অন্যরকম ভালোবাসা ২ পর্ব-০৮

0
638

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০৮

— “কি চাই আমার কাছে, আদর দেখাতে এসেছিস। এটাই তো তুই চেয়েছিলি, যাতে আমি কষ্ট পাই, দুঃখ পাই। ভেঙ্গে পড়ি। তাহলে কেন আদিক্ষেতা দেখাতে এসেছিলো।”

তীব্র আওয়াজে কথাগুলো বলে দম ছাড়লো ইশরা। হাত জোড়া তখন আয়ানের বক্ষের মাঝে বন্দী। বক্ষের দু’পাশে হাত রেখে শার্টের কিছুটা অংশ ধরে টান দিলো। সেকেন্ড পেরুবার আগেই বোতাম গুলো টুংটাং শব্দে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়লো। এতে শান্ত হলো না ইশরা। আগের থেকে অনেকটা হিংস্র হয়ে উঠলো। পরক্ষণেই আয়ানের শরীর ক্ষত বিক্ষত হলো নখের আঁচড়ে। ইশরা আয়ানের উপরে চড়ে বসে পাগলামি গুলো করছে। দুহাতের তাকে সরানোর মতো শক্তির অবকাশ নেই আয়ানের কাছে।
বাইরে তখনও অবিরাম ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির ধারায় ইতিমধ্যে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে আয়ান। বেশ পানি জমেছে সেই বেলকেনিতে। অসহ্যনীয় আঘাতে জর্জরিত হয়ে উঠলো আয়ান। অতিশয় ক্ষোভে ফেটে পড়লো সে। শরীরের অবশিষ্ট প্রতিপত্তি টুকু দিয়ে ইশরাকে ছাড়িয়ে নিল। হাত দুই দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো ইশরা। আয়ানের প্রতিঘাতে ছেদ ঘটল তার। এতোক্ষণ নিজের হুসে ছিল না।

বেলকেনিতে জমা অম্বু ধারাতে ছুপ ছুপ শব্দে হেঁটে রুমে ঢুকে গেল। সেদিকে ক্ষীণ দৃষ্টি দিয়ে গলায় হাত রাখলো আয়ান। জায়গাটা প্রচন্ড জ্বলছে তার। তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করলো আয়ান। আজ ইশরা এমন বিহেবিয়ার আশা করেনি সে। ভেবেছিলো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে।

রুমের অভ্যন্তরীণে প্রবেশ করতে বুঝতে সক্ষম হলো ইশরা বেডের মাঝ বরাবর বসে আছে। শব্দবিহীন এগিয়ে গেল সেদিকে। দুজন কার মাঝখানে বিরাজমান দূরত্ব ঘুচিয়ে গাঁ ঘেঁষে বসলো আয়ান। ইশরার মেলে রাখা হাতের উপরে হাত রেখে কিছুটা বিচলিত সুরে বলল.

— “ইশরা, এই ইশু।”

হৃদ মাঝারে ছুঁয়ে গেল প্রেমময়ী হাওয়া। এতোক্ষণ বেলকেনিতে বসে ঠান্ডা হাওয়ায় শরীরটা এখনো মৃদু কাঁপছে। কিন্তু আয়ানের শীতল কন্ঠে সেই হাওয়া ছড়িয়ে পড়লো সমস্ত শরীরে জুড়ে। অজানা আবেশে গ্ৰথণ হয়ে এলো রক্তিম বর্ণের নয়ন যুগল। কদাচিৎ ফাঁক হয়ে গেল ওষ্ঠ যুগল।

অন্ধকার ঘরে ইশরার অনুভূতি গুলো বুঝতে সক্ষম হলো না আয়ান। অনুসূচনায় পূর্ণ হয়ে উঠলো সে। ধীরে ধীরে ইশরার মনে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে না তো সে। পুনরায় মধুতে রঞ্জিত ডাক দিলো আয়ান.

— “ইশুপাখি; তোমার কি হয়েছে বলো আমাকে। একদম কান্না করবে না। তোমাকে কান্নারত অবস্থায় দেখলে আমি..

হারিয়ে গেল পরের ধ্বনি গুলো। ইশরা প্রতি এই কয় দিনে অন্যরকম অনুভূতি জন্ম নিয়েছিলো তার। সেগুলো স্বযত্নে মনের করে রেখে দিল। সে না বলা অনুভূতি গুলো সাধারণ বাক্য বোঝানো সম্ভব নয়। মনের গহিনে কান পেতে অনুভব করা যায়।

পরের কথাগুলো অস্পষ্ট স্বরে বলল.

— “ইশরা যা! জামা কাপড় গুলো পাল্টে নে.! এমন ভেজা অবস্থায় থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

সাথে সাথে ঘর কাঁপিয়ে কেশে উঠলো ইশরা। যেন এই সময়টার অপেক্ষা করছিলো। সামান্য কিছুটা সময়ের ব্যবধানে অনুভূতিময় অতলে হারিয়ে গেছিলো সে। তুমি বলে সম্মোধন করেছিলো, ইশুপাখি বলে নিজের প্রাণ পাখির সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলো আয়ান। পরের কথাগুলো শ্রবণপথের কাছে যেতেই ক্ষেপে গেল সে। আয়ানের এগিয়ে দেওয়া প্যাকেট-গুলো ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেললো দূরে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল.

— “আমার ঠান্ডা লাগুক, জ্বর আসুক। টাইফয়েড হোক, মরে যাই তাতে তোর কি? তুই নিজের জীবনটা গুছিয়ে আমার জীবনটা কেন অগোছালো করে দিলি! কেন?”

কথন গুলোর মাঝে শেষের উক্তিটি করুন শোনালো আয়ানের কাছে। প্যাকেটগুলো মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিলো। ডেসিং টেবিল হাতরালো। কিন্তু মিললো না সেই কাঙ্খিত জিনিস টা। অবশেষে আয়ানের পকেট চেক করে দেখা মিললো সেটার। লাইটার জ্বালিয়ে ছুঁড়ে ফেললো প্যাকেটের উপর।

এতোক্ষণ ইশরাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারলেও এবার পারল না। লাইটার সরিয়ে দিল। এখনো আগুন প্যাকেট স্পর্শ করতে পারে নি। তুমুল শব্দে চড় বসিয়ে দিলো ইশরার গালে। গালে হাত রেখে ফুঁপিয়ে উঠলো সে। ঠোঁট উল্টে জবাব দিলো.

— “আয়ান, তুই আমাকে মারলি। থাকবো না আমি তোর বাড়িতে।”

এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে হাত ধরে থামিয়ে দিল আয়ান। মুখশ্রী ভঙ্গিমা কিছুটা ভয়ংকর করে বলল.

— “এখন যদি ওয়াশরুমে গিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে না আসিস। আরো দুটো চড় পড়বে তোর গালে। যা..

প্যাকেটের ভেতর থেকে চুড়িদার বের করে ছুঁড়ে ফেললো ইশরার মুখশ্রীর উপর। গড়িয়ে নিচে পড়ছে চাইলে ধরে নিল ইশরা। অদৃশ্য ইশারায় চেঞ্জ করতে বললো। মুখ ফুলিয়ে সেদিকে পা বাড়ালো ইশরা। পেছন থেকে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আয়ান। আজ থেকে এই মেয়েটাকে শাসনে রাখতে হবে।

মোমের হলদেটে আলোয় আলোকিত হয়ে আছে প্রতিটি কোণ। একটা নয় দুটো নয়, চারটে রং বেরঙের মোম জ্বলছে। তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে পাশের দেয়ালে। ওয়াশরুমের দরজার ফোকট দিয়ে মাথা হেলিয়ে দিতেই প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো দেয়ালে। একপা একপা করে বেরিয়ে এলো ইশরা। আয়ানের সোজাসুজি দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে নিল।
সোফার উপর থেকে উঠে এগিয়ে এলো আয়ান। ইশরাকে টেনে বেডে বসিয়ে দিল। থরথর করে কাঁপছে সে। চুলের পানিতে জামার পেছনের অংশ ভিজে আছে। কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখা টাওয়াল টা নিয়ে স্বযত্নে চুলগুলো মুছিয়ে দিতে লাগলো। টাওয়ালে সম্পূর্ণ চুলগুলো পেঁচিয়ে কাঁধে হেলিয়ে দিলো। বেডের কোণে ভাঁজ করা রাখা ব্লাঙ্কেট এনে মেলে জড়িয়ে দিলো ইশরার সর্বাঙ্গে। বিড়াল ছানার মতো নেতিয়ে গেলে ব্লাঙ্কেটের মধ্যে। হালকা ঝুঁকে প্রশ্ন ছুঁড়ল আয়ান.
— “বেশি শীত করছে।”
এতোক্ষণ পর মাথা তুলে আয়ানকে অবলোকন করলো ইশরা। ভেজা জামা কাপড় পাল্টে নিয়েছে। পুনরায় মাথা নিচু করে সায় দিয়ে জানালো, — “হ্যাঁ।”

টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেট এনে ইশরার পাশে বসলো। খাবার মেখে এগিয়ে দিলো ইশরার দিকে। মুখ সরিয়ে ব্লাঙ্কেটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিল সে। ভেতর থেকে মৃদু শব্দে বলল.– “খাবো না।”

— “গাল গুলো লাল করতে না চাইলে খেয়ে নে!”

লোকমা মুখে তুলে নিলো ইশরা। চিবুতে চিবুতে বলল.

— “তুই আজকে সিনিয়র গিরি দেখাচ্ছিস কেন? আমরা তো সেইম এইজ।”
খাবার শেষ করার আগ পর্যন্ত আয়ান মুখ ফুটে একটা শব্দও উচ্চারণ করে নি। শেষের খাবার টুকু মুখে পুড়ে বলল.

— “কে বলেছে, তুই আমার মতো। আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট তুই। কিছু সমস্যার কারণে দুই বছর পড়াশোনা করতে পারি নি। তাই একসাথে পড়ছি।
আচ্ছা বাড়িতে ফিরে পড়তে বসেছিলি?”

ইশরার নিশব্দতায় আয়ানের প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছে। গ্লাসের পানি টুকু এগিয়ে দিল সে। ইশরা মুখে দিয়েই বের করে নিলো। কৌতূহল চোখে তাকালো আয়ানের দিকে। আয়ান পানি গরম করে এনেছে। পানি ঢেলে হাত পরিষ্কার করে এঁটো প্লেট সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো আয়ান।
.
.
— “ওভাবে বসে থাকবি সারারাত না-কি একটু ঘুমাবি?”

চোখ বন্ধ করে কথাটা বলল আয়ান। রাত তখন তিনটা ছাড়িয়েছে। আলোক শূন্যতায় গিজগিজ করলে রুমের অভ্যন্তরীণ। মোমবাতি গুলো নিভে গেছে কিছু সময় পূর্বে। সোফায় বসে ক্রমাগত কেঁপে চলেছে ইশরা। একরোখা উত্তর দিলো.

— “এতোক্ষণ তো চেষ্টা করলাম, ঘুম তো এলো না।”

আবার নিঃস্তব্ধায় ঘিরে গেল চারপাশ। বেশ কয়েকবার শুতে বললো আয়ান। কিন্তু এলো না ইশরা। এভাবে প্রতিনিয়ত ডাকার ফলে কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলো আয়ান। এক লাফে উঠে ইশরাকে ব্লাঙ্কেটসহ কোলে তুলে নিলো। বেডের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো। হাতের দৃঢ় বাঁধনে বেষ্টিত করে নিল ইশরাকে। নড়াচড়া শুরু হয়ে গেল তার। চোখ জোড়া বন্ধ করে অস্বাভাবিক কন্ঠে বলল.

— “একবার নড়াচড়া করলে ওয়াশরুমে আটকে রাখবো তোকে ডাফার।”

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)