অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্ব-১৬+১৭

0
162

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৬

রাতের আকাশের নিচে সবাই মাদুর পেতে বসে আছে। তুলি প্রথমে শাড়ির আঁচল কোলে রেখে বসে ছিলো। কিম্তু তারপর হঠাৎ শুভ্র সবার অগোচরে আঁচলখানা নিজের হাতে পেঁচিয়ে হাতটা লুকিয়ে নিজের প্রশস্ত পিঠের পেছনে রেখে ভদ্র মুখ করে সবার সঙ্গে গল্প করতে লাগলো। তুলি হতভম্ব; শুভ্র স্যার লাজুক কিম্তু যথাযথ সভ্যও নন। কথাটা তুলি কেন যেন সাজেক আসার পর বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।
সবাই এইফাঁকে গান ধরেছে। শুভ্রও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুনগুন করছে। তুলি মুগ্ধ হয়ে শুনছে শুভ্রর হালকা আওয়াজের গান। তুলি শুভ্রকে এতোক্ষণ ধরে দেখছে, সেটা কিভাবে যেন তুলির দিকে না চেয়ে শুভ্র বুঝে ফেললো। তাই শুভ্র গান থামিয়ে তুলির দিকে তাকাল; ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্ন করল,

‘কী দেখছ মিস ছাত্রী?’
‘নাথিং।’

কথাটা বলে লজ্জায় তুলি মুখ সরালো অন্যপাশে। শুভ্র মাথা নিচু করে হালকা হাসল। পরপর হাতে পেঁচানো শাড়ির আঁচলে টান দিলো।যেন তুলিকে ডাকছে। তুলি তাকাল আবার। শুভ্র বললো,

‘তুমি কী কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে?’

তুলি চোখ বড়বড় করে তাকালো।শুভ্র কী কিছু বুঝতে পারছে? কিভাবে পারলো? তুলি তো এখন অব্দি কোনো কিছু বুঝায় নি; স্বাভাবিক থেকেছে বরং। তারপরেও? তুলি পরপর দ্রুত মাথা নেড়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,

‘উহু? কেনো বললেন এ কথা?’

শুভ্র কাঁধ নাচিয়ে গা-ছাড়া ভাবে বলল,

‘এমনি , লাগল আমার কাছে।’
‘ওহ।’

তুলি স্বস্তির শ্বাস ফেললো। শুভ্র বাকিটাক্ষণ সবার অগোচরে এভাবেই তুলির শাড়ির আঁচল হাতের আঙুলে পেঁচিয়ে বসে থাকলো। তুলিও তেমন কথা বললো না। রাত হতেই যে যার ঘরে ফিরলো।
________
সকালের হুট করে খেতে বেরুতেই মহুয়ার ইচ্ছে হলো দূরে কোথাও নাস্তা করতে যাবে। আরিফ তো সেটা শুনে খুব রেগে গেলো। বললো,

‘দূরে যাবে মানে? তোমার শরীর দেখেছো? চারদিনেই শরীরের অবস্থা কাহিল বানিয়ে দিয়েছো। নিজেও জেদ দেখাচ্ছো, আর আমার বাচ্চাটাকেও কষ্ট দিচ্ছো।’

মহু মুখ ফুলো করে আরিফের দিকে তাকাল। ত্যারাভাবে বললো,

‘তোমার বাচ্চা মানে? ও আমার কেউ না? আর আমি যাবো খেতে, আমি যাবোই। দরকার হলে একা যাব। কারোর দরকার নেই আমার।’

মহু ব্যাগ নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে একা একাই বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আরিফ থামালো না। রাগে ফুশফুশ নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে মহুর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকলো। দুজনের বাকবিতণ্ডা দেখে শুভ্র বলল,

‘কেন মহুকে রাগাচ্ছিস? চল যাই।ও একা যাবে এই অবস্থায়? তুইও না।’

আরিফ বিরক্ত হয়ে বললো,

‘তুই দেখেছিস ওর অবস্থা? কাল সারারাত ওসব কয়লা পোড়া খাবার খেয়ে বমি করেছে। দুবার পেটের ব্যথায় ঘুমও ভেঙেছে। অ্যাহ, উনি নাকি ডাক্তার। ডাক্তার হলে কেউ এমন করে। রাগ লাগছে ইয়ার।’

শুভ্র ভ্রু বাকালো,

‘মহুর উপর?’

আরিফ বাঁকা চোখে দূরে মহুর হাঁটার দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘উহু, নিজের উপর। ওকে এখানে নিয়েই আসা উচিত হয়নি আমার।’

শুভ্র হেসে ফেললো। বললো,

‘আটকা ওকে। চলে যাচ্ছে। একা গেলে বিপদ, আমরা সাথে থাকলে সেইফ থাকবে।’

আরিফ শুভ্রর দিকে একবার তাকাল, তারপর মহুর দিকে চেয়ে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়ল। পরপরই ছুটলো মহুর পেছনে। দুজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মহু ঝগড়া করছে, আরিফ মানাচ্ছে। দৃশ্যটা চোখে পড়ার মতো। তুলির ভালো লাগা বাড়লো। বিড়াল ছানার ন্যায় গা ঘেঁষে দাঁড়াল শুভ্রর। ওদের দিকে চেয়ে শুভ্রর উদ্দেশ্যে বললো,

‘দে মেইড ফর ইচ আদার। হোয়াট অ্যা পারফেক্ট কাপল!’

শুভ্র হালকা হাসলো। তুলির ন্যায় ওদের দিকে চেয়ে দেখল। তারপর তুলির দিকে চেয়ে সম্মোহনী স্বরে বললো,

‘লাইক আস?’

প্রশ্ন করল শুভ্র। তুলি শুভ্রর দিকে তাকাল। হয়তো তুলি আশা করেনি শুভ্র এ কথা বলবে। তুলি কিছুক্ষণ শুভ্রর দিকে চেয়ে রইল। তারপর হেসে ফেলল। চোখ ছোটছোট করে পাল্টা প্রশ্ন করলো;

‘আর ওই অ্যা পারফেক্ট কাপল?’

শুভ্র এমন চোখা প্রশ্নে কিছুটা মিইয়ে গেলো। মাথা চুলকে অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

‘মানে ওই আর ট্রায়িং, রাইট?’

তুলি শুভ্রর উত্তর দেওয়ার ধরন শুনে এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। শুভ্র মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখলো। হাজারো হাসি দেখেছে সে। কিন্তু ওমন সুন্দর হাসি শুভ্র কখনও দেখেনি। শুভ্র মাথা চুলকে তুলির হাসি দেখেই গেলো অবিরাম।

মহুর কথাই শেষ অব্দি রাখা হলো। সবাই অনেকটা দূরে একটা ছোটখাটো মাচার রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে। মহু এই রেস্টুরেন্টের বেশ নাম শুনেছে। তাই নিজে বেছে বেছে সব ভালো, মজাদার খাবার অর্ডার করলো। সবাই খাবারের জন্যে অপেক্ষা করছে। মহু এইফাকে তুলিকে মেসেজ করলো,

‘তাহলে শুরু করা যাক? ও পৌঁছে গেছে।’

তুলি মেসেজটা পড়ে শুভ্রর দিকে একবার তাকাল। মহু বুঝতে পারল; তুলি কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগছে। মহু আবারই মেসেজ করল,

‘রেডি তো, তুলি?’

তুলি হাফ ছাড়ল। তাকে এটা করতেই হবে। হোক না একটু ছেলেমানুষী। কিন্তু লাজুক শুভ্রর লজ্জা ভাঙতে এটা করাই লাগবে। তুলি ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে মেসেজ লিখল,

‘ইয়াহ, আ’ম রেডি ম্যাডাম।’

তুলির মেসেজটা পড়ার পর মহু ‘থাম্বসআপ’ দেখালো তুলিকে। পরপরও ইশারা করল কাউকে। তারপর রেস্টুরেন্টে ঢুকল একজন ইয়াং, সুদর্শন ফর্মাল গেটআপে এক পুরুষ। তুলি তাকে একবার দেখল। শুভ্রর এসবে মনোযোগ নেই। সে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মশগুল।

মহু মেসেজ করল তুলিকে,

‘সে এবার তোমার সামনে বসবে। একটিং শুরু করো। উলটাপাল্টা করবে না কিছু, চিন্তা নেই। হি ইজ ম্যাই ফ্রেন্ড, এন্ড ম্যারেড।’

তুলি এবার আশ্বস্ত হলো। ছেলেটা সোজা এসে তুলির ঠিক মুখোমুখি হয়ে বসল। মহু তাকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে চেঁচালো,

‘সুভম, তুই এখানে? এই সাজেকে? হোয়াট অ্যা কোইনসিডেন্ট।’

সুভম তুলির দিকে আড়চোখে চেয়ে দেখল। তারপর মহুর উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

‘এই আরকি ঘুরতে এলাম। তা,কেমন আছিস?’
‘প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যতুটুকু ভালো থাকা যায়!’

মহু হ্যান্ডশেক করল। মহু সবার সঙ্গে পরিচিয় করিয়ে দিল সুভমকে। সুভম সবার সঙ্গেই হ্যান্ডশেক করল। কিন্তু তুলির সঙ্গে হ্যান্ডসেক করার সময় তুলির দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইল। এতোক্ষণ পুরো ব্যাপারটা আমলে না নিলেও এবড় শুভ্রর খুব গায়ে লাগল। শুভ্র ত্যারা চোখে দুজনের হ্যান্ডসেক করা হাতের দিকে চেয়ে রইলো। সুভম চেয়ারে বসল।সুভমকে দেখে মহু সুভমের জন্যঅ খাবার অর্ডার দিল। সুভম সবার সঙ্গে গল্প করছে। কিন্তু ঘুরেফিরে তার নজরে তুলির দিকে যাচ্ছে বারবার। ব্যাপারটা শুভ্র তীক্ষ চোখে দেখে যাচ্ছে। মহু তুলির পরিচয় দেবার সময় তুলিকে শুভ্রর স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়নি। দিয়েছে আরিফের ছাত্রী হিসেবে। তাই হয়তো সুভম তুলির ব্যাপারে পজিটিভ কিছু চিন্তা করছে। শুভ্রর এই শুভমকে মোটেও ভালো লাগছে না। একবার শুভ্র তুলির হাত চেপে ধরল টেবিলের নিচে। তুলি শুভমের সাথে মন খুলে গল্প করছিল। পাশে যে শুভ্র আছে সেটা যেন সে ভুলেই বসেছে। শুভ্র হাতটা চেপে ধরলে তুলির গল্পে বিঘ্ন ঘটে। সে প্রশ্নবোধক চোখে শুভ্রর দিকে চায়। শুভ্র ফিসফিস করে বললও;

‘তুলি? সুভমের সঙ্গে তোমার এত কথা আমার পছন্দ হচ্ছে না কিম্তু।’

তুলি উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই শুভম তুলিকে প্রশ্ন করে বসল,

‘তুলি, তোমার ঘরে কে কে আছে?’

তুলি আর শুভ্রর কথায় ধ্যানই দিলো না। গল্প জুড়ে দিল শুভমের সাথে। শুভ্রর তখন মনে হয়েছিল, সুভমের মাথাটা এই কাচের গ্লাসে একবারে ফা টিয়ে দিতে। সমস্যা কী এই ছেলের? তার বউকে নিয়ে এতো জানার ইচ্ছে শুভমের কেন থাকবে? রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে শুভ্রর। শুভ্র তুলিকে সাবধান করবে তার আগেই সবার খাবার টেবিলে চলে এলো। শুভ্র তাই থেমে গেলো। খাবার খাওয়া সময়ই সুভম একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলো তুলিকে। তুলিও বেশ হাসিখুশি উত্তর দিচ্ছে। শুভ্র মনেমনে রেগেমেগে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। খাবারটাই ঠিকঠাক গলা দিয়ে নামছে না। বারবার পানি গিলছে।

খাবার খাওয়া শেষ হলে সুভম আগ বাড়িয়ে সবার বিল দিয়ে দিলো।সবাই এতে শুভমের কী যে গুণগান গাইতে লাগলো। বিল পে করে সুভম তুলির দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,

‘আমার পক্ষ হতে তোমাকে ট্রিট। তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আই হোপ, আমাদের আবার দেখা হোক।’

তুলি শুভ্রর দিকে তাকলো। শুভ্র বাঁকা চোখে তুলির দিকে চেয়ে আছে। যেন এক্ষুনি সুভম এবং তুলিকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে আর ঢেঁকুরও তুলবে না। তুলি শুভ্রর এই চাওনি দেখে ভয়ে সেটিয়ে গেল। মহুর আইডিয়া না জানি তুলির নিজের উপর ভারি হয়ে যায়। টুলি শুকনো হেসে শুভমকে উত্তরে বলল,

‘থ্যাঙ্ক ইউ। ঢাকা গেলে অবশ্যই দেখা হবে।’

‘তোমাদের বাসা কোথায়, তুলি ? একচুয়ালি আমি আমার বাবা মাকে পাঠাতে চাইছিলাম।’

তুলি এবার শুভ্রর দিকে তাকাল। অ্যাক্টিং এবার এক্সট্রিম পর্যায়ে যাচ্ছে। শুভ্র ধীরে ধীরে বো ম হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো সময় ফে টে যেতে পারে। শুভ্র বুঝতে পারছ কথাগুলো কোথায় গড়াচ্ছে। শুভ্র এগিয়ে এসে এদের কথা থামাবে তার আগেই সুভম বলে বসল,

‘আই থিঙ্ক আই লাইক ইউ। আমিও ডাক্তার, তুমি ডাক্তার হবে। আই থিঙ্ক আমাদের খুব জমবে। ইফ ইউ এগ্রি, দেন আমি আমার বাবা-মাকে দিয়ে তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাব। তোমার বাসার ঠিকানা বলা যাবে প্লিজ?’

কথাটা শুনে তুলি চোখ বড়বড় করে শুভ্রর দিকে তাকাল। ব্যাস, হয়ে গেছে। শুভ্র থমকে গেলো। কয়লার মতো অঙ্গার হয়ে সুভমের দিকে চেয়ে থেকে তারপর তেড়ে এসে তুলির হাত টেনে ধরলো। শুভমের দিকে চেয়ে হাসার চেষ্টা করে বললো,

‘এক্সকিউজ মি। আই নিড হার। ক্যান ওই গো? থ্যাংক উ।’

শুভ্র কথাটা বলে সুভমের কিছু বলার অপেক্ষা করলো না আর। তুলিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল হোটেলের দিকে। সুভম মৃদু হেসে চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে বললো,

‘ইয়াহ, এক্সকিউজ্ড।’

শুভ্র তুলিকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই সবাই একসঙ্গে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। মহু শুভমকে বললো,

‘ ব্যাটা, ফা টিয়ে দিয়েছিস। ঘি পুড়ছে খুব।’
___________
শুভ্র দেয়ালে হাত ঠেসে রেখেছে। তুলি ভয়েভয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে শুভ্রর চোখের দিকে চেয়ে আছে। আজ রক্ষে নেই বোধহয় তুলির। শুভ্র তুলির দিকে বাঁকা চোখে তাকালো। তারপর একটু নড়েচরে বললো,

‘ইফ ইউ ফরগেট, বাই চান্স। লেট মি রিমেইন্ড ইউ, ইউ আর ম্যারেড। আরেন্ট ইউ?’

তুলি দুদিকে মাথা নাড়লো। বোঝাল, সে ভুলেনি সেটা। শুভ্র এবার রাগ দেখালো। বলল,

‘তো ওই ডাক্তার তোমাকে কেন বিয়ের জন্যে প্রপোজ করবে? হুয়াই?’

তুলি শুনল। সে তো মহুর কথায় এসব করেছে। তুলি আগেপিছে ভাবলো। তারপর বললো,

‘উনি জানতেন না। তাই-‘
‘কেন জানত না? প্রুভ রাখো নি কেনো তুমি?’
‘প্রুভ? কী প্রুভ রাখবো?’

শুভ্র তুলির ডান হাত নিজের হাতে নিলো। হাতটা উঁচু করে তুলির চোখের সামনে ধরে বললো,

‘চুড়ি কোথায় তোমার? বিবাহিত মেয়ের হাতে চুড়ি থাকবে না কেন?’

তুলি শুভ্রর কথায় কুণ্ঠাবোধ করলো। ইয়াসমিন তাকে অনেকবার চুড়ি পড়তে বলেছেন। এপ্রনের সাথে চুড়ি মানায় না দেখে তুলি পরেনি। এখন বুঝো!

তুলি মিনমিন করে বললো,
‘মনে ছিলো না।’
‘এখন থেকে থাকবে।’

শুভ্রর কাঠকাঠ জবাব। শুভ্র পকেট থেকে দুটো সোনার সাধারণ গড়নের চুড়ি বের করে তুলির হাতে পরিয়ে দিলো।অনেক আগে শুভ্র এটা বাসর ঘরে উপহার দিবে বলে কিনে রেখেছিল। বাসর হওয়ার আগেই বউ ফুরুত হয়ে যাচ্ছে, তাই সেটা দেওয়া লাগলো এক্ষুনি। তুলি হতবম্ব হয়ে হাতে লেপটে থাকা সোনার চুড়ির দিকে চেয়ে রইলো। শুভ্র বললো,

‘ইউ আর শুভ্র’স ওয়াইফ। মাইন্ড ইট।’

তুলি এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। শুভ্রর চোখে চোখ রেখে বললো,

‘শুধুই ওয়াইফ? আর কিছু নই?’

শুভ্র থামলো। তার দৃষ্টির ভাষা বদলে গেলো। কেমন অন্যরকম চোখে তুলিকে দেখলো। তুলির কপালের চুল আঙুলে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে আত্মবিশ্বাসী স্বরে বললো,

‘ইউ আর শুভ্র’স এভরিথিং, মিস ছাত্রী। ইউ আর মেকিং মি ক্র্যাজি ডে বাই ডে। আমাকে ছাড়া অন্য পুরুষের দিকে অন্য নজরে তাকানো দূরের কথা, ভাবলেও খবর আছে তোমার। ইউ আর কমপ্লিটলি শুভ্র’স, কী মনে থাকবে মিস ছা~ত্রি!’

#চলবে

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৭ |১৮+ এলার্ট|

‘ইউ আর শুভ্র’স ওয়াইফ। মাইন্ড ইট।’

তুলি এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। শুভ্রর চোখে চোখ রেখে বললো,

‘শুধুই ওয়াইফ? আর কিছু নই?’

শুভ্র থামলো। তার দৃষ্টির ভাষা বদলে গেলো। কেমন অন্যরকম চোখে তুলিকে ছেঁটে দেখলো। তুলির কপালের চুল আঙুলে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,

‘ইউ আর শুভ্র’স এভরিথিং,তুলি।ইউ আর মেকিং মি ক্র্যাজি ডে বাই ডে। আমাকে ছাড়া অন্য পুরুষের দিকে অন্য নজরে তাকানো দূরের কথা, ভাবলেও খবর আছে তোমার। ইউ আর কমপ্লিটলি শুভ্র’স, কী মনে থাকবে?’

তুলি শুনে। ভালো লাগা অনুভূতিটা শরীরের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে যায় বিদ্যুতের ন্যায়। তুলি খানিক এগিয়ে আসে। পায়ে ভর দিয়ে শুভ্রর সমান উঁচু হওয়ার চেষ্টা করলে শুভ্র তুলির কোমরে হাত রেখে নিজের মুখ বরাবর উঁচু করে। তুলি শুভ্রর চোখের দিকে চোখ রাখে। শুভ্র প্রশ্নবোধক চোখে চেয়ে থাকে তুলির দিকে। তুলি মাথা নিচু করে মৃদু হাসে। পরপর আবার চোখ রাখে শুভ্রর চোখে। দুজনেই ভেসে যায় একে অপরের চোখের মায়ায়।শুভ্র যেন সম্মোহনে আছে। তুলি চেয়েছিল শুভ্রর মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা বের করতে। অথচ এখনো শুভ্র নিরব। সব বলেছে, অথচ ভালোবাসি শব্দটা বলেনি। কী পা ষাণ সে। তুলি শুভ্রর চোখে চোখ রেখে শোধায়;

‘কিছু বলতে চান আমায়। বলে ফেলুন; সুযোগ কিন্ত বারবার আসবে না।’

শুভ্র তুলির কথার অর্থ না বুঝে ভ্রূ নাড়ায়,’ কী বলব? কোন সুযোগের কথা বলছ তুমি?’

তুলি বিরক্ত হয়ে ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে। আহাম্মক একটা। তুলি রেগে সরে যেতে চাইল। কোমর থেকে শুভ্রর হাত জোরপূর্বক সরাতে নিলে শুভ্র ভ্রূ কুচকায়। হাতের বাঁধনে কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করে;

‘উহু,ছটফট করে না।’

তুলি রাগ দেখায়, আবারও সরতে সরতে বলে,

‘করবই আমি। আপনি কিচ্ছু বুঝেন না। কিচ্ছু না। ইটস হার্টস মি। আমাকে ছাড়ুন। উফ, এতো শক্ত করে ধরেছেন কেন? ছাড়ুন।’

শুভ্র মৃদু স্বরে হাসল। বাঁকা চোখে চেয়ে দেখল তুলির অবিরাম ছটফট, অভিমানী মুখশ্রী। কী সুন্দর দেখাচ্ছে তুলিকে এ অবস্থায়। শুভ্র মুগ্ধ হয়ে দেখল শুধু। তুলি শুভ্রর নীরব দেখে তাকাল শুভ্রর দিকে।শুভ্র হাসল। তুলির কোমরে হাতটা সাপের ন্যায় পেঁচিয়ে ধরে নিজের সঙ্গে চেপে ধরল ওকে। তুলি প্রথমবারের ন্যায় এত ঘনিষ্ঠতায় শিহরে উঠল যেন। চোখ বুজে আসতে চাইছে। শুভ্র যেমন মা রাত্মক, তার করা একেকটা স্পর্শ তার থেকেও মা রাত্মক। তুলির মনে হচ্ছে,, তার রুহ অব্দি কাঁপছে শুভ্রর স্পর্শের দরুন। শুভ্র এখনো এমন গভীর স্পর্শে ছুঁয়ে রয়েছে। তুলি এবার হাল ছাড়ল, শুভ্রর দিকে কাতর চোখে তাকালে শুভ্র এক আঙুলে তুলির কপালের চুল কানের পেছনে গুঁজে বড্ড অন্যরকম, মোহময় গলায় বলল সুন্দর একটা বাক্য!

‘ইউ হ্যাভ দ্য মোস্ট বিউটিফুল আইজ, তুলি।’

তুলির কানে ঝংকার দিয়ে উঠলো। কী বলল শুভ্র? তুলি চোখ বড়বড় করে শুভ্রর দিকে চাইল। তুলি একটা পত্রিকায় পড়েছে, বিদেশিদের ভালবাসা প্রকাশ করার এক বাক্য হচ্ছে চোখ নিয়ে বলা। যা বললে অপর পাশের মানুষ বুঝে নেয়, সে তোমাকে ভালোবাসে। তুলির চোখের কোণায় পানি জমল খানিক। এতটা সাধনার পর শেষ অব্দি শুভ্র বলল, সত্যি বলল? তুলি আচমকা শক্ত করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ লুকালো। বিড়বিড় করে বললো,

‘আই লাভ ইউ টু, আই লাভ ইউ সো মাচ।আই-‘

বাকি কথা তুলি আর বলতে পারল না। কান্নায় ভেঙে পড়ল শুভ্রর কাঁধে। শুভ্র শুনছে, আর হাসছে। হালকা হাতে তুলির পিঠে মালিশ করে বুঝাচ্ছে,
~আমি বুঝি সব, আই নো ইউ লাভ মি। ইউ লাভ মি লাইক অ্যা ইনসেন।~

অনেকক্ষণ তুলি কাঁদলো, আর অভিযোগ করল। শুভ্রও ধৈর্য্যবান পুরুষের মতো সব শুনল। অনেকক্ষণ পর তুলি শান্ত হয়ে সরে দাঁড়াল। শুভ্রও ছাড়ল তুলির কোমর। তুলি এবার লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এতোক্ষণ এভাবে দুজন জড়াজড়ি করে ছিলো, ভাবলেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। শুভ্র নিজের গায়ের কুঁচকানো শার্টটা টেনে ঠিক করে তুলির দিকে তাকাল। তারপর কৌতুক করে তুলির লজ্জাবনত মুখের দিকে চেয়ে বললো,

‘এই শুভ্রর জন্যে কারও মনে এত ভালোবাসা জমা ছিল! জীবন তো ধন্য হয়ে গেলো আমার।’

তুলি কান্নামুখেও হেসে ফেলল। শুভ্র তুলির সেই হাসির দিকে চেয়ে দেখল। তারপর এগিয়ে এসে তুলির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে খুব মিষ্টি করে বললো,

’উফ,এই হাসিটা! একদম মারাত্মক!’

তুলি লজ্জায় হেসে উঠে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শুভ্র নিজের কাঁধের শার্টটুকু তুলিকে দেখিয়ে বলল,

‘দেখো কী অবস্থা করেছ আমার শার্টের। নতুন শার্টটা আমার একদম শ্যাষ।’

তুলি দুহাতে দু-চোখ বাচ্চাদের মতো মুছে বললো,

‘শার্টটা খুলে দিন। আমি ধুয়ে দিচ্ছি।’

কথাটা শুনে শুভ্র দ্রুত সরে গেলো দু কদম। তারপর হইহই করে উঠে বললো,

‘এখনই এসব খোলাখুলি না প্লিজ। আমিই শার্ট ধুয়ে দিব কাল।’

তুলি ভ্রু কুচকে তাকাল শুভ্রর দিকে। তারপে চোখ ছোটছোট করে বললো,

‘আপনি কী জানেন, আপনি সাধরণ ছেলেদের মতো নন?’

শুভ্র ভ্রু কুঁচকালো। প্রশ্ন করল,

‘আমি কেমন?’

তুলি এগিয়ে আনল নিজের মুখ শুভ্রের মুখের দিকে। দুজনের নাক ছুঁইছুঁই। শুভ্র ত্যাড়া চোখে চেয়ে নিজের মুখটা হালকা পিছিয়ে নিয়ে তুলির দিকে চাইল।

তুলি হঠাৎ হেসে শুভ্রর নাকে আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বলল,

‘অনেক লাজুক।’

বলে হেসে সরে গেল তুলি। শুভ্রও প্রথমে কিছুটা অবাক হলো। পরপর হেসে উঠে মাথা চুলকে সোজা হয়ে বসে তুলির দিকে চাইল। তুলি বিছানায় বসল। শুভ্রও এগিয়ে এসে তুলির পাশে বসল। তুলি এখানে ওখানে তাকাচ্ছে বারবার, কিন্তু শুভ্রর দিকে তাকাচ্ছে না। বোধহয় লজ্জাটা তুলিকে এবার মেরেই ফেলবে। শুভ্র তুলির এসব কাণ্ড দেখছে। শুভ্র মুচকি হাসল। তারপর সামনে তাকিয়ে বললো একসময়,

‘আমার জীবনের প্রথম প্রেম তুমি, তুলি। আমি প্রেমের বেলায় খুবই কাঁচা। এটা আমার আম্মুও জানে। আমি মেয়েদের ভয় পেতাম ছোটবেলায়। বড় হলাম, তখন ভয় না বরং মেয়েদের লজ্জা পাওয়া শুরু করলাম। জীবনে কোনো মেয়ের কাছে স্বইচ্ছায় যাইনি, প্রফেশনাল কথা ছাড় আগ বাড়িয়ে কারো সঙ্গে সখ্যতাও নেই। দু-চারটে মেয়ে আমার কাছে ঘেঁষতে চাইলে আমার লজ্জা দেখে নিজেরাই সরে গেছে। আমার জীবনে এই প্রেম, এই ভালোবাসা, ভালোবেসে স্পর্শ করে কাউকে এসব সম্পূর্ণ নতুন। এমন নই যে আমি তোমাকে লজ্জা পাই। তোমাকে দেখলে আমকের লজ্জা লাগে না বটে, বাট তোমাকে স্পর্শ করতে আমার হাত কাঁপে। ভাবি, তুমি হয়তো পছন্দই করছ না, বা অস্বস্তি বোধ করছ। সেইজন্যই তোমাকে স্পর্শ করতে দ্বিধা হয় আমার। এটাকে তুমি ওয়ান কাইন্ড অফ লজ্জাও বলতে পারো।’

তুলি খুব মন দিয়ে শুনল শুভ্র কথা। কোন ছেলের প্রথম প্রেম হওয়া, সেই ছেলের প্রথম প্রেম রূপে তার স্ত্রী হওয়া, ব্যাপারটা তুলির কাছে অসাধারণ লাগল। শুভ্র যে তুলিকে অসম্ভব রেস্পেক্ট করে; স্ত্রী হিসেবে সেটাও তুলির কাছে বড্ড ভালো লেগে গেল। তুলি শুভ্রর দিকে তাকাল। আনমনা হয়ে বলল,

‘আপনি একদম অন্যরকম মানুষ। আমিও এই প্রথম করো প্রতি ফল করলাম। সে মানুষটা আমার জন্যে হারাম নয়, হালাল। ভাবলেই ভালো লাগছে আমার। ভাবতে পারেন, মেয়ে তো তাই মিথ্যা বলছি চরিত্র নিয়ে। কিম্তু সত্যি বলতে আমি সারাদিন পড়াশোনায় এতটা ব্যস্ত থাকতাম, সে সময়টাই মিলে নি। বা কেউ প্রপোজ করলেই ছেলে দেখে সুবিধার মনে হয়নি, তাই প্রেমেও জড়ানো হয় নি আর।’

শুভ্র হাসল। একটা কথা মনে পরে গেলো তার, তুমি চরিত্রের দিকে যেমন, ঠিক তেমন চরিত্রের সঙ্গীও তুমি ভবিষ্যতে পাবে। নিজের জীবনের বেলায় ব্যাপারটা এতটা খাঁটি হয়ে যাবে; শুভ্র বিশ্বাস করতে পারলো না।তারপর ওইদিন সারাটা বিকেল চলে গেলো দুজন গল্প করতে করতে। দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তি বইছে, সেটা মনেমনে দুজনেই অনুভব করতে পারছে।
______________
সেই রাতে ধুম করে সাজেকের আকাশ ভেঙে হুট করে বৃষ্টি পরতে লাগল। হয়তো প্রকৃতির কোন ভাবনা আছে; এই সদ্য প্রেমে পড়া নতুন দম্পত্তি নিয়ে। শুভ্র-তুলি প্রায় কাকভেজা হয়ে রাতে খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরল। শুভ্র রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে কম্বলের নিচে শুয়ে আফরোজার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। শুভ্র ভেবেছে তুলি ওয়াশরুমে, হয়তো গোসল নিচ্ছে। কিন্ত শুভ্র ভুল ছিল।

তুলি গোসলে যায়নি। বরং সে বারান্দায়। শাড়ি পরে অবাধে বৃষ্টিতে ভিজছে। দুহাত দুদিকে মেলে বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে তুলি। বাসায় থাকলে ইয়াসমিন তুলিকে বৃষ্টি থেকে দূরে রাখেন। নাহলে দেখা যায় তুলি মাঝরাত্তিরেও ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করে। শুভ্র কথা বলার ফাঁকে বারান্দা থেকে গুনগুনিয়ে গান শুনতে পায়। তুলি খুব আনন্দচিত্তে গাইছে;

‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
পাগল আমার মন নেচে উঠে,হু হু হু’

শুভ্র ভ্রূ কুঁচকালো। আফরোজাকে বললো,

‘আম্মু তোমাকে আমি কাল কল দিচ্ছি। শুয়ে পড়ো তুমি। রাতের ওষুধ মনে করে খেও; ওকে? রাখছি।’

শুভ্র কল কেটে কম্বল ছেড়ে উঠল। ভ্রু কুঁচকে দূর থেকে বারান্দা দিয়ে চেয়ে পায়ে স্যান্ডেজ জড়িয়ে হাঁটা ধরলো বারান্দার দিকে। বারান্দার দরজার সামনে এসে শুভ্র তো হতভম্ব। তুলি একদম ভিজে একাকার অবস্থা। পাগলের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে। শুভ্র বারান্দার ভেতরে গেলো না। দূর থেকেই ধমক দিল,

‘তুলি, কী হচ্ছে এখানে?’

তুলি চোখ খুলে শুভ্রর দিকে তাকাল। তারপর হেসে বলল,

‘বৃষ্টি উপভোগ করা হচ্ছে। আপনি জয়েন করবেন?’

শুভ্র চোখ পাকালো। বললো,

‘অসম্ভব। দেখি, তুমি ভেতরে আসো। এত রাতে বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে। ওয়েদারটা কিম্তু ভালো না। আসো, ভেতরে আসো বলছি।’

তুলি শুনলে তো। বরং সে বিরক্ত হলো। বললো,

‘উফ, আপনি! বাদ দিন। আই লাইক ইট।।’

শুভ্র বিরক্ত হয়ে তুলির বৃষ্টি ভেজা দেখতে লাগল। তারপর; তারপর ধীরে ধীরে শুভ্রর বিরক্ত হওয়া দুচোখে মুগ্ধতা নেমে এলো। কুঁচকানো ভ্রু সোজা হয়ে এলো, বেটে দু চোখ মুগ্ধ হয়ে গোল হয়ে এলো। শুভ্র দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে তুলির বৃষ্টি ভেজা দেখতে লাগলো। তুলি, তুলি মেয়েটা কিভাবে এতটা; এতটা আকৃষ্ট করে শুভ্রকে। শুভ্র দেখছে তুলিকে, তো দেখতেই আছে। তুলির চলনভঙ্গী, কথা বলা, হাসা, কান্না, টুকটাক ছেলেমানুষি; এই সব, এই সব শুভ্রকে চুম্বকের মতো টানে। এখন, এই যে শাড়ি পরে তুলি বৃষ্টিতে ভিজছে। শুভ্রর মনে হচ্ছে তার বারান্দায় স্বর্গ এসে ধরা দিয়েছে। শাড়ি গায়ে তার স্ত্রী তার সামনে, তারই ভালোবাসা গায়ে-মনে মেখে দাঁড়িয়ে আছে। এটা ভাবলেই শুভ্র রোমাঞ্চিত অনুভব করে।

আজ দুপুর থেকে তুলির প্রতি শুভ্রর মনোভাব পাল্টে গেছে। তুলিকে কেন যেন এখন আরও বেশি শুভ্রর কাছে এট্রাকটিভ লাগে, বারবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। লজ্জায় এতোক্ষণ শুভ্র তুলিক স্পর্শ করেনি। কিন্তু এখন, পুরো ঘটনা শুভ্রর বিরুদ্ধে। শুভ্রর মন শুভ্রর বাঁধা শুনছে না। তার লজ্জারা হার মানছে। শুভ্র উদভ্রান্তের ন্যায় দরজা পেরিয়ে বারান্দায় ঢুকে যায়। কাপড়ের স্যান্ডেজ ভিজে চুপসে গেছে। শুভ্রর খেয়াল নেই। শুভ্রর ভিজে চুল বেয়ে বৃষ্টির পানি চোখের কোণা বেয়ে পড়ছে। শুভ্রর সেদিকে মন নেই। সে এগুচ্ছে। তারপর আচমকা পেছন থেকে তুলির হাত টেনে ধরে তুলিকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। তুলি থমকে গিয়ে শুভ্রর দিকে তাকাল। দুজনের মধ্যে এটুকু ফাঁক নেই। তুলি সম্পূর্ণটাই শুভ্রর দখলে আছে। তুলি চোখ বড়বড় করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্র ঠোঁট বিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। তুলি একবার সেদিকে চেয়ে ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে ফেলল। শুভ্র তুলির ভিজে চুল আঙ্গুল দিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল। তুলি চোখ বন্ধ করে ফেলল। ভিজে গায়ে এভাবে শুভ্রর গায়ের সঙ্গে লেপ্টে আছে, ব্যাপারটা তুলিকে ভেতরে ভেতরে একদম শেষ করে দিচ্ছে। তুলি শ্বাস নিতে পারছে না।
শুভ্র তুলির কপালে প্রথমবারের মতো চুমু বসালো। ও চুমু এতটা গাঢ় ছিল যে তুলি শুভ্রর বাহু খামছে ধরল। শুভ্র সরে আসল। তুলি হাপড়ের মতো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। শুভ্র অবলীলায় তুলির ঠোঁটের দিকে চেয়ে রইল। বৃষ্টির পানি তুলির ঠোঁট বরাবর আসলে তুলি বারবার তার ঠোঁট দিয়ে পানিগুলো পিষে ফেলছে। মুগ্ধ শুভ্রর গায়ে এই দৃশ্য যেন কারেন্ট বইছে দিচ্ছে। শুভ্র আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। বড্ড ছটফটে গলায় জিজ্ঞেস করল,

‘ক্যান আই কিস ইউ ফর ওয়ানস?’

তুলি উত্তর দিল না। শুভ্রর চোখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে; হঠাৎ অদম্য সাহস দেখিয়ে,সকল মেয়েলি লজ্জা ভেঙ্গে নিজেই উঁচু হয়ে ঠোঁট বসালো শুভ্রর ঠোঁটে। শুভ্র তারপর প্রায় পাগলপারা হয়ে গেলো। তুলিকে রেলিংয়ের সঙ্গে ঠেসে মুখটা দুহাতে আগলে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগল। তুলি শুভ্রর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে বারবার। শুভ্র পাগল হয়ে গেছে একদম। তুলি সামলাতে পারছে না শুভ্রকে, শুভ্রর স্পর্শকে।তুলি নিজেকে শক্ত করলো; তারপর শুভ্রর পাগলামিতে সায় দিতে লাগলো অবলীলায়। শুভ্র হাত বাড়িয়ে তুলির শাড়ির আঁচলের পিন খুলে দিল। তুলি নিজেও কখন যে শুভ্রর শার্টের সব বোতাম খুলে ফেললো নিজেও জানে না। শুভ্র কিছুটা থামল। তুলিকে ছেড়ে একটু সরে দাঁড়ালো। দু-সেকেন্ডে নিজের পরনের বোতাম খোলা শার্টটা খুলে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে আবারও তুলির ঠোঁট চেপে ধরল। তুলি শুভ্রকে সামলাতে বারবার খামছি দিতে লাগল শুভ্রর সারা গায়ে। তুলি একসময় হাঁপিয়ে উঠে জোরপূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো শুভ্রর থেকে। তুলি এখন আর শুভ্রর চোখের দিকে চোখ রাখতে পারছে না। শুভ্র খালি গায়ে এভাবে তার দিকে ঘেঁষে আসছে, উফ মরে যাচ্ছে তুলি। শুভ্র আর দেরি করল না। তুলিকে দুইহাতে কোলে তুলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। তুলি ঠোঁট কামড়ে থেমে থেমে বলল,

‘আপনি একদমই লাজুক নন। একদমই না।’

শুভ্র তুলিকে বিছানায় শুইয়ে দিল। কপালে চুমু খেয়ে অশান্ত একেকটা নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

‘এন্ড ইউ আর রেসপনসিবল ফর দিস।’

তারপর আবারো তুলির ঠোঁটে মজে গেলো শুভ্র। রাতটা কেটে গেল আদর সোহাগে। বৃষ্টি থামল। শীতল বাতাস বইল। অদূরে দু এক পাখি ডাকল। শুভ্রতায় ঘেরা এক রাত এভাবেই দুজনের মনে দাগ কেটে গেল।

#চলবে