অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-১৬+১৭

0
418

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman
#পর্ব_সংখ্যা_১৬

[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ ✖️]

চারুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে মেয়েটা আমি দরজার টোকা দিতে লাগলাম।ও খুলছে না।আমি অনেকক্ষণ জোড় করার পর খুললো ও।
আমি ওর ঘরে ঢুকলাম।কাঠের দরজাটা ভিরিয়ে দিয়ে বিছানার ওপর গিয়ে বসলাম।পাশেই বসে আছে চারু।চারুর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম আমি।ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।আমি কিছু বললাম না,ও নিজেই বললো…

“কাকী আমারে একদম দেখতে পারে না ভাবি।হেয় চায় হের পোলার লগে আমারে বিয়া দিতে কিন্তু আমি এই বিয়াতে রাজি না।রাজিব (চাচাতো ভাই) ভাইরে আমার ভালো লাগে না।উনি মানুষটা সুবিধার না।আমার অনেক ইচ্ছা পড়ার। কিন্তু কাকী চায় রাজিব ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে করাই দিতে,এতে কইরা উনি আমার নামের সয়-সম্পত্তির লোভে এমন করতাসে তা আমি জানি।এর জন্য দাদীও আমারে আগলাইয়া রাখে কাকীর থাইকা।কিন্তু কাকী তো কাকীই উনার লোভ কোনোদিন শেষ হইবো না।”

কথা গুলো বলে চোখ মুছে এক কর্নারে গিয়ে বসলো চারু।আমি চারুকে অভয় দিয়ে বললাম…

“কিছু হবে না তোমার।তুমি পড়বে।আমরা আছি না,কিছু হবে না তোমার।”

চারু আমার দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে খানিকটা ভীত স্বরে বললো…

“কিন্তু তোমরা তো কালই চলে যাবে।”

“বললেই হলো,যেতে তো হবেই কিন্তু তুমি অতো ভেবো না কিছু হবে না তোমার,তোমার ভাইয়া আর ভাবি আছে না।”

চারু আমাকে জড়িয়ে ধরলো।বললো…

“হুম।”

______

ঈদের নামাজ শেষে।হালকা খাওয়া দাওয়া করে ঘরে এসে বসলেন শরৎ ভাই।আমি ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম।আবদারের কন্ঠে বললাম…

“আমার সালামি কই শরৎ ভাই?”

শরৎ ভাই বিছানার ওপর দু হাত ঠেকিয়ে পুরো শরীরের ভর দিয়ে রেখেছেন তাতে।উনি ভ্রু উচিঁয়ে বললে…

“কিসের সালামি?”

আমি ওড়না পেঁচাতে পেঁচাতে বললাম…

“কিসের আবার!ঈদের সালামি।”

শরৎ ভাই ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করলেন।

“তুই আমারে সালাম করসোস?”

আমি মাথা দুলালাম দু দিকে।যার মানে না।

“তাইলে তুই কোন সাহসে সালামি চাস?কাম না কইরারই পারিশ্রমিক তাই না।”

আমি শরৎ ভাইয়ের কাছে গেলাম ওনার পা দুটি বিছানার নিচে হেলিয়ে রেখেছেন।পা ছুঁয়ে সালাম করতে নিলেই।উনি তাড়াহুড়ো করে পা সরিয়ে নিয়ে বলে উঠলেন…

“ওই কি করতেসিলি তুই?”

আমি অবুঝের মতো বললাম…

“কেন শরৎ ভাই?সালাম করছিলাম!”

“তুই জানোস না,আল্লাহর সামনে ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করতে হয় না।পা ছোঁয়া তো দূরের কথা।”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম…

“তাহলে কিভাবে করবো?”

“মুখে কি ঠাডা পড়সে তোর?মুখ দিয়ে সালাম দে।”

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে দু হাত ভাজ করে বললাম…

“আসসালামু আলাইকুম।”

শরৎ ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বললেন…

“ওই এমনে কেউ সালাম দেয়?সুন্দর করে সালাম দে!”

“দিলাম তো সালাম, আবার কিভাবে সালাম দিবো?বেশি বেশি করলে সালামই দিবো না আমি।”

“তো সালাম না দিলে তো আমারই লাভ,কতোগুলো টাকা বেঁচে যাবে।যাহ্ ভাগ ভাগ তোর কপালে আর সালামি নাই।”

আমি অধৈর্য হয়ে দ্রুত স্বরে শরৎভাইকে বলতে লাগলাম…

” কিভাবে সালাম করবো ইকটু বলে দিলেই তো হয়।”

শরৎ ভাই চোখ পাকিয়ে তাকালেন আমার দিকে,বললেন…

“এত্তোবড় মেয়ে হয়ে নিজের বরের কাছে এসেছিস সালামি নিতে!সে যাইহোক ফুপ্পি আর ফুপা তো বেঁচে গেসে তোরে আমার কাছে বিয়ে দিয়ে,এখন সব ঝামেলা আমার।ঈদের দিনে এসব কি ছাই-পাশ পড়ে আছিস।প্রথমে সুন্দর জামা-কাপড় পরে ইকটু সাজুগুজু করে আসবি।ঘরের দরজার সামনে এসে দাড়াবি মাথায় ঘোমটা দিয়ে।পড়ে মুখে হালকা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলবি… ঈদ মোবারক জামাইজান।আমার ঈদের বখশিশ টা আমাকে বুঝিয়ে। এর এক চুলও নড়লে তোর সালামি নাই।”

আমার রাগ লাগলো তবুও সালামির জন্য তো কিছু করতেই হয়।আর ইকটু সাজলে ক্ষতিই বা কি?এসব ভেবে শরৎ ভাইয়ের কথা মতো সেজেগুজে ওনার সামনে গেলাম আমি।উনি আমাকে দেখে হুহু করে হেঁসে উঠলেন বললেন…

“শ্রীজারে তোর মতিগতি তো ভালো না।তুই কি আমাকে পটাতে চাচ্ছিস?”

“আপনাকে পটিয়ে আমার কি লাভ?”

” আমাকে পটাইয়া আমার টাকা সব নেয়ার ধান্ধা তোর,আমি কি বুঝি না।তোরে বললাম আর তুই সাইজা চইলা আসলি?বিষয়টা কেমন না?”

আমি শরৎ ভাইয়ের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালাম।রেগে মেগে বলে উঠলাম…

“থাকেন আপনি আপনার টাকা নিয়ে আমি গেলাম।”

শরৎ ভাই অলস ভঙ্গিতে হাই তুলে।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার থেকে ৫০০ টাকার দুটো নতুন নোট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন…

“নে ধর। ”

আমি ওনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম।বললাম…

“আমাকে সাধছেন?”

“তোরে ছাড়া তো আশেপাশে কাউরে দেখি না আমি।”

“আমাকে কি ফিকিন্নি মনে হয় আপনার?”

“হেহ্ কবে আবার বড়লোকের দুলালি ছিলি নে ধর নাইলে ভাগ।”

শরৎ ভাইয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওনার হাত থেকে টাকাটা কেড়ে নিলাম আমি।উনি বললেন…

“বড় অকৃতজ্ঞ তুই,ধন্যবাদ বা জাযাকাল্লাহ কিছু তো বল।”

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম…

“জাযাকাল্লাহ। ”

“বারাকাল্লাহ ফি।শোন কাল বাড়িতে চলে যাবো ব্যাগ ঠ্যাগ সব গুছিয়ে নিস রাতে।”

বাড়ি যাবার কথা শুনতেই আমার চারুর কথা মনে পড়লো।আমরা যদি চলে যাই কী হবে মেয়েটার।চারুর দাদীরও বয়স কম হয়নি কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না।আর চারুর কাকী তো চারুকে দেখে শুনে রাখছেন শুধু যায়গা সম্পত্তির লোভে।চারুর বিষয়টা শরৎভাইকে বলা দরকার।এসব ভেবে চিন্তে শরৎ ভাইকে সবটা খুলে বললাম আমি।শরৎ ভাই সবটা শুনে বললেন…

“দেখি কী করা যায়।এমন একটা জলজ্যান্ত মেয়েকে তো আর নরকে ফেলে রেখে যেতে পারি না।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই ডাক পড়লো চারুর কাকীর।উনি ঘরে এসে বললেন…

“কইগো নতুন বউ তোমার বররে নিয়া আসো খাবার দাবার সব তৈরি করসি।”

খাবার ঘরে গেলাম আমরা।একটা বড় টেবিলের চারপাশে কাঠের চেয়ার পাঁচ থেকে ছটার মতো হবে।টেবিলের ওপর নানান পদের খাবার যেমনটা ঈদে হয়ে থাকে আরকি।আমি আর শরৎ ভাই বসলাম পাশাপাশি চেয়ারে।শরৎ ভাইয়ের পাশের চেশার বসেছেন রাজিব বয়সে আমার থেকে বড় হবেন কিন্তু শরৎ ভাইয়ের থেকে ছোট।রাজিব ভাইয়ের পাশেই বসেছেন তার বাবা মানে চারুর চাচা বা কাকা।শরৎ ভাইয়ের চাচী নানান খাবার বেড়ে বেড়ে দিচ্ছেন সবাই কে।সবাই খাচ্ছে হালকা গরম পড়েছে পাশেই টেবিল ফ্যান চলছে সাথে সিলিং ফ্যানতো আছেই।পিনপতন নিরবতা পুরো ঘর জুড়ে।নিরবতা ভেঙ্গে চারুর চাচা শরৎ ভাইকে বললেন…

“তা বাজান পড়া শোনার কি খবর?”

শরৎ ভাই খাবার মাখাতে মাখাতে বললেন…

“এই তো চাচা চলছে ভালোই চাকরির মাঝে পড়াশোনা চলছে মোটামোটি, ল টা কমপ্লিট করতে পারলেই চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে প্রোফেশন হবিসেবে ব্যারিস্টারিটাকেই বেছে নিবো ইংশাআল্লাহ্। ”

চারুর কাকী বললেন…

“তা নতুন মেহমানের মুখ কবে দেখছি আমরা?”

আমি খানিকটা লজ্জা পেলাম এবার।মাথা নিচু করে খাচ্ছি আমি কারো কথার মাঝে কোনো প্রকার কথা বলছি না।শরৎ ভাই বললেন…

“মেহমান আসতে দেরী আছে চাচী আগে শ্রীজার পড়াশোনা শেষ হোক,যদি কোনো কিছু করবার ইচ্ছা থাকে সে তা করুক, ওর স্বপ্ন পূরণে আমি বাঁধা দিবো না ওকে।”

চারুর কাকী মুখটাকে কালো করে ফেললেন।মিনমিনে স্বরে বললেন…

“মাইয়া মানুষের আবার কিসের এতো পড়ালেহা?ঘর সংসার গোছাইবো পোলাপান পালবো।পইড়া লাভই বা কি?শেষে তো এডিই করা লাগবো।”

শরৎ ভাই হাসঁলেন,বললেন…

“কেন কাকী,যখন শহরে যান ব্যাক্তিগত সমস্যার জন্য মেয়ে ডাক্তাই খোঁজেন কেন?ছেলে ডাক্টার খোঁজতে পারেন না?শুনলাম আপনার ছোট মেয়েকেও পড়াচ্ছেন মেয়ে শিক্ষিকা দিয়েই,মেয়ে শিক্ষিকাই কেনো?ছেলে শিক্ষক ও তো রাখতে পারতেন।”

“কামের লাইগা তো মাইয়া ডাক্তার, টিচার লাগবোই।”

“সেটাই কাকী ওড়া যদি পড়াশোনা না করে?আর আপনাদের কথা শুনে থেমে যায় তাহলে আপনাদের মেয়েদেরই তো ক্ষতি বেশি।মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সর্বনাশ করছেন না চাচী নিজেরটাও করছেন।”

“সর্বনাশের কি হইলো।ভালার লাইগাইতো কইলাম।”

চারুর চাচীকে থামিয়ে চারুর চাচা বললেন…

“আহ্ বাবা বাদ দাও তো,মহিলা মানুষ ইকটু বেশিই বোঝে।”

“না চাচা মহিলা মানুষ বেশি বোঝে না,উনি ভুল বুঝেছেন সেটাই বললাম।”

“হ হ বাবা তোমার কথাই সই(সঠিক)।হোনো এবার, আমি ভাবতাসি চারুর লগে রাজিবের বিয়ার কথাডা পাকাপাকি কইরা ফালামু।চারুর তো আর কম বড় হয় নাই।আর রাজিবও বড় হইতাসে।”

চারুর চাচার কথা শোনা মাত্রই চারুর দাদী রেগে উঠলেন।রাগী গলায় বললেন…

“তোরে আমি মানা করসি না রফিক।এই কথা মুখে না আনতে।তুই আবার কইতাসোস।চারুরে আমি পড়ামু।লিমুর কি হইসিলো তুই ভুইলা গেসোস?লিমুর মতো চারুর অবস্থা আমি হইতে দিমু না।”

চারুর দাদীর কথা শুনে চারুর চাচা বিরক্তিতে মুখ ঢেকে নিলেন,
বললেন…

“রাখো তো মা সবাই কি লিমুর শ্বশুড় শ্বাশুড়ির মতো নাকি?আমারে আর রাজিবের মারে তুমি চিনো না?”

“চিনি দেইখাই তো মানা করতাসি আমি।আমি কি বুঝি না তোরা ঠিক কি চাস?কেন তোরা রাজিবের লগে চারুর বিয়া দিতে চাস আমি বুঝি না!”

চারুর চাচা বললেন…

#চলবে…

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১৭
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“চারু আর রাজিবের বিয়া হইবো।আমি দেখমু তুমি কেমনে আটকাও।”

কিছুটা ক্রোধ নিয়ে চারুর দাদীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন চারুর চাচা।পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে শরৎ ভাই বললেন…

“আরে চাচা রাগ করছেন কেনো।মেয়ের মত ছাড়া তো আর বিয়ে হবে না।আর চারু বেশ ছোট বড় হোক আরো।তখন ওর মতামত নিয়ে যা করার তা করবেন নাহয়।”

চারুর চাচা নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত করতে চাইলেন।উনি আর কথা বাড়ালেন না চুপচাপ খাওয়া দাওয়া সেরে পাশের ঘরে চলে গেলেন।খাওয়ার মাঝে আমি খেয়াল করলাম চারুর চাচাতো ভাই মানে রাজিব।উনি বার বার আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছেন।ওনার দৃষ্টি সুবিধার টিকলো না আমার আমি কোনোমতে খেয়ে ঘরের দিকে চলে গেলাম।
গ্রীষ্মের প্রক্ষরতা হু হু করে বাড়ছে।গরমের উত্তাপ দ্বিগুণ। টিনের ছাদ হওয়ায় গরম যেনো মাথার ওপর পড়ছে।গ্রামে এসে একটা জিনিস খেয়াল করলাম নিয়ম মাফিক এখানে লোড সেডিং হয়।একবার দুপুরে তো আরেকবার রাতে।রাতের বেলায় কারেন্ট চলে যাবার মতো বিরক্তিকর কিছু আর হয়না বোধয়।রাতের অন্ধকার জানালার ফাক দিয়ে প্রবেশ করছে চাঁদের আলো।সেই আলোতেই আলোকিত পুরো ঘর।ভাবলাম ঘরে একা একা বসে না থেকে বাহিরে যাই।বাহিরে বাকিদের কথা বার্তা শোনা যাচ্ছে।গরমে সেদ্ধ হবার চেয়ে বাহিরে গিয়ে আড্ডা দেয়া ঢের ভালো।এসব ভেবে ঘরে থেকে বাহিরে যাবার প্রস্তুতি নিলাম আমি।হঠাৎ আমি ঘরের মাঝে কারো উপস্থিতি অনুভব করলাম।পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট।অন্ধকারের মাঝে আমি পেছন ফিরে তাকালাম।একটা পুরুষ মানুষের অবয়ব স্পষ্ট।কিন্তু লোকটা শরৎ ভাই না তা আমি নিশ্চিত।বাড়িতে অন্য কোনো পুরুষ থাকার কথা না এই মুহুর্তে। আমি হালকা ভয় নিয়ে বলে উঠলাম…

“ক কে আপনি?”

ওপাশ থেকে কোনো শব্দ এলো না।আমি পিছন ফিরে তাকালাম। একটা লম্বা করে লোকের অবয়ব দেখতে পেলাম আমি।তবে অন্ধকারে তা আবছা।লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।
লোকটা এগিয়ে এলো আমার দিকে ধীর পায়ে।আমি পিছিয়ে যেতে লাগলাম।আচমকা সে আমার হাত ধরলো।আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।লোকটা আমাকে বাজে ভাবে ছোয়াঁর চেষ্টা করছে বিষয়টা বুঝতে পেয়েই ভয় পেয়ে গেলাম আমি।সারা দুনিয়া যেনো অন্ধকার হয়ে উঠতে লাগলো আমার কাছে।আমি চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করতে নিলেই লোকটা তার এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেঁপে ধরলেন।লোকটা আমার মুখ চেঁপে ধরার জন্য আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি টেবিলের ওপর থাকা স্টিলের ওয়াটার বোটলটা দিয়ে লোকটার মাথায় সজোরে আঘাত করলাম।সাথে সাথেই একটা বিকট শব্দ ভেসে এলো আমার কানে।লোকটার আর্তনাদ।আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম লোকটার গলার স্বর ইনি তো রাজিব ভাইয়া।
কারেন্ট চলে এলো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন শরৎ ভাই।আমি শরৎ ভাইকে দেখতে পেয়েই যেনো ভরসা খুঁজে পেলাম।হামলে পড়লাম তার বুকের ওপর।হু হু করে কেঁদে উঠলাম আমি।ওনাকে আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরে কাদাঁতে কিছুটা বিষ্মিত হলেন উনি।উনি কিছু বলার আগেই আমি আঙ্গুল দিয়ে খাটের দিকে ইশারা করে কিছু একটা দেখানোর চেষ্টা করলাম ওনাকে।উনি বিছানার ওপর আহত অবস্থায় রাজিব ভাইকে দেখতে পেলেন।মাথা ফেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে ওনার।আমার এভাবে কান্না করা ঘরের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা রাজিব ভাইয়ের অবস্থা।আমার হাতে থাকা ওয়াটার বোটলটা দেখে পুরে ঘটনাটা বুঝতে তেমন একটা বেগ পেতে হলো না শরৎ ভাইয়ের। মুহুর্তেই যেনো ওনার চোখে মুখে বিশাল ক্রোধের জোয়ার দেখতে পেলাম আমি।উনি আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে গেলেন রাজিব ভাইয়ের কাছে।ওনার কলার ধরে বিছানার কাছ থেকে উঠিয়ে নিয়ে ওনাকে এলোপাথাড়ি(থামার নাম নেই) মারতে লাগলেন।কি থেকে কি হয়ে গেলো রাজিব ভাই কিছুই বুঝতে পারলেন না।উনি শরৎ ভাইকে কিছু বলবেন তার আগেই শরৎ ভাই বললেন…

“তোর সাহস কি করে হলো ওর দিকে চোখ তুলে তাকাবার?কি করে হলো?”

“কি করছো শরৎ ছাড়ো আমাকে।”

“তোকে তো আমি ছাড়বো তবে ছাড়ার মতো করে।”

শরৎ ভাই আবারও লাগাম হীন ভাবে মারতে লাগলেন রাজিব ভাইকে।রাজিব ভাই চিৎকার করতে লাগলেন।এক পর্যায় শুরু হলো দুজনের তুমুল মারামারি।ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে নিচে থেকে বাকিরা দৌড়ে এলো।চারুর চাচা আর চাচী মিলে থামালেন শরৎ ভাইকে।চারু আমার পাশে দাড়িয়ে আছে আমর এক হাত ধরে।শরৎ ভাই রাগান্বিত চোখে তাকালেন রাজিবের দিকে।বললেন…

“এরপর ওর দিকে চোখ তুলে তাকালে তোর লাস ফেলতেও দুবার ভাববো না আমি।মাইন্ড ইট।”

চারুর চাচা শরৎ ভাইকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন…

“কি হইসে শরৎ বাবা তুমি রাজিবের সাথে এমন করলা কেন?”

শরৎ ভাই ক্রোধে ভরা চাহনি নিয়ে বলে উঠলেন…

“কি হয়েছে বলছেন?ঘরে মেহমান এনে মেহমানের মান সম্মান ধুলোয় মিশাতেও দু বার ভাবেন না আপনারা।ঘরে একা একটা মেয়েকে পেয়ে আপনার সু-চরিত্রবান ছেলে কি করতে গিয়েছিলো জানেন?আপনি কি আদেও আপনার ছেলের চরিত্র সম্বন্ধে কিছু জানেন?সে যে একটা লম্পট চরিত্রহীন লোক!এই চরিত্রবান ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন চারুর?ওর লাইফটা হেল করে দিতে চাইছেন আপনি।”

চারুর চাচা কিছু বললেন না উনি ওনার ছেলেকে ভালো মতো চেনেন।গ্রামের লোকেদের হাজার অভিজোগ রাজিব কে নিয়ে।কয়েকবার রাজিব ওর এমন বাজে চরিত্রের জন্য গ্রামের লোকদের হাতে উত্তম মধ্যমও খেয়েছিলো।কিন্তু স্বভাব তো স্বভাবই হাজার মার খেয়েও সে তা ছাড়েনি।চারুর চাচা মুলতো এই কারণেই চারুর সাথে রাজিবের বিয়ে দিতে চাইছেন।কোনো ভালো ঘরের মেয়ে ওকে বিয়ে তো দূরের কথা ওর দিকে ফিরেও তাকাবে না তা চারুর চাচার ভালো করে জানা।তাই চারুর সাথেই রাজিবের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন তিনি,মা মরা মেয়ে দেখতে শুনতে ভালো।যাবার জায়গাও নেই বয়সও কম।তা ছাড়া ওর নামে যা সয় সম্পত্তি আছে বিয়ের পর সব তো ওনাদেরই হবে।এদিকে আরেক লাভ।রাজিবেরও যে চারুকে ভালো লাগে তা চারুর চাচার ভালো করেই জানা।কিন্তু বাঁধা হলো তার মা।মানে চারুর দাদী বয়স হয়েছে খুব,গত হবেন কবে কে জানে।উনি এই বিয়েতে রাজি নন,আর চারু সে তো নাই।চারুর দাদীর রাজি হওয়ার আরেকটা কারণ হলো চারুর চাচার একমাত্র বোন লিমু।তাকে চারুর মতো বয়সেই বিয়ে দেয়া হয়।তাদের পাশের গ্রামের মোড়লের ছেলের সাথে।কিন্তু ভাগ্য এতো ভালো পরিবার ছেলে সুন্দর টাকা পয়সা খুব।তবুও শুখ হলো না লিমুর কপালে শ্বশুড় বাড়ির মানুষের নির্যাতন আর স্বামীর করা মানসিক শারিরীক অত্যাচারে লিমুর জীবন হয়ে উঠলো অতিষ্ঠ। এক পর্যায় এসব সয্য করতে না পেরে বাধ্য হয়েই লিমু বেছে নিয়েছিলো আত্নহত্যার পথ।চারুর দাদী অনেক আদঁরের মেয়ে ছিলো লিমু।নিজের মেয়ের এমন করুন পরিনতি আজও মানতে পারেন না চারুর দাদী।চারুর মাঝে লিমুর আভাস পান তিনি।তাই তো এতো ভালোবাসেন তাকে।

শরৎ ভাই আমার হাত টেনে ধরলেন বললেন…

“দ্রুত তোর কাপড় চোপড় গোছা আর চারুকে তৈরি হতে বল।ওকে এই নরকে রেখে যাবো না আমি।”

#চলবে…