অভিমান পর্ব-০২

0
527

#অভিমান
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা

“এখনই আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমার বিয়ে হবে যাবে। অন্য কারো হয়ে যাবো আমি। আমাদের প্রবিএ সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে।
তোহার দুই বাহু ধরে উঁচু করে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে আকাশ।
” ভালো তো। নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা।
তোহা ঠোঁটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি নিয়ে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
আকাশ তেতে ওঠে। রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে। ফুসফুস করছে। আরও একটু কাছে নিয়ে আসে তোহাকে। তোহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। দুই হাত দিয়ে আকাশের হাত দুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
“খুব স্মার্ট হয়ে গেছিস তুই তাই না? খুব স্মার্ট হয়ে গেছিস? দয়া করছিস আমাদের? তুই ভালোবাসিস আমাকে। আমরা এক সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম তোহা। কি করে বলছিস তুই?
চোখে পানি টলমল করছে আকাশের।
তোহা নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে আকাশকে ধাক্কা দেয়। বেশ খানিকটা দুরে সিটকে যায় আকাশ। হতদম্ভ হয়ে যায়। মুহুর্তেই রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে যায় আকাশের।
তোহা বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। ঠোঁট কামড়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে তোহা। চোখের কার্নিশে জমে থাকা পানিটুকু এদিক সেদিক তাকিয়ে গড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়।
“এতো রাতে বিয়ের সেরোয়ানি পড়ে এখানে এসেছেন কেনো? বউ তো অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। কেউ দেখলে আমার বদনাম হবে।
উপহাস করে বলে তোহা।
আকাশ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়।
” বাহহহ কাল পর্যন্ত তুমি ছিলাম। জান বাবু কলিজা কত-শত আদরের নাম ছিলো আমার। আর আজ আপনি। এতোশত আদরের নাম ভুলে কিভাবে আপনি বলছিস রে তুই? গিরগিটির মতো কি করে বদলালি তুই?
তোহার এক হাত ধরে বলে আকাশ। তোহা ঝাড়ি মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
“কথায় কথায় শরীরে হাত দেওয়া আমার পছন্দ না। আমাকে বিরক্ত কেনো করছেন? বিয়ে করতে যাচ্ছেন যান না। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি
কিছুটা চেঁচিয়ে বলে তোহা। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আকাশ।
” কোনোদিনও সুখী হতে পারবি না তুই। কোনোদিনও ভালো থাকতে পারবি না। অভিশাপ দিচ্ছি না আমি তোকে কিন্তু রিভেঞ্জ অফ নেচার বলেও তো একটা কথা আছে। আমাকে যতটা কাঁদালি না ততোটা তুই ও কাঁদবি।
আকাশ চোখের কোনের পানিটুকু মুছে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।

ধপ করে বসে পড়ে তোহা। হাঁটু জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো কান্না।
“সত্যিই আমি কখনোই ভালো থাকতে পারবো না। সুখী হতে পারবো না আমি। ভালোবাসি আপনাকে। খুব ভালোবাসি। এর থেকেও বেশি খারাপ থাকবো আমি? আরও কষ্ট পাবো?
হেঁচকি তুলে কান্না করতে করতে বলতে থাকে তোহা। আই হেট মাই লাইফ। হেট মাই লাইফ।
” কি হবে সেই ভালো দিয়ে যে ভালোতে ভালোবাসাই থাকবে না”
এটা কেউ বুঝলো না।
কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ে।

” এবার আপনি বেড়িয়ে যান।
মারিয়াকে ছেড়ে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে বলে মেঘ।
মারিয়া এতোখন মিটমিট করে হাস ছিলো। নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মারিয়া ভেবেছিলো মারিয়াকে কাছে টেনে নেওয়া পরে মেঘ মারিয়াতে আসক্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু এখন মেঘের কথা শুনে ভ্রু কুচকে ফেলে।
“এখন এতো রাতে কি করে যাবো?
জামা পড়তে পড়তে বলে মারিয়া।
” আই ডোন্ট নো। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমের বাইরে দেখতে চাই। নাহলে
মেঘ কথা শেষ করার আগেই মারিয়া বলে ওঠে
“নাহলে কি? দেখুন আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না। এখানেই থাকবো
মারিয়া কথা শেষ করতেই মেঘ মারিয়ার গলা টিপে ধরে। এখনে চোখ বন্ধ মেঘের।
মারিয়ার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দুই হাত দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে মেঘকে ছাড়ানোর।
” যেতে বলেছি।
দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বলে মেঘ।
ছেড়ে দেয় মারিয়াকে। আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।
মারিয়া গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। চোখে মুখে রক্ত উঠে গেছে।
“মানুষ আপনি?
কাশতে কাঁশতে বলে মারিয়া।
” একজেক্সলি
আমি মানুষ নই। আমার কাছে সব মেয়েরাই এক। আপনাকে দেখে বা আপনার সাথে সময় কাটিয়ে আমি আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বো?
সিরিয়াসলি?
বোরিং চিন্তা ভাবনা আপনার।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে মেঘ।
“এনিওয়ে Only 2 মিনিটস আছে আর। তারপর যতটুকু নিশ্বাস আছে সে টুকু আর থাকবে না।
মারিয়া ব্যাগটা নিয়ে তারাহুরো করে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়।
মেঘ বাঁকা হাসে।

বেশ সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় তোহার। মনিং ওয়ার্ক করতে বেশ ভালো লাগে তোহার। সকাল সকাল রাস্তায় একটা কাক পানিও থাকে না। শিশিরে ভিজে থাকে পথ ঘাট।
চুল গুলো হাত খোপা করে হিজাব পেঁচিয়ে নেয়। মুখে একটু স্নো নিয়ে জুতো পড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। আজ একটু বেলা করে ফিরবে। এখানে একটুও ভালো লাগছে না তোহার। কবে বাড়ি ফিরতে পারবে সেদিনই শান্তি।

রুম থেকে বেরিয়েই দেখতে পায় আকাশ ডায়িং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে আছে তোহার রুমের দিকে তাকিয়ে।
তোহার আর বুঝতে বাকি নেই আকাশ ফুলসজ্জার ঘরে যায়ই নি।
বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তোহা।
পা টিপে টিপে বেড়িয়ে যায়। আকাশ জেগে গেলে হাজারটা কথা বলবে। যে গুলো শুনতে আর ভালো লাগছে না তোহার।

ফোন টিপতে টিপতে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাঁটছে তোহা। হঠাৎ কিছু একটার সাথে বেঁধে ধরাম করে পড়ে যায়। আবার কোমরে ব্যাথা পায়।
” চোখ কি পকেটে রেখে ঘুরিস না কি রে? কানা কোথাকার। না কি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে
চোখ মুখ কুঁচকে সামনে তাকাতেই তোহা চুপসে যায়। হা করে কিছু বলতে গেছিলো হা টা হা হয়েই থাকে।
মেঘ বুকে হাত গুঁজে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে তোহার দিকে।
“প্রতিবন্ধী তুমি? হুম?
মেঘের গম্ভীর মুখের এমন কথা রেগে যায়। কিন্তু রাগটা প্রকাশ করার জন্য তো কথা বলতে হবে। তোহার মুখ থেকে কথা বের হবে না। উঠে দাঁড়ায়। ফোনের গ্লাস ফেটে গেছে।
সামনের মাসেই চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে বাবা ফোনটা কিনে দিয়েছিলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে অঝড়ে কেঁদে ফেলে তোহা।
মেঘ কপালে চারটা ভাজ ফেলে তাকায় তোহার দিকে। তোহা কেঁদেই যাচ্ছে।
” ডিসগ্রাসটিং
জোরে শ্বাস নিয়ে বলে মেঘ।
তোহাকে পাশ কাটিয়ে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে চলে যায় মেঘ।
তোহা মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁ কায়।
“আমার ফোনটা। এ্যাঁ এ্যাঁ
শালা কোনোদিন বউ পানি না তুই। সারাজীবন চিরকুমার হয়ে থাকবি।
ফুসতে ফুসতে বলে তোহা।
” সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। বউ মাই ফুট
মেঘ তোহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে তোহা। কিছুটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। দরদর করে ঘামতে থাকে। মেঘ সব শুনে ফেললো। এবার নিশ্চয় মারবে।
“তোমার ফোন ভেঙে গেছে। এখানে পঞ্চাশ আছে। নতুন কিনে নিও।
মেঘরাজ কখনো কারো কাছে ঋণী থাকে না।
তোহার হাত টেনে টাকা গুলো দিয়ে বড়বড় পা ফেলে চলে যায় মেঘ। হতদম্ভ হয়ে তাকিয়ে থাকে তোহা।

চলবে