অশান্ত বসন্ত পর্ব-২০+২১+২২+২৩

0
296

#অশান্ত বসন্ত
(বিংশ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী
*********************
পিউকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়েই ফিরে যাচ্ছিলো পল্লব।কিন্তু মায়ের কথাতে দাঁড়াতেই হলো ওকে।

সীমা বললো,’এভাবে দোরগোড়ায় এসে বেরিয়ে যাসনা।ঘরে ঢুকে অন্তত স্নানটা সেরে নে,আমি ততোক্ষণে ক’টা পরোটা ভেজে ফেলি’।

পল্লব বললো,’খেতে ইচ্ছে করছেনা মা।তবে ঠিকই বললে স্নানটা সেরে নেওয়া দরকার’।

সীমা বললো,’আর পেটে কিছু ঢোকানোটা?সেটা দরকার নেই বুঝি! ফুলকফির ডালনা আছে,গরম গরম পরোটার সাথে টিফিনবক্সে গুছিয়ে দিচ্ছি,দুই বন্ধু মিলে খেয়ে নিস’।

পল্লব ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,’আচ্ছা দিও, আমি স্নানটা সেরে নিচ্ছি’।’

অসীম বাবু পল্লবকে দেখেই বলে উঠলেন,’তা এখনো আগের মতো সেই সমাজসেবা চলছে।নিজের ভালো আর বুঝবে কবে?’,উত্তর না দিতে চাইতেও পল্লব বলে উঠলো,’ যা করছি সব তোমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই করছি’।

অসীম বিরক্ত মুখে বলেন,’আমাদের কথা ভেবে করছো মানে?’
পল্লব হেসে বলে,’ভগবানের ঘরে সব হিসেব থাকছে বুঝলে।দেখবে কোনো না কোনো ভাবে সেটা ঠিক রিটার্ণ পেয়ে যাবে’।

অসীম বললো,’কি রিটার্ন পাবো শুনি?’
পল্লব বললো,’আরে এমন তো হতেই পারে যে আমরা বাইরে আর রাত বিরেতে তোমাদের কিছু হলো।তখন তো আমাদের মতো সমাজসেবা করা ছেলেগুলোরই সাহায্য লাগবে’।

অসীম গজগজ করতে করতে পাশের রুমে গিয়ে ঢুকলো।পল্লব মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে স্নানে ঢুকে গেলো আর সীমা রান্নাঘরে। স্নানটা সেরে চটপট টিশার্ট প্যান্ট পরে নিতেই সীমা এসে টিফিনবক্স ধরালো।

পল্লব মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের গালে চুমু খেলো।সীমা বললো,’ বেডকভার আর হাওয়া বালিশ নিয়ে যা, শুতে পারবি’,পল্লব মায়ের কথা মতো বেডকভার আর হাওয়া বালিশ ভরে নিলো ব্যাগে।

তারপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।আজ প্রায় আটঘন্টা ধরে ওটির বাইরে বসেছিলো ওরা।এখন গাড়ি চালাতে গিয়ে পিঠটা ভীষণ টনটন করছে।তবে বোনুকে আজ নতুন রুপে দেখলো পল্লব।পুরো সময়টা জুড়ে বহ্নির পাশে বসে থেকে ওকে সাহস দিয়ে গেছে।

যদিও জোর করে বাড়িতে ফেরত দিয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে ওকে লাঞ্চ আর টিফিনটা করতে বাধ্য করেছে পল্লব।বহ্নিকে যদিও কিছুই খাওয়াতে পারেনি।সে কারনে নিজেরও কিছু খাওয়া হয়নি।

তবে এই স্নানটা ওর খুব দরকার ছিলো,মায়েরা কি করে যেন সব বুঝতে পারে।

ডাক্তার বলেছে,’ অপারেশন সাকসেসফুল,সম্ভবত আর কোনো অপারেশন এর প্রয়োজন পরবেনা।তবে স্পিচ থেরাপিটা কন্টিনিউ করতে হবে,আর সঙ্গে রুটিন চেক আপটাও ‘।

পল্লব জিজ্ঞেস করেছিলো,’রাতে কি থাকতে হবে?’,উনি বললেন,’আজকের দিনটা থাকুন,কাল থেকে মনে হয়না থাকতে হবে’।

তারপর বহ্নির দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,’এই কেসের চ্যালেঞ্জটা নিতে সাহস হচ্ছিলোনা,চান্স একেবারেই ছিলোনা ঠিক হওয়ার।সত্যি বলতে কি এই অপারেশনটা সাকসেস হওয়াটা কিছুটা মিরাকেলের মতো।তবে এখন সাকসেস হওয়াতে নিজেরই ভালো লাগছে’।

বহ্নি কেঁদে ফেলে বলে,’আমি যে কি করে আপনার ঋণ শোধ করবো,আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আপনার হাত ধরে।আমার ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই’।

ডাক্তার বাবু হেসে বললেন,’ইটস অলরাইট’,তারপর অন্য পেশেন্টপার্টির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন।

পল্লব দেখলো,পিউয়ের চোখেও জল,ওর নিজের চোখের কোনটাও ভিজে গেছে।বহ্নি পল্লব আর পিউয়ের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,’আজ তোমরা না থাকলে আমি ওই প্রচন্ড টেনশন নিয়ে একা একা এতো সময় কি করে যে কাটাতাম!’।

পিউ চোখ মুছে হেসে বললো,’এবার আমাদের ও ধন্যবাদ দিতে চাইছো তাইতো?ওসব ধন্যবাদে হবেনা।শিখা দিদি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আমি তো কবজি ডুবিয়ে বিরিয়ানি আর ফিরনি খাবো,খাওয়াবে তো?’,পিউয়ের কথার বহ্নি মাথা নেড়ে হেসে জড়িয়ে ধরলো ওকে।

হসপিটালে ঢোকার আগে গাড়ি থামিয়ে একটা স্প্রাইট কিনে নিয়েছিলো পল্লব।হসপিটালে ঢুকেই বহ্নিকে ফোন করে ওয়েটিং রুমে আসতে বললো।
বহ্নি আসার পর টিফিনবক্সটা বের করে বললো,’এসো খেয়ে নাও।মা পাঠিয়ে দিয়েছে’।

বহ্নি এবার আর কোনো রকম বাহানা না করেই পল্লবের সাথে বসে ওর মায়ের বানানো পরোটা আর ফুলকফির ডালনা তৃপ্তি সহযোগে খেতে থাকলো।কতোদিন পর মায়ের হাতের সাধ পেলো।

পল্লব বললো,’এবার কিন্তু একটু ঘুমিয়ে নিতে হবে।কাল সারারাত জেগে’।তারপর ব্যাগের থেকে বেডকভার বের করে নিয়ে হাওয়া বালিশটা ফুলিয়ে বহ্নিকে বললো,’আমি শুয়ে পরবো,তুমি ও শিখার কেবিনে গিয়ে শুয়ে পরো।আর স্প্রাইটটা সাথে নিয়ে যাও,ইচ্ছে হলে খেও’।

বহ্নির শরীর সত্যিই আর দিচ্ছিলোনা।তবু মন চাইছিলো কিছুক্ষণ পল্লবের সাথে সময় কাটাতে।কিন্তু পল্লবের কথাতে যেতেই হলো দিদিয়ার কেবিনে।পল্লব বেডকভার দিয়ে নিজেকে রোল করবার আগে পকেট থেকে রোলন বার করে নিজের গায়ে আর বেডকভারে লাগিয়ে দিলো যাতে মশা না কামড়ায়।

বহ্নির যাওয়াতে পল্লব নিশ্চিন্ত হলো।মেয়েটার চোখ মুখ একেবারেই বসে গেছে।ওর ঘুমটা সত্যিই দরকার।পল্লব বুঝতে পারছিলো বহ্নি কিছুসময় ওর সঙ্গে থাকতে চাইছিলো।কিন্তু রক্ত মাংসের মানুষ তো।ভালোবাসার মানুষটি কাছে থাকলে অনেক রকম ইচ্ছে জাগতে পারে।

পল্লব কখনোই চায় না বহ্নি কৃতজ্ঞতার বশে করুনা করে ওর হাত ধরুক।ভালোবাসার বদলে ভালোবাসাই চায় মন।চায় ভালোবাসার মানুষটিকে সব কিছু থেকে আগলে রাখতে।পল্লব ও তাই করার চেষ্টা করছে।এখন বহ্নির পালা।

বহ্নি কেবিনে এসে কিছুক্ষণ দিদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে পাশের বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো,ঘুমিয়েও পরলো তাড়াতাড়ি ।হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো বহ্নির,কিসের একটা আওয়াজ আসছে!কেবিনের বাইরে গিয়ে বোঝে প্রচন্ড বৃষ্টি পরছে।ঘুমিয়ে নেওয়ার পর ফ্রেস লাগছে অনেকটা।বহ্নি মোবাইলে সময় দেখলো প্রায় পাঁচটা বাজে।

‘পল্লব কি ঘুমিয়ে আছে!’,কথাটা মনে হতেই বহ্নি ওয়েটিং রুমের দিকে পা বাড়ায়।গিয়ে দেখে পল্লবের হাওয়া বালিশ, চাদর সব মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,আর তারমধ্যেও পল্লব বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।আশেপাশের লোকজন ও ঘুমের দেশে।পল্লবের মাথাটা অর্ধেক ঝুলছে।

বহ্নি চাদরটা তুলে পল্লবের গায়ে জড়িয়ে দেয়।হাওয়া বালিশটা আর তোলেনা।পল্লবের মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে বসে।

ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে পল্লবের অল্প ফাঁক হওয়া ঠোঁটটায় নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে।নিজের অজান্তে কখন যেন ভালোবেসে ফেলেছে পল্লবকে।পল্লবের ঘন চুলে পরম মমতায় হাত ডুবিয়ে বিলি কেটে দিতে থাকে বহ্নি।

পল্লবের কপাল,গাল,চিবুকেও বহ্নি হাত বোলায়।একসময় একটু নিচু হয়ে পল্লবের কপালে নিজের ঠোঁট ছোয়ায় বহ্নি।

পল্লব চোখ মেলে পূর্ন দৃষ্টিতে বহ্নির দিকে তাকায়।বহ্নি লজ্জা পেলেও পল্লবের চোখ থেকে নিজের চোখ সরাতে পারেনা।

কানের সামনে মুখটা নিয়ে গিয়ে কানে ঠোঁট ছোয়ায়,তারপর ফিসফিস করে বলে,’ভালোবাসি’।পল্লবের সারা শরীরে শিহরণ খেলে যায়।ঠিক এই কথাটাই তো শুনতে চেয়েছিলো সে বহ্নির থেকে।

পল্লব বলে,’আর একবার বলবে কথাটা,আমি এই মুহূর্তটাকে আরো একবার বাঁচতে চাই’,বহ্নি বলে,’ভালোবাসি,ভীষণ ভীষণ রকম ভালোবাসি তোমায়’।

পল্লব বহ্নির হাত দুটো ধরে চুমু খেয়ে বলে,’ কথা দিচ্ছি সারা জীবন তোমার ভালোবাসার মর্যাদা দেবো’।ঠিক তখনই এনাউন্সমেন্ট হয়,’১২০ নম্বর বেডের পেশেন্ট পার্টি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেবিনে আসুন’।বহ্নি পল্লব দুজনেই কেবিনের দিকে ছোটে।

(চলবে)

#অশান্ত বসন্ত
(একবিংশ পর্ব)
#জয়া চক্রবর্তী
*****************
প্রায় ছুটতে ছুটতে কেবিনে আসে পল্লব আর বহ্নি।বেডে শিখাকে দেখতে না পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় বহ্নি।ওর গলার স্বর কে যেন কেড়ে নিয়েছে।

‘ব্যাপার কি নার্সদি?পেশেন্ট বেডে নেই কেন?’,পল্লবের প্রশ্নে নার্স মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে পল্লবকে দেখে নিয়ে বহ্নিকে বলেন,’ছিলেন কোথায় আপনি?পেশেন্টকে আবার ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে,ইমিডিয়েটলি রক্ত বন্ধ করা প্রয়োজন।রক্ত বন্ধ না হলে হাতের বাইরে চলে যেতে পারে সব ‘।

বহ্নি নিজের পায়ে আর কোনো জোর পায়না।ধপ করে বসে পরে শিখার বেডের ওপরে ।

শিখা ঘুমোচ্ছে ভেবে সারা রাত নিজেও সে ঘুমিয়েছে।ভেবেছিলো বিপদ কেটে গেছে, ভয়ের কিছু নেই।কিন্তু ভগবান তাকে এ আবার কি পরীক্ষা নিচ্ছে!

না আর ভাবতে পারছেনা বহ্নি।একটু আগেই সে কতো খুশি ছিলো,আর এখন যেন আকাশ ভেঙে পরেছে তার মাথায়।শূন্য দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে বহ্নি।
পল্লব ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেও যেন কেমন হতভম্ব হয়ে পরেছে।সে কারনে বহ্নিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পায়না পল্লব।

ঘন্টা খানেকের মধ্যেই শিখাকে আবার বেডে দেওয়া হয়।বহ্নি শিখার অবস্থা দেখে ভাবে,কি দরকার ছিলো অপারেশন করবার!দিব্বি তো ভালো ছিলো তার দিদিয়া।মুখ দিয়ে তো শুধু লালাই পরতো।কিন্তু তাতে তো তার কোন অসুবিধা হয়নি কখনো।বাইরের লোকজন না বুঝলেও শিখার ইশারা বহ্নি তো বুঝতো।

ভাবনার জাল ছিঁড়ে যায় ডাক্তার আসায়।এসেই তিনি নার্সকে বলেন,’এক ঘন্টা বাদে tongue depressor দিয়ে মুখ হাঁ করিয়ে দেখবেন গলার ভিতর রক্ত জমছে কিনা।যদি রক্ত জমে তাহলে সাবধানে suction দেবেন’।
নার্স ঘাড় নাড়িয়ে বললো,’ঠিক আছে স্যার’।

উনি আবার বললেন,’দেখবেন যাতে খোঁচা না লাগে। ভেজা গজ পিস artery foreceps এর মাথায় ধরে আলতো করে গলার ভিতরের রক্ত মুছে দেবেন।আর নাক দিয়ে রক্ত আসলে Antazol drop দিয়ে দেবেন’।

পল্লব বলে ওঠে,’আপনি যে বলেছিলেন অপারেশন সাকসেসফুল, তাহলে হঠাৎ…’,
পল্লবের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বললেন,’ভয়ের কিছু নেই,আফটার অপারেশন এসব সমস্যা আসতেই পারে।বিশেষ করে যখন এটা মুখের ব্যাপার।তাছাড়া এই কেসটা সহজ ছিলোনা বলেছিলাম তো’।

কথা শেষ করে উনি ব্লাডপ্রেশার দেখতে বললেন নার্সকে।নিজে অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন লেবেল চেক করলেন।তারপর টুকটাক আরো কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

নার্স ওদের বলেন,’আপনারা বাইরে যান।দরকারে ডেকে নেওয়া হবে’।বহ্নি তখনও ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে।ব্যাপারটা খেয়াল করে বহ্নির হাত ধরে পল্লব ওকে বাইরে নিয়ে যায়।পল্লব খেয়াল করে বহ্নি এতোক্ষণে একটাও কথা বলেনি।

পল্লব বহ্নিকে বলে,’শুনলে না ডাক্তার কি বললেন?উনি বললেন ভয়ের কিছু নেই, এমনটা হোতেই পারে..’,এরকম আরো অনেক কথা বলে গেলো পল্লব। কিন্তু বহ্নির মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ করা গেলোনা।

ভিজিটিং রুমে এসে বহ্নিকে বসিয়ে পল্লব বাইরে গেলো।কিছু খাওয়াতে হবে মেয়েটাকে।এভাবে চললে তো বহ্নিও অসুস্থ হয়ে পরবে।পল্লব ট্রপিকানা ফ্রুট জুস কিনে আনলো।

আদেশের মতো করে বহ্নিকে বললো,’এক্ষুনি এটা চুমুক দিয়ে শেষ করো।এইভাবে না খেয়ে তোমারো যদি শরীর খারাপ হয় তাহলে তোমার দিদিয়াকে কেয়ার করবে কিভাবে?’

বহ্নি মাথা তুলে পল্লবের দিকে তাকিয়ে বললো,’অপারেশন করিয়ে আমি কোনো ভুল করলাম নাতো?আমার দিদিয়া বাঁচবে তো?’।

পল্লব ভরসা দিয়ে বললো,ভগবান তো আছেন,ওনার ওপর ভরসা রাখো,ভেঙে পরছো কেন?সব ঠিক হয়ে যাবে।দেখবে তোমার দিদিয়া কয়েকমাস পর কথা ও বলবে তোমার সাথে’,পল্লবের কথায় কেঁদে ফেলে বহ্নি।বলে,’তাই যেন হয়, মায়ের স্বপ্ন যেন পূরণ হয়’।

পল্লব জুসটা এগিয়ে দিয়ে বলে,’এবার তো খেয়ে নাও’।বহ্নি বলে,’তুমি খাবেনা?যাও তুমি গিয়ে খেয়ে এসো কিছু।আমি জুস খাচ্ছি।পল্লব বলে,সত্যি খাবে তো?বহ্নি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।পল্লব নিশ্চিন্ত মনে বেরিয়ে যায়।

ঠিক তখনই ফোনটা আসে।
পিউয়ের ফোন।খুশি মনে ‘হেলো’ বলতেই পিউ বলে ওঠে,’ মায়ের সেই বান্ধবীর ফুল ফ্যামিলি আজ বিকেলে আমায় দেখতে আসছে,কিছু একটা কর দাদাভাই”।

পল্লব বললো,’তুই নিজের বক্তব্য পরিস্কার করে তুলে ধরছিস না কেন বাবার কাছে?’পিউ কেঁদে ফেলে বলে,’আমি কিছু জানিনা,দুপুরের মধ্যেই তুই চলে আসবি,আর যা বলবার তোকেই বলতে হবে বাবাকে।আমি কিছু বলতে পারবোনা’,বলেই কেটে দেয় ফোনটা।

পল্লবের মাথা আর কাজ করছেনা।সোজা ক্যান্টিনে গিয়ে ডিম পাউরুটির অর্ডার দেয়।
পল্লব ভাবে,পেটে খিদে থাকলে মাথাটাও কাজ করতে চায়না।মেয়েরা কিভাবে যে উপোস করে থাকে কে জানে!

খেতে খেতে পল্লব ঠিক করে দুপুরে নয় বিকেলেই বাড়িতে যাবে।ওর যা বক্তব্য ছেলের বাড়ির লোকেদের সামনেই বাবাকে জানাবে।

আলাদা ভাবে ওর বাবাকে বলে কোনো লাভ নেই।কারন ওর বাবা কারো মতামতের গুরুত্ব দেয়না।তবে বাবা পিউকে পড়াতে রাজি না হলে পিউকে পল্লবই পড়াবে।

(চলবে)

(২২ আর ২৩ পর্ব দুটো একসাথে)
************************************

#অশান্ত বসন্ত।
(২২ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।
*****************
সীমা আসীম আর পিউকে খেতে দিয়ে স্নান সারতে গেলো। ফিরে এসে চটপট ঠাকুরকে জল-মিষ্টি দিয়ে ডাইনিং এ এসে দেখে পিউ তখনো হাত লাগায়নি ভাতে।অথচ অসীম পাশের ঘরেই খেয়েদেয়ে দিব্বি নাক ডাকছে।ধন্যি মানুষ বটে!

সীমা পিউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘পিউ মা আমার ভাত কটা খেয়েনে,এমন করলে হয় বল!অঞ্জনারা সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই ঢুকে যাবে।ঘরদোর ও তো একটু পরিস্কার করতে হবে’,সীমার কথার কোনো উত্তর দেয়না পিউ।

সীমা আবার বললো,’একটা সত্যি কথা বল তো মা,তুই কি কাউকে ভালোবাসিস?তাকেই কি বিয়ে করতে চাস?এভাবে চুপ করে থাকিসনা তুই, আমায় সত্যি কথাটা জানা এবার’।

পিউ মুখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে।বললো,’কাউকে ভালোবাসলেই কি তাকে বিয়ে করতে হবে মা? তাছাড়া ভালোবাসাটা সত্যি না মিথ্যে সেটা কিভাবে জানবো বলো! কিন্তু তার মানে এই নয় যে যাকে বিয়ে করবো তাকে ভালোবাসবো না।কিন্তু সবকিছুর তো একটা সময় থাকে মা।এখন আমি সত্যিই বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই’।

একটু থেমে আবার বলে,’তোমরা আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াবার একটা সুযোগ তো দাও।তারপর যাকে বলবে তাকেই না হয় বিয়ে করবো আমি’।
সীমা বললো,’তোর বাবাকে তো জানিসই কেমন গোয়ার মানুষ, তাও দেখবো আর একবার বলে।এবার ভাতটা খেয়েনে মা’।পিউ কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো।সীমাও নিজের খাওয়ারটা নিয়ে পিউয়ের পাশের চেয়ারে বসে পরলো।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যেই পল্লব বাড়ির দিকে রওনা হলো।যদিও বহ্নি বলছিলো বৃষ্টিটা থামলে যেতে।কিন্তু দেরি করতে চায়না পল্লব।তার বোনুটা যে দাদাভাইয়ের উপর ভরসা করে বসে আছে।

তবে বাইক চালাতে চালাতে এই বৃষ্টির ছাটটা বেশ উপভোগ করছিলো পল্লব।কিন্তু মনটা অস্থির লাগছে।কি জানি এতোক্ষণে নিশ্চয়ই ছেলের বাড়ির সবাই চলে এসেছে!বেশ বুঝতে পারছে পল্লব এই বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার পরিনাম কি হতে চলেছে!কিন্তু বোনুর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দেওয়াটাও তো অন্যায়।মুখ তো পল্লবকে খুলতেই হবে।

বাড়ির প্রায় সামনে চলে এসেছে পল্লব।বাইক দাঁড় করিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতেই অঞ্জনামাসি আর মায়ের হাসির আওয়াজ শুনতে পায় পল্লব।ঢুকে দেখে ড্রয়িং রুমের সোফাতে অঞ্জনা মাসি,মেসো আর ওনাদের ছেলে বসে।বাবা সাইডের চেয়ারে।আর সেন্টার টেবিলের উল্টো দিকের চেয়ারে পিউ বসে।

পল্লবের মা পিউয়ের চেয়ারে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে অঞ্জনা মাসীর সাথে।এতো হাসি গল্পের মধ্যেও পিউয়ের মুখটা কেমন থমথমে হয়ে আছে।

অঞ্জনা মাসী পল্লবকে দেখেই বলে ওঠেন,’এই তো আমাদের পল্লব এসে গেছে,এবার আরো জমিয়ে আড্ডা হবে’।

সত্যিই অঞ্জনা মাসী বেশ আলাপি ভদ্রমহিলা, সুখী সুখী চেহারা,চোখ দুটো ও প্রানোচ্ছল।পল্লব হালকা হেসে ওদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে।

অঞ্জনা বলে ওঠেন,’একদম ভিজে গেছিস তো।স্নান সেরে নে শিগগিরই। বৃষ্টির জল মাথায় বসলে কিন্তু নির্ঘাত জ্বর’।পল্লব হেসে বলে, ‘আচ্ছা স্নানটা চট করে সেরে আসছি আমি’।

অঞ্জনা এবার সীমার দিকে তাকিয়ে বলেন,’তুই কিন্তু খুব ভালো ভাবে মানুষ করেছিস ছেলে মেয়ে দুটোকে’।

পল্লব বললো,’আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিওনা মাসী।আমার কিছু বলবার আছে তোমাদের।আর আমার কথা শোনবার পর হয়তো তোমার আর আমাকে ভালো মানুষ মনে নাও হতে পারে’।

পল্লবের কথা শুনে অসীমের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।তিনি পল্লবকে বলেন,’বড়োদের মাঝে আর তোমাকে কথা বলতে হবেনা।তুমি গিয়ে ফ্রেশ হও গিয়ে।কথা বলার জন্য আমরা রয়েছি’।

পল্লব গম্ভীর গলায় বলে,’কিন্তু আমায় যে কথাটা বলতেই হবে বাবা’,তারপর অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বলে,’মাসী আমার বোন পিউ এখনই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাইছেনা।ওর ইচ্ছে আরো পড়াশোনা করবার।তারপর পরীক্ষা দিয়ে চাকরি করবার’।

অঞ্জনা হেসে ফেলে বললো,’আমিও ঠিক এই কথাটাই বলবো বলে আজ এসেছিলাম।আমার ছেলেও এটাই চাইছে, এমনকি আমি নিজেও এটাই চাই’।

অঞ্জনা মাসী পল্লবকে বললেন,’কি জানিস সীমা যেদিন বললো,পিউয়ের বিয়ে দিতে চাইছে অসীমদা, সেদিনই ঠিক করেছিলাম ওর ইচ্ছে গুলোতে ডানা লাগিয়ে দেবো আমার বাড়ির বৌ করে।আমি চাই আমার মেয়ের মতো ওর স্বপ্নও সত্যি হোক।অন্য জায়গায় বিয়ে হলে যদি মেয়েটার স্বপ্ন হারিয়ে যায়,তাই আমি নিজেই আমার ছেলের জন্য এই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম’।

অঞ্জনার কথায়,পল্লবের মুখে হাসি খেলে গেলো।
পিউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পল্লব দেখলো,এক রাশ মুগ্ধতা।শুধু অসীমের মুখে একরাশ বিরক্তি।

অঞ্জনা হেসে বললো,’অসীমদা আপনি চাইলে পিউকে এখনই আমার বাড়ির বৌ করে নিয়ে যাবো।কিন্তু আমি চাই বিয়ের কথাটা ফাইনাল হয়ে থাকুক।পিউ মাস্টার্স কমপ্লিট করুক,চাকরির পরীক্ষা গুলোতেও বসুক।আর তার মাঝে ওরা দুজন দুজনকে ভালো মতো করে একটু চিনুক জানুক।বিয়ে তো সারা জীবনের ব্যাপার।তাই নিজেদের তাগিদে ওরা সম্পর্কে জড়াক,বাধ্য হয়ে নয়’।

অঞ্জনার কথা শেষ হোতেই পল্লব বললো,’বাবা এর চাইতে ভালো প্রস্তাব আর হোতেই পারেনা।ওদের বিয়েটা ফাইনাল থাকুক।আর আমি চাই বোনু আমার এখানে থেকেই নিজের মাস্টার্সটা কমপ্লিট করুক।ওর পড়াশোনার যাবতীয় খরচা আমার।প্লিজ বাবা তুমি আর না কোরোনা।বোনুকে ওর স্বপ্নের সাথে বাঁচতে দাও’।

অসীমের ভাবলেশহীন ভাবে মাথা নাড়িয়ে বললো,’হ্যাঁ আমি তো সবার স্বপ্নই ভাঙছি।বেশ বিয়ে না হয় পরেই হবে’।

সীমা আনন্দে বাচ্চাদের মতো হাততালি দিয়ে উঠলো।সীমার ছেলেমানুষীতে সবাই হেসে উঠলো।কতোদিন পর মাকে এতো খুশি হোতে দেখলো পল্লব।

অঞ্জনা পল্লবকে বললো,’ভিজে জামাপ্যান্ট গুলো কিন্তু সব গায়েই শুকিয়ে গেলো’,পল্লব হেসে বললো,’হ্যাঁ মাসি যাচ্ছি স্নানে’।

তবে যাওয়ার আগে টুক করে তাকিয়ে দেখে নিলো অঞ্জনা মাসির ছেলে আর পিউয়ের দিকে।দেখলো দুজনেই দুজনের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে। পল্লব এবার নিশ্চিন্ত মনে চানঘরের দিকে পা বাড়ালো।
(চলবে)

#অশান্ত বসন্ত
(২৩ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী
**********************
ছয় মাসে এখন অনেকটাই সুস্থ শিখা। অপারেশনের এক মাস পর থেকে নিয়ম করে শুরু হয়েছে স্পিচ থেরাপিও। বরুন সাহা একজন অভিজ্ঞ স্পিচ থেরাপিস্ট। ডাক্তার এ.কে.গুপ্তার রিকোয়েস্টে শিখার কেসটা উনি নিজেই দেখছেন।

ওনাদের সেন্টারে মিডভ্যাস পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় স্পিচ থেরাপির ক্ষেত্রে অর্থাৎ মোটিভিশন,আইডেন্টিফিকেশন,ডিসেনসিটাইজেশন, ভ্যারিয়েশন,এপ্রোক্সমেশন আর স্টেবিলাইজেশন। উনি ভরসা দিয়েছেন সময় লাগলেও শিখা কথা বলতে পারবে।

উনি জানিয়েছেন আপাতত শিখার ক্ষেত্রে ইন্ডিভিজুয়াল থেরাপি ইউজ করা হচ্ছে।গ্রুপ থেরাপিও শুরু হবে তবে আরো কিছুদিন পর থেকে। প্রথম দিকে তো শিখার মুখ দিয়ে শুধু গোঙানির মতো শব্দ বের হতো। জিভ নাড়াতে পারতোনা।

বরুন সাহা বলেছেন এতে ঘাবরাবার কিছুই নেই।আসলে স্পিচ থেরাপিতে এক ধরনের পেশি যা কথা বলার ক্ষেত্রে কার্যকর তা অনুশীলন করানো হয়।কথা বলার সময় মুখ থেকে যাতে শব্দ বের হয় সেই প্রচেষ্টা করানো হয়।

শিখার এখনো সেভাবে কিছুই ইমপ্রুভ হয়নি।যদি ও ডাক্তার এ.কে.গুপ্তা শিখাকে ছুটি দেওয়ার সময় ওদেরকে বলেছিলেন,’এতো বড়ো একটা অপারেশন হয়েছে। জিভের সার আসতে সময় লাগবে।অনেক ধৈয্য ধরতে হবে’।

তবে বহ্নির অভিধানে বোধহয় অধৈয্য শব্দটা নেই।শিখার যতক্ষণ থেরাপি চলে বহ্নি বাইরে বসে এক মনে মাকে স্মরণ করে বলে,’মা তুমি দিদিয়াকে ভাষা দাও’।
অবশেষে বহ্নির প্রার্থনা আর বরুন সাহার অক্লান্ত পরিশ্রমে শিখা টুকরো টুকরো শব্দ বের করতে পারছে।

বহ্নি প্রতিদিন সকাল আটটার মধ্যেই শিখাকে নিয়ে সেন্টারে পৌঁছে যায়। এক ঘন্টা থেরাপির পর শিখাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই আবার অফিসের জন্য ছোটে। অবশ্য বিকেলে অফিস ছুটির পর পল্লবের হাসি মুখটা দেখে মনটা ভালো হয়ে যায় বহ্নির।

তবে বহ্নির আজ দিনটি শুরু হয়েছে অন্য রকম ভাবে।ঘুম ভেঙেছে অবিনাশের ফোনে।অবিনাশ ফোন করে জানতে চায় ,অফিস থেকে গতকাল রাতে বহ্নি কোনো মেইল পেয়েছে কিনা!বহ্নি জানালো গতকাল একদমই সময় পায়নি ফোন ধরবার। অবিনাশ বললো,মেইল চেক করে ওকে একবার ফোন করতে।

মেইল চেক করতে গিয়ে বহ্নির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। ওকে ছয় মাসের জন্য ট্রেনিং এ মুম্বাইতে পাঠানো হচ্ছে।মাঝে কানাঘুষো শুনছিলো বটে কিন্তু পাত্তা দেয়নি।এখন মনে হচ্ছে তখনই কথা বলতে হতো স্যারের সাথে। অফিস থেকে এয়ার টিকিট কালেক্ট করে নিতে বলেছে আজকেই।দুদিন বাদেই ফ্লাইট।

এবার কি হবে!হতভম্ব হয়ে কিছু সময় বসে থাকবার পর বহ্নি পল্লবকে ফোন করে সোজা সেন্টারে চলে আসতে বলে।

তারপর অবিনাশকে ফোন করে জানতে পারে সেম মেইল অবিনাশ আর রিক্তা ও পেয়েছে। এদিকে অবিনাশের মা হসপিটালে এডমিট।আর মেইল অনুযায়ী দুদিন বাদের এয়ার টিকিট বুক করা।

অবিনাশ জানায় অফিসে গিয়ে রিকোয়েস্ট করবে ট্রেনিং প্রিয়ড এক দু মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। এরপরেও শুনতে না চাইলে ওর চাকরিতে রিজাইন দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা ।

বহ্নি অবিনাশকে শান্তনা দেয় যে অফিসে গিয়ে কথা বলতে। আগে থেকেই এতো চিন্তা না করতে ,নিশ্চয়ই ওর বিষয়টি বিবেচনা করবে অফিস । অথচ দিদিয়ার চিন্তাতে বহ্নির নিজের মাথাটাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

এই সময় চাকরি ছেড়ে দিলে আর একটা চাকরি জোগাড় করবে কি করে!ফ্ল্যাট ভাড়া,দুজনের খাওয়া খরচা,শিখার ওষুধপত্র,স্পীচ থেরাপির খরচা এগুলো আসবে কোথা থেকে!বহ্নি আর ভাবতে পারছে না।
শিখাকে সেন্টারে ঢুকিয়ে পল্লবকে ফোন করতে যেতেই দেখে পল্লব স্ব শরীরে হাজির। বহ্নির শুকনো মুখটা দেখে পল্লব ভয় পেয়ে যায়।

এগিয়ে এসে দু’হাতে বহ্নির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে জিজ্ঞেস করে,’হঠাৎ কি এমন হলো!কোনো খারাপ খবর নয়তো?তোমায় এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন দেখতে?’

বহ্নি বলে,’খারাপ খবর তো অবশ্যই। মাথাটাই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তুমি জানো অফিস থেকে মেইল পাঠিয়েছে যে ওরা ছয় মাসের ট্রেনিং এ মুম্বাই পাঠাচ্ছে আমায়। পল্লবের মুখ হাঁ হয়ে যায়। কোনোরকমে বলে,’সেকি!’

বহ্নি বলে,’জানো দুদিন বাদেই মুম্বাইয়ের ফ্লাইট ধরতে হবে,আজকেই এয়ার টিকিট কালেক্ট করে নিতে বলেছে অফিস থেকে। আমার তো পাগলের মতো লাগছে।দিদিয়ার কি হবে আমি চলে গেলে!’

পল্লব কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ভেবে নেয়। তারপর বলে, ‘শিখার জন্য চিন্তা করতে হবেনা। ও পিউয়ের সাথে ভালোই থাকবে।আর আমরা আজকেই বরুণ সাহার সাথে এই সমস্যাটা নিয়ে কথা বলবো।উনি ওনার সময় অনুযায়ী যদি এই ছয় মাস আমার ফ্ল্যাটে এসেই থেরাপি দেন,তাহলে আর সমস্যাই থাকবেনা।ভিজিটটা না হয় বেশিই দেবো আমরা’।

বহ্নি ভাবতে পারেনি এতো সহজে সমস্যাটার সমাধান বের করে দেবে পল্লব।আবারো মুদ্ধ হয় পল্লবের ওপর।
পল্লব বলে,’কি হলো তোমার.!তাকিয়ে আছো কেন এইভাবে?আরে ছয় মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে। তুমি ট্রেনিং টা নিয়ে এসো’।

বহ্নি বলে,’পারবে থাকতে আমায় ছেড়ে?’ পল্লব হেসে বলে, ‘মাত্র তো ছয়মাস, সে দেখতে দেখতে কেটে যাবে।তাছাড়া ফোন আছে,ভিডিও কলও তো করা যাবে’।

একটু থেমে বলে,’হয়তো দূরে গেলে কাছে থাকবার গুরুত্বটা বুঝে বিয়েতে মত দেবে’।বহ্নি বলে,’তোমাকে তো বলেছি কেন বিয়ে করতে চাইনা!’পল্লব বলে,’সে কোরোনা বিয়ে।তবে আমি কিন্তু বিয়েটা তোমাকেই করবো।আর তার জন্য সাত জন্ম অপেক্ষা করতে পারি’। পল্লবের বলার স্টাইলে দুজনেই হা হা করে হেসে উঠলো।

(চলবে)