অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-০২

0
1035

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓[২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০২

— “বাসর করার জন্য তোর এতো তাড়া ভাবা যায়। বিয়ে করতে না করতেই বউকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেছিস। তাও আবার সাজ-বিহীন বাসরঘর।” (রুমে প্রবেশ করতে করতে রুহি)

আয়ানের দাদুর পেছনে দাদিও এসে দাঁড়িয়েছে। লজ্জায় মাথা তোলার মতো সাহস খুঁজে পেলো না ইশরা। ইচ্ছে করছে, পায়ের নিচের মাটি ফাঁক হয়ে যাক, আর ইশরা সেই ফাঁকে ঢুকে নিজের লজ্জা নিবারণ করুক।
আয়ান তখন শান্তমনে ইশরার পর দেখতে মন দিয়েছে। দিদার কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো সে। দুহাত বুকে গুজে মাথা চুলকে বলল,,.

— “তুমি তো এই বয়সেও দাদুকে ছাড়া ঘুমাতে পারো না। আর আমি নতুন বিয়ে করে, কেন পাগল হবো না শুনি?”

দমে গেলেন রুহান। এই ছেলের সাথে সে জীবনের পারবে না, জানা আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর ট্রে নিয়ে তনয়া এলো। দুজনের জন্য যথা পরিমাণ খাবার, গরম তেল সাথে একটা গ্ৰে রঙের শাড়ি। সাবধানে ট্রেটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে বাটিটা হাতে তুলে নিল। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল.

— “ভাইয়া; তেল গরম করে এনেছি। তুই পায়ে লাগিয়ে দিতে পারবি না-কি আমি লাগিয়ে দিবো।”

অপ্রসন্ন হলো আয়ান। ছোট তেলের বাটিটা নিয়ে নিল। ইশরার সামনে বসে ব্যাথাপ্রাপ্ত পা নিজের কোলে উপর তুলে নিলো। স্বযত্নে মাসওয়াজ করে দিতে দিতে বলল. — “আমার ব্যাপারে তোকে এতো কৌতূহল না দেখালেও চলবে! আমার বউয়ের এইটুকু সমস্যা, আমি নিজেই তুরি মেরে সল্ভ করে নিতে পারবো।”

বাঁকা হাসলো তনয়া। কপাট রাগ দেখিয়ে বলল.

— “তুই ভাবীকে খাইয়ে দিতে পারবি ভাই!”

দাঁতে দাঁত চেপে তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল.

— “হ্যা পারবো। এবার যা.

— আচ্ছা ভাইয়া তুই শাড়িটা পড়িয়ে দিতে পারবি তো!

এবার বেশ কিছুটা রেগে গেল আয়ান। পুরো কথাটা না শুনেই সোজা উত্তর দিলো,,– “হ্যা পড়িয়ে দিবো যা।‌ লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে ইশরার। এতোক্ষণ যতটুকু ছিল, তারচেয়ে হাজার গুণ বেশী লজ্জা ঘিরে ধরেছে।”
শব্দ করে হেঁসে উঠল সবাই। সেই অট্টহাসিতে ধ্যান ভাঙল আয়ানের। আড়-চোখে সবাই দিকে তাকিয়ে ইশরার দিকে তাকালো। কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে একে একে টেনে রুম থেকে বের করে দিল সবাইকে। পূর্ণরায় বেডের উপর শরীর হেলিয়ে শুয়ে পড়লো। ইশরার দিকে একবার ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল.

— “কষ্ট করে শাড়িটা পাল্টে নে.! এই ফাঁকে আমি শাওয়ার শেষ করে আসছি।”

টাওয়ার কাঁধে ঝুলিয়ে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আয়ান। আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তব্ধ নিঃশ্বাস ছাড়লো ইশরা। বেডের উপর ভর করে ধীরে ধীরে উঠা দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো, হলো তার বিপরীত। পায়ের ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠল। বৃথা চেষ্টা না করে বেডের উপর থাকা বালিশটা কোণে সেঁটে শুয়ে পড়ল। নিজের কাছে খুব ক্লান্ত ঠেকছে শরীর-টা। নয়ন যুগল বেষ্টিত করতেই ঘুমেরা নেমে এলো চোখের পাতায়। ধীরে ধীরে তলিয়ে গেল অতল গভীর নিদ্রায়।
.
.
নিসুপ্তি উগ্রে কেউ একজন হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল ইশরাকে। আকস্মিক ঘটা এমন দূর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না সে। নিভু নিভু চোখ খুলে আয়ানের নগ্ন বুকটা নজর কাটল তার। কিন্তু ঘুম ঘুম চোখে স্পষ্ট বুঝতে পারলো না কে। প্রায় প্রায়ই না খেয়ে ঘুমালে রাতে এসে তমোনা খাইয়ে দিয়ে যায়। হাত ছাড়িয়ে চোখ ঢোলে অস্পষ্ট স্বরে বলল.

— “মা প্লীজ যাও তো! ঘুম পেয়েছে ঘুমাতে দাও।”

বলেই ধক করে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। নিদ্রায় হারিয়ে যাওয়া চেষ্টা চালালো কিছুক্ষণ। চোখের সামনে অন্ধকারের ছায়া এখন স্পষ্ট তার কাছে। তমোনা এখনো যায় নি। বিরাগী হয়ে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল.

— “মা আলো নিভিয়ে যাও আর ঘুমাতে দাও।”

তবুও ছায়ামুর্তি সামনে থেকে গেল না। ইশরা বেশ বুঝে গেছে এতো সহজে তমোনা তার রুমে যাবে না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উল্টো ঘুরে পিঠ দেখিয়ে শুয়ে পড়লো সে। তাতে অপর পাশের মানুষটি বেশ রুদ্র হলো বলে মনে হয়। পিঠের নিচে হাত রেখে টেনে বসিয়ে দিল ইশরাকে। বুকের উপর মাথা রাখলো। ততক্ষণে ইশরার হাত গিয়ে ঠেকেছে তার বক্ক-মাঝে। পোশাকহীন হিম শীতল অঙ্গের সাথে লেপ্টে থাকতে বেশ ভালো লাগছে তার। এবার ইশরাও নিজের সাথে দৃঢ় বাঁধনে বেষ্টিত করে নিল তাকে। মিলিত হলো একে অপরের অতি সন্নিকটে। অপর পাশের মানুষটির হার্টের ভেতরে থেকে আসা বিট সাউন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে কখনো মাথা দোলাচ্ছে আবার কখনো তুরি বাজাচ্ছে, নাচছেও বটে! এবার যেন বেশ কঠোর করে কোমড় চেপে ধরলো ইশরার। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে স্তব্ধ হয়ে গেলে সে। প্রতিটি লোম জানান দিচ্ছে, অপ্রত্তাশিত ভাবে কোনো পুরুষ তাকে ছুঁয়ে চলেছে। চোখ খুলে মানুষটাকে দেখার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও খুলতে পারছে না। যেন কোনো ভাবে নয়নজোড়া মেলা যাচ্ছে না। ধীরে হাতের বাঁধন আলগা করে নিল। সামান্য সময় পর মুখের মাঝে খাবার পুড়ে দিল। খাবারগুলো চিবুতেও কষ্ট হচ্ছে। ঘুমের মাঝে শুনতে পারছে পুরুষালী কন্ঠস্বর.

— “চোখ মেলতে হবে না। ঘুমের মাঝে খেয়ে নেও।”

ইশরাও চোখ খোলার চেষ্টা করলো না, খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ করতে অতি স্বযত্নে পূর্বের স্থানে শুইয়ে দিলো। ব্লাঙ্কেট দ্বারা শরীর ঢেকে দিলো সেই মানবটি।
________________
জ্যোৎস্না রাত আলােকময় প্রকৃতির এক বৈচিত্র্যময় উপহার। ভরা পর্ণিমার রাতে নিটোল চাঁদ তার ঝলমলে আলাের পসরা নিয়ে উপর আকাশে আবির্ভূত হয়। রুপালি জ্যোৎস্নার অনিন্দ্য সৌন্দর্যে অনবদ্যরূপে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সমগ্র নিস নয়। চাদনি রাত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনে বিচিত্র ভাব ও উদ্দাম আনন্দের সঞ্চার করে। চাদনি রাতের নৈসগিক পরিবেশ যেমন দৃষ্টিনন্দন, চিত্তাকর্ষক তেমনি উপভােগ্য। বাইরে থেকে চন্দ্রের স্নিগ্ধ শোভন প্রকৃতি কাঁপিয়ে জানালা বেধ করে উঁকি দিচ্ছে ঘরের মাঝে। সূর্যের মতো তীব্র আলো না থাকলেও স্নিগ্ধতা মিশে আছে। তবুও আয়ানের শরীরে সূর্যের মতো তীব্র ঝলকানি অনুভব করছে। মনে কোণে উঁকি দিচ্ছে কেউ একজন তাকে চেপে ধরে ঝলসে দিচ্ছে। উৎকন্ঠা হয়ে বেষ্টিত নয়ন যুগল খুলে তাকালো আয়ান। চাঁদের শোভনীয় আলোয় ইশরার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইশরার কাঁপুনির তালে তালে আয়ানের শরীরটাও তখন মৃদু মৃদু কেঁপে চলেছে। কালকের লাল শাড়িটা তার শরীরে পেঁচানো। চুলগুলো সরিয়ে কপালে হাত ঠেকাতেই আতংকে উঠল সে। ধীরে ধীরে ইশরার মাথাটা বালিশের রেখে এক ছুটে উঠে বসলো। আলোকশূন্যতা দূর করতে রুমের আলো জ্বালিয়ে নিলো। চিন্তিত হয়ে রুমের এককোণে থেকে অন্যকোণে পায়চারী শুরু করে দিল। কখনো মুঠোফোন হাতে নিয়ে ডাক্তারকে ফোন করতে চাইলো আবার দৌড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে। নিজের মন মানসিকতা সাথে যুদ্ধ করে শেষে বাটিতে পানির নিয়ে এলো। ছোট একটা নরম কাপড় নিয়ে ভিজিয়ে, মাথায় জ্বর পট্টি দিতে লাগলো।

__________________
অতি শীতলতায় শরীরটা কাঁপছে। চোখের উপর ঠান্ডা এবং কিছুর উপস্থিতি অনুভব সক্ষম হচ্ছে ইশরা। প্রচন্ড দূর্বল লাগছে শরীরটা। চোখ খুলে তাকাতেই ভেজা কিছু চোখের উপর আবিষ্কার করলো সে। হাত দিয়ে সরিয়ে নিতেই বুঝতে পারল, ভেজা কাপড় ভাঁজ করা। মাথার কাছে ছোট বাটিতে মাটি রাখা। মাথাটাও ভাড় হয়ে আছে। তাহলে রাতে নিশ্চিয়ই জ্বর এসেছিলো। চারপালে চোখ বুলিয়ে তমোনাকে খুঁজতে লাগলো ইশরা। পূর্বে জ্বর হলে ভালো হওয়ার আগ পর্যন্ত তমোনা ইশরার পাশে বসে থাকতো। কিন্তু তমোনাকে নজরে এলো না তার। আয়ানের ঘুমন্ত মুখশ্রী নজরে এলো। বেডের সাথে হেলান দিয়ে আয়ান ঘুমিয়ে আছে। হাতটা ইশরার চুলের ভাঁজে বন্দী করা। হাত সরিয়ে বেডের উপর রাখতেই ধরফর করে উঠে বসলো আয়ান। ঘুম ঘুম চোখে ইশরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল.

— “কি হয়েছে; শরীর খারাপ লাগছে! দাড়া আমি মেডিসিন নিয়ে আসছি।”

— “আয়ান! থাম এবার কখন বললাম; শরীর খারাপ লাগছে! জাস্ট হাতটা সরিয়ে দিলাম।”

কোনো রুপ উত্তর দেওয়ার মতো ভাবাবেগ খুঁজে পাওয়া গেল না তার ভেতরে। হঠাৎ উঠে বসাতে নয়ন যুগল রক্তিম হয়ে আছে! তাহলে কি রাতে ঘুম হয়নি তার। ইশরার ভাবনার মাঝেই আয়ানের হাত ঠেকালো তার ললাটে। হাতের এপিঠ ওপিঠ ছুঁয়ে অস্বাভাবিক কন্ঠে বলল.

— “কই! জ্বর তো আসে নি। তাহলে এতো হাইপার হচ্ছিস কেন?”

ইশরা উত্তর দিলো না। কখন হাইপার হলো সেটাই বুঝতে পারলো না সে। ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)