অল্প থেকে গল্প পর্ব-০৬

0
444

অল্প থেকে গল্প🍁
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:৬

শুক্রবার, উপল শুদ্ধ দুজনেই বাসায়।বিকেলবেলা ছবি বারান্দা থেকে শুকনো জামাকাপড় গুলো ভাঁজ করে ওয়ারড্রবে ঢুকাচ্ছিলো।এমন সময় শুদ্ধ দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,
—তুমি এখনো রেডি হও নি?
হাতের কাপড় নিয়ে হাঁ করে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে ছবি।সাদা ফুলহাতা একটা শার্ট কালো প্যান্টের সাথে ইন করে পরেছে সে।ম্যাচিং কালো টাই!চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ানো।হাতে বরাবরের মত ঘড়ি চোখে চশমা,পলিশড সু পায়ে।খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো বাদ দিলে আপাদমস্তক ফর্মাল লুক!

আরো একবার মুগ্ধ হলো ছবি!সে যদি ছেলে হতো শুদ্ধের রূপের বর্ননা দিয়ে হাজার খানেক কবিতা লিখে ফেলতে পারতো।শুদ্ধ যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয় সে!বিধাতা কোন তুলি দিয়ে এই নিখুঁত চিত্রকর্ম একেঁছেন সেটা কেবল তিনিই জানেন!
—কি হলো? এখনো রেডি হওনি যে?
—আমার শরীর খারাপ লাগছে।
শুদ্ধ ভেতরে ঢুকে ছবির কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করতে নিলেই ছবি সরে দাঁড়ালো।
—আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে।আপনি যান।আমার মাথাব্যথা করছে।
শুদ্ধ ওকে টেনে এনে নিজের সামনে দাঁড় করালো।কপালে হাত দিয়ে বলল,
—জ্বর তো নেই।মাথাব্যথা কি বেশি করছে?
—জ্বী না।
—তাহলে রেডি হয়ে নাও।আমরা অল্পকিছুক্ষন থেকেই চলে আসবো।মুক্তা বারবার বলেছে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে।না নিয়ে গেলে আমাকে ঢুকতে দেবে না।
ছবি বিপাকে পড়ে গেলো,উপায়ন্তর না পেয়ে বললো,
—আমি আপুকে জিজ্ঞেস করে আসি।
—কেন?সকালে বলো নি?
—ভুলে গিয়েছিলাম।
—ভাবি কি তোমাকে আমার সাথে যেতে বারন করেছে?
—কই না তো।আমি তো বললাম আমার মনে ছিলো না।
—আচ্ছা ঠিক আছে চলো ভাবির কাছে।

উপল ঘুমাচ্ছে।অনুর পা ফুলে গেছে তাই রুমে হাঁটাহাটি করছিলো সে।শুদ্ধ দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,
—এই যে অনু পরমাণু আসবো?
অনু হাঁটা থামিয়ে খাটের ওপর বসে বলল,
—এসো।
শুদ্ধ ভেতরে ঢুকে অনুর মুখোমুখি বসলো। তার পেছনে ছবি টি-টেবিলের কোনা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
শুদ্ধ বলল,
—আজকে শরীর কেমন? সব ঠিকঠাক?
—না।পায়ে হালকা ব্যথা!
অনুর পায়ের অবস্থা দেখে শুদ্ধ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
—পা তো দেখছি ভয়ানক ফুলে গেছে।ছবি যাও তো, একদৌঁড়ে আমার ঘর থেকে আমার প্রেশার মাপার যন্ত্রটা নিয়ে এসো!

অনুর প্রেশার মারাত্মক হাই।শুদ্ধর চোখেমুখে চিন্তার ছাপ!
—পায়ে কি ব্যথা আছে ভাবি?
—না।
—মাথা ব্যথা আছে?
—হ্যাঁ।
—বুকে ব্যথা?
—উঁহু!
শুদ্ধর মুখ থমথমে।ডান হাত দিয়ে থুতনি চুলকাচ্ছে সে।অনুর হঠাৎ পা ফুললো কেন?একলাম্পশিয়া?প্রেগন্যান্সির বিশ সপ্তাহ বা তার পর থেকে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের খিঁচুনি বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।মেডিকেল পরিভাষায় এর নাম একলাম্পশিয়া।অনুর ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে এই সময় এইসব সিম্পটম শুদ্ধর সুবিধের মনে হচ্ছে না।
—গতকাল যে চেকাপের জন্য গিয়েছিলে ডাক্তার কি বললো?
—আমাকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে তারপর তোমার ভাইয়ার সাথে একা কথা বলেছেন!
—তুমি তোমার সব সমস্যার কথা উনাকে খুলে বলেছো?
—হ্যাঁ বললাম তো।তারপরই তো উনি আমাকে সাবধান করে দিলেন।
—আমার একজন পরিচিত গাইনোকলোজিস্ট আছে।কালকে তোমাকে নিয়ে যাবো।তুমি অবশ্যই আমাকে মনে করিয়ে দেবে, ঠিক আছে?
—ঠিক আছে।তুমি কোথাও যাচ্ছো?
—হ্যাঁ,তোমাকে বললাম না? মুক্তা আর মেহেদী ওদের এংগেইজম্যান্ট উপলক্ষে আজকে একটা পার্টি রেখেছে ওরা? মুক্তা বারবার করে বলে দিয়েছে ছবিকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য।সেই জন্যই তো তোমার কাছে এলাম।
—এংগেইজম্যান্ট কবে?
—আগামী শুক্রবার!
অনু বলল,
—কি রে ছবি যাবি?
ছবি ইতস্তত করছে।তার যে যেতে মন চাইছে না এমনটা না,আসলে আনোয়ারা বেগমের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছে সে।যদিও আনোয়ারা বেগম এখন বাসায় নেই তবুও কোনভাবে যদি উনার কানে কথাটা যায় উনি তুলকালাম বাধিয়ে দেবেন।
শুদ্ধ বলল,
—তোমার পারমিশন পেলে তোমার বোন নড়বে নাহলে নড়বে না!
অনু ছবিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—যা রেডি হয়ে আয়।

শুদ্ধ ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে।হাতে ফোন,চোখদুটো ফোনের স্ক্রিনের দিকে।ছবি এসে বলল,
—এই যে শুনছেন?
—জ্বী শুনছি।
—আমি কি পরে যাবো?
শুদ্ধ ফোনের স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে বলল,
—একি ছবি?তুমি কি পরে যাবে আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন?
ছবি লজ্জা পেয়ে গেলো।লাজুক গলায় বলল,
—না মানে শাড়ি পরবো? না সেলোয়ার কামিজ?
—তুমি শাড়ি পরো?
মাথা নিচু করে ফেললো ছবি।বিয়ের দিন ওকে শাড়ি পরানো নিয়েই তো যত কান্ড হয়েছিলো।শুদ্ধকে চড় মেরেছিলো সে!যতবারই শুদ্ধকে চড় মারার কথাটা মনে পড়ে লজ্জায় অনুশোচনায় মরমে মরে যায় সে।মনে মনে নিজের গালে হাজারটা চড় বসায়!
শুদ্ধ বলল,
—তুমি যা পরে কমফোর্ট ফিল করবে সেটাই পরো।

ছবি কাতান কাপড়ের ফুলহাতা একটা থ্রিপিস পরে নিলো।জামা,পায়জামা, ওড়না সবই বেবিপিংক।বড় জর্জেট ওড়নাটা ছড়িয়ে বুকের ওপর মেলে দিলো।সামনের খানিকটা চুল নিয়ে ছোট কাঁকড়া দিয়ে বেধে নিল।বাকি চুলগুলো খানিকটা সামনে খানিকটা পেছনে ছড়ানো।জামার সাথে ম্যাচ করে কানে বড় বড় দুল,চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক মুখে হালকা মেকাপ সবই দিলো সে।
আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো এমন সময় অনু ভেতরে ঢুকলো।
—কি ছবি তোর হলো?শুদ্ধ সেই কখন থেকে বসে আছে..
আয়নার দিকে চোখ পড়লো অনুর।হাসি ফুটে উঠলো মুখে!মুগ্ধ কন্ঠে বলল,
—বাহ!দারূণ লাগছে তোকে!
—ভালো লাগছে?
—ভীষণ!

সেজেগুঁজে ছবি যখন ড্রয়িংরুমে ঢুকলো,শুদ্ধ তখন ফোন থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো,
—শেষ?
ছবি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।এরপর শুদ্ধ তার ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
—চলো চলো আর দেরী করা যাবে না।
ছবি একরাশ মন খারাপ নিয়ে শুদ্ধর পেছন পেছন বেরোলো। সে যে এত সুন্দর করে সেজেছে তা তো কেবল শুদ্ধর জন্যই।অথচ শুদ্ধর একটুখানি দেখার পর্যন্ত সময় হলো না।

গাড়ি থেকে নেমে শুদ্ধর পেছন পেছন হাঁটছিলো ছবি।হীল পরে হাঁটতে তার ভীষণ অসুবিধে হচ্ছে।বাসা থেকে যখন বেরিয়েছিলো, শুদ্ধ পার্কিং লটে জিজ্ঞেস করেছিলো সে হীল পরে হাঁটতে পারবে কি না? প্রেস্টিজের প্রশ্ন তাই ছবি হ্যাঁ বলে দিলো।একবার পরে এসে এখন যদি বলে পারবে না তাহলে শুদ্ধ নিশ্চই মনে মনে ওকে নিয়ে হাসবে?
কিন্তু মস্ত বড় ভুল করেছে সে!হীল পরে হাঁটা তার কর্ম নয়।দুই কদমে হোঁচট খাচ্ছে তিনবার।শুদ্ধ ওর অবস্থা দেখে বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করে নিয়েছে।ধীরগতিতে হাঁটছে সে।ওদেরকে দেখে মুক্তা হাসিমুখে এগিয়ে এলো।ওর পেছন পেছন মেহেদী,মৌনতা আর উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের একটা ছেলেও এলো।মৌনতাদের সঙ্গে সেদিন এই ছেলেটা ছিলো না।ছেলেটাই প্রথম শুদ্ধকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—তোদের এত দেরী হলো যে?
—ছবি আসতে চাইছিলো না।
মুক্তা কড়া চোখে ছবির দিকে তাকালো।
বললো,
—সত্যি নাকি ছবি? শুদ্ধ নিজে দেরী করে আবার তোমার নাম ফেলে দিচ্ছে না তো?
—জ্বী না।আসলে আমার একটু মাথাব্যথা ছিলো।
মেহেদী বললো,
—আমার মনে হয় ছবি শুদ্ধকে প্রটেক্ট করার জন্য নিজের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিয়েছে।
মৌনতা তাল মিলিয়ে বললো,
—ঠিক বলেছিস।এই লেইট লতিফ নিশ্চই ছবিকে পটিয়ে নিয়ে এসেছে।
শুদ্ধ ওর ঝুঁটিটা টেনে দিয়ে বললো,
—পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়।আমি কখনোই লেইট ছিলাম না।আমি স্কুল লাইফ থেকেই পাংচুয়াল।
—হ্যাঁ।সবার আগে স্কুলে গিয়ে বসে থাকতি আমাকে দেখার জন্য।
—হ্যাঁ তুই তো পাহারাদার ছিলি,তাই সবার আগে তোকেই দেখতাম।
এবার মৌনতা মুখ খোলার আগে শ্যামলা বর্ণের ছেলেটা বললো,
—প্লিজ তুই থাম মুনা।তোর ঝগড়া করার স্বভাবটা এতদিনেও বদলাতে পারলি না? সালমান ভাই যে কি করে তোকে সহ্য করে আল্লাহই জানে।
শুদ্ধ হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,
—করবে না।করবে না।বিয়েটা হোক তারপর দেখিস একমাসের মাথায় এই পাগল এনে ওর বাপের বাড়িতে দিয়ে যাবে।
মৌনতা ওদের দুজনকে শাসিয়ে বললো,
—ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
খিলখিল করে হেসে উঠলো সবাই।মৌনতা চোখ রাঙ্গিয়ে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের সেই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—এই নাহিদ?তুই এত কাপুরুষ কেন বলতো?তুই একটা ছেলে হয়ে আর একটা ছেলের চামচামি করিস তোর লজ্জা লাগে না?
—না করে না।তোর মত অর্ধেক নারী অর্ধেক পুরুষের চামচামি করার চেয়ে নিজের স্বজাতির চামচামি করা অনেক ভালো।
—কি বললি তুই?
—ইংরেজিতে বলবো?
ছবি ওদের ঝগড়া দেখে হাসছে।শুদ্ধর দিকে চোখ পড়তেই দেখলো শুদ্ধ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।ছবির চোখ চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো।

সবাই গোল হয়ে একটা টেবিলে বসলো।ছবি বসেছে শুদ্ধর পাশে।ওর অন্য পাশে বসেছে মুক্তা।তারপাশে মেহেদী।এত হৈচৈ এর মাঝখানেও ওরা দুজন চুটিয়ে প্রেম করে নিচ্ছে।একটুপর পরই মেহেদী মুক্তার কানে কানে ফিসফিস করে কি যেন বলছে আর মুক্তা লজ্জায় লাল,নীল বেগুনি হয়ে যাচ্ছে।ছবির বেশ ভালো লাগছে।বোঝাই যায়,অসম্ভব ভালো বন্ডিং দুজনের মাঝখানে। মৌনতা ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—ছবি বেচারি বোর হচ্ছে।ফিসফিস করে প্রেম না করে,ওকে তোদের দুজনের প্রেম কাহিনীটা বল না।

মুক্তা লজ্জা পেলেও মেহেদী বেশ উৎসাহ নিয়ে শুরু করলো,
—আমরা দুজনে কিন্তু বন্ধু ছিলাম।খুব ভালো বন্ধু।তবে আমি মনে মনে মুক্তাকে পছন্দ করতাম।কিন্তু মুক্তা খুবই নির্লিপ্ত স্বভাবের ছিলো।নানা ভাবে ওকে বোঝাতে চেষ্টা করতাম আমি ওকে ভালোবাসি।কিন্তু ওর এক্সপ্রেশন লাইক ‘প্রকৃত বন্ধুর মত কাজ করেছো তুমি!’ আমি ভালোবেসে যাই করতাম ওর কাছে সেটাই বন্ধুত্ব মনে হত।ভয়ে কখনো সরাসরি বলতে পারি নি।ওর আবার একটু হাত চালানোর অভ্যেস আছে।আগে অবশ্য এমন ছিলো না।মুনাটাই যত নষ্টের গোড়া!আমার জরিনা টাইপ শান্ত শিষ্ট গার্লফ্রেন্ডকে সে সোনিয়া টাইপ গুন্ডি বানিয়ে দিয়েছে।যাইহোক, ফাইনাল ইয়ারের শেষের দিকে মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিলো।মুক্তা সাঁতার জানতো না।তারওপর ঢেউ ছিল প্রচুর।অসাবধানতা বশত বিচ থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছিলো সে।অলরেডি ডুবেও যাচ্ছিলো,দূর থেকে আমি ওর কাছাকাছি একটা শার্ক দেখে লাফিয়ে পড়লাম ওকে বাঁচানোর জন্য।
মুক্তা বাধা দিয়ে বলল,
—মিথ্যুক ওখানে কোন শার্ক ছিলো না।
—থাকতে তো পারতো।একথা তো সত্যি যে আমি আমার অতি মূল্যবান জীবন জলে নিয়ে শুধুমাত্র তোমাকে বাঁচানোর জন্য সমুদ্রের তলদেশে ডুব দিয়েছিলাম?
—ইশ!উনি তলদেশে ডুব দিয়েছিলো।
—অস্বীকার করা মেয়েদের গার্লফ্রেন্ডগত অধিকার তাই আমি কিছু মনে করলাম না।
মুক্তা মুখ টিপে হাসছে।
—ওকে নিয়ে যখন তীরে উঠলাম, শুরু হলো সেই কান্না!কে কেঁদেছিলো জানো?
—কে?
—আমি!
শুদ্ধ বলল,
—তুই সেদিন এমন কেঁদেছিলি কেন?
—হ্যাঁ ভাইয়া আপনি কেন কেঁদেছিলেন?
—কেন আবার?ওকে তুলে আনতে আমার জান বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা।মনে হচ্ছিলো যেন জলহস্তী তুলে আনছি।ওর ভারে আমিই ডুবে যাচ্ছিলাম।আল্লাহর অশেষ রহমত তিনি আমাদের বাঁচিয়ে দেন।তারপর থেকেই প্রেম শুরু।
ছবি হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলার উপক্রম!মুক্তা রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে।মেহেদী সবার সামনেই ওকে চোখ টিপ মেরে পাউট করলো।
মুক্তা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—অসভ্য!
শ্যামবর্ণের সেই ছেলেটা বলল,
—কত সুন্দরী মেয়েরা যে তোর জন্য পাগল ছিলো।আর তুই কি না সেইসব হীরা,চুনি পান্না ছেড়ে ভেজাল মুক্তা নিয়ে পড়ে ছিলি?
মেহেদী ঠোঁট উলটে বলল,
—হুপ! মুক্তা আমার জান!আমার তিনবছরের সাধনার ফল!
মুক্তা বেশ লজ্জা পেয়ে বললো,
—থামবে তোমরা?
মৌনতা শুদ্ধকে খোঁচা দিয়ে বললো,
—ওর পেছনে কম মেয়ের লাইন লেগে থাকতো নাকি।মুক্তাও তো…!
শুদ্ধ ধমক দিয়ে বলল,
—আহ!মুনা!
—মুক্তার কথা বাদ!এই যে আমি? এখনো ঘুরঘুর করছি।অথচ দেখ অসভ্যটা পাত্তাই দিচ্ছে না।
মেহেদী বললো,
—সালমান ভাই জানে এসব?
মৌনতা ঝাড়ি মেরে বললো,
—ঐ ক্যাবলাকান্তটার কথা আর বলবি না আমার সামনে।একটা বলদ এসে জুটেছে আমার কপালে।শুদ্ধ রাজী থাকলে কবেই ওকে ছেড়ে দিতাম।হাঁদারাম একটা।
মুক্তা অবাক হয়ে বললো,
—তুই আবার উনার সাথে ঝগড়া করেছিস?
—ঝগড়ার দেখেছে কি ও?কালকে রাতে রাগ করে বলেছিলাম তুই আর জীবনেও আমাকে ফোন দিবি না।দিলে আমি তোর নামে ইভটিজিং এর মামলা করবো।তারপর থেকে হাদারামটা সত্যি সত্যি একবারও কল দেয় নি।যতবারই ফোন দিয়েছি ওর নাম্বার বন্ধ।
মুক্তা ওকে ঠান্ডা করার জন্য বললো,
—হয়তো ব্যস্ত।
—মোটেও ব্যস্ত না ও।আজকে ওর হলিডে।তারমানে আজকে পুরো ফ্রি সে।ভেবেছিলাম ফোন রিসিভ করলে ওকে আসতে বলবো।কিন্তু না ওর কোন খবরই নেই।সামনে আসুক একবার!ওকে যে আমি কি করবো নিজেও জানি না।
শুদ্ধ হাসতে হাসতে বললো,
—তুই সামনে পেলে কি করবি আমি জানি না তবে আমি সামনে পেলে একটা স্যালুট দিতাম তোর মত একটা বদ মেয়েকে বিয়ে করার দায়িত্বটা উনি নিয়েছেন।জনস্বার্থে উনাকে পুরস্কার দেওয়া উচিৎ।
শুদ্ধর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো।মৌনতা নিজেও হাসছে।ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাত এগারোটায় বাসায় ফিরলো শুদ্ধ আর ছবি।ছবির আসতে মন চাইছিলো না।ভীষণ ভালোলাগছিলো ওদের সাথে সময় কাটাতে।কিন্তু শুদ্ধ তাড়া দিয়ে নিয়ে এলো।উপায় ছিলো না ছবির,মাথাব্যথার কথা সে নিজেই বলেছিলো।

শুদ্ধর চাকরীটা হয়ে গেছে।নেক্স উইকেই জয়েনিং!খবরটা শুনে গতকালই আনোয়ারা বেগম বোনের বাসা থেকে ফিরেছেন।শুদ্ধ বাসায় আসার সময় একগাদা খাবার আর মিষ্টি নিয়ে ফিরেছিলো।প্রথম চাকরী বলে কথা!
সকাল বেলা খুশি খুশি আমেজে সবাই নাশতা করতে বসেছিলো, আনোয়ারা বেগম শুদ্ধকে একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল,
—দেখ!পছন্দ হয় কি না?
উনার বোনের ভাসুরের শালার মেয়ে।মেয়েটাকে উনার বেশ পছন্দ হয়েছে।একেই শুদ্ধর বউ করবেন স্থির করলেন।খেতে খেতেই শুদ্ধ ছবিটা একপলক দেখলো।আনোয়ারা বেগম আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
–কেমন?
–তোমার ভালো লেগেছে?
–অসম্ভব!মেয়েটা দেখতে শুনতে যেমন ভালো তেমনি গুনেও।এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ার।বেশ ভদ্র মেয়ে।নিজের হাতে নাশতা বানিয়ে আমাদেরকে আপ্যায়ন করলো।উপলেরও বেশ পছন্দ হয়েছে।
উপল খালার বাসা থেকে উনাকে আনার সময় মেয়েটাকে একঝলক দেখেছিলো।রূপবতী!আগেকার দিনের সুচিত্রা সেনের মত!আনোয়ারা বেগম ওকে জিজ্ঞেস করলেন,
—মেয়েটা কেমন?
—ভালোই।
—শুদ্ধ সাথে মানাবে?
তখনই আনোয়ারা বোনের বাসায় আসার আসল কারন বুঝতে পারে উপল।মনে মনে বিরক্ত হলো সে!কিন্তু মুখে কিছুই বললো না।
অনু ছবি দুজনেই চমকে উঠে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আনোয়ারা বেগম এসব কি বলছেন? অনু দ্রুত উপলের দিকে তাকালো।উপল মাথা নিচু করে অপরাধীর মত বসে আছে।

ছবি স্থির হয়ে বসে আছে ঠিকই কিন্তু ওর সমস্ত পৃথিবী ঘুরছে!সেই বোধহয় হয় প্রথম মেয়ে যে কি না চোখের সামনে নিজের স্বামীর বিয়ের কথা শুনছে অথচ কোন কথা বলতে পারছে না।ভয়ে ওর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো আনোয়ারা বেগম কি সত্যিই আবার শুদ্ধর বিয়ে দেবেন?নাকি স্বপ্ন?যদি সত্যি হয় তাহলে শুদ্ধ?সে কেন কোন প্রতিবাদ করছে না?ছবির মাথা ঘুরছে আর কিছু ভাবতে পারছে না সে।
রাগে অনুর মুখ লাল হয়ে গেছে।এসব কি হচ্ছে? উপল? সে কি করে চুপ করে আছে? আর শুদ্ধ? অনু নিজের ওপর রাগ লাগছে!কেন এতদিন এদেরকে বিশ্বাস করলো সে? ভেবেছিলো একদিন না একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এখন বুঝতে পারছে জীবনটা কোন সিনেমার কাহিনী নয় যে রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে।কল্পনার সাথে বাস্তবতার বিস্তর তফাত।
আনোয়ারা বেগম হাসিহাসি মুখ করে শুদ্ধকে বললেন,
–আমি কি ওদেরকে সামনের সপ্তাহে আসতে বলবো?
–কেন?
–ওরা ছেলে দেখবে না?
–আচ্ছা।ঠিক আছে আমি দেখি আগামি সপ্তাহে কোন দিন ফ্রি আছি।
–শুক্রবার বলি?
–না শুক্রবার আমার একটা ফ্রেন্ডের এংগেইজম্যান্ট ওর অনুষ্ঠান ওখানে যেতে হবে।
–ঠিক আছে।তুই যেদিন বলবি আমি ওদেরকে সেদিনই আসতে বলবো।
—ঠিক আছে আমি জানাবো।
খাওয়া শেষ করে শুদ্ধ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।এরপর আনোয়ারা বেগমও উঠে গেলেন।টেবিলে ছবি,অনু আর উপল বসে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই!
.
.
চলবে