অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
275

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব৫
#মৌমিতা_শবনাম

রাদ নিজের রুমে বসে আছে। তার চোখে বার বার তন্নির সেই নার্ভাস হওয়া মুখটা ভেসে আসছে। রাদ বিরক্ত হয়ে বলে,–” কি হয়েছে রাদ তোর তুই কেন ওকে ভুলতে পারছিস নাহ তার উপর মেয়েটা ডিভোর্সি রিধি কখনো মানবে না।”

রাদ নিজেকে এগুলো বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তখন সেখানে রিধি এসে দরজা নক করে বলে,–” ভাই আসবো। ”

রাদ রিধির কন্ঠ শুনে নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বলে,–” আয় ভিতরে। ”

রিধি অনুমতি পেয়ে ভিতরে ঢুকে এসে রাইদার পাশে বসে। রাইদা তার ফুপিকে দেখে খুশি হয়ে তার কোলে উঠে বলে, –” ইপ্পি ( ফুপি) তুমি জানো আজ একটা আন্তি আসছে অফিসে। ”

রিধি ইন্টারেস্ট দেখিয়ে বলে,–” তাই! তারপর কি হলো?”

রাইদা তাকে সব বলে। রিধি রাদের দিকে তাকিয়ে বলে– ” কে রে ঐ মেয়েটা?”

রাদ গম্ভীর গলায় বলে –” আমার নতুন পিএ।”

রিধি বলল,–” কেমন দেখতে রে?”

রাদ গম্ভীর গলায় আবারও বলে,–” ওকে আবার বউ বানাতে লেগে যাস নাহ মেয়েটা ডিভোর্সি। ”

রিধি কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,–” তো কি হয়েছে তুই কি? সত্যিতে তুই আনম্যারিড হলেও সারা দুনিয়ার সামনে তুই এক বাচ্চার বাপ মানে তুই ম্যারিড ছিলি।”

রাদ ভ্রু কুচকে তাকায় রিধির দিকে। রিধি আবার বলতে থাকে –“এখানে আমি ঐ মেয়েকে তোর বউ বানানোর প্ল্যান করছিলাম নাহ আর শোন কার মনে কি চলে একটু হলেও বুঝি ছোট থেকে দেখছি তো অফিস থেকে আসার পর থেকে লক্ষ্য করছি আমি।”

রাদ ভ্রু আরো কুচকিয়ে বলে,–” মানে?”

রিধি বলে,–” বুঝে নে।”

এই বলে রিধি সেখান থেকে চলে যায় আর রাদ সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে মনে মনে খুশিও হয়েছে ডিভোর্সি শুনে রিধি স্বাভাবিক রিয়েক্ট করেছে। রাদ নিজে নিজে বলতে থাকে, –” এই মনে ধরেছেন আপনি মিস তন্নি আপনাকে যে আমার চাই।”

————-
তন্নি বেলকনির একটা চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে। তখন ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেসেজ টা ওপেন করে।
–“ভালোবাসাই নেইকো আর কোনো বাধা,
শুধু তোমার বলার অপেক্ষা

মেসেজটা পড়ে কপাল কুচকে ফেলে তন্নি। কে দিল এই মেসেজ এটা নিয়ে ভাবতে থাকে। তখন বসার ঘর থেকে মিশমি ডাক দিলেন তন্নি। তন্নি কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে চলে যায় বসার ঘরে।

–” মা ডাকছিলে?”

মিশমি বললেন, –” এই নে তোর প্রিয় চিকেন বার্গার এনেছে তোর বাবা। ”

তন্নি খুশি হয়ে বলে,–” সত্যি!”

মিশমি বার্গার তন্নির দিকে এগিয়ে দেন। তন্নি মিশমির থেকে বার্গারটা নিয়ে এসে খেতে শুরু করে। ততক্ষণে তুষার সাহেব হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।

তন্নি তুষার সাহেবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আবার বার্গার খেতে থাকে। তুষার সাহেব ও মেয়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসেন। সন্তানকে খুশি দেখলেই তো মা বাবার মনে তৃপ্তি আসে।

———
রাত প্রায় ১২ টা বাজে রুনা নিজের রুমে বসে আছেন নিরব তার রুমে আসবে বলে কিন্তু নিরব আসে না। ছেলেটাকে সারাদিন দেখতে না পেয়ে মনটা চটপট করছে তার। আর থাকতে না পেরে উঠে দাঁড়ালেন সে। নিরবের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।

নিরবের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আস্তে করে কয়েকটা ঠোকা দিলেন। কেউ এলো না আবার একটু জোরে দিলেন এবার নিরব এসে দরজা খুললো। নিরবকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কাদা শুরু করলেন। নিরব চিন্তিত হয়ে বলে,–” কি হয়েছে মা কাদছো কেন?”

রুনা কাদতে কাদতে বললেন, –” তুই সারাদিনে একটা বারের জন্যও আমার কাছে যাস নি।”

নিরব বলল,–” সরি মা আসলে অফিসে যাওয়ার সময় তারাহুরোর জন্য যেতে পারি নাই তোমার কাছে আর অফিস থেকে আসার পর খুব ক্লান্ত লাগছিল। ”

রুনা চিন্তিত হয়ে বলেন, –” খুব খারাপ লাগছে বুঝি যা ঘুমিয়ে পর।”

নিরব বলল,–” আচ্ছা তুমিও যাও আর কেদো নাহ বুঝলে। ”

রুনা মাথা নাড়ালেন ঘুরে চলে আসছিলেন তখন তার কানে ভেসে আসলো বৃষ্টির গলা সেখানে বৃষ্টি নিরবকে বলছে, –” তোমার মায়ের কমন সেন্স নাই এতো রাতে এসে কেউ ছেলে আর ছেলের বউয়ের রুমে টুকা দেয়।”

নিরব বিরক্ত হয়ে বলে, –” ব্যস বৃষ্টি মায়ের ব্যাপারে কিছু বলবে না এখানে দোষটা আমারই।”

বৃষ্টি ন্যাকা কান্না করে বলে, –” হ্যা এখন তো তুমি আমার প্রতি বিরক্ত হবেই আবার অন্য কাউকে পেয়ে যাওনি তো?”

নিরবের বুকটা ছ্যাত করে উঠে বৃষ্টি তাকে কথা শোনালো। এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল নিরবের ভিতর থেকে। বাহিরে থাকা রুনা এসকল কিছু শোনে আচল দিয়ে মুখ ঢেকে চলে যায় নিজের রুমে।

—————————
রাত ১২ ট বাজে একা বেলকনিতে বসে আছে তন্নি। আজকেও চোখের কোণে পানি জমে আছে তার হাতের ফোনে আজকেও নিরবের ছবি ভাসছে। ছবিটির দিকে তাকিয়ে বলে– ” বৃষ্টি কে নিয়ে ভালোই আছো তাই নাহ?”

হাজার কষ্টে নিজের মুখে এক চলতি হাসি ফুটিয়ে তুলে। সারাদিন তার ব্যস্ততার মাঝে গেলেও রাতটায় সে হয়ে যায় ভীষণ একা। সব স্মৃতিগুলো তার মস্তিষ্ককে গ্রাস করতে থাকে।

তন্নি ফোনটা আবার সামনে ধরে চোখের পানি মুছে সে ডিলিট অপশনে চাপ দিয়ে বলে,–” এই ফোনে যতদিন তোমার ছবি থাকবে ততদিন আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না।”

নিরবের ছবিটা ডিলিট করে দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয় তন্নি। কিন্তু মনের ভার ভার ভাবটা কমে না বরং নিরবের শূন্যতা তাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। সে তো ভুলতে চায় নিরবকে তবে কেন পারে না সে?

——————
রাদ সকাল সকাল কফি হাতে বেলকনির রেলিং এ ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে। এই পরিবেশটা তার কাছে ভালো লাগে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। চোখ দুটো বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নেয়। মনটা যেন সতেজ হয়ে যায়।

রাইদার উঠে যাওয়ার শব্দে তার কাছে ছুটে যায় রাদ। রাইদ বসে কান্না করছে। রাদ অস্থির গলায় বলে,–” কি হয়েছে মা কাদছো যে?”

রাইদা কান্না করে বলে, –” পাপাই আমি মাম্মাহ যাবো।”

রাদ কপাল কুচকে বলে,–” মানে? ”

রাইদা আবারও কান্না করে বলে, –” আমি মাম্মাহ আর বাবাই কাছে যাবো। ওরা এসেছিল আমার কাছে। ”

রাদ আর কিছু বলে না রাইদাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। নিজের সেই ভয়ংকর অতীতকে নিয়ে ভাবতে থাকে। কেন হলো তার সাথে এমন?

চলবে
বানান ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।