অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-২২+২৩

0
438

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২২
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“এসব ছাগল পাগল পাবলিকদের বাবা যে কেন ভাড়া দেয় বুঝি না।যত্তসব আবালের দল।”

আমি ওনার কথা শোনা মাত্রই রেগে মেগে বললাম…

“এই এই আপনি আমাকে পাগল বললেন কেনো?আমি পাগল ছাগল?”

আমার কথা শুনে উনি দু হাত ভাজ করে বললেন…

“এখন তুমি যদি নিজেকে পাগল ছাগল বলো আমার কিছু করার নেই।”

আমি রেগে মেগে ওনার দিকে তাকালাম আঙ্গুল তুলে বললাম…

“কি?আমি বলেছি আমি পাগল ছাগল!”

উনি আমাকে রাগিয়ে দিতে গা জ্বালানো মার্কা হাঁসি দিয়ে মাথা নেড়ে বলে উঠলেন…

“আহা বুঝেছি তুমি পাগল ছাগল,আর কতোবার বলবে এটা?”

আমার রাগ যেনো তরতর করে বাড়তে লাগলো।আমি ভুল ভাল কিছু বলে ফেলার আগেই রাগে ফুস ফুস করতে করতে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে বেয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।
শ্রীজা চলে যেতেই নাদিম হু হু করে হেঁসে উঠলো।মেয়েটাকে রাগিয়ে বেশ মজা পেয়েছে সে।তার সাথে ঘাড়ত্যারামো করতে আসার ফল ভালোভাবেই টের পেয়েছে সে।

____
ঘরে এসেই আমি মাথা থেকে ওড়নাটা এক টানে খুলে ফেলে বিছানার ওপর ফেলে দিলাম।হুট করেই মাথায় রাগ চেপেছে আমার।ভিষন রাগ।দমাতে পারছি না আমি রাগটাকে।কোনোভাবেই না,লেকটার প্রতি রাগ বাড়ছে আমার হু হু করে বাড়ছে।কি যেনো নামটা নাদিম হ্যা নাদিম।এতো ভাব, বাড়িয়ালার ছেলেই তো।আমাদের কি বাড়ি নেই নাকি।ভাড়াটিয়াদের টাকায় খায় আবার তাদের সাথেই এমন দুর্ব্যবহার।রাগে আমি মাথা চেপে ধরলাম বিরবির করতে লাগলাম আমি।
(আমি সেদিন সাদাফ লিখে ফেলেছিলাম ভুলবশত। কিন্তু নামটা নাদিম হবে।)

“এই নাদিম কে তো আমি দেখে নিবো।আমার সাথে লাগতে আসার আগে লোকটার ভাবা উচিত ছিলো।”

“তা কে সে নাদিম।”

“আরে বাড়িয়ালার ছেলে।দেখতে মাশাআল্লাহ্। কিন্তু ব্যাবহার আস্তাগফিরুল্লাহ্। ”

“কে মাশাআল্লাহ্ দেখতে? আবার বল।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে ওনার দিকে আমি।ওনার চোখে মুখে রাগের আভা স্পষ্ট।আমি ভাবলাম সুযোগের সৎ ব্যাবহার করার উত্তোম সময় এটা।বললাম…

“আরে নাদিম, বাড়িয়ালার ছেলে।দেখতে হেব্বি।”

শরৎ ভাই বললেন…

“আমার থেকেও বেশি সুন্দর নাকি?”

“হুমম,তা ইকটু বেশিই সুন্দর।”

আমার কথা শুনে শরৎ ভাই হাস ফাস করতে লাগলেন।কিছু বলতেও পারছেন না উনি।আবার সইতেও পারছেন।ওনার এমন অবস্থা দেখে আমি হালকা হাসঁলাম।যদিও তা ওনার চোখে পড়েনি।বললাম..

“আচ্ছা শরৎ ভাই?আপনি কি কিছু পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছেন?”

শরৎ আমার কথা বুঝে উঠতে না পেরে বললেন…

“না পাচ্ছি না।”

“আমি কিন্তু পাচ্ছি। ”

বলেই হু হু করে হেঁসে উঠলাম আমি।উনি হয়তোবা আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছেন তাই বললেন…

“তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না।”

বলেই উনি কাপড় নিয়ে ওয়াশ-রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।ফ্রেশ হবার জন্য।শরৎ ভাই যে মিথ্যে বলতে পারে না তা আমি খুব ভালো করেই জানি।ওনার এমন হিংসে দেখে কিছুটা ভালো লাগলো আমার।হয়তোবা লোকটা ধীরে ধীরে কিছু অনুভব করছে।এই ভেবেই মনে অনেকটা প্রশান্তি পেলাম আমি।

রাতে শরৎ ভাই যখন অফিস সংক্রান্ত কাজে মগ্ন আমি তখন তাকে বললাম…

“আজ চারু ফোন করেছিলো।অনেকদিন তো হলো ওকে ইকটু নিয়ে আসবেন আজ তো বুধবার শুক্র শনি অফডে ওকে নিয়ে আসি কালকে।আমারও একা একা তেমন ভালো লাগেনা।কদিন আমার সাথে থাকলো।মামনি এ কদিন একটু একা থাকলে কিছু হবে না।”

আমার কথার উত্তরে শরৎ ভাই মাথা নাড়লেন শুধু।বুঝতে পারলাম কাল চারুকে নিয়ে আসবেন তিনি।আমি কথা না বাড়িয়ে আমার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।শরৎ ভাই আর আমি আলাদা ঘরেই থাকি।প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা কথা ওনার সাথে হয় না আমার।আমি আমার নিয়তি কে মেনে নিয়েছি।দেখা যাক নিয়তি আর ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে দাড় করায়।এই ভেবে মনের মাঝে হাজারো অসমাপ্ত জল্পনা কল্পনা নিয়ে ঘুমের দেশে পারি জমালাম আমি।

খোলা বেলকণি কোনো গ্রিল নেই।আশেপাশে নানান গাছ।মাথাটা হালকা নিচু করলেই ব্যাস্ত শহরের মানুষদের ব্যাস্ততা বোঝা যাচ্ছে।গাড়ির চলাচল।নানান মানুষ হেটে চলছেন রাস্তা দিয়ে।শহরের এমন যায়গাগুলোতে পাখির কিচিরমিচিরের থেকে যানবাহনের হর্ণ আর মানুষের নানান কথা বার্তাই বেশি শোনা যায়।যা আমাদের শ্রোবন শক্তির জন্য ক্ষতিকর।এক কথায় যাকে বলে শব্দ দূষন।তবে আমি যখন জাবিতে ছিলাম তখনকার পরিবেশটা ছিলো পুরোপুরি ভিন্ন।সেখানে পাতার মরমর শব্দ।পাখির কিচিরমিচির ডাক।হিমেল বাতাসই বেশি অনুভব করতাম আমি।এখন ছাত্রী হলটাকে খুব বেশিই মিস করছি।শরৎ ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা বন্ধু সুভলই ছিলো।তবে তার মাঝে ইকটু বেশিই দুষ্টুমি ছিলো।শরৎ ভাই আমাকে তার আর অনুদির সম্পর্কের কথা আমায় জানায়।যদিও দুজন দুজন কে বেশ পছন্দ করতো কিন্তু বলতে পারতো না।আর আমি?আমি তো শরৎ ভাইকে প্রথম দিকে আমার ভালো লাগা বলেই ধরে নিয়েছিলাম।রিদা আর আঁচল প্রথম থেকে সবটাই জানে প্রথম প্রথম ভালো লাগা,এর পর ওনার মনের মতো হবার চেস্টা করা।আন মনে মিটমিট করে হাঁসা। বাংলা গানের রিলিক্সের সাথে ওই হিরো হিরোইনের জায়গায় ওনাকে আর আমাকে ভাবা।মাঝে মাঝে আমার খুব হাঁসি পায় আমার আগের বাচ্চামোগুলোকে ভেবে।নিজে নিজেই লজ্জা পাই আমি।ভাবতেই অবাক লাগে কিসব ভাবতাম আমি।এখনো কম কি ভাবি?এখনোতো কতো শতো জল্পনা কল্পনা তাকে নিয়ে আমার।ওনার চোখ দুটোর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকার বড্ড ইচ্ছে আমার।ওনার চোখে কি মায়া তা বুঝেই পাই না।ভেজা ভেজা চোখ, কালো কুঁচকুঁচে মনি।আর ভ্রুকুটি করে তাকানোর ভঙ্গিমা।অন্যরকম এক চাহনি।আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেবার জন্য এটাই যথেস্ট।মাঝে মাঝে আবার মনে হয়।লোকটার চোখের মায়ায় পড়ে গেলাম না তো।ওনার চোখই যেনো কথা বলে।মাঝে মাঝে আয়নায় নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি আমি।কই তেমন মায়া তো খুঁজে পাই না।তার চোখে কি এমন মাদকতা আছে.? যা আমায় নেশার মতো টানে।আর কারো চোখে কেনো সেই মাদকতা নেই?লোকটাকে ভাবলেই ভয়,লজ্জা,আমাকে না বোঝার অভিমান,কান্না,রাগ সব কিছুর সংমিশ্রণে এক অদ্ভুদ অনুভুতি তৈরি হয়।আর তারা ঘিরে ধরে আমায়।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি আমি আনমনেই বক্ষে হাত চলে যায়।চোখ বন্ধ করেও শান্তি পাই না।লোকটার ওই মায়াবি মুখশ্রী আমার কল্পনায় ভেসে ওঠে।কি মায়া বিদ্যা জানে সে?কারো প্রতি আমি অনুভব করি না এমন।যা ওনার প্রতি করি,এই অনুভুতিগুলোর কাছ থেকে পালাতে পারি না আমি।গুটিয়ে নিতে পারি না নিজেকে।তাদের ভালো লাগা বললেই তারা মেনে নেয় না,তাদের প্রত্যাশা আরো বড়কিছু।তারা ভালোবাসা।কিন্তু তাদের মাঝে যতোটা সুখ আছে,যতোটা আনন্দ আছে।তার চেয়ে বেশি আছে কষ্ট,হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দেবার মতো অসহনীয় যন্ত্রনা।সেই যন্ত্রনায় কাঁদা যায় না।কাঁদার অনুমতি থাকে না যে।যার জন্যে সে যন্ত্রনার দহনে পুড়ে ছাই হয়ে যাই।সে লোকটাও বোঝেনা।না বোঝার কষ্ট,এই যন্ত্রনা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে শেষ করে দেয় প্রতিনিয়তো। আবার মানুষটার মন বদল,মনের বঙ বদল।ক্ষনে ক্ষনে তার ভালোবাসার বৃদ্ধি। আবার মুহুর্তেই মুখ ফিরিয়ে নেয়া,অন্যরকম এক অনুভুতিতে জর্জরিত হয়ে পরি এরপর শুরু হয় কঠিন পরিণয়। প্রণয়ের পরিণয়!

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২৩
[❌কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ❌]

বৈশাখ শেষ প্রায়, জৈষ্ঠে পা রেখেছে ঋতু।গরমে নাজেহাল অবস্থা সবার।হুট হাটই গরম বেড়ে যায়।আবার হুট হাট কমেও যায়।
হুট হাটই প্রবল বর্ষন নেমে আসে ধরনীতে।সকাল নটা ছুঁই ছুঁই।আজ খুব ভোর ভোরই শরৎ ভাই মহাখালী গিয়েছেন।মামনি আর মামুকে দেখে আসতে,সাথে চারুকে নিয়ে আসবেন তিনি।এতোক্ষণে বোধয় পৌঁছে গিয়ে ফের বাড়িতে ফেরত এসেও পড়ছেন।তেমন সময় লাগবে না হয়তো।অযথা অলসের মতো বিছানায় শুয়ে না থেকে,ফ্রেশ হয়ে এলাম আমি।হালকা নাস্তা পানি করে নিলাম আমার নাস্তা পানি মানেই ওই পাউরুটি আর জ্যাম।শরৎ ভাই থাকলে এক একদিন এক একটা করা হয়।যদিওর ঘর দোর ঘোছানে ছিলো তবুও আবার ঘর দোর ঘোছালাম আমি।ঘর দোর ঘোছ-গাছ করেই রান্না বান্নার কাজে লেগে পড়লাম।যেহুতু চারু আসছে সেহুতু ইকটু ভালো মন্দ রাঁধতে হয়।রান্নাবান্না একবারে পারি না তেমনটা বললে ভুল হবে,আবার সব পাড়ি সেটা বললেও ভুল হবে।আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাড়িতে নতুন কেউ আসলেই ভালো মন্দ রাধাঁর ধুম পড়ে।সেই খাবারের মেনুতে পোলাও,বিরিয়ানি,মাংস তো কমন খাবার।তবে মাংস রাঁধলেও বিরিয়ানি বা পোলাওটা রাঁধছি না আমি।মায়ের বাড়িতে থাকতে যতবারই এটা করবার চেষ্টা করেছি ততোবারই ব্যার্থ হয়েছি বিরিয়ানি করতে গিয়ে হলুদ ছাড়া খিচুড়ি হয়ে গিয়েছিলো একেবারে।ও বাড়িতে মা আর দিই বেশি রাধঁতো ছোট মেয়ে হওয়ায় আমার কাজ করতে হতো না তেমন।তবে দেখে দেখে যা শিখেছি তা আপাততো হয়ে যাবে।গরুর মাংসটা একটা পাতিলে নিয়ে সব মশলা দিয়ে মাখিয়ে নিলাম,হাতটা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলাম ওই পানিটাও মাংসে দিয়ে দিলাম।চুলোয় মাংসটা বসিয়ে দিয়ে ভাবলাম আর কি রাধাঁ যায়?আকাশের মতিগতি ভালো টিকছে না বৃষ্টি হবে বোধয়।হালকা ঠান্ডা বাতাসের উপস্থিতিই তা জানান দিচ্ছে।খিচুঁড়ী হলে মন্দ হয় না।খিচুঁড়ীটা একটা চুলোয় বসিয়ে দিলাম।মিক্সারে হালকা করে টেলে রাখা শুকনো মরিচ,কাঁচা পেয়াজ, ভর্তার জন্য শুটকী সহ যা যা উপকরণ প্রয়োজন হয় সব হালকা করে টেলে নিয়ে একসাথে দিয়ে ভালো করে মিক্স করে নিলাম।খিচুঁড়ীর সাথে বৃষ্টির সময় লাল লাল ভর্তা আর মাংস ভুনা ভাবতেই আর তর সইছে না আমার।দি কে দেখতাম মিক্সারে এমন করে ভর্তা করতে আমাদের পরিবারে সবাই ভর্তা ভিষন পছন্দ করে,শুধু বাবা ছাড়া।রান্না বান্নার কাজ মোটামোটি শেষ রান্নাঘরটা পরিষ্কার করে।আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম এর মধ্যে রান্নাটাও হয়ে যাবে।

সকাল ১১টা বেঁজে ৩ মিনিট রান্না বান্নার কাজ শেষ।তাই সময় কাটাতে বই নিয়ে পড়তে লাগলাম।কর্নিং বেল বেঁজে উঠতেই বুঝতে পারলাম ওরা চলে এসেছে।দরজা খুলে দিতেই প্রথমে চারুকে দেখতে পেলাম ও আমাকে দেখতে পেয়েই ঝাপটে ধরলো।বললো…

“কেমন আছো ভাবি?”

আমি মুচঁকি হেঁসে উত্তর দিলাম…

“এই তো ভালো আছি, ঘরে এসো বাহিরে দাড়িয়ে থেকো না।”

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।”

“তা বলো পড়াশোনা কেমন চলছে?”

চারু মাথা চুলকে বললো…

“এই তো মোটামোটি।”

আমি ওর অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কান মুলিয়ে বলে উঠলাম…

“ওরে ফাঁকিবাজ, মোটামোটি না অন্যকিছু।”

চারু আমার ঘরের বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ে বললো…

“আরে ধুর ওসব ছাড়ো এখন কি পড়বো?এক্সাম আসতে বহুত দেড়ি এখন জাস্ট চিল আর চিল।”

আমি চারুর দিকে লক্ষ করলাম, গ্রামের সেই ভিতু মেয়েটা যে অল্পতে ভয় পেয়ে যেতো।প্রতিবাদ করতে গেলে কেউ তার সাথে জোড় গলায় কথা বললে ভয়ে দমিয়ে যেতো।হু হু করে কাঁদতো।সব সময় সুতির গোল জামা পড়ে এক কোণায় ঘাপটি মেরে বসে থাকতো।হাতে গোণা কয়েকজনের সাথে মিশতো আর যার সাথে মিশতো না একদমই মিশতো না।সে মেয়েটার আজ কতো পরিবর্তন।গায়ের চাপা রংটাও শহরে এসে ফর্সা হয়ে গিয়েছে।এখন হয়তোবা রোদ্দুরে আর তেমন ঘোরা হয় না।মানুষ ক্ষণে ক্ষনে পরিবর্তন হয়।তার প্রমাণ আমরা নিজেরাই।শরৎ ভাই এলো।ওদের ফ্রেশ হতে বলে আমি টেবিলে খাবার গোছাতে লাগলাম।
খাওয়ার টেবিলে বসে খেতে খেতে শরৎ ভাইকে বললাম…

“শরৎ ভাই,কয়েকটা জরুরী নোটের জন্য কাল ইকটু ভার্সিটিতে যেতে হবে।”

শরৎ ভাই খাবার নাড়তে নাড়তে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।বললো…

“যাবি ভালো কথা আমাকে বলছিস কেনো?”

ওনার কথা শুনে আমি বিষম খেলাম পানি খেয়ে বললাম…

“আপনাকে বলবো না তো কাকে বলবো।বাড়িতে আপনিই তো…”

আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে শরৎ ভাই বললেন…

“কেনো?তোর নাদিম আছে না ওকে গিয়ে বল!”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে আমি অবাকের চরম পর্যায়।নাদিম, ছেলেটার কথা এখনো মনে আছে ওনার অথচ এই দুদিনে একবারও ছেলেটাকে মনে পড়েনি আমার।ওইদিনের বিষয়টা নিয়েই তাহলে ক্ষেপে আছেন তিনি।কিন্তু এতে ক্ষেপার কি আছে তাই বুঝে উঠতে পারছি না।আমার ভাবনার সুঁতো কেঁটে দিয়ে চারু বললো…

“এই নাদিমটা কে গো ভাবি।”

আমি চারুকে বললাম…

“আরে বাড়িয়ালার ছেলে,সেই ভাব।দেমাগও সেই।”

আমার কথা শুনে চারু বললো…

“আচ্ছা আচ্ছা।তা শরৎ ভাইয়ের কি হয়েছে?ওনার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিলো নাকি!”

আমি এবার ওর কাছে এগিয়ে গেলাম চেয়ার টেনে নিয়ে ওর কাছে বসে ফিসফিস করে বলতে লাগলাম…

“আরে না আমার সাথেই কথা কাটাকাটি হয়েছিলো।ওটা শরৎ ভাইয়ের কানে চলে গিয়েছে,ভুলবশত ওই বেটার নামে দুটো সুনাম করেছি আর এটা নিয়েই এই লোক ফুঁসছে দুদিন ধরে।”

আমার কথা শুনে চারু আমার দিকে হাঁসি মুখ নিয়ে তাকালো।আস্তে করে দু হাতে তালি দিয়ে ফিসফিস করে আমাকে বলে উঠলো…

“আরেহ্ ক্যায়া বাত হ্যা।ওয়াহ্ ওয়াহ্।মিষ্টি খাওয়াও ভাবিজি,তা না হলে ট্রিট দাও।”

“কেনো কেনো?”

আমার প্রশ্ন শুনে চারু আমাকে বললো…

“আরেহ্ তুমি জানো না!এটাই তো ভালোবাসার প্রথম ধাপ।”

এই বলেই ও হালকা জোড়েই শরৎ ভাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে গান গাইতে লাগলো…

“পরাণ যায় জ্বলিয়ারে হোওওও পরাণ যায় জ্বলিয়ারেএএএ…”

ওর গান শুনে শরৎ ভাই ওকে ধমক দিয়ে বলে উঠলো…

“এই খাবার সময় কিসব ফাজলামো শুরু করলি তোরা?চুপচাপ খা।তা না হলে চরিয়ে গাল লাল করে দেবো।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে মুখ ভেংচি কাটলো চারু।এ কদিনে তাদের সম্পর্কটা অন্যসব ভাই বোনদের মতো হয়ে গিয়েছে।এদের দুজনের লাগালাগি, বাদঁরামো দেখতে ভালোই লাগে আমার।আমি আর মামনি তো নিরব দর্শক হয়ে দেখি আর মজা নেই।এসব ভেবেই মনে মনে হাসঁছি আমি।আমাকে হাসঁতে দেখে শরৎ ভাই এবার আমাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন…

“কিরে?এমন মিটিমিটি হাঁসছিস কেনো?ওই নাদিমের প্রেমে পড়লি নাকি?নতুন প্রেমে পড়লে তো এমনই হয়!”

আমি বললাম…

“প্রেমে পড়লেই বা কি শরৎ ভাই?ছেলেটা কিন্তু জোসস।কথাগুলোও সেই।কি এটিটিউট ভাই।ম্যায় মার যাবাআআআআ।হায় আল্লাহ্ বাঁচাও আমাকে।”

আমার দিকে এবার শরৎ ভাই রাগী চোখে তাকালেন।সাধারণ কোনো রাগা রাগেননি তিনি তা ভালোই বোঝা যাচ্ছে।যে চোখ দিয়েই জ্বালিয়ে দেবেন আমাকে।এইরে বেশি হয়ে গেলো না তো।ওনার রাগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে বলে উঠলাম…

“আচ্ছা শরৎ ভাই তাহলে আমি কাল একাই যাই।নোট কালেক্ট করতে,এক্সট্রা ক্লাসও আছে আবার।আপনার তো অনেক কাজ।বিরক্ত করা ভালো হবে না।তাই না হে হে হে ”

“থাক তোর আর একা যাওয়া লাগবে না, পরে দেখা যাবে।আমার বউ আরেক বেটার সাথে ঢেং ঢেং করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব-বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে প্রেমিক প্রেমিকার মতো ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।তুই তো আবার খুব হৃদয় বান মানুষ একশো কোটি লোককেও নিজের মনে জায়গা দেয়ার ক্ষমতা রাখিস তুই।”

চারু বললো…

“ভাবিইই।আমি যা দেখি তুমিও কি তাই দেখো?”

আমি কিছু না বুঝেই বললাম…

“হ্যা দেখি।”

“আমি যা অনুভব করি তুমিও তাই অনুভব করো?”

“করবো না কেনো?”

চারু মুখ টিপে হেঁসে বললো…

“আমি এখন অনুভব করছি।কোনো কিছু জ্বলছে।জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে যাচ্ছে।একেবারে ছাই হয়ে যাচ্ছে।পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছো?”

আমি ওর কথা বুঝতে পেরে বললাম…

“তা আর বলতে।”

শরৎ ভাই চারুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন…

“তোকে তো আজজ।”

চারু ভয় পাওয়ার ভান করে কাঁদোকাঁদো, মুখে হেরে যাওয়া প্রেমিকের ভাব এনে গান ধরলো…

“ভীষণ কালো মেঘ পুড়ে ছাই আবেগে।আজওওও তাইই।”

আমি ওদের কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসঁতে লাগলাম।ওদের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া দেখতে দেখতেই আজকের দিনটা পার হয়ে গেলো।

#চলবে…

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম।
ফিআমানিল্লাহ্ 💙