অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-০৯

0
650

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓[২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০৯

ইশরার বক্ষ-মাঝারে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আয়ান। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। সাথে যোগ হয়েছে নিত্তদিনের প্রকট উত্তাপ। সূর্যের তীর্যক রশ্মিতে মাঝে মাঝে নয়ন যুগল কুঁচকে আসছে ইশরার। হাতের পিঠ দিয়ে কিছুক্ষণ রশ্মি আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে গেল ইশরা। ধীরে ধীরে অগ্নি শিখার ন্যায় তপ্ত হয়ে এলো হাতটা। নিস্তেজ হয়ে গড়িয়ে পড়লো। পুনরায় নয়নের কোণে আলোরা ধরা দিলো। কপাল কুঁচকে আধো আধো চোখ মেলে চারদিক অবলোকন করলো ইশরা। মস্তিষ্ক সচল হতে বেশ সময় নিলো সে। হাতের করতলে ভর করে উঠে বসার চেষ্টা করলো। বুকের উপর অতিশয় ভাড়ে নুইয়ে পড়লো সে। নড়েচড়ে উঠলো আয়ান। ইশরাকে পূর্বের চেয়ে পাকা পোক্ত বাঁধনে বেষ্টিত করে নিদ্রায় তলিয়ে গেল। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ইশরা। নড়াচড়া নূন্যতম শক্তিটুকু অবকাশ নেই তার। কাঁপা কাঁপা হাত জোড়া রাখল আয়ানের চুলের ভাজে। কোল বালিশ হিসেবে তাকে ব্যবহার করছে এই মানবটি।

সূর্যের দ্বিতীয় প্রহরে আয়ানের সুন্দর বাড়িয়ে তুলেছে কয়েকশ’ত গুন। শার্ট বিহীন ফর্সা শরীর-টা নজর কেড়ে নিলো ইশরার। পিঠের মাঝে সূক্ষ নীলাভ তিলটা জ্বলজ্বল করছে মুক্তার মতো। অঢেল ঘুমে মুখটা তেলাক্ত লালচে হয়ে গেছে। বুক পিঠ অসংখ্য আঘাতে জর্জরিত। খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো নড়াচড়ার ফলে বক্ষে আঘাত করে চলেছে তার। আজ নতুন ভাবে অন্য সকালে অন্য কারো রুপে বিমোহিত হলো ইশরা। ভাবতেই শরীরে লোমে শিতল হাওয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে, এই অপরুপ সুন্দর ছেলেটি তার অর্ধাঙ্গ।

ক্ষত গুলোতে হাত বুলালো সে। ঘুম উবে গেল আয়ানের। মাথা তুলে তাকালো ইশরার দিকে। এতোক্ষণ ইশরা গভীর ভাবে তাকিয়ে ছিল আয়ানের দিকে। ফলস্রুতিস্বরুপ নয়নে নয়ন আঁটকে চোখাচোখি হয়ে গেল দু’জনার। দ্রুত গতিতে হার্ট বিট বইতে শুরু করলো। নয়নজোড়া গ্ৰথণ করে কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে মেলে তাকালো আয়ান। না দৃষ্টিগোচর ভুল নয় তার। রাতে যেই রমনী তার বুকে মাথা গুঁজে ঘুমিয়েছি বর্তমান মুহুর্তে সেই রমনীর বুকে মাথা গুঁজে সে ঘুমিয়েছে। চুল পরিমান নড়ার প্রয়োজন বোধ করলো না সে। হাত রাখল বেডের দুপাশে। সামান্য উপরে এগিয়ে দূরত্ব ঘুচিয়ে নিল। ফুঁ-তে সামনের অগোছালো চুলগুলো সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালালো কিছুক্ষণ। চুলগুলো উষ্ণ হাওয়ায় উড়লেও পুনরায় মুখের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে বেড শিটের কিছুটা অংশ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ইশরার। আঁখি যুগল বেষ্টিত হয়ে গেছে অজানা, অচেনা আবেশে।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে চুলগুলো শ্রবণপথের পেছনে গুঁজে দিলো আয়ান। ভেতরে ভেতরে নিমজ্জিত হয়ে গেছে সে। বিরবির করে বলল.– “তুই দিনদিন এতো সুন্দর হয়ে যাচ্ছিস কিভাবে ইশু। মাথা খারাপ হয়ে যায় তোর চোখ ধাঁধানো রুপে।”

সময় নিয়ে অধর ছুয়ে দিল ইশরার কুঁচকে যাওয়া ললাটে। এক ছুটে সরে এলো আয়ান। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষত গুলোতে হাত বুলালো সে। নিজেকে শূন্য অনুভব করে উঠে বসলো ইশরা। আমতা আমতা করে বলল..

— “আয়ান তোর শরীরে ঐ ক্ষতগুলো কিসের। ”

চট করে ইশরার দিকে তাকালো আয়ান। শার্টের দিকে ইশারা করে বলল..

— “গতরাতে কুকুরের মতো আমার বুক পিঠ আঁচড়ে শেষ করে ফেলেছিস। সেগুলো ভুলে গেছিস। আমার শখের শার্টটা ছিঁড়ে ফেলেছিস। নতুন শার্ট কিনে দিবি.

জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে ইশরা। ডুবে গেল পুরোনো অতীতে। নতুন সকালে অন্য অনুভূতিতে ভুলে গিয়েছিলো পুরোনো অতীতটাকে। তার ভাবনার ছেদ ঘটল আয়ানের কথায়।

— “ওভাবে বসে না থেকে উঠ। দুপুর দুটো ছাড়িয়ে গেছে।”

মাথায় বাজ পড়ল ইশরার। মাথা ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে দিতেই চমকে উঠলো। দুইটা বত্রিশ বাজে। একটু পর বিকাল হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ ইতোহস্ত বোধ করে বলল..

— “আয়ান, বাবা মাকে দেখি না কতোদিন হয়েছে! আমি কিছুদিনের জন্য বাড়িতে যেতে চাই!”

— “আজ নয় কালকে যাস?আমি গিয়ে দিয়ে আসবো আর যখন মন খারাপ হবে আমাকে ফোন করে জানাবি, আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”

মাথা নাড়িয়ে চলে গেল আয়ান। ঘনঘন পলক ফেলে সেদিকে তাকিয়ে রইল ইশরা। হঠাৎ আয়ানের এমন বিহেবিয়ার মানে বুঝতে সক্ষম হলো না সে। তবে মনের কোণে অদ্ভুত দোল খেয়ে গেল তার।
______________
কেটে গেছে বেশ কয়েকটি দিন। অতিবাহিত হয়েছে অনেকটা সময়। একজোড়া ভালোবাসার মানুষ বিছিন্ন হয়ে আছে দুজনার থেকে। তবে প্রতিনিয়ত দুজন দুজনকে মিস্ করে চলেছে।‌ গভীর রাত জেগে কথা হয় তাদের। কিন্তু মিস্ করি বলা হয়ে উঠে না।

গ্লাসের এপাশ থেকে ওপাশ ইশরা- আয়ান হেঁসে হেঁসে কথা বলতে ব্যস্ত। কথা বলার সময় পেরিয়ে গেছে চুয়াল্লিশ মিনিট আঠারো সেকেন্ড। পুনরায় ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলছে। আয়ান অফিসের ফাইল চেক করছে আর ইশরার সাথে কথা বলছে। বেশ কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো, সে একাই অনুব্রতর কথা বলে চলেছে। ইশরা ফোনের ওপাশ থেকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকালো আয়ান‌। বলল.

— “এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?”

“কিছু না” সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো ইশরা। তীব্রতর কিছু একটা অনুভব করলো আয়ান। ফট করে প্রশ্ন ছুঁড়ল.– “মন খারাপ ইশুপাখি?”

নত কন্ঠে সায় দিলো ইশরা। সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করলো ফাইলের ভাঁজে। পরের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলল.– মিস্ করছিস আমাকে?
— “না!”

একরোখা উত্তর-টায় বেশ ঘাবড়ে গেল আয়ান। নয়ন যুগল স্ক্রিনে বন্দী হয়ে গেল। ইশরা মিথ্যা কথন ধরা পড়ে গেল। গালে হাত রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল..

— “যতো জোরে চিৎকার করিস না কেন? সত্যি টা মিথ্যা হয়ে যাবে না। তুই আমাকে মিস্ করছিলি এটাই ট্টুথ। তৈরি হয়ে থাকিস, ফেরার পথে তোকে নিয়ে একসাথে বাড়িতে ফির..

এখানে থেমে গেল আয়ান। বচন গুলোর মাঝে অদৃশ্য পাঁচিল তৈরি হলো। নয়ন যুগল বন্দী হলো অন্যকিছু মাঝে। কেটে দিলো ফোন। আয়ানের মন বুঝতে ব্যর্থ হলো ইশরা। তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করল। তৎক্ষণাৎ অডিও কল এসে হাজির হলো। দ্বি-মুহুর্ত অতিক্রম হওয়ার আগে রিসিভ করে নিলো সে। পরক্ষণেই তীব্র লজ্জায় নুইয়ে গেল সে। সূচালো কন্ঠ ভেসে এলো ..
— “ফোন-টার উপরে ঝুঁকে না থেকে সর। আর নেক্সট টাইম থেকে ছোট গলার জামা পড়বি। ”

হাত পা শিথিল হয়ে উঠলো ইশরার। জবার দিলো না। নিজের দিকে তাকাতেই তড়িৎ খেয়ে গেল শরীরে। দ্বিতীয়বার একই ভুল। ইশরার লজ্জাজনক অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরে ওপাশ থেকে শব্দহীন হাঁসলো আয়ান। — “আর লজ্জা পেতে হবে না, আমিই তো?”
মিনমিনিয়ে প্রতিউত্তর দিলো..
— “রাখছি।”
ফোন কেটে পরমুহূর্তেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো সে।
________________
শপিং মলের ভেতরে প্রতিটা জিনিস সূক্ষ্মভাবে পরিক্ষা করছে শেফা। শেফার পায়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলেছে ইশরা। ফোনটা কানে গুঁজে আয়ানের সাথে কথা বলে চলেছে। ইশরার গাঁ ছাড়া ভাব দেখে এগিয়ে এলো শেফা। বাহু ঝাঁকিয়ে বলল..

— “ইশু বাড়ীতে গিয়ে প্রেমালাপ করিস এখন ফোন রাখ। আমি ওর বাথর্ডে-তে কি গিফ্ট করবো সেটা খুঁজে দে। কিছুদিন পর মেঘেরও তো বার্থডে ওকে কি দিবি।”

ইশরা আড়চোখে শেফার দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলায় মন দিলো। বিয়ের ব্যাপার-টা তারা দুই পরিবার ছাড়া কেউ জানে না। আয়ান বিষয়টা সবার থেকে গোপন রেখেছে।

ইশরা চোখ আঁটকে গেল ব্ল্যাক কার্লার একটা শার্টের দিকে। চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে। কিছু একটা মনে করে এগিয়ে গেল সেদিকে। মনের কোণে উঁকি দিল সেদিনের ঘটনাটা। আয়ানকে এই শার্টটা পড়লে কেমন লাগবে, দেখার অদম্য ইচ্ছাটা ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হলো সে। নিয়ে নিল শার্টটা। এগিয়ে এলো শেফা। প্যাকেট-টা হাতে নিয়ে উচ্ছাসের সুরে বলল.

— “দোস্ত শার্ট-টা জোশ! আ’ম সিউর ওর পছন্দ হবেই হবে।”

— “এটা আয়ানের জন্য কিনেছি।”

মুখশ্রীর ভঙ্গিমা পাল্টে গেল শেফার। লিফ্টে উঠে পড়লো। প্রবেশদ্বার বন্ধ হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে কেউ একজন পা দিয়ে থামিয়ে দিল। এসে দাঁড়ালো ভেতরে। সেকেন্ড দুই সময় লাগলো না সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে চিনতে। ব্ল্যাক কার্লার সানগ্লাস দিয়ে অর্ধমুখশ্রী ঢাকা। অন্ধকার গ্লাসের ফোকট দিয়ে নয়নজোড়া বন্দী হাতের মুঠো ফোনের মাঝে। উল্টো ঘুড়ে পিঠে দেখিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ইশরা। মানবটি ফিরে তাকালো শেফার কথায়।

— “ভাইয়া আপনি এখানে! তারমানে ইশু তখন আপনাকে ফোন করে আসতে বলেছিলো। ঠিক আছে, আপনারা কথা বলুন আমি আসছি.. (ইশরাকে উদ্দেশ্য করে)
আমার গিফ্ট কেনা হয়ে গেলে তোকে কল করবো।”

ইতিমধ্যে লিফ্ট এসে থেমেছে সিক্স ফ্লোরোরে। বাটন চেপে নেমে গেল শেফা। জনশূন্য লিফ্টে একা হয়ে গেল ইশরা। একদম কর্ণার ঘেঁষে দাঁড়ালো সে। তার দু-ইঞ্চি পেছনে এসে দাঁড়ালো মেঘ। পেছনে থেকে বলল.

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)