অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-২৬+২৭

0
457

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২৬
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

সূর্য ডুবে যাচ্ছে, আকাশ রক্তিম রঙ ধারণ করেছে শপিং মলের ভেতরকার পরিবেশটা খুবই জমজমাট কোলাহলে পরিপূর্ণ একেবারে।শরৎ ভাই আমাকে নিয়ে একটা শাড়ির দোকানে এলেন দোকানদারকে বললেন বেশ কিছু শাড়ি দেখাবার জন্য।তার কথা অনুযায়ী দোকানদারও শাড়ি দেখাতে লাগলো একের পর এক নানান রঙয়ের, নানান কারুকাজ, ছাঁপাকাজ ইত্যাদি নানান শাড়ি।শরৎ ভাই বেশ কয়েকটা শাড়ি নিলেন ৭-৮ টার মতো এতোগুলো শাড়ি দিয়ে কি হবে ঠিক বুঝলাম না আমি।না বুঝেও নিজের মাঝে অসীম কৌতুহল নিজের মাঝে দমিয়ে রাখলাম আমি।আরো কিছু কেনা কাটা করলেন তিনি।এরপর আমরা এলাম একটা রেস্টুরেন্টে রেস্টুরেন্টটা শপিং মলের ভেতরেই ছিলো হাবি জাবি খাওয়া হলো আমার যদিও খাবার তেমন ইচ্ছে ছিলো না তাও খেলাম কিছুটা বাধ্য হয়েই বাড়িতে ফেরার পর বেশ কিছুক্ষন রেস্ট নিলাম চারু চারুর ঘরে বসে বসে ফোন টিপছে হয়তোবা।পুরো শরীরে ক্লান্তি ভরপুর শরৎ ভাই কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছেন।বেশ ধকল গিয়েছে ওনার ওপর দিয়ে আজ আমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দেয়া অফিস করা আবার ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসা,সে পথে আবার শপিং আবার বাড়ি ফেরা সব কথার এক কথা আমরা দুজনেই বেশ ক্লান্ত আসার পথে রেস্তোরা থেকে চারুর জন্য খাবার আনিয়ে ছিলাম আমি।সেগুলোই হয়তেবা খেয়ে নিয়েছে চারু।চারু আমার ঘরে শুয়ে পড়েছে, আমি এখন শরৎ ভাইয়ের ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কখন যে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছেন শরৎ ভাই তা নিজেও জানেন না।পাশে ল্যাপটপ টা পড়ে রয়েছে। আমি সেটাকে জায়গা মতো রেখে এলাম। কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম শরৎ ভাইয়ের দিকে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ ওনার।কতো ব্যাস্ত তিনি,আচ্ছা অনুদি কে এতো ব্যাস্ততার মাঝে ভুলতে পেরেছেন তিনি?নাকি আজও মনে আছে।অনুদির খবর টবর এখন আর নেয়া হচ্ছে না তেমন বেশ কদিন ধরেই তার সাথে কোনো রকম কথা হয় না আমার।বেশ ভালোই আছে দি, ভালো থাকুক সবাই।আমি শরৎ ভাইয়ের দিকে ভালো করে খেয়াল করলাম,লোকটা ঘুমিয়েছে কিনা?ঘুমিয়েছেন তাহলে।ইকটু ইকটু করে এগিয়ে গেলাম বিছানার দিকে এরপর চুপটি করে শুয়ে পড়লাম ওনার পাশে কোনো রকম দ্বিধা-দন্দ ছাড়াই।ওনাকে দেখতে দেখতে সারা রাজ্যের ঘুম ভর করলো আমার চোখে চোখের পাতা ভার হয়ে এলো ঘুমের জন্যে।আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

ভোরের সকাল, ফোনে নির্ধারিত করে দেয়া এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো শরৎতের।টাইম মাফিক চলতে হয় তার সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠাটা অতোটাও সহজ বিষয় নয়, তাই এলার্ম দিয়ে রাখাটাকে ঘুম থেকে দ্রুত জেগে ওঠার ভালো একটা পদ্ধতি মনে করে সে।বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করলে সময় দেখলো শরৎ ৬ টা বেজে ২৩ মিনিট,বিছানার ওপর কিছুক্ষন উপর হয়ে শুয়ে রইলো সে, এরপর পাশে তাকাতেই কিছুটা চমকে উঠলো সে শ্রীজা ঘুমিয়ে আছে পাশে গুটিশুটি হয়ে। শরৎ বিষয়টা দেখে কিছুটা হাসঁলো চাদর টেনে দিলো শ্রীজার গায়ে।ফ্রেশ হয়ে এসে ফজরের নামাজ আদায় করে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলো শ্রীজা তার চোখে পড়লো শ্রীজা রান্নাঘরে কিছু রান্নাবান্না করছে হয়তোবা বার বার হাত দেখছে শ্রীজার বা হাতে কালো রঙয়ের একটা ওয়াটার প্রুফ ঘড়ি দেখা যাচ্ছে সেটা দিয়েই মূলতো সময় দেখে কাজ করছে শ্রীজা কি তারা তার পাক্কা গিন্নি হয়ে গিয়েছে একেবারে অথচো দু মাস আগেও তাকে কিছু বললেই কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে মন খারাপ করে রাখতে মেয়েটা।শরৎ ঘরের দিকে চলে গেলো অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে সে।ডিম পোঁচ,আলু ভাজি পরোটা আর ম্যাংগো জুস এসব দিয়েই সকালে নাস্তাটা সেরে নিলো শরৎ অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো সে যাওয়ার আগে একবার উকি মেরে শ্রীজাকে দেখে গেলো।অনু আর শ্রীজা দুই বোন হওয়া শর্তেও দুজনের মাঝে কতোটা তফাত রয়েছে তা ভাবলেই অবাক লাগে শরৎতের।অনুর সাথে সম্পর্কটা কিছুটা কাকতালীয় ছিলো বললেই চলে প্রথম প্রথম আট দশটা কাজিনের মতোই আড্ডা মোজ মাস্তিতে মেতে থাকতো ওরা হুটহাটই এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে যাওয়াটা একটা সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছিলো ওদের মাঝে।শ্রীজা মেয়েটা চঞ্চল ছিলো খুব ওদের বাড়িতে গেলেই শরৎভাই শরৎভাই করে করে মাথা ধরিয়ে ফেলতো একেবারে,আর অনুর সাথে ওর সম্পর্কটা গড়ে ওঠে ভার্সিটিতে যাওয়া আসা কালীন সময়টাতে,ফাস্ট প্রোপোজ অনুই করেছিলো তাকে।প্রথমে বিষয়টাকে তেমন একটা পাত্তা দেয়নি শরৎ বিপত্তি ঘটলো তখন যখন অনু পাগলামো শুরু করলো হাত কাটা মাঝরাতে ফোন টোন দিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা,হুট হাট রাস্তায় পথ ধরে দাড়িয়ে থাকাটা নিত্যদিনের একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিলো অনুর,শরৎ প্রথম প্রথম বেশ বিরক্ত হতো অনু আর শরৎতের মাঝের বন্ধুত্বটাকে নষ্ট করতে চাইছিলো না শরৎ।প্রথম প্রথম রাগ দেখালেও পরে অনুকে ভালো করে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করে সে ফলস্বরুপ তাদের বন্ধুত্বটা আরো বেশি গভীর হয়ে ওঠে।একটা পর্যায় শরৎ ভুলেই গিয়েছিলো সে অনুকে অনুর এসব অনুভুতিকে প্রশয় না দেবার জন্য বোঝাতে এসেছে, তাদের চলাফেরা গভীর হয় বন্ধুত্ব বাড়ে হুট হাট অনুর তারে সারপ্রাইজ দেয়া,হুট হাট কান্না করা এসব নিয়ে অনেক ভাবার পর শরৎতের কেনো যেনো মনে হয় অনুই ঠিক সে সত্যিই শরৎকে ভালোবাসে।আর তার এই মনে হওয়াটাই ছিলো তার সবচেয়ে বড় ভুল চরম ভুল যাকে বলে।শ্রীজা আর তার বিয়ের দিন শরৎ জানতোও না অনু পালিয়েছে তার আরেক প্রেমিকের সাথে, শরৎ অনুর প্রতি পুরোটা রাগ সেদিন শ্রীজার ওপর ঝেড়েছিলো ঘোমটার অপর পাশে অনু কে না দেখে সে হতবম্ভ হয়ে গিয়েছিলো একদম।ওই মুহুর্তে শরৎ কি বলবে বা কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না, আক্কেল জ্ঞান যেনো সব হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো তার হুট করেই তার মা বাবার ওপর রাগ হয় কিছু একটা আন্দাজ করেই শ্রীজার গায়ে হাত তুলে মাঝ রাতে বেরিয়ে পড়ে সে।সে তখনও বুঝতে পারেনি ঠিক কি করবে? সেদিন প্রথম সিগারেট হাতে নিয়েছিলো সে,বন্ধুদের সঙ্গদোষে একটা বয়সে অনেক ছেলে পেলেই স্মোক-স্টোক করে থাকে কিন্তু এসব তার ধারে কাছেও ঘেষঁতে পারেনি একদম,জেদ করে বাড়ও থেকে চলে আসার পথে তার মা তাকে খুব বাধাঁ দেয় এক পর্যায় বলেই দেয় অনু পালিয়েছে।অনুর এহেন কান্ডের মানে শরৎ বুঝে উঠতে পারেনা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করে শরৎকে ভালোবাসার মায়াজালে ফেলে অনু তার ২য় প্রেমিকের সাথে খুব সুখেই সংসার করছে।শ্রীজা ভাবে শরৎ কিছু বোঝে না কিন্তু শ্রীজা যে লুকিয়ে লুকিয়ে অনুর সাথে সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রেখেছে তা বেশ বুঝতে পারছে শরৎ, বরং শ্রীজাকে বুঝতে দিচ্ছেনা যে সে সবটা জেনে গিয়েছে শ্রীজা তো এটাও জানে না যে মাঝে একবার অনু আর শরৎতের কথাও হয়েছিলো।অনুর দেয়া ধোঁকাটা বেশ ভালো করেই লাগে শরৎতের মনে সে বেশ বুঝতে পারছে অনু শ্রীজার জন্য কতোটা ক্ষতিকর আর যাইহোক ২য় বারের মতো অনুকে বিশ্বাস করে ঠকতে চাচ্ছে না সে একদমই না।শ্রীজাকে অনুর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে যতো দ্রুত সম্ভব।এসব ভেবেই নিজের কাজে মন দিলো শরৎ।

_______

কাল চারু চলে যাবে ভেবেই বেশ মন খারাপ আমার, যে কদিন মেয়েটা সাথে ছিলো খুব দ্রুত ভালোভাবে দিন কেটে যেতো আমার, হোস্টেলে থাকতেও কতো সুন্দরভাবে দিন কাল কেটে যেতো রিদা,আচঁল,নুপূর সবাই সাথে থাকায় তেমন একটা বোরিং লাগতো না।আর এখন তো সাথে কেউই নেই। না না আছে তো,আছে একটা ঘোমরামুখো লোক। মুখটাকে পুরোটাদিন ভার করে রাখাই হলো এই লোকের কাজ,একটু হাঁসেও না,আগ বাড়িয়ে কথাও বলে না।আবার কেউ বললেও জ্বলে কি চিজ মাইরি।এসব ভাবছি আর রান্না করছি ছোট মাছ ফ্রিজে ছিলো,আগ থেকেই কেঁটে রাখা মাছগুলোর চরচরি করছি, এই মাছের চরচরিটা খেতে ভীষণ ভালোবাসেন শরৎভাই তাই দুদিন পর পরই করি,যদিও মাছ কাটতে ভালোই কষ্ট হয়।এই শরৎ ভাইটা যে কবে মানুষ হবে তাই বুঝি না আমি এই লোককে আমারই টাইট দিতে হবে তা হলে বিয়ের পরও কুমারী জীবনের অবসান আর ঘটবে না।কতোশতো ভাবছি আমি এই লোককে কি করে কি করা যায়,এর মাঝেই ঘটিয়ে বসলাম আরেক কান্ড সবজি কাটতে গিয়ে বটিতে আঙ্গুল লেগে বেশ খানিকটা কেঁটে গেলো।সবটাই হলো আমার অসাবধানতার ফলে।দ্রুত করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে গেলাম,দেখলাম চারু কি যেনো ভাবছে গালে হাত দিয়ে,আর মিটমিট করে হাঁসছে হাতে একটা উপন্যাসের বই,এসব উপন্যাসের বই ঠই আমিই পড়ি বেশি,ওর সময় কাটে না বিধায় বুকসেল্ফ থেকে নামিয়ে ওকে পড়তে দেয়া।আমার উপস্থিতি টের পেতেই বই রেখে আমার দিকে তাকালো আমার হাত দেখে দ্রুত ফাস্টেস বক্সটা নিয়ে এসে হাতে ব্যন্ডেজ করতে করতে বললো…

“কিসব করো বলতো ভাবি?মন কোথায় থাকে তোমার?এতো অসাবধান কেনো তুমি?”

আমি হাতের দিকে তাকিয়ে বললাম…

“মন আর কই থাকব?তোমার ভাইয়ের কাছে থাকে।”

চারু ফিক করে হেঁসে দিলো।বেশ বুঝলো মজা করছি।ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো…

” বুঝি বুঝি,আমার মতো সিংগেলদের বুকে আগুন জ্বালানোর জন্যই তোমাদের সব ষড়যন্ত্র। ”

_______

“কি হলো খাচ্ছিস না কেনো?”

শরৎ ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দিলাম না আমি।চুপচাপ ওনার পাতে তরকারি বেড়ে দিতে লাগলাম।উনি আমাকে ধমক দিয়ে বললে…

“আমি তোকে কিছু জিঙ্গেস করেছি শ্রীজা?”

“না আমার খাবার কোনো ইচ্ছে নেই এখন?”

“কেনো ইচ্ছে নেই!কি ইচ্ছে নেই এসব জানতে চাচ্ছি না আমি।তুই খাবি মানে খাবি এখনই খাবি।বস চ্যায়ারে,যাআআ…”

শরৎ ভাইয়ের ধমক শুনে কিছুটা ভয় পেয়েই চ্যায়ারে গিয়ে বসলাম আমি।চামচ দিয়ে ভাত আর সবজি নিয়ে। হাত দিয়ে ভাত মাখাতেই ব্যান্ডেজ ভেদ করে তরকারির ঝোল ঢুকে গেলো হাতের কাঁটা অংশে ব্যাথায় ছ্যাঁত করে উঠলো হাতটা।আমি হাতটা বা হাত দিয়ে চেঁপে ধরে ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলাম।আমার এমন আর্তনাদ শুনে আমার দিকে তাকালেন শরৎ ভাই।আমার হাতে চোখ পড়তেই জিঙ্গেস করলেন কীভাবে এসব হয়েছে?আমি আমতা আমতা করে সব বলতেই আমাকে আরেকটা রামধমক দিয়ে, বেসিনের সামনে গিয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে আবার হাত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিলেন তিনি।প্লেটটা কাছে নিয়ে ভাত মাখাতে লাগলেন।আমি ভয়ে কিছু বলছিনা ওনার কাছ থেকে ফের ধমক খাবার সাহস আমার নেই।ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে এক লোকমা ভাত তুলে ধরলেন তিনি।আমি চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলাম, আস্তে করে জিঙ্গেস করলাম…

“আমাকে সাধছেন নাকি?”

শরৎ ভাই রাগলেন, বিরক্ত হয়ে বললেন…

“আশে পাশে আমার আর আরেকটা বউ দেখছি না আমি।”

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলাম উনি আবার ধমক দিলেন।শেষবারের মতো ধমক খেয়ে লাজ লজ্জাকে বিষর্জন দিয়ে মুখ খুললাম আমি।উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন আর বকছেন।মাথা নিচু করে বকাঝকা শুনতে লাগলাম আমি।রাতে ওনার ঘর থেকে আমার ঘরে ঘুমোনোর জন্য যেতে নিলে উনি বাঁধা দিলেন আমায়।বললেন…

“কোথায় যাওয়া হচ্ছে?”

“আমার ঘরে যাচ্ছি ঘুমোবো আমি।”

“তোকে ঘুমাতে বারণ করলো কে?”

কিছু বললাম না আমি।আমার কোনো উত্তর না পেয়ে বললেন…

“এ ঘরেই ঘুমোবি তুই।ও ঘরে যাওয়া লাগবে না আর!”

আমি নিচুস্বরে বললাম…

“চারু একা ঘুমাবে?ভর করবে ওর।”

“আর আমি?আমার সাথে কে ঘুমোবে আমার আরেকটা বউ?তোর মতো কি ভার্সিটির টিচাররা আমার পেছনে পড়ে থাকে?যে বউ রেখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবো সারাদিন।তোর হয়তোবা তোর বর কে দেখতে ইচ্ছে করে না কিন্তু আমার ইচ্ছে করে আমার বউকে দেখতে।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম আমি।ওনার কথাগুলো শুনে যেনো পাথর হয়ে গিয়েছি একেবারে।লজ্জারা যে যেখান থেকে পারছে সেখান থেকে এসে আমার কাছে আশ্রয় নিচ্ছে।জড়িয়ে যাচ্ছে আমার ভেতর বাহিরে।আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শরৎ ভাই নিজেই এগিয়ে এলেন্।হাত ধরে একটান দিয়ে…..

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২৭

[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ ✖️]

শরৎ ভাই আমাকে এক টান দিয়ে খাটের এক কোনায় বসিয়ে দিলেন,ধমকের সুরে বললে…

“একদম চুপ আর কোনো কথা নয়,চুপচাপ এই ঘরে ঘুমো।তোর এসব কান্ড দেখে চারু যদি বাবা,মার কাছে গিয়ে বলে তাহলে বাঁশটা আমি খাবো তুই না।”

শরৎ ভাইয়ের ধমক শুনে তেমন ভয় না পেলেও,বিছানার এক পাশে চুপটি করে শুয়ে পড়লাম আমি।রাত কেটে গিয়ে দিন এলো নিয়ম মাফিক।
সকাল ১০ কিংবা ১০ টা ৩,৪ এর মতো বাজে দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে টেবিলের ওপর বসে পড়লাম আমি।ঘরটা হালকা অন্ধকার তবে থাই জানালার ওপরের পর্দা ভেদ করে যতোটুকু পারছে আলো আসছে,জানালাগুলো হালকা ফাঁক করা তাই সাদা পর্দা ভেদ করে শাঁ শাঁ করে বাতাস আসছে ঘরে।টেবিলে বসে হাতের কাছে থাকা বুক সেল্ফের তাক থেকে আনার ডায়েরীটা বের করে নিলাম আমি।কলম দানি থেকে একটা নর্মাল কলম নিয়ে লিখতে শুরু করলাম আমি গত কিছুদিন ধরে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা।ডায়েরী লিখাটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমার,একা থাকি কি করবো?তাই দিনের স্বরনীয় কিছু কিছু অংশ ডায়েরী তুলে রাখি আমি।শরৎ ভাই প্রতিদিনের মতোই অফিসে গিয়েছেন,চারু গিয়েছে বাড়িয়ালার ফ্লাটের দিকে ফির্নির বাটিতে করে কিছু একটা রান্না করে দিয়ে আসছে চারু।আজ বিকেলের দিকেই ও বাড়ি চলে যাবে তাই রেডি ঢেডি হয়ে আছে শরৎ ভাইয়ের কিনে আনা শাড়িগুলোর মাঝ থেকে কয়েকটা দিয়েছি ওকে সেগুলোর মাঝেই একটা নীল শাড়ি ছিলো ওইটা পড়েই ঘুরঘুর করছে মেয়েটা দেখতে বেশ লাগছে বেলকণি থেকে নয়নতারা ফুল কানের পাশে গুঁজে দিয়ে ঘুরছে ও।এসব ভাবনা বাদ দিয়ে আবার লিখতে শুরু করলাম আমি।

_________

অফিসের কিছু জরুরী কাগজ পত্র চেক করছিলো শরৎ, দরজায় নক পড়লো হুট করেই সাধারণ ভাবেই বললো…

“ভেতরে আসুন।”

দরজা ঢেলে প্রবেশ করলেন একজন মাঝ বয়সী লোক, দাড়ি চুলে পাক ধরেছে,গায়ে অফিস ইউনিফর্ম। লোকটা ভেতরে প্রবেশ করে বললেন…

“স্যার নিচে একজন মেয়ে এসেছেন দেখতে সুন্দর চেহারায় বিদেশি বিদেশি ভাব,আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।”

“নাম কি কিছু বলেছে.?”

“জ্বী স্যার বলেছে যে শরৎকে অনু নাম বললেই চিনে যাবে,নাম নাকি অনু পুরো নাম বলেনি স্যার।”

হুট করে অনুর নাম শুনে চমকে উঠলো শরৎ,লোকটিকে বললো…

“নাম কি সত্যিই অনু?মানে আপনি ভুল টুল শুনেননি তো?”

“না স্যার ভুল শুনবে কেনো?বলেছে আপনারে অনু নাম বললেই আপনি চিনবেন।তারে কি আসতে দিবো স্যার?নাকি চলে যেতে বলবো?”

শরৎ মুখে হাত রেখে কিছু একটা ভাবলো এরপর বললো…

“আচ্ছা আসতে বলো ওকে।”

লোকটা তাড়াতাড়ি করে হেঁটে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর দরজা ঢেলে কেবিনে ঢুকলো একজন মেয়ে বয়স তেমন বেশি না শরৎয়ের বয়সের বললেই চলে। গায়ে আকাশি রঙয়ের থ্রি-পিস সেখানে সাদা আর হালকা গোলাপি রঙয়ের সুঁতোর কাজ করা।গলায় সাদা ওড়না প্যাচাঁনো।নাকে ছোট্ট পাথরের একটা নথ চিকচিক করছে যা আগের থেকেও বেশি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দিয়ে।মেয়েটার চেহারায় শ্রিজা শ্রিজা একটা ভাব আছে।মেয়েটা হয়তোবা নিজেও জানে না তার মাঝে কতোটা স্নিগ্ধতা কাজ করছে।শরৎতের দিকে তাকিয়ে একটা হাঁসি দিলো অনু বললো…

“কেমন আছো শরৎ?”

অনুর হাঁসিটা অচেনা নয় শরৎয়ের,বললো…

“আগের থেকে এখন খুব বেশি ভালো আছি।”

অনু শুকনো হাসি দিয়ে বললো…

“কেনো আগে ভালো ছিলে না?”

“ছিলাম ভালো কিন্তু সেই ভালো থাকাটা মিথ্যে ভালো থাকা ছিলো,এখন সত্যিই ভালো আছি।”

শরৎ মানুষটাকে দেখতে যতোটা সরল, সহজ মনে হয় সে ততোটাও সহজ নয়,খুব কঠিন অনেক বেশি কঠিন,লোকটা নিজের সহজতার আড়ালে নিজের অনুভুতি, আবেগ কঠিনতা কোমলতা সব লুকিয়ে রাখে।এই কঠিন, জটিল মানুষটাকেই চিনতে পারেনি অনু,কোনোভাবেই না।আচ্ছা শ্রিজা কি চিনতে পেরেছে জটিল মানুষটাকে?কাউকে না চিনে কি ভালোবাসা যায়?হয়তোবা যায়,নয়তোবা যায় না।

অনু শরৎতের কথায় কিছুটা হলেও বুঝতে পারলো অনুর আগমনে শরৎ খুশি হয়নি একদমই না,অথচো মাস পাঁচেক আগেও কতোটা চাইতো অনুকে।অনু কিছুটা অপমানবোধই করলো শরৎয়ের এমন কথা শুনে।বললো…

“তা কেমন চলছে তোমার আর শ্রিজার সংসার?”

“ভালো না চললে তো আর ভালো থাকার কথা ছিলো না।”

“রোবোর্টের মতো শুধু উত্তর দিয়েই যাচ্ছো,কোনো প্রশ্ন করছো না যে?নাকি কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই?”

“ওয়াইফের বড় বোনের সাথে কথা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখছি না।যেহুতু প্রশ্নের কথা উঠলো সেহুতু একটা প্রশ্ন করতেই পারি,নিজের ঘর সংসার বাদ দিয়ে বোনের স্বামীর অফিসে হুট করে চলে এলে?না মানে খুব বেশি জরুরী প্রয়োজন ছিলো কি?

অনুর গায়ে কথাটা এবার ইকটু বেশিই লাগলো।তার সাথে এভাবে কথা বলছে কেনো শরৎ, হয়তোবা সে ভুল করেছে।তাই বলে এভাবে বলতে হবে?অনু চোখের জল লুকিয়ে বললো…

“মিহাদের সাথে বাংলাদেশে এসেছি সপ্তাহ খানিক হলো,বাংলাদেশে আছি কয়েক মাস ভাবলাম চলে যাবার আগে তোমার সাথে দেখা করে যাই!”

“দেখা করা শেষ?”এবার আসতে পারো।”

অনু কেনো যেনো এবার আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না, চোখের সামনে একটা মানুষের এমন কঠিন পরিবর্তন মানার মতো নয় একদমই নয়,হোক সে খুব কাছের কিংবা অনেক বেশি দূরের।অনু ছোট্ট করে বললো…

“তাড়িয়ে দিচ্ছো শরৎ?আচ্ছা বেশ আমি না হয় শ্রিজার সাথে…”

কথাটা শেষ করতে দিলো না শরৎ বললো…

“একদম না অনু,শ্রিজার নামও তোমার মুখে শুনতে চাচ্ছি না আমি,ওর সাথে দেখা করা তো দূর,তোমার আর শ্রিজার সম্পর্কপর কথা জেনেও কোনো মন্তব্য করিনি আমি।কিন্তু তুমি যদি আরেকপাও এগোও এ সম্পর্ক নিয়ে তাহলে এই সম্পর্ক একেবারেই বিচ্ছিন্ন করে দিতে একটু সময় লাগবে না আমার।

অনু কিছু বললো না চুপটি করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।এতো অপমানের পরেও এখানে থাকা কি আদেও সম্ভব?শরৎয়ের এমন ব্যাবহার কি প্রাপ্য ছিলো না অনুর?হয়তোবা ছিলো।কিছু ভুল ছোট খাটো হলেও আমাদের জীবনের খুব বেশি বড় ক্ষতি করে দিয়ে যায় ভুলগুলো। মারাত্মক ক্ষতি যাকে বলে।সেই ভুল শুধরাবার কোনো উপায় থাকে না আমাদের কাছে,শুধু ভুলের মাশুল দিয়ে যেতে হয়।
অনু চলে যেতেই চেয়ারের ওপর ধপ করে বসে পড়লো শরৎ,হাত দিয়ে মাথার চুলগুলোকে টেনে, টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস থেকে পানি খেয়ে নিলো।কিছু একটা ভেবে ফোন হাতে নিলো ও,দ্রুত গতিতে ফোন দিলো শ্রিজার কাছে।খুব জরুরী কিছু বলার আছে তার।

_______

“আরে চড়াই পাখি তুমি এখানে!কি খবর?হাতে এটা কি?”

চারুর হাত থেকে সেমাইনের বাটিটা দেখে প্রশ্ন করলো নাদিম।বাড়িতে নাদিমের আম্মু নেই,কর্নিংবেলের আওয়াজ শুনতেই দরজা ভিরিয়ে কেঁচিগেইটের তালা খুলে চারু কে দেখতে পেয়ে বললো নাদিম।কোনো কিছু না ভেবেই চারুর হাত থেকে সেমাইয়ের বাটিটা নিয়ে সেমাইসহ মুখে চামচ পুরে নিলো নাদিম।

দরজার ওপাশে নাদিমকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হলো চারু।তবে তাকে চড়ুই পাখি বলায় রাগলো বেশ।আর নাদিমের এমন অভদ্রতায় আরো বেশি রাগলো।কাউকে কিছু না বলে তার হাতে থাকা কোনোকিছু কেড়ে নিয়ে সেটায় মুখ দিয়ে দেয়াটা অব্যশই অপরাধ,অভদ্রতা। চারু রেগে গিয়ে বললো…

“এটা কোন ধরনের অভদ্রতা?”

নাদিম এগিয়ে এলো,বললো…

“অভদ্রতার তো কোনো কিছুই করিনি।করবো নাকি?”

চারুর মাথা গরম হয়ে গেলো মুহুর্তেই রেগে বোম হয়ে গেলো সে,কোনো কিছু না ভেবেই চর লাগিয়ে দিলো নাদিমের গালে।ফলস্বরুপ নাদিমের হাতে থাকা সেমাইয়ের বাটিটা অপ্রস্তুত ভাবে মাটিতে পড়ে গেলো।আর রাগ চড়ে গেলো নাদিমের মাথায়।রেগে মেগে…

#চলবে…