অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০১

0
7413

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

মিউজিক অন করে হাতে একটা পানির বোতল নিয়ে কোমড় দুলিয়ে নাচছিলাম। আপুর বিয়ে তাই প্র্যাকটিস করছিলাম। আম্মু এসে আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আমি গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে আম্মুর দিকে তাকায়।

এই দিন দেখার জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম। বাড়ি বর্তি মেহমান আর তুই মদ খেয়ে নাচছিস।

আম্মুর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার হাতে তো পানি তাহলে মদ আসবে কী করে? আমি আমার হাতের বোতলটা চেক করে নিলাম এটা তো পানি। আমার দৃষ্টি যায় দরজার দিকে রিয়ান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিচ্ছে। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না আম্মুকে ওল্ঠা পাল্ঠা উনিই বুঝিয়েছেন।

আম্মু বিশ্বাস করো আমার হাতের এটা পানির বোতল। তোমার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি চেক করে দেখতে পারো।

আম্মু একটু খেয়ে চেক করলো। তখনি রিয়ান ভাই রুমে প্রবেশ করলো।

মামুনি বুঝতে পারিনি যে এটা পানি ছিল। রিয়া যেভাবে নাচছিল তাও আবার পানির বোতল নিয়ে যে কেউ ভাববে মদ খাচ্ছে। (ইনোসেন্ট ফেস করে)

রিয়াইন্নার এমন ইনোসেন্ট ফেস দেখে মাই ডিয়ার মাদার ইন্ডিয়া গলে জল হয়ে গেলো।

না বাবা তোর কোনো দোষ নাই। এমন মাতালের মতো নাচলে যে কেউ ভাববে মদ খেয়েছে।

আমি মাঝে মাঝে বুঝি না এটা আমার আম্মু না ঐ রিয়াইন্নার।এই সয়তানের কোনো দোষ চোখেই পড়ে না আর আমি কিছু না করলেও সব দোষ আমার।

এমন অসভ্যের মতো যেনো আর নাচতে না দেখি।

আম্মু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুম ত্যাগ করে। রিয়ান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দেয়। যা দেখে আমার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠছে। আমি রিয়ান ভাইয়ার মুখের সামনে এক আঙ্গুল উঠিয়ে বলি।

এই আপনি আম্মুকে মিথ্যা কেনো বললেন?

সেটা তোকে বলতে বাধ্য নই।

আমি আপনাকে দেখে নিব।

আমি তো তোর সামনেই আছি যত ইচ্ছে হয়ে দেখে না।

দেখুন।

কী দেখবে? তুই দেখাতে চাইলেও দেখবো না। তোর মতো পিচ্চির মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই।

আপনার সাথে কথা বলায় ফাও।

তোকে কথা বলতে বলেছে কে? এমন তো না যে তুই কথা না বললে আমি মরে যাব।

রাগে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দেই। রিয়ান ভাই রুম থেকে চেঁচিয়ে বললেন,

আমার ওপর রাগটা তুই দরজার ওপর ঝাড়ছিস কেনো? দরজার ভেঙ্গে গেছে এটা তোর কিপ্টা বাপ জানতে পারলে হার্ট এ্যাটাক করবে।

এই একদম আমার আব্বুকে কিপ্টা বলবেন নাহ।

কিপ্টাকে কিপ্টা বলবো না তো কী বলবো?

আমি আর কিছু বললাম না। রিয়ান ভাইয়াও কোনো সারা শব্দ নাই বুঝতে পারলাম রুম থেকে চলে গেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙে আম্মুর ডাকে।

আম্মু আমার ঘুম কী তোমার শত্রু নাকি? কোন কালে আমার ঘুম তোমার সতীন ছিল।

চুপ কর ফাজিল মেয়ে। আজকে যে তোর বোনের মেহেনদি সেটা কী তোর মনে আছে?

ঠোঁট কামড়ে একটা ক্যাবলা কান্ত হাসি দেই যার অর্থ মনে নাই।

সরি আম্মু একদমই ভুলে গেছি।

তা মনে থাকবে কেনো? মোবাইল টিপার কথা তো একবারও ভুলিস না। সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমুবি আর মোবাইল টিপবি।

ভাবি ভাবি।

কী হয়েছে?

একটু এদিকে আসো দরকার আছে।

সব কিছু আমাকেই দেখতে হবে। আর পারি না বাপু।

আম্মু বকবক করতে করতে রুম থেকে চলে যায়। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি মনিকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে একটা থ্যাংক ইউ দিতে হবে। আম্মুকে ঠিক টাইমে ডাক দিছে নাহলে আর কতক্ষণ যে ঙ্গানের বাণী শুনতে হতো আল্লাহ জানে।

আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে লাগলাম। সবুজ রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়লাম। হাতে সবুজ রঙের কাঁচের চুড়ি। কানে সাদা পাথরের ইয়ার রিং। চুলগুলো মাঝখানে সিথি করে টিকলি দিলাম। নাকে নাক টানা দিলাম। ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক। চোখে ঘন কালো কাজল। বেস আমি রেডি।

মেহেনদি অনুষ্ঠানের স্টেইজ যেখানে করা হলো সেখানে গেলাম। মনে হলো কেউ আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আমি আশেপাশে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আমার কাজিনরা টেনে নিয়ে গেল ডান্স করার জন্য। ডান্স করার মাঝখানেই সব লাইট অফ হয়ে গেল। লাইট অফ হয়ে যেতেই কোমড়ে কারও ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠি। সব লাইট আবার জ্বলে ওঠে কিন্তু আমার কোমড় ভীষণ জ্বালা করছে। আমি ডান্স ফ্লোর থেকে একটু সাইডে যায়।

যেদিকে জ্বালা করছে সেদিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে যায় কারণ এই সাইডের উরনাটা কেও ফিন দিয়ে আটকে দিছে। কিন্তু আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি কোনো ফিন লাগায়নি। উড়নাটা সরিয়ে দেখি নকের আঁচড় যেখান থেকে রক্ত পড়ছে।

হ্যালো মিস।

জ্বী বলুন।

আমি নিলয় আহমেদ।

তো আমি কী করতে পারি?

ছেলেটি আমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়।

পরিচিত হতে পারেন। আমি বরের কাজিন।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেলেটার সাথে হাত মিলালাম।

আমি তাসনিম জাহান রিয়া। আমি কনের ছোট বোন।

আপনার নামটা কিন্তু সুন্দর বেয়াইন।

আই নো।

আপনার নামের মতো আপনিও কিন্তু সুন্দর।

(বেটার বাচ্চা তুই রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া শুরু করছস আর আমি মরি আমার জ্বালায়। আমার সাথে এসব কী অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।) মনেমনে।

আমি ছোটবেলা থেকেই জানি আমি অনেক সুন্দর।

আপনি অনেক সুন্দর ডান্স করেন।

এই রিয়া তোর রক্তে তোর উড়না ভিজে যাচ্ছে। তোর কোমড়ে কী হয়েছে?

কথাটা আমার ফুফাতো বোন জেরিন বললো। তার কথায় আমি থতমত খেয়ে বলি,

আমার নকের আঁচড় লেগেছে।

যা তাড়াতাড়ি ঔষধ লাগিয়ে নে।

আপনার উড়নাটা সরান দেখি ক্ষতটা কত গভীর।

নিলয় আমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিতেই আমি দৌড়ে রুমে চলে আসি। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে জুড়ে জুড়ে কয়েকটা শ্বাস নেই। পিছনে ঘুরে বিছানায় তাকাতেই আমার চোখ কপালে ওঠে যায়। রিয়ান ভাইয়া আমার বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।

এই আপনি আমার রুমে কী করছেন? বের হন বলছি।

রিয়ান ভাইয়া বিছানা থেকে ওঠে খপ করে আমার হাতটা ধরে টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। বেসিনের ওপর হাত রেখে হ্যান্ডওয়াশ গিয়ে ঘষে ঘষে হাত ধুচ্ছে। এতো জুড়ে জুড়ে ঘষছে যে ব্যথায় আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

রিয়ান ভাইয়া আপনি এসব কী করছেন?

তোর হাত পরিষ্কার করছি। ঐ নিলয়ের বাচ্চা তোর হাত ধরেছিল না।

রিয়ান ভাইয়া আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।

এই একদম চুপ থাক। তুই তো নাচতে নাচতে ওর সাথে হাত মিলালি।

আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে আমি বদ্রতার খাতিরে হাত মিলিয়েছি।

এর জন্য তোকে শাস্তি পেতেই হবে।

আমাকে আবার টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসে।

এখন তুই এখানে কানে ধরে এক পা তুলে ২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকবি।

আমি পারবো না। আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।

তুই আমার কথা শুনতে বাধ্য। নাহলে মামুনিকে গিয়ে বলবো তোকে আমি একটাকে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে লিপ কিস করতে দেখেছি।

ছি রিয়ান ভাইয়া আপনি এসব কী বলছেন? আমি এটা করি নাই।

কিন্তু আমি তো বলবো আর মামুনিও আমার কথা বিশ্বাস করবে। তোর কোমড়ের এক সাইডের নকে আঁচড় দেখে।

রাগে দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছা করছে। ২৫মিনিট কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরে রিয়ান ভাইয়া আমার রুম থেকে চলে গেছে। যাওয়ার আগে ক্ষত স্থান স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে। হাত-পা ব্যথা করছে তাই আর মেহেনদি অনুষ্ঠানে গেলাম না। রিয়ান ভাইয়ের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে আপুর মেহেনদি অনুষ্ঠান নিয়ে আগ্রহটা আমার বেশি ছিল। কিন্তু আমিই মেহেদী দিতে পারলাম নাহ। ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেইন্জ করে শুয়ে পড়লাম।

(আমি তাসনিম জাহান রিয়া। বাবা-মায়ের তিন মাত্র সন্তান। আমার আরো একটা ভাই আর বোন আছে।আমি অটোপাস এখন এডমিশন কোচিং করছি। রিয়ান হচ্ছে আমার ফুফাতো ভাই।এবার মাস্টার্স পড়ে। )

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে আমি হাতের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে দিলাম এক চিৎকার।

চলবে…..