অভিনয় পর্ব-০৭ এবং বোনাস পর্ব

0
190

#অভিনয়
#পর্ব_৭
#মুমতাহিনা_তারিন

” আম্মা তুমি একবার ও শুনছো আমার কাছে আমি পারুকে বিয়ে করবো কি করবো না?”

” বাবু এসব তুই কি বলছিস ! তুই আসার পর থেকে তো পারুকে মোটেও পাত্তা দিসনি । সবসময় নয়নের সাথে লেগে ছিলি আমি তো তাই ভাবলাম তোর হয়তো পারুকে আর ভালো লাগে না ।”

“আম্মা তাই বলে তুমি আমার কাছে শুনবে না? আমাদের মধ্যে তো ঝগড়া বিবাদ ও হতে পারে। ”

” এখন এসব বলে কোনো লাভ আছে তুই বল । আর তুই নিজে একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর পারুর সাথে কি তোর যায় কোনো দিক দিয়ে? আর নয়ন কে দেখ যেমন চেহারা তেমন ব্যাবহার উচ্চশিক্ষিত ”

” আমি আজকে রাতে যাবো পারুর কাছে ওর চাচীর কাছে গিয়ে পারুর হাত চাইবো তুমি গেলে যাবা না গেলে আমি একাই যাবো ”

তাদের কথোপকথনের মাঝে পাশের বাড়ির আওয়াল শেখের বউ আর চুমকির মা ঘরে ঢুকলো । তাদের সব কথা শুনেছে তারা ।

” তোর কি মাথা গেছে শাওন যে মেয়ে তোরে রেখে অন্য নাগরের সাথে ঘুরে বেড়ায় তার সাথে বিয়ে পাততে চাইছিস!! আর ওই মেয়ে তো তোকে ধোঁকা দিয়ে অনেক টাকা নাকি চুরি করছে তার জন্য এতো প্রেম কোথা থেকে আসছে তোর?”- রোজিনা ( আওয়াল শেখের বউ)

” কি বলছেন ভাবি এইসব পারু কবে আমার কাছ থেকে টাকা নিলো?আর কবে বা ধোঁকা দিলো?”

” কেনো তাহেরা আপায় তো আমাদের বলেছে । শুধু কি আমরা নাকি পুরো পাড়া জানে এই খবর তুই ওর প্রেমে অন্ধ হস না । নেই রূপ নেই কিছু আমার তো মনে হচ্ছে তাহেরা তোর ছেলেকে ওই মেয়ে তাবিজ কবজ করলো নাকি”

রোজিনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে চাইলো শাওন তাহেরার দিকে । এ কোন আম্মাকে দেখছে সে । এই আম্মা তো কত আদর করতো পারুকে । ছোটো বেলায় কত ভালোবেসে খাইয়ে দিত । আর সেই আম্মা এখন পারুর গায় কাদা ছুঁড়তে ও ভাবলো না । শাওন চায় না সবার সামনে আম্মাকে অপমান করতে তাই হন হন করে নিজের ঘরে চলে গেল । দরজা এতো জোরে লাগলো যে পুরো বাড়ি কেপে উঠলো।

মুখ চুপসে যাওয়া তাহেরা এখন গর্জে উঠলো । এতো বড়ো বড়ো চোখ করে রোজিনা আর চুমকির মায়ের দিকে চাইলো যদি পারে তো চোখ দিয়ে ভস্ম করে দেবে ।

” এই তোদের কি বোধ নেই কোনো !কখন কি বলতে হয় বুঝিস না? দেখলি তো শাওন রেগে বোম হয়ে আছে জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালার কাজটা করে দিলি!”

রোজিনা আর চুমকির মা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো কিছুক্ষন । ওরা আর কম কি …বলার সময় তো কম বলে নি তাহেরা তাহলে ওর ছেলের সামনে সব সত্যি বলে ওদের কিসের দোষ হলো?

” যা তুই আমাদের বলছিস তাই তো বললাম নাকি সব মিথ্যা বানাই বানাই বলছিস? ”

চুমকির মায়ের কথা শুনে ভেজা বেড়াল বনে গেলো তাহেরা । যে ছুরি ও চালিয়েছে সেই ছুরি ওর দিকে তাক করা হলে কেমন লাগবে। তাই নিজেকে শান্ত করে ওদের সাথে ভালো ব্যাবহার করলো ।
___________________

তনুজার বাড়ি আজকে দূরসম্পর্কের এক ফুফু এসেছে। পারুর সম্পর্কে পাড়ার যা রটেছে তার কানে ও সব গেছে । কিন্তু সে চুপ এই অনুভূতি টা তার চেনা । কিছু না করেই তার নামে কত কিছুই যে রটেছিল গ্রামে । তার ভুল ছিল সে তার ছোটো মামার সাথে এক ভর সন্ধ্যায় মামা বাড়ি থেকে ফিরেছিল । সেই সব কথা আর মনে করতে চায় না ।

” তনু পারুর বিয়ে দিবি?”

ফুফুর কথা শুনে উদাস চোখে চাই তনুজা । কিভাবে ভালো জায়গায় মেয়েটার বিয়ে দেবে ! কে বা বিয়ে করবে যার নামে এতো কিছু রটেছে ।

” মেয়ে মানুষ বিয়ে না দিয়ে কি করবো । বিয়ে তো দিতেই হবে”

” আমার কাছে একটা ছেলে আছে । পারুর মতই বাবা মা নেই । একটা কোম্পানি তে ছোটো খাটো চাকরি করে ছেলেটা ভালো তুই যদি বলিস কথা বলে দেখবো?”

ফুফুর কথায় চুমকির মায়ের সকালের কথা কানে বেজে উঠলো তনুজার।মেয়েটা যদি সব কিছু সহ্য করতে না পেরে কিছু করে বসে । তার থেকে ভালো ওর বিয়ের ব্যাবস্থা করা যাতে নিজেকে একটু ব্যস্ত রাখতে পারবে পারু । কষ্ট হলে ও জীবনে সামনে এগোতে তো পারবে ।

” জি ফুফু বলে দেখেন । পারুর সম্পর্কে সব বলবেন আমরা কোনো ছলনার আশ্রয় নিতে চায় না । আর আমি ও পারুর সাথে আর পারুর চাচার সাথে কথা বলে দেখি”

” ঠিক আছে আমি তাহলে আজ উঠি রে অনেক দূরের পথ যেতে হবে ”

” খেয়ে যান ফুফু । মেহমান কিছু মুখে না দিলে কেমন দেখায়”
___________________________

শাওন ঘরে মাথা চেপে বসে আছে কি করবে ও। নিজের ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে খুব । ব্যালকনি টা রোদে পুড়ে যাচ্ছে কোনো গাছ লাগায়নি শাওন। পায় ঘরে পরা স্যান্ডেল পরে ব্যালকনিতে দাড়ালো । পারু বারান্দায় বসে আম কাটছে এই সময়টায় আচার বানানোর ধুম পড়ে যায় । তনুজা মশলা বাটছে এক পাশে । শাওনের দৃষ্টি নিচে বসে থাকা পারুর দিকে ঘেমে গেছে গরম ঘন চুল গুলো খোঁপা বেঁধে রেখেছে । চোখ মুখ গুলো কয়দিনে কেমন শুকায় গেছে যেদিন ও বাড়ি আসলো কি নাদুস নুদুস লাগছিল পারুকে । চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে । কিছু খেতে পারে না হয়তো কিভাবে খাবে নিজের ভালোবাসার মানুষের পাশে অন্য কাউকে দেখে কি আর গলা দিয়ে খাবার নামে?

তীব্র রোদে চামড়া যেনো পুড়ে যাচ্ছে । না পেরে শেষমেশ ঘরে ঢুকলো শাওন । আজকে বিকালেই পারুর চাচীর সাথে কথা বলবে ও। তার আগে নয়নের সাথে কথা বলতে হবে ।

” হ্যালো নয়ন …..”

” হ্যাঁ বলো শাওন । আব্বু আম্মু আগামী পরশু দিন যাবে তোমাদের বাড়ি। আমি খুব এক্সসাইটেড জানো তো ”

” তোমার সাথে আমার কথা আছে কিছু ….”

” পরে শুনবো । এখন একটু কাজ আছে ”

” আরে শোনো তো….”

________________________

তাহেরার মাথায় এক চিন্তা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নয়নের সাথে একবার বিয়ে হয়ে গেলেই পারুর ভুত মাথা থেকে নেমে যাবে শাওনের । তাই যেকোনো মূল্যে নয়ন কে ঘরের বউ হিসেবে চায় তাহেরা। ও চাইলেই পারে পারুর চাচীর কাছে গিয়ে আবার পারুর হাত চাইতে কিন্তু সেটা তাহেরা কিছুতেই করবে না । যাদের এক প্রকার অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে তাদের কাছে কোন মুখে আবার যাবে । যদি তাকে ও অপমানিত হতে হয় । ওর থেকে ভালো যা হচ্ছে হতে থাক । শাওন কে দরকার হলে জোর করবে বিয়ে করতে তবে কারোর কাছে তাহেরা ছোটো হবে না ।

নিজের এমন চিন্তা সফলের উদ্দেশ্যে নয়ন কে কল করে চলে আসতে বলেছে তাহেরা । শাওনের আশেপাশে যত নয়ন থাকবে তত ভালো । নয়ন আসলে দুটো দিক দিয়ে তাহেরা নিরাপত্তা পাবে । এক . শাওন আর যায় করুক বাইরের মানুষের সামনে নিজের মায়ের উপর কিছু বলতে পারবে না আর দুই. পারুর সাথে কথা বলা থেকে আটকাতে পারবে নয়ন।

গ্রাম বাংলাদেশের প্রাণ । গ্রামের মানুষ গুলো সহজ সরল শহরের মানুষের মত অত বুঝে না । কিন্তু এই সহজ সরল মানুষ যখন কুসংস্কার নিজেদের মধ্যে ধারণ করে তখন তার সাধারণ বোধ শক্তি লোপ পায় । তারা হয়ে উঠে হিংসাত্মক , হিংস্র যা বনের পশুদের কে হার মানতে সক্ষম । তাদের কাছে একজন ছেলে একজন মেয়ে এক সাথে থাকাটা খুব অস্বাভাবিক বিষয় । অবশ্যয় ধর্মীয় দৃষ্টকোণ থেকে ছেলে মেয়ের এক সাথে চলা ফেরায় নিষেধাজ্ঞা আছে । কিন্তু তারা কোনো কিছু বাচ বিচার না করে মূল বিষয় না জেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে যারা এই বিধি লঙ্ঘন করে । যেমন শাওন আর পারুর ঘটনা । আবার তাহেরার হটাৎ বদলে যাওয়া । তাহেরা বদলে যাওয়া আর কুটনামি ভারতীয় সিরিয়াল ইন্সপায়ারড মনে হলে ও গ্রামে এর থেকে বেশি কুটনামি হয় যারা গ্রামে থাকে তাদের এই বিষয়ে ধারনা আছে । কিভাবে জোর করে বিয়ে দিতে হয়ে ? কিভাবে তিল্ কে তাল বানাতে হয় এই সহজ সরল মানুষদের মধ্যে থেকে কিছু মানুষ এই দিক দিয়ে খুব অভিজ্ঞ। তাহেরার মাথায় আপাতত জোর করে বিয়ে দেওয়াটাই ঘুরছে ।

শাওনের মাথা ধরে গেছে । গোসল করে এসে শরীর টা বিছানায় এলে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো শাওনের দুটো চোখে । তার মন আর শরীর দুটোই একটু বিশ্রাম চায়।

বিকেল হতে না হতেই নয়ন হাজির । শাওন দের বাড়ি যাওয়ার কথা তুললেই নিধি রহমান প্রথম দিকে অমত করেন কিন্তু শেষে মেয়ের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন ।আর তাহেরা বানু নিধি রহমান কে ভালো মত তেল মশলা মিশিয়ে কথা বললেনই যার দরুন নিধি রহমান না রাজি হয়ে পারলেন না।

শাওনের মাথার কাছে বসে আছে নয়ন । শাওনের চুল দিয়ে শ্যাম্পুর একটা গন্ধ নাকে লাগছে ওর । আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । মনে মনে বোনা শুরু করেছে হাজারো স্বপ্ন যার কেন্দ্রে আছে উজ্জ্বল ফর্সা রঙের বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী শাওন ।

মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার কারণে ঘুম হালকা হয়ে আসলো শাওনের । রিপা ভেবে আবার উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো শাওন । হটাৎ মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো বর্তমান যে পরিস্থিতি তে শাওন আছে তাতে রিপা কোনোদিন ওর ঘরে প্রবেশ করবে না । কার এত ভালোবাসা জাগল ওর উপর তাই দেখার জন্য পিট পিট করে চোখ মেলে সামনে তাকালো শাওন । নয়ন!!!!

নয়ন কে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো শাওন । নিজের দেখার ভুল ভেবে চোখ কয়েকবার ডলে আবার নয়নের সুন্দর মুখশ্রীর পানে তাকালো । শাওনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো নয়ন ।

“নয়ন তুমি এখানে কি করছ??কখন আসলে?কেনো আসলে?”
শাওনের কথাই ব্রু কুচকে গেলো নয়নের ।

” কেনো আমার আসা বুঝি পছন্দ হয়নি তোমার ?”

” সেটা না কিন্তু হটাৎ আসলে তাই”

” ওহ তোমার না কিছু কথা বলার ছিল সেগুলো বলবে না ?”

” হ্যাঁ বলবো …..খেয়ে দেয়ে বলবো”

শাওন আর নয়নের কথায় মাঝে ডাক দিলেন তাহেরা বানু দুপুরের খাবার খেতে। শাওন ফ্রেশ হতে চলে গেলো ।আর নয়ন শাওনের ঘর ঘর ঘুরে ঘুরে দেখছে । খুব অল্প কিছু আসবাব পত্র কিন্তু খুব সুন্দর সাজানো গোছানো ঘরটা । নয়ন দেখে মুগ্ধ হলো । বিকেলে সূর্যের তাপ টা কমে গেছে ব্যালকনি তে গিয়ে দাঁড়ালো নয়ন ।

দুপুরে কেউ খাই নি তাই কিছুটা বিকেলে সময় ভাত বাড়লো তাহেরা,,, সবাইকে ডেকে খেতে বসাতে হলো তাকে । কিন্তু কোথাও রিপা নেই । নয়ন একবার এদিক ওদিক খুজে ও রিপাকে পেলো না ।

” অ্যান্টি রিপা কই?ওকে এসে ধরে দেখছি না ”

” কই আবার যাবে পারুদের বাড়ি পরে আছে হয়তো । নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন ওই বাড়িতে পরে থাকে ”

“ওহ ”

” তুমি বসে আছো কেনো খাও । লজ্জা পেও না কিছুদিন পরে তো এই বাড়িতে আসতে হবে ”

তাহেরার কথায় বিরক্ত হলো শাওন । তাও নিজেকে সাভাবিক রেখে খাওয়া শুরু করলো । আর নয়ন তো লজ্জায় লাল হয়ে গেল এতো টুকু বিষয়ে।
_____________________

পারু আর রিপা বিলে ছাগল আনতে গিয়েছিল আসার পথে রাস্তায় শাওন আর নয়নকে এক সাথে দেখলো । নয়ন শাওনের বাহু ধরে হাঁটছে । পারু কে দেখে দাড়িয়ে গেলো শাওন বার বার হাত দিয়ে নয়নের হাত টা নামানোর চেষ্টা করতে থাকলো । কিন্তু নয়ন ও নাছোড় বান্দা ও ছাড়বে না । আসর পথে বার বার শাওন নয়নকে বলছে এইটা গ্রাম এ খানে এভাবে চলাটা খারাপ দেখায় কিন্তু নয়ন শুনে নি অগত্যা শাওনকে মেনে নিতে হয়েছে । পারু আর রিপাকে দেখে থমকে দাঁড়ানোটা নয়নের ভালো লাগলো না ।

” তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? আরে ওরা তো ছোটো ওরা তোমাকে ক্ষেপাবে না । তাই না?কিছুদিন পরে তো আমরা স্বামী স্ত্রী হবো ”

রিপা কিছু বললো না ।পারু একটু হাসার চেষ্টা করে বললো
” ঠিক বলেছেন আপু আমরা কিছু মনে করি নি । চল রিপা আমরা যায়। আপনারা যান ঘুরে আসুন”

পারুর বুকের ভিতর বাড়তে থাকা ঝড় যেন আরেকটু গতি পেলো । পারুর মনে যে এলো মেলো বাকি থাকা অনুভূতি অবশিষ্ট ছিল সেইটুকু যেনো লন্ড ভন্ড করে দিতে চাইলো ।
____________________

রাত পেরিয়ে সকাল হলো । সূর্যি মামা উকি দিতে না দিতেই পারুদের বাড়ি কান্না কাটি জুড়ে গেলো। আকাশ বাতাস কাপিয়ে তনুজা বেগমের কান্নার আওয়াজ আসছে । শাওন ক্লান্ত চোখ যেনো খুলছে না ।কানে সব আসলে ও চোখ খোলার ক্ষমতা পাচ্ছে না । শাওনের অফিস দশটায় আগে নয়টায় ছিল কিন্তু প্রমোশন পাওয়ার পর থেকে অন্য ডিপার্টমেন্ট এ শিফট হয়েছে ।

আকাশ আর মহিন হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে আসলো শাওনের বাড়ি । গেট পেরিয়ে ছুটে গেলো সদর দরজায় জোরে জোরে ডাকতে থাকলো সবাইকে । রিপা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুললো । রিপা কে কোনো কথা না বলে ওরা ছুটলো শাওনের ঘরে । শাওনকে ডেকে তুললো আকাশ আর মহিন

” শাওন তাড়াতাড়ি পারু দের বাড়ি চল ”

আকাশ আর মহিন এর মুখে অস্থিরতা আর ভয় দেখে শাওন জিজ্ঞাসা করলো _

” কি হয়েছে”
” পারু বিষ খাইছে …

শাওনের মাথাটা যেনো ভন ভন করে উঠলো । কিছু যেনো ওর কানে আর ঢুকছে না । সব কিছু আবছা হয়ে আসছে……

#অভিনয়
#বোনাস
#মুমতাহিনা_তারিন

শাওন দৌড় লাগালো পারুদের বাড়ি । চোখের কার্নিশ বেয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছে শাওনের । চোঁখে মুখে ঘুমের লেশ মাত্র নেই। এইতো একটু আগেই কত ঘুম পাচ্ছিল একটা সংবাদ সব হাওয়া করে দিলো। পারুর চাচীকে আসে পাশের মানুষগুলো থামানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত হয়ে গেছে। পারু পারু বির বির করতে করতে কান্না করা শুরু করে দিলো শাওন ।

হটাৎ কারোর জোরে ধাক্কায় স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে এলো শাওন (কেমন দিলাম😁)। ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । দৌড়ে ব্যালকনি তে গেলো না কোনো কান্নাকাটির শব্দ নেই ,,মানুষের ভিড় নেই পারূদের বাড়ি । ও আর এক মুহুর্ত দেরি না করে নিচে নেমেই পারুর বাড়ি চলে গেলো ।

তনুজা বেগম তখন রান্নায় ব্যাস্ত পারু ঘর বাড়ি পরিষ্কার করছে । তনুজা সালাম মিয়া আর পারুর সাথে ছেলের কথা বলছে । পারুর মুখটা শুকিয়ে গিয়েছিল শুনে কিন্তু সালাম মিয়ে কোনো জোর করে নি পারুকে । তারা চায় পারু নিজের জীবনে পিছিয়ে না পড়ুক । আর পারু ও নিজে থেকে চাইছে একটু ভালো থাকতে । পারুর জন্য সালাম মিয়া আর তনুজা কষ্ট পাক পারু সেটা চায় না । কালকে পারুকে দেখতে আসবে তাই ঘর দোর আরেকটু সাফাই করছে ।

শাওন এক দৌড়ে হাজির পারুর চাচীর সামনে । শাওন কে সকাল সকাল দৌড়াতে দেখে রিপা আর নয়ন ও পিছে পিছে এসেছে।

” চাচী ও চাচী আমি পারুকে ভালোবাসি । আমি পারুকে বিয়ে করবো তুমি কি রাজি?”

শাওনের গলা শুনে পারু ঘর থেকে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ওর চোখে বিস্ময়। রিপার চোখ এতো বড়ো বড়ো হয়ে গেছে যে যখন তখন চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। নয়ন যেনো আকাশ থেকে পড়লো শাওনের কথা শুনে । চাচী মাছ ভাজি করছিল হাতে থাকা খুন্তিটা শব্দ তুলে কড়ায় তে পরে গেলো । অবাক হয়ে তনুজা শাওনের মুখ পানে চাইলো ।
” বাবা কিন্তু তোর মা যে বললো……”

” পাত্র আমি না আম্মা?? আমি কি বলেছি আমি পারু কে বিয়ে করবো না ? তাহলে”

” সেটা কিভাবে হয় বাবা তোমার বিয়ে এক জায়গায় ঠিক আবার পারুকে বিয়ে করতে চাইছো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ”

” চাচী তোমার বুঝতে হবে না । তুমি রাজি নাকি তাই বলো রাজি না হলে পারু কে নিয়ে আমি পালায় যাবো ”

রিপার ঘোর কেটে গেছে ।ওর ভাই যে পুরাই আউলায় গেছে তা বুঝে ফেলছে রিপা এখন শুধু ইনজয় করবে ।

” শাওন তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? আমাদের বিয়ের কথা চলছে এখন তুমি এইগুলো বলছো কেনো?”

” দেখো নয়ন আমি তোমাকে অনেকবার বলতে চেয়েছি কিন্তু তুমি না আমার কথা শুনতে চেয়েছো না বুঝতে পেরেছো। আমি তোমাকে সব সময় বন্ধুর মতোই ট্রিট করেছি । তোমাকে আমি কখনো বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি? বলি নি কেনো না আমি তোমাকে সেই নজরে দেখি নি কখনো ”

” এসব কি বলছো তুমি!!!”

” তুমি সব জানতে আমার আর পারুর বিষয় তাহলে তুমি কেনো তোমার অনুভূতি গুলোকে প্রশ্রয় দিয়েছো? বলো তুমি জানতে না?”

” জানতাম কিন্তু….”

” কিন্তু কি ভেবেছিলে তোমার মোহ তে আমি ও পরে যাবো!!! হ্যা আমি একেবারে তোমার মোহে পড়ি নি তেমন না । পড়েছি অল্প সেই অল্প টুকুই আমাকে আর পারুকে এতো দূর আনলো দোষটা আমার সেটা আমি স্বীকার ও করছি কিন্তু পারুকে রেখে আমি বাঁচতে পারব না ”

নয়ন আর কি বলবে আখি ভরা অশ্রু নিয়ে দৌড়ে স্থান ত্যাগ করলো সে যে এখানে এক মুহুর্ত থাকতে পারবে না । সত্যি তো শাওন ওকে কখনো ভালোবাসি বলে নি আর না ওর চোখে ওর জন্য কোনো ভালোবাসা দেখেছে । যেটুকু ছিল সব টুকু মেয়ে হিসেবে সম্মান ।

” চাচী এবার আপনি বলেন আমার সাথে পারুর বিয়ে দিতে আপনার কোনো আপত্তি আছে ”

” আমার তো নেই কিন্তু পারু তোর চাচা !”

” ওসব কোনো ব্যাপার না আমি ম্যানেজ করে নেবো”

এতক্ষন কার ড্রামা দেখে পারু ক্লান্ত । তবে না শাওনকে এতো সহজে ও মাফ করবে না । নিজের কন্ঠ কে যথাসম্ভব রুষ্ট করে বললো

” কারোর আপত্তি না থাকলে ও আমার আপত্তি আছে ।আমি শাওনকে বিয়ে করবো না ।”

” আমি ও রিপার সাথে এক মত আমি আমার বান্ধবীর বিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে কখনো হোক চাইবো না”

শাওন বুঝতে পারছে ও কি ভুল করছে প্রথমেই যদি সব ক্লিয়ার করে ফেলত তাহলে পারুর এই পাহাড় সমান কষ্ট সহ্য করতে হতো না । মানুষের কটু কথা শুনতে হতো না ।কিন্তু এখন পারুর অভিমান ভাঙ্গানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই । ধির পায়ে শাওন পারুর সামনে এসে দাড়ালো।

” পারু আমার দিকে তাকা”

শাওন কে কাছে আসতে দেখে পারু পিছন ঘুরে ঘরে চলে গেলো । আর তার সাথে সাথে রিপা ও শাওনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে পারুর ঘরে চলে গেল।

চলবে