অবশেষে তুমি পর্ব-১+২

0
901

#অবশেষে তুমি
#পর্ব -০১
#লেখিকা–Nazia Shifa

তোমার মতো একটা মিডল ক্লাস খ্যাত মার্কা মেয়েকে বিয়ে করবো আমি?কোনোদিন ও না।রাজের জন্য মেয়ের অভাব পরেনি মিস নুর।

নিজের হবু বরের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো নুর।

রাজের হাত ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলো—

–কি বলছেন আপনি এগুলো?এমন করছেন কেনো?কিছু কি করেছি আমি?কোনো ভুল হলে আমাকে শাস্তি দিবেন কিন্তু এরকম কথা বলবেননা প্লিজ।

রাজ ঝারি দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগলো–

–তোমাকে কোনোদিনও পছন্দ ছিলোনা আমার।সবই নাটক ছিলো।

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো–

–নাটক ছিলো মানে?কি বলছেন এসব?পছন্দ ছিলো না মানে?

রাজঃহ্যা নাটকই ছিলো।আমি তোমাকে না তোমার বেষ্টু রিয়াকে ভালোবাসি।আর সেও আমাকে ভালোবাসে।বাবা-মায়ের জোরাজুরিতে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু তাদের জন্য আমি আমার ভালোবাসা হারাতে পারবোনা।তাই এই বিয়ে আমি করবোনা নুর।

রাজের মুখে নিজের বেষ্টুর কথা শুনে আরও বেশি চমকালো নুর।
বিয়ে ভাঙার চেয়ে বেশি কষ্টদ্বায়ক লাগছে নিজের বেষ্টুর কাছ থেকে পাওয়া এত বড় ধোকাকে!যাকে এত বেশি বিশ্বাস করেছে।নিজের বোন মনে করেছে যাকে।কীভাবে পারলো?
হাহ….মানুষ এতো স্বার্থপর?

শাওন(নুরের ভাই)এতক্ষণ চুপ থাকলেও আর পারলোনা কিন্ত কিছু বলার আগেই তার বাবা ইশারায় চুপ থাকতে বললেন।তাই অগত্যা চুপ থাকতে হলো।

আফজাল হোসেন(নুরের বাবা)কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই নুর বললো–

–বাবা এই লোককে আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বলো।আর এক মুহূর্তের জন্যও যেন না দেখি তাকে।Get him out বাবা (চিল্লিয়ে বললো)।

শাওনঃকি হলো দাড়িয়ে আছেন কেন এখানো?কথা কানে যায়নি?বেড়িয়ে যান।

আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে গেলো রাজ।

রাজ চলে যেতেই ধপ করে সোফায় বসে পরলো নুর।
আফজাল হোসেন তার পাশে এসে বসে তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন–

–আমায় ক্ষমা করে দিস মা।আমার জন্যই সব হয়েছে।ভুল মানুষের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছিলাম তোকে।

নুরঃতোমার কোনো দোষ নেই বাবা।যা হওয়ার ছিলো তাই হয়েছে। আমি একটু একা থাকতে চাই বাবা।
বলেই সেখান থেকে উঠে রুমে চলে গেলো নুর।

ইতিমধ্যেই মানুষ কানাঘুষা করছে–মেয়েরই কোনো দোষ আছে নাহলে মেয়েকে রেখে মেয়ের বান্ধবীকে কেনো পছন্দ করবে?এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে একবার বিয়ে ভেঙে গেছে।আরও কত কি।

সবই কানে যাচ্ছে নুরের বাবার কিন্তু উত্তর দেওয়ার মতো কিছু নেই।সে মাথা নিচু করে বসে আছে।

–হঠাৎ…

–মামা আমি নুরকে বিয়ে করবো।

কথাটি কর্ণকুহর হতেই ঝট করে মাথা তুলে তাকালো নুরের বাবা।

কথাটি আর কেউ না কাব্য বলেছে।অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। সে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আফজাল হোসেনঃকাব্য কি বলছিস তুই?

রেহেনা বেগম(কাব্যের মা) বললো–

–কাব্য ঠিকই বলছে ভাইয়া।আমি আগেই বলতাম নুর আর কাব্যের বিয়ের কথা কিন্তু তার আগেই তুমি নুরের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলে তাই কিছু বলিনি।কিন্তু যেহেতু তার সাথে বিয়েটা হয়নি তাই আমি আর আমার মেয়েকে অন্য ঘরে যেতে দিবনা।

আফজাল হোসেনঃ কিন্তু… নুর?

রেহেনাঃওকে আমি বোঝাবো ভাইয়া।

আফজাল হোসেনঃএত সহজ না রেহেনা।আমার কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছিল নুর।কিন্তু কি হলো তা তো দেখলি। আমি আর পারবোনা ওকে বিয়ের কথা বলতে।

রেহেনাঃভাইয়া বললামতো আমি বোঝাবো নুরকে।আমার কথা ফেলবেনা নুর।

আফজাল হোসেনঃঠিক আছে।
.
.
.
.
ব্যালকনিতে বসে ছিলো নুর।মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো সে।রেহনা বেগমকে দেখেই ঝাপটে ধরলো তাকে।
কাঁদতে কাঁদতে বললো–

–আমার সাথেই কেনো এমন হলো মামনি।কি দোষ ছিল আমার?

রেহেনাঃতোর কোনো দোষ নেই নুর।তার দুর্ভাগ্য যে তোকে হারিয়েছে।কিন্তু নুর আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে–

–নুর।

নুরঃহ্যা মামনি।

রেহেনাঃতোর সাথে কিছু কথা আছে…
চলবে…..

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা-Nazia Shifa
#পর্ব -০২
___________________
এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বেডের এক কোণে বসে আছি আমি।সব ঝামেলা শেষ করে একটু আগেই তন্নী (কাব্য ভাইয়ার বোন)আমাকে এখানে বসিয়ে দিয়ে গেছে৷তন্নী সম্পর্কে আমার ফুপাতো বোন,আবার বন্ধুও আর এখন ননদ।।আমি,তন্নী,রিয়া আর রিতু আমরা চার জন একই ভার্সিটিতে পড়ি।ছোটবেলা থেকেই আমার আর তন্নীর ভালো বন্ডিং।রিয়া আর রিতুর সাথে কলেজে উঠে পরিচয় হয়েছিল।
রিয়ার কথা মনে পরতেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।আসলে মানুষ ঠিকই বলে মানুষগুলোই আমাদের বেশি কষ্ট দেয়।

যাই হোক –বিছানা থেকে নেমে পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলালাম। মানুষটা যেমন পরিপাটি আর গোছানো তার রুমটাও তেমনি।সবকিছু একদম সঠিক জায়গায় সেট করা।আমার নিজের রুমও বোধহয় এতো গোছালো না।এই বাড়িতে আমার প্রতিদিন যাওয়া আসা থাকলেও এই রুমটাতে আসার পারমিশন ছিলো না।আর এই রুমেই এখন থেকে থাকতে হবে আমার।কারণ এখন আমি তার ওয়াইফ।
হ্যা কাব্য ভাইয়া আর আমার বিয়ে হয়েছে ঘণ্টা দুয়েক হবে।তখন রুমে মামনি—

ফ্লাশবাক—-

নূর–

নূরঃহ্যা মামনি।

মামনিঃনুর তোর যখন ৬বছর তখন তোর আম্মু মারা যায়।শাওন তখন ১৫বছরের ছিলো।সে নিজেকে কোনোরকম সামলে নিয়েছিল তোর জন্য। কারণ তোকে সামলাতে হবে তাই।তোর বাবাও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলো।তবে সময়ের সাথে সাথে সেও নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করেছে।বাকি ছিলি তুই।সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতি,খাওয়া-দাওয়া করতি না একদম।অসুস্থ হয়ে পড়েছিলি তুই।তাই ভাইয়াকে বলে তোকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম।নূর সেদিন থেকেই তোকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে আসছি আমি।আর তুইও আমাকে নিজের মামনি হিসেবে যথেষ্ট ভালোবাসিস আর সম্মান করিস আমি জানি।নূর আজ এই মা যদি তার মেয়ের কাছে কিছু চায় তুই কি ফিরিয়ে দিবি?

এতক্ষণ নিরব শ্রোতার মতো মামনির কথাগুলো শুনছিলাম আমি।মামনি উক্ত প্রশ্নটি করতেই মামনিকে বললাম–

–মামনি তুমি সেই ছোটবেলা থেকেই আমায় তোমার স্নেহের চাদরে মুড়িয়ে রেখেছো।নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছো আমাকে।আমার কি সাধ্য যে আমি সেই মায়ের কথা ফেলবো?বলো মামনি কি চাও তুমি?

মামনি তখন বললো–

–নূর তুই কাব্যকে বিয়ে করে নেয়।আমি জানি ব্যাপারটা তোর কাছে অবাক লাগছে কিন্তু আমি এটাই বলছি নূর যে তুই কাব্যকে বিয়ে করে নেয়।

নূরঃ মামনি কি বলছ এসব?

মামনিঃনূর তুই কথা দিয়েছিস আমাকে।

নূরঃ কিন্তু মামনি…

মামনিঃতোর মামনির ওপর তোর বিশ্বাস নেই তাই না?

নূরঃকি বলছ তুমি বিশ্বাস কেনো থাকবেনা?

মামনিঃতাহলে যা বলছি তাই কর নূর।

নূরঃঠিক আছে।
.
.
বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলাম আমরা। একটু আগেও আমি শুধু আসমিতা নুর ছিলাম আর এখন আমার আর একটা পরিচয়।শহরের অন্যতম বিজনেস ম্যান কাব্য চৌধুরীর স্ত্রী আমি।কথাটা ভাবতেই অন্যরকম অনুভূত হলো।
রুম থেকে এবার ব্যালকনিতে চলে আসলাম।ব্যালকনিতে আসতেই প্রথমে চোখ পরলো ডান পাশে রাখা দোলনাটায়।তার দুই পাশে ঝোলানো দুইটা ছোটো ছোটো টবে মানি প্লান্ট গাছ লাগানো।পাতাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দোলনার দুই পাশে।বাম পাশে কয়েকটা ফুল গাছ আর পাতাবাহার গাছ।গাছ বরাবরই আমার প্রিয়।তাই খুশিতে অজান্তেই মুখে হাসি ফুটলো।কিন্তু পরক্ষণেই তা মিইয়ে গেলো।হঠাৎই মনে প্রশ্ন জাগলো আচ্ছা কাব্য ভাইয়া কি আমাকে বিয়ে করে করুণা করেছেন?

আপন মনে বিড়বিড় করে বললাম–হ্যা করুণাই তো করেছেন।হয়তো মামনি জোর করে রাজি করিয়েছন না হলে বিয়ে ভেঙে গেছে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করার ডিসিশন কি কেউ এভাবে হুট করে নিতে পারে।আচ্ছা ভাইয়া কি বিয়েটা মেনে নিবেন?

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি ঠিক তখনই —

-নূর..

হকচকিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম ব্যালকনির গ্রিলে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

–আপনি কখন এসেছেন?

কাব্যঃমাত্রই এসেছি।

নূরঃওহহ..তার মানে কিছু শোনেনি।(মনে মনে)

কাব্যঃহুম…ফ্রেশ হয়ে নাও।

নূরঃজ্বী…ব্যালকনি থেকে রুমে এসে লাগেজ থেকে সবুজ রঙের একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলাম কাব্য ভাইয়া বেডের বাম পাশে বসে আছেন মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে বর্ডার দেয়া আর ডান পাশে আমার জন্য জায়গা করে দিয়েছেন।মাঝখানে বর্ডার দেখে মনে মনে খুশি হলাম কারণ জীবনের প্রথম কোনো পুরুষের সাথে একই বিছানায় থাকবো ভাবতেই কেমন যেন লাগছিলো যদিও মানুষটা আমার স্বামী কিন্তু তাও..তবে এখন ঠিক আছে।

আমার ভাবনায় ইতি টানলেন তিনি….

–নূর…

হকচকিয়ে জবাব দিলাম–

জ্বী –হ্যা…

কাব্যঃওখানে দাড়িয়ে কী ভাবছিলে?

নূরঃক–কই কিছু না তো।

কাব্যঃ আচ্ছা..রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো৷

নূরঃজ্বী।

হাতের তোয়ালে টা ব্যালকনিতে রেখে রুমে এসে লাইট অফ করে দিয়ে বেডে এসে কাব্য ভাইয়ার দিকে পিঠ করে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর–

–নূর জেগে আছো?

হঠাৎ তার গলার স্বর পেয়ে কেঁপে উঠলাম আমি। পরমুহূর্তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম–

–জ্বী জেগে আছি।কিছু বলবেন?

চলবে……