হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
1341

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ২৭ ও অন্তিম পর্ব

আলু ভাইয়া ও আলু ভাইয়াআয়ায়ায়া
বারিশঃ চেঁচাচ্ছিস কেন?কানের পর্দা ফেটে যাবে।আস্তে চিল্লা(চিল্লিয়ে)
আলয়ঃ তোকে কতবার বলেছি আমি আলু নই আলয়।আমাকে আলু না ডাকতে।(চেঁচিয়ে)
আলু ভাইয়ায়ায়ায়ায়া
বারিশঃ ব্রো যা ওর কাছে।যতক্ষণ না ওর কাছে যাচ্ছিস চেঁচিয়ে কান খাবে।
আলয়ঃ হু
বলে হেলেদুলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা রুমে ঢুকল।
বৃষ্টিঃ বারিশ মেঘালয় কোথায়?
বারিশঃ উপরে।
নীলাঃ বারিশ বাবা যা তো দেখ ওরা রেডি কি না।রেডি হলে নিচে নিয়ে যায়।
বারিশঃ ওক্কে পিমি।
বলে কিছুদুর গিয়ে আবার পিছন ফিরেঃ মণি বর্ষণা কি রেডি?
বর্ষাঃ কি জানি।দেখ ওর বাপ ওকে রেডি করেছে কি না?
বারিশঃ উহু হয় নি।বলবে “দেখ তোর শশুর তোর বউকে রেডি করেছে কি না”
বলেই উপরে দৌঁড়াল।
বৃষ্টিঃ দাঁড়া বজ্জাত ছেলে আজ তোর একদিন কি আমার।বড্ড পেঁকেছিস।
বারিশঃ মম স্পেলিং মিস্টেক আমি ফল নাকি যে পাঁকব?(দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে)
বৃষ্টিঃ তবে রে??(চোখ রাঙিয়ে)
বর্ষাঃ খবরদার বিষ্ঠা আমার জামাইকে একদম বকবি না।না তো চোখ রাঙ্গাবি।
বৃষ্টিঃ তুই থাক তোর জামাই নিয়ে।খবরদার তোর জামাই যেন আমার বউমার আশেপাশে না ঘেঁষে।
নীলাঃ হাহাহাহা
বর্ষাঃ দাঁত কেলাচ্ছিস ক্যা?
নীলাঃ হাসব না?বৃষ্টি দেখ গিয়ে তোর ছেলে নির্ঘাত মেঘালয়ের কাছে না গিয়ে বর্ষণার রুমে উঁকিঝুঁকি মারছে।
শ্রাবণঃ হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিস।(ওদের দিকে আসতে আসতে)ছেলে আমার বউ পাগল।অবশ্য তা দেখে অনেকের জ্বলে(আড়চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে)
বৃষ্টি আকাশের দিকে খাইয়া ফালাইমু লুকে তাকাল।তা দেখে বর্ষা,নীলা আর শ্রাবণ মিটিমিটি হাসছে।
বর্ষাঃ আজ এখানে যদি মেঘু থাকত(মনমরা হয়ে)
বর্ষার কথা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেল।
নীলা+বৃষ্টিঃ I really miss her(মুখ ভার করে)
শ্রাবণঃ আই আলসো(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

ওদিকে আলয় রুমে ঢুকেঃকি হয়..
বাকিটা আর বলতে পারল না।হা করে সামনে তাকিয়ে আছে।ওর সামনে যেন কোনো পরী দাঁড়িয়ে আছে।ছোট্ট পরী।ওর মেঘপরী।
আলু ভাইয়াআয়া দেখতো আমাকে কেমন লাগছে?
আলয়ঃ সুন্দর।
–শুধু সুন্দর (মুখ লটকিয়ে)
আলয়ঃ হু শুধু সুন্দর।
–তোকে বান্দর লাগছে(দাঁতে দাঁত চেপে)
আলয়ঃ হুম বান্দরনীর বরকে তো বান্দরই লাগবে।
–এ্যাঁ আসছে?তোকে আমি বিয়ে করব না।
আলয়ঃ আমি কখন বললাম আমি তোর বর?আমি কোন সুখে তোকে বিয়ে করব।আমি তো আমাদের ক্লাসের ইতুকে বি..
–আলুউউউ ভাইয়ায়ায়ায়া খবরদার আবার যদি ইতুদির নাম নিয়েছিস তো মুখ সেলাই করে দেব।
আলয়ঃ কথায় কথায় ভাইয়া ডাকিস কেন?আমি তোর কোন জন্মের ভাইয়ারে?
–এই জন্মের।হিহিহি।
আলয়ঃ মেঘায়ায়া
মেঘা গাল ফুলিয়ে বসে পড়ল।
আলয়ঃ এখন আবার কি হলো গাল ফুলালি কেন?
মেঘাঃ তুমি আমাকে ‘মেঘা’ ডাকলে কেন?
আলয়ঃ আচ্ছা সরি বাবা।আর মেঘা ডাকব না ডিয়ার মেঘপরী।আচ্ছা এসব বাদ দে।তুই রেডি হয়ে গেছিস তো রুমে কি করছিস।বাইরে গেলি না।
মেঘাঃ নতুন ড্রেসে কেমন লাগছে তোকে সবার আগে দেখাব বলে।অবশ্য পাপা তোর আগে দেখেছে।
আলয়ঃ সমস্যা নেই শশুর পাপা দেখতেই পারে।এখন তো নিচে চল।
মেঘাঃ চল।
বলে আলয়ের এক আঙুল ধরে নিচের দিকে নামল।

ওদিকে বারিশ বর্ষণার রুমে গিয়ে দেখে বর্ষণা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
বারিশঃ গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?
বারিশের কথা শুনে বর্ষণা মাথা উঁচু করে তাকাল।মুখ বাকিয়েঃ এতক্ষণে আসার সময় হয়েছে।
বারিশঃ তুই বুঝি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি?
বর্ষণা রাগি চোখে বারিশের দিকে তাকাল।
বারিশঃ হিহি।তোকে না খুউউউব সুন্দর লাগছে।এবার নিচে চল।
বর্ষণা আর কিছু না বলে বারিশের আগে আগেই গটগটিয়ে বেরিয়ে গেল।
পিছন থেকে বারিশঃ আরে আমার জন্য তো দাঁড়া।বর্ষিরাণী দাঁড়া।উফ এই মেয়ের নাকের ডগায় সবসময় রাগ থাকে।হয়েছে পুরো হিটলার শশুরের মতো।(শেষের লাইন দুইটা বিড়বিড়িয়ে)
🌿
কেটে গেছে আরো ৯টি বছর।আজ এসআর হাউজ আবার সাজানো হয়েছে।একে একে অতিথিরা আসছে।বাড়ির বাচ্চাদের জন্মদিন বলে কথা।
মেঘ-মেঘলার মেয়ে মেঘান্বিতা শর্মা মেঘা আর বর্ষা-বর্ষণের মেয়ে বন্দিতা সেন বর্ষণা আজ ৯বছরে পা দিয়েছে এবং আলয় আর বারিশ ১০বছরে।
তাই বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
🌿
নীলাঃ বাহ দুজনকে খুব মানিয়েছে।একদম রাজযোটক লাগছে।কারো নজর যেন না লাগে।
উপর থেকে নেমে আসা মেঘালয়(মেঘা+আলয়)কে দেখে।
আকাশঃ ওদের একই রঙের ড্রেস কে কিনে দিয়েছে?
মেঘঃ আমি।কেন পছন্দ হয় নি?
আকাশঃ তোর চয়েজ খারাপ কখন হয়?
বারিশঃ বাহ শুধু মেঘালয়ের প্রশংসা করো।আমাদের কারো চোখে পড়ে না।আমি আর বর্ষণাও তো একই রঙের ড্রেস পড়েছি।
বৃষ্টিঃ কেন প্রশংসা করব না বাবা তোমার মা আছে না প্রশংসা করার জন্য।
বারিশঃ তাহলে বল বল আমাদের কেমন মানিয়েছে?(উৎফল্লিত হয়ে)
বৃষ্টিঃ অপ্সরার সাথে হিরো আলমকে যেমন মানায়।
বৃষ্টির কথা শুনে সবাইকে অবাক হয়ে বৃষ্টির দিকে তাকাল।মেঘা,বর্ষণা আর আলয় ফিক করে হেসে দিল।
বারিশঃ ডেড ইনি সত্যি সত্যি আমার মা-ই তো?(নাক-মুখ কুঁচকে)
বৃষ্টি রেগেঃ না আমি তোর মা না।তকে আমি ডাস্টবিনে কুঁড়িয়ে পেয়েছিলাম।
বারিশ অসহায় দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকাল।
শ্রাবণঃ মিথ্যা কথা।আমার বারিশ সোনাকে ডাস্টবিনে কুঁড়িয়ে পাই নি।তোকে পেয়েছিলাম।
আকাশঃ আমি সাক্ষী আছি।(নির্লিপ্ত ভাবে)
বৃষ্টি রাগে কটমট করে আকাশ আর শ্রাবণের দিকে তাকাল।দুজনেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আকাশ আলয়কে আর শ্রাবণ বারিশকে কোলে নিল।
বর্ষণঃ (বর্ষণাকে কোলে নিয়ে) মাম্মা চল কেক কাটবে।সময় হয়ে গেছে সবাই চল এখন কেক কাটা হয়ে।
মেঘা ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়েঃ মাম্মায়া।আই মিস মাম্মা।
তখন আচমকা হলের লাইট অফ হয়ে গেল।কোথা থেকেএকটা সুর ভেসে এলো।আবছা আলোয় সবাই দেখতে পেল একটা মেয়ে ওদের পিঠ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর গান গাইছেঃ

“চাঁদ তারাদের মতো আমার আকাশ জুড়ে আলো ছড়াবি সারাক্ষণ
মেঘের বাড়ি পেরিয়ে চাঁদের পাহাড় ঘিরে সোনা রঙে রাঙ্গা এ জীবন
পক্ষীরাজে চড়ে
কোন সে তেপান্তরে
রাজার কুমার এসে কানে কানে বলে আজকে সোনার জন্মদিন জন্মদিন
শুভ জন্মদিন আআ আআ শুভ জন্মদিন”(মেয়েটি ওদের দিকে ফিরে)
সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠল।সামনের মেয়েটিকে দেখে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল।

“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ” (৪)(সবাই একসাথে)
মেয়েটি এসে মেঘাকে কোলে নিয়েঃ
“কোন সে সোনার কাঠির জাদুর ছোঁয়ায়
সোনার জীবন যেন সুখে ভরে যায়।
ভালোবাসা স্নেহ আর মমতার ঝুলি(মেঘার মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে)
চাঁদের বুড়ি যেন শরীরে বিছায়
মায়ের আঁচল যেন জড়িয়ে রাখে
সোনা আমার যেন কাঁধে মাতিয়ে থাকে(মেঘাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে)
চাঁদনিরা সুরে সুরে গানে বলে যায়
শুভ জন্মদিন আ আ আ শুভ জন্মদিন আয়ায়ায়া”
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”(৪)(সবাই একসাথে)
গান শেষে মেঘাঃ মাম্মা(খুশিতে লাফিয়ে)
মেঘলাঃ আমার সোনাটা।উম্মাহ।শুভ জন্মদিন মামনী।
মেঘাঃ থ্যাংকুউউ মাম্মা।(মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে)
মেঘঃ বাহ মাকে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেল।আর আমি যে এত কষ্ট করে এই সারপ্রাইজটা দিলাম।(গাল ফুলিয়ে)
মেঘলাঃ ইউ ক্যান জয়েন আস।ইফ ইউ ওয়ান্ট।
মেঘ গিয়ে মেঘলা আর মেঘাকে জড়িয়ে ধরল।
মেঘঃ মাম্মা সারপ্রাইজটা কেমন লাগল?
মেঘাঃ খুউউউব ভালো।
বর্ষাঃ কিন্তু দাভাই মেঘু এখানে?
নীলাঃ মেঘু তুই না কাল রাতের ফ্লাইটে ইউকে চলে গেলি।
মেঘলাঃ না।লাস্ট মোমেন্টে যাওয়া ক্যানসেল করে দিয়েছি।
আকাশঃ বাট হোয়াই?কত বড় অপরচুনিটি ছিল?
মেঘলাঃ নট গেটার দ্যান মাই ফ্যামিলি।তাছাড়া আজ আমার সোনার জন্মদিন আমি কি করে দূর দেশে যেতে পারি?
মেঘঃ তাই কাল লাস্ট মোমেন্টে ফ্লাইটে উঠে নি।
শ্রাবণঃ তুই জানতিস😑
মেঘঃ আমি না জানলে কে জানবে?
বর্ষাঃ তাহলে কাল না এসে আজ।
মেঘলাঃ ভাবলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দিই।তাই কাল বাড়ি না ফিরে একটা হোটেলে স্ট্যান্ড করি।আর কেক কাটার আগে এসে সারপ্রাইজ দিই।হিহি।
মেঘঃ প্ল্যানটা কিন্তু আমার ছিল(ভাব নিয়ে)
মেঘলাঃ এ্যাঁ আসছে?(মুখ বাকিয়ে)
বৃষ্টিঃ মেঘুও যখন এসে গেছে তখন চল কেক কাটা হোক।
সবাইঃ হ্যাঁ চল।
কেক কাটার অনুষ্ঠান হলে অতিথিদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো।
আলয়ঃ মামনি ও মামনি
মেঘলাঃ বল সোনা।
আলয়ঃ আমাকে বার্থডে গিফট দেবে না?(ঠোঁট উল্টিয়ে)
মেঘলাঃ দেব তো বাবু বল তোর কি গিফট চাই?
আলয়ঃ বলব?(লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে)
মেঘলাঃ লজ্জা পেতে হবে না সোনা বলে ফেল।মামনির কাছে লজ্জা কিসের।
আলয়ঃ মামনি তোমার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেবে(লাজুক ভাবে)
মেঘা আলয়ের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মেঘের কোলে মুখ লুকায়।
আলয়ঃ ও মামনি বিয়ে দেবে??
মেঘলাঃ আগে বড় হো বাবা।তারপর।
বারিশঃ ও মণি তুমিও তোমার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেবে?
নীলাঃ আমি বোঝতে পারছি না এই পিচ্চিরা কোথা থেকে আমদানি হয়েছে?এই তোদের বয়স কতরে বিয়ের জন্য মরছিস।আর এদের দেখ লজ্জায় কেমন লাল নীল হলুদ হচ্ছে।যেন নয়া নবেলি দুলহান।
আলয়+বারিশঃ বিয়ে করতে আবার বয়স লাগে নাকি।
মেঘা+বর্ষণাঃ লজ্জা কি শুধু দুলহানরাই পায়।আলু ভাইয়া/বাশ ভাইয়া যদি আমাকে বিয়ে করে তাহলে আমি লজ্জা পাব না বুঝি।(লাজুক সুরে)
আলয়ঃ আমি আলু না আলয় আর তোর ভাইয়া তো নই-ই।
বারিশঃ আমি বাশ না বারিশ আর তোর ভাইয়া তো নই-ই।
দুজনে একসাথে।
সবাই হেসে দিল।
🌿
রাত ১১টায় মেঘলা রুমে এলো।ততক্ষণে মেঘ মেঘাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
মেঘলা আসতেই মেঘ মেঘলাকে কোলে তুলে নিল।
মেঘলাঃ এই কি করছ?আরে নামাও আমায়।
মেঘঃ হুশ নো সাউন্ড।
মেঘ মেঘলাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে ডিভানে বসল।
মেঘঃ আজ সেদিনের নয় বছর পার হলো।
মেঘলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকাল।
মেঘ মেঘলার হাতে চুমু খেয়েঃ আজ শুধু মেঘাদের জন্মদিন নয় তোরও।দ্বিতীয় জন্মের।
মেঘলাঃ তুমি এই দিনের কথা কবে ভুলবে বল তো?
মেঘঃ এ জীবনে না।সেই দিনের মতো ভয় আমি আর কোনোদিনও পাই নি।তোকে হারানোর ভয়।
বলে মেঘলাকে আরো শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরল।মেঘের অস্থিরতা মেঘলা বুঝতে পেরে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।
মেঘঃ মনে আছে ওইদিনের কথা?
মেঘলাঃ তুমি ভুলতে দিয়েছ?
মেঘ স্মিত হাসল।প্রতিবছরের ন্যায় আজও ওই দিনের স্মৃতি চারণ করল।
ফ্লাসব্যাক
কিছুক্ষণ পর নার্স এসেঃ মিসের মেঘলার বাড়ির লোক?
ওরা এগিয়ে আসলে
নার্সঃ মিসেস মেঘলার অবস্থা বেশি ভালো না।প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে।এক্ষুনি O- ব্লাডের ব্যবস্থা করুন।নইলে..
আর কিছু না বলে নার্স ভিতরে চলে গেলেন।
বর্ষণ,শ্রাবণ,আকাশ,মেঘ-মেঘলা আর নীলার বাবা ব্লাডের জোগার করতে বেরিয়ে গেলেন।মেঘ নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে।শূন্যদৃষ্টিতে অটির দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
এক ঘণ্টা পার হলেও কেউ ব্লাড নিয়ে আসতে পারল না।ওদিকে অটির ভিতরে মেঘলা একটা মেয়েসন্তানের জন্ম দিল।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাচ্চাটি কাঁদে নি।চোখ খুলেও তাকায় নি।ডক্টর ভালোভাবে চেক করে বুঝলেন বাচ্চাটির শ্বাস খুব ক্ষীণভাবে চলছে।
ডক্টরঃ ও গড নার্স তাড়াতাড়ি ইলেকট্রিক শকের ব্যবস্থা করো।আশার আলো এখনো অবশিষ্ট।ডু ফাস্ট।
নার্স ইলেক্ট্রিক শকের ব্যবস্থা করলে।মৃদু মাত্রায় শক দেওয়া হয়।কিছুক্ষণ বাদেই বাচ্চাটির শ্বাস-প্রঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়।বাচ্চাটি পিটপিট করে চোখ খুলেই কান্না শুরু করে।ডক্টর একটু নিশ্চিত হোন।কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা করে নার্সকে দিয়ে বাচ্চাটিকে বাইরে পাঠিয়ে দেন।
নার্স বাচ্চাটিকে নিয়ে বাইরে এলে মেঘের মা বাচ্চাটিকে কোলে নেন।মেঘের সেদিকে লক্ষ নেই।ও নির্লিপ্ত ভাবেই বসে আছে।মেঘের মা একবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটিকে বুকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেন।
নার্সঃ পেশেন্টের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ আপনাদের ব্লাড জোগাড় হয়েছে?
আকাশঃ হ্যাঁ।ব্লাড এনেছি(দৌড়ে এসে)প্লিজ মেঘলাকে ঠিক করে দিন।
নার্স ব্লাড নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন।
আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেছে।ভিতরে কি হচ্ছে তা সম্পর্কে বাইরের মানুষগুলো অজ্ঞ।কিছুক্ষণ আগেই একজন নার্স বর্ষণের কোলে বর্ষণাকে দিয়ে গেছেন।বর্ষাও সুস্থ আছে।
অটির লাইট অফ হয়ে গেল।ডক্টর বেরিয়ে এলে।
বর্ষণঃ ড..ডক্টর আ.মার বোন?(কাঁপা-কাঁপা গলায়)
ডক্টর মাথা নিচে করে ফেললেন।
আকাশঃ বলছেন না কেন মে..মেঘলা ঠিক আছে তো?(ভীত কণ্ঠে)
ডক্টরঃ আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি কিন্তু উনি রেসপন্স করছেন না।হার্ট প্রায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আমাদের হাতে আর কিছু নেই।
সবাই স্তব্ধ।মেঘের মায়ের কোলে বাচ্চাটি কান্না করছে।উনি শত চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারছেন না।
ওদিকে মেঘলার মায়ের অবস্থা খারাপ।মেয়ের এই অবস্থা শুনে তিনি জ্ঞান হারান।উনাকে পাশের কেবিনে দেওয়া হয়।
মেঘের মা কান্নারত বাচ্চাটিকে নিয়ে মেঘের পাশের বসলেন।মেঘের পিঠে হাত রেখেঃ বাবু দেখ তোর মেয়ে।দেখ না বাবু তোর অংশ তোর মেয়েকে।দেখ মেঘলার মতো দেখতে হয়েছে।দেখ না তোর কাছে যাওয়ার জন্য কান্না করছে।ওর মায়ের কাছেও যেতে চাইছে।ওকে নিয়ে ওর মায়ের কাছে যা।
মেঘের টনক নড়ল।নিজের মেয়েকে কোলে নিল।বাচ্চাটি বাবার কোলে গিয়ে কান্না থামিয়ে দিল।মেঘের দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।ছোট ছোট হাত নাড়িয়ে মেঘকে ধরতে চাইল।মেঘকে মেয়ের চোখ মুখ অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিল।বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠল।
মেঘঃ মা..আমার মে..ঘলা আ..মার প..প্রেম..তরঙ্গী।আমি ওর কাছে যাব।
বলেও মেয়েকে নিয়েই মেঘলার কাছে চলে গেল।
মেঘলাকে সাদা চাদর দিয়ে সাদা বেডে শুয়ানো হয়েছে।মেঘ ধীর পায়ে মেঘলার পাশে বসল।
শীতল কণ্ঠেঃ প..প্রেমতরঙ্গী..
———
মেঘঃ তুই কি তোর প্রেমোদকের ডাকে সাড়া দিবি না?
———
মেঘঃ উঠ না প্লিজ।এরকম মজা করিস না।তোকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব বল।১৪বছর তোর থেকে দূরে থেকে প্রতিটা ক্ষণে তোকে মিস করেছি।অনেক কষ্টে ১৪টা বছর পার করেছি।তখন তো এই আশা ছিল আমার প্রেমতরঙ্গী বেঁচে আছে,সুস্থ আছে ভালো আছে।কিন্তু এখন?এখন আমি কোন আশায় বাঁচব?আমার জন্য ফিরে আয় না।তুই তো তোর জীবনের সব লড়াইয়ে জয়ী হয়েছিস আজ কেন পরাজয় স্বীকার করছিস।এই জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরে আয় আমার কাছে।ঠিক আছে তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না।ওর কথা তো ভাব।দেখ আমাদের মেয়েকে।
বলে বাচ্চাটিকে মেঘলার পাশে শুইয়ে দিল।বাচ্চাটিও মায়ের সংস্পর্শে এসে আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।ছট ছোট হাতে মেঘলার জামা ধরে টানতে লাগল।ওর চোখ বলছেঃ উঠ মা উঠ আমাকে কোলে নাও।
মেঘঃ ওর জন্য ফিরে আয়।তুই তো নিজের জীবন থেকেই বুঝেছিস মা ছাড়া একটা সন্তানের কিরকম অবস্থা হয়।প্রতিটি পদে পদে কিভাবে হেনস্তা হতে হয়। তুই কি চাস ওর অবস্থাও সেইরকম হোক।জানিস তো এই সমাজের লোকেদের।ওকে দেখলে কি বলবে- অপয়া,অলক্ষ্মী।
বলবে ওর জন্যই ওর মা মারা গেছে।তুই তো সবটা জানিস।ও কি সে সব সহ্য করতে পারবে বল।তুই কি চাস তোর মেয়েকে লোকে এসব বলুক।যদি এটাই চেয়ে থাকিস তো ফিরিস না।ফিরতে হবে না তোকে।উপর থেকে দেখিস সবাই তোর মেয়েকে কীভাবে হেনস্তা করে।তোর কি তুই তো ভালোই থাকবি।তোকে ছাড়া আমার ছন্নছাড়া জীবন দেখে হাসবি।
মেঘ দেখতে পেল মেঘলার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।খুব ভয় পেয়ে গেল।তাড়াতাড়ি ডক্টরকে ডাকল।ডক্টর ওকে বাইরে যেতে বললেন।
কিছুক্ষণ বাদে ডক্টর বললেনঃ এই যাত্রায় বোধহয় বেঁচে গেছেন।তবে জ্ঞান ফিরার আগে কিছু বলতে পারছি না।
৪৮ঘন্টা পর মেঘলার জ্ঞান ফিরে।মেয়েকে বুকে নিয়ে খুব কান্না করে।আনন্দের কান্না।
ফ্লাশব্যাক এন্ড
মেঘলাঃ সেদিন যদি আমি না ফিরতাম?
মেঘঃ মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতাম।
মেঘলাঃ মৃত মানুষকে?
মেঘঃ প্লিজ প্রেমতরঙ্গী এসব আর বলিস না।আমার ভালো লাগে না।যেকোনো মূল্যে তোকে হারাতে পারব না।
বলে মেঘলার কপালে আলতো করে অধর ছোঁয়াল।
মেঘঃ একটা গান ধর না।
মেঘলাঃ যদি তুমি সুর মিলাও।
মেঘঃ ঠিক আছে।আজ রাতটা না হয় এখানে গান গেয়ে চন্দ্রবিলাশ করে কাটাই।
মেঘলাঃ হুম।
মেঘলাঃ
“#হয়ত_তোমারই_জন্য
হয়েছি প্রেমে জীবন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই”
মেঘঃ
“যদি কখনো একান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
ছুটে ছুটে গেছি তাই”
মেঘলাঃ
“আমি যে নিজেই মত্ত্ব
জানি না তোমার শর্ত
আমি যে নিজেই মত্ত্ব
জানি না তোমার শর্ত
যদি বা ঘটে অনর্থ
তবুও তোমায় চাই।”
মেঘঃ
“#হয়ত_তোমারই_জন্য
হয়েছি প্রেমে জীবন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই।”
মেঘলাঃ
“আমি যে দুরন্ত
দু চোখে অনন্ত
ঝড়ের দিগন্ত
জুড়ে স্বপ্ন ছড়াই”
মেঘঃ
“তুমি তো বল নি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ
তুমি তো বল নি মন্দ
তবু কেন প্রতিবন্ধ
রেখ না মনে দ্বন্দ্ব
সব ছেড়ে চল যাইই”
মেঘ+মেঘলাঃ
“#হয়ত_তোমারই_জন্য
হয়েছি প্রেমে জীবন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই”(একে অপরের হাতে হাত রেখে)

(সমাপ্ত)