অর‌ণ্যে রোদন পর্ব-১৮+১৯+২০

0
180

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ১৮

কথা ঘুমা‌চ্ছে। নিহাদ ওর পা‌শে আধ‌শোয়া অবস্থায় বা‌লিশে হেলান দি‌য়ে ব‌সে ওর মাথায় হাত বুলা‌চ্ছে। কথা আজ নিহাদ‌কে কিছু বল‌তে চে‌য়ে‌ছিল কিন্তু সন্ধ্যার পর ওর শরীরটা এত খারাপ হ‌লো যে, বলার ম‌তো অবস্থায় ছিল না।

কথার মাথায় হাত বুলা‌তে বুলা‌তে নিহাদ ওর মুখটার দি‌কে তাকা‌লো। ছোট্ট একটা মুখ। উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের মে‌য়েটার চেহারায় রা‌জ্যের সব মায়া এসে ভীর ক‌রে আছে। কথার চো‌খের পাপ‌ড়ি এতটাই ঘন যে, নি‌চের দিকে তাকা‌লে ম‌নে হয়, চোখ বন্ধ ক‌রে আছে। সচারাচার মে‌য়ে‌দের চো‌খের পাপ‌ড়ি এত লম্বা আর ঘন হয় না। কথার চো‌খের পাপ‌ড়ি ঘন, ধনু‌কের ম‌তো চিকন বাঁকা ভ্রু জোড়া। দেখ‌লেই মায়া লা‌গে। গাল বে‌শি ফোলা না, আবার বে‌শি চুপসা‌নোও না, একদম নিখুঁত সুন্দর। শরী‌রের যে অংশটা ঠিক যতটু‌কু হ‌লে সুন্দর দেখায়, ঠিক তেমন দেখ‌তে কথা। কথা লম্বাও বেশ। পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। নিহাদ পাঁচ আট।

নিহাদ নিচু হ‌য়ে কথার গা‌লে চু‌মু খে‌য়ে বিড়‌বিড় করে বলল,
‘কী দ‌রকার ছিল এতটা মায়া‌বি হওয়ার? আমার মন তোমা‌তে এমনভাবে প‌ড়ে‌ছে যে, তোমা‌কে হা‌রি‌য়ে ফেলতে পা‌রি ভাব‌তেই দমটা বে‌রি‌য়ে যাবার উপক্রম হ‌চ্ছে। বু‌কের ভিতরটা ভে‌ঙে চুরমার হ‌চ্ছে। নিঃশ্বাসটাও গলার কা‌ছে এসে আট‌কে যা‌চ্ছে।

আমা‌দের সম্পর্কটা কি আদৌ আগের ম‌তো স্বাভা‌বিক হ‌বে কথা? হয়‌তো হ‌বে না। আমি অন্যায়টাই তেমন ক‌রে‌ছি। ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে‌ছি। তবুও চাইবো তু‌মি আমায় ক্ষমা ক‌রে, শুধু একটা সু‌যোগ দাও, যা‌তে ক‌রে আমি নি‌জে‌কে আবার আগের ম‌তো ভা‌লো মানুষ কর‌তে পারি। তু‌মি ক্ষমা না কর‌লে আমি স‌ত্যি নি‌জে‌কে কখনও ক্ষমা কর‌তে পারব ন‌া। এম‌নিও আমি কখনও নি‌জে‌কে ক্ষম‌া কর‌তে পারব না। সারাজীবন অনু‌শোচনার আগু‌নে জ্ব‌লে পু‌ড়ে ছাই হ‌বো। তবুও তোমার একটু ক্ষমা সে আগু‌নে একটু হ‌লেও পা‌নির কাজ কর‌বে।

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

আমি স‌ত্যি দুর্বল ম‌নের পুরুষ কথা। সবসময় ভ‌য়ে থা‌কি। কিছুমাস যাবত বে‌শি ভ‌য়ে থা‌কতাম তোমা‌কে হারা‌নোর। সে ভয়টাই আমা‌কে দি‌য়ে সব‌চে‌য়ে নোংরা কাজটা ক‌রি‌য়ে‌ছে। এখন বি‌ভিন্ন উপায় মাথায় আসছে। কীভা‌বে প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণ করা যেত, সেসব উপায় মাথায় আসছে কিন্তু তখন আমার একদম মাথা ব্ল্যাংক হ‌য়েছিল। ম‌নে হ‌চ্ছিল আমি ব্যাটা‌রি চা‌লিত পুতুল, যার চা‌বিটা সি‌ন্থিয়ার কা‌ছে। ও যেমন খু‌শি আমা‌কে নাচা‌চ্ছে। এখন মাথ‌ায় হাজারটা উপায় আস‌ছে। ওর খারাপ প‌রিকল্পনা থে‌কে বাঁচার এত এত পথ আস‌ছে অথচ তখন কো‌নো উপায় মাথায় আসেনি। এ জন্য বোধ হয় ব‌লে চোর গে‌লে বু‌দ্ধি হয়। আমার অবস্থাটাও তেমন হ‌য়ে‌ছে। কথা প্লিজ তু‌মি আমা‌কে ছে‌ড়ে যাবার কথা ভেব না।’

কথা এতক্ষণ নিহা‌দের বিড়‌বিড় ক‌রে বলা সব কথাই শুন‌ছিল। কথা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘‌তোমা‌কে ছে‌ড়ে যাব কি না জ‌ানি না। ত‌বে তোমা‌কে ক্ষমাও করব না। তোমা‌কে এমন শা‌স্তি দিব, ইতিপূ‌র্বে কো‌নো স্ত্রী তার স্বামী‌কে দি‌য়ে‌ছে ব‌লে ম‌নে হয় না।’

‌নিহাদ অসহায় চো‌খে কথার দি‌কে তাকাল। কথা অপরদিকে ঘু‌রেই বল‌তে লাগল,
‘খুব কী দরকার ছিল এমনটা হওয়ার? অন্য কো‌নোভা‌বে কি সি‌ন্থিয়াকে হ্যা‌ন্ডেল করা যেত না? তু‌মি শিক্ষক, অন্য‌কে বু‌দ্ধি বিতরণ ক‌রো, ত‌বে তোমার মাথায় কেন এ সমস্যা সমাধা‌নের বু‌দ্ধি আসল না?’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

‌নিহাদ চ‌ুপ ক‌রে রইল। কথা বিছ‌ানা থে‌কে উঠে বাথরু‌মে গেল। চো‌খে মু‌খে বে‌শি ক‌রে পানির ঝাপটা দি‌য়ে বের হ‌য়ে মুখ মুছল। তারপর টে‌বি‌লে রাখা এক গ্লাস পা‌নি খে‌য়ে বলল,
‘বারান্দায় যা‌বে?’
‌নিহাদ শুক‌নো মু‌খে বলল,
‘চ‌লো।’

বারান্দায় বে‌তের চেয়া‌রে দুজ‌নেই চুপচাপ ব‌সল। কিছুটা সময় নীরবতায় কাটা‌নোর পর কথা বলল,
‘আজ‌কের এ চাঁদনী রা‌তে, তোমার আমার মা‌ঝে দেয়াল না থাক‌লে বলতাম, নিহাদ চা খা‌বে? তোমার হা‌তে হাত রে‌খে কাঁ‌ধে মাথা রে‌খে চাঁদনী উপ‌ভোগ করতাম। তারপর তোম‌ায় মুগ্ধময় ভা‌লোবাসায় সিক্ত হ‌তে চাইতাম। কিন্তু আফ‌সোস এমন স্বাভা‌বিক ভা‌লোবাসার রাত আমা‌দের জীব‌নে আর আস‌বে কি না আমি জা‌নি না।’

‌নিহাদ মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘তু‌মি চাই‌লে আবার সব স্বাভা‌বিক হ‌বে। আমি স্বাভা‌বিক করব।’
তা‌চ্ছিল্য হাসল কথা। নিহা‌দের ম‌নে হ‌লো, এ হা‌সি‌তে যেন কথা ওকেও তা‌চ্ছিল্য করল। অাবার ‌কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটা‌নোর পর কথা বলল,
‘এখন ব‌লো সি‌ন্থিয়া কী নি‌য়ে তোমা‌কে ব্ল্যাক‌মেইল কর‌ছিল? আর কেমনভা‌বে ব্ল্যাক‌মেইল কর‌ছিল যে তু‌মি ওর সা‌থে বিছ‌ানায় চ‌লে গেলে?’

‌নিহাদ ঢোক গিলল। তারপর বলল,
‘‌তোমার শরী‌রটা কেমন লাগ‌ছে এখন?’
কথা হে‌সে বলল,
‘‌ভা‌লো।’
‘এসব এখন বলা কী জরু‌রি?’
‘‌কেন?’
‘‌তোমার শরীরটা ভা‌লো নেই।’
‘চিন্তা ক‌রো না, সে‌দিন তোমা‌কে আর সি‌ন্থিয়া‌কে ঐ অবস্থায় দে‌খেও য‌দি সুস্থ থাক‌তে পা‌রি ত‌বে আজ তোমার কথা শু‌নেও সুস্থ থাক‌তে পারব। আমার সহ্য শ‌ক্তি দে‌খে আমি নিজেই অবাক। তোমা‌কে কী বল‌বো? তু‌মি বলো?’

‌নিহাদ কিছুক্ষণ চুপ ক‌রে রইল। হয়‌তো ম‌নে ম‌নে কথাগু‌লো সা‌জি‌য়ে নি‌চ্ছিল। তারপর বলল,
‘‌কিছুমাস আগে দা‌দি যখন অসুস্থ হ‌য়ে প‌ড়েন আমরা সবাই দেখ‌তে গি‌য়ে‌ছিলাম।’
‘হ্যাঁ।’
‘বাবা-মা থে‌কে গে‌লেও আমরা চলে এসেছিলাম।’
‘হ্যাঁ।’
‘তারপর দাদি আরও বে‌শি অসুস্থ হ‌য়ে প‌ড়েন। আমরা আবার যাই। এবার আমি ফির‌লেও তু‌মি দা‌দির কা‌ছে থে‌কে গে‌লে।’
‘এসবের সা‌থে সি‌ন্থিয়ার ব্ল্যাক‌মেই‌লের কী সম্পর্ক?’

‘বল‌ছি। তু‌মি প্রায় বা‌রো দিন সেখা‌নে থাক‌লে। আমার জব ছে‌ড়ে এত‌দিন থাকা প‌সিবল ছিল না বিধায় চ‌লে আসি। তখন তো একাই থাকতাম। তো এক‌দিন বিকা‌লে কো‌চিং-এ যাবার প‌থে আমার বাইক এ্যাক‌সি‌ডেন্ট ক‌রে।’
‘হ্যাঁ জা‌নি। তখন তু‌মি মাথায় বেশ চোট পে‌য়েছি‌লে। তোমার খবর পে‌য়েই তো আমি দ্রুত চ‌লে এসেছিলাম।’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

“আমি যখন এ্যাক‌সি‌ডেন্ট ক‌রি, তখন কাকতালীয়ভা‌বে সেখা‌নে সিন্থিয়া উপ‌স্থিত ছিল। ও-ই আমা‌কে হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে যায়। চি‌কিৎসা করায়। ডাক্তার আমার মাথা ব্যা‌ন্ডেজ ক‌রে, ওষুধ লিখে আমা‌কে ছে‌ড়ে দেন। ব্যথা তেমন বে‌শি না হওয়ায় ভ‌র্তি লি‌খেন‌নি। সি‌ন্থিয়া আমা‌কে ব‌লে‌ছিল, তোমা‌দের ফোন ক‌রে‌ছিল কিন্তু নাম্বার বন্ধ। আমিও ভাবলাম থাক শুধু শুধ‌ু তোমা‌দের জা‌নি‌য়ে টেনশন দি‌য়ে কী লাভ? এম‌নি দা‌দির শরীরটা ভা‌লো যাচ্ছে না। সি‌ন্থিয়া আমায় বাসায় পৌঁ‌ছে দি‌লো। সৌজন্যতার খা‌তি‌রে ওকে ব‌লে‌ছিলাম, চা খে‌য়ে যে‌তে। তখন রাত আটটা কি নয়টা বা‌জে। ও নি‌জেই চা বা‌নি‌য়ে আনল।

সা‌থে কি‌চেন থে‌কে খাবার এনে বলল,
‘স্যার, খে‌য়ে নিন। আপনা‌কে ওষুধ খাই‌য়ে আমি চ‌লে যাব।’
‘আ‌মি অত কিছু ভা‌বি‌নি। ওষুধ খে‌য়ে সি‌ন্থিয়া‌কে বিদায় দি‌য়ে দরজা লক কর‌তে যাই। কিন্তু মাথা তখন প্রচন্ড ঘুরা‌চ্ছিল। তারপর আমার আর কিছু ম‌নে নেই। সকা‌লে ঘুম ভাঙার পর দেখলাম সি‌ন্থিয়া বে‌ডের পা‌শে ব‌সে কাঁদ‌ছে। আমি ওকে দে‌খে খা‌নিক চম‌কে জি‌জ্ঞেস করে‌ছিলাম তু‌মি এখা‌নে কী কর‌ছো?’

‌সি‌ন্থিয়া বেশ রাগী ক‌ণ্ঠে ব‌লে‌ছি‌ল,
‘আপনা‌কে হেল্প করার প্র‌তিদা‌নে আপ‌নি আমা‌কে রেপ কর‌লেন?’
আমার মাথায় আকাশ ভে‌ঙে প‌ড়েছিল সে‌দিন। বারবার ভাব‌তে লাগলাম, আমি কখন ওকে…?
ও-ই কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে ব‌লে‌ছিল,
‘আপনা‌র বা‌ড়ি থে‌কে বের হবার পর দেখলাম আমার ফোন আপনা‌র বাসায় ফে‌লে গেছি। সেটা নি‌তেই ভিত‌রে এসে দেখলাম, আপনি দরজার পা‌শে প‌ড়ে আছেন। আপনা‌কে তু‌লে বেডরু‌মে নি‌য়ে শু‌ইয়ে দি‌য়ে আস‌ছিলাম, আপ‌নি আমা‌কে টে‌নে ধ‌রে বু‌কে নি‌য়ে কথা কথা ব‌লে সেই সব কর‌তে লাগ‌লেন যা আপ‌নি আপনার স্ত্রীর সা‌থে কর‌তেন। আমি আপনা‌কে থামা‌নোর শত চেষ্টা ক‌রেও থামা‌তে পা‌রি‌নি। আমার সব কিছু শেষ ক‌রে দি‌লেন আপ‌নি।’

আ‌মি কিছু‌তেই সি‌ন্থিয়ার কথা বিশ্বাস কর‌ছিলাম না। ও বলল,
‘তাহ‌লে নিশ্চয়ই বিছানার এ রক্তও মিথ্যা!’
আমা‌দের বিছানার সাদা আর গোলা‌পি ফুলওয়ালা চাদরটায় বেশ ক‌য়েক জায়গায় র‌ক্তের ছাপ। আমার নি‌জের শরী‌রেও কো‌নো কাপড় ছিল না। আমি সে‌দিন লজ্জায় ভ‌য়ে মাথা নিচু ক‌রে ছিলাম।

সি‌ন্থিয়া অনেকক্ষণ কান্নাকা‌টি ক‌রে আমা‌কে বি‌ভিন্নভা‌বে শা‌সি‌য়ে সে‌দিন চ‌লে যায়। আমি শুধু বারবার ভাব‌ছিলাম আমি কি স‌ত্যিই এসব করে‌‌ছি? কারণ আমার নি‌জের প্রতি এতটুকু বিশ্বাস ছিল। আর যা-ই হোক কখনও একটা মে‌য়ের সম্মান নষ্ট কর‌তে পা‌রি না। কিন্তু সি‌ন্থিয়া ফোন দি‌য়ে আমা‌কে শাসা‌তো। প্রচন্ড মান‌সিক চা‌পে আমার চিন্তাশ‌ক্তি লোপ পে‌তে লাগল। মান‌সিক চাপ আরও বাড়া‌তে কিছু‌দিন পর ও আমা‌কে অনেকগু‌লো ছবি পাঠায়। ওর আর আমার একান্ত ছ‌বি। ছ‌বিগু‌লো খুব খোলা‌মেলা। তোমা‌কে ঠিক মু‌খে বল‌তে পারব না ততটা খোলা‌মেলা। তারপর থে‌কে ও ননস্টপ আমা‌কে ব্ল্যাক‌মেইল কর‌তে লাগল। ওকে যেন বি‌য়ে ক‌রি, বি‌য়ে না কর‌লেও এট‌লিস্ট ওর সা‌থে গোপ‌নে একটা সম্পর্ক ক‌ন্টি‌নিউ ক‌রি। আমি সেসব কিছু‌তে সবসময় কড়াভা‌বে না ক‌রি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওর ফাঁ‌দে পা দিলাম। ওর প‌রিকল্পনা সফল হ‌লো। প‌রে অবশ্য জান‌তে পে‌রে‌ছিলাম সে রা‌তে আমা‌দের মা‌ঝে কিছুই হয়‌নি। সবটা ছিল ও সাজা‌নো।’

‌নিহাদ দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে থামল। তারপর কথার দি‌কে আগ্রহ দৃ‌ষ্টিতে তাকাল। কথা একধ্যা‌নে কতক্ষণ নিহা‌দের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। তারপর তা‌চ্ছিল্য কণ্ঠে হাস‌তে লাগল। বেশ শব্দ ক‌রে হাস‌তে লাগল। হাস‌তে হাস‌তে এবার কথা শব্দ ক‌রে কান্না কর‌তে লাগল। দুই হা‌তে মুখ ঢে‌কে কাঁদ‌তে লাগল। নিহাদ অসহায় চো‌খে তা‌কি‌য়ে রইল। কথা কান্না কর‌তেই রইল।

কান্না কর‌তে কর‌তে কথা নিহা‌দের টি-শা‌র্টের কলার চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘তুমি এতটা বোকা কি ক‌রে হ‌তে পার‌লে? কেন করলে আমার সাথে এমন? কেন ভাঙ‌লে আমার বিশ্বাস? মানলাম প্রথমবার তু‌মি নি‌জের অব‌চেতন ম‌নে ভুল ক‌রে ফে‌লেছি‌লে কিন্তু তুমি বিষয়টা আমার সাথে শেয়ার কর‌তে, আমি বিশ্বাস ক‌রে নিতাম। তোমা‌কে সি‌ন্থিয়ার হাত থে‌কে বাঁচা‌নোর স‌র্বোচ্চ চেষ্টা করতাম। তা-ও তু‌মি স্ব-ইচ্ছায় কেন গে‌লে ওর কা‌ছে?’

‌নিহা‌দের কণ্ঠ ভারী হ‌য়ে গেল। আটকা‌নো ক‌ণ্ঠে বলল,
‘অ‌নেকবার বল‌তে চেষ্টা ক‌রে‌ছিলাম। আকার ইঙ্গি‌তে বোঝা‌নোর চেষ্টা ক‌রে‌ছি, তু‌মি বো‌ঝো‌নি।’
‘এত বছর যাবত অন্ধের ম‌তো তোমায় বিশ্বাস ক‌রে‌ছি, তাহ‌লে তোমার এ ধর‌ণের কথা আকার ইঙ্গিতে কীভা‌বে বুঝব?’
‘তোমা‌কে জি‌জ্ঞেসও ক‌রে‌ছিলাম আমার কো‌নো ভুল ক্ষমা কর‌তে পার‌বে কি না? তু‌মি না ব‌লে‌ছি‌লে। তোমার এ ধর‌ণের কথায় আমি ভয় পে‌য়ে গেছিলাম।’
‘ভয় পে‌য়ে কী হ‌লো? সব‌কিছু কী আগের ম‌তো হ‌লো? সেই তো সব‌কিছু খারা‌পের চে‌য়েও নিকৃষ্ট, খারাপ হ‌লো।’
‌নিহাদ মাথা নিচু ক‌রে রইল।

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।

এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:১৯

কথা ফুঁ‌পি‌য়ে উঠে বলল,
‘আ‌মি তোমা‌কে বললাম তোমার ভুল ক্ষমা করব না, ওম‌নি তু‌মি মেনে নিলা আমার কথা? চার বছ‌রে এই চি‌নে‌ছো তু‌মি আমায়? এই আস্থা তোমার, আমার প্র‌তি? এই বিশ্বস্ততা তোমার, আমাদের সম্প‌র্কে প্র‌তি? য‌দি সম্প‌র্কে আস্থা, বিশ্বাস, বিশ্বস্ততা না-ই থ‌াকে ত‌বে সেটা কেমন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক? সেটা কেমন ভা‌লোবাসার সম্পর্ক? নিহাদ তু‌মি কেন বল‌লে না?’

কথা কান্নায় ভে‌ঙে পড়ল। অনেকটা সময় মুখ চে‌পে ফুঁ‌পি‌য়ে ফুঁ‌পি‌য়ে কাঁদল। কিছুক্ষণ পর কথা চোখ মু‌ছে বলল,
‘আস‌লে তু‌মি আমা‌কে কখনও বিশ্বাসই ক‌রো‌নি। তোমার আমার সম্প‌র্কে কখনও বিশ্বাস, আস্তা, ভরসা ছি‌লই না। থাক‌লে তোমার সমস্যাটার কথাটা তু‌মি সর্বপ্রথম আমা‌কে জানা‌তে। তা‌তে আমি তোমায় ভুল বু‌ঝি, না‌কি স‌ঠিক বু‌ঝি তার তোয়াক্কা কর‌তে না। তু‌মি নি‌জের কা‌ছে সৎ থাক‌তে। আমা‌দের সম্পর্ক‌কে সৎ রাখ‌তে। আর আমা‌কে সেসব কথা না বল‌লেও, অন্তত সি‌ন্থিয়ার সা‌থে বিছানায় যে‌তে ন‌া।

আস‌লে তোমারও একটা নতুন শরী‌রের দরকার ছিল। আমার শরীরটা তো এখন পুরাতন হ‌য়ে‌ গে‌ছে। তাছাড়া আমি তো শ্যামল‌া, কালো কিন্তু সিন্থিয়া দু‌ধের ম‌তো ফর্সা, চেহারা সুন্দর, স্মার্ট, সব দি‌কে থে‌কে পার‌ফেক্ট। এমন মে‌য়েকে বেড পার্টনার কর‌তে কোন ছেলে চাই‌বে না! তু‌মিও ওর রূপে মুগ্ধ ছি‌লে, ও তো নি‌জেই প‌তিতা, তোমার সা‌থে শু‌তে চাইত। তু‌মিও চান্স পে‌য়ে গে‌লে। চান্স পে‌লে কেউ তা হাতছাড়া ক‌রে? তু‌মিও হাতছাড়া ক‌রো‌নি।’

কথার কথাগু‌লো নিহা‌দের যেমন খারাপ লাগ‌ছিল তেমন রাগ লাগ‌ছি‌ল। নি‌জের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
‘কথা তু‌মি লি‌মি‌টের বাই‌রে কথা বল‌ছো। আমি বারবার ক‌রে ব‌লে‌ছি সে‌দিন কী হ‌য়েছিল। তাছ‌াড়া তু‌মি নিজ চো‌খে দে‌খে‌ছো সব। সে‌দিন বেডে আমার কো‌নো ভূ‌মিকা ছিল না।’

কথা তা‌চ্ছিল্য হে‌সে বলল,
‘চাকু তরমু‌জের উপর পড়ুক ব‌া তরমুজ চাকুর উপর কা‌টে তো সবসময়ই তরমুজই। তো কে কেমন পার‌ফমেন্স কর‌ছে সেটা বিষয়টা না। মজা তোমরা দুজ‌নেই নি‌ছো। এমন তো নয় যে তোমার ইমিশন হয়‌নি। আচ্ছা সে‌দিন প্র‌টেকশন নি‌য়ে‌ছি‌লে না‌কি ক‌দিন পর সি‌ন্থিয়া বলবে তোমার বাচ্চা ওর পে‌টে!’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

‌নিহাদ হতভম্ব হ‌য়ে কথার কথা শুন‌ছিল। কথা এত খোলা‌মেলা কাঁচা কথা বল‌তে পা‌রে, নিহা‌দের তা ধারণা ছিল না। কথা আবার বলল,
‘‌তোমার অসুস্থতার সু‌যোগ নি‌য়ে সি‌ন্থিয়া যখন তোমা‌র ছ‌বি তু‌লে‌ছিল, তোমার উপর রেপ করার দোষ দি‌য়ে‌ছিল তোমার তখনই বোঝা উচিত ছিল ও নাটক কর‌ছে। কারণ কো‌নো মে‌য়ে রেপ হওয়ার পর সে রে‌পিস্ট এর ঘুম ভাঙা পর্যন্ত অপেক্ষা কর‌বে না। বরং দ্রুত পু‌লি‌শের কা‌ছে যা‌বে। য‌দি পু‌লি‌শের কা‌ছে না-ও যায় তবুও চিল্লাপাল্লা ক‌রে লোক জ‌ড়ো কর‌বে। সে যখন তার কিছু না ক‌রে উল্টো তোমা‌কে ব্ল্যাক‌মেইল কর‌ছিল, তোমা‌কে বল‌ছিল, তা‌কে বি‌য়ে কর‌তে নয়‌তো প‌রো‌কিয়া সম্পর্ক কর‌তে তোমার তখনই বোঝা উচিত ছিল ও কোন মা‌পের বে**। তু‌মি একটু চিন্তা পর্যন্ত কর‌লে না? না‌কি ওর রূপ দে‌খে তোমারও ওকে একবার ভোগ করার ইচ্ছা জে‌গেছিল?’

‌নিহা‌দের এবার প্রচন্ড রাগ চে‌পে গেল। বারান্দায় রাখা টে‌বিলটার উপর জো‌রে ঘু‌ষি মারল। টে‌বিলটা কাঁচের হ‌লে হয়‌তো ভে‌ঙে চুরমার হ‌য়ে যেত। কাঠের টেবিল ভা‌ঙেনি ঠিকই ত‌বে টে‌বি‌লের উপর রাখা কাঁ‌চের শো‌পিচটা প‌ড়ে গি‌য়ে ভে‌ঙে টুক‌রো টুক‌রো হ‌য়ে গেল।

কথাও রাগ ক‌রে জে‌দি কণ্ঠে বলল,
‘এই রাগ আমার সা‌থে না দে‌খি‌য়ে সে‌দিন য‌দি সি‌ন্থিয়ার সা‌থে দেখা‌তে তাহ‌লে আজ তু‌মি আমার কা‌ছে পিওর মানুষ হ‌তে। লো‌কে ব‌লে পুরুষ রা‌গে হয় বাদশা আর নারী রা‌গে হয় বে**। তবে তু‌মি কেন পুরুষ বে** হ‌লে? খরবদার পৌরষত্ব আমার সা‌থে দেখা‌বে না। যখন সিন্থিয়ার সা‌থে দেখা‌নোর ছিল তখন বিড়াল হ‌য়ে গে‌ছিলে কেন? অবশ্য পৌরষত্ব তো দে‌খি‌য়ে‌ছ বিছানায়। সি‌ন্থিয়া সে‌দিন তোমার বিছানার টাই‌মিং এর বেশ প্রশংসা কর‌ছিল। অবশ্য প্রশংসা তো কর‌বেই, তু‌মি বিছানায় কতটা পারদর্শী তা আমার চে‌য়ে ভা‌লো কে জা‌নে?’

‌নিহাদ বেশ রাগ ক‌রে বলল,
‘কথা, রা‌গে তু‌মি কী বলছো তুমি জা‌নো না! ব‌স্তির মে‌য়ে‌দের ম‌তো কথা বলছো।’
কথা রা‌গের মাথায় নিহা‌দের টি-শা‌টের কলার ধ‌রে গা‌য়ের জো‌রে টান দি‌লে‌া। টি-শা‌র্টের ক‌য়েকটা বোতাম ছি‌ড়ে নি‌চে পড়ে গেল, সেখান থে‌কে বেশ খা‌নিকটা ছি‌ড়েও গেল।

কথা দাঁ‌তে দাঁত চে‌পে বলল,
‘ব‌স্তির লোক‌রাও কারও সা‌থে বিছানায় যাবার আগে হাজারবার ভা‌বে। তু‌মি একজন শিক্ষক হ‌য়ে কেন ভাব‌লে না? ব‌স্তির লো‌কেরা অর্থের অভা‌বে ব‌স্তি‌তে থা‌কে, তা‌দের শিক্ষা দিক্ষা কম, হয়‌তো শিক্ষার অভা‌বে তা‌দের কথা বল‌ার ধরণ কিছুটা নিম্ন কিন্তু তারা যখন তখন যে কারও বিছানায় যায় না।

আমি ব‌স্তির মে‌য়ে হ‌লে তু‌মি যার সা‌থে বিছানায় গি‌য়ে‌ছি‌লে সে একজন পতিতা। প‌তিতাটা শুধু তোমার সা‌থেই শোয়‌নি আরও একটা ছে‌লের সা‌থে শু‌য়ে‌ছিল। সে ছে‌লের সা‌থে এখনও তার সম্পর্ক চল‌ছে। তাকে ছাড়ার চেষ্টা কর‌ছে প‌তিতাটা। কিন্তু তোমার কাছ থে‌কে কো‌নো ক্লিয়া‌রেন্স না পে‌য়ে নি‌জের সম্পর্ক ছাড়‌বে না। তু‌মি তা‌কে হ্যাঁ বল‌লে সে তোমার হয়ে যা‌বে। যা-ও গি‌য়ে প‌তিতা‌টা‌কে হ্যাঁ ব‌লে দাও। অমন সুন্দর রমনী জীব‌নে পা‌বে না। দরকার হ‌লে বি‌য়ে ক‌রে, সারাজীবন নি‌জের কো‌লে ব‌সি‌য়ে রা‌খো।’

রা‌গে ‌নিহাদের শরীর কাঁপ‌ছে। ভাবল, এখা‌নে থাক‌লে কথাকে উল্টা পাল্টা কিছু ব‌লে ফেল‌বে। তাই ও রাগ ক‌রে সেখান থে‌কে চ‌লে গেল। ও বুঝল, কথা‌কে এখন কিছু বলা না বলা সমান। এখন যা-ই বল‌বে কথা সেটা নি‌য়ে বাড়াবা‌ড়ি কর‌বে। নিহাদ রু‌মে ‌গি‌য়ে ব‌সে রই‌ল। রাত দু‌টোর বে‌শি না বাজ‌লে নিহাদ এতক্ষ‌ণে বাই‌রে চলে যেত। কিন্তু এত রা‌তে বাই‌রে যাওয়াটা ঠিক হ‌বে না। তাছ‌াড়া ওর বাবা মা দেখ‌লে বিষয়টা ঠিক হ‌বে না। ত‌াই চুপ ক‌রে বিছানায় ব‌সে রইল।

রা‌গে কথার গা থে‌কেও আগুন বের হ‌চ্ছে। চুপ ক‌রে বারান্দায় দাঁড়ি‌য়ে রইল। ও ম‌নে ম‌নে বলল,
‘আমার এত রাগ লাগ‌ছে কেন? এত রাগ লাগার তো কথা না? আমি তো ঠান্ডা মাথায় নিহা‌দের সা‌থে কথা বল‌তে চে‌য়ে‌ছিল‌াম। তাহ‌লে হুট ক‌রে এত রাগ চে‌পে গেল কেন?’
প‌রক্ষণে ওর ম‌নে পড়ল, ওর শরী‌রে বর্তমা‌নে ছোট্ট একটা প্রা‌ণের বসবাস। তার কারণে শরী‌রের হর‌মো‌নে বড় ধর‌ণের প‌রিবর্তন হ‌চ্ছে। যে প‌রিবর্তন কথার ব্রেইন সহ‌জে নি‌তে পার‌ছে না। হুটহাট রাগ চে‌পে যায়। হুট ক‌রে মন ভা‌লো হ‌য়ে যায়। এই কান্না পায় তো এই হা‌সি। এ সময় মে‌য়েরা সব‌চে‌য়ে বে‌শি কা‌ছে চায় তার স্বামী‌কে। কথা সেটা তো পা‌চ্ছেই না বরং নিহাদ‌কে নি‌য়ে রা‌গে দুঃ‌খে আধা পাগল হওয়ার ম‌তো অবস্থা ওর।

বারান্দায় চেয়া‌রে ব‌সেই শব্দ ক‌রে কাঁদ‌তে লাগল। এ সময় এত মান‌সিক চাপ, এত মান‌সিক ধকল ন‌তে পারছে না ও। মাথাটা তীব্র যন্ত্রণায় ভোতা হ‌য়ে আছে। ক‌ান্নার দরুন কথার বারবার হিচকি। কথা ম‌নে মন বলল,
‘এত কেন কষ্ট হ‌চ্ছে আমার? নিহাদ তো বারবার বল‌ছে কেন এসব হ‌য়ে‌ছিল। তা-ও কেন আমার মন ওকে মাফ করতে পার‌ছে না?’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

কথার কান্নার বেগ বাড়‌তেই রইল। এম‌নি ওর মাথা ব্যথার সমস্যা, তারম‌ধ্যে এত কান্নার দরু‌ণ ওর মাথা এত যন্ত্রণা হ‌চ্ছে যেন ফেঁটে যা‌বে। দপদপ কর‌ছে মাথাটা। কথা মাথা চে‌পে ধ‌রে কাঁদ‌তে লাগল।

‌নিহাদ অনেকক্ষণ ব‌সে রইল। কথার কান্না আর সহ্য কর‌তে না পে‌রে ওর কা‌ছে আসল। দেখল কথা বাই‌রের দি‌কে তা‌কি‌য়ে অর্নগল কেঁ‌দেই যা‌চ্ছে। নিহাদ, কথার হাত ধ‌রে বলল,
‘ঘ‌রে চ‌লো।’

কথা ঝটকা মে‌রে হাত ছা‌ড়ি‌য়ে নিল। নিহাদ আবার হাত ধরল। কথা আব‌ার ছা‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। এব‌ার নিহাদ হাঁটু গে‌ড়ে ফ্লো‌রে বসে কথার পা দু‌টো জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌প্লিজ কথা, একটাবার ক্ষমা ক‌রে দাও। ভুল ক‌রে‌ছি, পাপ করে‌ছি, মহা অন্যায় ক‌রে‌ছি তুুমি আমা‌কে যা খু‌শি শা‌স্তি দাও। তা-ও নি‌জেকে কষ্ট দিও না। প্লিজ কথা।’

‌নিহাদ কথার পা জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে‌ছে। বিষয়টা ও নি‌তে পারল না। বরাবরই বাঙালী মে‌য়েরা স্বামীর ক্ষে‌ত্রে একটু বে‌শি আবেগী। কথাও তার বিপরীত নয়। কথা নি‌জেও হাঁটু গে‌ড়ে বসে নিহাদ‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে হাউমাউ ক‌রে কাঁদ‌তে লাগল। নিহা‌দের কপা‌লে, গা‌লে, চো‌খে অসংখ্য চুমু‌তে ভ‌রি‌য়ে দি‌তে লাগল। আর কাঁদ‌তে কাঁদ‌কে বল‌তে লাগল,
‘আমি তোমায় প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সি। সবার চে‌য়ে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি। যতটা ভা‌লোবা‌সি কষ্টও ততটা হচ্ছে। বিশ্বাস করো তোমা‌কে ক্ষমা করার চেষ্টা করে‌ঠি কিন্তু এত দ্রুত এত সহ‌জে ক্ষমা কর‌তে পারব না আমি।’

‌নিহাদ কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে বলল,
‘‌তোমার আমা‌কে ক্ষমা কর‌তে হ‌বে না। তু‌মি আমা‌কে যতখু‌শি শা‌স্তি দাও, তা-ও নি‌জে‌কে সুস্থ রা‌খে‌া।’
দুজ‌নেই দুজন‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে অঝো‌ড়ে কাঁদ‌তে লাগল।

‌কিছুক্ষণ পর নিহাদ দাঁ‌ড়ি‌য়ে কথা‌কে কো‌লে তু‌লে নি‌লো। কপা‌লে চুমু এঁকে ভিত‌রে নি‌য়ে গি‌য়ে‌ বিছানায় শুই‌য়ে দি‌য়ে নি‌জেও শু‌য়ে ওকে বু‌কের মা‌ঝে জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। অনেকক্ষণ কান্না করার কার‌ণে কথা কিছু‌ক্ষণ পর পর কেঁ‌পে কেঁ‌পে উঠ‌ছে আর নিহাদ আরও ভ‌া‌লো‌বে‌সে ওকে বু‌কের মা‌ঝে জ‌ড়ি‌য়ে‌ নি‌চ্ছে।

২৩!!
হঠাৎ একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জে‌গে উঠল তূবা। শরীর ঘে‌মে যেন গোসল ক‌রে‌ছে ফে‌লে‌ছে। পা‌শে থাকা পা‌নির বোতল থে‌কে ঢকঢক ক‌রে পা‌নি খে‌ল। বিছানা থে‌কে উঠে গা‌য়ের জামাটা পা‌ল্টে নি‌লো। ঘা‌মে ভি‌জে চুপচু‌পে হ‌য়ে গে‌ছে। ওর বাবা‌কে আর শ্রাবণ‌কে নি‌য়ে খুব বাজে স্বপ্ন দে‌খে‌ছে। খুব খারাপ। মনটা খুব কু ডাকছে ওর। ওর বাবা শ্রাবণ‌কে মার‌ছে, খুব মার‌ছে। শ্রাবণ রক্তাক্ত অবস্থায় প‌ড়ে আছে, তবুও ওর বাবা ওকে মার‌ছে। তূবা ঘনঘন নিঃশ্বাস নি‌চ্ছে।

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।

এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চলবে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ২০

তূবার ঘুমটা এমনভা‌বে ভাঙল যে এখন আর ঘুম আস‌ছে না। প্রচন্ড অস্থিরতায় রু‌মের ম‌ধ্যে পায়চা‌রি কর‌তে লাগল। ফোনটা হা‌তে নি‌য়ে ভাবল শ্রাবণ‌কে কল কর‌বে কি কর‌বে না? শ্রাবণ‌কে কল কর‌তে গে‌লেই সবসময় দ্বিধায় ভো‌গে ও। বি‌শেষ ক‌রে ওর প্র‌তি শ্রাব‌ণের অনুভূতি জানার পর থে‌কে। ত‌বে এখন একবার ওর সা‌থে কথা বল‌তে পার‌লে মনটা ভা‌লো লাগত ‌সেটা ম‌নে হ‌চ্ছে ওর।

ও, শ্রাব‌ণের ফোন নাম্বারটা ডায়েল লি‌স্টে উঠি‌য়ে আবার কে‌টে দি‌চ্ছে। এরকম বেশ কয়েকবার কর‌তে গি‌য়ে একব‌ার কল চ‌লে‌ই গেল। তূবা কলটা কে‌টে দিলো। ভাবল শ্রাবণ কল ব্যাক কর‌লে কথা বল‌বে নয়‌তো বল‌বে না। কিন্তু ওর মনটা এত ছটফট‌ কর‌ছে যে, অব‌চেতন ম‌নে আবার কল ক‌রে বসল। এবার আর কল কাটল না। রিং হ‌তে থাকল। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর কল রি‌সিভ করল শ্রাবণ। ঘুম জড়‌া‌নো ক‌ণ্ঠে বলল, ‘হ্যা‌লো।’

তূবা, শ্রাব‌ণের এমন ঘুম জড়া‌নো কণ্ঠ শু‌নে চম‌কে উঠল। এত ভা‌লো লাগল শ্রাব‌ণের কণ্ঠটা। ঠিক যেন খেয়ে ফেলা যায় এমন ভা‌লো। তূবা বেশ স্বাভা‌বিক ক‌ণ্ঠে বলল, ‘ঘুমা‌চ্ছিস?’
‘না ঐশ্ব‌রিয়া রা‌য়ের সা‌থে ডিনার ডে‌টে আছি। চি‌কেন লেগ‌পি‌চে মাত্র কামড় বসা‌তে যা‌চ্ছিলাম, ওম‌নিতে তু‌মি কল করলা।’

তূবা বেশ বিরক্ত হ‌য়ে বলল, ‘এগুলা কেমন কথা?’
‘রাত তিনটার সময় কল করে কেউ য‌দি জি‌জ্ঞেস ক‌রে তো কী বল‌বো?’
তূবা বেশ রাগ ক‌রে বলল, ‘আমার ভুল হ‌য়েছে তো‌কে কল কর‌া। আমারই মাথা খারাপ হ‌য়ে‌ছে যে, মন তো‌কে দেখ‌তে চাইল।’

তূবা রাগ ক‌রে কলটা কে‌টে দিলো। ততক্ষ‌ণে তূবার কথা শু‌নে শ্রাব‌ণের ঘুম পু‌রোপু‌রি উড়ে গেছে। তূবা একা ব‌সে ব‌সে নি‌জে‌কে গা‌লি দি‌তে দি‌তে বলল, ‘আরও পছন্দ কর, জুনিয়ার‌কে। তা-ও কেমন জু‌নিয়ার? দু‌নিয়ার সব‌চয়ে বান্দর ছে‌লেটা। ধূর! কেন যে কল করলাম? কী ভাবল স্টু‌পিডটা কে জা‌নে?’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

শ্রাবণ বিছ‌ানা ছে‌ড়ে পা টি‌পে টি‌পে মূল দরজার কা‌ছে আসল। কিন্তু দরজায় বড় তালা ঝুল‌ছে। তালার চা‌বি থা‌কে ওর বাবা-মা‌য়ের রু‌মে। শ্রাব‌ণের এত রাগ হ‌লো। বিড়‌বিড় ক‌রে বলল, ‘ঘ‌রের ভিতর থে‌কে তালা কেন মারা লা‌গে? এম‌নি ছিট‌কি‌নি দি‌লেই তো হয়। এখন বাবা-মা‌য়ের রু‌মে গি‌য়ে চা‌বি আনা অসম্ভব! তা‌রা কিছু জি‌জ্ঞেস কর‌লে কী বল‌ব? রাত তিনটার সময় তা‌দের হবু বউ মা‌য়ের সা‌থে দেখা কর‌তে যাচ্ছি? এ কথা বল‌লে মা ঝাড়ু দি‌য়ে দি‌বে আর বাবা ঘর থে‌কে বের ক‌রে দি‌বেন।’

বাধ্য হ‌য়ে শ্র‌াবণ আবার নি‌জের রুমে আসল। তারপর নি‌জের রু‌মের জানালার দি‌কে তাকা‌তেই দুষ্টু হাসল। ওর রু‌মের পশ্চিম দি‌কে জানালাটায় গ্রিল দেওয়া নেই। ও-ই দি‌তে নি‌ষেধ ক‌রেছিল। তখন এম‌নই দি‌তে নি‌ষেধ ক‌রে‌ছিল। তখন এ কার‌ণে বাবা খুব বক‌লেও ব‌লেছিল ওর গ্রিল ছাড়া জানালা‌ ভা‌লো লা‌গে। রু‌মের দু‌টো জানালার অন্তত একটা জানালা গ্রিল ছাড়া থাক। ছে‌লের অনু‌রো‌ধ শ্রাব‌ণের মা শ্রাবণী রাখ‌লেন। য‌দিও শ্রাবণের বাবার খুব আপ‌ত্তি ছিল। চোর ডাকাত ঢোকার ভয় থা‌কে। কিন্তু শ্রাবণীর কথা তি‌নিও না রে‌খে পারলেন না। সবার আদ‌রের ছে‌লে আবদার ক‌রে‌ছে, না রে‌খে যা‌বে কোথায়?

শ্রাবণ বিড়‌বিড় ক‌রে বলল, ‘কে জানত সে‌দিন সাধারণ ভা‌লো লে‌গে করা কাজটা আজ এত গুরুত্বপূর্ণ কা‌জে লাগ‌বে? বাহ্ শ্র‌াবণ! তুই জি‌নিয়াস।’

শ্রাবণ জানালা টপ‌কে বাই‌রে নামল। কিন্তু নাম‌তে গি‌য়ে গোলাপ কাটায় আট‌কে গেল। জ‌ানালার পা‌শেই ঝো‌পের ম‌তো একটা গোলাপ গাছ। শ্রাবণ সাবধা‌নে নামার চেষ্টা কর‌লেও শেষ রক্ষা হ‌লো না। সেই গোলাপ কাটায় আট‌কে গেল। গা‌য়ের, পা‌য়ের বেশ ক‌য়েক জায়গায় কাঁটা ব‌সে ছি‌লে গেল। সেসব জায়গা খুব জ্বল‌ছে। কিন্তু এখন সেসব খেয়াল করার সময় ওর নেই। শ্রাবণ রা‌গে কিড়‌মিড় কর‌তে কর‌তে বলল, ‘আমার প্রে‌মের প‌থে এত কাঁটা কেন?’

‌নি‌জে‌কে কাঁটা থে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে হাঁট‌তে নি‌য়ে দেখল। ও জুতাও পা‌য়ে প‌ড়ে‌নি। শ্রাবণ দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘আজ রাতটাই খারাপ। প্রথমবার প্রে‌মিকা বলল, আমা‌কে দেখ‌তে চায় অথচ দেখ, তা‌কে দেখ‌তে যে‌তে গি‌য়ে কত বাঁধার সম্মু‌খীন হ‌চ্ছি।’

নিজেদের বা‌ড়ির রাস্তা পে‌রি‌য়ে তূবা‌দের রাস্তায় পা দিতেই ব্যথায় শরীর কাঁটা দি‌য়ে গেল। রাস্তাটা নতুন করা হ‌চ্ছে। সে কারণে কেবল ইট ভাঙা খোয়া বি‌ছি‌য়ে‌ছে। রোলার দি‌য়ে তা পিষ্ট ক‌রে‌নি। খোয়া বিছানো রাস্তায় মা‌নে ইট ভাঙার টুক‌রো বিছা‌নো রাস্তায় যে একবার খা‌লি পা‌য়ে হেঁ‌টেছে কেবল সে-ই জা‌নে কত মজা! সূচা‌লো খোয়ার আঘা‌তে শ্রাবণের পায়ে সুই এর ম‌তো বিদছে। শ্রাবণ রাস্তার একদম পাশ দি‌য়ে হাঁট‌তে লাগল। এখা‌নে মা‌টি। খোয়া কম। কিন্তু তা-ও মা‌ঝে মা‌ঝে দুই একটা খোয়ার উপর পা পড়‌লে প্রাণটা টনটন ক‌রে ওঠে।

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

অব‌শে‌ষে এত ক‌ষ্টের পর তূবা‌দের বা‌ড়ি পৌঁছা‌লো। সাম‌নের গে‌টে বড় তালা ঝুল‌ছে। তালার পা‌শে দা‌রোয়ান নাক ডে‌কে বে‌ঘো‌রে ঘুমা‌চ্ছে। শ্রাবণ বা‌ড়ির পিছ‌নে গেল। দেয়াল টপ‌কে বা‌ড়ির ম‌ধ্যে গি‌য়ে সোজা তূবার রু‌মের কা‌ছে গেল। তূবার জানালার পা‌শে দাঁড়া‌তেই ম‌নে হ‌লো মশারা ওকে রা‌তের ডিনার ভে‌বে পরম ভা‌লোবাসায় জ‌ড়ি‌য়ে নি‌লো। মশা‌দের হাত দি‌য়ে তা‌ড়ি‌য়ে প‌কে‌টে হাত দি‌লো ফোন দি‌য়ে তূবা‌কে কল কর‌বে ক‌রে। কিন্তু প‌কে‌টে হাত দি‌য়ে বুঝল আজ‌কের রাত ওর জীব‌নের চরম খারাপ রাত। কারণ তাড়াহু‌ড়োয় ফোনটা হয়‌তো বাসায় ফে‌লে এসে‌ছে।

শ্রাবণ জানালায় টোকা দি‌তে গি‌য়ে ভাবল, ‘তূবা যদি চোর ডাকাত ভে‌বে ভয় পায়? কিন্তু এত দূর এসে দেখা না ক‌রে যাব?’
খুব ভ‌য়ে ভ‌য়ে জানালায় টোকা দি‌য়ে ধী‌রে ধী‌রে ডাকল, ‘তূবা! তূবা!’

‌কিছুক্ষণ যাবত তূবা ব‌সে ব‌সে ফোন টিপ‌ছিল। জানালায় টোকার শব্দ পে‌য়ে ভ‌য়ে একদম জ‌মে গেল। ভাবল হয়তো চোর ঢোকার চেষ্টা কর‌ছে। তূবা আর খেয়াল ক‌রে আওয়াজ শুন‌লো না। ওদি‌কে শ্রাবণ খুট খুট শব্দ ক‌রে জানালায় টোকা দি‌য়েই যা‌চ্ছে। ভ‌য়ে তূবা রুম থে‌কে বের হ‌য়ে গেল। ও স্ব‌প্নেও ভা‌বে‌নি ওর ছোট্ট একটা কথা‌কে শ্রাবণ এত গুরুত্ব দি‌য়ে, রাত সা‌ড়ে তিনটার পর ওর বা‌ড়ি পর্যন্ত চ‌লে আস‌বে। তূবা রুমের বাই‌রে গি‌য়ে ওর ছোট চা‌চি তা‌মিমার দরজায় টোকা দি‌লো। তি‌নি দরজার খোলার সা‌থে সা‌থে ফিস‌ফিস করে বলল, ‘চা‌চি আমার রু‌মের জানালা কে‌টে চোর ঢোকার চেষ্টা কর‌ছে।’

‌তি‌নি বেশ চম‌কিত হ‌য়ে ওর চাচা‌ আরিফ সা‌হেব‌কে ডেকে তা‌কে বিষয়টা বলল। তি‌নি গি‌য়ে তূবার বাবা‌কে ডে‌কে সবটা বলল। তা‌রিক সা‌হেব আরিফ‌কে বলল,
‘আ‌রিফ তুই দ‌ক্ষিন দিক দি‌য়ে যা আর আমি উত্তর দিক দি‌য়ে যা‌চ্ছি। লাইট জ্বালা‌বি না। অন্ধকা‌রে শালা‌কে পাকরাও করব। আর তা‌মিমা তু‌মি পু‌লিশ‌কে কল ক‌রো।’
তা‌মিমা বলল,
‘আচ্ছা দাদা।’

তারা প‌রিকল্পনা মতো প্রথ‌মে দেখল কতজন। বা‌ড়ির চারপা‌শে এম‌নি লাইট জ্বল‌ছে। যার কার‌ণে চারপাশ দেখা যাচ্ছে। সা‌থে শ্রাবণ‌কেও কিন্তু শ্রাবণ হুডিওয়ালা জ্যা‌কেট পরার কার‌ণে ওর চেহারা দেখ‌তে পে‌ল না। তারা দুজন ধী‌রে ধী‌রে ওর দি‌কে এগো‌তে লাগল। শ্রাব‌ণের ভাগ্য ভা‌লো ছিল যে, আরিফ আস‌তে গে‌লে ওর গা‌য়ে লে‌গে দেয়া‌লের সাথে থাকা একটা টি‌নের ভাঙা অংশ প‌ড়ে যায়। যার শ‌ব্দে শ্রাবণ দ‌ক্ষিন দিকে তা‌কি‌য়ে কেউ আস‌ছে দে‌খেই ভো দৌড় দি‌লে‌া। ওর সা‌থে সা‌থে আ‌রিফ ও তা‌রিক সা‌হেবও দে‌ৗড় দি‌লো।

শ্রাবণ কো‌নো দেয়াল টপ‌কে দৌড়া‌তে লাগল। অারিফ, তা‌রিক সা‌হে‌বের চোর… চোর… ব‌লে চিল্ল‌া‌নী‌তে আশে পা‌শে বা‌ড়ির লোকও ‌নে‌মে গেল। শ্রাবণ অবস্থা বেগ‌তিক দে‌খে বড় রেই‌ট্রি গা‌ছের আড়া‌লে লু‌কি‌য়ে গেল। প‌রে হু‌ডি খু‌লে ভীড়ের মা‌ঝে ও-ও চোর চোর ব‌লে চিল্লা‌তে লাগল।

কতক্ষণ সবাই চিল্লাপাল্লা ক‌রে খোঁজাখুজি ক‌রে কাউ‌কে না পে‌য়ে যে যার ঘ‌রে গেল। শ্রাবণ নি‌জের বা‌ড়ির ম‌ধ্যে গি‌য়ে ‌দেখল ঘ‌রের লাইট জ্বল‌ছে। চো‌রের খবর শু‌নে যে ওদের বা‌ড়ির লোকও জে‌গে গে‌ছে তা‌তে স‌ন্দেহ নেই। তাছাড়া রাত প্রায় শেষ শেষ। চার‌দি‌কে ফজ‌রের আযানও দি‌চ্ছে।

ও জানালার পাশে গি‌য়ে আবার গোলাপের কাটায় গুতা খে‌য়ে জানালা টপ‌কে রু‌মে ঢুকল। দেখল ঘ‌রের ম‌ধ্যে ওর বাবা মা কথা বল‌ছে। শ্রাবণ নি‌জের রুমের ল‌াইট জ্বালা‌তেই ভূত দেখার ম‌তো চমকা‌লো। কারণ বর্ষণ ওর রু‌মে ব‌সে আছে। শ্রাব‌ণের গলা শুকি‌য়ে কাঠ হ‌য়ে গে‌ছে। ধরা প‌ড়ে জে‌লে যাবার ভ‌য়ে ও এটা পর্যন্ত খেয়াল ক‌রে‌নি রাস্তায় কো‌নো কা‌ঁচের টুকারায় লে‌গে ওর পা কে‌টে ক্ষত বিক্ষত হ‌য়েছে। সেখান থে‌কে অর্নগল রক্ত ঝর‌ছে।

বর্ষণ রাগী চো‌খে ওর তা‌কি‌য়ে বলল, ‘‌চোরটা তাহ‌লে তুই ছি‌লি?’
বর্ষণ মাথা নিচু ক‌রে রইল। বর্ষণ আবার বলল, ‘তূবার সা‌থে দেখা কর‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লি?’
শ্রাবণ মাথা নে‌ড়ে বলল,
‘হ্যাঁ।’

বর্ষণ ঠাস ক‌রে শ্রাব‌ণের গা‌লে চড় ব‌সি‌য়ে দি‌য়ে বলল, ‘সবার শোর‌গো‌ল শু‌নে বাবা তো‌কে ডাক‌তে বললে আমি রু‌মে এসে তো‌কে পাই‌নি। ওয়াশরুমেও ছি‌লি না। দেখলাম জানালা খোলা, ফোন বিছানার উপর। যদিও তখন এসব কিছু বুঝ‌তে পা‌রি‌নি। এখন তো‌কে জানালা টপ‌কে আস‌তে দে‌খে সব প‌রিষ্কার ব‌ুঝলাম। ত‌বে আমি আগেই বু‌দ্ধি‌করে বাবা-মা‌কে ব‌লে‌ছি ত‌ুই, ঘুমা‌চ্ছিস তো‌কে যেন না জাগায়।

অাজ আমি বিষয়টা হ্যা‌ন্ডেল না কর‌লে বাবা-মা সবটা জে‌নে যেত। বাবা-মা‌য়ের জানার বিষয় বাদ দে। তুই ধরা প‌ড়ে গে‌লে কোথ‌ায় থাক‌তি? একবার জীব‌নে ল‌াল কা‌লীর দাগ পড়‌লে ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহ হ‌তে পার‌তো তা বুঝ‌তে পার‌ছিস? তোর ভ‌বিষ্যৎ নষ্ট হ‌য়ে যেত। জেল লাল কা‌লী এসব ছাড়, তা‌রিক চাচ্চু তো‌কে ধর‌তে পারলে আমা‌দের প‌রিবা‌রের সব রাগ তোর উপর উগ‌ড়ে দি‌তো। তোর লাশটাও পেতাম না। তো‌কে ক‌দিন যাবত কত বুঝা‌চ্ছি তুই বুঝ‌তে পার‌ছিস না?‌ কেন কর‌ছিস এমন ছাগলা‌মি? আজ তোর কিছু হ‌য়ে গে‌লে আমরা কী করতাম?’

শ্রাবণ মাথা নিচু করেই রইল। বর্ষণ ওকে মে‌রে‌ছে। ওর চোখ থে‌কে টপটপ পা‌নি পড়‌ছে। ঘ‌রের সবার খুব আদ‌রের শ্রাবণ। সবার ছো‌টো সবার সুবা‌দে সবার খুব আদ‌রেরও। ছো‌টো বেলা থে‌কে কেউ কখনও ওর গায়ে হাত তো‌লে‌নি। কথা যা-ও মে‌রেছে কারণ ওদের বয়স ডিফা‌রেন্স কম কিন্তু বর্ষণ কো‌নো দিনও শ্রাবণ‌কে মা‌রে‌নি। শ্রাব‌ণের সব আবদার বর্ষণ সা‌থে সা‌থে পূরন করে। বড় ভাই না বাবার ম‌তো স্নেহ ক‌রে। সেই ভাই ওকে মে‌রে‌ছে। শ্রাব‌ণের ফর্সা মুখটা মুহূ‌র্তেই লাল হ‌য়ে গেল।

বর্ষ‌ণেরও খারাপ লাগল নি‌জের প্রা‌ণের চে‌য়ে প্রিয় ভাই‌য়ের গা‌য়ে হাত তু‌লে। বর্ষণ, শ্রাব‌ণের কা‌ছে এসে ওর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
‘ব্যথা পে‌য়ে‌ছিস?’

শ্রাবণ মাথা নিচু ক‌রে রইল। বর্ষণ, শ্রাব‌ণের পা‌য়ের দি‌কে তাকা‌তেই দেখল শ্রাবণের পা থে‌কে রক্ত ঝ‌রে ফ্লোর ভে‌সে যা‌‌চ্ছে। বর্ষণ আত‌কে উঠল। তাড়াতা‌ড়ি শ্রাবণ‌কে ব‌সি‌য়ে বলল,
‘‌তোর পা কীভাবে কাটল?’
পরক্ষ‌ণে বর্ষণ নি‌জে নি‌জে বলল,
‘বুঝ‌তে পে‌রেছি। চল ওয়াশরুমে।’

বর্ষণ নি‌জেই শ্রাবণ‌কে ধ‌রে বাথরু‌মে নি‌য়ে বলল,
‘পা ভা‌লো ক‌রে প‌রিষ্কার করে নে। কাঁদা ময়লায় ভ‌রে আছে।’
তারপর রু‌মে এনে বিছানায় ব‌সি‌য়ে নি‌জেই ড্রে‌সিং ক‌রে ওর পা বেঁ‌ধে দি‌লো। তারপর বলল, ‘অনেকখা‌নি কে‌টে গে‌ছে। টি‌টেনাস নি‌তে হ‌বে। সকা‌লে হস‌পিটা‌লে নি‌য়ে যাব। পুরো পা দেখ‌ছি জায়গায় জায়গায় ছি‌লে গে‌ছে।’

বর্ষণ যত্ন ক‌রে ছি‌লে যাওয়া অং‌শে ওষুধ লাগাতে লাগা‌তে বলল,
‘‌আর কখ‌নো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট চু‌রি কর‌তে যাস‌নে।’
‘শ্রাবণ চ‌ুপ।’

বর্ষণ শ্রাব‌ণের পা‌শে ব‌সে বলল, ‘ভাই, তুই আগুন নি‌য়ে খেল‌ছিস। যে আগু‌নে শুধু তুই না দুই প‌রিবারই জ্বল‌বে।’
শ্রাবণ শক্ত ক‌ণ্ঠে বলল,
‘আ‌মি আগুন জ্বল‌তে দিব না। আমি তূবা‌কে ভা‌লোবা‌সি।’

শ্রাব‌ণের দৃঢ়তা দে‌খে বর্ষ‌ণের ভয় হ‌লো। নি‌জের একমাত্র ভাই‌কে হারা‌নোর ভয়। প্রচন্ড ভয়! বর্ষণ বলল, ‘ভাই, জানিস যখন তোর জন্ম হ‌লো তখন আমার বয়স আট বছর। তুই এত ফর্সা হ‌য়ে‌ছি‌লি যে আমাদের প‌রিবা‌রের সবাই অবাক হ‌য়ে‌ছিলাম। কারণ আমি আর কথা তো অত ফর্সা না। শ্যামলা আমর‌া।‌ সেখা‌নে তুই হ‌লি দু‌ধের ম‌তো ফর্সা। আমরা দুই ভাই বোন তো‌কে পে‌য়ে তখন চাঁদ হা‌তে পেলাম। কথা তখন তিন বছ‌রের বাচ্চা হওয়া স‌ত্ত্বেও তো‌কে অনেক কেয়ার করত। আমরা দুই ভাই বোন তোকে এমন ক‌রে আগ‌লে রাখতাম যেন য‌ক্ষের ধণ।

তোর গা‌য়ে কখনও হাত তু‌লি‌নি অামি। ছো‌টো থে‌কে কো‌লে ক‌রে মানুষ ক‌রে‌ছি তো‌কে। তুই জ‌ন্মের পর তোর চাওয়াকেই আমরা সবাই সবার আ‌গে প্রধান্য দেই। তুই আমা‌দের ততটা প্রিয়। বাসার সবার আদ‌রের তুই। বল‌তে পা‌রিস আমা‌দের প্রাণ তুই। তোর কিছু হ‌লে আমা‌দের ভা‌লো থাকা সম্ভব না।

তূবার স্থা‌নে অন্য কো‌নো মে‌য়ে হ‌লে আমি নি‌জে তোর বি‌য়ে দিতাম। তুই য‌দি বল‌তি এখন ত‌বে এখন বি‌য়ে দিতাম। তা‌তে বাবা মা‌য়ের মতাম‌তের কথা ভাবতাম না। তুই নি‌জের পা‌য়ে না দাঁড়া‌নো পর্যন্ত তো‌দের সব খরচ আমি বহন করতাম। কিন্তু তুই এমন একজন‌কে ভা‌লো‌বে‌সে‌ছিস যার দ্বারা শুধু প‌রিবা‌রে কল‌হই সম্ভব হ‌বে। দুই প‌রিবা‌রে কলহ হ‌বে, তোর প্রাণটাও থাক‌বে না। তূবার বাবার জন্য তোর প্রাণ নেওয়া ছে‌লের হাতের মোয়া মাত্র। তো‌কে হারা‌তে পারব না। সে জন্য কড়া ক‌রে বললাম তূবা‌কে ভু‌লে যা। আজ শেষ বা‌রের ম‌তো বললাম। এর প‌রেরবার বাবা-মা‌কে বিষয়টা জানাব।’

বর্ষণ আরও কড়া ক‌রে কিছু কথা ব‌লে রুম থে‌কে চলে গেল। শ্রাবণ বিছানায় গা এলিয়ে দি‌লো। কিছুক্ষণ পর বর্ষণ আব‌ার আসল। একটা ব্যথার আর গ্যা‌স্টি‌কের ওষুধ দি‌য়ে বলল,
‘‌খে‌য়ে নে। ব্যথা ক‌মে যা‌বে।’
শ্রাবণ ওষুধ খে‌য়ে আবার শু‌য়ে পড়ল। বর্ষণ, শ্রাব‌ণের রু‌মের ফ্লো‌রে প‌ড়ে থাকা রক্ত, কাঁদা ময়লা ‌ভেজা কাপড় দি‌য়ে প‌রিষ্কার রু‌মের লাই নি‌ভি‌য়ে দরজা ভে‌জি‌য়ে চ‌লে গেল।’

শ্রাবণ ঘুমা‌তে নি‌য়ে আবার ফোনটা হা‌তে নি‌য়ে তূবা‌কে কল করল। তূবা কল রি‌সিভ ক‌রে বলল,
‘জা‌নিস, আমা‌দের বা‌ড়ি‌তে আজ চোর এসে‌ছিল।’
শ্রাব‌ণের এত রাগ উঠল যে, রা‌গের চো‌টে বলল,
‘বা‌লের মায় এসে‌ছিল! স্টু‌পিড মে‌য়ে আমি গেছিল‌াম। ঢঙ কর‌তে কেন বল‌ছিল‌া, আমা‌কে দেখ‌তে মনচায়? তোমার মন রক্ষা করতে গি‌য়ে আধ‌ামরা হয়ে বিছ‌ানায় প‌ড়ে আছি। আধপাগল মে‌য়ে। মাথার ম‌ধ্যে গোবর খা‌লি।’

শ্রাবণ ফট করে ‌ফোন কে‌টে দি‌লে‌া। তূবা হা হয়ে কিছুক্ষণ ‌ফো‌নের দি‌কে তাকি‌য়ে রইল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌শীট! শীট! আমি এতবড়ো গাধামি কেম‌নে করল‌াম? ভু‌লেই গে‌ছিলাম ঐ উজবুকটার জানালার কা‌ছে আসার অভ্যাস আছে। না জা‌নি বেচারার কী হাল? ইশ! সকাল না হ‌লে তো দেখ‌তে যে‌তেও পারব না।’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

২৪!!
সকা‌লে ঘুম থে‌কে উঠেই কথা আবার ব‌মি কর‌তে লাগল। নিহাদ বুকে পি‌ঠে মা‌লিশ ক‌রে দি‌চ্ছে। ব‌মি কর‌তে কর‌তে জানটা বোধ হয় বে‌রি‌য়ে যা‌বে ওর। কথার এত রাগ লাগ‌ছে যে, নিহাদ‌কে বল‌তে মন চা‌চ্ছে, কি জি‌নিস পে‌টে ঢুকি‌য়ে দি‌য়ে‌ছো তু‌মি? আমার তো জানটাই বের ক‌রে দি‌বে। কিন্তু বল‌তে পারল না। ব‌মি ক‌রে ক্লান্ত হ‌য়ে বিছানায় শু‌য়ে পড়ল।

নিহাদ বাথরু‌মের বমিটা প‌রিষ্কার ক‌রে কথার কা‌ছে আসে ব‌সে বলল, ‘কথা, চ‌লো ডাক্তার দে‌খি‌য়ে আসি।’
কথা বেশ তেজ দে‌খি‌য়ে বলল, ‘‌কো‌নো দরকার নেই।’
‘‌প্লিজ কথা।’
‘না মা‌নে না। যাব না মা‌নে যাব না।’

ম‌নে ম‌নে বলল, ‘‌যা‌কে পৃ‌থিবী‌তেই আনব না, তা‌র প্র‌তি আমি আর মায়া বাড়া‌তে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব কাজটা কর‌তে হ‌বে। এ সপ্তা‌হের ম‌ধ্যেই হস‌পিটা‌লে যে‌তে হ‌বে। তার আগে ঐ প্র‌স্টি‌টিউটটা‌কে শা‌স্তি দি‌তে হ‌বে। আমার সন্তান পৃ‌থিবী ত্যাগ করার আগে, ওর পৃ‌থিবী ত্যাগ করার কারণটা‌কে চরম শা‌স্তি দি‌তে হ‌বে। ও যে পদ্ধতি‌তে আমার থে‌কে আমার স্বামী‌কে ‌কে‌ড়ে নি‌য়ে‌ছে আমি সেই পদ্ধ‌তি‌তে ওর থে‌কে ওর ভা‌লোবাসা কে‌ড়ে নিব। কু‌ত্তিটাকে চরম শা‌স্তি না দি‌য়ে শা‌ন্তি পা‌চ্ছি না।’

‌নিহা‌দের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল, ‘‌নিহাদ তোমার ক্লাস নেই আজ?’
‘আ‌ছে।’
‘তাহলে যাও রে‌ডি হও।’
দীর্ঘশ্বাস ফে‌লে নিহাদ বলল, ‘সরাস‌রি ব‌লো তু‌মি একা থাক‌তে চা‌চ্ছো।’
‘হ্যাঁ।’

নিহাদ রুম থে‌কে বের হ‌তেই কথা কান্না ভেঙে পড়ল। বা‌লি‌শে মুখ চে‌পে পে‌টে হাত দি‌য়ে কেঁ‌পে উঠল। ও একটা খুন কর‌তে যা‌চ্ছে। একটা প্রাণ‌কে মার‌তে যা‌চ্ছে। কথা উঠে বসল। আয়নার সাম‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে নিজের প্র‌তিচ্ছ‌বির দি‌কে তাকাল। এক হাত পে‌টে রে‌খে আরেক হাত মুখে রে‌খে মুখ চে‌পে কাঁদ‌তে লাগল।

কিছুক্ষণ কান্নার পর আয়নার দি‌কে তা‌কি‌য়ে পে‌টে হাত দি‌য়ে বলল, ‘‌বিশ্বাস কর বাবা, তো‌কে আমি মার‌তে চাই না। তুই যে আমারও প্রাণ। তো‌কে মারার পর আমিও যে জীবন্ত লাশ হ‌য়ে বেঁ‌চে থাকব। কিন্তু তোর বাবা‌কে শা‌স্তি দি‌তে হ‌বে। চরম শাস্তি। অনে‌কে ব‌লে না চো‌রের উপর রাগ ক‌রে মা‌টি‌তে ভাত খেও না। আমিও তেমন সিদ্ধান্ত নি‌তে যা‌চ্ছি। তুই তোর মা‌কে একদম ক্ষমা কর‌বি না। তোর মা‌য়ের না‌মে আল্লাহর কা‌ছে ক‌ঠিন বিচার দি‌বি। আল্লাহ যা‌তে তোর মা‌কেও শা‌স্তি দেয়। অবশ্য শা‌স্তি তো দি‌চ্ছেন। সারাজীবন দি‌বেন।’

কথা পে‌টে হাত দি‌য়ে অঝো‌রে কাঁদ‌তে লাগল। একজন মা-ই জা‌নেন সন্তা‌নের মূল্য। নি‌জের মা‌ঝে আরেকটা প্রাণ ধারণ ক‌রে সে প্রাণ‌কে প্রাণহীন কর‌তে গে‌লে বু‌কে কতটা পাথর চাপা দি‌তে হয়, তা এ ম‌ুহর্তে কেবল কথা বুঝ‌তে পার‌ছে! দরজার আড়াল থে‌কে দু‌টো চোখ সব দেখল, সব শুনল, সব বুঝল।

‌নিহা‌দের বাবা, নয়ন সা‌হেব ব‌সে ব‌সে খব‌রের কাগজ পড়‌ছেন। নিহাদ তার কা‌ছে গি‌য়ে ব‌সে বলল,
‘নাস্তা ক‌রে‌ছো, বাবা?’
‘না। তুই?’
‘না। তোমার সা‌থে করব।’
‘কথা‌ এখন কেমন আছে?’
‘‌একটু ভা‌লো।’
‘ডাক্তার কা‌ছে নি‌য়ে যা।’
‘‌যে‌তে চা‌চ্ছে না।’
‘‌তো‌দের মা‌ঝে ঝগড়া হ‌য়ে‌ছে?’
‘না বাবা।’
‘ম‌নোমা‌লিণ্য চল‌ছে?’
‘‌নিহাদ নিশ্চুপ।’

নয়ন সা‌হেব হে‌সে বলল,
‘বউ‌য়ের সা‌থে রাগ বে‌শি‌দিন পু‌শি‌য়ে রা‌খিস না। সম্প‌র্কে দূরত্ব বা‌ড়ে। কথা ব‌লে মি‌টি‌য়ে ফেল।’
‘আচ্ছা, বাবা। বাবা, তোমা‌কে একটা কথা বলার ছিল।’
‘বল।’
‘আ‌মি ভা‌র্সি‌টির জবটা ছে‌ড়ে দি‌তে চাই।’
নয়ন সা‌হেব ভ্রুত কুচ‌কে তাকাল নিহা‌দের দি‌কে। তারপর পেপার ভাজ কর‌তে কর‌তে বল‌লেন,
‘‌কেন?’

আস‌ছে আমার নতুন বই “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।

এছাড়া আমার ছয়টা বই: ঘর, সংবৃত, কিছ‌ু সাদা টিউ‌লিপ, তোমায় নি‌য়ে, সমান্তরাল বাঁধন, সমীকর‌ণের মিশ্রণ পা‌চ্ছেন রকমা‌রি সহ যে কো‌নো অনলাইন বুকশ‌পে। এছাড়াও আমার দু‌টো ই-বুক: শেষ পাতা, এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌ল, পা‌চ্ছেন বইটই এ্যা‌পে।
এছাড়া বিস্তা‌রিত জান‌তে আমা‌কে নক করুন।

চল‌বে…