অবহেলার সংসার পর্ব-০২

0
4091

#অবহেলার_সংসার
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_০২

জান্নাতুন তুমি বাচ্চাটা abortion করো।গতরাতে যখন বললে তুমি মা হতে চলেছো আর আমি বাবা হবো তখন খুশি মনে হয়েছিলো কিন্তু পরে সারারাত ভেবে দেখলাম বাচ্চাটা এখন আমাদের দরকার নেই।বাচ্চাটা এখন না নেওয়ার প্রথম কারন হচ্ছে তোমার বয়স কম আর বাচ্চাটা এখন নিলে তোমার ক্ষতি হবে তাই এখন বাচ্চাটা না নেওয়াই ভালো।

এগুলো আপনি কি বলতেছেন আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি ঘুম থেকে উঠে হ‍্যা?আমাদের এটা প্রথম সন্তান সেটা আপনি নষ্ট করতে বলতেছেন।সন্তান দেওয়ার মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্ যখন দিয়েছে তখন আপনি নষ্ট করতে বলতেছেন কেনো।

আমার মাথা নষ্ট হয় নাই।আমি অনেক ভেবে ডিসিশন নিয়েছি এখন বাচ্চাটা না নেওয়ায় ভালো আমাদের জন‍্য।তাই আমি আজকে অফিসে যাবো না, সোজা তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো বাচ্চাটা abortion করার জন‍্য।

আপনি এতো পাষাণ হবেন কখনো ভাবতে পারি নাই।আপনি কি মানুষ,পিতা হওয়া সবার ভাগ‍্যে জুটে না? পৃথিবীতে কতো ছেলে -মেয়ে আছে বিয়ের পরে কখনো সন্তান জন্ম দিতে পারে না,বাবা-মা ডাক শুনতে পায় না। তারা কতো কান্দা কাটি করে আল্লাহ্ কাছে বাচ্চা চায় কিন্তু কখনো বাচ্চা জন্ম হয় না।আর আপনি বাবা হওয়ার কথা শুনেও বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলতেছেন।আপনি তো বাবা নামে কলঙ্ক।

আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে বাচ্চা তুমি এখন নিতে পারবে না।আর এখন বাবা ডাক শুনার ইচ্ছা নাই আমার, যেমন আছি তেমনে ভালো আছি।

আপনার পা দুটো ধরি প্লিজ আপনি আমার বাচ্চাটাকে নষ্ট করবেন না।আল্লাহ্ এতো বড় পাপ কখনো সর্য‍্য করবে না।আল্লাহ্ যখন দিয়েছে তখন বাচ্চাটা পৃথিবীতে আনতে দিন।(আমার স্বামীর পা জরিয়ে ধরে বলতেছি )

আমি একবার বলেছি না,বাচ্চা এখন নিতে পারবে না তো পারবে না।এখন আমার পা ছাড়ো আমি ফ্রেস হতে বাথরুমে যাবো আর হ‍্যা তুমি দশটার দিকে রেডি থাকিও তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে যেথে হবে।

আপনি আমাকে বলুন কেনো বাচ্চা নিবেন না। আপনার বাচ্চাটাই যদি সমস‍্যা করে তাহলে আমি এই বাড়ি আর আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো তাও আমি আমার বাচ্চা নষ্ট করতে দিবো না আপনাকে।

আমাকে ছেড়ে কই যাবি আমি তোকে ছেড়ে দেওয়ার জন‍্য বিয়ে করেছি কি? আমিও দেখবো কেমন করে তুই বাচ্চাটা জন্ম দেশ?

আহ্ আমাকে ছেড়ে দিন আমার লাগতেছি তো।(আমার চূলগুলো ওনার হাত দিয়ে টেনে ধরেছে )

এ তোকে কে অধিকার দিয়েছে আমার কথার উপরে কথা বলার?এতোক্ষন ভালো ব‍্যবহার দেখালাম সেটা বুঝলি না,তাহলে এখন দেখবি আমি রাগলে কি করতে পারি?

প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর আপনার কথার উপরে কথা বলবো না।তাও আমাকে ছেড়ে দিন।

তোকে তো আর ছেড়ে দিবো না,আজকে দেখাবো এই ঈমান রাগলে কি করতে পারে?

এই কথা বলে দেখতেছি আমার স্বামী ওনার কোমর থেকে ব‍্যাল্ট খুলতেছে।ওনার কোমর থেকে ব‍্যাল্ট খুলা দেখে আমার জীবন প্রায় যায় যায় অবস্হা আজকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আমাকে।বাসায় আমার শাশুড়ি,ননদী,শশুর আছে তাড়া কখনো ঈমানকে আটকাতে আসবে না,কারন সবাই আমার স্বামীকে ভয় পায়।

এবার দেখ কি অবস্থা করি তোর?

এই বলে শুরু হলো মারার অত‍্যাচার।এতো করে বললাম যে,আমাকে ক্ষমা করে দিন কিন্তু আমার কথা না শুনে শুধু মেরে চলতেছে আমাকে।এক সময় আমি মার সয‍‍্য করতে না পেরে জ্ঞান হারাই তারপর কিছু মনে নেই আমার।
আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে আবিষ্কার করি একটা ব‍‍েডের উপরে।সারা শরীল ব‍্যথায় ভরে গেছে মনে হয়।আমি এখন কই এটা ভেবে পাচ্ছি না।সোয়া থেকে চোখ দুটো খুলে দেখি আমার শাশুড়ি আমার পাশে বসে আছে।

জান্নাতুন মা তোর জ্ঞান ফিরেছে আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ তোর জ্ঞান ফিরে দিয়েছে এটাই শুকরিয়া।তো মা এখন কেমন লাগতেছে তোর।

এখন ভালো লাগতে মা।আচ্ছা মা আমি এখন কই?

তুই এখন হাসপাতালে আছিস।কেনো মা?

হাসপাতালের কথা শুনে চোখ দিয়ে পানি ঝর ঝর করে পড়তেছে কারন এটা ভেবে যে আমি মা হয়ে আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না।আল্লাহ্ আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না।

জান্নাতুন মা তুই কান্না করতেছিস কেনো।তোর কি খারাপ লাগতেছে আমি কি ডাক্তার ডাকবো?ঈমান বাহিরে আছে,

আমি কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছি।তাও অনেক কষ্টে আমার শাশুড়ি মাকে বললাম,মা আমি ভালো আছি ডাক্তার ডাকার দরকার নাই।

তাহলে মা তুই কান্না করতেছিস কেনো?

মা,আমি আমার সন্তানকে বাঁচাতে পাড়ি নি।আমার সন্তান পৃথিবীতে আসার আগে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

তোর সন্তান মানে, তুই এগুলো কি বলতেছি?

তারপর প্রথম থেকে সব খুলে বললাম আমার শাশুড়ি মাকে।

এতো কিছু হয়ে গেছে তুই আগে আমাকে বলবি না।আমি এই বিষয়ে ঈমানের সাথে পরে কথা বলবো।দিন দিন ছেলেটা আমার খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু তুই শিউর হলি কেমন করে যে তোর বাচ্চা নষ্ট করা হয়েছে।

মা আপনার ছেলে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করার জন‍্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি বাচ্চা নষ্ট করবো না দেখে আজকে আমার এই হাল।

জান্নাতুন মা তুই আগে আমাকে বলবি না তুই প্রেগন‍্যান্ট তাহলে আজকে তোর প্রথম সন্তানকে নষ্ট করতে পারতো না।আমার ছেলেটা এতো পাষাণ হবে কখনো ভাবতেই পাড়ি নাই।আমাকে ক্ষমা করে দেশ মা।

মা আমাকে আপনার ছেলে বলতে নিষেধ করেছিলো।

আচ্ছা মা শুন আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে তোর বাচ্চা নষ্ট করে নাই।আবার এটাও শিউর হওয়া যাবে না যে তোর বাচ্চা নষ্ট করতেও পাড়ে।কারন ঈমান যা বলে তাই করে।শুন আমি ডাক্তার এর থেকে শুনে আসতেছি আসলেই কি তোর বাচ্চা নষ্ট করেছে নাকি এখনো আছে।

ঠিক আছে মা আপনি প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসবেন।

ওকে মা।

তারপর আমার শাশুড়ি মা আমার কেবিন থেকে চলে গেলেন।আমার তো চোখের পানি আজকে কোন বাধা মানতেছেই না।চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তেছে।আল্লাহ্ র কাছে প্রার্থনা করতেছি আল্লাহ্ আমার বাচ্চা যদি নষ্ট না করে।

একটু পরে আমার সন্দেহ টাই ঠিক হলো।প্রায় বিশ মিনিট পরে আমার শাশুড়ি মা মুখ কালো করে আমার কেবিনে ঢুকতেছে।শাশুড়ি মার মুখ কালো করে আসা দেখে আমার বুঝতে বাকি রইলো না আর তাও মাকে জিগ্যেসা করতেছি,

মা আপনি মুখ কালো করে আছেন কেনো।

এখন তোকে যা বলবো মা তা শুনে কষ্ট পাস না ওকে।

কেনো মা,

কারন তোর সন্তানকে নষ্ট করে দিয়েছে আমার পাষাণ ছেলে।ওর মনে একটুও কষ্ট হলো না বাচ্চাটা নষ্ট করতেছে।এমন দিন দেখতে হবে এমন এক ছেলেকে জন্ম দিয়ে।আমি দশমাস দশদিন পেটে রেখে এই জঘন‍্য নোংরা মনের ছেলেকে জন্মদিয়েছে ভাবতেই ঘ্রিণা হচ্ছে।জান্নাতুন মা আমাকে তুই ক্ষমা করে।

মা এখানে আপনার কোন দোষ নাই সব দোষ আমার।কপালে লেখাছিলো তাই হয়েছে।পোড়া কপালী হলে যা হয় মা।না পেয়েছি স্বামী সুখ, না পেরেছি সন্তানকে বাঁচাতে।সব দোষ আমার।

(☆পৃথিবীতে অনেক মেয়ে আছে বিয়ের পরে তাদের পরিবারের চাপে বা নিজের ইচ্ছা বিরুদ্ধে জোড় করে বাচ্চা নষ্ট করে দেওয়া হয়।প্রতিটা মেয়েই সন্তান জন্ম দেওয়ার সাত্বগ্রহণ করতে চায় ☆ )

#চলবে,,,, কী ?