অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-২০+২১

0
462

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২০
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“আ আপনি একটা রস-কষহীন মানুষ।একদম দেবদাস টাইপের।আর আপনার মাঝে রোমিও ভাব একদমই নেই।”

শরৎ ভাই হালকা রাগলো বোধয়,
বললো…

“কি বললি তুই?কে বলেছে তোকে এসব?”

আমি চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠলাম…

“কে আর বলবে শরৎ ভাই।লোকে বলে,যারা যারা আপনার এসব রস-কষহীনতা সম্পর্কে জানে।তারা বলে।আমি কিন্তু সত্যিই বলেছি শরৎ ভাই।এবার আমাকে কিছু বলতে পারবেন না আপনি।”

শরৎ ভাই আমার দিকে একবার ভালো করে দেখলেন।এরপর কিছু একটা মনে করে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।আমি বরাবরের মতো এবারও হতাশ হয়ে ওনার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।একে দিয়ে এ জীবনে কিছুই হবে না বোধয়।এই ভেবে আফসোস করতে লাগলাম।

_______

“তোর হলো?”

হাতে কালো রঙের ঘড়ি পরতে পরতে আমাকে শুধালেন শরৎ ভাই।আমি হিজাবের পিনগুলো ঠিক আছে কিনা তা আয়নাতে ভালোমতো দেখে নিয়ে,কাধেঁ ব্যাগ রেখে বললাম…

“চলুন শরৎ ভাই।”

শরৎ ভাই আর কথা বাড়ালেন না।জুতো জোড়া পরে নিয়ে।সোজা লিফ্টের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি,আমিও গেলাম তার পিছু পিছু।

সি এন জির একপাশে হেলান দিয়ে জানালার দিকে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছি আমি।বাহিরে বাতাসগুলো সি এন জির ভেতরে ঢুকছে আর শা শা আওয়াজ হচ্ছে।অন্য পাশে বসে আছেন শরৎ ভাই।উনি কিছুক্ষণ পর পর ফোন দেখছেন আবার কিছুক্ষণ পর পর আমার মতো বাহিরের পরিবেশ দেখছেন।আমরা এখন মূলতো সাভার যাচ্ছি।নতুন বাড়িতে ওঠার জন্য।তবে তার আগে আমরা জাবিতে যাবো।সেটা অবশ্য আমারই মর্জি,ছাত্রী হল থেকে চলে যাবার আগে সবার সাথে ইকটু দেখা করে যেতে চাই আমি।আমার ভাবনার সুতো কেঁটে শরৎ ভাই আমাকে বলে উঠলেন…

“কিরে সি এন জির মধ্যেই কি সংসার পাতবি নাকি?নাম দ্রুত,এসে পড়েছি।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম আমরা গন্তব্যস্থলে পৌছেঁ গেছি।শরৎ ভাই সিএনজি থেকে নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই আমিও নেমে গেলাম।এরপর একটা রিকশা নিয়ে চলে এলাম ছাত্রী হলের দিকে।কিছুটা পথ হেঁটে ছাত্রী হলে প্রবেশ করলাম আমি।শরৎ ভাই ভার্সিটি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছেন।আমি ফিরতেই আচঁল,রিদা,নুপূর চমকে গেলো।আঁচল দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো…

“দোস্ত কই ছিলি তুই?বররে পাইয়া আমাদের ভুইলা গেসিলি?তোরা নিমুখারামরে বহুত।সবসময় দেহি এডা আমি।জামাই আর বয়ফ্রেন্ডরে পাইলে আর বন্ধু-বান্ধব গো কথা মনে থাকে না তোগো।আমরাই খালি ভুলতে পারি না।”

আমাকে খানিকটা অভিমানের স্বরেই কথাগুলো বললো আচঁল।আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম…

“কাউকে ভুলি নাই আমি।তোদের ভোলা যায়?আর কিচ্ছু বদলায় নাই,কখনো বদলাবেও না বুঝলি!”

“বদলায় নাই বলতাসোস কোন মুখে?ঠিকই তো চইলা যাইতাসো হল ছাইড়া।কয়দিন আগে বিয়া হইসে দেইখা জামাইরে পাইয়া ভুলসো আমাগোরে তুমি।ঈদে একটা ফোন পর্যন্ত দিলা না আবার বলতাসো কিচ্ছু বদলায় নাই।”

নুপূর আমার দিকে তেরে এসে কথাগুলো বললো।আমি বেশ লক্ষ্য করেছি কথাগুলো বলার সময় ওর গলা ধরে আসছিলো।আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“বেশি বোঝোস তোরা সবসময়।কে বলসে আমি তোগোরে ভুলে গেসি?ভুলে গেলে কি তোগো লগে দেখা করতে আসতাম?”

“তুই যে ভার্সিটির সমস্যার জন্য আসছোস আমি জানি না?ছাত্রী হল ছাড়তে হলে অনুমতি লাগে, তা কিন্তু আমরাও জানি শ্রীজা।”

রিদা নুপুরের কথায় তাল মিলিয়ে বলে উঠলো…

“ঠিক বলসোস।ওয় বদলাইয়া গেসে।পুরা পুরি বদলাইয়া গেসে।”

আমি অধৈর্য হয়ে বলে উঠলাম…

“তোরা এমন করতাসোস যেনো,আমি তোগোরে ছাইড়া পড়া শোনা বাদ দিয়া জামাই নিয়া চইলা জাইতাসি।যেনো এই ভার্সিটি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি আমি।”

আচঁল কাঁদো কাঁদো গলায় বললো…

“আমাদের হিংসে হচ্ছে খুব শ্রীজা।তোর শরৎ ভাই ইকটু ইকটু করে,আমাদের কাছ থেকে তোকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।তুই একদিন আমাদের ঠিক ভুলে যাবি।”

রিদা টুপ করে কেঁদে দিয়ে বলে উঠলো…

“শয়’তায় মাইয়া আমাগোরে ভুইলা যাইতাসো তুমি।যাও জামাই নিয়া থাকো, আমাগোরে তো আর লাগবো না।”

নুপুর আমাকে হালকা হুমকি দিয়ে বলে উঠলো…

“আবার যদি তোর শরৎ ভাই তোরে ছ্যাঁকা দেয় না।তখন আমাদের কাছে এসে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদবি না একদম।এসআ ছিচ-কাদুঁনি মেয়ে আমাদের বান্ধবী না,হু।”

আমি ওদের কান্ড দেখে হালকা হেঁসে,ধরা গলায় বললাম…

“এখন ছিচ-কাদুঁনিদের মতো কাঁদছে কারা? আমি?”

তিনজন একসাথে কেঁদে উঠলো।এরপর নুপুর আর রিদা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো…

“যেতে দিবো না তোকে।কোনো শরৎ এসে নিয়ে যেতে পারবে না।দেখি কি করে আমার বান্ধবীকে নিয়ে যায় আমার কাছ থেকে।”

“ওহ্ আচ্ছা।তা রিদার সামি ভাইয়ের কি খবর?”

আমার কথা শুনে খুক খুক করে কেঁসে উঠলো রিদা।আমাকে ছেড়ে।টেবিলের কাছে গিয়ে গ্লাসে করে পানি খেয়ে নিলো ঢকঢক করে।আমি ওর দিকে তাকিয়ে হালকা ঠাট্টা করে বললাম…

“বাহ্ সামি ভাইয়ের কথা শুনেই এই হাল।আর বিয়ের পর কি হবে?আর ফাস্ট নাইটের দিন থুড়ি রা..”

আমাকে বাকিটা বলতে না দিয়ে আমার মুখ চেঁপে ধরলো রিদা।দাঁতে দিয়ে জ্বীভ কামড়ে বলে উঠলো…

“এমা ছি ছি মেয়ে এসব কি বলে?বিয়ের পর থেকে তুই অনেক নোংরা হয়ে গিয়েছিস শ্রীজা।কথা বার্তা ভদ্রতার কোনো বালাই নাই।শ্রাদ্ধ করে দিলি মান সম্মানের।”

রিদার কথা শুনে নুপুর আর আঁচল হু হু করে শব্দ করে হেঁসে উঠলো।রিদা হাত ছেড় দিয়ে ফুঁস ফুঁস করে বলে উঠলো…

“তোরা সবগুলো অশ্লীল মহা অশ্লীল।তোদের সাথে থাকলে আমি অশ্লীল হয়ে যাবো।কি জঘন্য তোরা,ছিহ্।”

আঁচল বললো…

“আচ্ছা আচ্ছা সামি ভাই অশ্লীল হলে তো আর অশ্লীল না আমরা হলেই ছিহ্ ছিহ্,দেখবো দেখবো।বিয়ের পর সবব দেখবো হু।”

রিদা কান চেঁপে ধরে বললো…

“উফফ থামবি তোরা?”

রিদা পারছে না হল থেকে দৌড়ে চলে যেতে।ওর অবস্থা দেখে হাঁসতে লাগলাম আমরা।এমন ছোট ছোট দুষ্টু,মিষ্টি কথা বার্তার মাঝ দিয়েই শেষ হলো আমাদের আলাপন।নতুন ফ্লাটে এলাম আমি চর শরৎ ভাই।মন-মর্জি ভালো না থাকায় আমি ফ্লাট দেখতে আসিনি,শরৎ ভাই একাই ঘর দেখে এসেছিলেন।তিন রুমের একটা ফ্লাট।মাঝখানে একটা ড্রইংরুম।পাশেই রান্নাঘর।
ড্রইংরুমে বেতের সোফা আর কাচেঁর টি টেবিল সহ নানান ওয়ালমেট প্লাস্টিকের কৃত্তিম ফুলগাছ দিয়ে সাজানো সাথে রয়েছে নানান সো-পিস।কিছু পাতাবাহার আর ক্যাকটাস গাছও রয়েছে।পাশের বেডরুম গুলো খুব সাধারণ ভাবেই গোছানো প্রতিটি ঘরে কাঠের বক্স খাট।পাশে ছোট্ট টেবিল।সাথে কাবার্ড আর ড্রেসিংটেবিল। মাঝারি সাইজের ঘড়ি।তবে ড্রইংরুমের ঘড়িটা বেশ বড় দেয়াল ঘড়ি।প্রতিটি ঘরের জালানার পাশেই এক কালারের সাদা পর্দা দিয়ে গোছানো।কিছু পাতা বাহার গাছ ঘরগুলোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।আমি একটা বেলকণির সাথের ঘরে গিয়ে বেডের ওপর ধপ করে বসে পড়লাম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় ২ টো বাজে অথচ আমি আর শরৎ ভাই দুজনের জনের একজনও কিছুই খাইনি।কিছু একটা রাঁধতে হবে,এই ভেবে।আমি রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।দেখি কি করা যায়।রান্না ঘরের দিকে গিয়ে আনাজ পাতি খুঁজতে লাগলাম।পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো…

#চলবে__

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২১(নতুন কারো আগমন)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“রান্না করতে হবে না তোর।আমি খাবার অর্ডার করিয়ে নিয়েছি।”

শরৎ ভাইয়ে কথা শুনে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।কোমড় হাত রেখে বললাম…

“অনলাইন থেকে অর্ডার করার কী দরকার ছিলো?বাড়িতেই তো রাঁধতে পারতাম।”

আমার প্রশ্নের প্রতিত্তোরে শরৎ ভাই বললেন…

“আমি জানি তুই ঠিক কতোটা ক্লান্ত।তাছাড়াও ঘরে তেমন আনাজ-পাতি নেই যা দিয়ে তুই রান্না বান্না করবি।ঘরে গিয়ে রেস্ট নে আপাততো।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে কোনোরকমের রিয়েক্ট করলাম না আমি।সত্যিই খুব ক্লান্ত আমি,ক্লান্তিতে সারা শরীর আর কাজ করছে না।কোনো রকম কথা না বাড়িয়ে আমি ঘরে দিকে এগিয়ে গেলাম।ফ্যানটা ছাড়া ছিলো।তাই দরজাটা ভিরিয়ে দিয়ে ধপ করে নরম তুলতুলে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লাম।বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি।সারাদিনের জার্নি-ক্লান্তি সব মিলিয়ে শরীরের একটা বিশ্রামের প্রয়োজন ছিলো খুব।চোখের পাতা না চাইতেও বন্ধ হয়ে এলো।ক্লান্তিদের পরাজিত করবার জন্য পাড়ি দিলাম ঘুমের এক অন্তহীন রাজ্যে।

বিকেল শেষ প্রায় প্রায়।মসজিদের ইমামরা মধুর ধ্বনিতে আজান দিচ্ছেন।আসরের আজান দিচ্ছে।রোদের আমেজ শেষ হয়েছে।তাই পাখিরা নিজেদের আনন্দমতো আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ঘুমের ঘোরে আমি অনুভব করলাম কেউ একজন আমাকে খুব গভীর ভাবে লক্ষ করছে।তবে তার মনোযোগ বা লক্ষ করাকে পাত্তা না দিয়ে আমি নিজের মতো ঘুমোতে লাগলাম।কিছু ক্ষন বাদেই আমাকে ডাকলেন শরৎ ভাই।হাত ঝাকিয়ে বললেন…

“এই শ্রীজা ওঠ আসরের নামাজ পড়তে হবে তো।”

শরৎ ভাই বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলেন।অতঃপর ঘুমকে হারিয়ে দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম আমি।চোখ মুখ বেশ ফুলেছে আমার।বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,তারপর নামাজ পড়ে নিয়ে শরৎ ভাই আর আমি দুজনেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।দুপুরের খাবার বললে ভুল হবে,কারণ আমরা বিকেলে খেয়েছি।সে যাই হোক, বিকেল বা দুপুরের খাবার খেয়ে শরৎ ভাই বাহিরে বেরিয়ে গেলেন ঘরের কিছু প্রোয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনার জন্য।আমারও ভালো লাগছিলো না তেমন। ফোনে ডুব দিতে ইচ্ছে করছিলো না।বার বার এই এক কাজ করে এটার প্রতি বিরক্তি চলে এলো আমার।কি করা যায় তাই ভাবতে লাগলাম আমি।কিছু একটা মনে এলো আমার।যেই ভাবা সেই কাজ।দৌড়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলাম আমি।গোল গাউনের মতো লং টপস, চুল গুলো ছেড়ে দেয়া চুলে খোপা করে, কালো রঙয়ের ওড়না মাথায় দিয়ে নিলাম আমি।চোখে মুখে পানি দিয়ে।চোখ মুখ না মুছেই হাতে ছাঁদের চাবি নিয়ে দ্রুত জুতো পড়ে ঘর লক করে।ছাঁদের উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম আমি।যদিও লিফ্টের ব্যাবস্থা রয়েছে কিন্তু লিফ্ট ব্যাবহার করতে ভয় করে আমার আর একা হলে তো কথাই নেই।এ ভয়েই লিফ্ট ইউস না করে সিড়ি বেয়ে ছাঁদের ওপরে উঠে গেলাম আমি।ছাঁদের গেইটের তালা খোলা দেখতে পেলাম।তাই আর চাবি দিয়ে তালা আলাদা করে খুলতে হলো না।প্রতিটা ফ্লাটের মেম্বারদের কাছেই ছাঁদের একটি করে চাবি থাকে।সেহুতু ছাঁদ খোলা দেখতে পেয়ে অবাক তেমন হলাম না আমি।ছাঁদটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।বেশ দেখতে ছাঁদটা,অনেকটা বড়ও ছাঁদের একপাশে একটা বড় দোলনা রয়েছে,যাতে অনায়াসে ৩-৪ জন বাসে যেতে পারবে।আর দোলনার পাশে-পেছনে রয়েছে নানান গাছ।দোলনার দুইপাশে প্লাস্টিকের পাতা দিয়ে সাজানো।ছাঁদে নানান গাছ রয়েছে।সাথে ছোট্ট এক্টা পুলের মতো যায়গা যেখানে নানান মাছ সাঁতার কাটছে।এসব দেখে হাঁটতে হাটঁতে ছাঁদের অন্য প্রান্তে চলে এলাম আমি।তবে এদিকটা বেশ ফাঁকা হালকা কাজ চলছে বললেই চলে।আমার কি জেনো একটা মনে হলো তাই অতো-শতো না ভেবেই এগিয়ে গেলাম সেই দিকে।আমার মাথায় ছিলো না যে এদিকটায় গেলে কোনো রকম ক্ষতিও হতে পারে।আমি এগিয়ে গিয়ে দেখলাম বেশ কয়েকটা ছেলে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে।বেশ কয়েকজনের হাতে সিগারেট, আমাকে দূর থেকে লক্ষ করলো তারা।তারা আমাকে দেখা মাত্রই,হালকা চমকে উঠলো।তাদের মধ্যে কয়েকজন কিছু বলতেই যাবে।তাদের বাঁধা দিলো একটা ছেলে যদিও সে তাদেরই দলের,তবে তার হাতে কোনো সিগারেট ফিগারেট নেই।সে আমার দিকে এগিয়ে এলো।দু হাত পকেটে পুরে নিয়ে আমার দিকে একবার শান্ত দৃষ্টিতে চাইলো।ছেলেটার মাথার চুল গুলো স্বাভাবিকের তুলনায় হালকা বড়ই।তাই বার বার ওগুলোকে হাত দিয়ে ঠেলে পেছনে নিয়ে যাওয়া শর্তেও সেগুলো বারে বার কপালে এসে পড়তে লাগলো।সে সংক্ষেপে বললো…

“এই বিকেলে একা একা ছাঁদে এসেছেন কেনো?এসেছেন ভালো কথা এই দিকটায় এসেছেন কেনো?”

তার কথায় বেশ রাগ উঠলো আমার।যাকে বলে রক্ত গরম করা রাগ।আমার ফ্লাট আমি ভাড়া দিয়ে থাকি।সেই বাড়ির ছাঁদে এসে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে আমি কেনো এসেছি?আজব!আবার বলা হচ্ছে এখানে এসেছেন ভালো কথা এদিকটায় এসেছেন কেনো? আমি বেশ রাগ নিয়ে ওনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম,গরগর করে বলে উঠলাম…

“সে কৈফিয়ত আপনাকে আমি দেবো কেনো?আমার বাড়ি,আমি ভাড়া দিয়ে থাকি,এখানে রাতে,দিনে বিকেলে যখন ইচ্ছে তখন আসবো আমি,যে কোণায় ইচ্ছে সেই কোণায় ঘুরবো ফিরবো।প্রয়োজন পড়লে মাঝরাতে ছাঁদে এসে লাফিয়ে লাফিয়ে নাঁচবো।কি করবেন আপনি?আপনি কি বাড়িটা কিনে নিয়েছেন নাকি?না এ বাড়িটা আপনার বাবার।আবার আমাকে বলছেন কেনো এসেছি!”

“শেষের কথাটা সঠিক বলেছেন,বাড়িটা আমার বাবারই।”

লোকটার এমন ত্যাড়া কথা শুনে রাগ যেনো আমার মাথায় আরো ভালোভাবে চেপে বসলো।যেনো সে কঠোরতরো প্রতিঙ্গা করলো সে যাবে না,যাবে না মানে যাবেই না।আমি রেগে মেগে ফুস ফুস করতে করতে বলে উঠলাম…

“মজা করা হচ্ছে আমার সাথে?বাড়িয়ালার ছেলে নাকি উনি।দেখে তো মনে হচ্ছে,,, থাক সে কথা নাই বললাম।কি করবেন শুনি এদিকে আসলে?একশো বার আসবো হাজার বার আসবো?কি করবেন আপনি?”

উনি হালকা হাঁসলেন। লোকটার হাঁসি দেখে যেনো আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো।রাগেরা জ্বলে উঠলো ধপ করে,নীল রঙ থেকে কালো রঙ ধারণ করলো।যার মানে ভয়ানক।ভিষন ভয়ানক।উনি আঙ্গুল বাড়িয়ে তার দলবলের লোকগুলো কে দেখিয়ে, আমায় বললেন…

“আমি কিছু করবো না।ওদের দেখতে পাচ্ছেন ওরাই যা করার করবে।আর যা করবে,তা আপনার জন্যে মোটেও ভালো না।তাই আপনাকে বারে বার বলছি।এদিকে না আসতে,আর একা একা তো একদমই না।”

আমি ঠাট্টার সুরে,উনাকে খোঁচা মেরে বললাম…

“বাহ্ মহাপুরুষ আপনি,না বীর পুরুষ,হ্যা বীরপুরুষ আপনি।আপনার দলবলের লোকেরা,আমার এতো কিছু করে দেবে,আর আপনি কিছুই করবেন না।ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না ঠিক।”

মেয়েটার এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা শুনে বেশ রাগ লাগলো সাদাফের।সে জানে এ বাড়িতে নতুন এসেছে তারা,কেমন লোক-জন ভাড়া দেয় তার বাবা,এসব ভাবতেই বেশ রাগ লাগলো তার।মেয়েটার মনে কোনো রকম ভয় নেই।মেয়েরা সাহসী হলে ভালো কিছু কথায় আছে না অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।তেমনই মেয়েটার রাগটাও তার কাছে অতিরিক্ত মনে হচ্ছে।অনেক বেশি অতিরিক্ত।সাদাফ রেগে মেগে বললো…

#চলবে…