অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-০৩

0
865

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓[২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০৩

— “ভাবী! ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালবাসে তাই না! আচ্ছা তোমাকে আগেও এমন ভালোভাসতো। তোমাদের লাভ স্ট্যুরি-টা প্লীজ বলো না ভাবী….

খাওয়া রেখে ডাগর ডাগর আঁখি যুগল দিয়ে তনয়ার দিকে দৃষ্টি ফেরালো ইশরা। শেষ পর্যন্ত ভাই ভাবী পেছনে লেগেছে মেয়েটা। কখন জানি, খাবার নাকে মুখে উঠে যায়। তনয়ার প্রশ্নের প্রতিবাক্য না দিয়ে খাওয়াতে মন দিল ইশরা।
এদিকে নিজের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল তনয়া। মুখশ্রী বাচ্চাদের মতো দুলাতে দুলাতে বলল.

— “ভাবী তুমি কিছু বলছো না কেন? প্লীজ বলো না, কালকে রাতে কি কি হলো?”

খাওয়া রেখে হালকা চপল মারলো তনয়ার পিঠে। ক্রুব্ধ লোচনে অবলোকন করে বলল.

— “আমি তোমার ভাবী হই! নিজের ভাইয়ের বাসর সম্পর্কে জানতে চাইছো? যদি জানতে হয়, আয়ানের কাছে থেকে জেনে! আমি ওকে বলে দিবো, তুমি বরং ওর থেকেই জেনো?”

তড়িৎ গতিতে ইশরার বাহু ধরে কঠোর ঝাঁকুনি দিয়ে বলল.
— “এইসব শুনলে ভাইয়া আমাকে আস্ত রাখবে না? আমি কিছু জানতে চাই না, তবুও বলো না।”

ভ্রু কুঁচকে রইলো খানিকক্ষণ। মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো ইশরা। নিরিবিলিতে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। নিরিবিলির জড়তা কাটিয়ে মুখ খুললো তনয়া.
— “আমার ভাইয়ের মতো দুয়ানও কি এতোটাই কেয়ারিং।”

বিষম খেয়ে উঠলো ইশরা। দুয়ান দেশ ত্যাগ করেছে দিন পনেরো পেরিয়ে গেছে, আজ হঠাৎ তনয়ার প্রশ্নটা মানতে সক্ষম হলো না সে। কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে বললো

— “কি হয়েছে বলো তো? তোমার ভাই-ভাবীর বন্ধুকে মিস করছ মনে হচ্ছে?”

— “এ-এখানে মি-মিস করার কি আছে? আসলে ওনার একটা জিনিস আমার কাছে রয়েছে ওটাই ফেরত দিতে চাইছিলাম। অন্যের জিনিস আমার কাছে থাকলে যদি নষ্ট হয়ে যায় তখন.

এক লোকমা খাবার মুখে পুড়ে তনয়ার মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করে নিল ইশরা। মৃদু কাঁপছে তার শরীর। খাওয়াতে মন দিয়ে বলল.– “নো প্রবলেম, তুমি আমাকে দাও। আমি ঠিক সময়ে ওর কাছে পৌঁছে দিবো।”

— “ভাবী তুমি কি খাবার নিবে না-কি নিচে রেখে আসবো।”

— “তোমাকে এখন নিচে যেতে হবে না। তুমি বরং আমাকে দুয়ানের জিনিসটা দাও।”

খাবার ট্রে-টা এক হাতে নিয়ে ইশরার দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিলো। ইশরাও ৩২ দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো। ওমনি একছুটে বেরিয়ে গেল সে। পূর্ণরায় খাবারে মন দিলো সে। যেভাবে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল সেভাবে ছুটে ফিরে এলো। দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা তুলে বলল. — “ভাবী আজকে পানি আসবে না মেভি। তুমি ম্যানেজ করে নিও।”

বলেই যেভাবে ছুটে এসেছিল, সেভাবে বেরিয়ে গেল।উচ্চ শব্দে হেঁসে উঠলো ইশরা। বেচারী পানির কথা বলতে এসে, সেই কথাটাই ভুলে গেছে। ললাটে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো তার। সেই প্রভাত থেকে পানি নেই বাড়িতে। পাইপ লাইনের কোথাও একটা সমস্যা হয়েছে। মিস্ত্রিরি খবর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু গ্ৰামে গেছেন। অন্য মিস্ত্রি কাল সকাল ছাড়া আসতে পারবে না। এদিকে যতটুকু পানি ছিল তা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শাওয়ার নিতে পারে নি। এভাবে চিটচিটে শরীরে থাকতেও বেশ অস্বস্তি হচ্ছে তার। যা করার এবার তাকেই করতে হবে। প্লেটে পড়ে থাকা অবশিষ্ট খাবার-টুকু খেতে ব্যস্ত হয়ে গেল সে।

_________________
পায়ের টাকনুর উপরে বারিধারা উঠে গেছে। ঘাসের মাঝে হাটলে ছোপ ছোপ শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে। বাগানের উপর অতিবাহিত হওয়া পাইপের কিছুটা অংশ ফেটে গেছে। তার ফলস্বরূপ পানির ধারার ভর সহ্য করতে না পেরে ভেঙ্গে গেছে। সেখান থেকে পানি বাগানে ছড়িয়ে পড়ছে। খানিকটা অংশে ভাঙা। বেশ কিছুক্ষণ পাইপটাকে দর্শন করে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো ইশরা। তাকেই কিছু একটা করতে হবে। খড়কুটো, সেলোটিপ, দিয়ে ভাঙা স্থানটাকে দৃঢ় বাঁধনে মুড়িয়ে দিলো। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পানিতে লাফ-ঝাফ করলো সে। অতঃপর বাড়ির ভেতরে অপেক্ষা রত তনয়াকে জোরে ডেকে উঠলো সে.

— “তনু এবার মোটর অন করে দাও।”

মিনিট পাঁচেকের ভেতরেই পানি ধারা প্রবাহিত হওয়া শুরু করলো পাইপ লাইনের মধ্যে দিয়ে। নাচতে নাচতে বাগান পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। দু’পা ফেলতেই ইটের কুচোয় পা বেঁধে পড়ে পানিয়ে মাখো মাখো হয়ে উঠলো ইশরা। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইট-টাকে তুলে দূরে ছুড়ে ফেললো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল.

— “আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়া আজ তোকে বোঝাবো। কুটিকুটি করে ভাঙাবো তোকে।”

ইটের টুকরো বিচ্ছিন্ন হওয়ার শব্দ হওয়ার বদলে পানির তীব্র শো শো শব্দে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। ইশরা বুঝতে বাকি রইল না, কাজ কমানোর বদলে আরো বেড়ে গেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে নিভু নিভু দৃষ্টিপাত করলো পেছনে। নিজের উপর অতিশয় ক্ষুদ্র হলো সে। তার গায়ে তিল পরিমান প্রতিপত্তি নেই যে, ঈষৎ দূরে নিক্ষেপ করবে। তার ইটের কুঁচো দূরে না গিয়ে দুকদম পেছনে পাইপের ফাটলের অংশের উপর পড়েছে। তদানীং সেখানে আবির্ভাব ঘটেছিল আয়ানের। প্রবেশদ্বারের কাছে আসতেই বাগান থেকে অম্বুধারার তীব্র শব্দ শুনে এসেছে সে। ইশরার নাজেহাল অবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সে। বিরুপ করে বলল.

— “লাইক সিরিয়াসলি! এভাবে গাধার মতো শুয়ে পাইপ ঠিক করা যায়। তোকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।”

অতি রাগে ফেটে পড়লো ইশরা। আয়ানের পা ধরে টেনে ফেলে দিলো তাকে। আয়ান নিজের কোমড়ে হাত চেপে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইশরার দিকে। ত্রাসে হৃৎকম্প ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ইশরার। সৌজন্যে হাসি দিয়ে বলল.

— “তুই রুমে যা। জামা কাপড় পাল্টে নে; আমি পানির ব্যবস্থা করছি।”

— “যদি রুমে পানি না যায়। তাহলে আজ তোর একদিন আর আমার যে কয়দিন লাগে!”

বলেই ধপাধপ পায়ে প্রস্থান করলো আয়ান। পেছনে মাথায় হাত দিয়ে পা সোজা করে বসে আছে ইশরা। পরক্ষণেই ছুটে গেল পাইপের দিকে আজ সত্যি যদি লাইন ঠিক করতে না পারে তাহলে কি আছে তার কপালে।

__________________
ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়েছে আয়ান। তদানীং রুমে ভেজা অবস্থায় ফিরেছে ইশরা। আয়ানকে হাফ টাওয়ালে দেখে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল সে। ভেজা হস্তে নয়ন যুগল গ্রথণ করে বলল..– “আমি কিছু দেখি নি।” আয়ানও অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। আয়ান দ্রুত পেছনে ঘুড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে গেলে ঠাস করে দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত পেল। ফিক করে হেসে উঠলো ইশরা। আয়ানের দিকে খানিকটা এগিয়ে গেলে হাত দিয়ে থামিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। দরজার ফোঁকট থেকে মাথা হেলিয়ে বলল.

— “লজ্জা করে না তোর। এভাবে একটা ছেলের সুযোগ নিতে।”

ভেংচি কাটলো ইশরা। ভেজা আছে বিধায় বসলো না সে। কাবার্ড থেকে আয়ানের টি শার্ট আর জিন্স বের করে ওয়াশরুম থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে।
চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে কিছুই নজরে এলো না আয়ানের। শুধু টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকা আয়ানের নিত্তদিনের অভ্যাসের মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে ইশরার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে‌। তাছাড়া কিছুক্ষণ আগে ইশরার উপর রেগে কিছুই মনে ছিল না তার। প্রবেশদ্বার খুলে ফোঁকট দিয়ে মাথা হেলিয়ে দিল আয়ান। ইশরাকে কিছুটা দূরে দেখে ঠাস করে দরজা আটকে দিলো। সামান্য সময় অতিবাহিত হওয়ার পর পূর্ণরায় দরজার ফোঁকট দিয়ে মাথা হেলিয়ে দিল। এবার একই ভঙ্গিতে ইশরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোঁট উল্টে ফেললো সে।
একটু পর পর দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে আবার আঁটকে দেওয়াতে মেজাজ বিগড়ে গেল ইশরার। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে স্যাম্পুর বোতল দরজার বরাবর ছুঁড়ে ফেললো সে। কপাট রাগ দেখিয়ে বলল.

— “একটু পরপর ভুক্কু ভুক্কু খেলা বন্ধ করে বেরিয়ে আয় ভাই। তোর সাথে খেলার জন্যে দাঁড়িয়ে নেই বুঝছোস।”

এবার ভেতর থেকে করুন সুরে জবাব এলো। পূর্বের মতো মাথা বের করে বলল.

— “আমার জামা কাপড় কাবার্ডের ভেতরে আছে!”

এবার ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে গ্লিসারিনের বোতল ছুঁড়ে মারলো আয়ানের দিকে। রেগে বলল,.

— “তাহলে ভুক্কু ভুক্কু খেলার মানে কি আয়ান। যত্তসব.

সময় অবিলম্ব না করে রুম প্রস্থান করলো ইশরা। বিরাগী হয়ে উঠলো সে। জামা কামড় নেই তাহলে এমন ফাজলামোর মানে কি?
.
.
রুমে প্রবেশ করলে দূর দেখে দেখতে পেল, আয়ান অনবরত কাবার্ড থেকে গোছানো জিনিসগুলো নিচে ফেলছে। কিছু একটা খোঁজার তীব্র হাহাকার। চরণ গতিময় করে ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে গেল ইশরা। এবার যেন অত্যচার কয়েকগুণ বেড়ে গেল। এতোক্ষণ গোছানো কাপড় চোপড় গুলো নিচে ফেলছিলো, এবার সেগুলো মুখ বরাবর ছুঁড়ছে ইশরার। নিজের ইচ্ছেমতো ছোড়াছুড়ি করে গ্ৰে রঙের টি শার্ট আর ট্রাউজার বের করলো‌। হাত বুকে গুঁজে পেছন থেকে বলল.

— “কাবার্ড এতোক্ষণ ধরে দিবাকে খুঁজছিস না-কি..

পেছনে ফিরলো না আয়ান। বক্কজুড়ে নিশ্বাস ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে তার। নত সুরে বলল.

— “ফিরে এসেছে! ফিরে এসেছে! দিবা ফিরে এসেছে ইশরা।”

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)