অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-১৪+১৫

0
453

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১৪
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

কথায় আছে সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সময় বহমান।নিজের গতিতে এগিয়ে যায় সে,ফিরে তাকায় না।কেঁটে গিয়েছে অনেগুলো দিন।খোলা আকাশের নিচে বসে আছি আমি। পাঁকা বাঁশের তৈরি মাঁচা, সামনেই বয়ে চলেছে তিতাস নদীর কিছুটা অংশ।আকাশের বুকে আমের একটা ফালির মতো করে চিকন চাদঁ উঠেছে।আশে পাশে শতো শতো তাঁরা।শীতল হাওয়া বয়ে চলেছে চারিপাশে।ঝিঁঝিঁ পোঁকার ডাক শোনা যাচ্ছে।আমার গায়ে একটা কালো রংয়ের চাদর পেচানো যদিও গ্রীষ্মকাল কিন্তু গ্রামের দিকটায় রাতের সময় বেশ ঠান্ডাই পড়ে।আমার দু হাতে ভরপুর মেহেদী, হুট করেই মামনি আর মামুকে তাদের দূরসম্পর্কের কিছু আত্নীয়রা চেপে ধরেছেন এবার ঈদটা গ্রামে করার জন্য।মামু হার্টের রোগী তার ওপর আবার প্রেশার যখন তখন লো হয়ে যায় মামনির অবস্থাও বেশ ভালো তা বলা যায় না।জমি জামা নিয়ে ঝামেলা সংক্রান্ত কাজ শেষ হবার পর পরই তারা ঢাকায় ফেরেন কিন্তু ঢাকা ফিরবার কিছুদিন পরই শরৎ ভাইয়ের দূর সম্পর্কের এক খালা তা জানতে পারেন উনি বিয়েতেও আসতে পারেননি এমনকি তাড়াহুড়োর জন্য ওনাকে জানানোই হয়নি বিয়ের কথা।মামনি আর মামুর এমন কান্ডে তারা বেশ রেগে যান।বলেন তাদের এবার ঈদ গ্রামে এসেই করতে হবে।মামুর এমন অবস্থায় মামনি কিছুতেই গ্রামে যেতে পারবেন না তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আর শরৎভাইকেই পাঠিয়ে দেন তিনি।আজ চাঁদ রাত কাল ঈদ তাই হয়তোবা আকাশে এমন অপূর্ব রকমের চাঁদ উঠেছে। এমন সময় বাড়িতে দি আর আমি বসে বসে নানান গল্প করতাম আর দি আমার হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিতো।দি মেহেদী বেশ দিতে পারতো কিন্তু এই কাজে আমি ছিলাম কাঁচা বরাবরের মতো এবারও দিরই মেহেদী পড়িয়ে দেবার কথা ছিলো,কিন্তু কালের বিবর্তনে তা আর হলো কই?দি চলে গেলো অদূরে।দির কথা আজ খুব বেশি মনে পড়ছে মনের অজান্তেই নেত্রকোনায় একরাশ জল জমে এলো।আশে পাশে নানান গাছ সব গাছের নাম জানি না আমি পাতার শা শা শব্দ।কারো পদধ্বনি শুনতে পেয়ে বুঝতে পারলাম কেউ একজন এদিকেই এগিয়ে আসছে একটা কিশোরী বয়স হবে ১৪-১৫ এর মাঝামাঝি।মাথার শুরু থেকে শেষ অব্দি ছেয়ে আছে কালো কুঁচকুঁচে অলক (কেশ বা চুল)
অক্ষিদ্বয়ের (চোখ) প্রগাঢ় চাহনি।মেয়েটার মাঝে মায়া আছে বলতে হবে তার মায়ায় যে একবার পড়বে তাকে যেনো বহুবার সে মায়ায় আটকে যেতে হবে, সে যে বাধ্য।মেয়েটার লাবণ্যময় হাঁসি তার সৌন্দর্যের সাথে মিল রেখেই হয়তোবা তার নাম রাখা হয়েছে চারু যার মানে সুন্দর।চারু আমার পাশে এসে বসলো।পড়নে শুতির সেলোয়ার কামিজ মাথায় ওড়না দেয়া ফিসফিসিয়ে কানে কানে বললো…

“ভাবি কখন যাবা বাড়িতে ভাইয়ের তো চিন্তার শেষ নাই,তার বউ কোথায় কি করে তাও জানা নাই তার।সে কি অস্থির অবস্থা।”

বলেই হু হু করে হেঁসে দিলো চারু।আমি হালকা লজ্জা পেলাম।নিঃশব্দে হেঁসে চারুর মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠলাম…

“ওহহো পেঁকেছো অনেক।তা তোমার দাদী কে বলবো নাকি?চারুর জন্য পাত্র খুঁজতে?বেশ পাঁকা পাঁকা কথা বলো তুমি।”

চারু লজ্জা পেলো খানিকটা।বললো…

“ধুর কি যে বলো না তুমি।”

আমি মশকরা করে বললাম…

“মেয়ে লজ্জাও পায় দেখছি।আর ভাবিকে লজ্জা দেবার বেলায় দুবারও ভাবে না।”

চারু হাসঁলো বললো…

“মেহেদী শুকিয়েছে ভাবি?”

চারুই দিয়েছে মেহেদী গ্রামের মেয়ে হলেও নানান কাজে পারদর্শী সে।বয়স অনুযায়ী গুণগুলো অনেক বেশি। আমি ওর দিকে তাকালাম বললাম…

“হুম শুকিয়েছে।”

চারু আমাকে তারা দিলো বললো…

“শোনো ভাবি একটা কথা কই রাইত বিরাতে একা একা এমনে বইসা থাকবা না।এমনিতেই তুমি সুন্দর মানুষ তার উপরে নতুন বউ, নতুন বউদের অনেক বিপদ থাকে আর গ্রাম হলে তো কথাই নাই।”

আমি কৌতুহলে দৃষ্টিতে চারুর দিকে তাকালাম বললাম…

“কি বিপদ?আর নতুন বউ হলেও কি,মানুষ তো।”

“তুমি বুঝবা না, এহন কওয়া যাইবো না আগে ঘরে চলো তারপর কইতাসি।হাতও ধুইতে হইবো একা একা কলপাড়ে আর পুকুরপাড়ে তোমার যাওয়া নিষেধ দাদী আমারে বইলা দিসে তোমার খেয়াল রাখতে।”

বলেই মাঁচা থেকে উঠে দাড়ালো চারু হাঁটা শুরু করলো সে।আমিও হাঁটতে লাগলাম ওর পেছন পেছন।বাড়ির থেকে দু কদম দূরে কলপাড় চাপকলে কল চাপছে চারু মাটির ভেতরের ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুচ্ছি আমি বর্ণহীন পানিগুলো মেহেদীর সংস্পর্শে এসে লালা বর্ণ ধারণ করছে।দুজনে মিলে হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা লাগালাম আমরা।টিনের দোচালা ঘর ওপরের ঘরে থাকতে দেয়া হয়েছে আমাকে আর শরৎভাইকে।নিচের ঘরগুলোতে থাকবেন তারা আমাদের পাশের ঘরেই থাকে চারু তার জন্যে ছোট্ট একটা ঘর বরাদ্দকৃত রয়েছে একপাশে দুজনের শোয়ার মতো একটা কাঠের খাট,এর পাশেই দুটো চেয়ার সাথে একটা পড়ার টেবিল চারু এবার বোধয় নিউটেনে পড়ছে।পড়াশোনায় মোটামোটি ভালো সে তাই তার দাদীও পড়াচ্ছে তাকে অথচ ওর সাথে কতো বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখনো হচ্ছে কেউ কেউ ওর মতোই পড়ছে্।কাঠের জানলা ভেদ করে শরৎ ভাইকে বাড়ির পেছন দিকটায় দেখতে পেলায় আমি।হাতে ফোন নিয়ে নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।ওনার হাত ওপর নিচ করার দৃশ্য দেখে আমি আর চারু একসাথে হেঁসে উঠলাম। আমাদের হাঁসির শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালেন শরৎভাই কোমরে হাত রেখে ইশারায় বললেন ওপরে এসে তোদের দুটোকে দেখে নিচ্ছি আমি।আমি মুখ বাঁকিয়ে তাকে বেঙ্গ করলাম হাঁসলেন শরৎভাই।ফের পেছনে ফিরে নেটওয়ার্ক খুজঁতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।আমি মাথা নেড়ে হাসঁতে হাসঁতে বিছানার ওপর গিয়ে বসলাম চারু কে বললাম…

“তখন বললে না নতুন বউদের কি বিপদ ঠিপদ হয় তা শুনি কেমন বিপদ।”

চারু তার হাঁসি মুখটাকে গম্ভীর করে নিলো সাথে সাথে।খাটের পাশের চেয়ারের ওপর বসে বললো…

“আমারে দাদী বলসিলো নতুন বউদের ওপর আলগা বাতাস লাগে বেশি,মানে বদ নজর খারাপ জিনিদের নজর থাকে বেশি আর যদি সুন্দরী হয় তাইলে তো কথাই নাই।আমাদের গ্রামে অনেকেই এই কথা কইতো।আমাদের পাশের বাড়িটা দেখলানা ওইযে বিল্ডিং ঘরটা।ওই বাড়ির ছোট ছেলে ভালো শিক্ষিত ছিলো বিয়েও করসিলো শিক্ষিতো বউ।প্রেমের বিয়ে ছিলো বুঝলা ভালোবাসার টানে শহরের মাইয়া শহর ছাইড়া গ্রামে আইসা পড়াসিলো।মেয়ে ছিলো হেব্বি সুন্দর পোলাও কম না।বিয়ের পর পর ওই বাড়ির খালায় তার পোলার বউরে বাড় বাড় ভালো কইরা বুঝাইয়া কইয়া দিসিলো রাইত বিরাইতে আর ভোর দুপুরে জানি ঘরতে বাহির না হয়।আর এমন সময় যদি কেউ ওরে ডাকে আর একলা যাইতে কয় না যায় হোক যতো চিনা।আসলে খারাপ জিনিসগুলো আত্নীয় স্বজনগো রূপ ধইরা আসে তো তাই।আমারে দাদী পাহারায় রাখে কম বয়সের মাইয়াগো উপরেও নাকি হেগোর নজর থাকে।সে যাই হোক তো ওই মাইয়া ছিলো শহরের গ্রামের মানুষের এমন যুক্তি ছাড়া কথা হের ভালা লাগে নাই।কথায় আছে না মানুষ যা করতে বারণ করে তার প্রতি আমাগো ঝোক আরো বেশি থাকে।হেই মাইয়ার ও তাই আসিলো।বেশি বেশি কিরা সন্ধ্যায়, রাইতে, দুপুরে একা একা পাড়া বেড়াইতো।আমাগো বাড়ির পিছের বড়ই গাছটা দেখসো না ওইডা কিন্তু অনেক পুরাতন। একদিন হইলো কি ওই মাইয়া দুপুর বেলা গোসল সাইরা ওই বড়ই গাছের নিচে গিয়া…”

“চারু।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমরা দুজন আমি খানিকটা কেঁপেই উঠলাম।কি ভয়ানক কথা বার্তা।এমন কথা আমিও শুনতাম ছোট বেলা আমার দিদা আমার মাকে বলতেন।আমি মনোযোগ সহকারে শুনতাম।চারুর মাঝে দিদার একটা আভাস পেয়েছিলাম আমি।ওর কথায় এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে শরৎ ভাই ডাকতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠেছিলাম।চারু শরৎ ভাইয়ের দিকে তাকালো বুকে থু থু দিয়ে বললো…

“ও মাগো এমনে কেউ ডাকে দেখতাসিলেন না জরুরী কথা কইতাসি।এর মইধ্যে এমনে ডাকসেন ভয় পাইসি না।”

শরৎ ভাই ভ্রু কুটি করে তাকালেন চারুর দিকে।ধমক দিয়ে বললে…

“যা ঘরে যা বাকি কথা কাল হবে,জরুরী কথা তার।”

ওনার ধমক শুনে চারু ভয় পেয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো তার ঘরে।

নিশিরাত বৃষ্টি পড়ছে মুশোলধারে।টিনের চালে টিপ টিপ শব্দ আমি শুয়ে আছি একপাশে। হুট করেই ভয়ে শরৎ ভাইয়ে হাত চেঁপে ধরলাম আমি বললাম…

#চলবে…

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১৫
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
নিশি রাত,বৃষ্টি পড়ছে মুশোলধারে। টিনের চালে বৃষ্টির পানির ফোটা পড়ছে ফলস্বরুপ অন্যরকম একটা আওয়াজ হচ্ছে।ঠান্ডা আবহওয়া।বিছানার এক পাশে শুয়ে আছি আমি অপর প্রান্তে শরৎভাই।তিনি ঘুমোননি আপন মনে ফোন টিপে চলছেন।আমার মাথায় ঘুরছে ঘন্টা খানিক আগে চারুর বলা সেই কথাগুলো।মনে অজানা ভয় কাজ করছে হুট করেই চারিপাশটা অন্ধকার হয়ে উঠলো মনের ভয়টা যেনো আরো বেড়ে গেলো।ছ্যাত করে উঠলো বুকটা মুহুর্তেই বিকট একটা শব্দ কানে এলো আমার হয়তোবা বিদুৎ চমকানোর শব্দ আমি ভয় পেয়ে গেলাম।সামনে থাকা মানুষটি কে বা কি করছে এসব না ভেবেই তাকে জড়িয়ে ধরে জোড়ে একটা চিৎকার করে উঠলাম আমি।মিনিট ২ – ১ বাদে আমি কিছু একটা ভাবলাম ভেবেই মনে দেখা দিলো অজানা এক ভয় হুট করেই জড়িয়ে থাকা লোকটিকে ছেড়ে দিলাম আমি।ছিটকে গিয়ে পড়লাম বিছানার অপর প্রান্তে শরৎভাইয়ের কাছে থেকে বেশ কিছুটা দূরে সেটা অবশ্য সেচ্ছায়।শরৎ ভাই অন্ধকারের মধ্যে তাকালেন আমার দিকে চাঁদের আবছা আলোয় দুজনকেই দেখা যাচ্ছে।উনি ওনার ফোনের লাইটটা অন করলেন তারপর সেটাকে বিছানার ওপর রেখে দিয়ে বললেন…

“তোর কি জড়িয়ে ধরার মতো আর মানুষ নেই?আমার মতো একটা দুর্বল হৃদয়ের,নরম মনের মানুষের ইজ্জত লুটে নেয়ার ধান্ধা চলছে তাই না?”

আমি ওনার কথায় পুরো শক্ড কিসব বলছেন উনি?আর কি ভাবেই বা বলছেন আমি নিজের কান কে পর্যবেক্ষণ করতে আস্তে করে নিজের কানের ওপর দুটো বাড়ি দিলাম।নাহ্ ঠিকই তো শুনতে পাচ্ছি সব একদম পার্ফেক্ট তাহলে উনি যে বললেন।আমি ওনার দিকে তাকালাম বললাম…

“কিছু বলছেন শরৎভাই?”

“বলছিলাম আমাকে এভাবে হুট করে জড়িয়ে ধরলি কেন?”

আমি আমতা আমতা করে মিনিমিনে স্বরে বলে উঠলাম…

“ভ ভয় করছিলো শরৎ ভাই।”

শরৎ ভাই ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকালেন প্রশ্ন করলেন…

“কিসের জন্য ভয় করছিলো?”

শরৎভাইয়ের কথাটা শোনা মাত্রই যেনো কলিজার পানি(কলিজাতে যে পানি থাকে তা জানতাম না🙂💔) সব শুকিয়ে গেলো মুহুর্তেই।চারুর বলা কথাগুলো বাড়ে বাড়ে কানে বাজতে লাগলো।আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম আবার।শরৎ ভাই এবার ইকটু কাছে এলেন আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে উঠলেন…

“এতো ভয় পাবার কি আছে?মনে হচ্ছে যেনো তোর সামনে ভুত বসে আছে।আমি কি ভুত?”

“চারু যে বললো নতুন বউদের ওপর জ্বীনদের নজর বেশি থাকে?”

শরৎভাই আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠলেন…

“তুই নতুন বউ?”

“আমি নতুন বউ না?”

“আহরে আমার টুকটুকি নতুন বউরে?বিয়ের ৩-৪ মাস পাড় হয়ে গেছে আর উনি নাকি নতুন বউ।চুপচাপ ঘুমা,আর একটা চিৎকার করলে ওই বড়ই গাছের সাথে তোকে বেঁধে দিয়ে আসবো আমি!”

আমাকে এক প্রকার শাষিয়ে কথাগুলো বললেন উনি।অতঃপর কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন ওনার মতো।আমি একই স্থানে স্থিরভাবে বসে রইলাম।ভয়ে গা ছমছম করছে আমার চারু মেয়েটা কি ভয় দেখালো ওকে তো কাল দেখে নেবো আমি।এভাবে ভয় দেখাবার কোনো মানে হয়।আচমকা শরৎ ভাই বললেন…

“ওই ঘুমা তুই।সারা রাত জেগে দুনিয়ার সব জল্পনা কল্পনা করে ফেলছে।”

কথাগুলো ধমক শুনে হালকা কেঁপে উঠলাম আমি।আড় চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বিছানার ওপর ধপ করে শুয়ে পড়লাম আমি,কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না।

ঈদ মানেই খুশি,ঈদ মানে আনন্দ।এই সময়টাতে সকলে সবার দুঃখ,কষ্ট ভুলে গিয়ে যে যার যার মতো ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে।ধ্বনি গরিব নির্বিশেষে একসঙ্গে এই উৎসবে মেতে ওঠে।মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষের কাছে ভালোবাসার আরেক নাম ঈদ।আমার ঘুম ভাংলো চারুর ডাকে।ঘুম থেকে উঠে দেখলাম পাশে শরৎ ভাই নেই।তিনি বরাবড়ই কাজে খুব দ্রুত। আমি ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে হাই তুলতে লাগলাম।এরপর সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখলাম চারু কিছু নরমাল কাপড় চোপড় নিয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছে।আমি মুখ ব্রাশ করতে করতে ওকে বললাম…

“এই চারু কই যাও তুমি?”

চারু কাপড় গোছাতে গোছাতে বললো…

“আরেহ্ পুকুর পাড়ে যাইতেসি ভাবি।ওকানে তো এখন অনেকে আসবো।উফফ এই দিনটাতে যা মজা হয় না এক সাথে সবাই কি মজা করে।তুমি যাইবা আমার সাথে?”

আমি কিছুটা দ্বিধা-দন্দ নিয়ে বললাম…

“আমি যাবো?আমি তো সাতার জানি না!”

চারু হেঁসে বললো…

“ধুর সাঁতার না জানলে কি হবে?তুমি সিড়ির ওপর বসে বসে দেখবা, আমরা সকলে আনন্দ করবো।”

আমি চারুর কানে ফিসফিস করে বললাম…

“এতো ছেলেদের সামনে কেমনে গোসল করবা তোমরা?কেমনে আনন্দ করবা?”

“আরে ওদের জন্য তো অন্য পুকুর!”

আমি চারু কে জিঙ্গেস করলাম…

“তোমার শরৎভাই কই গো?”

“শরৎ ভাই! সে তো সেই কখন ঘুম থেকে উঠে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদ গাহে চলে গেসে।দাদী আর কাকীও রান্নার কাজে লেগে পড়সে আমি তো ঘর দোর গুছিয়ে মাত্র গোসল করতে যাবো।দাদী তোমাকে বলসে কলপাড়ে গোসল করে নিতে।তুমি চলো পুকুরের দিকে আমার গোসল শেষ হলেই এক সাথে চলে আসবো কেমন?”

আমি বললাম…

“আচ্ছা চলোহ্ যাওয়া যাক।”

চারুদের গ্রামটা অনেক সুন্দর।চারিপাশে অনেক গাছগাছালি। একপাশ দিয়ে নদী বয়ে চলছে।নদীতে জেলেদের মাছ ধরার জন্য বাঁশ দিয়ে যেনো কেমন একটা জিনিস তৈরি করা থাকে সেটাতে উঠেই মুলতো তারা মাছ ধরে।আমরা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের কিছুটা পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম।চারুর পেট ভর্তি কথা মুখ তো নয় যেনো এফ এম রেডিও।গোসল শেষে আমরা ঘরে চলে এলাম।চারুর সাথে চলে গেলাম রান্না ঘরের দিকে চারুর বাড়িতে চারুর দাদী,কাকী,চাচা,আর এক চাচাতো বোন আর এক চাচাতো ভাই রয়েছে।চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে।।চারু বাবা,মা নেই।মেয়েটা এতিম চারুকে জন্ম দেবার সময়ই তার মা গত হয়েছেন।চারুর বাবা চারু কে সে সময় থেকেই দেখতে পারতেন না।চারুর জন্মের কয়েক বছর পর উনি হুট করে যেনো কোথায় চলে যান। এরপর আর ওনার খোঁজ পাওয়া যায়নি।চারুকে বর্তমানে লালন পালন করছেন তার দাদী।ওনার কথা বার্তা শুনেই বোঝা যায় চারুকে ঠিক কতোটা ভালোবাসেন তিনি।মাটির চুলোর রান্না চলছে।গরমের ভিষন উত্তাপে সকলে ঘেমে চলছেন।চারু আমার ঘরে এসে বিছানার ওপর বসে বসে নানান গল্প করছে।হুট করেই রান্নাঘর থেকে ওনার ডাক এলো…

“এই চারু রান্না ঘরের দিকে আয়য়য়য়।সারাক্ষণ খালি গল্প।টইটই করে ঘুড়ে বেড়ায় মেয়েটা।বলি খাওয়া পড়া তো সব করছিস আমাদের ওপর।কাজ কাম কিছু তো কর।ধামড়া মেয়ে কতোবড় হয়েছে কি ঢং তার,পড়াশোনা করবে।তার বয়সের মেয়েরা এখন সংসার করছে।তার আর তার দাদীর যতো ঢং।”

চারুর কন্ঠ শুনতে পেলাম আমি…

“এমন করে বলো কেনো কাকী?প্রতিদিন তোমার এতো ঘ্যানঘ্যানানি ভালো লাগে না আমার।দাদী এখন ঘরে নাই আর তোমার ঘ্যানঘ্যানানি শুরু হইসে।”

চারুর কাকী জোড় গলায় বলে উঠলেন…

“নবাবজাদী,মাটারে তো খাইলি এখন দাদীরেও খাবি!বাপটাও ছেড়ে চইলা গেসে।এখন তোর দাদীটারে খাবি।ঘর – সংসার না করে এই বয়সে পড়াশোনার ভীমরতি হইসে তোর।ব্যারিস্টার হইবি তুই।দেখমু আমি তোর এই পড়াশোনা কতদূর চলে।”

চারু রান্নাঘর থেকে দৌড়ে ওর ঘরে চলে গেলো।ওকে স্পষ্ট কাঁদতে দেখেছি আমি।আমি চারুর ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম।

#চলবে…