অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ১৩

0
4390

অবশেষে তুমি আমার
পর্বঃ১৩
তাসনিম রাইসা

– কিন্তু বন্ধু রাজ তো ছোট অধরাও ছোট!
– আরে বন্ধু বিয়েটা শুধু কাজি পড়িয়ে দিবে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সম্পূর্ণ আইনী প্রক্রিয়ার বিয়ে হবে। তুমি কি বলো?
– আচ্ছা তাহলে অধরার বার্থডেতে কাজি ডেকে গোপনে বিয়ে পড়িয়ে রাখবো।

– রাজ আর অধরার বাবার কথা অনুযায়ী রাজ আর অধরার বিয়ে পড়িয়ে দেয় কাজি। যেদিন অধরার বিয়ে হয় সেদিন অধরা নীল রঙের একটা জামদানি শাড়ি পরে! অধরাকে নিপুণ হাতে সাজানো হয়। হরিণীর মতো চোখ জুড়াতে সরু করে কাজল দেওয়াতে, মুখটা চাঁদের মতো দেখাচ্ছিল । মনে হচ্ছি এ যেন চন্দ্রাবতী!
– অধরা স্টেজে বসে আছে। তার কাছে ভীষণ অস্থতি লাগছে। গায়ে অনেক ভারি শাড়ি। অধরার আত্মীয়দের মাঝে যারা খুব ঘনিষ্ট তারাই এসেছে। কিন্তু যার জন্য বসে আছে তার খবর নেই। এদিকে ক্ষানিক বাদেই অধরা শুনতে পেল রাজ এসেছে। অধরার চোখ দু’টি যেন রাজকে হন্য হয়ে খুঁজছে! রাজকে বরের সাজে দেখার জন্য তার মনটা ছন্নছাড়া পাখির মতো হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ অধরা দেখতে পেলে রাজ একটা মেয়ের সাথে হেসে কথা বলছে। মেয়েটা আর কেউ না জয়া। যে রাজকে প্রপোজ করেছিল।
অধরার মন চাচ্ছে রাজকে কলার ধরে টেনে এনে তার পাশে বসাতে। আর মেয়েটার কত্তোসাহস তার বরের সাথে কথা বলে। উঁহু আর সহ্য করা যায় না। এসব ভাবতে ভাবতে রাগে দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে অধরা। ক্ষানিক বাদে বুঝতে পারে কে যেন তার পাশে কে যেন এসে বসছে। অাখি জোড়া খুলতেই দেখতে পারে তার হৃদয়ে থাকা মানুষটা তার পাশে বসে আছো। অধরার খুব করে বকা দিতে ইচ্ছে করছে রাজকে। এত লেট করে কেউ আসে?তার উপর শাকচুন্নিটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

– এদিকে কাজি এসে রাজ আর অধরার বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন । অধরার এখন কেন জানি খুব লজ্জা লাগছে। লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছে না। এমন সময় অধরার বাবা বললো,’ আজ আমার মেয়ের জন্মদিন। ” আমাদের সবার কাছে এ দিনটি বিশেষ একটি দিন। আর এই বিশেষ দিনেই আমার বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত করতে তার ছেলে রাজ আর আমার মেয়ের বিয়ে দিলাম। এখন রাজ আর অধরা আসবে কেক কাটতে।

– অধরা এসে কেক কেটে প্রথমে রাজকে খাইয়ে দিল। বার্থডে পার্টি শেষ হলে রাজ আর অধরা অন্যরুমে চলে যায়। অধরা রাজের পাশে বসে আছে। অধরার হাব-ভাব দেখে রাজ বুঝতে পারলো অধরা কিছু বলবে। তাই জিজ্ঞেস করলো,’ কিছু বলবে?’

– হু।
– তাহলে বলো।

– না মানে এখন থেকে আমি তো তোমার বউ তাই না?”
– কেন তিনবার কবুল বলার পরও কী সন্দেহ আছে?
– না! আচ্ছা একটা কথা বলি?
– হুম বলো।
– আজকে কি আমাদের দু’জনকে একসাথে থাকতে দিবে?
– অধরা এসব কি বলছো?
– এই জন্যই তো বলতে চাইনি।
– আচ্ছা বলো।
– বললাম ই তো। আজ কি আমাদের একসাথে থাকতে দিবে?
– জানি না থাকতে দিতেও পারে। আমরা তো জামাই -বউ তাই না?’

– হু। তবে একসাথে থাকতে দিলে তুমি কিন্তু একদম রাতে আমার গায়ের কাছে আসবে না।’

– কি বলছো এসব অধরা ?
– আচ্ছা বাসর রাতে কি হয় জানো?

– না তো তুমি জানো?
– অাল্লাহ আমি কাকে বিয়ে করলাম। বাসর রাতে কি হয় জানে না। আজকে আমার জায়গায় জয়া থাকলে ঠিকই বলতে কী হয়।

– অধরা এসব কী বলছো এসব? বাসর রাতে কি হয় এটা আমি কিভাবে বলবো? আচ্ছা বাসর রাতে কি হয় তুমি জানো?”

– হুম তবে বলতে ভয় করছে।

– রাজ অনেকটা কৌতুহল নিয়ে বললো কি হয়,?

– আরে জানো না বাসর রাতে বাতি অফ করে। না আমি আর বলবো না আমার ভয় করে।

– আরে বলো আমি আছি তো।

– বাতি অফ করে দিয়ে নাকি বিড়াল মারে। আচ্ছা তুমিও কি বিড়াল মারবে? কষ্ট হবে না। তুমি যদি বিড়াল মারো তাহলে আমি তোমার সাথে থাকবো না।

– রাজ হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। সত্যি বলতে রাজ যতটুকু জানে তা হলো বাসর রাতে জামাই বউ একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

– কি হলো রাজ তুমি হাসতেছো কেন?’
– হাসবো না কি করবো? বাসর রাতে কি বিড়াল মারে?
– তো কি করে?
– বাসর রাতে জামাই -বউ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়।

– এ্যাহ,!পচা কথা বলো কেন? আমার বুঝি সরম করে না? কথাটা বলতেই অধরার মুখটা রক্তিম লাল বর্ণ ধারণ করলো। যেমনটা সূর্য অস্তমিত হওয়ার আগে ধারণ করে।
– আচ্ছা সরম করলে আর কি? জয়া বললো তাকে বিয়ে করলে নাকি বাসর রাতে তিনটা বেবি দিবে। জড়িয়ে না ধরলে তো আর বেবি হবে না। ভাবছি জয়াকেই বিয়ে করব।

– কি বললি তুই? ও তিনটা বেবি দিতে চাইছে। আমি ১১ টা দিমু। পুরো ফুটবল টিম বানাতে পারবি। শুধু আমাকেই জড়িয়ে ধরবি। অন্য কাউকে জড়িয়ে ধরার কল্পনাও করবি না। আর যদি শাকচুন্নিটার নাম মুখে নিস তাহলে তোকে খুন করে দিবো।’ কেন বুঝিস না তোকে ছাড়া বাঁচবো না।

– এই অধরা কি করছো কলার ছাড়ো। লাগছে তো!
– লাগুক তাতে আমার কি। তুই জয়াকে বিয়ে করবি? আমি তোকে মারব তারপর নিজে ঘুমের পিল খেয়ে মরবো। ”

– রাজ বুঝতে পারলো কথা রেগে গেছে। রাগের সীমানা পার হয়ে গেছে। তাই তুমি থেকে তুই ডাকতেও দ্বিধাবোধ করছে না! রাজ অধরাকে বাহুডুরে আবদ্ধ করে নিয়ে বললো,’ আরে পাগলী আমি তোমাকে ছাড়া এ বুকে আর কাউকে নিবো না। বড্ডবেশী ভালোবাসি তোমায়। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন তোমাকে এ বুকেই রাখবো।
– অধরা কাঁদছে! আর হিচকি দিতে দিতে বললো,’ স্যরি তোমাকে তুই করে ডাকছি। কি করবো বলো? আমি তোমার মুখে অন্য কারো নাম সহ্য করতে পারি না। এমন সময় রুমে রাজের মা প্রবেশ করে।

– রাজ অধরাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,’ মা কিছু বলবে?”

– রাজ বাবা তোরা এখানে? তোদের সারা বাড়ি খুঁজছি। রাত তো অনেক হয়ে গেল বাসায় যেতে হবে না? আর এই যে অধরা আজ থেকে মা বলে ডাকবি। আমরা তাহলে আসি। কাল আবার আসবো।
-রাজ যখন চলে যাচ্ছে তখন অধরা রাজের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। রাজ বুঝতে পারে অধরার মন খারাপ। কিন্তু কিছু করার নেই।’ রাজ বাসায় এসে পড়ল।

– রাজ চলে গেলে অধরা শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল, ‘ আজ নাকি বাসর রাত। কচুর রাত। কেন যে আল্লাহ তাড়াতাড়ি বড়ো করে না। কত আশা ছিল ফাজিলটাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবো। কিন্তু কি হলো? মা এসে নিয়ে গেল। ভাললাগেনা এসব কিছু।

– পরের দিন অধরার মা পায়েশ রান্না করে
অধরাকে বলে মা, ‘ এই বাটিতে করে রাজকে পায়েস দিয়ে আস তো। ”

– অধরা বাটি ভর্তি পায়েস নিয়ে রাজের বাসায় যেতেই, ‘ রাজ দেখে অধরা পায়েস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ অধরার হাত থেকে বাটিটা নিয়ে পায়েস খেতে থাকে। পায়েস খাওয়া যখন শেষ একটু আছে তখন রাজ বাটিটা অধরার হাতে দিয়ে তার মা’কে ডেকে বলে, ‘ মা দেখে যাও তোমাদের বউমা পায়েস খেতে খেতে শ্বশুর বাড়ি আসছে। কি রাক্ষসী মাইয়া।

– মা আমি খায়নি, তোমার
ছেলে খেয়ে ফেলছে।

-রাজের মা অধরাকে দেখে মুচকি হেসে অধরার কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ মা ওর কথা কিছু মনে করিস না। ‘ বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।’

– সত্যি ঘুরতে যাবেন?
– হুম সত্যি!

– অধরা বাসায় চলে গেল। বাসায়
গিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল, ‘ রাক্ষসটা কত্তো খারাপ সবটুকু পায়েস খেয়ে বলে কি না সে খায়নি আমি খেয়েছি। কেমন ছেলে গু আল্লাহ!

– বিকেলে অধরা রেডি হয়ে রাজের বাসায় চলে যায়। অধরা শাড়ি পরেছে। কিন্তু শাড়ি কুচি খুলে গেছে। মা এতো সুন্দর করে পরিয়ে দিলো কিন্তু কি হলো!

– অধরা বাসায় এসেই দেখে রাজ টাওয়াল পরে বার্থরুমে ঢুকল! অধরার সকালের ঘটনা মনে করে বার্থরুমের দরজা ধাক্কা দিতেই চিৎকার দিয়ে উঠল! অধরার মাথা ঘুরতাছে। রাজ কোনরকম টাওয়াল টা কোমড়ে গুজে অধরার মুখ চেপে ধরে বলে, ‘ কি করছো এসব? কেউ দেখলে কি ভাববে?
– অধরা নিজেকে কোনরকম ছাড়িয়ে বললো,’ সব দেখে ফেলেছি।”

– এই ফাজিল কি বলো? সব দেখছো মানে?
– যা থাকে সব দেখছি।
– রাজের এবার খুব রাগ হচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে। রাগ থামিয়ে বললো,’ তুমি দরজা নক করে ঢুকবে না?
– আরে তুমি পায়েস খেয়ে আমার নাম বলতে পারো। আর আমি দরজা নক না করে ঢুকলেই যতদোষে নন্দঘোষ!
– প্রতিশোধ নিলে?
– হ্যাঁ নিলাম!
– তাই বুঝি! দেখাচ্ছি কেমন লাগে এই বলে রাজ অধরার শাড়ি টান দিয়ে শাড়ি খুলে দেয়। আর বলে, ‘ এখন আমি প্রতিশোধ নিলাম!

– অধরা শাড়িটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে,’ আমি মাকে সব বলে দিবো। এই বলে কাঁদতে থাকে।”

– এই মেয়ে কান্না বন্ধ করবি? কেন বন্ধ করবো হ্যাঁ কেন করবো?
– প্লিজ কান্না করো না। ‘

– কান্না করবো না তাহলে শাড়ি পরিয়ে দাও। রাজ শাড়ি পরাতে পারে না ঠিকমত। তবুও কোনরকম পরিয়ে দিলো। শাড়ি পরিয়ে দিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে দেখলো অধরাকে খুব সুন্দর লাগছে। সারাটা বিকেল অধরাকে ঘুরিয়ে সন্ধ্যায় অধরাকে বাসায় রেখে আসে।

– দিনগুলো খুব সুন্দর যাচ্ছিলো। হঠাৎ এক কালবৈশাখী ঝড় এসে রাজেদের জীবনটা এলোমেলো করে দেয়। ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগায় একদম পথে বসে পরে তারা। এদিকে রাজের বাবার একমাত্র বোন। রাজের ফুপু জান্নাত ভালোবাসতো অধরার কাকা রিসানকে । একদিন জান্নাত কিচেনে রাজের মাকে সাহায্য করতে করতে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।

– হসপিটালে নিয়ে গেলে, ডাক্তার জান্নাতকে দেখে রাজের বাবাকে বলে, ‘ আপনাদের জন্য খুশির খবর আছে। পেশেন্ট মা হতে চলছে।

– চলবে””””