অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ২৭

0
4012

অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ ২৭
তাসনিম_রাইসা

-অধরা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রাজের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা রাজ ভালো থেকো আসি। ”

– কথাটা বলে রুম থেকে বের হতেই রাজ ভিডিওটা পড়ক করে দেখে চমকে ওঠলো! রাজের হাত কাঁপছে। রাজ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে। না সে এমন করতে পারে না। পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। কারণ ‘ ভিডিওতে তুর্যয় আর তিহানা রতক্রিয়ার ব্যস্ত! রাজ কি বলবে বুঝতে পারছে না। তিহানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব করে বেড়ায়? রাজতো তিহানা নিজের বোনের মতই দেখে আসছিল। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছে। না মাথাটা ঝিম ধরে আসছে। রাজ ফোনটা ত্রিযামিনীর দিকে বাড়িয়ে দিলো। ত্রিযামিনী ভিডিওটা দেখে চমকে উঠল! না এ হতে পারে না। তার বোন এতোটা খারাপ। কিভাবে বিশ্বাস করবে! হাতটা কাঁপতে কাপঁতে ফোনটা নিচে পড়ে যায়। ছিহ! তিহানা তুর্যয়ের সাথে রঙ্গখেলায় ব্যস্ত! দু’জন -দু’জনের আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

– মিসেস রাহেলা নিজের মেয়েকে এ রুপে দেখবে ভাবতে পারেনি। এইজন্যই কি এত টাকা খরচ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। লজ্জার ত্রিযামিনীর মা কারো দিকে তাকাতে পারছে না।

-রাজ অপরাধীর মতো মাথা নিচের দিকে করে রাখছে। যে ভিডিওর জন্য অধরাকে এতো কথা বললো অথচ ভিডিওতে অধরার বিন্দুমাত্র উপস্থিতি নেই। রাজের নিজের প্রতি নিজেরি ঘৃনা লাগছে।

-ত্রিযামিনী তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল!
– অধরা পিছন ফিরে বললো,’ দেখছো ত্রিযামিনী কাউকে বিনাদোষে মিথ্যা অপবাদ দিলে সেটা নিজের উপর এসে পড়ে। আর এই যে মিসেস রাহেলা সত্যিকারের পতিতাকে দেখে নিবেন ভালো করে ভিডিওটাতে। ”

– ত্রিযামিনী নিজের জালে নিজেই এভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতেও পারেনি। ভেবেছিল ভিডিওটা অধরার কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ভিডিওটা তারই বোনের হয়ে গেল।

– অধরা বাসা থেকে বের হয়ে যখন গাড়িতে উঠবে ঠিক তখনি অধরা একটি মেয়েকে দেখে থমকে যায়। মেয়েটা যে অন্য কেউ না তিহানা।

– তিহানা বাসায় ঢুকতেই, তার মা বললো, ‘ এই তুই এই বাড়িতে আসবি না। তুই আমাদের মেয়ে না। একটাবার আমাদের সম্মানের কথাও ভাবলি না।

– তিহানা তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ মা তোমরা আমাকে তাড়িয়ে দিলে আমার মৃত্যু ছাড়া কোন উপায় নেই। তুর্যয় আমাকে বিয়ের কথা বলে ওসব করছে। ওর সন্তান আমার গর্ভে। মা কিছু একটা করো। আমি তুর্যয়ের সন্তানের মা হতে যাচ্ছি। এখন তুর্যয় আমাকে বিয়ে করবে না। আমি কি করবো মা বলো তো।

– ত্রিযামিনী ঠাস করে তিহানার গালে চড় বসিয়ে দিলো। এই তুই এই মুখ নিয়ে কিভাবে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালি? ওসব করার আগে একটাবারো আমাদের কথা ভাবলি না?

– আপু আমাকে মেরে ফেলো। আমি এ জীবন দিয়ে কি করবো? আমার সন্তান হলে বাবার পরিচয় কিভাবে দিবো? লোকে বলবে জারজ সন্তান যাচ্ছে। আমি পারবো না বাঁচতে আপু। আমাকে মেরে ফেলো।
– ত্রিযামিনীর চোখের সামনে এখনো অধরাকে বলা কথাগুলো ভেসে উঠছে। কি অপমানটাই না অধরাকে করেছে তারা। এখন তার নিজের বোনই অবৈধ সন্তানের মা।

– আচ্ছা আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। ইশু গাড়িতে উঠ! অধরা গাড়িতে উঠে পড়লো।

– রাজের বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। না জেনে অধরাকে কত কষ্ট দিয়েছে। তবুও অধরাকে তাকেই ভালোবেসেছে। কখনো কোন অভিযোগ করেনি। নিরবে কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে রাজ বুঝতেই পারেনি। তার অধরা যে ফুলের মতো পবিত্র। আর তার অধরাকেই সে এতোটা কষ্ট কিভাবে দিলো। যে অধরাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। রাজের দু’চোখ বেয়ে বৃষ্টি নামছে। অধরাকে কি বলবো বুঝতে পারছে না। কোন অধিকারে অধরার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। আনিশা পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-আনিশা কিছুটা আঁচ করতে পেয়ে বললো,’ রাজ তোমার ভালোবাসা চলে যাচ্ছে আকটাও!

– রাজ দৌড়ে গিয়ে অধরার গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

– অধরা রাজকে গাড়ির সামনে এভাবে দেখতে পারবে ভাবতেও পারেনি। ইশুকে ইশারা দিয়ে বললো রাজকে সরতে বলো।

– ইসু গাড়ি থেকে নেমেই রাজকে বললো,’ এই আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? গাড়ির সামনে কেন মরতে দাঁড়িয়েছেন? সামনে থেকে সরেন।

– রাজ কোন কথা বলছে না। চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছে।

– কি হলো আপনি রাস্তা থেকে সরবেন না?
– ইশু প্লিজ তোমার আপুকে যেতে না করো।

– বাহ! এতোকষ্ট দিয়েও কি আপনার মন ভরেনি? আর কত কষ্ট দিতে চান আপুকে? হাজারবার বারণ করা সত্ত্বেও আপু আপনার জন্য সেই সূদুর লন্ডন থেকে সব ছেড়ে আসছিল। আপনার জন্য একটিবার আমার সাথে দেখাও করেনি। এতটাই ভালোবাসতো আপু আপনাকে যার জন্য লন্ডনে হাজার কোটি টাকার মালিকের ছেলেকেও পাত্তা দেয়নি। আর আপনি কি না সেই আপুকেই চরিত্রহীন বানিয়ে দিলেন।

– রাজ মানুষ তো আপন মানুষ আশে-পাশে থাকলেই চিনতে পারে। আর আপু তো আপনার সাথে একি ঘরে একি রুমে থেকেছে। তারপরেও মানুষটাকে চিনেনি আপনি? সত্যি আপনি ভালোবাসার যোগ্যই না। প্লিজ রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। আমাদের লেট হচ্ছে।

– প্লিজ ইশু তোমার আপুকে একটু গাড়ি থেকে বের হতে বলো।

– ইশু অধরাকে ইশারা দিয়ে কি যেন বললো, ‘ অধরা গাড়ি থেকে নেমেই মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ রাজ আপনি কেন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছেন?
– অধরা আমি সত্যিটা জানতাম না। জানলে তোমার সাথে এমন ব্যবহার করতাম না। তুমি প্লিজ যেয়ো না।

– আচ্ছা একটা বার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন তো কোন অধিকারে আপনি আমাকে যেতে না করছেন? আছে কোন অধিকার? আচ্ছা আপনার কাছে আমিতো স্রেফ একটা পতিতা তাই না? টাকার জন্য আমার মতো মেয়ে সব করতে পারে? আরে আমার মতো মেয়ে আপনার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একদম নিচে নেমে গিয়েছিলাম। বাট আপনার কাছে একটু ভালোবাসাও পায়নি। বরং চরিত্রের উপর কয়েকটা তকমা পেয়েছি। আপনাকে বলেছিলাম না এমন একটা সময় আসবে আমাকে একনজর দেখার জন্য আপনি পাগল হয়ে যাবেন। আল্লাহ হয়তো আমার কথাটা শুনছে। সকালে যখন আপনি ডির্ভোস পেপারে সাইন করে আমাকে ডির্ভোস দিয়ে আমার গর্ভের সন্তানটাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। তখন থেকেই আপনাকে আমার হৃদয় থেকে মুছে ফেলেছি। আপনাকে যতটা ভালোবাসতাম তারচেয়ে হাজারগুণ বেশি ঘৃণা করি এখন। I hate you Raj.

আপনি ভালোবাসার যোগ্যই না। আপনার জন্য আমি তিয়াসের শুদ্ধতম ভালোবাসাকে অবমাননা করতে পারবো না। যে তিয়াস আমার জন্য তুর্যয়কে দশলাখ টাকা দিয়েছিল তার ভালোবাসাকে কিভাবে অপমান করি। আপনি যেখানে নিজের চাহিদা মিটিয়েছেন তিয়াস সেখানে শুধু চেয়েছে আমি যেন ভালোথাকি। তিয়াস ত্রিযামিনীকে রেখে আমার মতো একটা কাজের মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছিল শুধু আমাকে ভালোবাসে বলে। আর আপনি? প্লিজ নেক্সট টাইম যেন আপনার মুখটা না দেখি।

কথাগুলো বলে অধরা গাড়িতে করে চলে গেল। রাজ রাস্তায় হাটুগেড়ে বসে পড়ে। চোখের সামনে বারবার অধরার চাঁদমুখটা ভেসে উঠছে। বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। চোখের কার্ণিশ বেয়ে টুপ-টাপ করে পানি পড়ছে।
পিছন থেকে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালো রাজ। আনিসা আমি অধরাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো বলো? ও আমাকে এতটা ভালোবাসতো আর আমি কি না তাকেই কষ্ট দিলাম।

– রাজ ধৈর্য ধরো সময় সব ঠিক করে দিবে।

– এদিকে গাড়িতে অধরা বসে আছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।

– এই আপু কাঁদছিস কেন? আচ্ছা আপু সত্যিই কি তিয়াসকে তুই ভালোবাসিস?

– অধরা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।

– কি হলো আপু তিয়াস ভাইয়াকে যদি সত্যি ভালোবাসিস তাহলে বল! বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নিবো।”

– আরে না তিয়াস আমাকে ভালোবাসে। বাট আমি না। হয়তো আর কোনদিন তাকে ভালোবাসতেও পারবো না। রাজকে কথাগুলো বললাম সে যেন আমাকে আর বিরক্ত না করে।

– হঠাৎ অধরা পার্কের সামনে গাড়ি দাঁড়া করাতে বললো,’ ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই অধরা পার্কের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটা ছেলে অনেক গুলো বাচ্চাকে নিয়ে খেলা করছে।

– ইশু ভনিতা বাদ দিয়ে বললো,’ আপু ছেলেটার দিকে ওভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছো কেন?
– এমন সময় রাস্তা পাশে দাঁড়ানো কয়েকটা মেয়ে বললো,’ সত্যি তিয়াস চৌধুরীর মতো মানুষ খুব কম পৃথিবীতে হয়। প্রতি সপ্তাহে এতিম খানার বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করে। মা-বাবাহীন বাচ্চাগুলো তিয়াস চৌধুরীকে পেয়ে প্রাণ ফিরে পায়।
– পাশ থেকে আরেকটি মেয়ে বলে উঠলো, সত্যিই এমন একটা ছেলে যদি আমার বর হতো।
– আরে কি বলিস কোন মেয়ের দিকে তাকায় না পর্যন্ত।

– অধরা গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো।

– সেদিন রাতে রাজের আর ঘুম হলো না। সারারাত অধরার স্মৃতিগুলো মনে করে কান্না করলো। যে মানুষটা কাল তার বুকে ছিল আজ মানুষটা কতটা দূরে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে আসলো। সত্যিই ভালোবাসা বড় অদ্ভূত।

এদিকে সকাল হতেই ঠিকানা নিয়ে অধরা যে বাসায় থাকে সেখানে চলে যায়। রাজ অধরার বাসায় গিয়েই দেখতে পারে তিয়াস আর অধরা একে অপরের –

চলবে””””””