অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-০৬

0
689

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০৬

— “তুই নিজের বউকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিস আয়ান। এটা আমার লাইফ, তাই আমি কি করবো, না করব সম্পূর্ণ টা আমার ইচ্ছায়। ছেড়ে দিবি, দে..

হাতে অবস্থায় করা ফোনটা এখনও বেজে চলেছে। অতিশয় ক্ষোভে ফোনটা ছুঁড়ে ফেললো অদূরে। দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে ছিটকে এসে পায়ের কাছে পড়লো ইশরার। দুহাতে মাথার চুল টেনে বেডের উপর বসে পড়লো সে। আয়ান এগিয়ে এলো ইশরার দিকে। সংশয় দিয়ে স্পর্শ করলো ইশরার হাত। এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো ইশরা। জানালার গ্ৰিল মুষ্টিবদ্ধ করে বলল.

— “ইডিয়েট; আমার চোখের সামনে থেকে যা! তুই ভালো ভাবেই জানিস, আমি রেগে গেলে কি করতে পারি।”

বাইরের থেকে আসা হিম শীতল হাওয়ায় ইশরার চুলগুলো উড়ছে। পেছনে ঘন কালো কেশ ছাড়া কিছুই নজরে এলো না। বরাবরের মতো এখনও রুমের ভেতরটা আলোকহীন। আলোকহীনতায় এই অপরুপ সুন্দরী রমনীকে দেখে দু নয়ন পূর্ণ করার ইচ্ছে থাকলেও, অপূর্ণই রয়ে গেল।
আয়ান ইশরার রাগ সম্পর্কে অবগত। অন্যের উপর কখনো রাগ দেখায় না। সব নিজের উপর দেখায়। অতিশয় ক্ষোভের সময় কেউ তার পাশে থাকলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দেয়ালে আঘাত করে। তিন বার ইশরার হাতের আঙ্গুল ভেঙেছিলো।

এগিয়ে গেল আয়ান। ইশরা আর নিজের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে নিল। আয়ানের বক্ষের সাথে ইশরার পিঠ সেপ্টে আছে। পেছনে ফিরলো না ইশরা। দৃঢ় বাঁধনে বেষ্টিত করে নিল জানারার গ্ৰিল। সে চাইছে না, এতো রাতে তুচ্ছ একটা কারণে কারো নিদ্রা ভঙ্গ হোক। দাঁতে দাঁত চেপে বলল.

— “আয়ান; এখান থেকে যা.!

কদাচিৎ সরে এলো আয়ান। নমনীয় সুরে বলল.

— “ইশরা আমি তোর ভালোর..

কথা শেষ করতে পারলো না আয়ান। ইশরার রক্তিম বর্ণ ধারণ করা লোচণের দিকে তাকিয়ে থমকের গেল। অন্ধকারের মাঝেও লাল নয়নজোড়া জ্বলজ্বল করছে। ভয়ংকর দৃষ্টি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল সে। তখনই মুখ খুলল ইশরা.

— “আমি তোকে একবারও বলেছি আমার ভালো করতে? তাহলে?”

বচন হারিয়ে ফেললো আয়ান। পায়ের গতি বাড়িয়ে বেলকেনিতে চলে গেল ইশরা। বিকট শব্দে দরজা বন্ধ করে দিল। সেই আওয়াজে ভাবনার ছেদ ঘটল আয়ানের। রুম প্রস্থান করে ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো সে।

ডেক্সিতে দুকাপ সমপরিমাণ পানি দিয়ে টিভি দেখতে বসেছে আয়ান। পরিমাণ মতো চিনি আর চা পাতা দিয়েছে। রং টা তীব্র হলে নিয়ে আসবে। একের পর এক চ্যানেল পাল্টাছে সে‌। গভীর রাত হওয়াতে তেমন কিছু নেই। মৃদু সুবাস এসে ধরা দিলো আয়ানের কানের ডগায়। তড়িৎ গতিতে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল সে। ডেক্সি থেকে কাপে চা ঢেলে নিল। নত হয়ে ডেক্সিটা বেসিনে রেখে পানিতে পূর্ণ করে ভিজিয়ে রাখল।
বাইরে থেকে ক্রমাগত কুকুর ডেকে চলেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল বাইরে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় নিচে কয়েকটা কুকুর দেখা যাচ্ছে। রিহু বলতো, কুকুরেরা নাকি রাতে জ্বীন, পরী, ভূত দেখলে ডাকে। কিন্তু কিছুই দৃষ্টি গোচরে এলো না তাঁর। নিজের কান্ডে হাসলো আয়ান। সাধারণ মানুষ কিভাবে এইসব দেখবে।
দৃষ্টি সরিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাবে তখনই কেউ কাপ নিয়ে গেল হাত থেকে। সেদিকে অবলোকন করলো আয়ান। তার বাবা আজাদ আহম্মেদ এসেছে। আয়ানের পাশে বসে আরাম করে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে আয়ানের পানে তাকিয়ে বললেন.

— “বাহহ, খুব ভালো চা বানাস তো তুই। আরেক কাপ বানা।”

বাবার এহেন কাজে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল আয়ান। ধ্যান ভাঙতেই আজাদ আহম্মেদের থেকে চায়ের কাপ নিতে উদ্ধেগ হয়ে উঠলো। রিনরিনে কন্ঠে বলল.

— “বাবা তোমার সুগার আছে। এতে চিনি দেওয়া। আমি তোমাকে চা বানিয়ে দিচ্ছি।”

আয়ানের কথা কর্ণপাত করলেন না আজাদ আহম্মেদ। পুনরায় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন.

— “তোর মায়ের জন্য গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে মিষ্টি খেতে আসি প্রতিদিন। আজ তোর মা ফ্রিজ লক করে রেখেছে।”

নয়ন যুগল ললাটে উঠে গেল আয়ানের। অবিরাম ঘনঘন পলক ফেলে বলল.– “তারমানে প্রতিদিনের মিষ্টি চোর তুমি বাবা!”

— “মুখ সামলে কথা বল! এখানে চোরের কি আছে? আমার টাকা দিয়ে মিষ্টি কেনা হয়, আর আমি খাবো না। ইডিয়েট! একবার বুড়ো হ, তখন বুঝবি নোনতা জীবন কতোটা কষ্টের!”

অসন্তুষ্ট হলো আয়ান। করুন চোখে বাবার দিকে তাকালো। ইশরা কথায় কথায় ইডিয়েট বলে, বাড়িতে আসার পরে এখন তার বাবাও ইডিয়েট বলে। অধর চেপে ডেক্সিতে থাকা বাকি চা-টুকু কাপে ঢেলে নিল।

________________
আজকের সকালটা একদম অন্যরকম। চারদিকে রোদের রশ্মি ঝলমল করছে। যদিও বর্ষাকালের মাঝামাঝি সময়। তবুও আকাশ পরিষ্কার। সকালের সূচনা হয়েছে অনেকক্ষন আগে। পেরিয়ে গেছে তিন থেকে চার ঘন্টার বেশি। রোদের সোনালী আভা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিস্তব্ধ বাড়িটা এখন সমাচরে প্রান ফিরে পেয়েছে। হাই তুলতে তুলতে রুমের দিকে এগিয়ে গেল আয়ান। হালকা ভেড়ানো প্রবেশদ্বার খুলে সংকোচ নিয়ে প্রবেশ করলো আয়ান। বেডের মাঝ বরাবার ঘুমিয়ে আছে ইশরা। বেডের পুরোটা অংশ ইশরার দখলে। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অতল নিদ্রায় তলিয়ে আছে। কোলবালিশ টা পিঠের নিচে। পড়নে আয়ানের পোষাক।

অনুসূচনায় পূর্ণ হলো আয়ান। বিয়ে হয়েছে আজ কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। অথচ একটা জামা কিনে দেওয়া কথা মনে নেই। যদি ইশরার জায়গায় দিবা থাকতো। তাহলে এমন করতে পারত সে। আজ ফেরার পথে ইশরার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে আসবে।

মাথার কোণে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে চারদিকে কিছু একটা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে গেল আয়ান। কাবার্ড থেকে একটা একটা মোটা দড়ি বের করে ইশরাকে বেডের প্রতিটি কোণের সাথে বেঁধে নিলো। কালকে রাতে দেরী করে নিদ্রা আর গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন থাকার কারণে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলো না সে।

ইশরাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেখে বিরাগী হলো সে। আয়ান সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছি আর ইশরা ঘুমিয়েছে। মানতে পারলো না আয়ান। পা টিপে টিপে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আয়ান। এক বালতি পানি এনে ইশরার উপর ছুঁড়ে ফেলল। হন্তদন্ত হয়ে উঠে পড়লো ইশরা। হাত পা বাঁধা থাকায় কোনোরুপ লাভ হলো না। ভেজা চুপচুপ হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো। বিষয়টা বোধগম্য হতে বেশ বেগ পেতে হলো ইশরাকে। রক্তচক্ষু করে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তাকালো আয়ানের দিকে। আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বুকে হাত গুজে বলল.

— “সারাদিন নিজেকে আমার বউ বলে দাবী করিস! বউয়ের কোন দায়িত্ব-টা পালন করেছিস তুই। রান্না করতে জানিস না, ঘুম থেকে দেরী করে উঠিস, পড়াশোনা চালে উঠিয়েছিস। পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। রেডি হয়ে নিচে আয়। ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

হেলেদুলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আয়ান। ইশরা ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে তাকালো। আঁতকে উঠলো সে। ওড়না বিহীন ভেজা জামা কাপড় চিপকে আছে শরীরের সাথে। ওয়াশরুম থেকে আয়ান বের হলে আবার তাকে এই রুপে দেখবে। ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো সে। কি বেক্কল। সময় দিয়ে গেছে কিন্তু বাঁধন খুলে দিয়ে যায়নি।

— “ভাবী; আজকে কি ঘুম থেকে উঠবে ন..

ইশরা অবস্থা দেখে শব্দগুলো হারিয়ে গেল তনয়ার। মুখটা স্বল্প ফাঁক হয়ে আছে তার। ভেজা বেড শিট আর দড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল সে। ইশরার কথা বাস্তবে ফিরলো সে!

— “তনু দড়িটা খুলে দাও তো। তোমার ভাইয়ের মাথায় পোকা ঢুকেছে।”

হেঁসে উঠলো তনয়া। তার ভাই দিনকে দিন সত্যি পাগল হয়ে উঠেছে। আবার মনে কোণে অন্য প্রশ্ন উঁকি। দিচ্ছে, প্রশ্ন টা নিজের ভেতরে রেখে দিলো।
সময় অবিলম্ব না করে ইশরার বাঁধন খুলে দিল তনয়া। শান্তির শ্বাস নিলো ইশরা। বিয়ের দিনের ব্যবহৃত জামা নিয়ে তনয়ার ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। এই আয়ানকে একটা শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই তার।

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)