অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক পর্ব :- ০৭

0
605

গল্প :- অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
পর্ব :- ০৭
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: এরপর মিরাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
রাতের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে দেখি, মিরা আগে থেকেই বিছানা দখল করে আছে। তখন আমার মাথাটা খুব গরম হয়ে গেলো। কারণ মিরা খাটের উপর এমনভাবে শুয়ে আছে যে আমার শুয়ার মতো কোন জায়গাই নাই। তখন আমি রেগে খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম,মিরাকে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য। কিন্তু মিরার কাছে যেতেই আমার সব রাগ পানি পানি হয়ে গেলো।

কি বলবো আমি।
সে মুহুর্তে ওর ঘুমন্ত মুখটা যে কতোটা মায়াবী লাগছিলো যে। সেটা লিখে বর্ননা করা, বা বলে বুঝানো সম্ভব না। ঘুমের মধ্যে এই মেয়েটাকে কতোটা নিশ্পাপ,ও শান্ত মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ওল্টো। খুবই চরম নিষ্ঠুর একটা মেয়ে।

এসেছিলাম মিরাকে ওঠিয়ে আমি খাটে ঘুমাবো। কিন্তু এখন আর সেটা করতে পারছি না। ভাগ্যিস আগেই ঘুমানো নিয়ে আশংকা করে অন্য একটা ঘর পরিষ্কার করিয়ে রেখেছিলাম। তাই এখন ঐ ঘরটাতে গিয়েই ঘুমাবো। তারপর যেই আমি গুরে দাঁড়িয়েছি। এমনি পিছন থেকে মিরা ডাক দিলো।

—কোথায় যাচ্ছো তুমি?

কি হলো এটা। হঠাৎ আমি পিছন ফিরে দেখি মিরা বসে আছে। আমি বললাম।

–তুমি ঘুমাওনি?

—হ্যাঁ ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসার পরই ভেঙ্গে গেলো।

–তাহলে তুমি ঐ ভাবে শুয়ে ছিলে কেন??

—আগে তুমি আমাকে এটা বলো তুমি এখন কোথায় যাচ্ছিলে?

–কোথায় আবার? ঘুমাতে যাচ্ছিলাম।

—কোথায় ঘুমোতে যাচ্ছিলে?

–আরে এতো প্রশ্ন কেন করছো! তুমি জেনে কি করবে।

–না।
আমি ঐটা বলিনি। তুমিতো আমাকে ডাকতে পারতে। তাহলে আমি তোমাকে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিতাম। আর যদি ডাকতে নাই চাও। তাহলে আমার পাশেই শুয়ে পরতে। এই রাতে তুমি বাইরে গিয়ে ঘুমালে। যদি খালামনি আবার দেখে ফেলে তখন কি হবে?

মিরা কি সব বলছে!
সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মিরা আমাকে কখনো এমন কিছু বলবে আমি ভাবতেও পারিনি।
খুব অবাক লাগছে। তারপর আবার এটা মনে হলো যে, মিরা তো সব কিছু নিজের জন্যই করছে হয়তো।
কারণ এখন যদি আমি বাইরে চলে যায়,আর খালামনি যদি দেখে ফেলে দোষ তো মিরার ঘারেই পরবে। কতোটা স্বার্থপর এই মেয়েটা!?

তখন আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,,

–আচ্ছা মিরা তুমিকি আমার সাথে মজা করছো.?
তুমি যে বলছো তোমাকে ঘুম থেকে উঠালে আমার জন্য শুয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। তাইতো…..

কিন্তু আমার যতোদূর মনে পরে বিয়ের পর থেকে তো তোমার জন্য আমাকে সোফায় নইতো বা ফ্লরে ঘুমাতে হয়েছে। তখন খুব ভলো ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছিলে আমার জন্য Right…..।

আর কি যেন রইলো..?

অহ্ আচ্ছা তোমার পাশে ঘুমিয়ে পরার কথা…!!
মনে পরে মিরা আমি যতোবার তোমার কাছাকাছি ছিলাম বা যাওয়ার চেষ্টা করেছি,ততোবারই চর-থাপ্পড় নয়তো গালাগালি শুনেছি।

যদিও আমি আমার অনিচ্ছাকৃত ভাবে তোমার কাছে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু একবারও তো তুমি আমার কথা শুনো নি। আমাকে বুঝার কোন চেষ্টাও করো নি, সারাক্ষণ নিজেই বলে যেতে। আর আজকে যদি তোমার পাশে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম আর আগামীকাল সকালে উঠে আমাকে যদি দেখতে আমি তোমার পাশে সুয়ে আছি…….
তাহলে তখন তুমি কি করতে….????

আচ্ছা বাদ দাও থাক আমি এমনিই ঠিক আছি। আমার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না। আর ভেবোনা খালামনি কিছু জানতে পারবে না। ঘুমাও শুভ রাত্রি।

কাথাগুলো বলেই আমি ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।
তবে আজকে মিরার চোখ-মুখ কেমন যেন লাগছিলো। দূর!!! এসব না ভেবে ঘুমিয়ে পড়া যাক। কালকে আবার ডলির বিয়ে নিয়ে ব্যাস্থ থাকতে হবে। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
.
.
সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গল মিরার ডাকে। আশ্চর্য মিরা এখানে.! তাও আবার আমার জন্য চা নিয়ে?। ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না। আমি আবাক হয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে আছি। তখন মিরা বললো।

—চা’টা খেয়ে নাও। তারপর রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসো। নাস্তা করে আবার তাড়াতাড়ি ডলিদের ওখানে যেতে হবে। সকালে ডলি ফোন করেছিলো।

আমি আবাক চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে বললাম।

–ডলি তোমাকে ফোন করেছিলো..? ও আবার তোমার নাম্বার কোথায় পেলো। তাছাড়া ডলি আমাকে ছেড়ে তোমায় ফোন করতে যাবে কেন…?

তখন মিরা একটা হাসি দিয়ে বললো।

—তুমি আসলে একটু বেশিই ভাবছো। ডলি তোমার ফোনে কল দিয়েছিলো, আর মনে নেই গতকাল রাতে তোমার ফোনটা ঘরে ফেলে এসেছিলে। এই নাও তোমার ফোন।

ওহ্ তো এই জন্য মিরা আমাকে ডাকতে এসেছিলো। আমি তো অন্য কিছু ভাবছিলাম।
যাক ভালোই হলো এক্ষুণি ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে গেলো। নয়তো আবার শুধু শুধু কষ্ট পেতে যাচ্ছিলাম। এরপর মিরার হাত থেকে চা’টা না নিয়ে বললাম।

–আমি এখন চা খাবো না। ধন্যবাদ।

—কিন্তু তুমিতো প্রতিদিন সকালেই চা পান করে থাকো।

–নাহ্……
আজকে ভালো লাগছে না। সরো! আমি একটু ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসি।

তারপর আমি ওয়াশরুমে চলে গেলা।
ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিচে নাস্তা করতে এসে দেখলাম যে, আজকে টেবিলে নাস্তা হিসেবে আছে বাঙ্গালি খাবার। আমার পছন্দের লুচি আলুর দমও আছে। এখানে আসার পরতো এই বিদেশি নাস্তা করতে করতে জিহ্বার বারোটা বেজে গেছে।

তখন আমি তাড়াতাড়ি আর দেরি না করে সোজা খাওয়া শুরু করলাম। সত্যি! স্বাদটা খুবই ভালো হয়েছে। তাই খেতে খেতে খালামনিকে বললাম।

–Thank You খালামনি….!
অনেকদিন পর এতো মজা করে আলুর দম আর লুচি খাচ্ছি।

তখন খালামনি একটা হাসি দিয়ে বললো.!!

—আমাকে কেন Thanks দিচ্ছিস?

তখন আমি মুখে খাবার রেখেই বললাম।

–কেন আবার।
তুমি আজকে আমাকে আমার পছন্দের জিনিস রান্না করে খাওয়াচ্ছো। আর আমি এই ছোট একটা ধন্যবাদ দেবো না।

তখন খালামনি যা বললো এ কথা শুনে আমার নাকে-মুখে কাশি উঠে গেলো। তখন পাশে বসে থাকা মিরা আমাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। তারপর পানিটা খেয়ে একটু শান্ত হলাম। আপনারা হয়তো বুঝে গেছেন যে, খালামনি কি বলেছে। তারপরও বলছি। খালামনি বললেন যে

—আরে লুচি আলুরদমতো তোর বউ বানিয়েছে! যা বলার তাকেই বল।

তখন আমি কিছুক্ষনের জন্য থেমে আবার খাওয়াতে মন দিলাম। সত্যিই মিরার রান্নার হাত অসাধারণ..!!
তাই আমি ধীরেসুস্থে খেয়ে যাচ্ছি। আর মিরা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মিরা হয়তো ভাবছে যে, খাওয়া শেষ আমি তাকে অন্তত একটা ধন্যবাদ দিবো। তাই সে অধীর আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

কিন্তু আমি খাবার শেষ করে সোজা ওপরে ঘরে চলে এলাম কিছু না বলেই…!!
মিরা হয়তো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। হয়তো সে মনে মনে বলছিলো,, কি হেংলা ছেলেরে বাবা। এতো তৃপ্তি করে খবার খেলো। অথচ যে হাত পুরিয়ে তার জন্য রান্না করলো, তাকে একটা নূন্যতম ধন্যবাদও দিলো না।
.
.
#কিছুক্ষণ_পর–
.
এখন আমি কোর্ট-প্যান্ট পরে তৈরি হচ্ছি বিয়ে বাড়িতে যাওয়র উদ্দেশ্য। আর মিরা গেছে ওয়াসরুমে গোসল করতে। বিছানাতে ঐদিনের কিনে আনা শাড়িটা রেখে গেছে। হয়তো আজকে এটাই পড়বে। আমি তৈরি হওয়ার পর ড্রেসিং টেবিলের উপর একটা চিরকুটের সাথে একটা গিফ্ট বক্স রেখে নিচে গিয়ে খালমনি আর মিরা জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

কিছুক্ষন নিচে বসে থাকার পর দেখলাম মিরা নামছে উপর থেকে। ওকে দেখে আর চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। অনেকদিন পর মিরাকে এতো যত্ন করে সাজতে দেখলাম। নীল শাড়ি, হাতে ম্যাচিং করা নীল চুড়ি, চোখে ঘন কাজল, ঠোঁটে হলাকা গোলাপি লিপস্টিক আর কপালে একটা নীল রংয়ের মাঝারি টিপ।
কানে দুলছে দুটি ঝুমকো। ঠিক যেন বাতাসে দুলছে জবার ফুল। আমি অপলাক দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কখন যে মিরা নিচে চলে এলো বুঝতেই পারলাম না।

মিরা যখন আমর মুখের সামনে হাতে তুরি দিলো।
তখন আমি বাস্তবে ফিরলাম। খুবই ইতস্তত লাগছে। মিরার চোখে যেন চোখ রাখতেই পারছি না।
তখন মিরা মুখে একটা মুচকি হাসি নিয়ে বললো।

—কি হলো….! কোথায় হারিয়ে গেছিলে। কখন থেকে ডাকছি।

তখন দেখি পাশ থেকে খালামনিও মিটিমিটি হাসছে। কি বেগতিক পরিস্থিতিতে পড়লাম রে বাবা। তখন আমি কিছুটা ব্যাস্থতা দেখিয়ে বললাম।

–চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

এরপর আমার গাড়িতে এসে বসে পড়লাম। মিরাও বসেছ আমার পাশে। আর খালামনি পিছনে। আমাদের সাথে আবার আলিশাও এসে যোগ দিলো। আলিশা খালামনির সাথেই বসেছে।

আমি গাড়ি ড্রাইভ করছি। আজকে যেন মিরার মুখ থেকে হাসি সরছেই না। হাসি যেন একেবারে ওর মুখে ছেপে দেয়া হয়েছে। আর কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে আড় চোঁখে তাকাচ্ছে। কয়েকবার আমার সাথে চোখাচোখিও হয়েছিলো। তখন ও আবার চোখের সাথে মুখও অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতো। খুব ডিস্ট্রাব হচ্ছি আমি আজকে মিরার আচরণে।

দেখতে দেখতে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছে গেলাম। রিসোর্টের সামনে এসে সবাইকে নামিয়ে দিলাম আমাকে গাড়িটা পার্ক করে আসতে হবে। তখন দেখি মিরা ওদের সাথে নেমে গিয়ে আবারও গাড়িতে চড়ে বসলো। তখন আমি অবাক হয়ে বললাম।

–কি হলো! আবার গাড়িতে উঠলে কেন?

মিরা একটা মন করা ময়াবী হাসি দিয়ে বললো।

—আমি তোমার সাথে একসাথে ভিতরে যাব তাই।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। গাড়িটা পার্কিং লর্ডে রেখে নামতে যাবো তখন মিরা বলে উঠলো।

—Thank You So Much.!?

–কেন?

তখন মিরা কানে হাত দিয়ে বললো।

—আমার পছন্দের দুলগুলো কিনে দেওয়ার জন্য।

তখন আমি বললাম।

–এখানে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নাই। তুমি আমার জন্য রান্না করেছিলে। আমি তার বিপরীতে এগুলো দিলাম। ব্যাস, সবকিছু শোধবোধ। এখানে আর কিছুই নেই।

তখন দেখলাম মিরার মুখটা কালো হয়ে গেছে। আর মিরা একেবারে চুপ মেরে গেলো। তখন আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললাম।

–কি হলো! এবার চলো যেতে হবে।

তখন মিরা আর কিছু না বলে আমার পিছুপিছু হেটে আসতে লাগলো। তারপর যেখানে বিয়ে হবে সেই হলরুমটাতে ডুকতেই পিছন থেকে মিরা এসে খপ করে আমার হাতটা জরিয়ে ধরে হাটতে লাগলো।

আরে আমি তো রীতিমতো অবাক…!
ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু করতে পারছিলাম না। তখন আশেপাশে একটু খেয়াল করে তাকিয়ে দেখি প্রায় কাপলরাই এভাবে । তাই আমি আর মিরাকে কিছু বললাম না। কিছুক্ষন পর মিরাকে ভাবী এসে তার সাথে নিয়ে যায়। আর আমি রাসেলের সাথে একটু গেস্টদের আপ্পান-টাপ্পায়ন করছিলাম আরকি। এরপর আমি একটা কোনায় চেয়ারে বসে ছিলাম। তখন আলিশা এসে আমার সামনের চেয়ারে বসে পড়লো।
আর বললো।

—কি ব্যাপার মিঃ নীলয়.! আপনি একা কেন? মিরা কোথায়?(আলিশা)

–ও আসলে একটু ভেতরে কনের কাছে আছে।

—ও আচ্ছা! তো বউ পাশে নেই বলেই এখনে মন খারাপ করে বসে আছেন?(আলিশা)

–আরে না। তেমন কিছু না। এমনিই বসে আছি।

—এমনি খালি খালি বসে আছেন কেনো?
আর কিছুই তো নেননি দেখছি। বিয়ে বাড়িতে এসে এভাবে বসে থাকা যায়!(আলিশা)

তখন আলিশা একটা বেয়ারাকে ডেকে নিয়ে আমার দিকে একটা ড্রিংকসের গ্লাস এগিয়ে দিলো। আমি সাথে সাথে না করে দিলাম। বলালম।

–আমি আসলে এসব খাইনা। ধন্যবাদ।

—আরে চিন্তা করবেন না। এগুলো ঐসব কিছু না। এগুলো শুধু সাধারন জুস। খেয়ে দেখুন।(আলিশা)

এরপর জুসটা খেতে খেতে আলিশার সাথে বেশ ভালোই একটা আড্ডা জমে গেলো। আলিশা আমার সাথে অনেকক্ষণ হেসে হেসেই কথা বলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সে চুপ মেরে গেলো। তখন আমি বললাম……………
.
.
চলবে…………………♥
.
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টতে দেখার অনুরোধ রইলো)