অভিযোগ পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
460

#অভিযোগ
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#অন্তিম_পর্ব

আঁধার রজনী নামলো ধরনীর বুক ছিঁড়ে। আশাগুলো চু’র’মা’র হয়ে ফিরে এলো নিজের কাছে। গহিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশতিয়াক। মেয়েটা বিয়েতে না করে দিয়েছে। প্রচুর রা’গ এই মেয়ের। প্রথমদিকে বেহা’য়ার মতো বড্ড জ্বালাতো। থাকতে মূল্য বোঝেনি ইশতিয়াক, কিন্তু এখন প্রবলভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে মেয়েটার প্রতি। একবার যেহেতু দেখা পেয়েছে আর ছাড়া যাবেনা। ইশতিয়াক বুঝতে পেরেছে এবার ব্যবস্থা তাকেই নিতে হবে।

কোনোভাবে তারান্নুমের বর্তমান নাম্বার জোগাড় করলো ইশতিয়াক। রাত্রি এগারোটার উপর গিয়ে পৌঁছালো। ফোনের তীব্র শব্দে বই পড়া থেকে মনযোগ হটে গেলো তারান্নুমের। অপরিচিত নাম্বার দেখে প্রথমবারেই রিসিভ করলোনা। দ্বিতীয়বারে রিসিভ করে সালাম দিলো। অপরপাশ বেশ শান্ত। অনেকক্ষণ চুপচাপ সময় কা’টার পর তারান্নুম গলার স্বর উঁচু করলো,
-“কে বলছেন? কথা না বললে অযথা কল দিয়েছেন কেনো?”

গলা পরিষ্কার করে নম্রস্বরে সালামের জবাব দিলো ইশতিয়াক।

গলার স্বর চিনতে ভুল হলোনা তারান্নুমের। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করলো,
-“কেনো ফোন দিয়েছেন? কোনো জরুরি কথা?”

-“হ্যাঁ, জরুরি বলেই ফোন দিয়েছি। কাল সময় হবে?”

-“কি এমন জরুরি কথা যার জন্য দেখা করতে হবে? আমার তো আপনার সাথে জরুরি কথা বলার মতো সম্পর্ক নয়।”

তপ্তশ্বাস ছাড়লো ইশতিয়াক। নিজেকে ধাতস্থ করে উত্তর দিলো,
-“একটু সময় চাই। না করোনা।”

কিছুক্ষণ মৌন থেকে শর্ত জুড়ে দিলো তারান্নুম।
-“ঠিক আছে। এরপর আশা করবো অভ’দ্রের মতো যখনতখন কল দেবেন না।”
কথাটি বলেই লাইন কে’টে দিলো তারান্নুম।
প্রচন্ড অনিহা জন্মেছে এই মানুষটির প্রতি। তার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে, অপমান করে এখন বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। হাস্যকর ব্যাপার। মানুষটি বোধহয় তারান্নুমের সেদিনের বলা কথাটি মনে রাখেনি।

আজ থেকে চার বছর আগের ঘটনা। তখন তারান্নুম অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ইশতিয়াক মাস্টার্স কমপ্লিট করার পথে। বন্ধুর সাথে তার বোনকে ভর্তি করাতে ন্যাশনাল কলেজে আসলো। রূপবান হওয়াতে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের দৃষ্টির ও ভীড় জমতো ইশতিয়াকের উপর। এর মধ্যে একটা মেয়েকে তার চোখে পড়লো বেশ। মনে হচ্ছে অন্যদের তুলনায় সে মেয়েটি একটু বেশি আকৃষ্ট তার প্রতি। ইশতিয়াকের বন্ধু রাহাত মিটিমিটি হেসে বলল,
-“কথা বলে আয়। মেয়েটা মনে হচ্ছে এখনই ম’রে যাবে।”

ইশতিয়াক শার্টের কলার উঁচু করে বলল,
-“আমার পছন্দ এতটা ও লো ক্লাস না। প্রয়োজনে তুই কথা বলতে পারিস।”

রাহাত বলল,
-“পছন্দ তো করতে বলিনি। একটু শান্ত করতে সমস্যা কী।”

কথাটি মনে ধরলো ইশতিয়াকের। মৃদু হাসলো। সেদিন নিজ থেকেই তারান্নুমের সাথে পরিচিত হলো। নাম্বার আদান-প্রদান, মাঝেমাঝে টুকটাক দেখাশোনা হওয়া। বেশ চলছে। যতদিন বাড়লো নিজের প্রতি তারান্নুমের গাঢ় অনুভূতি টের পেলো ইশতিয়াক। সে বাঁধা দিতোনা। ক্রমান্বয়ে এই অনুভূতি বাড়তে বাড়তে ভালোবাসায় রূপ নিলো।
হঠাৎই একদিন তারান্নুম প্রপোজ করে বসলো তাকে। ইশতিয়াক ফিরিয়ে দেয়নি। এরপর থেকে তারান্নুমের ক্যাম্পাসের আশেপাশে ইশতিয়াকের আসা যাওয়া বেড়ে গেলো। শুরু হলো পাগলামি। তারচেয়ে বেশি পাগলামি করতো তারান্নুম। যখন তখন সময় পেলেই ইশতিয়াককে ফোন করে বসতো, দেখা করতে চাইতো। প্রথম প্রথম ভালোলাগলেও একসময় ইশতিয়াক বিরক্ত হয়ে ওঠে। তখন আর তারান্নুমের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলানোর মতো ভুল করতোনা। বেশ এড়িয়ে চলতো তারান্নুমকে। কিন্তু সরাসরি কিছুই বলতোনা। এদিকে ইশতিয়াকের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে তারান্নুমের পা’গলামি যেনো আরও বেড়ে গেলো। যখন তখন ইশতিয়াকের বন্ধুদের কল করে বসে ইশতিয়াকের খোঁজ করতে।

সামনেই ইশতিয়াকের জন্মদিন। তারান্নুম ঠিক করলো সেদিন কথা বলে দুজনে সব ঠিক করে নেবে। হয়তো ইশতিয়াক ব্যস্ত আছে। নিজের সামর্থ্যের ভেতর একটা উপহার কিনলো তারান্নুম। রেস্টুরেন্টে ডাকলো ইশতিয়াককে।
বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে অপেক্ষা করেছে তারান্নুম। কলের পর কল দিয়েছে,কিন্তু ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এদিকে অনেকক্ষণ যাবত বসে থাকায় ওয়েটার এসে বারবার জিজ্ঞেস করছে, ‘ম্যাম আপনার কাজ শেষ হয়েছে? আমাদের আরও লোকজন আসছে।”

এভাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো তারান্নুম। আশ্চর্যের বিষয় এবার ইশতিয়াকের ফোন সুইচ অফ বলছে। উঠে পড়লো সে। চোখে পানি টলমল করছে। সেই সাথে রা’গ হলো। তার নিজের প্রতি নাকি ইশতিয়াকের প্রতি। বোঝা গেলো না। রেস্টুরেন্ট থেকে ফেরার পথেই অন্য একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ইশতিয়াককে তার বন্ধুদের সঙ্গে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বের হতে দেখা গেলো। তার বন্ধুদের সময় দিচ্ছে এটাতে রা’গ হয়নি। ফিরতি মেসেজ দিয়ে অন্তত বলতে পারতো আমি বন্ধুদের সাথে আছি। রা’গের পরিমাণ বেড়ে গেলো। তারান্নুম রিকশা থেকে নেমে ছুটে ইশতিয়াকের সামনে গিয়ে থামলো। আচমকা তারান্নুমকে সামনে দেখে অবাক হলো ইশতিয়াক।

তারান্নুম কোনো কিছু বাচবিচার না করেই তিরিক্ষি গলায় প্রশ্ন করলো,
-“আমার কল ধরছোনা কেনো? তুমি যখন বন্ধুদের সাথেই আছো আমাকে জানিয়ে দিলে কি হতো? আমি বিকেল থেকে এই সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি।”

ইশতিয়াক গলার স্বর উঁচু করে ধমকে উঠলো,
-“তোমাকে কি আমি অপেক্ষা করতে বলেছি? আমার ব্যাপারে এত মাথা ঘামাতে কে বলে তোমায়? আমার সাথে উচ্চবাক্য করবেনা, স্বর নিচে।”

আশ্চর্য হলো তারান্নুম।
-“কেউ কাউকে ভালোবাসলে তার ব্যাপারে ভাববে না?”

-“আমিতো তোমাকে বলিনি আমাকে ভালোবাসো। প্রপোজ ও তুমিই করলে। একবার ভেবে দেখো তো, তোমার সাথে আমাকে মানায়? না উচ্চতায়, আর না চেহারায়। আমি বলছিনা তুমি দেখতে খারাপ। কিন্তু আমার সাথে তো আমার মতোই কাউকে মানায়, তাই না? তাছাড়া তুমি আমার রূপ দেখেই ভালোবেসেছো, দুদিন পরই মোহ কে’টে যাবে।”

হতবিহ্বল চাহনিতে তাকালো তারান্নুম। কি বলছে কি ছেলেটা? হ্যাঁ এটা ঠিক প্রথমে ইশতিয়াকের চেহারা ওকে আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু তারমানে তো এই নয় যে তার ভালোবাসাকে মোহ বলে তুচ্ছ করবে।
তারান্নুম কাঁপা-কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“শুধু কি আমিই ভালোবেসেছি? তুমি বাসোনি?”

ইশতিয়াকের কাঠকাঠ জবাব,
-“নাহ্! তোমার প্রতি কখনো আমার ভালোবাসা জন্মায় নি। তোমার সাথে কথা বলতে ভালোলাগতো,এতটুকুই। আর এই ভালোলাগাকে ভালোবাসা বলা যায়না। তাছাড়া তোমার অতিরিক্ত ন্যাকামিগুলো আমার ভীষণ বিরক্ত লাগছে। আমি তোমাকে কখনো ভালোটালো বাসিনি। তোমার এসব ন্যাকামি কথাবার্তা বেশ উপভোগ করতো আমার বন্ধুরা, সেই জেরেই কথা বলা। তোমার মতো মেয়েকে আমার পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব নয়।
তুমি নিজের মতো কাউকে খুঁজে নাও। সুন্দর পুরুষ সবার জন্য নয়। আমার সাথে কখনো তোমার ম্যাচ হবেনা। দেখো আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা। তাছাড়া আমার সময়ের মূল্য আছে। শুধু শুধু তোমার পেছনে ফালতু সময় নষ্ট করার মতো পর্যাপ্ত সময় আমার নেই। তুমি রূপই দেখেছো, টাকা-পয়সা এসব দেখেছো। ছ্যা’চড়া, বে’হায়ার মতো আমার পেছনে ছোটা বন্ধ করো।”

হঠাৎই তারান্নুমের বক্ষদেশে চোখ পড়লো ইশতিয়াকের। ছুটে আসার কারণে ওড়না একপাশে সরে গিয়েছে। ইশতিয়াক ব্যাপারটা স্বভাবিকভাবে না নিয়ে অন্যভাবে নিলো। বক্ষে ইশারা করে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
-“বডি শো অফ করে অন্যদের আকৃষ্ট করতে পারো, ইশতিয়াক আহমেদকে নয়।”

চোখমুখ খিঁচিয়ে জোরে শ্বাস ছাড়লো তারান্নুম। ওড়না ঠিক করে ইশতিয়াককে থামিয়ে দিলো।
-“ব্যস, এখানেই থেমে যাও। মিথ্যাে হলে এখানেই বন্ধ করো এসব। যদি সত্য হয়, তবে জেনে রেখো আমার আত্মসম্মানের দেয়াল প্রচন্ড শক্ত, মজবুত। একবার মুখ ফেরালে আমাকে দ্বিতীয়বার তোমার মুখী করতে পারবেনা। এক তরফা ভালোবেসে যাবো, তবে কখনো তোমার কাছে ফিরবোনা। তোমার জন্য খুব বেশি পা’গলামো করেছি বলে ছ্যাচড়া মনে হচ্ছে তাইনা? চলে যাচ্ছি আমি। দোয়া করবো যাতে নিজের মতো কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাও।”

অশ্রুসিক্ত চোখে ছুটে পালালো তারান্নুম। একটিবার ও পিছু ফিরলোনা। ইশতিয়াক মাথা ঘামালোনা। ঘাড় থেকে বোঝা নামলো বলে আগামী দিন বন্ধুদের ট্রিট দেবে বলে ঠিক করলো।

রাস্তায় বেসামাল হয়ে ছুটতে গিয়ে সিএনজির সামনে এক্সি’ডেন্ট করে তারান্নুম। পায়ে ভীষণ বা’জেভাবে আ’ঘাত পায়। তারান্নুমের বান্ধবীর কাছ থেকে খবর পেয়েছে ইশতিয়াক। ফোনেই তারান্নুমের কথা জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু একটিবার দেখতে ও আসলোনা। সেখান থেকেই অভিমান গাঢ় হলো। তারান্নুম ভেবেছে ভালোবাসা না হোক, মনুষ্যত্বের জোরে হলেও দেখতে আসবে। কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে এলোনা ইশতিয়াক।
পায়ের কারণে প্রথম বর্ষে পরীক্ষা দিতে পারেনি তারান্নুম।
উদাসীন হয়ে থাকতো মেয়েটা। ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত করলো। সেই সময়টুকু সহজ ছিলোনা। এরপরই পুরোদমে পড়াশোনায় মনযোগ দেয়। মনে মনে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে দোয়া করতো ‘মানুষটার সাথে যেনো তার দেখা না হয়’। নয়তো এতদিনে নিজেকে যতটা শক্ত করেছিলো, সেই শক্ত খোলসটা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে।

এই পর্যায়ে এসে তারান্নুম নিজেকে এতটাই শক্ত করে নিলে যে ইশতিয়াককে দেখে নিজের ভেতর যতই ঝড় বইছে না কেনো? সামনে নিজেকে প্রচন্ড শক্ত দেখাতে পারছে।
————

পরেরদিন বিকেলেই ইশতিয়াকের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে গেলে তারান্নুম। আগ থেকেই ইশতিয়াককে বসে থাকতে দেখা গেলো। তারান্নুমকে দেখতে পেয়েই বসতে বললো।

-“কি খাবে?”

-“আমি এখানে খেতে আসিনি মিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ। কি বলার আছে বলুন। আমার সময়ের মূল্য আছে।”

কথাটি দ্বারা যে ইশতিয়াককে পিঞ্চ করলো তারান্নুম সেটা বুঝতে পেরেই মৃদু হাসলো ইশতিয়াক। দুটো কফি অর্ডার দিয়ে রয়েসয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“বিয়েতে না করে দিয়েছো? ছেলে পছন্দ হয়নি? যে ছেলেকে চারবছর আগে পা’গলের মতো ভালোবেসেছো তাকে এখন পছন্দ হয়নি বলে কা’টিয়ে দিচ্ছো হাস্যকর ব্যাপার না?”

ঠোঁট এলিয়ে হাসলো তারান্নুম। গলার স্বর নামিয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
-“আদৌ কোনো সম্পর্ক ছিলো আপনার, আমার মাঝে?”

করুণ চোখে তাকালো ইশতিয়াক। প্রথমে ক্ষো’ভের বশে মেয়েটাকে অবহেলা করলেও পরক্ষণে বুঝলো সে কি হারিয়েছে। দ্বিতীয়বার যখন দেখা পেয়েছে তখন আর দূরে যেতে দেবেনা। বিনীত সুরে বলল,
-“যা যা অভিযোগ আছে, বলে ফেলো। আজ আমি সব অভিযোগ শুনবো, শাস্তি ও মাথা পেতে নেবো।”

তারান্নুম টলে গেলোনা। অটল রইলো নিজের জায়গায়। শক্ত চোয়ালে তাচ্ছিল্য মাখা কন্ঠে শুধালো,
-“প্রিয় মানুষের প্রতি অভিমান হয়। আর অভিমান থেকে অভিযোগ।
আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ, কোনো অভিমান নেই। তাহলে অভিযোগ আসবে কোত্থেকে? দুজন অপরিচিত মানুষের মাঝে রাগ,অভিমান শব্দ দুটো শোভা পায়না। আপনি কেবল আমার ভাইয়ের শিক্ষক, যা আমি গত দুদিন আগে জানতে পেরেছি। এতটুকুই।”

তাচ্ছিল্য হাসলো ইশতিয়াক।
-“ভালোবাসা ফুরিয়ে গিয়েছে? এখন আর ভালোবাসা নেই?”

-“আপনি বোধহয় আমার সেদিনের বলা কথাগুলো ভুল বসেছেন। আমি কিন্তু পাই পাই করে সব মনে রেখেছি। মনে করে দেখুন সেদিন আমি কি বলেছিলাম। ‘এক তরফা ভালোবেসে যাবো, তবে কখনো আপনার কাছে ফিরবোনা।’
আমার ভালোবাসা ঠুনকো নয়, যে দুদিন অভিনয় করলাম আর শেষ।”

কন্ঠ খাদে নামিয়ে ইশতিয়াক বলল,
-“ভুল মানুষেরই হয়। মানছি আমি সেদিন ভুল করেছি। ক্ষমা করা যায়না? তোমার জন্য যা যা করা লাগে করবো, তুমি শুধু আমাকে ফিরিয়ে দিও না।”

উঠে দাঁড়ালো তারান্নুম। ওয়েটার কফি দিয়ে গেলো। সে ছুঁয়েও দেখলোনা। যাওয়ার আগে পিছু ফিরে একবার দেখলো ইশতিয়াককে।
-“আপনাকে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই,তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। আপনি যতকিছুই করেন, আমার জবান বদলাবেনা। আমি সারাজীবন বলে যাবো, আমি ইশতিয়াক আহমেদকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো তার কাছে ফিরবোনা। যে পুরুষ নারীকে অসম্মান করে কথা বলতে পারে, সে পুরুষ আমার নয়। হতে পারে আপনি পুরোটাই বদলে গিয়েছেন। কিন্তু আমাকে দেওয়া ক্ষ’তগুলো কি মুছতে পারবেন?
ভালোবেসে দূরে ঠেলে দেওয়ার যন্ত্রণা উপভোগ করার সময় হয়েছে আপনার। স্বাদ নিন, দেখুন কেমন লাগে। আমার চেয়ে আপনার কষ্ট বেশিই হবে। কেননা সেদিন আমি আপনার মুখ থেকে শুনেছি আপনি আমায় ভালোবাসেননা। আর আজ আপনি জানেন আমি আজীবন আপনাকে ভালোবেসে যাবো, কিন্তু আপনার কাছে ফিরবোনা।”

থমকে দাঁড়ালো ইশতিয়াক। চারবছর আগের করা ভুলের মাশুল তাকে দিতে হচ্ছে। ভেতরটা উত্তপ্ত অনলে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে, অথচ উপরটা বেশ শক্ত। চোখজোড়া ভীষণ জ্বালা করছে।
ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো সে।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেললো তারান্নুম।
-“অভিযোগ শোনার সুযোগ দেবোনা। মানুষটাই তো আমার না। তার দেওয়া ব্যথাগুলো আমার, একান্তই আমার। অভিমান আকাশ ছুঁবে, অভিযোগ পাহাড়সম হবে। এক সময় ধ্বসে পড়বে শত অভিযোগের পাহাড়, তবে ব্যক্ত করার মানুষ খুঁজে পাবোনা। দূর থেকে ভালোবাসবো, কিন্তু নিজের আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দেবোনা। কখনো অভিযোগ নিয়ে দাঁড়াবোনা।”

#সমাপ্ত