট স্পর্শ করলে ভালোবাসার স্নেহময় চুম্বন একে দিলো।
সাদিদ উঠে যেতেই নীলার গাল বেয়ে নিঃশব্দের গরম জলগুলো গড়িয়ে পড়ে ক্রমশ বালিশটা ভিজে যেতে লাগলো। সাদিদ মাথার টুপি খোলে বিছানায় আসলো। অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে বলে কি মনে করে নীলাকে আর নামাজের জন্য ডাকলো না। শুধু পাশে শুয়ে নীলাকে আস্তে করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আর উঁচু পেটতাতে নিজের বলিষ্ঠ হাতটা আলতো করে রেখে চোখ বন্ধ করলো। আর উপরে উপরে শক্ত ভাব বজায় রেখে চলা কিন্তু ভিতরে ভিতরে আড়ষ্ট হয়ে থাকা পুরুষটির অগোচরে চলতে থাকলো প্রিয়তমা স্ত্রীর নিঃশব্দের অশ্রুজল। কিন্তু কতক্ষণ?
নীলা ঘুমের ঘোরে কেঁপে কেঁপে উঠতেই সাদিদের চোখ খুলে গেল। আবছা আলোয় কিছু না দেখতে পেয়ে নীলার পাশের ল্যাম্পশেডটা অন করে দিলো। চিন্তিত হয়ে নীলার গালে হাত রাখতেই ভেজা অনুভব করলো। মুহূর্তেই তার অস্থিরতা শুরু। সেকেন্ডেই তার মনে হাজারও খারাপ চিন্তারা এসে ঘূর্ণিপাক খেতে লাগলো।

— ‘ পাখি, এই পাখি শরীর খারাপ লাগছে তোমার? ‘

সাদিদের ভাঙা গলার চিন্তিতস্বরটা শুনে নীলা আর ঘুমের অভিনয় করে যেতে পারলো না। কিন্তু চোখ খুলতেই ঘটলো বিপত্তি। চক্ষুযুগল যেন তার টকটকে রক্তলাল।

— ‘ কি হয়েছে আমার পাখির? বলো আমাকে? ‘

নীলা মুখফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারলো না। শুধু এতক্ষণের নিঃশব্দের চোখের জলগুলো সাদিদের বুকে লেপ্টে দিয়ে বুক ভিজাতে লাগলো।

— ‘ এমন করলে কিন্তু আমি রেগে যাব পাখি। কান্না বন্ধ করো৷ ডক্টর নিষেধ করেছে না, এইসময় তোমাকে কান্নাকাটি না করতে? তাহলে এসব কি! দেখি চোখ মুছো। ‘

সাদিদ নিজেই তার ভোজা গালগুলো আলতো হাতে মুছিয়ে দিলো। অতঃপর প্রিয়তমা স্ত্রীকে বুকে আগলে নিয়ে আদুরেভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। নীলার কান্না কিছুটা দমে আসতেই সাদিদ চিন্তাগ্রস্ত গলায় প্রশ্ন করলো,

— ‘ কান্না করেছো কেন সোনা? শরীর খারাপ লাগছিলো? নাকি আবারও বাজে স্বপ্ন দেখেছিলে? ‘
— ‘ কিচ্ছুটি হয়নি আমার। কেবল আপনি আমাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করুন। তাহলে আমি ঠিক হয়ে যাব। ‘

সাদিদ নিঃশব্দে মৃদু হাসলো। অতঃপর নিজেদের উপর পাতলা কম্বলটা ভালোভাবে দিয়ে নীলাকে তার সাথে একেবারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। মাথায় শব্দ করে চুমু খেয়ে বলল,

— ‘ আমার প্রিন্সেস কি করে? দুষ্টু মা কি কান্না করে তার মিষ্টি ঘুমটা ভেঙে দিয়েছে? ‘
— ‘ নিজেই দেখুন। ‘

নীলা কম্বলের নিচ দিয়েই সাদিদের হাতটা তার পেটে রাখলো। বেশিক্ষণ সাদিদকে অপেক্ষা করতে হয়নি। মেয়ে তাকে নিজের অবস্থান জানান দিলো৷ সাদিদের চোখে-মুখে উপচে পরা খুশি।

— ‘ প্রিন্সেস জেগে আছে পাখি৷ আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে৷ ‘

নীলা উত্তর দিলো না। শুধু সাদিদের হাসিমুখটা মুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রাণভরে দেখলো। মুগ্ধতার রেশ নিয়েই তার কপালের চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে ডান গালে ছোট্ট একটা চুমু দিলো। সাদিদের ঠোঁটের কোণ আরও বিস্তৃত হলো। সদ্য ভোরের আলোতে যা নীলার চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে। দেখেও যেন তৃপ্তি মেটে না তার। ভীষণ তৃষার্ত এক প্রিয়তমা নারী।

______________

তানবীরের সর্বদা জনমানবহীন খা খা করা বাড়িটতে যেন আজ শান্তি মতে শ্বাস ফেলার জায়গাটুকু নেই৷ আল্লাহ জানে কোথায় থেকে সকাল সকাল এতো লোকজনের লাইন লেগে গিয়েছে!
শান্ত চোখ নামিয়ে পুরো লিভিংরুমটাতে একবার নজর বুলালো। নাহ কাউকে চেনে না। কেমন যেন নার্ভাস নার্ভাস লাগছে। অদূরেই নিধি একজন স্টাফের সাথে কাজকর্মের বিষয়ে কথা বলছিল। তাই শান্তকে জড়সড় হয়ে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো,

— ‘ কিরে কিছু লাগবে? এমন করে কি দেখে চলেছিস? ‘
— ‘ না মানে.. আসলে..
— ‘ এতো ইতস্ততবোধ করছিস কেন? এটাতো এখন থেকে তোর নিজেরই বাড়ি। শাশুড়ি-ননদ কেউ নেই যে তোকে ধরে ধরে সব দেখিয়ে দিবে৷ নিজের সংসারের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তাই নিজেকে এতো গুটিয়ে না রেখে ফ্রি ভাবে থাক। ‘
— ‘ আপু, আমি পারবো তো এতবড় সংসার সামলাতে? ‘
— ‘ বড় কোথায় রে? মাত্রতো তুই আর তানবীর৷ টোনাটুনির সংসার তোদের। আর কে আছে? ‘
— ‘ না মানে ওনারা সবাই? ‘

নিধি এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই বলল,

— ‘ বিয়ের পরের দিনই হাওয়া ফুঁস? সর্বদা দাপটে চলা মেয়েটা আজ এমন ভিতুদের মতো কথা বলছে? ‘
— ‘ মানে? ‘
— ‘ আরে বোকা মেয়ে উনারা ঘরের লোক নয়৷ বিয়ের বিভিন্ন কাজে বাহির থেকে এসেছে। ‘
— ‘ ওহ। ‘

নিধি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর বলল,

— ‘ কেউতো নেই যে তোকে কিছু বলবে। তাই আমিই বলছি। মিষ্টি জাতীয় কিছু রান্না করতে পারবি? খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই৷ ‘
— ‘ হ্যাঁ পারব। কয়েকদিন আগে ইউটিউব দেখে করেছিলাম। ‘

নিধি মুচকি হাসলো। অতঃপর হাসিমুখেই শান্তর উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ তাহলে আমার সাথে রান্নাঘরে আয়। হিসেব মতে তোকে আজ সকালে মিষ্টি জাতীয় কিছু রান্না করতে হবে। ‘

শান্ত বাধ্য মেয়ের মতো নিধির পিছন পিছন চলে গেল। এবং একটু ভয় পেলেও ভালোভাবেই পায়েসটা রান্না করতে পারলো।

— ‘ খুব ভালো হয়েছে। এবার এককাপ কফি নিয়ে নিজের রুমে যা। আমি আগেই সকলের জন্য তৈরি করেছিলাম। ‘

শান্ত জানে না হঠাৎ তার কি হলো! কিন্তু নিধির এই একটা কথা বলার পর সে বেশ লজ্জা পেল। নিজের রুম, নিজের বাড়ি! কি অদ্ভুত না?
নিধিও তার লজ্জায় লাল হওয়া মুখটা দেখেছে। তাই মৃদু হেসে আলতো করে গালটা টেনে দিয়ে আবারও বলল,

— ‘ আর লজ্জা পেতে হবে না। যা এখন। ‘

নিজের রুমের সামনে এসেই শান্তর পা-জোড়া আবারও স্থির হয়ে গেল। যা থেকে বাঁচতে সকাল থেকে এতো চেষ্টা করে যাচ্ছে এখন সেখানেই এসে হাজির! বুকে একটা ফুঁ দিয়ে সে তানবীরের তথা নিজের রুমে প্রবেশ করলো। তানবীরকে বিছানায় না দেখে যেন স্বস্তি পেল। কিন্তু পরমুহূর্তেই অগোছালো বিছানার দিকে নজর পরতেই লজ্জায় তার গালগুলো আবারও টমেটোর ন্যায় লালচে দেখা গেল। রাতের দস্যিপনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই, সে দ্রুত তানবীরের ওয়াসরুম থেকে আসার আগেই রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইল। তাই কফির মগটা ট্রি-টেবিলে রেখেই সে যাবার জন্য পা বাড়ালো। আর তখনই ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল। শান্তর বুকের মধ্যে বোধহয় হাজারও কিলোমিটার বেগে ঘোড়ার রেস চলছে। তানবীরের দিকে তাকালোর সাহস হচ্ছে না। তাই মাথা নিচু রেখেই আস্তে করে বলল,

— ‘ আপনার কফি। ‘

বলেই সে হালকা দৌড়ে রুম থেকে বের হতে চাইল। কিন্তু পারলো না। শীতল বলিষ্ঠ একটা হাত সজোরে পিছন থেকে তার কব্জি টেনে ধরেছে। তানবীর পিছন থেকেই প্রশ্ন করলো,

— ‘ সমস্যা কি তোর? সকাল থেকে কোথায় ছিলি? ‘
— ‘না মানে একটু কাজ…
— ‘ কিছু করতে হবে না। বাড়িতে এতোগুলো কাজের লোক আছে তাহলে কিসের জন্য? তোকে এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। ‘
— ‘ নিজের সংসারের কাজ নিজে না করলে কে করবে? ‘

এমন কথার পরিপেক্ষিতে তানবীর আর প্রতিউত্তর করার ভাষা খোঁজে পেল না। এতদিন তো এটাকে তার বাড়ি বলেই মনে হতো না। কেবলমাত্র একঝাঁক কাজের লোকের ভিড়ে গড়ে উঠা ফাইভ স্টার হোটেল মনে হতো। কিন্তু আজকে এই মেয়েটার একটা কথায় কোথায় যেন শেকড়ের টান পরেছে। সত্যিই মেয়েটার আগমনে ধীরে ধীরে এই হোটেলটা যেন বাড়িতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তানবীর শান্তকে পিছন থেকেই আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। শান্তর কাঁধে নিজের থুতনি রেখে ধীর গলায় বলল,

— ‘ থ্যাংক ইউ। ‘

গরম নিঃশ্বাস কাঁধে পরতেই শান্ত পরনের শাড়িটা শক্ত করে খামচে ধরলো। একেবারে স্থির হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে রইল। তাকে এমন শরীর শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তানবীর আবারও বলে উঠল,

— ‘ তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে? শরীর খারাপ লাগছে? পেইনকিলারটা তখন খাওনি? ‘

ইশশ যেখান থেকে বাঁচতে চাওয়া হয় সেখানেই এসে যেন বারবার আটকে পরতে হয়। শান্ত লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে অস্ফুটস্বরে কেবল বলল,

— ‘ কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আপনার। ছাড়ুন, আমি যাব। ‘

এবার বোধহয় পুরোটা বিষয় তানবীরের নিকট জলের ন্যায় পরিস্কার হলো। সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে চাপা হেসে বলে উঠল,

— ‘ লজ্জা পাচ্ছো? ‘
— ‘ ছাড়ু..ন। ‘
— ‘ না বললে তো ছাড়ছি না মিসেস। ‘

শান্ত এবার আর মুখে কিছু বলতে পারলো না। কেবল তানবীরের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ক্রমাগত মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো। কিন্তু তানবীর এতো সহজে ছাড়লে তো! আষ্টেপৃষ্টে শান্তকে পিছন থেকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমিমাখা স্বরে বলল,

— ‘ লজ্জার কাজ তো শেষ। এখন এতো লজ্জা পেয়ে কি হবে? ‘

এমন দুষ্টু বাক্যে শান্ত আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারলো না। পিছন ঘুরে তানবীরের সদ্য গোসল করা উন্মুক্ত শীতল বুকে মুখ গোঁজে দিলো। তানবীর ঠোঁট টিপে হেসে শান্তর ভেজা চুলগুলোতে আঙুল চালালো। অতঃপর নিচু হয়ে চুলের ভাঁজে দীর্ঘ একটা ভালোবাসার উষ্ণ পরশ দিলো।

— ‘ বিয়ের প্রথম সকালের শুভেচ্ছা ওয়াইফি। ‘
— ‘ আপনাকেও। ‘
— ‘ আর কিছু নেই? এতো কিপ্টামি! ‘

শান্ত তানবীরের বুক থেকেই মাথাটা একটু উঁচু করলো। তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট তার নিকট তানবীরের মাত্র বলা কথাটা বোধগম্য হয়নি৷ কিন্তু তানবীরের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখাটা দেখে শান্ত আবারও বুকে মুখ লুকালো। বুঝতে পারুক আর নায় বা পারুক কিন্তু এটা যে নিঃসন্দেহে তানবীরের বদ মতলব সেটা বুঝতে শান্তর আর অসুবিধা হয়নি। তাই আস্তে করে তানবীরের বক্ষরোমে একটা টান দিলো। তাতে যেন তানবীরের ঠোঁটের কোণের হাসি আর দীর্ঘায়িত হলো। সে শান্তকে নিজের বুকের সাথে আরও ঝাপটে ধরে এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল।

_____________

তানবীর-শান্তর বিয়ে উপলক্ষে সাদিদের অনেক কাজ পেন্ডিং পরেছিল। তাই দুপুরে তাদের রিসিপশন পার্টি শেষ করে সোজা ল্যাবে চলে গিয়েছে। ল্যাবের কাজগুলো গুছিয়ে আবার অফিসেও একটু টু মেরে আসতে হবে। নিজেদের অফিস হলে কি হবে? হাসিবুর রহমান বরাবরই কাজের ক্ষেত্রে ভীষণ সিরিয়াস। সেটা অফিসের স্টাফ হোক বা নিজের ছেলে, কাজ নিয়ে অবহেলা তিনি একেবারে বরদাস্ত করেন না। কিন্তু নিজের আদরের ছেলের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি মন থেকেই তাকে একটু আধটু ছাড় দিয়ে থাকেন৷ আর এটারই সুযোগে সৎ ব্যবহার করতে তার গুণধর পুত্র পিছুপা হয় না। কিন্তু আজকে একেবারে না গেলেই হচ্ছিল না। তাই নীলাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়েই সে বেড়িয়ে পরেছে।
ফোনের রিংটোনের আওয়াজটা কানে আসতেই নীলার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। সাদিদের নাম্বার থেকে কল এসেছে। আর সবার থেকে আলাদা রিংটোনটাই তার প্রমাণ হিসেবে শব্দ করে অনবরত বেজে চলেছে। নীলাকে আর উঠে ফোনটা আনতে যেতে হলো না। মিনু পাশেই বসা ছিলো। তাই সে নীলার হাতে ফোনটা দিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেল।

— ‘ আসসালামু আলাইকুম। ‘
— ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করো? ‘
— ‘ কিছু করি না৷ এমনিতেই বসে আছি। ‘
— ‘ তুমি রুমে একা? ‘

ফোনের অপরপাশ থেকেই নীলা সাদিদের চিন্তিত গলাটা বুঝতে পারলো৷ তাই মুচকি হেসে বলল,

— ‘ আরে না। সেই সাহস কি কারো আছে? আপনি যেইভাবে সবাইকে ধমকের উপরে রাখেন আমি বললেও তারা আমাকে একা ছাড়ে না। মিনু ছিলো এতক্ষণ। আপনি ফোন করেছেন বিধায় বাহিরে গিয়েছে। ‘
— ‘ তুমি একা থাকবেই বা কেন? এতগুলো লোকজন তাহলে বাড়িতে থেকে কি লাভ? ‘
— ‘ আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে। এবার শান্তি? ‘
— ‘ হুহ্। ‘
— ‘ এতো রাগ কেন আপনার? এই ছোট্ট একটা কথাতে কেউ রেগে যায়? ‘
— ‘ ভালো তো আর তুমি ভালো না তাই আমার রাগের কারণটাও বুঝবে না। ‘

নীলা আবারও নিঃশব্দে হাসলো। কিন্তু এই কথার প্রতিউত্তরটা দিলো না। কেননা সে বেশ ভালো করেই সাদিদের দুষ্টুমিগুলো বুঝতে পারে। তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,

— ‘ কি করেন? ‘
— ‘ কাজ করছিলাম একটু। ‘
— ‘ কখন আসবেন? ‘

ফোনের অপরপাশে সাদিদের ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলার আওয়াজ পাওয়া গেল। নীলা চোখ বন্ধ করে লাউডস্পিকার অন করে ফোনটা নিজের বুকের উপর চেপে রাখলো। কয়েক মিনিটের নীরবতার পর সাদিদ নরম আদুরে গলায় বলল,

— ‘ লেইট হবে পাখি। তুমি বাকি সবার সাথে ডিনার করে নিও। কোনো ফাঁকিবাজি যেন না হয়। আমি কিন্তু মায়ের থেকে খবর নিব। আর.. আর রাত জাগবে না। লক্ষ্মি মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরবে। ‘

বুকের বামপাশে খুবই সুক্ষ্ম একটা কষ্টের অনুভূতি হলেও নীলা কিছু বলল না৷ শুধু সাদিদকেও সময় মতো ডিনার করে নিতে বলে ফোন রাখলো। সাদিদ কল রাখতেই নিমিষেই নীলার চোখটা ছলছল করে উঠল। মানুষটা নীলাকে এতো সময় দেয়, এতো খেয়াল রাখে তারপরও যেন কয়েক ঘণ্টার দুরত্বটাতে নীলার কষ্টের কূল-কিনারা থাকে না। খুব বেশি ভালোবাসে বিধায়ই হয়তো সামান্য দূরত্বটুকু মনে এতোটা আঘাত হানে। কিন্তু তারই সাথে সাথে নীলার যে ভয়ও হয়। সামান্য দূরত্বে যদি এতো কষ্টের অনুভূতি হয় তাহলে সারাজীবনের জন্য কিভাবে তারা একে-অপরকে ছেড়ে বাঁচবে? অপরজনকে ছাড়া যে দুইজনই অপূর্ণ। দুইজনই ভীষণ অতৃপ্ত।

.

নীলা আবারও দেয়ালের রেডিয়াম ঘড়িটার দিকে তাকালো। সাড়ে এগারোটার উপরে বাজে। অথচ সাদিদ এখনও অফিসে পরে রয়েছে। তখন ফোন রাখার পর আর কথা বলা হয়নি। শুধু ঘণ্টাখানেক আগে নীলা খেয়েছে কি-না সেই খবরটুকু সে শায়লা রহমানের কাছ থেকে নিয়েছে। তিনি হাসতে হাসতেই পাগল ছেলেকে বলেছেন তিনি নিজে নীলাকে খাইয়ে দিয়েছেন। আর সাদিদ আবারও নীলাকে কড়া স্বরে বলে দিয়েছে যেন রাত না জাগে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।
কিন্তু নীলা সেই কখন থেকে বিছানায় শুয়ে একাধারে ছটফট করেই যাচ্ছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। এতক্ষণ শুয়ে থাকতে থাকতে মাথাটাও এবার ধরে যাচ্ছে। তাই সে বিছানা ছেড়ে উঠে পাতলা চাদরটা গায়ে দিয়ে রুমে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। রাতের মৃদু বাতাশে মনটা নিমিষেই ভালো হতে শুরু করলো।
সাদিদ যখন বাসায় পৌঁছলো তখন পুরো বাড়ি নীরবতার চাদরে আছন্ন। তাই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে সে নিজেই দরজা খোলে ভিতরে প্রবেশ করলো। নিঃশব্দে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। রুমের দরজা লাগানো হয়নি। সাদিদ আসবে বলে নীলা তখন শুধু দরজা চাপিয়ে শুয়ে পরেছিল। সাদিদ রুমে এসেই সর্বপ্রথম বিছানার দিকে তাকালো। কিন্তু শূন্য বিছানা দেখতেই তার কপাল কুঁচকে এলো। নীলাকে ডাকতে যাবে তখনই বারান্দার দিকে তার নজর পরলো। বারান্দার হালকা কৃত্রিম আলো আর চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে প্রিয় নারীর ছায়ামূর্তিটি চোখের সামনে স্পষ্টত হলো। আর মুহূর্তেই সাদিদের পুরো শরীরে একটা মৃদু প্রশান্তির ঠান্ডা বাতাশ বয়ে গেল।
খুবই পরিচিত স্পর্শটা নিজের পেটে অনুভব করতেই নীলা আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। নিচুস্বরে বলল,

— ‘ খেয়েছেন? ‘
— ‘ হুম। কিন্তু তুমি এতো রাতে এখানে কেন? ঘুমাতে বলেছিলাম না? ‘
— ‘ ঘুম আসছিলো না। ‘
— ‘ কেন? ‘

নীলা উত্তর দিলো না। কি উত্তর দিবে? যে আপনার বুকের ওম ছাড়া আমার চোখে ঘুম ধরা দেয় না? এতো বেশরম কি নীলা আধো হতে পারবে? তাই নিঃশব্দে শুধু পেটের উপর সাদিদের হাতটার উপর নিজেও হাত রাখলো। কেবলমাত্র হৃদপিণ্ডের কয়েক মিনিটের নিঃশব্দের কথোপকথনের পর সাদিদ আদুরেস্বরে ডাকলো,

— ‘ প্রাণপাখি? ‘
— ‘ হুম? ‘
— ‘ ভালোবাসি। ‘

অতঃপর একগুচ্ছ তাজা লাল গোলাপ নীলার সামনে তুলে ধরতেই সে কিছুটা চমকিত দৃষ্টিতে ঘাড় ঘুরিয়ে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ চোখ সরিয়ে নিলো না। বরং একদৃষ্টিতে দৃষ্টির মিলনরেখা তৈরি করেই বলল,

— ‘ তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমার জন্য আলাদা কোনো স্পেশাল দিনের প্রয়োজন হয় না। বছরের তিনশত পয়ষট্টি দিনের সবকটি দিনই আমার জন্য ভালোবাসার এক একটা ফুটন্ত লাল গোলাপ। পুরোটা বছরজুড়ে আদরে মুড়িয়ে রেখেও আমার কাছে কম মনে হয়। মনে অতৃপ্তি থেকে যায়। তাই এই একটা দিনেই কেবল ভালোবাসা বিনিময় করে আমার পোষাবে না। আমার জন্য যে সবকটা দিনই ভালোবাসার দিন। সবকটা দিবসই ভালোবাসা দিবস। কিন্তু যুগ যদি আলাদাভাবে এটাকে উল্লেখ করতে চায় তাহলে আমিও বা একান্তভাবে করলাম। কিন্তু নিজস্ব ভালোবাসার গভীরতাকে আলাদা করে নয়। কেবলমাত্র প্রতিটি দিনের ন্যায় আজকেও একটুখানি ভালোবাসার পরশে তোমাকে রাঙিয়ে দিয়ে বলতে চাই, ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। ‘

আবেগে নীলার শুকনো গাল বেয়ে মুহূর্তেই গরম নোনাজল বেয়ে পড়ল। মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারলো না। কেবল ছলছলে চোখজোড়াতে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে প্রাণপ্রিয় স্বামীর দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল। সাদিদ মিষ্টি করে হাসলো। মুখটা নিচু করে সযত্নে নীলার ভেজা গালের নোনাজলটুকু নিজের ঠোঁটের ছোঁয়ায় শুষে নিলো। অতঃপর নরম তুলতুলে গালগুলোতে হাত রেখে মুখটা আঁজলাভরে ধরে কপালে ভালোবাসার প্রগাঢ় চুম্বন একে দিলো। আবেশে নীলার গাল বেয়ে আবারও নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। সাদিদ নিঃশব্দে হেসে তাকে বুকে টেনে আনলো। আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে বলল,

— ‘ আমি কিন্তু রাগ করবো জান। এতো অল্পতেই কান্না করলে চলে? ‘
— ‘ প্লিজ আপনি আমাকে একটু কম ভালোবাসেন। এতো ভালোবাসলে যে হারানোর ভয় হয়। খুব ভয়। ‘
— ‘ ভয়ের কোনো কারণ নেই পাখি। সৃষ্টিকর্তার উপর আমার অসীম বিশ্বাস রয়েছে। তিনি আমার প্রাণটাকে কখনই আমার থেকে হারাতে দিবেন না৷ কখনই না। ‘
— ‘ ভালোবাসি। ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। ‘

নীলার লেগে যাওয়া ভাঙা স্বর শুনে সাদিদ মুহূর্তেই বুঝে গেল মেয়েটার মন আবারও খারাপ চিন্তা ভাবনায় বিভোর হয়ে পরেছে। তাই তাকে বুক থেকে তুলে সামনে দাঁড় করালো।

— ‘ একমিনিট এখানে বসো। আমি আসছি। ‘

বলেই সাদিদ বারান্দার সোফায় নীলাকে সাবধানে বসিয়ে দিয়ে রুমের ভিতর চলে আসলো। আর অল্প কয়েক সেকেন্ডেই হাতে একটা চকলেটের বক্স নিয়ে নীলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।
নীলা এতক্ষণে মানুষটার দিকে তাকিয়েছে। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। তবুও নীলার সামনে হাসিমুখে বসে রয়েছে। নীলা সাদিদের কপালের উপর পরে থাকা ছোট্ট ঘেমে ভিজে যাওয়া চুলগুলোতে আলতো হাত বুলিয়ে মিহিস্বরে বলল,

— ‘ ফ্রেস হবেন না? ‘
— ‘ হবো তো। তার আগে এটা নাও। ‘

বলেই সে নীলার হাতে চকলেটের বক্সটা ধরিয়ে দিলো।

— ‘ এতসব কখন আনলেন? ‘
— ‘ ফেরার পথেই। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাস্তায় রাস্তায় শত-শত ফুলের ছোট্ট ছোট্ট দোকান খোলা হয়েছে। তাই আমিও আমার পাখিটার জন্য নিয়ে নিলাম। আর আরেকটু ভালোবাসার মিষ্টতা বাড়াতে আপনার পছন্দের চকলেট। ‘

নীলা চকলেটের মিষ্টির মতনই মিষ্টি করে হাসলো। সাদিদও মৃদু হেসে বক্সটা খুলে একটা চকলেট নীলার মুখের সামনে ধরলো। নীলা চকলেট মুখে নিতেই সাদিদ বলল,

— ‘ আমাকে দিবে না? ‘
— ‘ ইশশ সরি। এখনই দিচ্ছি। ‘

বলেই নীলা দ্রুত হাতে চকলেট খুলে সাদিদের মুখের সামনে ধরলো। সাদিদ একপলক সেদিকে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। অতঃপর ঘন পুরুষালী কন্ঠে বলল,

— ‘ এভাবে নয়। ‘

নীলা চোখ বেঁটে করে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এভাবে নয় তো কিভাবে? সাদিদ নীলার হাত থেকে চকলেটটা নিজের মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলো। অতঃপর মুখটা এগিয়ে এনে চোখের ভাষায় নীলাকে ইশারায় বলল। এতক্ষণে নীলার বিষয়টা বুঝে এসেছে। সে মুহূর্তেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ল।
চোখের পাতাগুলো তার মৃদুভাবে পিটপিট করছে। সাদিদ আবারও এগিয়ে আসাতে নীলা এবার চকোলেটটা মুখে নিলো। সাদিদ নীলার মাথার পিছনে হাত রেখে তাকে নিজের আরেকটু কাছে টানলো। চকলেটের শেষভাগে পৌঁছাতেই নীলা সরে যেতে চাইলো। কিন্তু ইচ্ছে হলেই কি সাদিদের থেকে সরে যাওয়া এতো সহজ?
সাদিদ প্রিয়তমার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা সদ্য এটোঁ হওয়া চকলেটগুলো ভীষণ আদুরেভাবে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে মুছিয়ে দিলো। এমনিতেই নীলার এই হালকা গোলাপি ঠোঁটযুগলের প্রতি সাদিদের মারাত্মক দুর্বলতা। আর আজকে চকলেটের মিষ্টতায় যেন অধরযুগল ছাড়তেই ইচ্ছে হচ্ছে না। তাই সাবধানে নীলাকে সোফায় এলিয়ে দিয়ে সে নিজের পুরুষালী আদরের স্পর্শ আরও গভীর করে তুললো।
নীলার শরীরটা আবেশের শিরশিরানিতে মৃদুভাবে কেঁপে চলেছে। সাদিদ তার উপর কোনোরকম ভর না দিয়ে দীর্ঘ সময় প্রিয়তমার মিষ্টি কোমল অধরযুগলে মিশে রইল।
অতঃপর.. অনেক অনেক দীর্ঘ সময় পর অনিচ্ছা স্বত্বেও নিজেকে প্রিয়তমার থেকে আলাদা করলো। কেননা ইতিমধ্যেই যে শরীরকে ক্রমশ উত্তেজিত করতে টেস্টোস্টেরন হরমোনগুলো দেহে আন্দোলিত হচ্ছে। আর সামনে এগুলো যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে বড্ড হিমশিম খেতে হবে। তাই এটাই শ্রেয়।
সাদিদ নীলার বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস টানতে লাগলো। একজন স্ত্রী হয়ে স্বামীর এতোটুকু চাহিদা যে নীলা বুঝবে না এটা কি হয়? তাই লজ্জায় ক্রমশ কুঁকড়ে গিয়ে হলেও নিচুস্বরে বলে উঠল,

— ‘ আমরা চাইলে.. মানে আপনাকে এতো দূরে সরে থাকবে হবে না। প্রেগনেন্সিতে চাইলে না মানে..
— ‘ কিন্তু আমি চাই না জান। মানুষ যেহেতু তাই শারীরিক চাহিদা অবশ্যই রয়েছে। আর এটা আমি অস্বীকার করবো না যে, এই মুহূর্তে তোমাকে একান্ত কাছে পাবার জন্য আমি কতটা কাতর। কতটা উদগ্রীব হয়ে আছে আমার পুরো শরীর। কিন্তু তারপরও আমি চাই না পাখি। ‘

নীলা প্রচন্ড লজ্জা পাওয়া স্বত্বেও তখন এমন আধো স্পষ্টভাবে কথাটা বলেছিল। আর সাদিদ মুহূর্তেই সেটা ধরে ফেলতে এখন যেন লজ্জায় মাথা তুলেই তাকাতে পারছে না৷ ইশশ কেমন অপ্রস্তুত একটা মুহূর্ত।
সাদিদ আলতো করে নীলার গালে হাত বুলালো। ঠোঁটের কোণে তর্জনী আঙুলটা ছুঁয়ে রেখেই তপ্তশ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠল,

— ‘ কেননা শরীরের এই সাময়িক অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমার আছে৷ আর না থাকলেও তোমার জন্য যে আমি সব অস্থিরতাকেও সামলে নিতে শিখে নিব। কিন্তু তোমার যেখানে বিন্দুমাত্র ক্ষতির আশংকা রয়েছে সেখান থেকে আমি হাজার মাইল দূরে থাকতে প্রস্তুত। ‘

নীলা এবার চোখ তুলে সাদিদের চোখে চোখ রাখলো। একজনের চোখে উপচে পরা ভালোবাসা আর অপরজনের চোখে সেই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা একঝাক মুগ্ধতা। অতঃপর নীরবে হয়ে গেল কতক প্রেমময়ী কথোপকথন।
অবশেষে সাদিদই মিষ্টি সম্পর্কে হালকা ঝাল-টক দেওয়ার জন্য বলল,

— ‘ কিন্তু সেটা মাত্র স্থান-কাল বিবেচনায়। মনে আছে না, কি বলেছিলাম? সময়মতো সব পুষিয়ে নিব। সুধে-আসলে এমনকি জরিমানা স্বরুপ দ্বিগুণ হারে। ‘

বলেই সে আবারও আলতো করে নীলার নরম ঠোঁটগুলোতে নিজের পুরুষালী ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আলতো করে চুমু খেয়ে প্রিয়তমাকে সাবধানে কোলে তুলে নিলো। তখনই আকাশ আলোকিত করে একঝাঁক আতশবাজি আর ফানুস ভেসে উঠল। রাতের আধারে দূর থেকে ভেসে আসছে একদল তরুণ তরুণীর উল্লাসে ফেটে পরা তীব্র আওয়াজ।
সাদিদ একপলক প্রিয়তমার মুখশ্রীতে নজর দিলো। কপালের একপাশে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে আরও একবার ভীষণ নরম স্বরে বলে উঠল,

— ‘ ভালোবাসা দিবসের আবারও শুভেচ্ছা রইল আমার ভালোবাসাকে। ‘

#চলবে…

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৬৪ ❤

আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেই নীলা আদুরে বাচ্চার মতন মুখ ফুলিয়ে বসে রয়েছে। সাদিদ আড়চোখে তার ভাবভঙ্গি খেয়াল করেছে ঠিকই। লাই দিলে মাথায় চড়ে বসবে বলে এতক্ষণ কিছুটি বলেনি। কিন্তু এখন বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে কখন সেই স্ট্রবেরি মিল্কশেকটা খেতে বলেছে কিন্তু এখন ও সে শেষ করেনি। তাই সাদিদ বাধ্য হয়েই এবার ডাকলো,

— ‘ পাখি? ‘

নীলা গোমড়ামুখে তার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো। সাদিদ তার কান্ডে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। অতঃপর আবার ডাকলো,

— ‘ আসো। ‘

অভিমানিনী আড়চোখে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদ হাত বাড়িয়ে তাকে নিজের কাছে ডাকছে। এমন করে বললে কি মন খারাপ করে রাখা যায়?
নীলাও পারলো না। ধীর পায়ে সাদিদের দিকে এগিয়ে গেল। সাদিদ তাকে টেনে এনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করলো,

— ‘ কি হয়েছে আমার প্রাণপাখির? মন ভালো না সোনা? ‘
— ‘ নাহ্। ‘
— ‘ তাই? ‘

নীলা আলতো করে সাদিদের বুকে একটা কিল দিলো। বুঝেও নীলার সাথে দুষ্টুমি করা হচ্ছে!
নীলা রেগে উঠতে গেলেই সাদিদ তার কোমড় জড়িয়ে তাকে কাছে টানলো। ফোলা ফোলা গালগুলোতে নিজের শক্তপোক্ত হাতটা বুলিয়ে দিয়ে আবার বলল,

— ‘ এমন মন খারাপ করে থাকলে হবে? তাহলে যে আমাদের প্রিন্সেস ও একা একা মন খারাপ করে বসে থাকবে। ‘
— ‘ থাকবেই তো। প্রিন্সেসের বাবা এমন করলে মন খারাপ না করে উপায় আছে বুঝি? ছাড়ুন আমাকে। এখন আর আদর দেখাতে হবে না। ‘
— ‘ ইশশ বউটা রেগে গিয়েছে মনে হয়? কিন্তু আমি কি করবো জান? তোমাকে নিয়ে যে আমার পক্ষে ওয়ান পারসেন্ট ও রিক্স নেওয়া সম্ভব নয়। ‘
— ‘ তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি? আমি এখনই হসপিটালে এডমিট হতে চাই না। হসপিটালের পরিবেশে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। ‘
— ‘ এমন করে বলে না সোনা। আমি আছিতো তোমার সাথে। আর মা-ভাবীমণি সবাই থাকবে। তোমার একটুও খারাপ লাগবে না। ‘
— ‘ তারপরও…

সাদিদ তাকে আর বাক্যটা সমাপ্ত করতে দিলো না৷ আদুরে মুখটাতে পরপর দুইটা চুমু খেল। তারপর থুতনিতেও ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিয়ে সাদিদ নিজেই তার বাক্যটা সমাপ্ত করলো,

— ‘ তারপরও যেতে হবে। একমাত্র তোমার জন্যই তানবীরের সাথে কথা বলে আমি তাদের বিয়ের ডেইটটা এগিয়ে এনেছি৷ এতদিন তোমাকে ইচ্ছে করেই সেটার কারণ বলিনি। আগে বললে তখন থেকেই মন খারাপ করে বসে থাকতে। ‘
— ‘ এতো যেহেতু বুঝেন তাহলে এটা কেন বুঝতে চাচ্ছেন না যে, আমি এখনই হসপিটালের বন্ধ পরিবেশে যেতে চাই না। বেবি আসতে আরও অনেক সময় বাকি। আমি মাত্র ছয় মাস শেষ হয়ে সাত মাসে পরবো। ‘
— ‘ আমি জানি সোনা। তাইতো এতো তাড়াহুড়ো করছি। গত রাতেও আচমকা তোমার শরীর খারাপ লাগছিলো। এমনটাতো আজকাল অহরহ হচ্ছে। এই অবস্থায় আমি কিভাবে তোমাকে বাড়িতে রেখে শান্তি পাই বলো? ‘
— ‘ ডক্টরতো বলেছে এটা আমার জন্য নরমাল। তাই এতো চিন্তার প্রয়োজন নেই। ‘
— ‘ আছে পাখি। প্লিজ অন্ততপক্ষে আমার জন্য হাসিমুখে রেডি হও। তোমার মুখটা এমন শুকনো দেখলে কি আমার ভালো লাগবে? ‘

নীলা জলে টলমলে চোখে সাদিদের দিকে তাকালো। অতঃপর সাদিদের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়ে নিচুস্বরে বলে উঠল,

— ‘ আমি বাড়ির সবাইকে অনেক মিস করবো। ‘
— ‘ সবাই যাবে তো। তুমি মিস করার সুযোগই পাবে না। ‘
— ‘ ইশশ আপনি বুঝতে পারছেন না। আমি আমাদের এই রুমটাকেও মিস করবো। সব মানে সব মিস করবো। ‘

সাদিদ তার এমন কথায় মৃদু হাসলো। তারপর পাখিটার গালে হাত বুলিয়ে মাথা নিচু করে মাথায় গভীর একটা চুমু খেল। নীলার হাতের সরু আঙুলগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে আদুরেস্বরে বলল,

— ‘ কিন্তু তারপরও যেতে হবে সোনা। আমার জন্য হলেও। যাবে না? ‘

নীলা মুখে আর কিছু বললো না। শুধু নিঃশব্দে মাথা উপরনিচ করলো। সাদিদ নিজেও বুঝতে পারছে নীলা কেবলমাত্র সাদিদের মুখের দিকে তাকিয়েই হ্যাঁ বলছে।
কিন্তু সাদিদ যে নিরুপায়। আজকে নীলার মন ভেঙে হলেও তাকে নিজের জায়গায় স্থির থাকতেই হবে। তাই আলতো করে নীলাকে বুকে টেনে আনলো। মাথায় সযত্নে হাত বুলিয়ে ভীষণ আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ আমরা শীঘ্রই ফিরে আসবো পাখি। দেখবে এরপর যখন বাড়িতে আসবো, ইনশাআল্লাহ আমাদের প্রিন্সেসকে ও সাথে নিয়ে আসবো। ‘

সাদিদের কন্ঠে চাপা খুশির আমেজ। বাচ্চার কথাটা শুনে নীলার মনটাও নিমিষেই ভালো হয়ে গেল। প্রচন্ড উৎসাহে বলল,

— ‘ সত্যি তাই? ‘
— ‘ হ্যাঁ পাখি। একেবারে সত্যি। ‘

বলেই সাদিদ প্রিয়তমার আদুরে গালগুলো আলতো করে টেনে দিলো। নীলা এবার শত কষ্টের মাঝেও খুশি। ছোট্ট প্রাণটা যে নিজের অবর্তমানেই তাদের জীবনের বৃহৎ একটা অংশজুড়ে নিজের জায়গা পাকাপোক্তভাবে বরাদ্দ করে নিয়েছে।

— ‘ এবার এটা শেষ করো। তারপরই আমরা বেড়িয়ে যাব। তোমাকে হসপিটালে পৌঁছে দিয়ে আমাকে আবার অফিসে আসতে হবে। ‘
— ‘ তাহলে আমি যাবোই না৷ আপনি আমাকে ঐ খারাপ জায়গাটাতে একা রেখে রেখে চলে যাবেন। তাহলে আমি কেন যাব? যাবোই না। ‘

বলেই নীলা আবারও গাল ফুলিয়ে নিলো। সাদিদ এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল। সেটা দেখে নীলা কপালে কুঁচকে তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। সাদিদ আর মুখে কথা বললো না। মিল্কশেকের গ্লাসটা হাতে নিয়ে নীলার ঠোঁটের সাথে লাগালো। নীলা মুখ ঘুরিয়ে নিতেই আদুরে ছোট্ট বাচ্চার মতো গাল হালকাভাবে চেপে ধরে একটুখানি খাইয়ে দিলো। আর নীলার সাথে সাথেই অভিযোগ শুরু,

— ‘ খারাপ, খারাপ। খুব খারাপ আপনি৷ বাবু শুনছিস তো? তোর বাপ একটা বজ্জাত খারাপ। ‘

বলতে দেরি নেই আর পেটে হাত চেপে নীলার মুখ ফুটে আর্তনাদ বেড়িয়ে আসতে দেরি নেই৷ সাদিদ এতক্ষণ হাসছিলো কিন্তু এখন গ্লাস সাইডে রেখে দ্রুত এগিয়ে আসলো,

— ‘ লক্ষীটি কি হয়েছে? আবারও পেট ব্যাথা করছে? ‘

নীলার ব্যাথা এখন ধীরে ধীরে কমে এসেছে। সে চোরাচোখে একবার সাদিদের দিকে তাকালো। কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর দিলো না৷ সেটা দেখে সাদিদ দ্বিগুণ অস্থিরতা মিশ্রিত কন্ঠে পুনরায় প্রশ্ন করলো,

— ‘ বলো আমাকে। খুব বেশি ব্যাথা করছে? ‘
— ‘ না.. ঠিক আছি। ‘
— ‘ কি হয়েছিল তখন? ‘

সাদিদ বারবার জানতে চায়ছে আর অপরদিকে নীলা এটা সেটার অযুহাতে কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছে।
সাদিদ এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে নীলার দিকে একদৃষ্টিতে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকলো। আর ক্ষণে ক্ষণে নীলার আড়চোখে তাকানো আর কথা লোকানোর ভাবভঙ্গি দেখে ধীরে ধীরে তার ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হতে শুরু করলো। কেননা ইতিমধ্যে সে বিষয়টা ধরে ফেলেছে৷ সাদিদ বেশিক্ষণ নিজের হাসি চেপে রাখতে পারলো না। একসময় শব্দ করেই হেসে ফেলল। এবং হাসতে হাসতে তার সোফায় গড়াগড়ি খাওয়ার মতন অবস্থা হলো৷ আর নীলা এবার রাগে দুঃখে এলোপাতাড়ি সাদিদের উপর বালিশের আক্রমণ শুরু করলো।

— ‘ খুব খারাপ, খুব৷ সাথে আপনার আদরের দুলালীও। বজ্জাত মেয়ে একটা। এখনই বাপের তরফদারি করে! ‘
— ‘ আরে বউ থামো। অনেক হয়েছে। আচ্ছা মেয়েকে বলবো মায়ের মন রক্ষার্থে যেন মাঝে মধ্যে তারও তরফদারি করে। ‘

নীলা কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়েছিল। কিন্তু সাদিদের মিটিমিটি হেসে এমন কথার পরিবর্তে আবারও শুরু করলো। এভাবে অনেকক্ষণ চললো প্রেমময়ী কাপল যুগলের খুনসুটি। অতঃপর এবার সাদিদকেই উঠে ক্ষেপা বাঘিনীকে থামাতো হলো। সে নীলাকে পিছন থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে উন্মুক্ত কাঁধে মুখ গোঁজল। খড়খড়ে দাঁড়ির মৃদু ঘষাতে অটোমেটিকলি নীলার হাত থেমে গেল। সাদিদ ঠোঁট টিপে হেসে প্রিয়তমার কানের লতিতে নিজের পুরুষালী ঠোঁট স্পর্শ করলো। সাদিদ নীলার কাঁধে-ঘাড়ে মুখ ঘষতেই নীলা লেগে যাওয়া স্বরে বলে উঠল,

— ‘ কি কর..ছেন? ‘
— ‘ না, এখন আর কিছু করছি না। সময় যে নেই। ‘

বলেই সে উন্মুক্ত কাঁধে ছোট করে একটা চুমু খেল। পিছন থেকেই নীলার উঁচু পেটটাতে আদুরেভাবে হাত বুলিয়ে বলল,

— ‘ লক্ষীটি আমার, আর দুষ্টুমি করে না। ভালো মেয়ের মতো যাওয়ার জন্য তৈরি হও। আই প্রমিস তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। আমি যেটুকু সময় থাকবো না বাড়ির অন্য কেউ অবশ্যই তোমার সাথে থাকবে৷ এক মুহূর্তের জন্যও তোমাকে একা ছাড়বো না। বিশ্বাস করো না আমাকে? ‘

নীলা ঘাড় ফিরিয়ে সাদিদের দিকে তাকালো। মিষ্টি করে হেসে বলল,

— ‘ নিজের থেকেও বেশি। ‘

সাদিদও মৃদু হাসল। অতঃপর নীলার নাকে নিজের নাক আলতো করে ঘষা দিয়ে বলল,

— ‘ তাহলে এবার চলো। প্রিন্সেসকে নিজেদের কাছে পাওয়ার জন্য একদাপ এগিয়ে যাই? ‘

নীলা আর রাগ বা অভিমান দেখালো না। চুপটি করে সাদিদের সাথে উঠে আসলো।
সাদিদ একেবারে নীলাকে রেডি করিয়ে রুমের বাহিরে এসেছে। তারা লিভিংরুমে আসতেই সবাইকে সেখানে উপস্থিত পেল। কারো মুখে বিন্দুমাত্র হাসির রেখা নেই। কিন্তু তারপরও সাদিদ নিজের সিদ্ধান্তে অনড়।

— ‘ আচ্ছা সাদি, আমাকে একটু বলবি এসবের মানে কি? যদি এখন থেকেই নীলা মামণিকে হসপিটালে রাখতে চাস তাহলে বাংলাদেশে কেন? দেশের বাহিরে নিয়ে যা। ‘
— ‘ তোমার মা কিন্তু খারাপ বলেনি সাদি। আমরা এই বিষয়ে আগেও কথা বলেছি। কিন্তু তুমিই তখন না করলে। তাহলে এখন এতো তাড়াহুড়ো কেন? ‘

সাদিদ তাদের কারো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই একপলক নীলার দিকে তাকালো। নীলা চোরাচোখে তাকাতেই সে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

— ‘ আমাকে বলো কেন? তোমাদের আদরের দুলালীকেই বলো। ‘
— ‘ মানে? ‘
— ‘ মানে হচ্ছে তোমাদের আদরে বাঁদর হওয়া মেয়েটা আমার একটা কথাও শুনে না। তাকে কোনোভাবেই ডেলিভারির জন্য ইউকে তে যাওয়ার জন্য রাজি করতে পারিনি। আমি তার অবস্থা জেনেই ইউকে নিয়ে যাবার জন্য চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু তার এক বাচ্চামো জেদ, সে যাবে না। ‘
— ‘ এসব কি নীলা মামণি? আর সাদি তুই, আমাদের একথা আগে জানাসনি কেন? ‘
— ‘ জানানোর আগেই তো কেঁদে কেটে একশেষ। দেখো, এখনও চোখে জল টলমল করছে। এই মেয়েকে আমি কিভাবে কি বলবো! ‘

সাদিদের কথায় শায়লা রহমান উঠে দাঁড়ালেন। নীলাকে আস্তেধীরে এনে সোফায় বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসলেন। অতঃপর চোখের জল মুছে দিয়ে খুবই আদরের ভঙ্গিতে বললেন,

— ‘ কিরে মা, এসব কি শুনছি? এটা কি ঠিক? এতো টাকাপয়সা থেকেও যদি সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে না পারি তাহলে এসব থেকে কি লাভ? ‘
— ‘ মা টাকার জন্য না। আমি বাবুকে নিয়ে ইউকে যেতে চাই না। ‘

নীলার মাথা নুইয়ে নিচুগলার কথা শুনে উপস্থিত সবকটি চোখ তাকেই পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। শায়লা রহমান ধৈর্য্য ধরতে না পেরে বলেই ফেললেন,

— ‘ কেন? ‘
— ‘ আমি জানি না মা। কিন্তু বাবুকে আমি বিদেশের মাটিতে জন্ম দিতে চাই না। আল্লাহর ইচ্ছে থাকলে সে নিজ দেশের মাটিতেই প্রিয়জনদের দোয়ায় সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করবে। আমার এইটুকু ইচ্ছে মা। প্লিজ আপনারা বাবুকে নিয়ে ইউকে যেতে জোর করবেন না। ‘

লিভিংরুমে কয়েকটি মুহূর্ত ভীষণ নীরবতায় কেটে গেল। থমথমে পরিস্থিতিটাকে সামলে নিতে শায়লা রহমান সযত্নে নীলার কপালে স্নেহের চুম্বন দিয়ে বললেন,

— ‘ বেঁচে থাক মা। আল্লাহ তোকে সবুর করার জন্য উত্তম ফলাফল দান করুক। আমরা আর কেউ তোকে এই নিয়ে জোর করবো না। তোর খুশিতেই আমাদের খুশি। ‘

নীলা ছলছলে চোখে হাসলো। পাশে বসা শাদমানকে একদৃষ্টিতে তার পেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদুরেভাবে তাকে কাছে টেনে আনলো।

— ‘ আব্বাটা এমন করে কি দেখে? ‘
— ‘ খালামণি, তোমার এই..এইখানে বাবু আছে? ‘

ছোট্ট মানুষের হঠাৎ এমন পাকা কথায় নীলার ভীষণ হাসি পেল। উপস্থিত সবাইও ঠোঁট টিপে তাদের কথোপকথন শুনে যাচ্ছে।

— ‘ হ্যাঁ। একটা ছোট্ট বাবু আছে তো। ‘
— ‘ বাবুটা কি পঁচা? ‘
— ‘ এমা! পঁচা হতে যাবে কেন? ‘
— ‘ তাহলে তোমাকে ব্যাতা দেয় কেন? তোমাকে ডতক্টর যেতে হবে কেন? বাবুই এতো দুতষ্টু কেন? ‘

নীলা আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না। হাসতে হাসতে পেটে এবার মৃদু ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। তাই সে পেটে হাত রেখেই পিচ্চির পাকনামিতে হেসে যাচ্ছে।
সাদিদ এতক্ষণ দাড়িয়ে থেকে মিষ্টি সম্পর্কের সুখানুভূতিটা অনুভব করছিলো। এখন নিঃশব্দে মৃদু হেসে এগিয়ে আসলো। শাদমানকে শক্ত করে নিজের কোলে চেপে ধরে বরাবরের মতোই ফর্সা গালগুলোতে ঠেসে ঠেসে চুমু খেল,

— ‘ বাবা তুমি এতো পাকনামি করো কেন? ‘

শাদমান সাদিদের কথায় বিন্দুমাত্র পাত্তা দিলো না। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গাল মুছতে মুছতে নাকের পাটা ফুলিয়ে উল্টো বলে উঠল,

— ‘ তুমি বাবুর মতো এতো পঁচা কেন? বারবার আমার গাল খাও কেন? ভাত খাও না কেন? ‘

কেউই আর শাদের এতো কেনোর উত্তর দিতে পারলো না। হাসতে হাসতেই তাদের অবস্থা খারাপ। দুঃখে ভরা বিষন্ন পরিস্থিতিটা যেন মুহূর্তেই আনন্দমহলে পরিণত হলো। সবার এতো আনন্দের মধ্যে কেবলমাত্র একজনের মুখেই রাজ্যের বিরক্তি। তার ছোট্ট মস্তিষ্ক আপনমনেই বিরক্তিরস্বরে বিড়বিড় করলো,

— ‘ সবাই এতো হাসছে কেন? ‘

_________________

পুরোটা দিন নীলার অতিবাহিত হলো নতুন নতুন ডক্টর আর নার্সদের মুখ দেখে। বোধহয় কেউ তাদের উপর গুরুদায়িত্ব চাপিয়েছে যেন নীলাকে ক্ষণে ক্ষণে এসে বিরক্ত করে যায়। আবারও একজন ডক্টর এসে নীলার রেগুলার ব্লাড প্রেশার চেক করে গেল৷ এবং বরাবরের মতোই টুকিটাকি কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি। ডক্টর কেবিন থেকে বের হতেই নীলা অসহায় ভঙ্গিতে নিজের মা এবং নিধির দিকে তাকালো। তারা মিটিমিটি হাসছে। কেননা তারা ভালোই জানে নীলা এখন কি বলবে।

— ‘ আম্মু আমি পাগল হয়ে যাব। তোমাদের জামাই আমার ট্রিটমেন্টের জন্য নয়, বরং আমাকে পাগলাগারদে পাঠানোর জন্য এখানে এনেছে। ‘
— ‘ ছিঃ ছিঃ দিবো এক থাপ্পড়। এমন কথা কেউ বলে? ‘
— ‘ তাহলে আমি আর কি করবো? সকাল থেকে এসবে পুরোপুরি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। ‘
— ‘ রাগ করিস না পিচ্চু। জানিস তো ছেলেটা তোর বিষয়ে পুরোপুরি পাগল। তাই অযথা রাগ না করে একটু সহ্য কর। ‘
— ‘ সহ্য! আমার কাছে এগুলো মারাত্মক অসহ্যকর হয়ে পড়েছে। বারবার..

নীলা আরও কিছু অভিযোগ মাখানো শব্দ বলতে চাইছিল। কিন্তু কেবিনের দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকালো।
সাদিদ এসেছে। তাকে আসতে দেখেই নিধি উঠে দাড়ালো।

— ‘ আম্মু উঠো। সাদিদ চলে এসেছে এখন আমাদের দায়িত্ব শেষ৷ ‘
— ‘ আরে ভাবীমণি বসো তোমরা। সমস্যা নেই। ‘
— ‘ না গো ভাই। শাদকে বাসায় মায়ের কাছে রেখে এসেছি। ছোট মানুষ বিধায় আর হসপিটালে নিয়ে আসিনি। ‘
— ‘ কিন্তু তাই বলে এখনই? ‘
— ‘ আরে এখনতো আশা যাওয়া লেগেই থাকবে। কালকেই তো আবার আসবো। এখন আর আটকিও না ভাই। ‘
— ‘ হ্যাঁ বাবা, তোমরা থাকো বরং। আমরা এবার যাই। ‘

নার্গিস খাতুন আর নিধি বিদায় নিয়ে চলে গেল। সাদিদ বলা স্বত্বেও তারা আর কিছুক্ষণ থাকলো না। আসলে তাদের পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যই অপরজনের প্রাইভেসিতে বাধা হয়ে দাড়াতে চায় না। এই যেমন সারাদিনের ব্যস্ততার পর রাতের এইটুকু সময় যে সাদিদ নীলাকে আলাদা করে চাইবে, এটা তাদেরকে বলে বুঝিয়ে দিতে হয় না৷ নিজ দায়িত্বে তারা এইটুকু বুঝে নেয়। সাদিদ এসবভেবে আপনমনেই নিঃশব্দে হাসলো। অতঃপর কেবিনের দরজাটা লক করে এসে নীলার পাশে বসলো। প্রিয়তমার মুখটা আঁজলাভরে ধরে মাথায় সময় নিয়ে ভালোবাসার দীর্ঘ একটা পরশ এঁকে দিলো।

— ‘ সারাদিন কেমন কেটেছে পাখি? ‘
— ‘ খুববববব ভালো। ‘

খুব শব্দ উচ্চারণে অতিরিক্ত চারটা ‘ব’ যুক্ত করতেই সাদিদ বুঝতে পারলো প্রাণপাখি তার রেগে বুম হয়ে আছে। তাই আর বেশি ঘাটতে গেল না। এমনিতেই প্রেগনেন্সিতে মেয়েটার মুডের কোনো ঠিকঠিকানা নেই। ক্ষণে ক্ষণে রেগে যায়। মিষ্টি পাখিটার মেজাজটা আজকাল বড্ড তিরিক্ষি হয়ে থাকে। তাই সাদিদ কিছুটি বললো না। শুধু আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো৷ সারাদিনের ক্লান্তিতে এবার গোসল না করলেই নয়। তাই সে আজকে আনানো ছোট্ট ওয়ারড্রব থেকে নিজের জন্য পাতলা একটা ট্রি শার্ট আর টাওজার নিয়ে কেবিনের এডজাস্ট ওয়াসরুমে চলে গেল। নীলা ততক্ষণে কম্বলে মুখ ঢেকে নিয়েছে। আজকে আর কথাই বলবে না৷ সকালে তাকে হসপিটালে দিয়ে সাদিদ পুরো হাওয়া। সারাদিন বাহিরে কাটিয়ে রাত দশটা বাজে তার নীলার কথা মনে পরেছে। বলবে না নীলা, কিছুতেই এই নিষ্ঠুর ছেলের সাথে কথা বলবে না৷ অতিরিক্ত পাগলামি করে তাকে হসপিটালের এই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখার শাস্তি এই ছেলেকে সে দিয়েই ছাড়বে।
সাদিদ শাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই নীলার কান্ড বুঝতে পারলো। তার ঠোঁটের কোণে মুহূর্তেই খুশির রেখারা এসে ধরা দিলো। সে চুলগুলো কোনোভাবে মুছে নীলার সিঙ্গেল বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।
আর অপরদিকে নীলার মনে মনে লাড্ডু ফুটছে। হসপিটাল হয়ে ভালোই হয়েছে। সাদিদের ইচ্ছে থাকলেও তার কাছে আসতে পারবে না। আর নীলা তাকে দূরে রেখে সাদিদের জন্য ভয়ানক শাস্তির উপহার স্বরূপ তৃপ্তির হাসি হাসবে। এসব ভাবতেই নীলার বুক ফেটে হাসি বের হচ্ছে। শুধু কোনোভাবে নিজের হাসিটা আটকে রাখছে।
কিন্তু সেগুড়ে বালি! নীলার সব আশাতে একটন জল ঢেলে দিয়ে সাদিদের বলিষ্ঠ হাতদুটো তাকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে। নীলা হুড়মুড়িয়ে কম্বলের নিচ থেকে মুখ তুললো। সাদিদকে নিজের সাথে একি বিছানায় দেখে খানিকটা চমকে গেলেও পরমুহূর্তেই বিষয়টা আঁচ করতে পারলো৷ দুষ্টুটা কেবিনের দুটি বেডকে একত্রে করে নিয়েছে। নীলা আবারও রেগে সাদিদের দিকে তাকালো।

— ‘ এসব কি? এটাকে কি নিজের বেডরুম পেয়েছেন? আপনার প্রাণের প্রিয় ডক্টর-নার্সরা এসে দেখলে কি ভাববে? ‘
— ‘ কি আর ভাববে? ভাববে ছেলেটা তার বউটাকে খুবই আদর করে৷ তাইতো দূরে থাকতেই পারে না। ‘
— ‘ সরুন। দরকার নেই…

নীলাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সাদিদ তার মুখটাই বন্ধ করে দিলো। প্রিয়তমার কোমল ঠোঁটে ছোট্ট করে চুমু খেয়ে সরে আসলো৷ নীলা চোখ পাকিয়ে তাকালো। আবারও রাগীস্বরে বলে উঠল,

— ‘ কি হলো? সবসময়…

এবং দুষ্টু সাদিদ আবারও নীলার ঠোঁটযুগল আলতো করে চেপে ধরলো। নীলা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। শুধু রাগ-অভিমান-ক্ষোভের মিশ্র সমন্বয়ের দৃষ্টি নিয়ে সাদিদের দিকে তাকিয়ে রইল। মুখে আর কিছু বললো না। নতুবা দুষ্টুটা আবারও নিজের শয়তানি শুরু করবে।
নীলাকে চোখ পাকিয়ে নীরব থাকতে দেখে সাদিদ ভ্রুজোড়া নাচিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

— ‘ কি? আর কিছু বলবে না? ‘

তার ঠোঁটের কোণে এখনও চাপা হাসি। নীলা কিছু বললো না। শুধু পাশ ফিরে শুয়ে পরতে গেলেই সাদিদ তাকে আটকে দিলো। ভীষণ আদুরেভাবে নরম গলায় বলে উঠল,

— ‘ সরি জান। আ’ম লেইট। কিন্তু প্রমিস কাল থেকে আর হবে না। আমি আজকেই বাবার সাথে কথা বলেছি। কাল থেকে কেবলমাত্র দুপুর পর্যন্তই আমি অফিসে থাকবো। আর বাদবাকি সব কাজ তোমার সাথে থেকেই শেষ করবো। এখনও রেগে থাকবে সোনা? আ’ম সরি তো। ‘

ইশশ এমন আদুরেভাবে বললে কি রেগে থাকা যায়? যায় না তো। নীলাও পারলো না। সাদিদের ভেজা চুলগুলোতে আলতো হাত বুলিয়ে বলল,

— ‘ এসব করতে হবে না। আপনার যেভাবে কাজ করলে সুবিধা হবে সেভাবেই করেন। আপুনি, মা সবাই আছে তো। আমার কোনো অসুবিধা হবে না। ‘
— ‘ আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি পাখি। আর বাবার সাথেও এই নিয়ে কথা বলে ফেলেছি। তাই এসব নিয়ে তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না। তুমি শুধু নিজের আর আমার প্রিন্সেসের খেয়াল রাখো৷ বাকিসব আমি সামলে নিবো। ‘
— ‘ তবুও..
— ‘ আর কিছু না। এখন আসো তো পাখি, সারাদিনে একটুও আদর করতে পারিনি। এখন শুধু আদর হবে। ‘
— ‘ ইশশ না। ‘
— ‘ শুধু আদর। আর কোনো কথা নয়। ‘

নীলা খিলখিলিয়ে হাসছে, আর সাদিদ আস্তে করে তাকে নিজের সাথে আগলিয়ে নিয়ে অনবরত নীলার গলায় আদুরে চুমু খাচ্ছে। যেন আদুরে একটা ছোট্ট বাচ্চা। একটু জোরে ধরলেই ব্যাথা পাবে।

— ‘ আর কতো? ‘
— ‘ মাত্রই তো শুরু করলাম। আরও অনেক। ‘
— ‘ আমার সুড়সুড়ি লাগছে। ‘
— ‘ লাগুক। কিছু করার নেই। আদরে বাকি রাখতে পারবো না। সো বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। ‘

সাদিদের এহেন কথায় নীলা হালকা শব্দ করেই হেসে ফেলল। আর অপরদিকে সাদিদ তার কাজে মহা ব্যস্ত। নীলার পেটের উপর থেকে সাদিদ রাতের জন্য পরিহিত নরম ঢিলা মেক্সিটা সরিয়ে দিলো। উঁচু পেটটাতে দীর্ঘ একটা স্নেহভরা উষ্ণ চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

— ‘ আম্মা, ঘুমিয়ে পরেছেন? নতুন জায়গা পছন্দ হয়েছে? ‘
— ‘ ওহ্ একদম না। ‘
— ‘ আপনাকে বলিনি। আমার প্রিন্সেসকে বলেছি। বুঝেছেন। ‘
— ‘ কচু বুঝেছি। ‘
— ‘ সেটাই তো বুঝবেন। ভালো কিছু বুঝলে তো আপনার নাম আর নীলাঞ্জনা হতো না। ‘
— ‘ আমাকে অপমান করছেন? ‘

নীলার কুঁচকানো কপাল দেখে সাদিদ হেসে ফেলল। অতঃপর আবারও উন্মুক্ত পেটে ঠোঁট ছুঁইয়ে কন্ঠে এক সমুদ্র আবেগ ঢেলে বলে উঠল,

— ‘ না লক্ষীটি। ভালোবাসছি। হৃদয়ে সযত্নে সংরক্ষিত অনেক অনেক আদুরে ভালোবাসা। ‘

#চলবে…