অভিনয় পর্ব-০৬

0
191

#অভিনয়
#পর্ব_৬
#মুমতাহিনা_তারিন

বিকেলে বাড়ি এসে পৌঁছায় তাহেরা বানু। সে খুব খুশি কিন্তু আঁধার নেমেছে শাওনের মুখে । রিপা ও চুপ হয়েই আছে । শাওন এসেই সোজা ঘরে চলে গেছে । রিপা গোসল করে রান্নাঘরে বসে পারুর চাচীর নিয়ে আসা মিষ্টি গুলো বের করে খেতে বসেছে । তখন শাওন ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে ডাইনিং টেবিল আর উপর থেকে পানি খাচ্ছিল ।

” এতো মিষ্টি কই পাইছিস?”

” কেনো তুই জানিস না!! চাচী পারুর আর তোর বিয়ের কথা বলতে নিয়ে এসেছিল । কিন্তু তোদের তো হাই ফাই মেয়ে চাই পারুর মত গরীব কালো মেয়েকে আর ভালো লাগবে নাকি ”

” চাচী কবে আসলো?

” নাটক বাদ দে । আমি যায় একটু গল্পঃ করে আসি ”

” এই দাড়া….”

” সময় নেই”

রিপার কথা শুনে শাওন আকাশ থেকে পড়ছে । শাওন তো কিছুই জানে না । বিয়ের কথা কবে হলো !! চাচীর কবে আসলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না । আম্মার সাথে তার সরাসরি কথা বলতে হবে । কেনো সে সব কিছু শাওনকে জানালো না!!
__________________________

” তনুজা আপা জানেন আজকে নাকি শাওয়নরা মেয়ে দেখতে গেছে । যেই মেয়েটা শাওনের সাথে এসেছিল তাদের বাড়ি নাকি গেছে ”

” ভালো তো এতে বলার কি আছে খালা”

” আমরা তো ভাবতাম শাওনের সাথেই পারুর বিয়ে হবে। পারুর জন্য ছেলেটা যেমন পাগলামি করতো!!”

” হুঁ”
মুরগি দের খেতে দিচ্ছিল পারু । তার কানে সবই যাচ্ছে কিন্তু কিছু অনুভব হচ্ছে না । ওর নিজের কাছে নিজেকে কোনো অনুভূতি হিন মানবী মনে হচ্ছে। নিশ্চয় নয়ন অনেক সেজেগুজে বসেছে শাওন এর সামনে । ওর ও তো কত শখ ছিল শাওনের দেওয়া শাড়ি পরে ওর সামনে বসবে লজ্জায় নুয়ে আসবে মাথা । ওকে মুগ্ধ চোখে দেখবে শাওন । সব কিছু কেমন হঠাৎ রঙহীন হয়ে গেলো।

পারু তো ওর কম আয়ের সংসার করতে চেয়েছিল এমন ইট পাথর দেওয়া বিশাল প্রাসাদ তো চায়নি। টিনের ঘরে নিজেদের সংসার পাতার স্বপ্ন দেখেছিল ও।এইটাই কি খুব বেশি ছিল?ভাবতেই পারে নি কখনো শাওনের বউ ওর জায়গায় অন্য কেউ হবে । নয়নকে হিংসা করছে না পারু নিজের ভাগ্যের উপর ওর প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে । যাকে আকড়ে বাঁচতে চেয়েছিল সে কি সুন্দর ছুঁড়ে ফেলে দিল।

” পারু তুই এইখানে বসে কি শুনছিস নিজের ঘরে যা ”

” জি চাচিমা ”

পারু চলে যেতেই চুমকির মা আরেকটু জোর গলায় তার গুরুত্ব পূর্ণ সংবাদ টেলিকাস্ট শুরু করলো যেনো সে এসেছে পারু কে সব শোনাতে।

” জানেন তো আপা আমি পুকুরে মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করছিলাম তখন ঐ মেয়েকে দেখছি আমার তো মনে হলো কোনো পরী,,, এতো সুন্দর দেখতে কি আর বলবো। তবে শাওনের দোষ নেই ওমন সুন্দরী মেয়েকে রেখে কি আর পারুর সাথে বিয়ে পাতে নাকি । সামনে বিরিয়ানি রেখে কি আর বাসি খাবার খাই বলেন তো ”

তনুজা বেগম কি বলবেন খুঁজে পেলেন না । চোখের সামনে কি পারুর শাওনের বিয়েটা দেখা লাগে!!! মানুষের মুখ আছে কয়জনকে চুপ করাতে পারবে সে ।

” জি ভালো হলেই ভালো ”

” আমি বলি কি পারুর ও বিয়েটা দিয়ে দেন । নইলে বেচারি নিজের সামনে শাওনের বিয়ে দেখার শোক কাটায় উঠতে পারবে না । নিজেকে সামলাতে না পেরে যদি মরে টরে যায় ।

পারু ঘরে শুয়ে শুয়ে সব কিছুই শুনতে পারলো । অবলীলায় তার চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসলো । চোখ গুলো বুজে আসলো ওর আশপাশ থেকে একটা ধ্বনি শুনতে পারলো পারু । শাওনের সাথে তো আমার বিয়ের কথা ছিল কেনো সব বদলে গেলো? পারু এখন ও যে শাওনের আশায় থাকে ভাবে হয়তো কোনো এক শীতের রাতে শাওন এসে তার জানলায় দাড়াবে আবার ফিস ফিস করে ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পারুকে চমকে দেবে ।

দুপুর পেরিয়ে বিকেল নেমেছে রিপা পারুর বিছানায় বসিয়ে আছে । পারু গভীর ঘুমে মগ্ন ।

” পারুভাবি এই …..”

রিপার কণ্ঠ শুনে পারু পিট পিট করে চোখ মেলল । ধীরে ধীরে উঠে বসলো পারু । ঘুমিয়ে ভালো লাগছে ওর এই অসহ্য যন্ত্রনা ঢেকে হাসিমুখে কথা বলা থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি দেয় ঘুম। মনে কষ্ট লুকিয়ে হাসা যে কত দুঃসাধ্য ব্যাপার সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ও।

” ভালোই হয়েছে তুই আসলি আমি ভাবছিলাম তোদের বাড়ি যাবো। ”

ঘুনে খাওয়া টেবিলের উপর থেকে নিল বর্ণের শপিং ব্যাগ বের করে হালকা হেসে রিপার হাতে দিলো। রিপা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পারুর দিকে । সেই দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হলদেটে খাম টা ও হতে ধরিয়ে দিল পারু।

” এই ব্যাগে তোর ভাইয়ের দেওয়া জিনিস আছে এই বারো বছরে তোর ভাই যা যা দিয়েছিল সব কিছুই উঠিয়ে রেখেছিলাম । বড্ড আসা ছিল বিয়ের রাতে সব কিছু মেলে মেলে দেখাবো । এখন তো আর সব সম্ভব না তাই ফেরত দিচ্ছি”

” ওহ। আমি দিয়ে দেবো তুই ভেঙে পড়িস না । যারা তোকে কষ্ট দিচ্ছে একদিন দেখবি তারাই তোর দেখা পাওয়ার জন্য কাতর হয়ে থাকবে । ”

” আমি সেটা চাই না । সবাই ভালো থাক আমাকে ভুলে যাক । কেউ আমার জন্য কষ্ট পাক সেইটা কখনোই আমি চাইবো না । যদি পারি খুশির কারণ হবো দুঃখের কারণ নয়”

” তুই এত ভালো কেনো? এতো কষ্ট কিভাবে সহ্য করিস? দম আটকে আসে না তোর!!!”

” আমার কষ্ট সহ্য করার অভ্যাস আছে আমি বুঝি কষ্ট লাগলে কেমন অনুভূতি হয় । তাই তো চাই না কেউ আমার মত কষ্ট পাক । তুই বস আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি । চাচী মা খুব সুন্দর তেতুলের আচার করছে আমি খাই নি তোর সাথে বসে গল্পঃ করবো আর খাবো”

” কলে এসে অঝর ধরায় পানি নামলো পারুর চোখ দিয়ে । কিভাবে এতক্ষন চোখের পানি আটকে রেখেছে কে জানে । সুন্দর করে হাত মুখ ধুয়ে শাওনের ব্যালকনির দিকে তাকালো ,,,,আনমনেই বলে উঠলো

এই সামান্য ইট সিমেন্টের সস্তা বাড়ি আর কয়েক গোছা কাগজের নোট আমাদের ভালোবাসাকে ফ্যাকাশে করে দিলো!!! কতই না তুচ্ছ এইগুলো যা পাহাড়সমান ভালোবাসা কে ভেঙে দিল । এতটাই কি তুচ্ছ!?”
___________________

রিপা গুটি গুটি পায়ে শাওনের কক্ষের ভিতরে অতি ধির স্থির পায়ে প্রবেশ করলো । শাওন তখন জানালা ভেদ করে আকাশের পানে চেয়ে আছে । আকস্মিক ডাকে পিছে ফিরলো শাওন।

” ভাইয়া …… এইগুলো পারু পাঠিয়েছে।”

” কি আছে এতে? ”

” খুললেই দেখতে পাবে ”

এতো টুকু কথা বলেই আর দাড়ালো না রিপা । সহজ ভাবেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

শাওন হাতে থাকা শপিং ব্যাগ খুললো । বেরিয়ে আসলো মাত্র তিনশো বিশ টাকায় কেনা সস্তার একটা শাড়ি । যখন এই শাড়িটা উপহার সরুপ পারুকে দিয়েছিল কি ভীষন খুশী হয়েছিল পারু যদিও ওর চাচা তখন সাতশো আটশো টাকার থ্রি পিস কিনে দিত ওকে । সেখানে তিনশো টাকার শাড়িটা খুব নগণ্য মনে হয়েছিল শাওনের । কিন্তু শাওন তখন খুব কষ্ট করে টাকা রোজগার করতো । চার পাঁচটা টিউশনি ছিল তোর প্রথম পেশা । এখন চাইলেই দশ বিশ হাজার টাকার শাড়ি অনায়াসেই কিনতে পারে । কিন্তু সেই আনন্দ হয়তো পারুকে আর স্পর্শ করবে না । তার পারু যে টাকার লোভী না । সে যে ভালোবাসার লোভী ,,,ভালোবাসার লোভ যেনো সর্বত্রই পারুর ।

সাদা উড়না টা কেমন হলদেটে রং ধারণ করছে কম করে হলে ও পাঁচ সাত বছর হয়ে গিয়েছে উড়না টার বয়স । শাওন চোখ বুজে উড়না টা মুখে দিলো অনুভব করতে চাইলো পারুর চুলের গন্ধ ! নেই কত কত কাপড়ের নিচে পড়েছিল এতদিন জানা নেই ।

ছোটো থেকে ছোটো সব কিছুই শাওন আবিষ্কার করলো । কিন্তু আফসোস যার জন্য তার এতো হাহাকার তার বিন্দু মাত্রও ভালোবাসার আবেশ পেলো না কোথাও! যে ভালবাসা ছড়িয়ে বেড়ায় সে ও কি তবে তার ভালোবাসা ঝুপড়ি টা উঠিয়ে নিল শেষ পর্যন্ত?

__________________’

আজকে জোছনা রাত ।বড়ো একটা থালার মত রূপালী চাঁদ সগৌরবে আলো ছড়াচ্ছে যদি ও আলো টা ধার করা ।
এমন কোনো এক রাতে শাওনের জন্য জানালা খুলে বসেছিল পারু । বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছিল ভয়ে এতো জোছনায় কিভাবে আসবে শাওন । যদিও বাড়িটা এক উঠানের মধ্যেই তবে সামনা সামনি আসা আর লুকিয়ে গল্পঃ করতে আসা আকাশ পাতাল তফাৎ।

সকল অপেক্ষার অবশন ঘটিয়ে চিরচারিত নিয়মে একটা সাদা জবা নিয়ে হাজির শাওন । বাইরে হালকা বাতাসে শাওনের চুল গুলো সচ্ছন্দে উড়ে উড়ে যাচ্ছে । বার বার চুলগুলো ঠিক করে পারুর লজ্জামাখা মুখ দেখতে ব্যস্ত শাওন । শাওনের প্রবল ইচ্ছা জাগল একটু ছুঁয়ে দিতে তার লজ্জাবতীকে । তার লজ্জায় অদৃশ্য লাল আভা ছড়িয়ে পড়ুক পারুর সমস্ত মুখমন্ডল জুড়ে । নিয়ে যাক লজ্জায় ।

” জানিস পারু তুই হবি চাঁদ আমি হবো সূর্য । তুই আমার আলোয় আলোকিত হবি সবাই তোকে দেখবে আর উপমা দেবে । ”

” উহু আমি চাই না আমি চাঁদ হই আর তুই সূর্য হ। চাঁদ আর সূর্য কি কোনদিন এক হতে পারে?”

” তাহলে এখনকার কথা বিবেচনায় রেখে আমি চাঁদ তুই পৃথিবী । চাঁদ শুধু পৃথিবীর চারপাশেই ঘোরে আমি যেমন তোর চারপাশে ঘুড়ি কিন্তু তুই পাত্তা দিস না ”

” এই আমি পাত্তা দেই না তাই না তাহলে এখন রাত জেগে বসে আছি কেনো? ”

” সব তো জবা পাওয়ার লোভ”

পারু মেকি রাগ দেখিয়ে টিনের জানলা সাবধানতার সাথে বন্ধ করে দিল । বাইরে থেকে শাওন হাজার বার বলছে খুলতে,,,,কিন্তু না পারু খুলবে না সে তো কাউকে পাত্তা দেই না । অগত্যা শাওন মন খারাপ করে চলে গেলো ।

আজ দুজনের মনে একই ভাবনা এক সাথে উদয় হলো । পারু মাটির বারান্দায় একটা পিড়ির উপর বসে বাইরে ছড়িয়ে থাকা জোছনার দিকে তাকিয়ে ভাবছিল । আর শাওন ঘরের জানালা দিয়ে । আরেকটু সুন্দর জোছনা তাকে উপভোগ করার জন্য ব্যালকনিতে আসে দাড়ালো শাওন। পারু ও নিচে বসে তার উদাস আঁখিতে বিন্দু বিন্দু জল নিয়ে ব্যালকনির দিকে তাকালো ।শাওন ও তাকালো বারান্দার দিকে চোখাচোখি হয়ে গেলো দুজনের । চোখাচোখি হতেই পারু উড়না টা মাথায় দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে কান্নায় ভেঙে পড়লো । শাওন এক দৃষ্টিতে পারুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে তার চোখ গুলো জ্বলে যাচ্ছে কারণ কি? তার চোখে ও কি একটু জল জমলো তবে!!!
______________________

যেমন ভাবে পারু আর শাওনের ভালোবাসার কথা পুরো গ্রাম জানত ঠিক তেমনি শাওন যে পারুকে বিয়ে করবে না সেই খবর নিমিষেই সারা পাড়া জেনে গেলো । কেউ কেউ পারুকে সহানুভূতি দেখালো কেউ বা তাকেই কত গুলো বিশ্রী গালি শুনালো। আবার কেউ কেউ শাওন কে সাপোর্ট করলো তো কেউ কেউ সমালোচনা । এই দিনগুলো মানুষের পিছে কথা বলাটা পারুকে অনেক পীড়া দিলো যা হয়তো ভাষায় বলা সম্ভব হবে না । যে মেয়েকে দেখলে মানুষ মায়া করতো, তার ভাগ্য নিয়ে আফসোস করতো । তারাই এখন তাকে দেখলে উপহাস করে । কেউ কেউ তো এতো বাজে কথা ছড়িয়েছে যা বলতে ও রুচিতে বাঁধবে ।

এই সব কিছুর ভিতর পারু একা হাতে নিজেকে সামলালো নিজেকে বোঝানোর চেষ্টায় ব্যাকুল হয়ে উঠলো । খালা ফুফুরা এসে দুটো কড়া কথা শুনিয়ে গেলো । কেউ জীবিত আছে কি মরে গেছে তার খোঁজ না নিলে ও কথা শোনাতে পিছপা হলো না । তাদের নাকি মাথা কাটা যাচ্ছে পারুর জন্য । মোটা মুটি চার পাঁচদিনের মধ্যেই সারা পাড়াই ঘটনা রমরমা হয়ে গেলো। রিপা ও সবসময় পারুর পাশেই ছিল । সালাম মিয়া, তনুজা পারুকে সাভাবিক একটা পরিবেশ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো ।

অন্যদিকে শাওন আপাতত অনেক ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে । তাদের গ্রামে যে তাকে নিয়ে হাজারো গুঞ্জন উঠেছে টা তার পাঁচিল ভেদ করে কানে গেলো না । তাহেরা বানু কৌশলে সব দোষ পারুকে দিয়ে দিয়েছে যে পারুর প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে তাকে দুই কথা শুনিয়ে বিভ্রান্ত করতে খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হলো না । তাহেরা বানুর এক ধারণা তারা যা করছে তাতো ভুল কিছু না । এমন তো না পারুর সাথে শাওনের কিছু ঘটেছে তার একটাই লক্ষ্য নিজেরে ছেলের চরিত্র সে কোনো কালিমা লেপন হতে দেবে না তাতে যে বাঁচলে বাঁচুক না বাঁচলে মরুক।

রিপা একপ্রকার ওর ভাইকে এখন আর চেনেই না । দেখলে ও দুই কথা বলার প্রয়োজন বোধ করে না । ভাই বোনের খুনসুটি গুলো অভিমান গুলো যেনো কোন খুপড়ি তে লুকিয়ে গেছে । শাওন ব্যাস্ত অফিস করতে গ্রাম থেকে শহরে যেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সাথে আবার নয়নের ঘন ঘন কল তো আছে । এক প্রকার মানসিক অবসাদে জর্জরিত শাওন ।রাতে ঘুম নেই বুকে চিন চিন ব্যাথা উঠে । যা করার সব খুলামেলা করতে হবে ভেবে নিয়েছে ও । শুধু একটু কাজের চাপ কমলেই সব খোলাসা করে ফেলবে । প্রতিদিনকার ডিপ্রেসন ওকে শেষ করে দিচ্ছে।

__________________________

আজকে শুক্রবার অনেকদিন পর শাওন পাড়ার বাজারে যাচ্ছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে । সবার সাথে ফোন যোগাযোগ আছে তার কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ খুব কম হয় । সবাই নিজের কর্মক্ষেত্র ব্যাস্ত থাকে শুধু শুক্রবার টাই ওদের ছুটি । শাওনকে দেখে সবাই উল্লাস করে উঠলো । ছেলে বেলা ,স্কুল জীবন কলেজ জীবন নিয়ে হাজারো গল্পঃ চললো । দেশের পরিস্থিতি রাজনীতির কথা তো আছেই তার সাথে । বিয়ের কথা উঠতেই সবাই হুট করে থম মেরে গেলো ।মুখে অমাবস্যা নামলো সবার । এই প্রথমবার সবার মত তার মিল পাওয়া গেলো ।

” শাওন তুই কি কাজটা ঠিক করছিস?আমার ভাবতে ও অবাক লাগে যে তুই ওর পিছনে এতো ঘুর ঘুর করছিস সেই তুই ওকে এখন চিনিস না”- মহিন

” তোরাই তো ওকে কালো বলে কত কথা বলতিস। কত প্রকার লজ্জা দিতিস”

” আমরা মজা করতাম । আমরা সত্যি ভাবেনি তুই শহরে গিয়ে অন্য কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াবি। যা করবি ভেবে করিস বন্ধু ।”- আকাশ

” কত রকম যে কথা ওকে শুনতে হয় তুই হয়তো কল্পনা ও করতে পারবি না। মেয়েটার দোষ ছাড়াই দোষী হয়ে গেছে । এখন হয়তো অন্য কোনো ভালো জায়গায় বিয়ে ও হবে না ওর “- মহীন

” একটা কথার বলবো তুই যে এই পর্যন্ত এসেছিস পারুর কিন্তু কম অবদান নেই । বেচারী এখন মুরুব্বী পর্যন্ত ওর দিকে খারাপ নজরে তাকায় ” – আকাশ

আকাশ মহিনদের কথাতে নিজেকে যতটা ছোটো মনে হল সেটা হয়তো জীবনে মনে হয়নি । ওর জন্য পারুর এতো কিছু সহ্য করতে হচ্ছে শাওন সেটা আন্দাজ ও করতে পারেনি। আজকে বাড়ি গিয়ে

চলবে।