অবেলায় ভালোবাসি পর্ব-০৮

0
308

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৮

“আপনি এখানে?”

“তুমি এখানে কি করছো?”

আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তাদের বাসা,তার রুম আর তাকেই জিজ্ঞেস করছে ও এখানে কি করছে? আয়ান বুঝতে পারলো ভুল জায়গায় ভুল কথা বলেছে।

“সরি,তোমার বাবা বলেছে তুমি নেই।তাই এখানে এসেছিলাম ফ্রেশ হতে!”

বলেই এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ুশী যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো,ঘুম এখন তার হাওয়া!কতদিন পর কথা হলো।যদিও দেখা হয়,কিন্তু আয়ান কোনোভাবেই কথা বলে না।আয়ুশীর মাঝে মাঝে মনে হয় আয়ান ওকে এড়িয়ে চলে।
বিকেলে ওরা চলে গেলো।এই টাইম টুকুতে আয়ান যতটা পেরেছে আয়ুশীকে ইগনোর করেছে। আয়ুশী বেচারি কত সুযোগ খুঁজলো বাট কিছুই হলো না।ওরা যেতেই হাজারও মন খারাপ নিয়ে শুয়ে পড়লো।সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম বিরাজ করলো।এই লোকটা আশেপাশে থাকলে ক্লান্তি গুলো কেমন নিমিষেই কেঁ’টে যায় ওর।মৃদু হেসে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো।

ভার্সিটির মাঠে এক কোণায় বসে আছে আয়ুশী,সীমা আর ইভা।ইভা ফোনের চ্যাটিং এ ব্যাস্ত!আর আয়ুশী,সীমা কথায়।ওদের কথাও শুনছে ও।মূলত ওখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে,আর ওরা এখানে আড্ডা দিচ্ছে।

“স্যার আমাকে কেমন এড়িয়ে চলে!”(আয়ুশী)

“কে বললো?”(সীমা)

“আমি বুঝতে পারি সীমা!হয়তো উনার মনে তেমন কোনো ফিলিং নেই আমার জন্য ,যেটা আমার মনে আছে।”

সীমা কিছুক্ষণ ভাবলো।

“স্যার এর মনে ফিলিংস আছে কিনা যাচাই করা যাক?”

“কিভাবে?”

“তোকে নিখোঁজ হতে হবে!”

“হোয়াট?”

“হ্যাঁ,তুই নিখোঁজ হবি।আর আমরা এমন ভাব করবো যেনো তোকে খুঁজছি।আর তারপর স্যার কে বলবো তোকে দেখেছে কিনা।”

“হ্যাঁ, বললেই হলো!”

“আরে আয়ু,কর না!”

“আমি পারবো না!বাদ দে!”

“ইভা তুই কিছু বল!”

“আমি আয়ুর সাথে সহমত!”(ইভা)

সীমা গাল ফুলালো।এর মাঝে ওদের ডাক পড়লো।তাই তিনজন উঠে গেলো।
অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে,বিকেল হয়ে গেছে।সীমা আশে পাশে চোখ বুলালো।দূরে ইভাকে দেখতে পেয়ে ওর কাছে গেলো।

“সারাদিন ফোনে প্রেমালাপ ছাড়া কি তোর কাজ নাই?”

“প্রেমালাপ কই দেখলি!”

“বুঝি বুঝি,আচ্ছা আয়ু কই?”

“জানি না,অনেকক্ষণ ধরে দেখিনা ওকে!”

“দেখ কোন আড়ালে আয়ান স্যারকে দেখছে।”

দুইজনই হেসে দিল।অতঃপর আয়ুশীকে ফোন দিলো।কিন্তু ফোন বন্ধ।

“ওর তো ফোন বন্ধ!চলে গেলো নাকি?”(ইভা)

“আন্টিকে কল দে একটা!”(সীমা)

“আচ্ছা!”(ইভা)

ইভা কল দিতেই সাথে সাথে রিসিভ হলো যেনো ফোনের কাছেই ছিল।ইভা কিছু বলবে তার আগেই মরিয়ম বললো,”ইভা তোমরা কোথায়?আয়ু কই?ফোন বন্ধ কেনো ওর?”

কথা শুনে বুঝলো আয়ুশী বাসায় যায়নি!তাও আন্টিকে শান্ত করতে বললো,” আন্টি,আমাদের আরেকটু লেট হবে।আসলে আয়ুর ফোনে চার্জ নেই।আর ও একটু কাজ করছে।তাই আমাকে বললো আপনাকে যেনো ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই।”

এতক্ষণে মরিয়ম শান্ত হলেন।

“জলদি আসতে বলো,সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।!”

“জি!”

বলেই কেঁটে দিলো।

সীমার দিকে তাকিয়ে বললো,”ও বাসায় যায়নি!”

সীমা চিন্তিত হলো।
“চল খুঁজি, আশে পাশেই আছে হয়তো।”(সীমা)

পুরো ভার্সিটি খুঁজেও আয়ুশীর সন্ধান পেলো না ওরা!এবার ওদের ভয় করছে।আয়ুশী নিখোঁজ আরো আগে থেকে।এদিকে প্রায় সবাই চলে গেছে।কিছু টিচার্স বাদে।ইভা কান্না করে দিবে অবস্থা।আয়ুর মাকে কি বলবে।আর বাসায় গেলে তো আয়ু ফোন করে জানাতো। সীমাও বেশ বিচলিত।ইভা দূরে আয়ানকে দেখে দৌড়ে গেলো।এই ভেবে যে আয়ান যদি দেখে থাকে ওকে।ওর পিছু পিছু সীমাও গেলো।এভাবে কেউ আসাতে বেশ ভরকে গেলো আয়ান।ইভাকে দেখে অবাক হলো।

“হোয়াট হ্যাপেন্ড ইভা? কাঁদছো কেন?”

“স্যার,আপনি আয়ুকে দেখেছেন?”

“না তো!”

ইভা এবার শেষ আশাও হারিয়ে ফেললো।আয়ুশীর উপর রাগ হচ্ছে ওর।কই গেলো ও?

“এনি প্রবলেম?”

“স্যার,আয়ুশী প্রায় ঘন্টা খানেক এরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ!”

“মানে?”

তখন সীমা বললো,”ওর ফোন বন্ধ,বাসাতেও যায়নি!আর ও চলে গেলেও আমাদের বলে যেতো!কিন্তু…”

আয়ন বেশ বিচলিত হলো।আয়ুশী নিখোঁজ শুনে ওর ভালো লাগছে না।

“ভার্সিটি খুঁজেছো পুরো?”

“জি স্যার,নেই কোথাও!”

“আচ্ছা ,চলো বাইরে আশেপাশে খুঁজি!”

ওরা সম্মতি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

রাত আটটা!আয়ুশীর চিহ্ন পর্যন্ত পায়নি ওরা।ইভা কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে।রাস্তার ফুটপাতে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আয়ান।এভাবে একটা মেয়ে নিখোঁজ কি করে হতে পারে?চব্বিশ ঘণ্টার আগে পু’লি’শ কে’স ও নিবে না।তখনই ফোন বেঁজে ওঠে সীমার! আয়ান আর ইভা তাকালো।

“আয়ুর মায়ের ফোন!”

“রিসিভ করো,দেখো কি বলে!যদি ও বাসায় যায়!”

আশা নিয়ে ফোন রিসিভ করে লাউডে দিলো ও ।

“সীমা তোরা কই রে?আর কত দেরি?এত রাত অব্দি কেও বাইরে থাকে?”

সবাই বুঝলো এখনও বাসায় ফিরেনি ও। আয়ান ঝট করে ফোন নিয়ে সালাম দিলো।মরিয়ম উত্তর দিয়ে বললো,”কে?”

“আমি আয়ান!”

“ওহ,তুমি কি ওদের সাথে?”

“জি আন্টি,আসলে কিছু কাজ রয়ে গেছে।তাই ওদের তিনজনের হেল্প নিচ্ছি।আপনি চিন্তা করবেন না!আমি ওদের বাসায় পৌছে দিবো সেফলি!”

মরিয়ম নিশ্চিন্ত হলেন। আয়ান ফোন রেখে দিল।

“স্যার এবার কি হবে?”

আয়ানের মাথা কাজ করছে না।হুট করেই ওর মনে হলো আয়ুশীর লাস্ট লোকেশন দেখা দরকার!অতঃপর আয়ুশীর নাম্বার দিয়ে লাস্ট লোকেশন বের করলো।ভার্সিটির মাঝেই তা!আবারও ভার্সিটি এলো ওরা।দারোয়ানকে বলে গেট খুলালো আয়ান।ভিতরে গিয়ে দেখলো স্টোর রুমে লাস্ট লোকেশন দেখাচ্ছে।কিন্তু স্টোর রুমের দরজা তো বন্ধ বাইরে থেকে।আশাহত হয়ে ওরা বেরিয়ে যেতে নিলেই আয়ান থেমে গেলো।কি ভেবে দরজা খুললো ।যেহেতু তালা মা’রা ছিল না!!ভিতরে অন্ধকার।তাই মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করতেই দেখলো আয়ুশী হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে।তিনজনের জানে পানি এলো এতক্ষণে। আয়ানের মন ও শান্ত হলো।প্রাপ্তির হাসি ফুটলো।কিন্তু মুহূর্তেই রাগ উঠলো ওর।ওকে খুঁজে ওরা হয়রান,আর ও এখানে চুপচাপ বসে আছে।
আয়ান বেশ ধমকেই ডাকলো,”আয়ুশী!”

ওর ধমকে ইভা,সীমা কেঁপে উঠলেও আয়ুশী নিরুত্তর….কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে গেল আয়ানের!হাঁটু গেঁড়ে ওর সামনে বসে মৃদু কণ্ঠে বললো,”আয়ুশী!”

তাও নিরুত্তর।এবার আয়ান ওকে হালকা ধাক্কা দিতেই পড়ে যেতে নিলো আয়ুশী। আয়ান জলদি করে ওকে আগলে নিলো।সেন্স লেস ও!

আয়ুশীর হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে আয়ান।ওখান থেকে কোলে নিয়ে সোজা কাছে কিনারে ফার্মেসিতে এনেছে ওকে।এখানে ছোট খাটো চিকিৎসাও হয় বটে!বেডের পাশে বসেই আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে আছে ও।কি ভয়টাই না পেয়েছিল ও।সীমা আর ইভা তার পাশে বসেই ওদের দেখছে।মূলত এখানে সবাই নীরব!বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ান উঠে বাইরে গেলো।ফিরে এসে বললো,”সীমা,ইভা তোমাদের দিয়ে আসি চলো।ওর জ্ঞান ফিরলে ওকে আমি ই দিয়ে আসবো!”

“স্যার,আপনার যাওয়া লাগবে না!আমরা একাই যেতে পারবো!”

“তা কি করে হয়,অনেক রাত তো।আর হোস্টেলে ঢুকতে দিবে তোমাদের এখন?”

ওরাও চিন্তায় পড়লো।ছয়টার মাঝেই হোস্টেলে ঢুকতে হয়,নাহলে বাইরে থাকো!কি করবে চিন্তায় পড়ে গেলো।কিছুক্ষণ বাদে ইভা বললো,”স্যার আজকে আয়ুশীর সাথেই না হয় থাকবো! এমনেই ঢুকতে দিবে না এখন!তাই ওকে নিয়েই একসাথে যাবো!”

আয়ান আর কিছু বলল না।কিছুক্ষণ বাদে আয়ুশীর জ্ঞান ফিরলো।সীমা,ইভা ওকে জুস আর ফল খাওয়ালো।আপাতত কেও জিজ্ঞেস করলো না কিভাবে স্টোর রুমে গেলো,আর আটকে যখন গেলো কাউকে ডাকলো না কেনো?
কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলো।দুইটা রিকশা নিলো।একটায় সীমা আর ইভাকে উঠতে বলে,অন্যটায় আয়ুশীকে নিয়ে আয়ান বসলো।আয়ুশীর আপাতত এসবে খেয়াল নেই।ওর মাথা এখনো ভন ভন করছে।আয়ুশীর অবস্থা বুঝতে পেরে আয়ান আয়ুশীর মাথা নিজের কাঁধে চেপে ধরলো।আর অন্য হাত দিয়ে ওর হাত আকড়ে ধরলো যাতে পড়ে না যায়।বাসার সামনে আসতেই ওকে ধরে নামালো।রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিলো ও।

আনুমানিক রাত দশটার কাছাকাছি।এখন কেউ নেই তেমন বাইরে।তাই আয়ান আয়ুশীকে কোলে নিলো।এতক্ষণ আয়ুশীর খুব একটা হুশ না থাকলেও,এবার কিছুটা হয়েছে।কিন্তু কিছু বললো না।এমনেই প্রচুর খারাপ লাগছে ওর। আয়ান থার্ড ফ্লোরে ওদের বাসার সামনে আয়ুশীকে নামালো।অতঃপর সীমা আর ইভাকে বললো ওকে ধরে নিয়ে যেতে।আর আন্টিকে যেনো কিছু না বলে।চিন্তা করবে নয়তো।আর যাই হোক এভাবে ওকে কোলে নিয়ে ভিতরে যেতে পারবে না ও।তাই চলে গেলো।

রাত এগারোটা!
খেয়ে দেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো ওরা। প্রায় চোখ লেগে আসবে তখনই আয়ুশীর ফোন বেজে উঠলো।সীমা আর ইভা বেশ বিরক্ত হলো।আজকে অনেক দৌড় ঝাঁপ হলো।তার উপর শান্তিতে ঘুমাতেও পারছে না।

“আয়ু,ফোন ধর!”(ইভা)

আয়ুশী ফোন ধরলো না, আননোন নাম্বার দেখে কেঁটে দিলো।কিছুক্ষণ বাদেই আবার এলো কল।

“আয়ুর বাচ্চা,তোর জন্য কি এখন ঘুমাতেও পারবো না?”(সীমা)

আয়ুশী নিরীহ,ওর ই বা কি করার?সব ভেবে আবার কেঁটে ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো।তার কিছুক্ষণ বাদেই আবার কল আসায় আলো জ্বললো ফোনে।আয়ুশী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বুঝলো না ধরা অব্দি শান্তি নেই।ফোন ধরেই ঝাড়ি দিবে এমন ভাব নিয়ে কল ধরলো।
“ভাই রে ভাই,রাত বিরেতে এত ফোন দিচ্ছেন কেনো?ঘুম টুম নেই নাকি?আপনার না থাকলেও আমার আছে।ঘুমাতে দিন! কৃপিয়া কারকে দুবারা মাত ফোন কি যে!ধন্যবাদ!”

“স্টুপিড!”

ওপাশে গম্ভীর কণ্ঠের ধমকে লাফিয়ে উঠে বসলো ও।এদিকে এভাবে উঠে বসায় সীমা , ইভাও উঠে পড়লো।কিছু বলবে তার আগেই আয়ুশী বললো,”স্যার,আপনি?”

“হ্যাঁ,আমি!শরীর কেমন?”

“জি স্যার ভালো!”

“সেটা তোমার কথাবার্তা শুনেই বুঝে ফেলছি!”

আয়ুশী নিশ্চুপ!

“তোমার ব্যাগের সাইড এ কিছু ওষুধ আছে।ওগুলো খেয়ে নেও!এটা বলতেই ফোন দিলাম!খেয়েই ঘুমাবে!নয়তো আমার থেকে খারাপ কেও হবে না!”

বলেই ফোন কেঁটে দিলো আয়ান।সীমা কান পেতে এতক্ষণ শুনছিল।উঠে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আয়ুশীকে দিলো।আয়ুশী চুপচাপ খেয়ে নিলো।আবার শুয়ে পড়লো তিনজন! ক্লান্ত থাকায় আপাতত কেউ কিছুই বললো না!ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো ওরা!

#চলবে