অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
279

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ৪
#মৌমিতা_শবনাম

তন্নি রেডি হচ্ছে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য রাদ ফ্যাশন ডিজাইন কম্পানিতে তাকে ডাকা হয়েছে। তন্নি রেডি হয়ে তার বাবার রুমে যায়।

তুষার সাহেব নিজের রুমে বসে সকালের খবরের কাগজ পড়ছিল তখন তন্নি এসে দরজায় নাড়া দিয়ে বলে,–” বাবা আসবো?”

তুষার সাহেব নিজের মেয়েকে দেখে খবরের কাগজটা ভাঁজ করে পাশে রেখে বলেন,– ” আয় মা।”

তন্নি এসে তার বাবার পাশে বসল। তুষার সাহেব নিজের মেয়েকে একবার দেখলেন অনেকদিন পর যেন সে তার মেয়েকে স্বাভাবিক দেখছে খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। তন্নি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে–” বাবা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি দোয়া করো।”

তুষার সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন– ” টেনশন হচ্ছে? ”

তন্নি মাথা নাড়িয়ে বলে,–” একটু একটু।”

তুষার সাহেব হালকা হাসলেন তিথুনি টেনে বললেন,–” চিন্তা করিস নাহ চাকরি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ । ”

তন্নি তার বাবার দিকে তাকিয়ে হাসলো তখন পায়েসের ছোট প্লেট হাতে নিয়ে তারাহুরো করে রুমে ঢুকলেন মিশমি। প্লেটের পায়েসটা ঠান্ডা করতে করতে এক চামচ তন্নির মুখের সামনে ধরে বলেন,–” হা কর।”

তন্নি হা করল তার মায়ের কথায়। এভাবে হাফ প্লেট পায়েস শেষ করে তন্নি তার মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিল।

—————–
১১:৪০ বাজে তন্নি রাদ ফ্যাশন ডিজাইন কম্পানির সামনে দাড়িয়ে। ১২ টায় ইন্টারভিউ শুরু তন্নি নিজের বুকে ফু দিয়ে ভিতরে ঢুকে বুকে হাত দিয়ে দেখে বুক ধুকপুক করছে।

ওয়েটং রুমে বসে আছে তন্নি। মাত্র দুজনকে ভিতরে ডাকা হয়েছে এখানে আরও কয়েকজন আছে ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। তন্নি আশে পাশে তাকাচ্ছে আর শুকনো ঢুক গিলছে জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ নিজে নিজে বিরবির করে বলে, –” আল্লাহ চাকরিটা যেন হয়ে যায়।”

এর মাঝে তন্নির ডাক পরে, –” তন্নি জাহান কে?”

তন্নি দাঁড়িয়ে বলল,–” আমি।”

তন্নিকে ভিতরে যেতে বলে তন্নির মুখটা সাথে সাথে শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে গেলো। বাহির থেকে বোঝা যাচ্ছে সে কতটা নার্ভাস। তন্নি দরজায় নক করে বলে,–” মে আই কাম ইন স্যার?”

রাদ তন্নির ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলে– ” ইয়েস কাম ইন।”

তন্নি নিজেকে স্বাভাবিক করতে দুই তিনবার লম্বা শ্বাস নিয়ে ভিতরে ঢুকে। রাদ ইশারায় বসতে বলে তখনও সে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। তন্নি ভদ্র মেয়ের মতো বসে যায়। রাদ এবার তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে–” তো মিস তন্নি…”

পুরো কথা না বলেই থেমে যায় রাদ। মেয়েটা যে প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে আছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নার্ভাস থাকা কালীন যে কোনো মেয়েকে এতোটা কিউট লাগে তা রাদ তন্নিকে না দেখলে জানতই না।

রাদ দু পাশে নিজের মাথা ঝাকিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসে বলে,–” আপনি কি নার্ভাস ফিল করছেন মিস তন্নি?”

তন্নি চোখ তুলে তাকায় রাদের দিকে হালকা হেসে বলে, –” না স্যার আমি ঠিক আছি।”

রাদ ভ্রু কুচকে বলল, –” আর ইউ সিউর? ”

তন্নি বলল,–” ইয়াহ স্যার।”

রাদ বলল,–” ওকে নার্ভাস হবেন নাহ এটা জাস্ট কিছু ইজি কথা বলবো আপনার মতামত জানবো সেই বিষয়ে। ”

তন্নি হালকা সাহস পেয়ে বলল,–” ওকে স্যার।”

রাদ বলল,–” তাহলে আমরা শুরু করি?”

তন্নি মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। তন্নিকে ডিজাইনের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা হলো সে সেই প্রশ্নের উত্তর গুলো সুন্দর করে দিল। রাদ মুগ্ধ হলো তন্নির ওরৃতিটা উত্তর শুনে। রাদ বলল,–” আপনি বাইরে গিয়ে বসুন আপনাকে আবার ডাকা হতে পারে। ”

তন্নি মাথা নাড়িয়ে বলল,–” ওকে স্যার।”

তন্নি বাহিরে চলে গেল। তন্নি যাওয়ার সময় তন্নির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে রাদ আর মনে মনে বলে,–” আর কেউ যেন আপনার থেকে ভালো পারফর্ম করতে না পারে। ”

————-
প্রতিদিন সকালে চা খাওয়ার অভ্যাস রুনার। এতদিন সকালে তন্নি চা করে দিত। তন্নি চলে যাওয়ার পর চা খাওয়া হয়ে ওঠে নি তার আর। আজ সে ভীষণ খুশি ঘরে নতুন বউ এসেছে আজ সে চা খেতে পারবে।

রুনা খুশি মনে বসার ঘরে গেলেন। বসার ঘরে গিয়ে দেখলেন বৃষ্টি পায়ের উপর পা তুলে বসে টিভি দেখছে। রুনাকে দেখে সেই একই ভঙ্গিতে বসে আছে সে। রুনা হালকা হেসে তার পাশে গিয়ে বসলেন। মুচকি হেসে মধুর সুরে বললেন, –“বৃষ্টি মা।”

বৃষ্টি সেই একই ভঙ্গিতে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে বলল,–” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন।”

এই কথায় খারাপ লাগে রুনার। সব খারাপ লাগা ঝেড়ে দিয়ে আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন,–” আমাকে এক কাপ চা করে দিবে। ”

বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বলে,–” উফ! মা আপনি এতোটাও অচল হয়ে যান নি যে এক কাপ চা করে খেতে পারবেন না। আমি ওসব চা টা বানাতে পারবো না আপনি বানিয়ে নিন।”

রুনা অপমানিতবোধ হলো সাথে তন্নির প্রতি করা কাজের জন্য অপরাধবোধ। তবে অপরাধবোধটাকে মেনে নিতে নারাজ তিনি। তার মতে সে কোনো ভুল করে নি নিজের ছেলের সুখ চেয়েছে আর তার ছেলে বৃষ্টির সাথে সুখে আছে।

রুনা চুপচাপ ওঠে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে গেলেন। নিরব রুম থেকে বের হয়ে বসার ঘরে এসে দেখে বৃষ্টি কাজ করছে আর চোখের পানি মুছছে। নিরব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,–” কি হয়ছে কাঁদছো কেন?”

বৃষ্টি নাক টেনে বলে,–” আমি কাজ করে ক্লান্ত লাগায় একটু টিভি দেখছিলাম তখন মা এসে আমাকে বললেন আমি নাকি জমিদারি করছি এখানে এমন জমিদারি চলবে না। ”

নিরব রেগে গিয়ে বলে,–” কি মা এই কথা বলেছে?”

বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। নিরব আরো রেগে বলে,–” দাড়াও আমি জিজ্ঞেস করছি গিয়ে মাকে।”

বৃষ্টি বাধা দিয়ে বলে– ” নাহ পরে তুমি চলে যাওয়ার পর মা আবার আমাকে কথা শোনাবে। ”

নিরব আর কিছু বলে না বৃষ্টির কপালে চুমু দিয়ে রুনার সাথে দেখা না করেই চলে যায় সে। এদিকে রুনা ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু ১১ টা বেজে যাওয়ার পরও যখন আসলো না বাহিরে বের হন তিনি। বৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করল, –” নিরব চলে গেছে কি?”

বৃষ্টি বলল,–“হ্যা।”

রুনা মন খারাপ করে চলে গেলেন। রুনা নিজের রুমে চলে যেতেই বৃষ্টি বাকা হেসে বলে,–” এই সংসার আমার মুটোয় আনবো।”

—————
তন্নি বসে আছে রাদের সামনে একটু আগে আবার ডাকা হয়েছে তাকে। রাদ নিজের গলা ঝেড়ে তন্নির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, –” স্যালারি কত নিতে চান?”

তন্নি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাদ হালকা হেসে বলে,–” ৪০০০০ হাজার দিলে হবে?”

তন্নি চমকে বলে,–” স্যার আমার চাকরিটা কি হয়ে গেছে? ”

তন্নির এমন বোকা প্রশ্নে রাদ উচ্চস্বরে হেসে দিয়ে বলল,–” হ্যাঁ।”

তন্নি খুশি হয়ে বলল,–” থ্যাংকু স্যার অনেক। ”

রাদ হাসে তন্নিকে মনে ধরে গেছে তার শ্যামলা বর্ণের গোল গাল চেহারা মায়াবি চাপ চোখের পাপড়ি পাতলা। সব মিলিয়ে রাদের কাছে পারফেক্ট লাগছে। হঠাৎ রাদের মনে পড়ে যায় রাইদার কথা মুখের হাসিটা চলে গেল। মনের মাঝে যে আশা জাগিয়েছিল ভেঙে দিয়েছে সে।

রাদ এগুলো চিন্তা করছিল তখন সেখানে সজীবের সাথে রাইদা আসে। রাইদা এসেই পাপাই বলে রাদের গলা জড়িয়ে ধরে। রাদও রাইদাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ তন্নির দিকে চোখ যেতেই রাইদা জিজ্ঞেস করে, –” এই আন্টিটা কে পাপাই।”

রাদ বলল,–“ইনি তোমার নতুন আন্টি।”

রাইদা রাদের কোল থেকে তাড়াতাড়ি নেমে তন্নির কাছে গিয়ে বলে,–” চলনা নতুন আন্তি আমরা খেলি।”

রাদ রাগ দেখিয়ে বলে,–” রাইদা আন্টিকে ডিস্টার্ব করো না।”

রাইদা মন খারাপ করে ফেলে। তন্নি রাইদাকে কোলে নিয়ে বলে,–” থাক না স্যার খেলুক আমার সাথে সমস্যা নেই।”

তন্নি আর রাইদা খেলতে থাকে আর রাদ তাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর রিধির বলা কথা গুলো নিয়ে ভাবতে থাকে। তবে সত্যিই কি রাইদার মায়পর আদরের অভাব পরছে? সত্যিই কি তার মা প্রয়োজন? রাদের মাথায় হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

চলবে