অবশেষে তুমি পর্ব-৯+১০

0
481

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৯)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
পিছনে ফিরে দেখি অর্ণব দাড়িয়ে আছে।। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আগের মতো আকাশ দেখা শুরু করি।। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ এখানে কি করছো!!

মিমঃ আকাশে চাঁদটাকে দেখছি।। আজকে ভরা পূর্ণিমা।। দেখুন চাঁদটাকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে।। মনে হচ্ছে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থেকে অনেকটা সময় পার করে দেয়া যাবে।।

অর্ণবঃ হুম।।

অর্ণব আকাশের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো

অর্ণবঃ আচ্ছা মিম তোমার কাছে বিয়ে মানে কি??

মিমঃ বিয়ে মানে হলো দুজন মানুষ একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।। যেখানে থাকবে বিশ্বাস, ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা, সম্মান, শ্রদ্ধা।। এখানে একে অপরের প্রতি থাকবে বিশ্বাস, দুজন দুজনের প্রতি ভালোবাসা, একজন আরেকজনের উপর হবে নির্ভরশীল, দুজন দুজনের মদ্ধে থাকবে সম্মান শ্রদ্ধা।। হাজার সমস্যার মাঝেও একজন আরেকজনের পাশে নিঃসঙ্গ ভাবে থাকবে কখনো ছেড়ে যাবে।। ঠিক যেনো একে অপরের পরিপূরক।।

মিম কথাগুলো এক ধ্যানে বললো আর অর্ণব কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনলো।।

অর্ণবঃ কিন্তু মিম তুমি যেগুলো বললে এসবের একটাও তো আমি তোমার প্রতি রাখি নি।। তবে আমাদের সম্পর্কটা কেমন হলো!!

মিমঃ সেটা নিতান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।। আপনার আমাকে পছন্দ না তাই আপনি আমাকে মেনে নিতে পারেন না।। আর এইসব কিছুই আপনি আমার উপর রাখেন না।। it’s simple.

অর্ণব মিমের কথাগুলো শুনে ভাবছে আসলেই মেয়েটাকে আমি কোনো কিছুই দেই নি তারপরেও আমার পাশে এখনো ভীত্তিহীনভাবে দাড়িয়ে আছে এখনো……..
আমার সঙ্গ ছাড়েনি।।

অর্ণবঃ ঘুমাবে না!!

মিমঃ হুম।।

অর্ণব রুমে এসে শুয়ে পরে।। আর মিমের কথা ভাবতে থাকে এই মেয়েটাকে আমি এতো কষ্ট দিচ্ছি ওর তো কোনো দোষ নেই কিন্তু আমি নিরুপায় আমি ওকে পছন্দ করি না ওর জন্য আমার মনে কোনো জায়গা নেই আমার মনে তো শুধু……………
কিছুক্ষণ পর বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখি মিম এখনো আগের মতো দাড়িয়ে আছে।।
.
.
.
.
.
.
.
.
আজ আমাদের বিয়ের একমাস হলো কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা আগের মতোই আছে।।
আজকে সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে বসে মা আমি আর অর্ণব গল্প করছিলাম।। হঠাৎ মা বলো উঠলো

মাঃ তোদের বিয়ের একমাস হলো অথচ তোরা কোথাও ঘুরতে যাস না।।

অর্ণবঃ একদিন না গেলাম।।

মাঃ একদিন গিয়েই শেষ।। তোদের নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে এখন শুধু ঘুরাঘুরি করবি তা না তুই মিমকে নিয়ে কোথাও যাস না।। আর মিম সারাদিন বাসায় একা থাকে ওর তো এইভাবে একা থাকতে ভালো লাগে না।। ওর তো ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করে।।

মিমঃ মায়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।। আর মা হালকা চোখ টিপ দিলো।। আমি তো পুরাই অবাক।।

অর্ণবঃ…………..

মাঃ তুই আজকে মিমকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আয়।।

অর্ণবঃ আচ্ছা।।
মিম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও একটুপর বের হবো।।

মিমঃ ঠিক আছে।।

অর্ণব গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসে আছি।। উনি আমার সাথে কোনো কথা বলছে না আর আমিও না……….দুজনই চুপচাপ।। বাহিরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছি আর দেখছি।। বাহিরে এখন অনেক কোলাহোল।। কিন্তু একটু রাত হলে আর মানুষ এত বেশি থাকবে না।। তখন বাহিরে ঘুরার মজাই আলাদা……….. নিস্তব্ধ শহর থাকবে।। কিছুক্ষণ পর অর্ণব বললো

অর্ণবঃ কোথায় যাবে??

মিমঃ জানি না।। আপনি নিয়ে এসেছেন আপনিই বলেন কোথায় যাবেন।।

কিছুক্ষণ পর অর্ণব একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো।। রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমরা।। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ কি খাবে??

মিমঃ কিছু না।।

অর্ণবঃ তাহলে এখানে এসেছি কেনো??

মিমঃ আমি কি বলেছি নাকি এখানে আসতে!!

অর্ণবঃ কিছু তো একটা খাও।।

তারপর আমি একটা কোল্ড কফি অর্ডার করলাম আর অর্ণব নরমাল কফি।। আমি কোল্ড কফি খাচ্ছি অনেক মজা করে কারণ আমার কোল্ড কফি অনেক পছন্দ আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।। অর্ণবের চোখ ছলছল করছে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।। আমি জিজ্ঞাসা করলাম

মিমঃ কিছু হয়েছে আপনার!!

অর্ণবঃ………..

মিমঃ কিছু বলছেন না কেনো!!

অর্ণবঃ এক সময় আমার খুব কাছের একজনের অনেক পছন্দ ছিলো কোল্ড কফি!!

মিমঃ অহ্।।
উনাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলাম না।। ভ্রু কুচকে ভাবছি উনি আমার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছে।। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করবো না যেদিন উনি মনে করবেন আমাকে বলা যাবে সেদিন উনি নিজের থেকেই বলবেন।।

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে বাহিরে দাড়িয়ে আছি।। অর্ণব বলছে কোথায় যাওয়া যায়।। উনি গাড়িতে উঠে আমাকে উঠতে বললেন আমিও উঠলাম।। উনি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন।। আমি জিজ্ঞাসা করলাম

মিমঃ কোথায় যাচ্ছি আমরা!!

অর্ণবঃ জানি না।। দেখি কোথায় যাওয়া যায়।।

মিমঃ অহ্।।
আমারো আগে থেকে অনেক ইচ্ছা ছিলো লং ড্রাইভে যাওয়ার।। তাই কিছু বললাম না।।

অর্ণব শহর থেকে অনেকটা দূরে এসে গাড়ি থামালো।। অর্ণব গাড়ি থেকে নেমে মিমকে নামতে বললো।। গাড়ি থেকে নেমে দেখি একটা নদীর কাছে আমরা।। আমি উনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে অর্ণব বললো
·
·
·
চলবে……………………..

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ১০)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
আমি অর্ণবের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে উনি বললো

অর্ণবঃ জায়গাটা সু্ন্দর না!!

মিমঃ হুম অনেক।।

ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।। বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ আছে।। আমি চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি আর অনুভব করছি পরিবেশটা।। অনেক ভালো লাগছে এই মুহূর্তটা।। মনে হচ্ছে সময়টা যদি এখানেই থেমে যেতো তাহলে কতই না ভালো হতো।।

অর্ণব সেই কখন থেকে মিমকে দেখেই যাচ্ছে।। মিম পরিবেশটা অনুভব করছে আর অর্ণব অনুভব করছে মিমের অনুভূতি।। দুজনে এক অন্য পরিবেশে এক অন্য অনুভূতিতে হারিয়ে আছে।।

দুজনে বসে আছে নদীর ধারে।। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না……..পিনপতন নিরবতা কাজ করছে।।দুজনের নজরই সামনের দিকে।। দুজনেই পরিবেশটা অনুভবে ব্যাস্ত।।

মিমঃ পরিবেশটা সুন্দর লাগছে না!! কোনো কোলাহোল নেই।। চারপাশেই শুধু নিরবতা কাজ করছে।।

অর্ণবঃ হুম।। অনেক ভালো লাগছে।। মনে হচ্ছে কতোদিন পরে শান্তিতে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।।

মিমঃ আপনি এই জায়গাটার খোঁজ পেলেন কি করে!! আগে কি এসেছেন এখানে!!

অর্ণবঃ হুম অনেকবার।। আগে ভালো না লাগলেই এখানে চলে আসতাম।। এখানে বসে পরিবেশ অনুভব করতাম।। ভালেই লাগতো।।

মিমঃ অহ্।। আমারো জায়গাটা অনেক পছন্দ হয়েছে।।

অর্ণবঃ ভালো।।

অনেক্ষণ পরে মিম বললো

মিমঃ বাসায় যাবেন না!! কয়টা বাজে খেয়াল আছে!!

অর্ণবঃ হুম।। চলো যাই।। অনেক দেরি হয়ে গেছে।।

মিমঃ চলেন।।

গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।। মিম বাহিরে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে শহরটা কতো নিরব।। আর অর্ণব আপন মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।। বাড়িতে এসে দেখি মা বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে।। ঘুমানোরই কথা অনেক রাত হয়ে গেছে।। আমরাও ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ি।।
.
.
.
.
.
.
.

মিম সেই কখন থেকে ছাদে দাড়িয়ে আছে।। চোখ দিয়ে আপন মনে পানি পরেই যাচ্ছে থামার কোনো নাম নেই।। চোখের পানির যেনো আজ বাধই মানছে না।। মেঘেরাও আজ মিমের সাথে যোগ দিয়েছে।। ওরাও আজ মিমের মতো অঝোর বর্ষণের জন্য রাজি।। তাই পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।। মিমের কান্না থামার কোনো নাম নেই।। আর কাঁদবেই বা না কেনো।। কিছুক্ষণ আগে যা দেখলো তা দেখার পর কান্না করারই কথা।। কান্না করাটাই স্বাভাবিক আর না করাটা অস্বাভাবিক।। কিছুক্ষণ আগে কথা

Flashback

মিম বুক সেল্ফ এ বই আনতে যায় পড়ার জন্য।। হঠাৎ চোখ যায় একটা ডায়রির উপর।। ডায়রিটা দেখে হাতে নিলো।। ডায়রিটা দেখতে অনেক সুন্দর।। ডায়রিটা নিয়ে ভাবতে লাগলো—“খুলে দেখবো কি আছে এতে। না না কারো অনুমতি ছাড়া তার ডায়রি ধরা ঠিক না এটা কোনো ক্রাইমের চেয়ে কম না।। আবার দেখতেও ইচ্ছে করছে কি আছে এতে।।” তাই সাত পাঁচ না ভেবে ডায়রি খুলে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মিম।।
ডায়রির প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা ছিলো— ” প্রথম দেখায় আমি নিসাকে ভালোবেসে ফেলি।। ওই ছিলো আমার প্রথম ভালোবাসা।।” বুঝতে বাকি রইলো না এটা অর্ণবের ডায়রি।।এই লেখাটা পড়ার পরই মাথাটা ভোঁ চক্কর দেয়া শুরু করলো চারপাশ শুধু ঘুরছে।। এরপর আর পড়ার সাহস করেনি মিম।। কারণ মিম জানে এরপর যা লেখা আছে তা পড়ার মতো সাহস তার নেই।। হয়তো তা দেখে হজম করতে পারতো না মিম।। তারপর থেকেই ছাদে এসে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে আর চোখের পানির বিসর্জন দিতে থাকে।।

অর্ণব অনেক্ষন ধরে মিমকে খুঁজছে।। পুরো বাড়ি খুঁজে যখন পেলো না তখন ছাদে গিয়ে দেখে মিম বৃষ্টির মদ্ধে দাড়িয়ে আছে।।

হঠাৎ খেয়াল করি আমার গায়ে বৃষ্টি পরছে না।। তাহলে কি বৃষ্টি থেমে গেলো নাকি ভালো করে খেয়াল করে দেখি যে অন্য জায়গায় ঠিকই বৃষ্টি পড়ছে।। তাই উপরে তাকিয়ে দেখি মাথার উপর ছাতা।। পিছনে ফিরে দেখি অর্ণব ছাতা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

মিমের দিকে তাকিয়ে অর্ণব বুঝতে পারলো যে মিম কান্না করেছে…..চোখগুলো একদম লাল হয়ে আছে।। বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি এক হয়ে আছে তবুও অর্ণব বুঝতে পারলো মিম কান্না করেছে।। মিমকে কান্না করতে দেখে হঠাৎই অর্ণবের বুকটা ধঁক করে উঠলো।। কেনো যেনো ওর বুকের ভিতরে এক চাপা কষ্ট হচ্ছে তা সে নিজেও জানেনা।। কিন্তু অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর।।

অর্ণবঃ এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো?? ঠান্ডা লেগে যাবে।।

মিমঃ…………

অর্ণবঃ কি হয়েছে তোমার??

মিমঃ…….

অর্ণবঃ কিছু হয়েছে কি?? কথা বলছো না কেনো??

মিমঃ কিছু হয়নি আমার।। আপনার চিন্তা করতে হবেনা।। আর কিছু হলেও বা কি তাতে তো আপনার কিছু যায় আসে না।। (কান্না জড়িত কন্ঠে)

মিমের এমন কথায় অর্ণব পুরাই অবাক।। আগে তো মিম কখনো ওর সাথে এভাবে কথা বলেনি।।

অর্ণবঃ এভাবে কথা বলছো কেনো!! কি হয়েছে তোমার!!

মিমঃ কিছু হয়নি আমার।। আপনি এখান থেকে যান।।

অর্ণবঃ তুমি যাবে না।। এভাবে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।।

মিমঃ আমি পরে যাবে।। আপনার চিন্তা করতে হবে না।।আপনি চলে যান এখান থেকে।।

অর্ণব চলে আসে ছাদ থেকে মনে হাজার প্রশ্ন নিয়ে। মিম কেনো কান্না করছে অর্ণব তা জানেনা।।
·
·
·
চলবে…………………….